- #ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ৩৮ভার্সিটির মেইন গেইট দিয়ে ভেতরে পা রাখতেই আবরন আর জলের সাথে দেখা হলো পূর্ণতার । জলকে এখানে দেখে পূর্ণতার উপর যেন আরো একবার আকাশ ভেঙে পড়ল । সব কিছু যেন ওর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে । কোনো কিছুই ও বুঝতে পারছে না ।
জল পূর্ণতা কে দেখে দৌড়ে ওর কাছে এসে ওকে বলল ,
– পূর্ণতা ! কেমন আছো ?
পূর্ণতা কি বলবে বুঝতে পারছে না ।
তাই জলের থেকে কিছুটা দূরে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা আবরনের দিকে পূর্ণতা তাকাতেই আবরন চোখ দিয়ে ইশারা করে বলল ,
– কথা বলো !
পূর্ণতা জলের দিকে তাকিয়ে বলল ,
– আলহামদুলিল্লাহ । তুমি কেমন আছো ?
– এতক্ষন খারাপ ছিলাম , এখন ভালো আছি ।
পূর্ণতা বলল ,
– কেন ?
জল পূর্ণতার হাত ধরে বলল ,
– আমি জানি তুমি আমার উপর এখনো রেগে আছো , আমি তোমার যে ক্ষতি করেছি তার পরে আমাকে ক্ষমা করা সম্ভব না । কিন্তু নিজেকে এখন পৃথিবীর তুচ্ছ ব্যক্তি মনে হয় নিজের কাছেই ।আমি জানি তুমি আমাকে ক্ষমা করতে পারবে না , অবশ্য আমি যা করেছি তা ক্ষমার যোগ্য ও না । তবুও তোমার সাথে দেখা করে নিজের মনের কথা গুলো তোমাকে জানিয়ে তোমার কাছে ক্ষমা চাওয়াটা অনেক জরুরি মনে হচ্ছিল । তাই তো আবরনের সাথেই আজ মেডিক্যাল এ আসলাম , নাহলে তো আমাকে মেডিক্যাল এ কেউ ঢুকতেই দিত না আর তাহলে এই ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে সবাইকে সাক্ষী রেখে তোমার কাছে ক্ষমা চাওয়া ও হতো না ।
পূর্ণতা জলের হাতের উপর নিজের হাতটা রেখে বলল ,
– তুমি যা করেছো তা ঠিক নয় কিন্তু ভালোবাসার দিক থেকে ধরতে গেলে হয়তো বা ঠিক । তুমি আবরন ভাইয়াকে ভালোবাসো , তাই হয়তো তোমার মনে আমার প্রতি রাগ ক্রোধ জমেছে । সেই রাগ ক্রোধ থেকেই তুমি এমনটা করেছো । এটা ব্যাপার না । কিন্তু তোমার নিজের রাগ এবং ক্রোধের প্রতি কন্ট্রোল আনাটা জরুরি ।
আর বাকি রইল ক্ষমা করা কথা !!
ক্ষমা তো আমি সেদিনই সবাইকে করে দিয়েছি যেদিন সবাই আমাকে আবারো নতুন করে এই ভার্সিটিতে যথাযথ মর্যাদা দিয়ে ফিরিয়ে এনেছে ।জল কান্না করে পূর্ণতা কে বলল ,
– আমি কি তোমাকে একটু জড়িয়ে ধরতে পারি ?
পূর্ণতা মুখে মলিন হাসি দিয়ে নিজেই আগে জলকে জড়িয়ে ধরল । জলও পূর্ণতা কে জড়িয়ে ধরে আরো কান্নার বেগ বাড়িয়ে দিয়ে বলল ,
– আমি অনেক খারাপ , অনেক খারাপ আমি । আমি তোমার সাথে অনেক বড় অন্যায় করেছি কিন্তু বিশ্বাস করো আমি নিজ থেকে এসব করি নি । আমাকে খারাপ বানানোর পেছনে আমার মা দায়ী । উনার জন্যই আমি এতটা নিচে নেমেছি । উনি কখনো আমার ভালো চায় নি । চেয়েছে শুধু মামার টাকাতে ভাগ বসাতে । তাই তো আবরনের পেছনে আমাকে লাগিয়ে মামার ছেলের বউ হিসেবে সেখানে পাঠাতে চেয়েছে । কিন্তু আবরনের প্রতি আমার ভালোবাসা টা সত্যি ছিল যেটা আবরন কখনো বুঝে নি , আর হয়তো বুঝবেও না । কারন , আবরন তো তোমাকে ভালোবাসে ।
জলের মুখে এই কথাটা শুনে পূর্ণতা জলকে ছেড়ে দাঁড়ালো ।
পূর্ণতা জলের দিকে তাকিয়ে ভাবছে ,
– আজ কিনা শেষ মূহুর্তে এসে আমাকে অন্য আরেকজনের মুখে শুনতে হচ্ছে যে উনি আমাকে ভালোবাসেন ! কেন ? কেন অন্যের মুখে ?? উনি নিজে কেন কখনো বলল না আমাকে এই কথাটা । তাহলে হয়তো আজ আমাকে অন্য একজনের সাথে বিয়ের জন্য মত দিতে হতো না ! ভালো তো আমি ও উনাকে বাসি কিন্তু কখনো বলি নি । আর হয়তো বা বলাও হবে না । আজ খুব কষ্ট হচ্ছে , খুব , খুব , খুব কষ্ট হচ্ছে । মন চাইছে উনাকে একটাবারের জন্যে জড়িয়ে ধরে বলি যে আমি আপনাকে চাই , শুধু আপনাকেই চাই । কেউ পারবে না আমাকে আপনার মতো করে বুঝতে এবং বোঝাতে । কেউ পারবে না আমাকে আপনার মতো করে হাসি খুশি রাখতে । কেউ পারবে না আমাকে আপনার মতো করে রেসপেক্ট করতে । কেউ পারবে না !!
ভাবতে ভাবতেই পূর্ণতার চোখ বেয়ে অঝোরে পানি ঝড়তে লাগল ।
আবরন পূর্ণতা কে কাদতে দেখে এগিয়ে এসে বলল ,
– তুমি কাদছো কেন ? কি হয়েছে ?
জল পূর্ণতা কে ধরে বলল ,
– আমাকে সামনে দেখে কি তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে ? তাহলে আমি চলে যাচ্ছি । তবুও তুমি কষ্ট পেয়ো না । প্লিজ ।
পূর্ণতা চোখের পানি মুছে জবাব দিল ,
– উহু । আমি তো কাদছি খুশিতে । এটা সুখের কান্না ।
আবরন পূর্ণতার কাছে এসে ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল ,
– হয়েছে । কান্নাকাটি অফ করো ।
পূর্ণতা মাথা নাড়িয়ে “হু” বলে আবার বলল ,
– আপনার একটা কাজ আমি করে দিয়েছি !
আবরন ভ্রু কুচকে বলল ,
– কি কাজ ?
– ভাইয়া আর নাদিরা ভাবীর বিয়ের ব্যাপারে আমি বাবা আর আম্মুর সাথে কথা বলেছি !
আবরন চোখ কপালে তুলে বলল ,
– কিভাবে ?? আঙ্কেল আন্টি কি বলেছেন ?
– বাবা আর আম্মু রাজি হয়েছে ।
– সত্যি ?? কিভাবে সম্ভব ?? কি করে বলেছো !
পূর্ণতা মুখে মিথ্যা হাসি দিয়ে বলল ,
– আমি বাবাকে শর্ত দিয়ে রাজি করিয়েছি । বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে । তখন বলেছি যে আমার বিয়ের সাথে যদি ভাইয়ার বিয়েও নাদিরা ভাবীর সাথে হয় , তাহলেই আমি বিয়ে করবো । আর তা নাহলে আমি বিয়ে করবো না ।
আবরন হেসে বলল ,
– বাহ , কি করেছো কি তুমি !! আমার তো মন চাইছে খুশিতে এখন তোমাকে নিয়ে গিয়ে তোমার পছন্দের সব খাবার খাওয়াই ।
পূর্ণতা হেসে মনে মনে বলল ,
– কিন্তু আমার বিয়েটা যে বাবা সায়ন ভাইয়ার সাথে ঠিক করেছে সেটা কি আপনি জানেন ! সেটা জানলে হয়তো আপনি খুশি হবেন না ।
আবরন বলল ,
– ঠিক আছে । তুমি ক্লাসে যাও । আজ ক্লাস শেষে আমরা একসাথে বাসায় ফিরবো ।
পূর্ণতা শুধু ছোট্ট করে বলল ,
– আচ্ছা ।
জল বলল ,
– ঠিক আছে আমি যাচ্ছি তাহলে ।
আবরন বলল ,
– কোথায় যাবে ? ক্লাস করবে না ? কয়দিন বাদে না পরীক্ষা ?
– আমাকে তো বহির্ভূত করা হয়েছে না ?
– না । করা হয় নি । সব ঠিক মতোই আছে । তোমার পূর্ণতার কাছে মাফ চাওয়ার কথা ছিল , পূর্ণতা তো মাফ করে দিয়েছে আর পূর্ণতা মাফ করেছে মানে সম্পূর্ণ ক্যাম্পাসের সবাই তোমাকে মাফ করে দিয়েছে এমনকি স্বয়ং আল্লাহ ও তোমাকে মাফ করে দিয়েছে ।
জল হেসে পূর্ণতা কে বলল ,
– তুমি খুব ভালো । আমি যে কি বলে তোমাকে ধন্যবাদ দিব !
পূর্ণতা বলল ,
– ধন্যবাদ দিতে হবে না , শুধু সবসময় ভালো কাজ করো তাহলেই হবে ।
-হুম ।
– আমি তাহলে ক্লাসে যাচ্ছি । আমার ক্লাস শুরু হতে বেশি দেড়ি নেই ।
আবরন বলল ,
– জলদি যাও । আর ক্লাস শেষে আমার সাথে দেখা করো ।
পূর্ণতা মাথা নেড়ে সেখান থেকে চলে গেল ।
নিজের মনটাকে কোনোভাবেই সামলাতে পারছে না । সব কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে । অনেক বেশি কষ্ট হচ্ছে ওর । আজকে একটা ক্লাস ছিল পূর্ণতার । কোনো রকম ক্লাসটা করে পূর্ণতা করিডোর দিয়ে একা একা হেঁটে বাহিরে বেরিয়ে আসছে । সাথে আজ প্রেনা নেই কারন প্রেনার অন্য বিষয়ের উপর অন্য রুমে ক্লাস হচ্ছে । এই বিষয়টা পূর্ণতার নেই । আর প্রেনার আজকে দুটো ক্লাস তাই ওর সাথে পূর্ণতা যেতে ও পারবে না ।
আনমনে হেঁটে করিডোর থেকে বেরিয়ে আসতেই হঠাৎ কেউ ডেকে উঠলো । পূর্ণতা পেছনে তাকিয়ে দেখলো প্রেনা ডাকছে ।
– কিরে , তোর ক্লাস শেষ ?
– একটা শেষ ! আরেকটা আছে ।
– ও । কিছু বলবি ?
প্রেনা ভালো করে পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে বলল ,
– তুই কান্না করেছিস ?
পূর্ণতা বলল ,
– না তো ।
– দেখ , আমার কাছে লুকিয়ে লাভ নেই ! কি হয়েছে বল !
– কিছুই না ।
– কিছু তো হয়েছে । চল বটতলায় আমার সাথে বসে সব খুলে বলবি ।
– কিছু হয় নি , কি বলবো ।
প্রেনা টানতে টানতে পূর্ণতা কে নিয়ে গিয়ে বটতলায় বসালো আর নিজেও ওর পাশে বসলো ।
– এখন বল তো সত্যি করে কি হয়েছে ?
– ভাইয়া আর নাদিরা ভাবীর বিয়ে ।
– সত্যি বলছিস ? তাহলে তুই খুশি না হয়ে আবালের মতো মন খারাপ করে আছিস কেন ?
– কারন ভাইয়ার বিয়ে আর আমার বিয়ে একই দিনে ।
– আরে বলিস কি রে ! এত ভালো সংবাদ গুলো এতক্ষন পর দিচ্ছিস কেন ? আবরন ভাইয়া কোথায় ?
– উনাকে দিয়ে কি কাজ ?
– তোর বিয়ে মানে তো ভাইয়ার ও বিয়ে ।
– আমার বিয়ের সাথে উনার বিয়ের কি সম্পর্ক ?
– ভাইয়া না বলেছে তোর আর ভাইয়ার বিয়ে একদিনেই হবে !
– হু , হয়তো দুষ্টুমি করে বলেছে ।
– উহু । সত্যি !
এরই মধ্যে ফাহিম , তাসিন আর আয়মান এসে হাজির ।
ফাহিম আর তাসিন মন খারাপ করে আছে । আর আয়মান ওদের দুজনকে নিয়ে কোনো বিষয়ে মজা নিচ্ছে ।
প্রেনা বলল ,
– কি হয়েছে দুই ভাইয়ার ?
আয়মান বলল ,
– সামনে একই দিনে তিনটা বিয়ে আর এদিকে আমাদের ফাহিম তাসিনের বিয়ে নিয়ে কেউ ভাবছেই না । তাই দুই বেচারার মন খারাপ !
ফাহিম বলল ,
– মজা নিস না আর । আমাদের কষ্ট তো তোরা বুঝবি না কারন তোর তো বিয়ের পর্ব শেষ , আর এদিকে সবার বিয়ে সামনে লাগলেও আমার আর তাসিনের বিয়ে নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যথা ই নেই ।
প্রেনা বলল ,
– সমস্যা নেই । সবার বিয়ে শেষ হলেই দেখবেন আপনাদের বিয়ের ও কথা চলছে ।
তাসিন বলল ,
– পূর্ণতা আর জিব্রান ভাইয়া , এরা কি লাকি ! দুই ভাই বোনের এক ই দিনে বিয়ে ! আর ঐদিকে আমাদের আবরনের ও বিয়ে !
ওদের মুখে বার বার আবরনের বিয়ে , আবরনের বিয়ে কথাটা শুনে পূর্ণতার কেমন যেন লাগছে । পূর্ণতা জিজ্ঞেস করল ,
– উনার বিয়েটা কার সাথে হচ্ছে ?
তাসিন বলল ,
– সেটা এখনো জানা যায় নি । কিন্তু বিয়ের ডেট আগেই ফাইনাল ।
পূর্ণতা বাদে সবাই একসাথে হেসে উঠল ।
পূর্ণতা বলল ,
– আমি আর আবরন ভাইয়া যে চিটাগাং গিয়ে কাপলের মতো নাটক করেছি সেটা কি আপনারা সবাই জানেন ?
আয়মান বলল ,
– সেটা জানা কথাই ! আবরন কখনো কাউকে এত ভালোবাসতেই পারে নি । সব বাহানা আর ঢং ছিল । আমাদের দেখানোর জন্য ।
সবাই আবারো হেসে উঠলো । সবার সাথে সাথে পূর্ণতা ও মিথ্যা হাসি মুখে এনে জড়ো করল । কিন্তু মনে মনে ভাবলো ,
– তারমানে আমাদের মাঝে কখনো কোনো ভালোবাসা ই ছিল না । যা ছিল সব নাটক আর বাহানা ।
এরই মাঝে আবরন এসে হাজির হলো সেখানে ।
– কিরে ! এত খুশি কেন ?
সবাই হাসি থামিয়ে আবরনের দিকে তাকালো । ফাহিম বলল ,
– শালা ! অবশেষে তোর মতো নিরামিষ ও বিয়ে করতে যাচ্ছে আর এদিকে আমি আর তাসিন আমিষ হয়েও খবর নেই !
আবরন হেসে বলল ,
– কি করবো ! পূর্ণতা জামানকে বড় গলায় কথা দিয়েছিলাম যে যেদিন ও বিয়ে করবে ঠিক একই দিনে আমিও বিয়ে করবো ।
প্রেনা বলল ,
– বাই দ্য ওয়ে , আবরন ভাইয়া নাহয় পাত্রী এখনো ঠিক করে নি কিন্তু পূর্ণতা ! এই , তোর বিয়ে কার সাথে হচ্ছে রে ! কে আমার দুলা ভাই ?
পূর্ণতা হেসে বলল ,
– আমার ছোট খালামনির বড় ছেলে ।
আবরন বাদে সবাই এক সাথে বলে উঠল ,
– oyeee hoyeee …. 🥳
প্রেনা বলল ,
– নাম কি ভাইয়ার ? আর দেখতে কেমন ?
পূর্ণতা বলল ,
– সায়ন । পুরো নাম জানি না । আর দেখতে …………
পূর্ণতা বলে শেষ করার আগেই আবরন বলল ,
– নিশ্চয়ই আমার মতো ড্যাশিং আর হ্যান্ডসাম না । তাই না ? কারন দুনিয়াতে আমি ওয়ান পিস ।
পূর্ণতা রেগে বলল ,
– জি না , আপনি তো দেখেই এসেছেন । সায়ন সব দিক থেকে আপনার চেয়ে এক লেভেল উপরে আছে ।
সবাই বলল ,
– ওয়াও । তাহলে তো আজই গিয়ে দেখতে হচ্ছে ।
পূর্ণতা বলল ,
– চলেন সবাই তাহলে ।
– ক্লাস শেষে যাবো ।
পূর্ণতা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল ,
– ঠিক আছে । আমার ক্লাস শেষ । আমি বাসায় যাচ্ছি ।
আবরন বলল ,
– হ্যা , চলো । আমিও যাবো তোমার সাথে ।
– কি করতে ?
– কাজ আছে ।
– ওহ । চলুন তাহলে ।
আবরন আর পূর্ণতা সবাইকে বিদায় জানিয়ে মেইন গেইটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে । আবরন চিলড্ মুডে হেঁটে যাচ্ছে । কিন্তু পূর্ণতা তো ভেতর থেকে না চাইতেও ভেঙে পড়েছে । ওর মন চাইছে এখন একটা লং টাইম শাওয়ার নিতে আর বুক ফাটিয়ে চিৎকার করে কাদতে ।
ভাবনার মাঝেই হঠাৎ জল কোথা থেকে এসে যেন ওদের সাথে হাঁটতে শুরু করলো ।
আবরন বলল ,
– তুমি অনেক বদলে গিয়েছো জল !
জল হেসে বলল ,
– বদলে যাওয়াটা কি স্বাভাবিক না ?
– হুম ।
– আগের জল ভালো ছিল নাকি এখনকার জল তোমার কাছে ভালো মনে হচ্ছে ?
আবরন বলল ,
– আগে ম্যানারলেস ছিলে , এখন ভদ্র হয়েছো ।
– আমি খুব বাজে ছিলাম । কিন্তু বিশ্বাস করো তখনকার আমি টা হওয়ার পেছনে আমার আম্মু দায়ী ছিল । আর এখনকার আমি’র পেছনে আম্মুর কোনো হাত নেই । কারন জেলে এই কয়টা দিন একা থেকে বুঝতে পেরেছি আম্মু অনেক বড় সেলফিশ । আমার জানা ছিল না যে মা হয়ে কি করে সে তার মেয়েকে দিয়ে বাজে কাজ করাতে পারে ! সত্যিই , আমাকে আল্লাহ হেদায়েত না করলে হয়তো বা আমি আগের মতোই থেকে যেতাম । এইজন্য আল্লাহ কে কোটি কোটি থ্যাংকস ।
আবরন বলল ,
– হু , সবসময় এমনই থেকো ।
ওদের কথা শুনে পূর্ণতার মনে হচ্ছে ওদের দুজনের মাঝে পূর্ণতা এখন বোঝা ।
আবরন গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে পূর্ণতা কে বলল ,
– ওঠো ।
পূর্ণতা কে পেছনেই উঠে বসছিল কিন্তু আবরন বলল ,
– আমার গাড়িতে নতুন বসছো নাকি ? তুমি কি পেছনে বসো নাকি ?
– জল আপু কোথায় বসবে ?
জল বলল ,
– আমি যাবো না । তোমাদের এগিয়ে দিতে এলাম । আমার আরেকটা ক্লাস আছে ।
পূর্ণতা আবরনের দিকে না তাকিয়েই সামনের ডোর টা খুলে ভেতরে ঢুকে বসে ডোরটা নিজেই টান দিয়ে লাগিয়ে নিজেই সিট বেল্ট বেঁধে নিল । আবরন এসে ড্রায়ভিং সিটে বসে সিট বেল্ট বেঁধে গাড়ি ড্রাইভ করতে শুরু করলো ।
পূর্ণতা ইচ্ছে করেই চোখ বন্ধ করে সিটের সাথে হেলান দিয়ে আছে ।৫ মিনিট পর আবরন গাড়ি থামিয়ে বলল ,
– নামো ।
পূর্ণতা চোখ খুলে আশেপাশে না তাকিয়ে নেমে দাঁড়াতেই দেখল এটা আজিমপুর না ।
আবরন গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়িয়ে এসে বলল ,
– চলো !পূর্ণতা বলল ,
– এটা তো আপনাদের বাসা ! এখানে নিয়ে এসেছেন কেন আমায় ?– আজকে আমাদের বাসায় আম্মু তোমাদের হোল ফ্যামিলি কে দাওয়াত দিয়েছে ।
– আমি তো জানি না । আম্মু তো কিছু বলে নি ।
– তুমি কি করে জানবে । তখন তো তুমি মেডিক্যাল এ ছিলে । শুধু তুমি না আমিও ছিলাম । আমাকে তো আম্মু ফোনে জানালো ।
– ওহ ।
পূর্ণতা মনে মনে ভাবল ,
– আজকেই এখানে আসতে হলো ! আমার মন চাইছে না উনার সামনে থাকতে আর আল্লাহ আমাকে বার বার উনার সামনে নিয়ে দাঁড় করাচ্ছে । কেন ? আমার কেন যেন খুব কষ্ট হচ্ছে । খুব কষ্ট হচ্ছে ! আচ্ছা , সবার সামনে যা দেখিয়েছি তা নাহয় নাটক ছিল , কিন্তু আমরা যখন একান্তে ছিলাম তখন কেন উনি আমার সাথে একই বিহেইভ করছিলেন ? কেন ?
আবরন বলল ,
– তুমি কি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি ? নাকি মন চাইছে আমার কোলে উঠে বাসায় গিয়ে নামতে ।
আবরনের কথায় পূর্ণতার ভাবনার ছেদ কাটলো । পূর্ণতা বলল ,
– তার কোনো দরকার হবে না । আমি হেঁটেই যেতে পারবো ।
– ঠিক আছে । যেমন তোমার ইচ্ছা । চলো ।
– হু ।
…………………………………………………
আবরনদের বাসায় ঢুকতেই দেখল সত্যিই সবাই এই বাসাতেই আছে । এমনকি সায়ন ও । পূর্ণতা আসতেই আধিরা আনজুম পূর্ণতা কে বলল ,
– এই যে , আমার আম্মা এসে গিয়েছে । কেমন আছিস রে মা ?
আধিরা আনজুমের প্রশ্ন শুনে পূর্ণতা বলল ,
– আলহামদুলিল্লাহ ।
তারপর মনে মনে ভাবলো ,
– এরা এত কেন ভালো ?আমার এখন সত্যিই বুক ফেটে কাদতে ইচ্ছে হচ্ছে ।
আধিরা আনজুম বললেন ,
– কিরে ! বিয়েতে মত দিয়েছিস নাকি তোর মা জোর করে বিয়ে করাচ্ছে ?
এই কথা শুনে পূর্ণতার চোখ বেয়ে টুপ টুপ করে পানি পড়তে লাগল ।
আধিরা আনজুম বললেন ,
– কাদছিস কেন মা ?
আবরন হেসে বলল ,
– সবাইকে ছেড়ে যেতে হবে তো এই জন্য বোধয় !
আধিরা আনজুম চোখ গরম করে আবরনকে বলল ,
– তুই যা এখান থেকে , ফাজিল ছেলে কোথাকার ! যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে ।
আবরন হেসে সেখান থেকে চলে গেল ।
আধিরা আনজুম মিলি রহমানকে উদ্দেশ্য করে বলল ,
– মিলি , মেয়ে তো কাদছে । তোর বুক পোড়াচ্ছে না !
মিলি রহমান হাসি মুখেই চোখ থেকে এক ফোটা পানি বাহিরে বের করে দিয়ে বললেন ,
– মেয়েকে তো আর বের করে দিচ্ছি না ঘর থেকে ! ও যেন ভালো থাকে তাই তো ভালো কারো হাতে ওকে আমানত হিসেবে তুলে দিচ্ছি ।
শাদমান চৌধুরী বললেন ,
– মা কেদো না । তুমি কাদছো আর আবরন তো বিয়ে করার জন্য উঠে পরে লেগেছে । ও নাকি সবাইকে প্রমিজ করেছে যেদিন তোমার বিয়ে ঠিক সেদিনই সে ও বিয়ে করবে ।
আফতাব উজ্জামান হেসে বললেন ,
– তাহলে তো এক দিনে তিনটা বিয়ে হবে বলে মনে হচ্ছে ।
মিলি রহমান বললেন ,
– তা ছেলের বউ হিসেবে কাকে পছন্দ করেছিস রে ? নাকি আবরন বাবার কোনো পছন্দ করা মেয়ে আছে ?
আধিরা আনজুম হেসে বলল ,
– পূর্ণতার যেমন সায়নের সাথে বিয়ে হচ্ছে ঠিক তেমনি আবরনের জন্য আমরা জলকেই বেছে নিয়েছি !
পূর্ণতার যেন আধিরা আনজুমের কথা শুনে দম বন্ধ হয়ে আসতে লাগল ।
মিলি রহমান বললেন ,
– জল ! তুই না জলকে আনবি না বললি ।
– না রে ! মেয়েটাকে এখন দেখিস নি তো তাই বুঝবি না , এখন ও অনেক বদলে গিয়েছে ।
শাদমান চৌধুরী বললেন ,
– আমি প্রথম থেকেই চেয়েছি জলের সাথে আবরনের বিয়েটা পাকা করতে , কিন্তু আমার বোনের জন্য জল নষ্ট হয়ে যাওয়াতে পরে বিষয়টা নিয়ে পিছিয়ে যাই সেটা তো জানেন ই । কিন্তু এখন মেয়েটা আর আগের মতো নেই । তবে আবরন আর জল দুজনের একজনও জানে না ওদের বিয়ের ব্যাপারে আমরা কথা বার্তা চালাচ্ছি । তবে এবার আর গত বারের মতো ভুল করবো না । জল বাসায় এলেই দুজনকেই আগে এ ব্যাপারে বলে তারপর সব পাকা করবো ।
পূর্ণতা আর পারছে না এই কথা গুলো শুনতে । পূর্ণতা বলল ,
– আম্মু , আমি বাসায় যাই । আমার খুব মাথা ব্যথা করছে আর খারাপ লাগছে ।
সায়ন বলল ,
– না , তুমি কোথাও যাবে না । তুমি আমার সাথে এখন হসপিটালে যাবে ।
পূর্ণতা বলল ,
– কেন ?
– তোমার প্রতিনিয়ত মাথা ব্যথা করে কেন তা আগে জানতে হবে । তুমি চলো আমার সাথে । এতো চাপ নাও কেন তুমি ? চলো আমার সাথে ।
– আম্মু , আমি কোথাও যাবো না । আমি এখানেই থাকবো ।
সায়ন বলল ,
– না , তুমি চলো আমার সাথে !
পূর্ণতা বলল ,
– না , আমি এখন কোথাও যাবো না ।
এরই মধ্যে আবরন এসে বলল ,
– তোমরা কি সবাই রেডি নাদিরা ভাবীদের বাসায় যাওয়ার জন্য ?
পূর্ণতা বাদে সবাই জবাব দিল ,
– হ্যা ।
পূর্ণতা বলল ,
– তোমরা কি আজই ভাইয়ার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে নাদিরা ভাবীদের বাসায় যাওয়ার প্ল্যান করেছো ?
মিলি রহমান বললেন ,
– হ্যাঁ ।
– কিন্তু ভাইয়া তো অফিসে !
আবরন বলল ,
– আমরা ভাইয়াকে ভাইয়ার অফিসের সামনে থেকে পিক করে নিয়ে যাবো ।
পূর্ণতা মনে মনে ভাবছে ,
– বদ লোক একটা ! সব প্ল্যান আপনার আগের থেকেই জানা কিন্তু আপনি কিছুই বলেন নি , না জানার ভান করেছেন । হুহ ! ভাল্লাগেনা ! এত প্যারা আমি আর নিতে পারছি না ।
সবাই রেডি হয়ে নিচে নামতেই দেখল আয়মান , ফাহিম , তাসিন , প্রেনা এবং জল সব ধরনের খাবার দাবার এর প্যাকেট নিয়ে নিচে হাজির ।
সবাই রেডি হয়ে আজও দুই গাড়ি ভরে একসাথে যাচ্ছে নাদিরাদের বাসায় ।
#চলবে ♥️
বিঃদ্রঃ একদিনে তিনটা বিয়ে ! সবাই সাজু গুজু শুরু করে দিন । 🥴
গল্পের ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ ।♥️