#পর্ব_২১
#অসমাপ্ত_প্রনয়
#মিঃনাহিদ_হাসান
আলো আলো চারদিকে অনেক আলো তোমার সাথে কথা কইতে আমার লাগে অনেক ভালো..?এই পাতাল পুরীর অন্ধকারে অনেক আলো যে, তোমার কথা বলার আমি একমাত্র সাথি যে..…!
রায়হান মন্ডলের হাঁসি যেন পাতাল পুরীর প্রতিটা দেওয়ালে ধ্বনিত হচ্ছে…!
শিমু চিৎকার করে বলে উঠলো আমার হাত পায়ের বাঁধন খুলে দেন, আমাকে যেতে দেন, আমাকে কেনো এইখানে আটকে রাখছেন…?
শিমুর গালে ঠাস করে একটা থাপ্পর দিয়ে, রায়হান মন্ডল হুংকার দিয়ে বললো,এই জায়গায় শুধু আসা যায়,ফেরা যায় শুধু লাশ হয়ে_নদীর পানিতে ভেসে…!
আমাকে কেনো এইখানে ধরে আনছেন, আমার কী দোষ…!
রুবেলের সাথে তোর ফস্টি_নষ্টি আমার একদম সহ্য হয় নাই, রুবেল আমার চোখের কাঁটা ওর সুখ আমার সহ্য হয় না…!৭বছর আগে আমি ওর কাছে থেকে সবকিছু কেড়ে নিছিলাম,এই পাতাল পুরীর কোনো এক ঘরে ওর বোনের জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দিয়েছিলাম.. আবার ৭বছর পর সেইদিন এসেছে,ওর প্রমিকার জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দিবো হা হা হা…!
শিমুর কেমন ভয় করতে শুরু করলো, সত্যি কী তাঁর জীবন শেষ হয়ে যাবে,এতো এতো সাজানো স্বপ্ন সব কিছু কী শেষ হয়ে যাবে, রুবেল কী আসবে না,এই নরক থেকে তাকে নিয়ে কী ফিরবে না..!
ও আসবে ঠিক আসবে, মনের মধ্যে শিমু ইচ্ছা শক্তি জাগ্রত করে,মনে বল আনে..! অপেক্ষায় থাকে সেই সময়ের যখন রুবেল আসবে তাঁকে নেওয়ার জন্য…!
সিয়াম এই মেয়েকে দেখে রাখো, চেয়ারম্যান সাহেব সব নতুন নতুন মাল পছন্দ করে..! চেয়ারম্যান সাহেবের জন্য এই মালটা রাইখা দিলাম, চেয়ারম্যান আসলে ওরে এই ঘরে পাঠাই দিবা, চেয়ারম্যান আগেই টাকা দিয়া রাখছে ১০হাজার,কোন সমস্যা নাই…
আমি একটু কাজে যাইতাছি, সকালের মধ্যে চলে আসমু… রায়হান মন্ডল গুপ্ত রাস্তা দিয়ে বেড়িয়ে গেলো..!
সিয়াম হচ্ছে রায়হানের বিশ্বস্ত কাজের লোক, অনেক দিন থেকে সে এই পাতাল পুরীর পাহারাদার..!
মোটা অংকের টাকার পাশাপাশি অনেক মেয়ের দেহ ভোগ করার সুযোগ আছে এই পেশায়,তাই তো সিয়াম এই কাজ ছাড়তে পারে না..!
রায়হান চলে যাবার পর,সিয়াম শিমুর ঘরের দরজায় তালা লাগিয়ে দেয়…!
———-
রাত তখন আনুমানিক ১১টা রেন্ট্রি বাগানের পথ ধরে গুটি গুটি পায়ে হাতে টর্চ লাইট নিয়ে এগিয়ে চলেছে পাঁচজন মানুষ…!
হঠাৎ নাফিসা আহ্ শব্দ করে উঠলো, কবীর সাথে সাথে নাফিসার হাত ধরলো..!
নাফু তুমি ঠিক আছো..?
হুম ঠিক আছি, পায়ে কিছু একটা ফুটে গেছে, সমস্যা নাই চলো..!
রুবেল সামনে এগিয়ে যাচ্ছে, পিছনে ওরা চারজন…!
হঠাৎ রুবেল বলে উঠলো,সবাই টর্চ লাইট অফ করো.. আমরা কাছাকাছি চলে আসছি…?
সবাই লাইট অফ করলো, দূরে আবছা আলোয় একজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেলো..!
রুবেল ব্যাগ থেকে একটা রুমাল বের করলো,আর রুমালে কিছু ঔষধ ঢেলে নাহিদের হাতে দিয়ে বললো,এই ব্যাটাকে অজ্ঞান করার দায়িত্ব আপনার..?
সাবধানে যাবেন আমরা এইখানেই আছি….!
নাহিদ অন্ধকারে হারিয়ে গেলো, কিছু মূহূর্ত অন্ধকারে ওত পেতে থেকে,ঝাপিয়ে পড়লো লোকটার উপর,নাকে রুমাল চেপে ধরতেই পাহারাদার জ্ঞান হারিয়ে ফেললো.. দেহটা টেনে ঝোপের আড়ালে ফেলে দিলো..!কিছু সময় পর টর্চ লাইট জ্বালিয়ে ইশারা করলো_কাজ হয়ে গেছে..!
আস্তে আস্তে সবাই এগিয়ে আসলো গুহার কাছে..!
সবাই বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে,কেউ ভেতরে যাবার সাহস পাচ্ছে না_হঠাৎ নাহিদ বলে উঠলো…!
কুয়োর ভেতর একটা ব্যাঙ মরে পচে গেছে, আমরা নাক চেপে ধরে যদি ওই পানি খাই_আর”বলি গন্ধ নেই, তাহলে এতো বড়ো ধোঁকা নিজেকে কেনো দিবো…!
সাহস করে কুয়োর ভেতর নেমে মরা ব্যাঙ টা তুলে ফেলে দেওয়া বুদ্ধি মানের কাজ…!
ভেতরে সবাইকে বিপদে ফেলে, সবাই যদি বাহিরে দাঁড়িয়ে মনে করেন_কোন বিপদ নাই,এটাও কিন্তু নিজকে ধোঁকা দেওয়া..! বুদ্ধিমানের কাজ হলো ভয় কে দূরে রেখে, সমাজের সব আগছা পরিষ্কার করা…!
নাহিদের পিছু পিছু সবাই নেমে এলে সিড়ি পথে…?
———-
আরেহ চেয়ারম্যান সাহেব আসুন আসুন আপনার জন্যেই তো এতো সময় অপেক্ষা করতাছি_এতো দেরি ক্যান আসতে আজকে…!
আর বইলো না সিয়াম কাজের অনেক চাপ, লোকজন পিছু ছাড়ে না_সামনে তো আবার নির্বাচন”-জনগনের মন জয় কইরা থাকা লাগে..!তাই আসতে একটু সময় লাগছে..! এখন এইসব বাদ দেও আজকে আমার জন্য কী রাখছো দেখি…!
চেয়ারম্যান সাহেব মাল একদম খাসা” ফুলের মতন..! দেখতে একটু শ্যামলা কিন্তু সমস্যা নাই_শ্যামলা পরী, হা হা হা..
হাসা রাখ, আমার তো তর সইছে না, তাড়াতাড়ি নিয়া যা,দেখি আগে…!
সিয়াম শিমুর ঘরের তালাটা খুলে দিলো, চেয়ারম্যান ঘরে ঢুকেই শয়তানি হাসি দিলেন,এই বদ্ধ ঘরেই তিনি কতোবার কতো পবিত্র ফুলের মতো দেহে তার অপবিত্র নোংরা থাবা বসিয়েছেন হিসাব নাই…!
সিয়ামের হাতে এক হাজার টাকার একটা চকচকে নোট ধরিয়ে দিয়ে, চেয়ারম্যান বললেন_এই দরজার সামনে পাহারা দেও,কেউ জানি আমার কাজে সমস্যা না করে…!
সিয়াম টাকা পেয়ে অনেক খুশি, বাহিরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলেন, দরজার সামনে চেয়ার টেনে বসলেন…!
চেয়ারম্যান পাঞ্জাবী খুলে হিংস্র দাঁতে শয়তানি হাঁসি হাসতে হাসতে, শিমুল দিকে আসছেন…!
শিমু একটা চেয়ারে হাত পা বাঁধা অবস্থায় বসে আছে,ছুটার জন্য ছটফট করছে…!
আমার কাছে আসবেন না বলে দিচ্ছি, আমার থেকে দূরে যান,দয়া করুন…! সমাজের চেয়ারম্যান আপনি.. আপনি নেতা_আপনার চরিত্র যদি এমন হয়,সমাজ টিকবে কেমনে…! আপনার দায়িত্ব সবাইকে রক্ষা করা, কিন্তু আপনি রক্ষক নামের ভক্ষক..! দয়া করুন একটু,
শিমুর আকুতি যেন চেয়ারম্যানের মনে আরো আনন্দ দিচ্ছে, পৈশাচিক আনন্দ নিয়ে চেয়ারম্যান বলতে লাগলো_আরে আমার জবা ফুল এতো ছটফটানি কইরা লাভ নাই,১০হাজার টাকা দিয়া তোমারে কিনা নিছি, ছেড়ে দিবার জন্য নাকি…!এই রাত শুধু তোমার আর আমার,আহারে আমার ময়না পাখির কষ্ট হইতাছে_আচ্ছা আমি বাঁধন খুইলা দিতাছি..!
আপনি দূরে থাকুন, আমার বাঁধন খুলা লাগবো না, আপনি চলে যান…!
চেয়ারম্যান শিমুর কোন কথা কানে নিচ্ছে না, পায়ের বাঁধন খুলে দিলেন..! কানে তালা লাগা হাঁসি দিয়ে বললেন, হাতের বাঁধন এমনে থাকে, এমনে ভালো লাগতাছে হা হা হা…
ধাক্কা মেরে শিমুকে ফেলে দিলেন বিছানায়,ওড়না টেনে ছুড়ে ফেললেন দরজার কাছে…!
হঠাৎ করেই সিয়াম আহ্ করে উঠলো,সিয়ামের মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করছে কবীর..সিয়াম লুটিয়ে পড়লো..
শিমুর চিৎকার শুনে, রুবেল দৌড়ে গেলো ঘরের ভেতর
দরজার সামনে শিমুর ওড়না পড়ে থাকতে দেখে রুবেলের মাথায় যেন আগুন জ্বলে উঠলো,এক লাথি মেরে বিছানায় থেকে ফেলে দিলো চেয়ারম্যান সাহেব কে..! কু’ত্তা’র বা’চ্চা তোর এতো বড় সাহস তুই আমার শিমুল ফুলের গায়ে হাত দিছোস.. এলোপাথাড়ি লাঠি দিতে থাকলো চেয়ারম্যানের বুকে,চুল ধরে টেনে তুলে, দেয়ালে সজোরে ধাক্কা মারতেই চেয়ারম্যান জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন…!
ওড়না গায়ে জড়িয়ে দিয়ে, রুবেল শিমুকে জড়িয়ে ধরলো,আর ভয় নাই শিমুল ফুল, আমি তোমাকে নিতে আইছি…! এইবার আমরা শহরে ফিরবো..!
——-
মীম নাফিসা এগিয়ে গেলো মাঝের ঘরে, সেখানে কিছু মেয়েকে অর্ধ নগ্ন অবস্থায় দেখতে পেলো..
মেয়েরা তাদের দেখে কান্নায় ভেঙে পড়লো,হাত জোড় করে বললো, আমাদের বাঁচান আপু,এই নরপশুদের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করুন…!
পাঁচজন মেয়ে ছিলো সেখানে,মীম নাফিসা তাদের অভয় দিলো,কাপড় পড়িয়ে_এই ঘরের বাহিরে নিয়ে আসলো….!
শেষের ঘরে শোনা যাচ্ছে গোড়ানির, কবীর এক লাথি মেরে দরজা ভেঙ্গে ফেললো..!
ক্যামেরা নিয়ে ছবি তুলতে তুলতে বললো,আরে সাহেব মুখ এমন বেগুনের মতো ক্যান_একটু হাসুন’-না,হাসলে ছবি ভালো হবে না… লোকটা চমকে গেলো..!
ঘাড় ধরে লোকটাকে বিছানা থেকে নিচে নামায় কবীর_শা”লা’র ব্যাটা এখনো দাঁড়িয়ে আমার মুখ দেখছে,প্যান্ড কী পড়বি নাকি এমনে ছবি তুলে খবরের কাগজে ছাপিয়ে দিবো ধমক দেয় কবীর.. লোকটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়, তাড়াতাড়ি কাপড় পড়ে নেয়..!সে আজকে প্রথম এইখানে এসেছে,আর পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে একটা মেয়েকে কিনে নিছে, এক রাতের জন্য…!
কিন্তু কাজের মূহুর্তে শেষমেশ কি হয়ে গেলো…!
কবীর ঘর থেকে বেড়িয়ে নাফিসা কে ডাকলো,এই নাফু এইদিকে আয়…
বলো কী হয়েছে..?
এই মেয়েকে কাপড় পড়িয়ে বাহিরে নিয়ে আসো…!
নাফিসা ওরে কাপড় পড়তে দেয়, বাহিরে এক লাইনে দাঁড় করায় ছয়জন মেয়েকে…!সবাই ভয়ে কাঁপছিল..!
কবীর বাহিরে এসে সবাইকে অভয় দিলো, কেউ চিন্তা করবেন না, আমরা আপনাদের পরিবারের কাছে পৌঁছে দিতে এসেছি…!
রুবেল শিমুকে নিয়ে বেড়িয়ে আসলো, কিন্তু নাহিদকে কোথায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না…?
কবীর রুবেল এগিয়ে যায়, পরের সারির ঘর গুলোর দিকে,গোডাউনের দরজার সামনে যেতেই দেখতে পারে, ফেনসিডিলের বোতল গুলো সব ভাঙ্গা,ড্রাগের প্যাকেট গুলো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে পরে আছে, নাহিদ সবকিছু নষ্ট করে দিছে…!
ঘরে পেট্রোল ঢেলে দিছে, এখন আগুন ধরানো বাকি…
নাহিদ বললো সবাইকে নিয়ে গুপ্ত রাস্তা দিয়ে বেড়িয়ে যাও, আমি আসতাছি একটু পর…!
মীম বলে উঠলো আমি আপনার সাথেই যাবো..!
মীম পাগলামি কইরো না, তুমি যাও ওদের সাথে, আমি আসতাছি একটু পরে…!
মীম কথা শুনে না,সে থাকবেই..!
রুবেল, কবীর, নাফিসা সব মেয়েদের নিয়ে বেড়িয়ে যায়, পিছনের দরজা দিয়ে…
ঘাটে নৌকা বাঁধা ছিলো, রুবেল ছয়জন মেয়েকে নৌকায় তুলে দেয়, শিমুকে নিয়ে নিজেও নৌকায় উঠে পড়ে…!
আরেকটা নৌকা ঘাটে বাঁধা আছে এইটায় নাহিদ মীম যাবে…!
নিশি রাত মাঝি নৌকা ছেড়ে দেয়, কবীর, নাফিসা হাত নাড়িয়ে রুবেলকে বিদায় জানায়..! মুক্ত হয়ে গেলো কিছু প্রান,ওরা আবার উড়বে মুক্ত পাখির মতো…
আবার ফিরে যাবে পরিবারের কাছে..!
পূনতা পেলো একটা ভালোবাসা…শিমু ফিরে এসেছে রুবেলের বুকে…!
নাফিসা জড়িয়ে ধরে কবীরকে,স্বপ্ন বুনে আমরাও একদিন এইভাবে পাড়ি দিবো, ভালোবাসার পূর্ণতা নিয়ে… কবীর নাফিসা কে নিয়ে রওনা দেয় বাড়ির দিকে.. নাহিদ ওদের বাড়িতে যেতে বলছে…!
———-
গোডাউনে আগুন দেওয়া হয়েছে, সবকিছু জ্বালাই দেওয়া হয়েছে, নাহিদের মুখে প্রশান্তির হাসি…
দেখছো মীম আমি পারছি,এই আগুনের শিখায় আমি হাজার মানুষের হাঁসি দেখতে পাচ্ছি..চলো এখন বিদায়ের পালা, আমাদের এইখানে থেকে বের হতে হবে…
নাহিদ মীমের হাত ধরে বেড়িয়ে আসে পাতাল পুরীর ঘর থেকে, মুক্ত খোলা আকাশের নিচে জোরে শ্বাস নেয়, এখন তাঁরাও মুক্ত..
এখন পাড়ি দিবে স্বপ্ন পুরন করার আশায়, দূর শহরে..
নৌকার কাছে যেতেই,কারো আওয়াজ শুনা গেলো..
দূর থেকে রায়হান মন্ডল নাহিদের দিকে লাঠি ছুড়ে মারলো..
আঘাত লাগে নাহিদের পিঠে, নাহিদ হোঁচট খেয়ে পড়ে যায়…!
জানোয়া’রের বা”চ্চা আজকে তোকে জান্ত কবর দিবো,এই গ্রামে…!
চলবে….!