ধ্রুবতারা
পর্ব_৭
পুষ্পিতা_প্রিমা
সেদিনের ঘটনায় নিস্তব্ধতা নেমে এল দুই বাড়িতেই। রোয়েনের উপর কথা বলার সাধ্যি কারো নেই। নাহিল চায় ও না। রোয়েন না আবার মনে করে বসে তার কথার কোনো মূল্যই নেই এই বাড়িতে। জায়িদ ও বুঝাতে যাওয়ার সাহস পেলনা। গম্ভীরমুখো রোয়েনের সাথে বেশ হিসাবনিকাশ করেই কথা বলতে হয়। তবে বেশি খারাপ লাগছে রাহার জন্য।
নাহিলের উপর একদফা রাগারাগি করলো সোরা। কি দরকার ছিল মেয়ের এই অন্যায় আবদার রাখতে যাওয়ার। মানুষ যা চাইবে তা পাবে এমন কোনো কথা নেই। নাহিল শুধু একটা কথা বলে চলে গেল।
‘ রাহার জায়গায় আমি নিজেকে দেখতে পাচ্ছি সোরা। তবে যদি তোমার মতো হতো আমার ও চিন্তা ছিল না। দুর্ভাগ্যবশত রাহা ঠিক আগের নাহিলের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।
সোরা কিছু বলার সাহস করে উঠতে পারলো না। নাহিল সঠিক জায়গায় আঁচড় কেটেছে তার। ব্যস, কি আর করার?
অনার্সের ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা সবেমাত্র শেষ হলো রাহার। ওর স্বপ্ন বড়মার মতো লয়ার হওয়ার। যেরকম তাননা আপু। বাড়ির সবাই রোয়েনের কথায় যতটা না ভেঙে পড়েছে রাহা তার বিন্দুমাত্র ও ভেঙে পড়েনি। সবার সামনে স্বাভাবিক। সবাই না দেখালে ও বুঝতে পারে, রাহার মনের অবস্থা।
তখন সকাল। গগনে রোদ উঠেছে। ফাঁকফোকর গলিয়ে সেই রোদ বাড়ির আনাচে কানাচে এসে ডুকে পড়ে জানান দিল প্রভাতের আগমন। নিচ থেকে সোরার ডাক ভেসে এল। রোয়েন ফ্রেশ হয়ে নিল। তারপর ধীরপায়ে হেঁটে সিঁড়ি ধরলো। থেমে থেমে নামতে নামতে চোখ বুলালো ড্রয়িংরুমের এপাশ ওপাশ। সবার ভাবভঙ্গি বুঝার চেষ্টা করলো। সবাই তারদিকে একবার চোখ তুলে তাকিয়ে আর তাকালো না। তাননা ডাকল
‘ মামুনি মুননার কফি।
সোরা কফির মগ নিয়ে এসে মুননার হাতে দিল। সালেহা ডাকল
‘ ভাই এদিকে আয়।
রোয়েন কফির মগে চুমুক দিতে দিতে বাইরে বেরোয়। উঠোনে পা রাখতেই ওই বাড়ির ছাদ থেকে জাহেদার ডাক ভেসে আসে।
‘ ভাই এদিকে একটু আয় তো। তোর জন্য পায়েস,,,
রোয়েন সোজাসুজি বড় গলায় বলল
‘ এখন কিছু খাব না। জোর করবে না নানু।
জাহেদা মুখ ভেংচায়।
‘.তোরে খাইতে বললে মারতে উঠোস। এত ত্যাড়া কার মতো হলি? তোর বাপ ও তো এমন ছিলোনা। আর আমার জুননু ও কখনো এমন ছিলনা।
রোয়েন শুনলই না। হেঁটে হেঁটে গেল বাগানের দিকে। কফির মগে চুমুক দিয়ে সামনে তাকাতেই দেখতে পেল সাদা ধবধবে ওড়না, লাল রঙের সেলোয়ার কামিজ পড়া একটি মেয়েকে। আনমনা হয়ে দাঁড়িয়ে গাছের ফুল ছিঁড়ছে। একটা না সব ফুল। মাটিতে লুটোপুটি খাচ্ছে সাদা বেলীফুলগুলো। আশ্চর্য!
হনহন পায়ে হেঁটে বাড়িতে চলে আসলো রোয়েন। বাড়ির সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল
‘ বাগানে এসব কি হচ্ছে? ফুলগুলো সব ছিঁড়ে ফেলছে কেন?
সোরা দৌড়ে এল। বলল
‘ কোথায়? কে?
তাননা দৌড়ে বের হলো বাড়ি থেকে। জিশান ও পেছন পেছন দৌড়ালো।
সোরা নরম পায়ে হেঁটে বের হলো। কি হলো কে জানে?
রোয়েন গেল না। অগ্নিবর্ণ চোখে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইল মেঝের দিকে। সালেহা বেগম লাঠিতে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। বলে
‘ আবার কি হলো ভাই?
রোয়েন জবাব দিল না। তবে দেখলো পুরো ফুলগাছের চারা উপড়ে নিয়ে এসে রুমের দিকে চললো রাহা। চোখ স্বাভাবিকের চাইতে বড় হলো রোয়েনের। তাননা আর সোরা দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়ে থাকলো। তাদের মুখে ভাষা নেই। ভেঙে মুচড়ে ফেলা গাছটি ঘুরাতে ঘুরাতে যেতে লাগলো রাহা। নাতাশা ডাক দিল
‘ এটা কি করলে রাহা?
‘ আমার গাছ। আমি লাগিয়েছি। আমি যখন চলে যাব তখন এর যত্ন করবে কে? সেজন্য উপড়ে ফেলেছি। সব গাছ উপড়ে ফেলব। একটা গাছের চিহ্ন ও রাখবো না আমি।
সবাই হতভম্ব, বিস্মিত। রাহা দোতলায় উঠে গাছটি ছুঁড়ে মারলো নিচে। এসে পড়লো রোয়েনের সামনাসামনি। সে পিছু হাঁটলো। সোরা আর তাননা আঁতকে উঠলো। মাথায় হাত দিল সোরা। এই মেয়েকে নিয়ে কোথায় যাবে সে?
সালেহা বেগম সোফায় বসে মাথা এলিয়ে দিল। রোয়েনকে বলল
‘ কি শুরু করলি ভাই?
রোয়েন গর্জন করল।
‘ আমি করছি। আমি? কে করছে দেখতে পাচ্ছ না।
উপর থেকে আওয়াজ এল।
‘ বেশ করেছি। আবার ও করবো । বারবার করবো। দেখি কে কি করে?
নিজের রুমে ডুকে দরজা বন্ধ করল রাহা। খাটের উপর বসে মুখ ঢাকলো দুহাত দিয়ে। দুহাত ভিজে উঠলো ভেজা গালের সংস্পর্শে। কিছুক্ষণ পরপর হিঁচকির সাথে কেঁপে উঠল সারা তনু।
_____________
তখন রাত। মেডিক্যালের কতগুলো রিপোর্টে তখন চোখ বুলাচ্ছিল রোয়েন। সালেহা বেগম দরজা খুলে ডুকলো ঘরে। ডাকল
‘ ভাই কিছু কথা বলতে এলাম।
‘ বলে যাও।
সালেহা সরাসরি বলল
‘ বিয়ের ব্যাপারে কিছু বলার ছিল।
‘ বলে ফেলো।
সালেহা ইতস্তত বোধ করলো।
‘ যদি তোর আম্মা আব্বা বেঁচে থাকতো তখন রাহাকেই তোর সাথে বিয়ে দিতে চাইতো। তখন কি করতি? এমনটা করতে পারতি।
‘ ওরা আমার কথা ভেবেছে দাদু? রেখেছে কথা? তাহলে আমি কেন রাখবো? ওদের খুশি করাতে পারছিনা আমি। আমি আর কোনো কথা শুনতে চাই না।
সালেহা বলল
‘ কিন্তু?
‘ কিন্তু কি? তুমি দেখেছ এখনকার যুগে কাজিনের সাথে বিয়ে হতে দেখেছ? রাহা আমার কাজিন। ছোট থেকেই ও আমার সামনে বড় হয়েছে। একসাথে একবাড়িতে বড় হয়েছি আমরা। রাহা বাচ্চা মেয়ে উলটপালট চিন্তাভাবনা ওর মনে আসতেই পারে। সেটা দোষের নয়, দোষের এটাই যে তোমরা ওর কথাকে পাত্তা দিচ্ছ। চারবছর আগে কি বলে গিয়েছিলাম আমি? মনে নেই?
সালেহা বলল
‘ আছে।
‘ তাহলে? রাহাকে আমি আসার আগে বিয়ে দাওনি কেন? ওর কি তখন বিয়ের বয়স হয়নি? দেখো দাদু আমাকে আমার মতো থাকতে দাও, এসব আমার পছন্দ না। আমি চাই রাহা ভালো থাকুক। তাননার মতো সে ও সুখী হোক। তাননা, রাহা, নোহা তিনজনকে ভালো ছেলের সাথে জুড়ে দেওয়া আমার কর্তব্য। আমি তাই করবো। এর চেয়ে বেশি কিছু পারবো না আমি। বাবাই আর মামা আমার সামনাসামনি হয়নি নাহলে আমি এটা বলে দিতাম। রাহাকে বিয়ে করা আমার পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব না।
সালেহা চুপচাপ সব শুনলো। বলল
‘ তোর কি অন্য কোথাও পছন্দ আছে ভাই?
বিরক্ত হলো রোয়েন তাই উত্তর দিল না। সালেহা লাঠি ঠকঠক করে নিচে চলে আসলো। সবাইকে বলল
‘ মুননার অন্য পছন্দ আছে। রাহার বিয়ের কথাবার্তা আগানো দরকার। এভাবে চললে শুধু শুধু ঝামেলা বাড়বে বাড়ির ভেতর।
নাহিল মাথা নাড়ালো। বলল
‘ মুননার অন্য পছন্দ আছে সেটা বলায় খুশি হয়েছি।
সোরা এসে বলল
‘ হয়েছে, এসব নিয়ে আর কথা হবে না।
তাননা জিশানকে খাওয়াচ্ছিলো। সে এসব শুনে বলল
‘ সবাই সবার কথা ভাবছো, রাহার কথা কেউ ভাবছ না কেন? মুননার অন্য পছন্দ আছে সেটা আমি জানলাম না কেন? মুননা কি আমাকে পর ভাবতে শুরু করে দিয়েছে?
তাননা চোখজোড়া ছলছলে দেখালো। জিশানকে সোফায় বসিয়ে সে হাঁটা ধরলো রোয়েনের রুমে। ধপ করে দরজা খুলে বলল
‘ ওই মেয়ের ছবি দেখা তাড়াতাড়ি। দেখা।
মুননা বলল
‘ কোন মেয়ের?
‘ যার জন্য রাহাকে বিয়ে করছিস না। দেখা।
রোয়েন অবাক। বলল
‘ তুই কাঁদছিস কেন?
তাননা গালে ঘষা মেরে বলল
‘ দেখা, কোনো কথা বলবি না একদম।
রোয়েন এগিয়ে এল। তাননাকে জড়িয়ে ধরে ফেলল। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল
‘ তুই কাঁদবিনা। একদম কাঁদবিনা। কেউ নেই , দাদু কি বলেছে?
তাননার কান্নার আওয়াজ আরও বাড়লো। বলল
‘ মিথ্যা বলছিস, কেউ তো আছেই। নাহলে রাহাকে বিয়ে করতে সমস্যা কোথায়? যেখানে আম্মা আব্বা এটাই চেয়েছে।
রোয়েন কিছু বলল না। তাননা কাঁদতে কাঁদতে বলল
‘ ছাড়। আমার সাথে জীবনেও কথা বলবি না তুই। ছাড়।
রোয়েন ছাড়লো না। বোনের মাথা বুকে চেপে ধরে মাথার উপর চিবুক রেখে বলল
‘ বোন আমার কাঁদিস না । তোর কান্না সহ্য হয়না আমার। কাঁদিস না।
‘ কাঁদাস কেন? আমাকে কাঁদাস। রাহাকে কাঁদাস।
‘ রাহাকে কখন কাঁদালাম?
তাননা নাক টেনে টেনে বলল
‘ মেয়েটা তোকে ভালোবাসেনা? বুঝিস না কেন?
‘ আমি ভালোবাসা শব্দটায় বিশ্বাসী না তাননা।
তাননা হাল ছেড়ে দেয়। বলে
‘ কোনো না কোনো সময় বিয়ে তো করতেই হবে। তাহলে রাহাকে করলে সমস্যা কোথায়?
ভালো না হয় পরে বাসবি।
রোয়েন হেসে ফেলল।
‘ রাহা ভালো থাকবেনা আমার সাথে।
তাননা ধাক্কা মারলো ভাইকে। আঙুল দেখিয়ে বলল
‘ আমার সাথে জীবনে ও কথা বলতে আসবি না একদম। আসবি না।
রোয়েন মনখারাপ করে তাকিয়ে থাকে। সবাই তার সাথে কেন এমন করছে? রাহাকে বিয়ে করলেই কি সব সমস্যার সমাধান হবে? কিন্তু সে তো রাহাকে চায় না। রাহাকে সে ভালো রাখতে পারবে না। জোর করে সব হয় না। ভালোবাসা বহুদূর।
___________
বান্ধবীদের সাথে মাত্রই ফুচকার দোকানে এল নোহা। রাহার কথায় বলছিল। রোয়েন ভাইয়ার সাথে বিয়ে নিয়ে কত না এক্সাইটেড ছিল! সব ভেস্তে দিল ভাইয়া। আজ বিকেলেই পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে রাহাকে। সব ঠিকঠাক থাকলে বিয়ে পাকাপোক্ত। নোহা অবাক রাহা আপুর লাজলজ্জা ভেঙে গেছে। সরাসরি বলছে আমাকে এ বাড়ি থেকে বিদায় করবে কখন? দম বন্ধ লাগছে এই বাড়িতে। উফফ নোহা যদি এমনটা বলতে পারতো আজ তার কোলে একটা ছোট্ট লেড়কালেড়কি থাকতো। নোহার ভাবনার ছেদ ঘটে সুভার ডাকে। এই শাঁকচুন্নি আমি আজ যাই। তুই গিলে নে। একটু তাড়াতাড়ি খেতে পারিস না। নোহা ভেংচি কেটে বলে
‘ ধুরর হ।
সুভা চলে গেল। বাদ বাকিরা ও একে একে চলে গেল। টুলের উপর বসে পা নাড়াতে নাড়াতে খাচ্ছে নোহা। পুলিশ অফিসার যদি দেখে কেয়ামত হবে। হুটহাট এই রাস্তা দিয়ে চলে আসতে ও পারে। গ্রোগ্রাসে গিলতে লাগলো নোহা। গতবার পেট খারাপ করার কারণে আব্বা সোজাসাপ্টা বলে দিল, এ রাস্তার পাশে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ফুচকা খাওয়ারই ফল। ঝালে ঠোঁট কাঁপলো নোহার । গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিল নোহা। তারপর কুলি করতে লাগলো। ওড়না দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরলো। মাগোমা এত ঝাল কেন?
ওড়নার বাতাস করতে করতে দাঁড়িয়ে পড়লো রাহা। রিকশার খোঁজে এদিক-ওদিক তাকালো।
সামনে এসে দাঁড়ালো একটি কালো কার। গাড়ির কাচ নেমে যেতেই ভ্রু কুঞ্চন হলো নোহার।
‘ আপনি ড্রাইভার?
সোয়েভ হাসলো। মাথা নাড়িয়ে বলল
‘ জ্বি, সুন্দরী মেয়েদের জন্য ড্রাইভার হতে হয়।
হাসলো নোহা।
‘ মজা না।
সোয়েভ বলল
‘ আরেহ না মজা করব কেন? উঠুন উঠুন। ভাড়া কম দিবেন আর কি। উঠুন।
নোহা বলল
‘ নাহ। আমি রিকশা নেব।
‘ আরেহ প্রতিদিন রিকশাশ চড়বেন নাকি? উঠুন তো।
নোহা পেছনের সিটে বসে পড়লো। সোয়েভ তাকে গাড়ির মিররে একবার দেখে নিয়ে বলল
‘ আপনাকে কি তানিম আর ফলো টলো করে?
নোহা বলল
‘ করে। তবে বাইক নিয়ে নয়, কার নিয়ে।
চুপ হয়ে গেল সোয়েভ। চাপা হাসলো নোহা। বিড়বিড় করল
‘ হুহহ, মামা লও ঠ্যালা। আমারে পড়া শিখাও? আমারে কে ফলো করে আমি বুঝিনা? আমি পুলিশের মাইয়্যা হুহহ!
সোয়েভ ঠোঁট কামড়ে হাসলো। বিড়বিড় করল
‘ শেষমেশ তুই পুলিশের বাচ্চা চোরের মতো ধরা খাইলি সোয়েভ। ছিঃ ছিঃ লজ্জা হওয়া উচিত তোর। ছিঃ।
তালুকদার বাড়ির গেইটের কাছাকাছি এসে গাড়ি থামালো সোয়েভ। নোহা নেমে পড়লো। বলল
‘ ভাড়া কত?
‘ পাঁচশ টাকা।
বিস্ফোরিত চোখে তাকালো নোহা। একটা পাঁচ টাকার নোট বের করে সোয়েভের দিকে ফেলে দিয়ে যেতে যেতে বলল
‘ এটা রাখুন। মাফ করুন আর টাকা নেই।
সোয়েভ হাসলো। ভাবলো, এই পাঁচ টাকার মূল্য পাঁচ কোটি টাকা। ভারী যত্ন করে রাখতে হবে।
নোহা যেতে যেতে হাসলো। আহা, এরকম একটা ড্রাইভার থাকলে কত টাকাই না বেঁচে যাবে। সেই টাকা জমিয়ে তাজমহল বানাবে নোহা।
সোয়েভের গাড়ির সামনে জায়িদের গাড়ি এসে থামলো। জায়িদ সোয়েভকে দেখে কপাল ভাঁজ করল। বলল
‘ তুমি এখানে কেন সোয়েভ?
সোয়েভ ঢোক গিলে বলল
‘ পুলিশ আঙ্কেল এখন ড্রাইভিং করছি।
জায়িদ সন্দিহান গলায় বলল
‘ ইন্জিনিয়ারিং পড়ে ড্রাইভিং?
সোয়েভ বলল
‘ আরেহ আঙ্কেল এটা তো বাবার আদেশ। কি আর করার?
জায়িদ বলল
‘ স্যার কখনো এটা বলবে না সোয়েভ। স্যারের ইচ্ছে ছিল তুমি পুলিশ অফিসার হও। কিন্তু তুমি পড়লে ইন্জিনিয়ারিং নিয়ে, এখন আবার ড্রাইভিং?
সোয়েভ বলল
‘ ওহহ, পুলিশ আঙ্কেল সুন্দরী মেয়ে পটানোর জন্য কতকিছু সাজতে হয়।
জায়িদের ভ্রু কুঞ্চন হলো।
কিছু বলল না সে। সোয়েভ গাড়ি ঘুরিয়ে চলে গেল।
জায়িদ বাড়িতে ডুকতেই দেখলো নোহাকে। শরবত ঢেলে খাচ্ছে জগ থেকে। জাহেদা এসে বলল
‘ আসতে না আসতে মেয়ের দিকে তাকিয়ে কি দেখছিস ওভাবে? মা বাবার নজর বেশি পড়ে।
নোহা শরবত খেতে খেতে তাকালো জায়িদের দিকে । তাড়াতাড়ি অন্য গ্লাসে শরবত ঢেলে নিয়ে দৌড় লাগালো। জায়িদ গ্লাস নিয়ে শরবত খেতে খেতে জিজ্ঞেস করল
‘ সোয়েভকে চেনো মা?
নোহা ভেবেভেবে বলল
‘ না আব্বা? কেন? কে ছেলেটা?
জায়িদ বলল
‘ নাহ, কেউ নাহ।
__________
পাত্রপক্ষের সামনে শক্ত হয়ে বসে থাকলো রাহা। যা যা জিজ্ঞেস করল সোজাসুজি উত্তর দিল। কোনোরকম ভণিতা ছাড়াই। পাত্রের বাবা আর মামা এসেছে। রোয়েন দাঁড়ানো কিছুটা দূরে। ফোনে কথা বলা শেষ হতে না হতেই পাত্রপক্ষের একজন বলে উঠলো
‘ এ কি রাহার ভাই?
নাহিল রোয়েনের দিকে তাকিয়ে বলল
‘ জ্বি।
রাহা বলল
‘ আমি চলে যেতে পারব আব্বা?
নাহিল বলল
‘ হ্যা, যাও তুমি।
রাহা চলে গেল। রোয়েন এসে বসলো নাহিলের পাশে। পাত্রের ছবি দেখে বলল
‘ সব ঠিকঠাক থাকলে কথা আগানো যাক।
আপনাদের ছেলে কি রাহাকে দেখেছে?
‘ জ্বি।
রোয়েন বলল
‘ রাহাকে পছন্দ করেছে?
‘ জ্বি।
‘ ঠিক আছে। রাহার ও আপত্তি নেই এই বিয়েতে। চূড়ান্ত কথায় যাওয়া যাক।
নাহিল তাকালো রোয়েনের দিকে। তাকিয়েই থাকলো। কথাবার্তা সব বলল রোয়েন। নাহিল শুধু বসে থাকলো। শুনে থাকলো রোয়েনের কথা। জায়িদ এসেই বসলো রোয়েনের পাশে। বলল
‘ আগে কি আকদ হবে?
রোয়েন বলল
‘ না, বিয়ে হবে। আগামী সপ্তাহেই বিয়ে। এরমধ্যে যা করার দরকার তা করে নাও। আর রাহা আর আপনাদের ছেলের নাম কি যেন?
‘ মিরন
‘ ও হ্যা মিরন আর রাহার মাঝে ও বোঝাপড়ার দরকার। তাই কাল কিংবা পরশু আপনাদের বাড়ির মহিলা আর ছেলেকে আসতে বলবেন। দেখে যাক, চিনে যাক। সব ভালো ভালোই হোক। আসি।
বলেই উঠে দাঁড়ালো রোয়েন। জায়িদ তাকালো নাহিলের দিকে। নাহিল মাথা নামিয়ে বসে রইল। জায়িদ হাসিমুখে বিদায় দিল পাত্রপক্ষকে । তবে তারপরেরদিন আবার ও রাহাকে দেখতে আসলো মিরন আর মিরনের পুরো পরিবার। গোমড়ামুখো হলে ও রাহাকে বেশ পছন্দ হলো। মিরনের সাথে কথা বলতে বললে রাহা বলল না। বলল
‘ কোনো কথা নেই। সোজা বিয়ে হবে। কথা বললেই মায়া জন্মে যাবে এমন নয়।
সালেহা বেগম সান্ত্বনা দিল রাহাকে।
‘ বিয়ের বন্ধন খুব শক্ত বোন। জড়িয়ে গেলে বুঝতে পারবি, চাইলে ও ছিঁড়তে পারবি না সেই বন্ধন।
অবশেষে বিয়ের দিন ঘনিয়ে এল।
চলবে,