তুমি_যে_আমার🥀
Writer_Nondini_Nila
Part_8
সকাল সকাল অভ্র বাসা থেকে বেরিয়ে এলো। উদ্দেশ্য বর্ষাদের বাড়ি। বর্ষা দের বাড়ি এসে বর্ষার মায়ের চেকআপ করলো। তিনি এখন একটু সুস্থ কিন্তু মেয়ের জন্য সারাদিনে চোখের পানি ফেলতে লাগে। অভ্র কি বলে তাকে সান্তনা দিবে তা জানে না। মেয়ের জন্য মা-বাবা মনের অবস্থা কি হয় সেটা একমাত্র তারাই ফিল করতে পারে। বড় বড় পুলিশ অফিসাররা কেসটা হ্যান্ডেল করছে কিন্তু কোন দিশা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ভালোবাসার মানুষটির এমন বিপদে নিজের মনটাও ভালো নেই অভ্রের।
বর্ষার মা কাঁদতে কাঁদতে বলল, ‘ আমার মেয়েটাকে কি আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।’
অভ্র কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা? মানুষটার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অভ্র বলে,
‘আপনি এতটা টেন্স মাথায় নেবেন না প্লিজ। নিজেকে সুস্থ রাখুন। বর্ষা আপনার এই অবস্থা দেখলে তো কষ্ট পাবে ও। ঠিক ফিরে আসবে ওকে খুঁজে পাওয়া যাবে খুব তাড়াতাড়ি ততক্ষণ নিজের খেয়াল রাখেন। এতটা কান্নাকাটি করবেন না। এসব আপনার জন্য ক্ষতিকর। নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। ইনশাল্লাহ তিনি বর্ষাকে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দেবে।’
বর্ষার মা মুখ ছেপে কাঁদছে অভ্র নিজের সাধ্যমত সান্ত্বনা দিয়ে বেরিয়ে এল বাসা থেকে।
এদিকে নিদ্রা লাল টকটকে শাড়ি পরে রুম থেকে বের হলো। মাথায় ঘোমটা টেনে ভদ্র হয়ে নিচে এলো। সেখানে ওর শাশুড়ি মা ও ওর একমাত্র ননদ ছিল। শাশুড়ি মা এগিয়ে এসে নিদ্রা কে বলল,
‘অভ্র কোথায় গেছে বৌমা!’
নিদ্রা হকচকিয়ে যায় ও জানে না অভ্র কোথায় গেছে। বাথরুমে যাওয়ার আগে দেখতে পাওয়া অভ্রকে ফিটফাট হয়ে রেডি হতে। জিজ্ঞেস করা হয়নি।বাথরুম থেকে বের হয়ে অভ্র ক্যারমে পাইনি। শাশুড়ি মা আমার হাত ধরে জিজ্ঞেস করল তুমি জানো না।
আমি মাথা দুলিয়ে না বললাম। তিনি আমাকে টেনে একটু আড়ালে নিয়ে গিয়ে বলল,
‘তোমার আর অভ্রের মাঝে সব কি ঠিক আছে? তোমরা কি এই বিয়েটা নিয়ে সিরিয়াস হয়েছ?’
আমি থতমত খেয়ে শাশুড়ি দিকে তাকিয়ে আছি কি বলব তাকে? আমি বিয়েটা নিয়ে সিরিয়াস হলেও অভ্র তো এই বিয়ে নিয়ে মোটেও সিরিয়াস না।
আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি বলে তিনি আবার আমাকে বলল, ‘দেখ নিদ্রা মা তোমাকে আমার আগে থেকেই পছন্দ। তোমাদের ফ্রেন্ডশিপ কাল থেকে আমি চাইতাম তুমি অভ্রের বউ হও। কি লক্ষ্মীমন্ত মেয়ে তুমি আর কি সুন্দর ব্যবহার। কিন্তু আমার অভ্র তো তোমাকে ভালোবাসলো না মনে মনে খুব দুঃখ পেয়েছিলাম বর্ষা মেয়েটাকে আমার মোটেই পছন্দ হয়নি কেমন চঞ্চল টাইপের একটা মেয়ে। যেভাবেই হোক মেয়েটার সাথে বিয়ে ভেঙে গেছে আর তোমাকে আমি বাড়ির বউ করে আনতে পেরেছি আমি যে কত খুশি।’
উনার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে ওনার দিকে তাকালাম উনার চোখ মুখে উজ্জ্বলতার ছাপ। উনি আমাকে পছন্দ করে আর বউ হিসেবে এতোটা মেনেছে দেখে আমিও মনে মনে খুশি হলাম। যাক একজন তো আমাকে বাড়ির বউ হিসেবে মেনেছে।
‘তোমাদের মধ্যে কি চলছে আমাকে খুলে বল!’
অভ্রের মা খুব নরম গলায় বলল। আর তিনি এটা বলল। আমাকে মায়ের মত ভেবে সব শেয়ার করতে পারো। অনেকদিন পর তার মাঝে নিজের মায়ের ছায়া খুঁজে পেলাম আমি তাকে সব বলে দিলাম।অভ্র আমাকে ডিভোর্স দিতে চাই। ও বর্ষা কে ভালোবাসে। বর্ষাকে খুঁজে পেলে বর্ষাকে বিয়ে করবে।
‘ও বললেই হলো নাকি বিয়েটা কি ছেলেখেলা নাকি। ওর বউ তুমিই থাকবে। আর বর্ষাকে কে না কে তুলে নিয়ে গেছে সেই মেয়েকে আমি বাড়ির বউ মানবো কি করে? আমি ওর সাথে কথা বলব তুমি চিন্তা করো না।’
চমকে ওঠে শাশুড়ি মায়ের হাত চেপে ধরে বললাম,
‘কি সব বলছেন আন্টি আপনি এসব? আপনি এসব বলতে যেয়েন না প্লিজ। তাহলে আবার ও আমাকে খারাপ ভাববে। ভাববে আমি ওর নামে নালিশ করেছি আপনার কাছে। ওর মনে জায়গা করার আগে আমি ওর কাছে খারাপ হতে চাই না। আপনি এইসব ব্যাপারে কোন কথাই বলেন না প্লিজ।’
‘আচ্ছা তুমি যেহেতু এতো না করছ আমি ওকে কিছু বলব না। কিন্তু ও তোমাকে কখনো ডিভোর্স দিতে পারবে না। সেটা আমি মেনে নেব না।’
‘আপনি টেনশন করেন না আন্টি। আমি ওকে কখনোই ডিভোর্স দিব না। নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে একবার পেয়েছি। তাকে ছাড়তে পারবো না আমি এতটা দয়ার সাগর না।’
‘এই তো লক্ষী মেয়ে।’
বলে আমার থুতনিতে ধরে চুমু খেলো।
‘আমি তোমার পাশে আছি মা আমার কথা মত চলো। অভ্র শুধু তোমারই থাকবে।’
‘ধন্যবাদ আন্টি আমাকে সাপোর্ট করার জন্য।’
‘কিসের আন্টি আন্টি করছো। আমি তোমার শাশুড়ি মা। আমাকে মা বলবে এখন থেকে।’
‘মা বলবো?’
আমার চোখ ভিজে এলো। কতদিন পর কাউকে মা বলা হবে।
‘হ্যাঁ আমি যে তোমার মা এখন থেকে।’
.
তূর্য নিজের কাজে নিজেই অবাক হয়ে যায়। চেঁচিয়ে বলে,
‘ আমার শার্ট ঝকঝকে না হলে তোমার খবর আছে।’
বলেই ভেজা অবস্থায় বাথরুমে থেকে বেরিয়ে আসে। বর্ষা তূর্য এর উপস্থিতি না পেয়ে শার্ট এর দিকে তাকিয়ে আছে। এটা আমাকে কাচতে হবে।
এখন আমাকে দিয়ে এসব করাবে ফাজিল লোকটা। রাগে কিড়মিড় করে শার্ট এর দিকে তাকিয়ে আছে।
বর্ষা নিচু হয়ে শার্ট হাতে নিলো। রাগী চোখে তাকিয়ে শার্ট টার্ম দিকে। মন চাইছে এই শার্ট টাকে ইচ্ছে মতো ধুলাই দিতে। মনে জ্বালা জুড়াতো।
শার্ট টাকে তূর্য ভেবে ইচ্ছে মতো আছড়াতে লাগলো।
তূর্য বাইরে এসে ড্রেস চেঞ্জ করে।তারপর রুম থেকে বের হয়ে যায়। আধাঘন্টা পর রুমে এসে দেখে বর্ষা বেরোয়নি। ও কপাল কুঁচকে দরজা ধাক্কা দিতে লাগে।
আর এদিকে বর্ষা শার্টটা আছড়ে মারতে গিয়ে ছিড়ে ফেলেছে। ও চোখ বড় করে শার্ট নিয়ে ফ্লোরে বসে আছে ভয়ার্ত মুখ করে। থেকে থেকে ঢোক গিলছে।
তূর্য বর্ষার সাড়াশব্দ না পেয়ে জোরে জোরে দরজা ধাক্কাতে লাগে। বর্ষা এবার উঠে দাঁড়িয়ে আস্তে করে আর বলে,
‘ আমার হয়নি।’
তূর্য বিরক্ত হয়ে বলে, ‘ তারাতাড়ি করো আর আমার শার্ট যেন চকচকে হয়।’
বলেই দরজার কাছে থেকে সরে দাঁড়ালো।
বর্ষা ঢোক গিলে গোসল করে নিলো। দুই পর পর এই সুযোগ পেলো শান্তি মতো গোসল করলেও এই শার্ট ছেড়া নিয়ে যে ঝড় আসতে চলেছে ওর কপালে। কিন্তু ও বলবে না এখন কিছু। এইটা নিজেই শুকাতে দেবে। যখন পড়তে যাবে তখন বুঝতে পারবে এটার বোতাম ছিঁড়ে ফেলেছি। এখন আগ বাড়িয়ে বলে বকা খাও আর কোনরকম ইচ্ছা বর্ষার নাই। এমন হতে পারে আমি এই শার্টটা দেখার আগেই চলে গেলাম এখান থেকে। নিজেই কিছু সমাধান বের করে গোসল করে বুঝতে পারল যে এখানে ওর কোন পোশাক নাই। এখানে কেন এই বাসায় তো ওর কোনো পোশাক নেয়। ওই লোকটার ই শার্ট প্যান্ট পরে আছি। এখন আমি কি পড়বো?
অনেকটা সময় যাওয়ার ফলে ঠান্ডায় ভিজে থাকার জন্য আমার এখন শীত লাগছে। আবার দরজা ধাক্কা। আমি এ অবস্থায় দরজায় বা খুলবো কি করে?
ওদিকে চেচামেচি শুরু করে দিছে ফাজিল একটা। বাধ্য হয়ে আমি দরজা একটু ফাঁক করে মাথা বের করে বললাম,
‘আপনি এমন চেঁচামেচি করছেন কেন ডাকাত পড়েছে নাকি বাড়িতে! আমি বের হবো কি করে? আমার জামা কাপড় দিন আমি পড়ি বের হই।’
‘হোয়াট তোমার জামা কাপড় আমি কোথা থেকে দেবো?’
‘সেটা আমি কি করে জানব কিডন্যাপ করেছেন তাহলে তার জামা-কাপড় কিনে রাখতে পারেননি ফালতু লোক একটা। নাকি আপনাদের টাকা পয়সা নাই।’
‘তুমি আমার কিন্তু বাজে ভাবে কথা বলছো! আগে বারের শাস্তির কথা মনে নাই কি?’
কথাটা শুনে গলা চেপে ধরার কথা মনে পড়ে যায় বর্ষার আর ও কথা অফ করে দেয়।
ভয়ার্ত মুখ করে বলে বর্ষা,
‘আমার খুব শীত করছে কিছু দিন না। কি পরে বের হব।’
তূর্য বর্ষার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। শীতে কাঁপছে মেয়েটা ওর চোখ ঠোঁট কাঁপছে। এই মেয়েটার জন্য একের পর এক বিপদ ওর মাথায় ঘুরতেই থাকে।সেদিন বাধ্য হয়ে নিজের একটা পোষাক পরতে দিয়েছিল ও ওর পোশাক কারো সাথে শেয়ার করতে পছন্দ করে না। এখন আবার দিতে হবে রাগে ওর মাথা ফেটে যাচ্ছে আবার টাকাটা দিচ্ছে মেয়েটা। বিরক্ত হয়ে আলমারি খুলে নিজের আরেকটা ড্রেস বর্ষার হাতে দেয় বর্ষা কাঁপা হাতে ড্রেস হাতে নেই।
‘ কি হলো ভেতরে ঢুকছে না কেন?’
‘আরে তোয়ালে দিবেন নাকি।’
তোয়ালে এনে একপ্রকার ছুড়ে মারে বর্ষার দিকে। বর্ষা কোনোরকম সেইটা নিয়ে ভেতরে ঢুকে যায়।
#চলবে…….