তুমি_যে_আমার🥀
Writer_Nondini_Nila
Part_25
নিদ্রার জ্বরের জন্য বাসা থেকে বের হতে পারে নি। সেদিন চলে যেতে চাইলেও যেতে পারেনি। এই জ্বরের মধ্যে ওকে ছাড়ে নি অভ্র এবং বাসার কেউ ই। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা থেকে গা কাঁপিয়ে জ্বর এসেছিলো নিদ্রার। চোখ মেলে তাকাতে পারে নি। অভ্র হাসপাতালে থেকে ছুটি নিয়ে ওর পাশে থেকে নিজে চিকিৎসা করেছে।
অজ্ঞানের মতো পড়ে ছিলো আর আবোলতাবোল অনেক কথাই বলেছে। সাথে অনেক কিছু ঘটে গেছে দুই দিনে। দুইদিনে পর নিদ্রার জ্বর একটু কমলো। দুইদিন মরার মতো বিছানায় পড়ে ছিল। দুদিন পর ও যেন ও সজ্ঞানে উঠে বসলো। দুদিন ওর সাথে কি ঘটেছে ও কিছুই জানে না। জ্বরে ও এতটাই কাতর হয়েছিল সেটাও বুঝতে পারছে। কিন্তু আবছা আবছা অনেক কিছুই মনে পড়ছে আস্তে আস্তে। যতই সবকিছু মনে পড়ছে ততই নিদ্রা চিন্তার মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। ওযে জ্বরের ঘোরে অনেক বড় আকাম কাজ করে ফেলেছে সেটা কিছুক্ষণের মাঝেই পরিষ্কার হয়ে গেলো।
নিজের এতদিনের সমস্ত অনুভূতি জ্বরের ঘোরে প্রকাশ করে ফেলেছে। তারপর কি হয়েছে? কিছু মনে করতে পারছে না! তখন বোধহয় বেশি কাতর ছিল। এই মুখ অভ্র কে কিভাবে দেখাবো। ও আমাকে কি ভাবছে!
এবার নিশ্চয় ও আমার সাথে বন্ধুত্ব নষ্ট করে দেবে। আমাকে ঘৃণা করবে। ওর সাথে আমি প্রতারণা করেছি। ওভাববে বিয়েটা আমি নিজের স্বার্থে করেছি।
তখন অভ্রের মা হাসি মুখে খাবার নিয়ে এলো।
এসে নিদ্রার পাশে বসে পরলো,
‘ তুমি উঠে গেছো। দেখি জ্বর আছে কিনা? সবাইকে তো খুব ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে!’
‘মা অভ্র কোথায়?’
‘ও তো নিচে খাচ্ছে।তোমার জ্বর একটু কমেছে তাই খেতে গিয়েছে না হলে তো তোমার হাত ছেড়ে উঠতোই না। কতো কেয়ার করলো তোমার ইশ আমার মনে হয় ও তোমাকে ভালো বেসে ফেলেছে। তোমাকে একা রেখে ও বর্ষাকে ও দেখতে গেলো না। মেয়েটা বাসায় এসেছে দুইদিন হয়ে গেলো আর ও কিনা গেলো না। আমার ছেলের বুদ্ধি হয়েছে। ওই মেয়ের ভূত মাথা থেকে নেমেছে।’
আমি বিস্মিত হয়ে শ্বাশুড়ি আমার দিকে তাকিয়ে আছি। আমার জন্য অভ্র বর্ষার সাথে দেখা করতে যায়নি। আমার এতো কেয়ারিং করেছে। আর বর্ষা ফিরে এসেছে কিভাবে?
শাশুড়ি মাকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন এতো কিছু জানে না।
আমি আর ঘাটলাম না। কিন্তু বর্ষাকে পাওয়া গেছে শুনে ভালো লাগছে। অভ্র ওসব জানার পর কেমন রিয়েক্ট ভাবছি। আমি কিভাবে সামাল দিবো। শাশুড়ি মা আমাকে খাইয়ে দিয়ে চলে গেলো। কিছু ক্ষণ বাদে অভ্র এলো রুমে আর নিদ্রার কাছে এসে বললো,
‘ এখন কেমন লাগছে?’
নিদ্রা বললো, ‘ ভালো।’
নিদ্রা লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে ওর আরেকটু মনে পরেছে। জ্বরের ঘোরে শুধু ভালোবাসি বলে থামেনি নিদ্রা অনেক আজেবাজে কথা ও বলছে।
অভ্র বললো, ‘ এমন লজ্জায় লাল নীল হচ্ছিস কেন?’
চমকে উঠলো নিদ্রা ও মুখ নিচু করে বললো, ‘ জ্বরের ঘোরে আমি অনেক আজেবাজে বকেছি তোকে সরি। আর….
অভ্র বললো, ‘ আর?
‘ তুই প্লিজ আমাকে ভুল বুঝিস না।ওসব সত্যি না।
‘ কোন সব সত্যি না? তুই যে আমাকে ভালোবাসিস এটা নাকি তুই আমাকে মন থেকে স্বামী মানিস এটা? কোনটা মিথ্যা?’
নিদ্রা অভ্রের দিকে তাকিয়ে দেখলো অভ্র ওর দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে ও তারাতাড়ি চোখ নামিয়ে বললো, ‘ সব মিথ্যা ওসব আমার মনের কথা না।’
‘ থাক আর মিথ্যা বলতে হবে না। বন্ধু হয়ে প্রতিনিয়ত এইভাবে আমাকে ঠকালি। এতো বড় কথা তুই আমার থেকে লুকালি। এইটুকু বিশ্বাস নেই যে এটা আমাকে বলতি পারলি না।”
নিদ্রা অভ্রের কথায় খুব কষ্ট পেলো। ও অভ্রের এক হাত ধরে বললো,’ আমাকে ভুল বুঝিস না প্লিজ। আমি ভয়ের কারণে এসব বলতে পারিনি তোকে। আমি ভেবেছিলাম এসব জানলে যদি তুই আমার সাথে বন্ধুত্ব নষ্ট করে দিস। তাই আমি কিছু বলতে পারিনি সাহস করে উঠতে পারিনি।’
অভ্র ঝামটা দিয়ে নিজের হাতে থেকে নিদ্রার হাত ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়ালো।
‘আমার মন মেজাজ খুব খারাপ! দয়া করে আমার সাথে কথা বলিস না!’
‘ আমি জানতাম তুই এমন করবি এজন্য কিছু জানায়নি নি। তুই এসব জানতে পারলে আমার থেকে দূরে সরে যাবি। বন্ধুত্বের জন্য যতটুকু ভালবাসিস সেটাও আর থাকবে না। তুই আমাকে বন্ধু থেকে বেশি আপন করে ভালোবাসবি না কখনো। এজন্য আমি তাকে কিছুই জানায়নি। বিশ্বাস কর তোকে আমি হারাতে চাইনি। এজন্য আমার বুকের ভেতর যে ভালোবাসা আছে সব আমি আড়াল করে রেখেছিলাম।’
অভ্র আর একটা কথা বলল না শার্ট প্যান্ট পড়ে হাতে ঘড়ি পরতে পরতে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো। পেছন থেকে নিদ্রা ওকে ডাকতে লাগল ও আর শুনলো না।
নিদ্রা ওখানে হাঁটু ভেঙ্গে বসে কাঁদতে লাগবো।
.
‘আমাদের সব কাজ শেষ আমরা নিবিড় চৌধুরীকে সবার সামনে মাথা নিচু করে ছাড়িয়েছি। এখন সবাই তাকে অবিশ্বাস করে, সন্দেহ করে জেরা করেন।তার এই গর্বের পেশা এবার তার থেকেই হাতছাড়া হয়ে গেছে। আইন এখন তাকেই সন্দেহের তালিকায় রেখেছে। এবার এই ফাইলে তথ্য দিয়ে আরিয়ানকে জব্দ করতে পারব।’
শাওন তো খুশিতে পারে না লাফিয়ে ওঠে তূর্যের গায়ের উপরে পরে।
তূর্য ধাক্কা দিয়ে শাওনকে বিছানার নিচে ফেলে দিয়ে দিলো। শাওন এক চিৎকার দিয়ে উঠল।
‘এটা কি হলো তুই আমাকে এই ভাবে নিচে ফেললি কেন? কত খুশিতে আমি নাচানাচি করছিলাম আর তুই আমাকে ফেলে দিয়ে আমার সমস্ত আনন্দ মাটি করে দিলি!’
‘আরেকটা কথা বললে তো এক ঘুসি দিয়ে আমি নাক ফাটিয়ে দেবো। যা এখান থেকে।’
‘কিরে ভাই এত আনন্দ মধ্যেও তুই এমন মুখটাও গম্ভীর করে রেখেছিস কেন?’
‘আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই!’
‘তোর এমন অদ্ভুত ইচ্ছে হলো কেনো তুই কি কোন কিছু নিয়ে চিন্তিত?’
‘তোর বর্ষার ফ্রেন্ড তিশার সাথে রিলেশন করতি?’
তূর্যের কথায় শাওন হকচকিয়ে বিছানা থেকে নেমে গেলো।
‘কি সব বলিস ওইসব তো নাটক ছিল!’
‘আই হেট লাইং’
শাওন ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বললো,’ তুই এসব কিভাবে জানলি?’
‘আমার জানাটা কি খুব কঠিন তোর মনে হয়?’
‘না মানে তা না আসলে ওই কিভাবে যেন হয়ে গেছে
নাটক করতে করতে কখন যেন আমি সত্যি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি। কিন্তু তুই শুনলে তো রাগ করবি। এজন্য আমি তোকে লুকিয়ে ওর সাথে কথা বলেছি। সরি ভাই প্লিজ রাগ করিস না।’
‘রাগ করবো না বলছিস এই বিষয়টা আমাকে জানালে হতো না! আমি কি তোর প্রেমে বাধা দিতাম।’
‘আমি বুঝতে পারি নাই সরি মাফ করে দিও প্লিজ!
শাওন কানে হাত দিয়ে বললো। তূর্য এগিয়ে এসে ওকে কয়টা মেরে থামলো।
.
বর্ষাদের ফ্যামিলির উপর দিয়ে ঝড় এর উপর ঝড় বয়ে যাচ্ছেই। মেয়েকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। কিন্তু মেয়েকে ফিরে পেয়ে সবাই খুশী হলেও। তারপরই পরিবারের আরেক ঝড় এসে নিজের চাকরি হারালো নিবিড় চৌধুরী।
এখন বাসা থেকে বের হতে তিনি পারেন না। সবাই তার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে থাকে। তার ওপর মেয়েকে নিয়ে বাজে কথা রাস্তায় চায়ের দোকানে মহিলাদের আড্ডাখানায় সব জায়গায় শোনা যায়। মেয়ের চরিত্র নষ্ট হয়ে গেছ। চরিত্রহীন মেয়েকে এখন তারা সমাজে রাখবেনা। সাথে একজন বিশ্বাসঘাতকে রাখবে না। বাবা মেয়েকে তারানোর জন্য সবাই উঠে পড়ে লেগেছে যেন। মেয়ে তো তার পালিয়ে যায়নি। তাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে গেছিলো। এখানে মেয়ের কি দোষ? তার মেয়ে যে এসবের জন্য দরজা আটকে কান্না করছে সব সময় কি করে তার মন ভালো করবে।
অনেক ভেবে তিনি বর্ষার ফ্রেন্ডদের কল করে আসতে বললো বাসায়। আর বলে বর্ষাকে যেন কোথায় বেড়াতে নিয়ে যায়। তাহলে মেয়েটার মন ভালো হতে পারে।
#চলবে……