তুমি_যে_আমার🥀 Writer_Nondini_Nila Part_21

তুমি_যে_আমার🥀
Writer_Nondini_Nila
Part_21

ফোন অফ করতে গিয়ে ভুলে ফোন রিসিভ করে ফেললো। বিরক্ত হয়ে নিবিড় চৌধুরী কাটতে যাবে তখন অপর পাশের ব্যক্তি কন্ঠ শুনে নিবিড় চৌধুরীর শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম। হন্তদন্ত হয়ে ফোন কানে ধরে,

কান্নাও ভয় মিশ্রিত কণ্ঠ কানে এসে বাড়ি খায় নিবিড় চৌধুরীর। এতদিন পর মেয়ের কণ্ঠস্বর শুনে তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন। কথা বলতে পারছেন না। এটা কি করে সম্ভব! তার মেয়ে তাকে ফোন দিয়েছে কিভাবে এটা হলো! কাঁপা গলায় তিনি বলেন,

‘প্রিন্সেস?’

বাবা কল ধরেছে বর্ষা খুশিতে লাফিয়ে ওঠে। বাবা মুখে প্রিন্সেস ডাক শুনে অর চোখে জল ভরে ওঠে।

‘বাপি…

‘আমার প্রিন্সেস। তুমি কোথায় আম্মু? তুমি এটা কার ফোন থেকে কল করেছো? এটা কার নাম্বার? তুমি কোথায় আছো তাড়াতাড়ি বলো আমাকে। কে তোমায় নিয়ে গিয়েছিলো? তুমি ফোন কিভাবে করলে? সব বলো আমাকে।’

‘ বাপি প্লীজ শান্ত হও তোমার প্রেসার হাই হয়ে যাবে।’

‘আমার কিচ্ছু হবেনা। আমার মেয়ে আমাকে ফোন দিয়েছে। তোমার জন্য আমরা পাগল হয়ে গেছি আম্মু। তাড়াতাড়ি তুমি কোথায় আছো বলো আমাকে। এখনি তোমাকে আমি বাসায় নিয়ে আসব।’

‘বাপি আমি কোথায় আছি? আমি জানিনা।আমাকে একটা ভুতূড়ে টাইপের বাড়িতে এনে রাখা হয়েছে। আমি অনেক কষ্ট করে এই ফোনটা চুরি করেছি। আর তোমাকে ফোন করেছি সাথে সাথে। তুমি আমাকে এখান থেকে যেভাবেই হোক নিয়ে যাও বাপি। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি এখন লুকিয়ে আছি এই বাসায় কিভাবে আমি এই বাসার বাইরে বের হব তাও জানিনা।অনেক সিকিউরিটি গার্ড আছে বাসায়। সবার হাতে বন্দুক থাকে। আমার খুব ভয় লাগে। নাম্বারটা ঐ লোকটার যে আমাকে কিডন্যাপ করেছে। তিনি অসুস্থ আর আমি সেই সুযোগে তোমায় ফোন করেছি। তিনি সুস্থ হয়ে যাওয়ার আগে তুমি আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও।’

‘তোমার কিচ্ছু হবে না আম্মু। তুমি ভয় পেয়ো না। বাপি আছে তো বাপি তোমার কিছু হতে দেবে না।’

‘আই মিস ইউ সো মাচ বাপি।’

নিবিড় চৌধুরী ফোন কেটে দিলেন তাড়াতাড়ি।বিছানা থেকে নেমে দ্রুত চশমা পরে পুলিশ কে কল করল আর তিনি সঙ্গে সঙ্গে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলেন।

ডাক্তার এসে তূর্য কে দেখছে। পেটে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে। তূর্য আস্তে আস্তে চোখ মেলে। শাওন রুমে দাঁড়িয়ে আছে আর ডক্টর ওষুধ লিখে দিচ্ছে। অসুস্থতার মাঝেও তূর্য বর্ষাকে খোঁজ করে। শাওন এসে জলপট্টি দেওয়ায় জ্বর অনেক কমে এসেছে। তূর্য রুমের চারপাশে চোখ রেখে বর্ষাকে খুঁজে কিন্তু পায় না। বর্ষা পালিয়েছে। কথাটা মস্তিষ্কে আসতে তূর্য শরীরের সমস্ত অসুস্থতা দূর করে বিছানায় উঠে বসে আর বুকে হাত রেখে আর্তনাদ করে ওঠে। শাওন দৌড়ে এসে কাঁধ ও বাহু চেপে ধরে বলে,

‘ কি করছিস?’

শাওন এর দিকে রাগান্বিত চোখে তাকায় তূর্য।

‘কি হয়েছে এমন করছিস কেন? তুই অসুস্থ শুয়ে পড়েছিস। তোর পাকনামি জন্য তখন ডাক্তার দেখানো হয়নি। ড্রেসিং করানো হয়নি। এখন সারারাত কিভাবে পড়েছিলে দেখ।’

‘বর্ষা কোথায়?’সরাসরি জিজ্ঞেস করে তূর্য।

তূর্য এর কথা শুনে চমকে উঠে শাওন।ও সারা রুমে একবার স্ক্যান করে দেখে বর্ষা নাই‌ কোথাও নাই আর দরজাটাও ভুলে লক করা হয়নি।এই রুমে আসার পর থেকে তার রুম লক করা হয়নি। তূর্য এর ওই অবস্থায় দেখে অতিরিক্ত ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিল শাওন। বর্ষার কথা মাথা থেকে বেরিয়ে গেছিলো। শাওন ঢোক গিলে তূর্য এর দিকে তাকায়‌।

‘আনসার মি।’

‘তূর্য আসলে আই এ্যাম সরি। আমি ভুলে দরজা লক করিনি এই সুযোগে মনে হয় বর্ষা পালিয়ে গেছে।’

‘ও কোথাও পালাতে পারেনি।বাসায় কোথাও ই আছে গার্ডদের চোখ এড়িয়ে বাসার বাইরে একপাও রাখতে পারবে না সারা বাসা চেক কর কুইক।’

‘হ্যাঁ করছি!’

বলেই শাওন ছুটে বেরিয়ে গেল রুম থেকে। তূর্য ও বিছানা থেকে নামতে গেল তখন ডাক্তার কাকা ডেকে উঠলো,

‘একি তুমি এই শরীর নিয়ে কোথায় যাচ্ছো?’

‘আমাকে এখন যেতেই হবে।’

‘তোমার শরীরের কন্ডিশন ভালো না। আবার জ্বর আসতে পারে। মাথা ঘুরে পড়ে যেতে পারো। তাই রেস্ট করো।’

‘এখন আমি রেস্ট কিছুতেই করতে পারবোনা।পাখির খাঁচা থেকে পালিয়ে গেছে। আমার খাঁচার পাখি আমি ছাড়া না পর্যন্ত সে পালাতে পারে না। আমি তাকে পালাতে দেবোনা।এই সাহসিকতা দেখানোর জন্য তার জন্য আমার স্পেশাল শাস্তি তো পাবেই।’

বলেই তূর্য রুমের বাইরে চলে এলো।বর্ষা এদিকে নিচু হয়ে নিচে নেমে এলো। বিশাল বড় এই বাসা। ওদের বাসার থেকে ও বড় আর কি সুন্দর সাজসজ্জা। হা করে তাকিয়ে র‌ইলো। দরজা খুঁজছে কিন্তু পাচ্ছে না। অনেক কষ্টের মেইন ডোর পেল। কিন্তু লাভের লাভ কিছু হলো না। এটাতো আর সিম্পল দরজা না। লক করা দরজা আমি এর পাসওয়ার্ড জানব কি করে। সোফার আড়ালে লুকিয়ে পরলো তাড়াতাড়ি বর্ষা। একটা সার্ভেন্ট কে দেখে। ভয়ে ওর হার্টবিট লাফাচ্ছে। দু’হাতে মুখ চেপে ধরে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। সার্ভেন্ট রান্নাঘরের দিকে চলে যেতেই বর্ষা সোফার আড়াল থেকে সোজা হয়ে দাঁড়াতে ই শাওন সেখানে এলো দৌড়ে। শাওন আশেপাশে তাকাতেই বর্ষা সাথে সাথে বসে পড়লো‌ একটুর জন্য বেঁচে গেছে এখনই ধরা পড়ে যেতো।

ধরা পড়লেও তূর্য লোকটা ওকে খুন করে ফেলবে। বাপি আমাকে বাঁচাতে পারবে তো। শাওন সোজা মেইন ডোর খুলে ঘরের বাইরে চলে গেল। এটা দেখে বর্ষার মুখে হাসি ফুটে উঠল। ও লাফিয়ে উঠে ছুটে গেল বাসার বাইরে। তূর্য ল্যাপটপের কাছে বসে আছে। সিসি ক্যামেরা চেক করতে। মাথা ঝিমঝিম করছে ওর।
বর্ষা বাইরে এসে শুধু সবুজ ঘাসের ভড়া জঙ্গল দেখতে পেল মৃদু আলোতে। এখন ওর হাতে তূর্যের ফোন ধরা। শাওন সবার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করছে কাউকে বাইরে যেতে দেখেছি কিনা।

আর সবাইকে জরো করে বোঝাচ্ছে যেন ভালো করে গার্ড দেয় বর্ষা পালিয়েছে এটা ও বলে। তূর্য সিসি টিভি ফুটেছে সবার আগে শাওনকে দেখল ও বাসার বাইরে চলে গেছে। রাগে ওর শাওনের মাথা ফাটাতে ইচ্ছে করছে। মাথা মোটা একটা ও বাইরে কি করছে? ও আগের ফুটেজ দেখতে লাগে আর বর্ষাকে দেখে কিভাবে ওর অসুস্থ অবস্থায় দেখে মেয়েটা চিন্তিত হচ্ছিলো। ওকে ডাকছিলো। ভয় পাচ্ছিলো। বুদ্ধি করে শাওন কে কল করেছে। ওর জন্য বর্ষাকে চিন্তিত মুখে দেখে কেন জানিনা তূর্যের ভালো লাগছিলো। কিন্তু সাথে সাথে ওর চেয়াল শক্ত হয়ে যায়। বর্ষা লুকিয়ে বাইরে চলে আসে আর বারান্দায় লুগিয়ে ওর বাপির সাথে কথা বলে।
সম্পূর্ণ দেখে ও দৌড়ে বেরিয়ে যায়।

নিবিড় চৌধুরী পুলিশ কে সব জানায়। পুলিশ তূর্য এর নাম্বার ও নেয়। আর নাম্বার ট্যাগ করে ফেলে।
ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে উঁকি দিচ্ছে বর্ষা তখন কেউ ওর বাহু শক্ত করে ধরে টেনে ধরে ও চমকে উঠে।

সামনে অসুস্থ তূর্য কে দেখে ওর দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হয়।

‘ আআআপনি…

তূর্য কিছু না বলে ঠাস করে চড় মেরে বসলো বর্ষা কে আর হাত দিয়ে ধরে টেনে হেঁচড়ে নিতে লাগলো।

‘কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন! ছাড়ুন আমাকে! আমি কোথাও যাবো না। আমার বাপি এখনি আমাকে নিতে আসবে।’

তূর্য বর্ষাকে নিয়ে টেনে হেঁচড়ে গাড়িতে তুলে। বর্ষাকে এভাবে নিয়ে যেতে দেখে সবাই অবাক হয়ে তাকায়। গাড়ি লক করে তূর্য শাওনের কাছে এসে ওকে কিছু একটা বলে গাড়িতে উঠে যায় তূর্য।

বর্ষা ভয়ে থরথরিয়ে কাঁপছে। ওর হাতে এখনো তূর্য এর ফোন সেখানে বাপির নাম্বার থেকে কল আসছে ও হতভম্ব হয়ে আছে। তখন তূর্য গাড়িতে এসে ড্রাইভিং সিটে বসে। আর চট করেই বর্ষার হাত থেকে ফোন ছিনিয়ে নেয়।আর দ্রুত সিম বের করে ভেঙে ফেলে। তারপর জানালা খুলে ভাঙা টুকরো গুলো ফেলে ছিলো। বর্ষা তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে। তূর্য এগিয়ে এসে বর্ষার সিট বেল লাগিয়ে কড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ করে একবার তারপর গাড়ি চলতে শুরু হয়। কিছুটা আসতেই থেমে যায়। আর একটু হেলে পরে বর্ষা। তূর্য জানালা খুলে নিজের ফোনটা সজোরে আছড়ে ফেলে সেখানে। চমকে বর্ষা তূর্য এর রাগান্বিত মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। ভয়ে ওর নিঃশ্বাস চলাচল বন্ধ করে যাওয়ার অবস্থা। ওর সাথে কি ঘটবে ভেবে কুঁকড়ে ওঠছে।

পুলিশ নাম্বার ট্যাগ করে যে ঠিকানা পেয়েছে সেই খানে আস্তে তিন ঘন্টা লাগলো। অর্থাৎ সকাল সাতটার তারা আসলো।এখানে এসে তারা একটা পুরাতন জঙ্গলে ঘেরা বাংলো পেলো। নিবিড় চৌধুরী ভেতরে ঢুকতে পাগল প্রায়।

পুলিশ বললো,

‘ এই বাসায় কেউ আছে বলে তো মনে হচ্ছে না। বাড়ির অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে বহুদিন কারো পা পরে না এখানে।’

‘ আমার মেরে এখানেই আছে। তারাতাড়ি ভেতরে চলুন।’

‘জ্বি চলুন।’

ভেতরে গিয়ে সবাই অবাক হয়ে গেলো।
.

ঘুমের মধ্যে খুব বাজে একটা স্বপ্ন দেখলো নিদ্রা।
রাতে শরীর কাঁপিয়ে জ্বর এলো নিদ্রার। অভ্রকে ছেড়ে যেতে হবে সাথে ও এই স্বপ্ন টা দেখে।
সকালে ব্যাথা শরীর নিয়ে রেডি হয়ে গেলো নিদ্রা অভ্র এসবের কিছুই জানেনা। নিদ্রা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল বাঁধছিলো। শরীর কাঁপছে ওর কিন্তু অসুস্থতার কথা বলে আর এই বাসায় থাকতে চায় না।
নিজেকে স্বাভাবিক রাখার অনেক চেষ্টা করেও নিদ্রা সফল হতে পারলো না। মাথা ঘুরে নিচে পড়ে গেলো।
অভ্র বাথরুম থেকে বেরিয়ে নিদ্রাকে ফ্লোরে পড়ে থাকতে দেখে ভয়ে ছুটে আসলো ওর কাছে।

#চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here