তুমি_যে_আমার🥀
Writer_Nondini_Nila
Part_22
পুলিশ দের সাথে নিবিড় চৌধুরী ওই জঙ্গলে ঘেরা বাংলোতে ঢুকে। বাইরে থেকে এমন বাজে অবস্থা এই বাসার যে কেউ কল্পনাও করতে পারবে না এখানে কারো বসবাস আছে। কিন্তু বর্ষা তাকে এসব বলেছিল তাই তিনি জোর করে বাসার ভেতরে ঢুকে। পুলিশ তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে গেল। বাইরে যতটা বিচ্ছিরি অবস্থা ভেতরে ততটাই সুন্দর। কোন রাজপ্রাসাদের মতো। পুলিশ রাও এইসব দেখে থমকে যায়। আর তাদের সন্দেহ বাড়তে লাগে।
পুরো বাসা চেক করে। কার বাসা এটা জানার জন্য। কিন্তু কিছুই পায় না প্রমাণ বলতে কিছু নাই প্রত্যেকটা রুম ফাঁকা।
কয়েকটা আসবাপত্র ছাড়া কিছুই নাই। কোন ক্লু না পেয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে আসে। আর পুলিশরা এই বাসা কার এসব জানার জন্য তদন্ত করার চেষ্টা করতে লাগলো।
পুলিশ রা দুইদিন পর অনেক চেষ্টার পর একটু আশার আলো দেখতে পেলো। ওই বাসা কার নামে ঠিকানা পেলো না। কিন্তু একজনের হদিশ পেলো। তার মাধ্যমে আসল লোক কে খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এক সেকেন্ড সময় নষ্ট না করে চলে গেলো সেখানে।
রফিক ওখানকার রান্নার লোক ছিল এক সপ্তাহের মত কাজ করেছিল তারপর আর করেনি। ওকে আর রাখিনি।ও বুঝে উঠতে পারছেনা। একসপ্তাহ কাজ করলো সেইখান কার খোঁজ ওর কাছে নিতে কেন এসেছে?
পুলিশ দেখে এমনিতেই ও ভয় পায়। তারপর অর কাছে খোঁজ করতে এসেছে। ও ভয়ে কপালের ঘাম মুছে পুলিশের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে,
‘স্যার আমনেরা এইহানে ক্যান আইছেন?’
‘ তোর কাছ থেকে আমাদের একটা ইনফরমেশন দরকার! তুই এক সপ্তাহ মতো ওই বাসাটায় কাজ করেছিস! ওই বাসার মালিক কে আমরা তাকে খুঁজছি তুই আমাদের তার ঠিকানা দে।’
‘ স্যার কার ঠিকানা চাইতাছেন মালিকের?’
‘ হ্যা।’
‘ হেইডা আমি কন থিকা দিমু।’
‘কোথা থেকে দিবি মানে?ওই বাসার মালিক এর জন্য রান্না করেছিস। তাহলে চিনিস না তাকে তোরা। বিবরণ দে। তাদের নাম বল। আর তারা এখন কেউ বাসায় নাই তারা আছে কোথায়?’
‘স্যার মুই তো এসব কিছুই জানি না।’
‘বোকা পেয়েছিস আমাদের জানিস না! ওই বাসার কাউকেই তুই চিনিস না তাহলে তুই রান্না করতি কার জন্য।আর তোকের ওই বাসায় রান্নার কাজ টা দিয়েছিল কে আর এত তাড়াতাড়ি কাজ ছেড়ে দিলি কেন?’
‘ স্যার মুই তো ছারি নাই আমারে তো কাজে থেকে বের কইরা দিছে। বাসার মালিক রে জীবনে দেখি নাই কিন্তু আমারে নিছিল হাসেম চাচা। কাজে লিগা ঘুরতে ছিলাম। তখন ঐ হাসেমের লাগে আমার দেখা হয়। আর তিনি আমারে ওই বাসায় কাজটা দেয়। বলে দুপুরে রান্নাটা ভালো করতে হইবো রান্না কইরা দিয়াই চইলা আসতাম। কিন্তু এক সপ্তাহ পর কি হইল আমারে নিজে থেকে বের করে দিলো। কতো কইলাম চাকরিটা আমার দরকার। টাকা দিতো অনেক একটু কাজের জন্য অনেক টাকা এজন্য খুব করতে চাইছিলাম। কিন্তু আমার রাখেনাই কি করুম আর তারপর থেকে আমি আর ওই বাসায় যায় নাই। হাসেম চাচা রে ও আর খুইজা পাইনাই।’
‘সে হাসেমের ঠিকানা দাও।’
‘তার ঠিকানা কই থিকা দিমু। তার ঠিকানা তো আমি জানিনা।’
‘ হোয়াট? একটা বাসায় কাজ করলি আর তাদের কোন খোঁজখবর জানিস না হাসেমের নাম্বার আছে তো সেটা দে।’
‘ক্ষমা করেন স্যার তার নাম্বার ও তো নাই।’
পুলিশ হতাশ হয়ে ফিরে আসলো রফিকের থেকে কোন খবর পেল না। ও কিছুই জানে না সবকিছুই ধোঁয়াশা রয়ে গেল।
নিবিড় চৌধুরী পুলিশকে ফোন দেয়।
‘হ্যালো অফিসার, আমার মেয়ের কোনো খোঁজ পেয়েছেন?’
‘সরি স্যার আমরা এখনো কোনো খোঁজ পায়নি। ওই বাসার সবকিছু রহস্য রয়ে গেছে।
যার কাছে গিয়েছিলাম এত আশা নিয়ে তিনি ও কোন খবর দিতে পারেনি। কিন্তু তাকে আমরা নিজেদের সাথে নিয়ে যাচ্ছি। অন্য একজনের নাম বলছে হাসেম করে আমরা তাঁর মুখের বিবরণ দেখে হাসেমের ছবি আর্ট করে তাকে খুঁজবো আমার মনে হয় তার মাধ্যমে আমরা সবকিছু হদিস পেয়ে যাব।’
‘ওই নাম্বার কি খুলেছে?’
‘না স্যার ওই নাম্বারটা আর খোলা হয়নি এজন্য আমরা নাম্বারটা ট্যাগ করতে পারিনি আর।’
থানায় এসে অফিসার চেয়ারে বসে কফি চাইল।এত ঘোরাঘুরি করল। কিন্তু কোন খবর পাওয়া গেল না।মেয়েটাকে পাগলের মত হন্যে হয়ে খুঁজে যাচ্ছে কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না এত চেষ্টার পরেও কোনো ক্লু পাচ্ছে না। মাথা ব্যথা করছে কপালে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো।
‘স্যার আপনার কফি!’
‘রেখে যাও।’
কপি খাচ্ছে একটু শান্তি মত কিন্তু এই শান্তির আর বেশিক্ষণ রইল না দুই মিনিটের মাঝে দুজন লোক আসলো থানায় এসে সোজা তার কফি খাওয়ার ডিস্টার্ব করল।
বিরক্তের নাক মুখ কুঁচকে আসছে তার। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। একজন মহিলা ও একজন পুরুষ তারা এসে লোকটার সামনে চেয়ারে বসে পড়ল আর পুলিশ টার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘অফিসারঃ আপনি আমাদের মেয়েকে বাঁচান।’
আবার মেয়ে! পৃথিবীর সবার মেয়ের কি একসাথে প্রবলেম হতে হলো?মেয়ে হারিয়ে গেছে মেয়ে, কিডন্যাপ হয়েছে, এমন এই 15 দিনে পাঁচটা এসেছে। আবার আজকে আরেকটা। কোন দিকে যাব আমরা।
‘সরি এখন কোন কেস নেওয়া হবে না আপনারা পরে আসুন!’
‘এসব কি বলছেন পরে আসবো মানে। ওইদিকে আমার মেয়েটা মরে যাচ্ছে। আর আপনি পরে আসতে বলছেন?’
রেগে চিৎকার-চেচামেচি করতে লাগলো মাথা ধরেছে তারপরে সব আর নিতে পারল না দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
‘জ্বি বলেন।কলেজ থেকে আর বাসায় ফিরেনি নাকি বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে?
‘কোনোটাই না অফিসার!’
‘তাহলে কি?’
‘ আমাদের মেয়েকে ফাঁসিয়ে জোর করে বিয়ে করেছে। তারপর অত্যাচার করছে। এখন সে অসুস্থ হয়ে হসপিটালে পড়ে আছে।আমরা সেদিন গিয়েছিলাম জোর করে বিয়ে দেওয়ার জন্য। মেয়েকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য কিন্তু তারা বলেছে তারা ফিরিয়ে দেবেনা।বউ হিসাবে মেনে নেবে কিন্তু তারা মেনে নেয় না। ছেলে অন্য একজনের প্রেমে মগ্ন। আর আমাদের মেয়েটাকে অত্যাচার করে অসুস্থ করে ফেলেছে। আমরা ওর হাজবেন্ড অভ্রের নামে কেস করতে এসেছি। অফিসার আদিল আপনি ওই ছেলেটাকে উচিত শিক্ষা দেবেন আমাদের মেয়ের উপর অত্যাচার করার জন্য।’
কেস লেখিয়ে চলে গেল শয়তানি হাসি দিয়ে নিদ্রার চাচা চাচি। বাইরে আসতেই তাদের ফোন বেজে উঠল।
হাতে নিয়ে দেখে আরিয়ানের কল।
‘হ্যালো বাবা!
‘তোমরা কোথায়?’ গম্ভীর গলায় বলল আরিয়ান।
‘থানায় এসেছিলাম নিদ্রার হাজবেন্ডের নামে কেস করতে। এবার খুব তাড়াতাড়ি ওদের ডিভোর্স হয়ে যাবে। টেনশন নিস না নিদ্রা শুধু তোরই থাকবে।’
‘ওই ছেলেকে তো আমি খুন করে ফেলতাম ও আমার নিদ্রা কে বিয়ে করেছে। ওদের তাড়াতাড়ি আলাদা করো না হলে আমি আলাদা করতে আসলি কাউকে মরতে হবে।’
‘যা করার এবার পুলিশ করবে তুই মাথা গরম করিস না বাবু।’
‘ওকে রাখছি!’
আদিল ক্লান্ত হয়ে চেয়ারে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।
পাশ থেকে আদিলের এক বন্ধু টাইপের লোক এসে বললো, ‘কি ব্যাপার আদিল তোমার শরীর খারাপ নাকি? কেমন যেন অসুস্থ লাগছে!’
‘আরে না ওই নিবিড় চৌধুরীর মেয়েকে খুঁজতে খুঁজতে অর্ধেক পাগল হয়ে যাচ্ছে আমি।’
‘হ্যাঁ তা তো বটেই। লোকটা খুবই চালাক না হলে এত বড় বড় পুলিশ অফিসাররা খুঁজেও তার হদিস মিলছে না ভাবা যায়।’
‘আর তার এই সমস্ত প্যারা আমার উপর দিয়ে ঝড় বয়ে যাচ্ছে! ওনার জন্য আমি দিনরাত একটা টাইম শান্তিতে চোখ বুজে উঠতে পারি না। সারাক্ষণ ফোন দিতে দিতে আমার মাথাটাই খারাপ করে দেয়।’
‘কেসটা আমার উপর ছিল ভাগ্যিস তোমার উপর দিতে পেরেছিলাম। এজন্য আমি শান্তিতে আছি না হলে এসব প্যারা তো আমাকে সহ্য করতে হতো।’
‘শালা আমাকে ফাঁসিয়ে এখন আনন্দের হাসি দিচ্ছিস।’
‘ তা তো দিচ্ছি ই।এখন আবার এরা কার জন্য এসেছিল?’
‘ওনাদের মেয়েকে নাকি জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছে ছেলের সাথে। এখন অত্যাচার করে হসপিটালে ভর্তি হয়ে আছে। ওনারা নাকি বিয়ের খবর কিছুই জানতেন না। আজকে আর কোন জায়গায় যাচ্ছিনা সব পরে দেখা যাবে।’
‘ হুম রেস্ট নাও। আসি।’
আদিল এর সামনে থেকে চলে গেলো।
বর্ষাকে একটা অন্ধকার রুমে দুইদিন ধরে হাত পা বেঁধে ফেলে রেখেছে। সেদিন ওই সাহসিকতা দেখানোর জন্য। বর্ষার চোখ বন্ধ পেটে খিদের যন্ত্রণা আর হাত পা বেঁধে রেখে খুব শক্ত করে এজন্য ওর অবস্থা খুব খারাপ। একবার ও আলো জ্বলে নি। কেউ আসিনি। মুখ ও বাঁধা এজন্য ও আওয়াজ ও করতে পারে না। সারা শরীর এ অসহ্য যন্ত্রণা হয় ওর। আজকেও জ্ঞান ফিরতেই চেয়ারে বাঁধা হাত পা নাড়াতে যায় আজ ব্যাথা কম লাগছে।
কাল তো ছিঁড়ে যাচ্ছি লো। ও বাঁধন ছুটানোর জন্য নড়াচড়া করলো তারপর দূর্বল শরীর নিয়ে পরে রইলো। আর জ্ঞান হারালো।
চোখ খুললো কারো স্পর্শে। আধো আধো চোখ মেলে একটু আলোর ঝলকানি এসে ওর চোখে লাগলো। ও সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে আবার তাকালো। ওর সামনে বসে আছে তূর্য। ও দেখতে পেলো ও চেয়ারে বাঁধা অবস্থায় নেই। তূর্য ওকে নিয়ে বিছানায় আছে। তূর্য ওর চোখের পানি মুছে দিচ্ছে তারপর ওর কপালে গালে চুমু খেয়ে যাচ্ছে। বর্ষা কথা বলতে চাইলো পারলো না। না খেয়ে ওই ভাবে বাধা অবস্থায় থেকে ওর সারা শরীর নিস্তেজ হয়ে গেছে। কোন শক্তি নাই।
ও নড়াচড়া করতে পারছে না। শুধু চোখ মেলে তূর্য নামক এই পাষাণ লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে। তূর্য ওর উপর থেকে উঠে এসে পায়ের কাছে বসে মলম লাগিয়ে দিচ্ছে। আঘাত পাওয়া জায়গা ফূ দিয়ে দিয়ে মলম লাগাচ্ছে। আর তাতে বর্ষা কেঁপে উঠছে। সেদিন বর্ষা ওসব করার পর তূর্য ওকে ওর অন্য বাড়ি নিয়ে আসে আর রেগে ওকে একটা রুম হাত পা বেঁধে রুম অন্ধকার রেখে চলে যায়।
তূর্য ওর মলম লাগানো শেষ করে বর্ষাকে সুপ খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দেয়। তারপর ওর মুখের কাছে ঝুঁকে বলে,
‘ তোমার জন্য আমাকে অনেক কিছু সাফার করতে হয়েছে তাই এতোটা কঠোর আমাকে হতেই হলো।আগেই বলেছিলাম বাড়াবাড়ি করো না। সময় মতো পৌঁছে দেবো।শুনলে না এবার ভোগ করো বর্ষা মনি। ‘
বলেই তূর্য বর্ষার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।
#চলবে…..
পিক:- আনিকা জান্নাত আপু দিয়েছে ধন্যবাদ আপু ❤️❤️