ভালোবাসি_বলেই_তো পর্ব – ৩৩

0
903

#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ৩৩

পূর্ণতা আবরনের আইডিয়া শুনে বার বার পানি খাচ্ছে আর নিজের রুমে পাইচারী করছে । বার বার মনে হচ্ছে কি করে সব সামলাবে আবরন !

এর‌ই মধ্যে আবরন ওর রুমের দরজার সামনে এসে বলল ,

– পূর্ণতা , চলো আমাদের যেতে হবে !

পূর্ণতা ভাবনা ছেড়ে আবরনের কন্ঠ শুনে ওর দিকে তাকালো । মনের ভেতর ভয় কাজ করছে পূর্ণতার । তবুও নিজেকে শান্ত করে আবরনের দিকে এগিয়ে গেল ।

আবরন ওর হাত ধরে দ্রুত গতিতে ওকে নিয়ে বাহিরে বেরিয়ে গেল ।

রাত ১০ টা ,

আবরন পূর্ণতা কে নিয়ে বাহিরে বের হতেই দেখল দুই গাড়ি ভর্তি মানষজন ওদের জন্য অপেক্ষা করছে ।

শাদমান চৌধুরীর প্রাইভেট কারে শাদমান চৌধুরী , আধিরা আনজুম আর পেছনে মিলি রহমান আর আফতাব উজ্জামান বসেছে ।

আবরনের পার্সোনাল জিপে একদম পেছনে বসেছে জিব্রান , নাদিরা , তাসিন ।

মাঝের সিটে সাইডে বসেছে তাসিন , মাঝে আয়মান আর অপর সাইডে ফাহিম ।

এত মানুষ একসাথে এখন যাচ্ছে প্রেনাদের বাসায় বিয়ে পাকা করতে সেটা ভাবতেই পূর্ণতার বুক ভয়ে ফেটে যাচ্ছে । মনে মনে ভাবছে ,

– কি করে ম্যানেজ করলো আবরন সবাইকে ?? কি করে ??

ভাবনার মাঝেই আবরন বলল ,

– এমনিতেই অনেক লেইট আমরা । জলদি যেতে হবে চলো ।

এই বলে আবরন সামনে এগোতেই পূর্ণতা পেছন থেকে আবরনের হাত আটকে শক্ত করে চেপে ধরল ।

আবরন পেছনে ঘুরে পূর্ণতা কে বলল ,

– ইটস ওকে , আমি আছি তো । আর এখন শুধু আমি না , সবাই আছে আমাদের পাশে । ওকে ? চলো এখন ?

পূর্ণতা বলল ,

– প্রেনার আম্মু কি জানে আমরা যাচ্ছি তাদের বাসায় ?

– না ।

– এই যে ! এই জন্যই তো ভয় লাগছে ।

– ভয় কিসের ? সাথে আমাদের গার্ডিয়ান আছে না ? আর ঐদিক থেকে আয়মানের প্যারেন্টস ও অলরেডি র‌ওনা হয়ে গিয়েছে ।
এখন আর এক মূহুর্ত সময় নষ্ট করা যাবে না । চলো চলো ।

– শুনুন !

– আবার কি ?

– আন্টি তো আমার উপর ভরসা করেই প্রেনাকে সেদিন আমাদের সাথে পাঠিয়েছিল । আন্টি যদি আমাকে ভুল বোঝে , খারাপ ভাবে ??

– বললাম তো আমি আছি । চলো এখন ।

– হুম ।

পূর্ণতা মন খারাপ করে কাপা কাপা ভাবে গাড়িতে উঠে বসলো । আবরন উঠে ড্রাইভিং সিটে বসে আগে পূর্ণতার সিট বেল্ট টা বেঁধে দিয়ে তারপর নিজের সিট বেল্ট বেঁধে প্রেনাদের বাসার উদ্দেশ্য নিয়ে র‌ওনা হলো ।

আবরন ড্রাইভিং করতে করতে ফোনে কাজীর সাথে কথা বলছে ।

পূর্ণতার বুঝতে বাকি নেই আজ আয়মান আর প্রেনার যেভাবেই হোক বিয়ে পড়িয়ে দেওয়া হবে । এই ভেবে মনে মনে আল্লাহ কে ডাকতে শুরু করলো ,

– আল্লাহ , সব যেন ভালোয় ভালোয় হয় ! কোনো রকম ভুল বোঝাবুঝি আর গন্ডগোল যেন না সৃষ্টি হয় । তুমি ই সহায় , তুমি ই সব । প্লিজ , আল্লাহ , ওদের মিলিয়ে দিও । প্লিজ ।

ফ্ল্যাশ ব্যাক :

পূর্ণতা আর আবরন ছাদ থেকে ফিরে ঘরে ঢুকেই প্রথম পূর্ণতার রুমে গেল । সবাই এই মূহুর্তে মিলি রহমানের রুমে আছে আর জিব্রানের রুমে শুধু জিব্রান , তাসিন , ফাহিম আর আয়মান ।

আবরন পূর্ণতার রুমে ঢুকেই দরজা লাগিয়ে দিল । পূর্ণতা বলল ,

– জলদি বলুন কি প্ল‍্যান করেছেন ??

আবরন বলল ,

– প্ল‍্যান কিছুই না ।

– মজা করছেন ?

– না , আমি সিরিয়াস ।

– তাহলে সমাধান কি করে করবেন তা বলেন ।

– সবাইকে সব সত্যি জানিয়ে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই ।

পূর্ণতা আবরনের মুখে এই কথা শুনে যেন ৪৪০ ভোল্টের ঝটকা খেল । তারপর বলল ,

– কি বলছেন কি ? মাথা ঠিক আছে আপনার ??

-হ্যাঁ , আমি ঠিক আছি । এখন যদি সত্যিটা না জানাই তাহলে হঠাৎ করে ওদের বিয়ে দেওয়া পসিবল হবে না । মূলত , গার্ডিয়ান দের অবশ্যই সহমত হতে হবে ।

– এখন কি করতে চাইছেন ?

– আমি বাবাকে বিষয়টা ক্লিয়ার করবো আগে । তারপর বাবা কেই বলবো যে কোনো ভাবে বাকি বিষয়টা সবার সাথে ক্লিয়ার করতে । সবাই যদি ম্যানেজ হয়ে যায় তাহলে বাকি থাকে শুধু প্রেনার বাবা মা আর আয়মানের বাবা মা ।

– ওনাদের কি করে ম্যানেজ করবেন ?

– সেটা আল্লাহ ই ভালো জানে ।

– আমার খুব ভয় করছে ।

– তুমি টেনশন নিও না । চুপচাপ এখানে বসো , মাথা ঠান্ডা করো । আমি বাবার সাথে বিষয়টা ক্লিয়ার করি ।

– সবাই যদি আমাদের ভুল বোঝে ?

– আমরা এখন বড় হয়েছি পূর্ণতা , ভুল কেন বুঝবে ? আর আমাদের ফ্যামিলি এমন না যে আমাদের একা বিপদের মুখে ফেলে দিবে সব কিছু জেনে শুনেও । so , সত্যিটা সবাইকে জানানো দরকার ।

– আপনি পারবেন আঙ্কেল কে এই কথা বলতে ?

– পারবো , ইনশাআল্লাহ । কিন্তু তোমার সাপোর্ট দরকার । তুমি ই যদি ভয় পাও তাহলে আমি কি করে মনে সাহস জোগাবো বলো ?

– হুম , আচ্ছা । আপনি যান । আমি দোয়া দুরূদ পড়ি ।

– হুম ।

আবরন পূর্ণতার গালে হাত বুলিয়ে মিথ্যা হাসি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ।

সেই থেকে পূর্ণতা পানি খেতে খেতে মাথা ঠান্ডা করছে ।

আর এদিকে আবরন রুম থেকে বের হয়ে শাদমান চৌধুরীকে একটা কল দিল । শাদমান চৌধুরী আবরনের কল পেয়ে রুম থেকে বের হয়ে রিসিভ করতেই যাচ্ছিল কিন্তু দেখল আবরন সেখানেই দাঁড়িয়ে । ভ্রু কুচকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিয়ে আবরনকে বলল ,

– কি হয়েছে আবরন ?

কল কেটে আবরন শাদমান চৌধুরীকে বলল ,

– বাবা , তোমার সাথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে । এখানে বলা যাবে না । তুমি কি আমার সঙ্গে একটু নিচে যাবে । আমরা আমার গাড়িতে বসে সেই বিষয়ে কথা বলি । খুবই জরুরী বাবা ।

– ঠিক আছে চলো ।

নিচে নেমে আবরন আর শাদমান চৌধুরী আবরনের গাড়িতে উঠে বসল । আবরন গাড়ি টা স্টার্ট দিয়ে এসিটা ফুল করে দিয়ে শাদমান চৌধুরীর দিকে তাকালো । শাদমান চৌধুরী বললেন ,

– তোমাকে এত নার্ভাস লাগছে কেন আবরন ? কোনো বড় রকমের সমস্যা হয় নি তো ?

আবরন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল ,

– বাবা , আমি তোমাকে নিজের বন্ধু মনে করে কিছু কথা শেয়ার করতে চাই । তুমি প্লিজ আমাকে ভুল বুঝো না ।

– তুমি নির্দিধায় বলো , বিষয়টা কি ?

– বাবা …… বিষয়টা হচ্ছে আয়মানকে নিয়ে !

– কি হয়েছে আয়মানের ? ওকে না উপরে দেখলাম ! সব তো ঠিক ঠাক ই ছিল ।

– হুম , ও তো ঠিক থাকার অভিনয় করছে ।

– কি হয়েছে সহজ ভাষায় বলো তো ?

– বাবা , আয়মান একটা অনেক বড় ভুল করেছে ।

– কি ভুল ?

আবরন বিষয়টা সম্পূর্ণ খোলাসা করে বলতেই শাদমান চৌধুরী কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন ,

– তুমি এত বড় একটা ঘটনার প্যারা একা মাথায় নিয়ে ঘুরছো কি করে ?

– একা মাথায় রাখতে পারবো না বলেই তো প্রথম পূর্ণতা কে জানিয়েছি ।

– এখন তুমি কি চাইছো ওদের মিলিয়ে দিতে ?

– আমি চাই না ওরা বিয়ের আগে যেই গুনাহ টা করেছে তা ওরা দুজন সারাজীবন বয়ে বেড়াক । তাই সেটা ওদের একসাথেই মিটাতে হবে । তাই আমি চাইছি তুমি ওদের বিয়েটা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দাও ।

– বড্ড ঝামেলা পাকিয়েছো তো ! কিন্তু এসব বলে আর কি হবে ? দেখছি কি করা যায় !

– থ্যাংকস বাবা , থ্যাংকিউ সো মাচ । আমি জানতাম তুমি আমাকে বুঝবে ।

এই বলে আবরন শাদমান চৌধুরী কে জড়িয়ে ধরল ।

শাদমান চৌধুরী ও আবরনের পিঠে হাত রেখে বলল ,

– থ্যাংকস টু ইউ মাই বয় । তুমি চাইলে বিষয়টা গোপন করতে পারতে কিন্তু তুমি সেটা করোনি !

আই এম রিয়েলি প্রাউড অব ইউ মাই সান ।

তুমিই দেশের ভবিষ্যৎ , এরকমই সৎ পরিকল্পনা নিয়ে ডাক্তার হ‌ও সেই দোয়া করি ।

আবরন আবার‌ও শাদমান চৌধুরী কে জড়িয়ে ধরল ।

শাদমান চৌধুরী আবরনকে নিয়ে আবার উপরে ফিরে গেলেন ।

সবার মাঝে উপস্থিত হয়ে শাদমান চৌধুরী বললেন ,

– তোমাদের সবার সাথে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই ।
আমি জানি , আফতাব আজকে খুব টায়ার্ড । কিন্তু আমার মনে হচ্ছে , আফতাবের টায়ার্ডনেসের চেয়ে আমার এখন বলতে চাওয়া কথাগুলো বেশি জরুরি ।

শাদমান চৌধুরীর মুখে হঠাৎ এমন কথা শুনে আফতাব উজ্জামান সহ রুমে উপস্থিত আধিরা আনজুম আর মিলি রহমান ও একটু নড়ে চড়ে বসলেন ।

শাদমান চৌধুরী দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা আবরনের উদ্দেশ্যে বললেন ,

– আবরন , যাও গিয়ে বাকি সবাইকে এখানে ডেকে নিয়ে এসো ।

আবরন বাবার কথা অনুযায়ী জিব্রানের রুমে গিয়ে জিব্রানসহ বাকি সবাইকে ডেকে নিয়ে সেই রুমে হাজির হলো ।

একমাত্র পূর্ণতা কে আবরন ডাকল না । কারন এই মূহুর্তে পূর্ণতা কে এখানে আনা ঠিক হবে না মনে করেই আবরন ওকে ডাকলো না ।

রুমে সবাই উপস্থিত হতেই শাদমান চৌধুরী আয়মান আর প্রেনার বিষয়টা সবার কাছে খুলে বলতেই আয়মান ভয়ার্ত চোখে আবরনের দিকে তাকালো । আবরন আয়মানকে চোখ দিয়ে “রিল্যাক্স” হ‌ওয়ার জন্য ইশারা করল । কিন্তু আয়মানের ভয় কাটছে না কিছুতেই ।

আধিরা আনজুম বললেন ,

– এত বড় একটা ঘটনা আর ওরা আমাদের কিচ্ছু জানালো না !

শাদমান চৌধুরী বললেন ,

– আহহা , জানালো না আবার কোথায় ! না জানালে আমি জানলাম কি করে ! ওদের কোনো দোষ নেই । এই বয়সটাই এমন । তাই বলে তো আমরা ওদের জীবনটা নষ্ট করতে পারি না । ওদের বিয়ে দিয়ে ওদের করা গুনাহ থেকে তো ওদের মুক্ত করতে পারি !

আফতাব উজ্জামান বললেন ,

– এখন কি তাহলে তুই চাইছিস যে ওদের বিয়ের ব্যবস্থা করবি ?

শাদমান চৌধুরী বললেন ,

– এক্সেক্টলি !

আফতাব উজ্জামান বললেন ,

– এখন আয়মান বাবা আর প্রেনা মায়ের ফ্যামিলি মেম্বারস দের কি করে ম্যানেজ করবি ?

– আয়মানের বাবা মাকে ফোনে জানাচ্ছি যেন ওরা এখন‌ই র‌ওনা দিয়ে প্রেনাদের বাসার সামনে চলে আসে ।

আর আমরা এদিকে থেকে বর পক্ষ হয়ে সরাসরি প্রেনাদের বাসায় গিয়ে উঠবো ওদের কিছু না জানিয়েই । কারন বিষয়টা এখন প্রেনার বাবা মাকে জানালে তারা রাগের বসে মেয়েটাকে মারধর করবে । তাই আমরা সেখানে গিয়েই ভেবে চিন্তে ঠান্ডা মাথায় বিষয়টা তাদের বোঝাবো । আর আবরন !!

তুমি কাজীর ব্যবস্থা করো ! জলদি ।

আবরন বলল ,

– ঠিক আছে বাবা ।

জিব্রান বলল ,

– আমি দুঃখিত , আমি ওদের সাথে গিয়েও ওদের খেয়াল রাখতে পারি নি ।

আফতাব উজ্জামান বললেন ,

– তোর এখানে কোনো দোষ নেই । গিয়েছিলি চিল করতে , সেই সব নিয়েই ব্যস্তথাকাটা স্বাভাবিক । দোষ কাউর ই নেই , ভাগ্যে ছিল তাই হয়েছে । এখন সেসব ভাবা যাবে না । সবাই তৈরি হ‌ও । বর পক্ষ যাবে বলে কথা , একটু মিষ্টি দ‌ইয়ের ব্যবস্থা তো করা দরকার ।

মিলি রহমান বললেন ,

– তা ঠিক আছে । এই রাত করেই আমরা যাবো নাকি ?

আফতাব উজ্জামান বললেন ,

– এখন বাজে নয়টা । বেশি রাত হয় নি । আর যত দ্রুত সম্ভব বিষয়টা ক্লিয়ার করতে হবে নাহলে আর কারো সমস্যা না হলেও প্রেনা মা খুব বাজে ভাবে ফেঁসে যাবে ।

আধিরা আনজুম বললেন ,

– হ্যা , মিলি । ভাই ঠিক বলছে । এক্ষুনি
যা করার করতে হবে ।

মিলি রহমান সবার কথা শুনে জিব্রানকে উদ্দেশ্য করে বললেন ,

– তাহলে তোরা দাঁড়িয়ে দেখছিস কি ? যা , গিয়ে আয়মানকে তোর একটা ভালো পাঞ্জাবি পড়িয়ে নিয়ে আয় ।

জিব্রান বলল ,

– যাচ্ছি , যাচ্ছি ।

জিব্রান রুম থেকে বের হতেই ফাহিম আর তাসিন মিলে আয়মানের ঘাড় ধরে ওকে রুম থেকে বের করতে করতে বলল ,

– শালা , দাঁড়িয়ে আছিস কেন ? বিয়ে করবি না নাকি ?

– চল , বলছি , চল ।

আবরন সবাইকে উদ্দেশ্য করে সালাম দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে সোজা জিব্রানের রুমে গেল ।

আবরন আগে থেকে পাঞ্জাবি পড়া । আয়মান সহ বাকিরা জিব্রানের পাঞ্জাবি পড়ে রেডি হয়ে নিল ঝটপট । তারপর বাকিদের সাথে বেরিয়ে গেল নিচের দিকে ।

আবরন গেল পূর্ণতার রুমে ওকে সাথে নিয়ে আসতে । কারন পূর্ণতা খুব চিন্তা করছে নিশ্চয়ই ।

পূর্ণতা কে সব বলে বুঝিয়ে ওকে নিয়ে বেরিয়ে এলো রুম থেকে ।

এদিকে শাদমান চৌধুরী কোনো রকম ভাবে আয়মানের বাবা আরিফুল হককে রাজি করালেন শুধু এই বলে যে ,

– আয়মানকে বিয়ে করানোটা খুব‌ই জরুরি । আপনি এবং আপনার স্ত্রী জলদি ওমুক ঠিকানায় চলে আসুন । আপনারা এলে বাকিটা আপনাদের খুলে বলা হবে । কারন ফোনে সব বোঝানো এই মূহুর্তে সম্ভব না ।

আরিফুল হক শুধু একবার আয়মানের সাথে কথা বলতে চাইলেন বিষয়টার শিউরিটি জানার জন্য । আয়মান কথা বলার পর‌ই ওনারা র‌ওনা হয়ে গেলেন প্রেনাদের বাসার ঠিকানার উদ্দেশ্যে ।

জিব্রান নাদিরাকে বলে কয়ে ওদের বাসায় এনে ওকে সাথে নিতে পারলেও ফাহিম আর তাসিন রুহি আর নীরা কে ম্যানেজ করতে পারলো না । কারন তখন বাজে রাত ১০ টার কাছাকাছি । বাসা থেকে ওদের বের হতে না দেয়া টাই স্বাভাবিক ।

………………………………………………..

প্রেনাদের বাসার সামনে পর পর দুটো গাড়ি পার্ক করে রেখে সবাই গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো ।

গাড়ি থেকে নামতেই আয়মানের বাবা আরিফুল হক এবং মা আয়েশার সাথে সবার দেখা হলো ।

আরিফুল হক সোজা শাদমান চৌধুরীর সামনে গিয়ে চিন্তিত চেহারা নিয়ে বললেন ,

– আমার ছেলে কি করেছে যার জন্য ওকে এখন বিয়ে করাতে হবে ?

শাদমান চৌধুরী সংক্ষেপে সব বুঝিয়ে বললেন । আরিফুল হক বিষয়টা শোনার পর কোনো ভাবেই নিজেকে সামলাতে পারছেন না । তার একটাই কথা ,

– এত কষ্ট করে টাকা পয়সা খরচ করে ছেলেকে সে এই জন্য ডাক্তারি পড়াচ্ছি ? ছি , ছি , লজ্জায় আমার নাক মুখ কাটা যাচ্ছে । আমার মান সম্মান সব এভাবে ধুলোয় মিশিয়ে দিল আয়মান ? ছি …

আয়মান কাদছে বাবার মুখে এসব কথা শুনে । মনে মনে বাবার বলা কথা গুলো ভেবে ওর নিজের ই এখন খারাপ লাগছে ।

তাসিন আর ফাহিম ওকে ধরে সান্ত্বনা দিচ্ছে কোনো ভাবে ।

আয়মানের মা আয়েশা বললেন ,

– তুমি এভাবে ভেঙে পড়ো না , ভাগ্যে ছিল বলেই তো এমনটা হয়েছে । তুমি মেনে নাও । মাফ করে দাও । আমার বিশ্বাস ও ডাক্তার হয়ে নিজ পায়ে দাঁড়িয়ে একদিন তোমার হারানো সম্মান তোমায় ফিরিয়ে দেবে । মেনে নাও ওদের ।

আরিফুল হক বললেন ,

– মানতে তো হবেই আজ হোক বা কাল । তুমি তোমার ঘরের ব‌উকে কি দিয়ে তুলে নেবে তা নিয়ে এসেছো তো ?

– আপাতত , বড় ছেলের ব‌উ এর জন্য বানিয়ে রাখা চেইন আর বালা দুটো এনেছি । আর একটা নতুন লাল শাড়ি এনেছি । ব‌উ ঘরে তুললে না হয় আরো কিছু দিয়ে ভরিয়ে দেব ।

সবাই বললেন ,

– আলহামদুলিল্লাহ ।

পূর্ণতা আর আবরন‌ও খুশি হয়ে বলল ,

– আলহামদুলিল্লাহ ।

এর‌ই মধ্যে কাজী ও এসে হাজির হলো । কাজীর সাথে আরো দুজন হুজুর এসেছে । তাদের হাতে ১০ কেজি মিষ্টির প্যাকেট ।

আরো এসেছে একজন উকিল সাথে করে রেজিস্টার পেপার ফাইলে নিয়ে ।

সবাইকে নিয়ে অবশেষে প্রেনাদের দরজায় বেল বাজালো শাদমান চৌধুরী ।

প্রেনার মা ইশিতা আলম এসে দরজা খুলে এত মানুষকে একসাথে দেখে যেন ৪৪০ ভোল্টের ঝটকা খেল ।

মিলি রহমান বললেন ,

– ভাবি , ভেতরে আসতে দিন , আমি সব বুঝিয়ে বলছি ।

ইশিতা আলম দরজা থেকে সরে দাঁড়াতেই একে একে সবাই ভেতরে ঢুকল ।

প্রেনা এত মানুষের ভিড়ের শব্দে নিজের রুম থেকে উঁকি ঝুঁকি দিতেই দেখল পূর্ণতা ওর রুমের দিকেই এগিয়ে আসছে । সাথে নাদিরা ভাবিও আছে ।

পূর্ণতা প্রেনার রুমে ঢুকেই ওকে বলল ,

– সারপ্রাইজড হ‌ওয়ার কিছু নেই । হাতে একদম সময় ও নেই । জলদি শাড়িটা পড়ে নে ।

– লাল শাড়ি ?

– না বোঝার ভান করিস না ! সব যখন বুঝিস , এখন না বোঝার কিছুই নেই ।

এই বলে পূর্ণতা দরজা লাগিয়ে দিল ।

– আমি শাড়ি পড়াতে জানলে এত বকবক ও করতাম না । সোজা তোকে শাড়ি পড়িয়ে সবার সামনে নিয়ে যেতাম ।

So , কথা না বলে জলদি শাড়িটা পড়ে নে ।

নাদিরা বলল ,

– পূর্ণ , বেচারির বিয়ের দিন ওর সাথে এভাবে বলো না ।

প্রেনা পূর্ণতার হাব ভাব আর নাদিরার কথা শুনে বিষয়টা আন্দাজ করতে পারল ।

নাদিরা জলদি জলদি প্রেনাকে শাড়ি পড়িয়ে দিল ।
নাদিরার প্রেনাকে শাড়ি পড়ানো শেষ হতেই পূর্ণতা প্রেনার চুলে টেনে টুনে একটা খোপা করিয়ে দিয়ে একটু হালকা পাতলা সাজিয়ে দিয়ে মাথায় শাড়ির আঁচল দিয়ে একটা বড় ঘোমটা টেনে দিল ।

তারপর আবরন কে কল দিয়ে বলল ,

– কনে রেডি ? আমি কি ওকে নিয়ে আসবো ??

আবরন বলল ,

– এসো , বাহির থেকে তো সবার কথা শুনে মনে হচ্ছে প্রেনার আম্মুকে রাজি করানো গিয়েছে । আর আঙ্কেলের কোনো আপত্তি ই দেখছি না ।

– যাক , আলহামদুলিল্লাহ।

অবশেষে সবার মত প্রকাশের পর আয়মানকে কাজি বসিয়ে দোয়া দুরূদ পড়াতে শুরু করলেন । তারপর পূর্ণতা আর নাদিরা মিলে প্রেনাকে নিয়ে এসে আয়মানের পাশে বসালো ।

কাজি আয়মানকে উদ্দেশ্য করে বলল ,

– বাবা , কবুল বলো ।

আয়মান কাজির কথা শুনে আশে পাশে উপস্থিত সকল মুরুব্বী দের দিকে তাকালো ।

সবাই মাথা নাড়তেই পেছন থেকে আবরন , তাসিন , ফাহিম আর জিব্রান ওর পিঠে চাপড় মেরে বলল ,

– শালা !! তাকিয়ে দেখছিস কি ?? কবুল বল !

আয়মান সবার কথা মতো মন থেকে কবুল বলতেই সবাই “আলহামদুলিল্লাহ” বলে উঠল ।

কাজী বলল ,

– এবার মেয়ের পালা ! আম্মা তুমি সহমত থাকলে কবুল বলো !

প্রেনা আশেপাশে তাকিয়ে দেখবে কি ? পূর্ণতা ওকে এত বড় ঘোমটা টেনে দিয়েছে যে ও নিজের হাত ছাড়া আশে পাশের কিছুই দেখছে না ।

পূর্ণতা পাশে বসে ওর হাতে থাপ্পড় মেরে আস্তে করে বলল ,

– কিরে ? বিয়ে করার ইচ্ছা নেই নাকি ? কবুল বল !

প্রেনা , একদমে তিনবার কবুল বলেই দিল ।

সবাই “আলহামদুলিল্লাহ” বলে উঠল ।

পূর্ণতা খুশি হয়ে মিষ্টি হাত নিয়ে আয়মান আর প্রেনা কে খাওয়াতে শুরু করল ।

প্রেনার মা কাদছে । মিলি রহমান আর আধিরা আনজুম তাকে বোঝাচ্ছে যে
– ভাগ্যে যা ছিল তাই হয়েছে । হাসি মুখে মেনে নিয়ে ওদের মন থেকে দোয়া করে দিন ।

প্রেনা আর আয়মান উঠে গিয়ে সবাইকে সালাম করল ।

ইশিতা আলম বললেন ,

– অনেক খুশি থাকিস তোরা ! অনেক অনেক খুশি থাকিস ! আশা করি আমি মা হিসেবে তোদের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত টাই নিতে পেরেছি ।

প্রেনা কান্না করে ইশিতা আলমকে জড়িয়ে ধরল ।

ওদিকে পূর্ণতা খুশি হয়ে আবরনকে ইচ্ছে মতো মিষ্টি গিলাচ্ছে কারন সব বুদ্ধি আবরনের ই ছিল ।

আবরন বলছে ,

– পাগলামি করো না , আজ ই যদি সব মিষ্টি খেয়ে নিই তো নিজের বিয়ের দিন মিষ্টি কি করে খাবো ?? সেদিনের জন্য কিছু স্বাদ মুখে বাচাতে দাও ।

পূর্ণতা হাসতে শুরু করল ।

সব কাজ শেষ করে অবশেষে রাত ২ টায় প্রেনার রুমকেই সবাই মিলে সাজিয়ে গুজিয়ে দিয়েছে । এই রুমেই ওদের বাসরের এরেঞ্জমেন্ট করা হয়েছে । প্রেনাকে বৌ এর মতো বসিয়ে রেখে পূর্ণতা বাহির থেকে দরজা লাগিয়ে বাকি সবার সাথে বাহিরে এসে দাঁড়ালো ।

পূর্ণতা বলল ,

– আজকে আমি বড় লোক হয়ে যাবো । কারন আমি কনে এবং বর উভয় পক্ষ ই ।

আবরন বলল ,

– তা কি করে ?

– অত শত আপনি বুঝবেন না ……..

– বুঝিয়ে দাও ……..

– আমি প্রেনার বেষ্টি , তাই কনে পক্ষ !
আর আয়মান ভাইয়ার ছোট বোন তাই বর পক্ষ !

আবরন বলল ,

– তাহলে আমারো তো সেইম সেইম !

– এহ !

– আয়মান আমার বন্ধু আর প্রেনা আর শালিকা । 😜

– তাহলে চলুন দুজন‌ই আয়মান ভাইয়ার কাছ থেকে খানা দানা খেতে কিছু চাই ।

– তা ঠিক আছে ।

তাসিন বলল ,

– তোরা একা দাঁড়াবি নাকি ? আমরাও আছি ! এই ফাহিম আয় , জলদি ।

নাদিরা হেসে বলল ,

– জিব্রান , জলদি ওদের একটা ছবি তুলো ।

জিব্রান ফোন হাতে নিয়ে শাট শাট করে ওদের ফাজলামির কয়েকটা মূহুর্ত ক্যামেরা বন্দি করে নিল ।

#চলবে ♥️

বিঃদ্রঃ তোমরা কি ভেবেছো আজ আবরণ আর পূর্ণতার বিয়ের দাওয়াত দিয়েছি তোমাদেরকে ??

আরে আরে , এত তাড়া কিসের ? এত সহজে কি আর ওদের বিয়ে দেয়া যায় ?একটু ধৈর্য্য সহ্য তো দরকার নাকি ! 😜

গল্পের ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন । ধন্যবাদ । ♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here