কেন এমন হয় পর্ব-৫

  1. কেন এমন হয়পর্ব – ৫

    আহনাফ ঘুমিয়ে আছে পাশে,হিয়ার কিছুতেই ঘুম আসছে না। বারান্দায় , হঠাৎ আদনানের কথা শুনে ভয় পেয়ে গিয়েছিল।একটা সম্পর্ক এত দিন থেকে চলতে চলতে হঠাৎ গতি পরিবর্তন হয়ে গেল।এই পরিবর্তিত গতি পথে তাকে একাই চলতে হবে।সেই পথ যদি হয় অন্ধকার , কাঁটায় ভরা কিংবা ধুধু মরুভূমি যাই হোক না কেন , সেই পথ মসৃণ করার পথ নিজেকেই করে নিতে হবে। কিন্তু কিভাবে ? হিয়া কিছুতেই তা বুঝতে পারছে না।ঐভাবে বারান্দা থেকে চলে আসা উচিত হয়নি কিন্তু কি করবে হিয়া আদনানকে দেখলেই তার অদ্ভুত অনুভূতি হয় ,মনটা একেবারে গুটিয়ে যায়।

    হঠাৎ মনে পড়লো ,ছোট চাচী ছোটএকটা পুঁটলি দিয়েছিলেন ,চুলার আগুনে ফেলে দেয়ার জন্য।একদম মনে ছিল না আর মনে থাকলেও সবার সামনে এটা করা সম্ভব হতো না। চাচীর কি যে অদ্ভুত বিশ্বাস, আসার আগে কত কিছু করলো চাচী বদ নজর কাটানোর জন্য। একবার ভেবেছে এ সব কিছুই করবে না কিন্তু পরে মনে হলো চাচী ভালোবেসে তার জন্য এ সব করছে । নিজে এ সব কিছু বিশ্বাস না করলেও চাচীর মনের শান্তির জন্য চুপ করে ছিল।
    বাড়ির পেছনের বারান্দাটাই বড় করে রান্না ঘর করা।হিয়া পুঁটলিটা নিয়ে রান্না ঘরে গিয়ে দেখে চুলায় এখনো টিপ টিপ করে কয়লা জ্বলছে।লাকরির কয়লা অনেক আস্তে আস্তে পুরোপুরিভাবে নিভে।হিয়া পুঁটলিটা ছেড়ে দিতেই আগুনের শিখা জ্বলে উঠলো।

    আদনান তখন ও সামনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।সে বুঝতে পারলো কোনোকিছু প্রয়োজন হওয়াতে হিয়া রান্না ঘরে গেছে কিন্তু ডেকে জিজ্ঞেস করলো না।হিয়া অন্ধকারে ভয় পায় , এখন যেন অন্ধকারেই হাঁটা শিখে গেছে।

    সকালে আদনান দেখলো, হিয়া একেবারে স্বাভাবিক। মফিজকে ডাব পেরে দিতে বলল গাছ থেকে। মফিজের বৌকে বলে দিল কি কি রান্না হবে,আহনাফ কি খাবে এই সব তদারকি করছিল।আড়ার থেকে আদনান এ সব খেয়াল করে একটু অবাক হলো , সকালে নাস্তার টেবিলে এসে বসার সঙ্গে সঙ্গে হিয়া কাজের বাহানা দিয়ে চলে গেল গিয়েছিল। শুধু আদনান যে অবাক হলো তাই না হিয়া নিজেও অবাক হলো নিজের ব্যবহারে।

    নূরজাহান মনে মনে খুব খুশি হলেন।যাক মেয়েটার মাথায় ঘিলু আছে, ভুল করেননি তিনি।আহনাফ কে আগে থেকেই এত ভালোবাসে এখন আরো বেশি ভালোবাসবে এই ব্যপারে কোন সন্দেহ নেই ।
    .

    .
    .
    আদনান , কেয়ারটেকারকে ফোন করে বলে দিল বাসাটাকে প্রয়োজনমতো মেরামত করার জন্য , সেই অনুযায়ী টাকাও পাঠিয়ে দিল। পাঁচ তলার নিপা কেয়ারটেকার মনু মিয়াকে জিজ্ঞেস করলো ব্যপার কি?
    মনু মিয়া জানালো আদনান আসছে কয়েকদিন পর তাই রং টং করে সবকিছু ঠিকঠাক করে রাখার জন্য।

    নিপার মা মায়া দেখলেন মেয়ে আজ খুশিতে ভাসছে। গুনগুন করে গাইতে লাগলো, গাছগুলোর পরিচর্যা করতে লাগল। অনেক দিন খুব মনমরা হয়ে ছিল,অকারণে মেজাজ দেখাতো,ঠিকমত ক্লাসে যেতো না।নিপার মা ভাবতেন রিয়ার মৃত্যুতে খুব কষ্ট পেয়েছে তাই এমন করে নিপা।রিয়ার সাথে নিপার সম্পর্ক দেখে অপরিচিতরা ভাবতো দুই বোন।সব সময় আসা-যাওয়া ছিল বাসায়,বাবুকে ও খুব আদর করতো নিপা।
    মেয়ের খুশি দেখে মায়াও খুশি হলেন।কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন-
    —কি ব্যপার বল তো,কোন খুশির খবর আছে?
    মুহুর্তেই চেহারা পরিবর্তন হয়ে গেল নিপার।কপাল কুঁচকে বলল-
    —আমি হাসিখুশি থাকি সেটা তো কখনোই চাও না।সব সুখ কি তোমার বড় মেয়ের জন্য,তাই না?তবে আমার আজকের খুশির তেমন কোন কারণ নেই।

    মায়া সেখানে দাঁড়িয়েই ভাবতে লাগলেন ,কেন যে মেয়েটা এমন হলো?বড় বোন নোভার সাথে এত রেষারেষি,এত হিংসা।দুই সন্তানকে কখনো তো কম-বেশি করে দেখেন নি,তবে কেন এমন হলো।

    নিপা চলে যেতে নিয়েও আবার ঘুরে এলো।
    —মা ,চার তলাটা রিপেয়ার করছে দেখলাম। আদনান ভাই নাকি দুইদিন পরই আসবে।
    এবার বুকটা ধক্ করে উঠল মায়ার। তিনি যা ভাবছেন , তা যেন কিছুতেই নিপার খুশির কারণ না হয়।মনে মনে আল্লাহকে ডাকতে লাগলেন।

    নিপা একবার ভাবলো আদনানকে ফোন করে কিন্তু এতদিন কোন খবর না নিয়ে আজ হঠাৎ করে ফোন করলে আবার কি মনে করে।এই কয়টা দিন অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই ।সে আপন মনে লা লা লা করতে লাগলো।
    .

    .
    .
    নূরজাহান এই কয়েক দিনে খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছেন আদনান আর হিয়ার সম্পর্ক স্বাভাবিক না। আদনানের আব্বাকে বললেন ও এই ব্যপারে। তিনি শুনে শুধু বললেন,’সময়ে সব ঠিক হইয়া যাইবো,তুমি খুব বেশি আজাইরা চিন্তা কর।’
    নূরজাহান বললেন-
    —জানতাম কোন লাভ হইবো না, তবুও জানাইয়া রাখলাম তোমারে।
    বুঝতে পারলেন এর উপায় তাঁকেই করতে হবে।

    ঢাকায় রওনা হওয়ার সময় হিয়ার আম্মা-আব্বাও আসলেন।আম্মা কাঁদতে কাঁদতে অস্থির হয়ে যাচ্ছেন।সবাই সান্তনা দিতে লাগল।হিয়া আম্মাকে জড়িয়ে ধরে আস্তে আস্তে বলল-
    —আম্মা তুমি কাঁদতে থাকলে আমি যেতে পারব না,আমাকে হেসে বিদায় দাও।
    আম্মা মলিন মুখে হাসবার বৃথা চেষ্টা করলেন।আব্বা কিছুই বললেন না, শুধু মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।

    নূরজাহান অনেক উপদেশ দিতে লাগলেন।
    তাদের সাথে মফিজ আর শাপলা ও যাচ্ছে দেখে আদনান তো অবাক। নূরজাহান বললেন-
    —বাসাটা পরিষ্কার কইরা ,গুছাইয়া কিছু দিন পরে ওরা চইলা আসবো। একলা একলা হিয়ার ও তো ভালো লাগবো না।

    চলবে…

    ফাহমিদা লাইজু

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here