আষাঢ়ে_প্রেমের_গল্প
নুজহাত_আদিবা
পর্ব ১৮
অনেক চেষ্টার পরে বর্ণের দেখা মিললো। ওই ঘটনার প্রায় দুইদিন পরে বর্ণকে আইডিতে একটিভ হতে দেখলাম। আমি ওনাকে একটিভ হতে দেখেই একটা অডিও কল দিলাম। চারবারের মতো কল দিলাম। বর্ণ বারবার কেটে দিচ্ছেন। পাঁচবারের বার যখন কল দিলাম। বর্ণ কল রিসিভ করলেন। আমি শুরুতেই বললাম,
— হ্যালো।
— আপনার এখন নিজের হবু হাসবেন্ডকে সময় দেওয়া উচিত। আপনি সেটা না করে আমাকে বিরক্ত করছেন কেন?
— সবকিছুতে বেশী বোঝার অভ্যাসটা আপনার এখনও গেল না বর্ণ।
— যা বোঝার আমি বুঝে ফেলেছি। এখন আর কিছু শুনতে কিংবা বুঝতে চাই না।
— আপনি কী বুঝেছেন সেটা আমি জানি। আমি সব সময় বলি দুই লাইন। আপনি শোনেন পাঁচ লাইন। আর আমাকে কথা শোনান দশ লাইন। এই হলো আপনার অভ্যাস।
— কী বলতে কল দিয়েছো জলদি বলো। আমার এত অবসর সময় নেই গল্প করার মতো।
— কোথায় ছিলেন এতদিন? কত ভাবে আপনার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। কিছুতেই কিছু লাভ হয়নি। এত জেদ কেন আপনার?
— এত কথা বলার সময় নেই আমার। রাখছি আমি।
— বর্ণ এখন যদি আপনি কল রাখেন তাহলে আপনার ক্ষতি। এর দ্বায়ভার আমি নিতে পারবো না।
— আমার ক্ষতি? আমার যা ক্ষয় ক্ষতি হওয়ার ছিল সব হয়েই গেছে। তাহলে কোন ক্ষতির চিন্তা করবো আমি?
— আপনার বোকামিতেই আপনি আমাকে হারাবেন বর্ণ।
— যাকে কখনো পাইনি তাঁকে হারানোর প্রশ্ন আসে কী করে?
— আপনি আসলেই বেশী বুঝেন বর্ণ। সেদিন আমাকে দেখতে এসেছিল ঠিকই কিন্তু আমার বিয়েশাদি কিছুই ঠিক হয়নি। ছেলের ও আমাকে পছন্দ হয়েছিল। কিন্তু আমি কায়দা করে বিয়ের কথা আর এগুতে দেইনি। সেদিন যদি একটু অপেক্ষা করে আমার কথা শুনতেন তাহলে এমন কিছুই হতো না। কিন্তু, নাহ আপনি আপনার রাগ জেদ নিয়ে নিজের মতোই ছিলেন।
— মেহুলিকা শোনো…
— একদম চুপ। আপনার সাথে কোনো কথা নেই আমার। আপনাকে সত্যটা জানানো জরুরি ছিল তাই জানালাম। এই কয়দিন যেমন ছিলেন তেমনই থাকুন। বায়।
আমি এটা বলে টুস করে কল কেটে দিলাম। এবার বুঝুক ঠ্যালা। রাগ জেদ শুধু ওনারই আছে। আমার যেন নেই। থাক এবার তুই তোর মতো। আমি একটা কথাও বলবো না। নিজে থেকে যেদিন কল দিবে সেদিন কথা বলবো।
আমি ফোন অফ করে চুপচাপ বসে রইলাম। কোনো কথা নেই ওনার সঙ্গে। কিছুতে কিছু বললেই রেগেমেগে একাকার।
আমি ক্যালেন্ডারের দিকে তাকিয়ে দেখি আজ সোমবার। কালকে সেই হিসেবে মঙ্গলবার। এই বৃহস্পতিবার আমার বড় ফুপির মেয়ের বিয়ে। বুধবারে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান। তাই কালকে আমরা বড় ফুপির বাসায় যাবো। কতদিন পরে ফুপির বাসায় যাবো। পড়াশোনা সহ অন্যান্য কাজকর্মের চাপে অনেকদিন ফুপিদের বাসায় যাওয়া হয় না। এই বিয়ের উসিলায় সব কাজিনদের সাথে দেখাও হয়ে যাবে। ছোট ফুপিরা,বড় চাচ্চুরা সবাই আসবে। কী যে মজা হবে। অনেকদিন যাবত কোনো কাজিনদের বিয়েও হয় না। সেই সূত্রে একটু বিয়েও খেতে পারি না। এবার শান্তি করে বিয়েটা খাওয়া যাবে। একেবারে তিনদিনের টানা দাওয়াত। আহ! কী শান্তি!
ওইদিন সারাদিন ফোন অফ করে রাখলাম। রাতে কী মনে করে ফোন অন করে দেখি বর্ণের অগনিত কল। যেগুলোর একটাও আমি ধরিনি। আমাকে অনলাইন হতে দেখে বর্ণ আবার কল দিলেন। আমি এবার ও ধরলাম না। মোট কথা আমি আজকে বর্ণের সাথে কোনো কথা-ই বলবো না। যে সামান্য মজা বোঝে না তাঁর সাথে আবার কীসের কথা?
বর্ণ আমাকে লাস্টবার যখন কল দিলেন আমি একপ্রকার বিরক্ত হয়ে কলটা ধরলাম। কল ধরেই দিলাম এক ঝারি। রেগে গিয়ে বললাম,
— কী হয়েছে? সমস্যা কী?এত রাতে ঘুম নেই না কি চোখে? কাজ না থাকলে খই ভাজুন যান। আমাকে বিরক্ত করলে এবার সত্যি সত্যি খবর আছে বললাম।
— রাত কোথায় পাও? এখন তো সকাল। কানাডায় সকাল কিন্তু বাংলাদেশে এখন রাত।
— ওহ সরি, মনে ছিল না আমার।
— যান এখন, আমি ঘুমাবো এখন। সারাদিন অনেক কাজ করেছি এখন একটু শান্তিতে ঘুমাতে চাই বায়।
— ও আমার মেহুলিকা। ও আমার মেহু সুন্দরী।
— এই সুন্দরী ফুন্দরীটা কে?
— আমার বউ, নাম তাঁর মেহুলিকা। সাথে আমার দুই বাচ্চার মা।
— মেহুলিকা এখনও পিওর সিঙ্গেল। হাসবেন্ড কিংবা বাচ্চা কাচ্চা কিছুই নেই তাঁর।
— হয়নি তবে খুব শীঘ্রই হবে।
— আগে হোক তারপর। যাঁর বিয়ে তাঁর খবর নেই পাড়াপড়শির ঘুম নেই।
— এমন রেগে রেগে কথা বলছে কেন? মিষ্টি করে কথা বলো।
— বেশি মিষ্টির দরকার নেই। কারণ, পরে ডায়বেটিস হতে পারে।
— ওসব বাদ দাও। এখন বলো আমার কথায় কী বেশি কষ্ট পেয়েছো?
— নাহ্ আমি আবার কষ্ট পেতে পারি না কি? আমি তো আনন্দে ধেই ধেই করে নেচেছি।
— মেহুলিকা! যেটা জিজ্ঞেস করলাম সেটা বলো না।
— জেনে আপনার কী লাভ? আমি কিছু বললেই দোষ হয়ে যায়। আর আপনি আমাকে দিনদুনিয়া বলে উল্টে ফেললেও আপনি নির্দোষ।
— বললাম তো সরি। সরি সরি সরি।
— থাক হয়েছে আর বলতে হবে না সরি। জুতো মেরে গরু দান!
— কী করছো এখন?
— জামাকাপড় প্যাকিং করছি।
— কেন কোথায় যাবে?
— আমার কাজিনের বিয়ে। তাই যেতে হবে কাজিনদের বাসায়।
— মানে, এই কয়দিন কথা বলতে পারবো না তোমার সাথে?
— আসলে হ্যাঁ। আপনি তো আমার ফ্যামিলি কেমন তা জানেনই। তাই এই কয়দিন কথা বলতে পারবো না।
— হুম, কিন্তু ছবি তুলবো কিন্তু তোমার। আমাকে সেন্ড করে দিবে। আমি কিন্ত তোমাকে দেখার অপেক্ষায় থাকবো।
— আচ্ছা। রাখি এখন ফোনটা? আমার ঘুম পাচ্ছে খুব।
— আচ্ছা।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই আম্মার সাথে বেরিয়ে গেলাম ফুপির বাসার উদ্দেশ্যে। আব্বা কালকে যাবেন। তাই আজকে আমি আর আম্মা একাই যাচ্ছি।
বড় ফুপিদের বাসায় গিয়ে দেখি আমার কাজিনরা সব ডান্স প্র্যাকটিস করছে। আমি এবার বোকা বনে গেলাম। আমি কিছুই জানতাম না এই ব্যাপারে। ওরা যে সবাই একসঙ্গে গ্রুপ ডান্স করবে কেউ বলেনি আমাকে। আমি এবার জিজ্ঞেস করলাম ওদেরকে,
— আমাকে ছাড়াই সবাই ডান্স রিহার্সাল করছো? এত কিছু প্ল্যান করেছো তোমরা আমাকে তো কেউ কিছুই জানালে না।
আমার কাজিনদের মধ্যে যে সবাইকে ডান্স প্র্যাকটিস করাচ্ছিল তাঁর নাম রিহা। আমার বড় ফুপির ছোট মেয়ে। বয়সে যদিও আমরা সমবয়সী। কিন্তু, আমরা তুমি সম্মোধন করেই কথা বলি। আমার কথা শুনে রিহা আমাকে বললো,
— আমরা কেউই কোনো প্ল্যান করিনি। সবাইকে দেখেই আমার ডান্স রিহার্সালের কথা মনে পড়লো। তুমিও ঢুকে যাও সবার সাথে। একসাথে সবার প্র্যাকটিস করতে পারবে। আমি রিহার কথা শুনে একবার চিন্তা করলাম প্র্যাকটিস করা শুরু করবো। আবার চিন্তা করলাম আম্মার অনুমতি নেওয়াটা বেশি জরুরি।
আমি দৌড়ে গিয়ে দেখি আম্মা বড় ফুপির সাথে গল্প করছেন। আমি গিয়ে সবার সাথে ডান্স রিহার্সালের কথাটা আম্মাকে বললাম। আম্মা শুনেই না করে দিলেন। আরও বললেন আব্বা না কি এইসব জিনিস পছন্দ করেন না। আব্বা শুনলে বকা দেবেন। আমি তবুও আম্মার কাছে কিছুক্ষন অনুনয় বিনয় করলাম। শেষে বড় ফুপি আম্মাকে বললেন,আমাকে সবার সাথে ডান্স রিহার্সাল করতে দিতে। আম্মা তাও অনেক ভেবে চিন্তে আমাকে ডান্স রিহার্সাল করার অনুমতি দিলেন। কিন্তু কড়াকড়ি ভাবে বলে দিলেন কোনো ছেলের সাথে যেন নাচগান না করি। যা করি সব যেন মেয়েদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। আমিও সায় দিয়েছি আম্মার কথায়। কারণ সায় না দিলে আম্মা আমাকে ডান্স প্র্যাকটিস করতে দেবেন না।
চলবে….