প্রণয়ের_দহন
পর্ব_৫
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
হুট করে কোনো পুরুষালি কন্ঠে নিজের নাম শুনে আমি চমকে ওঠি। এই কন্ঠের মালিক যে আমার পরিচিত। পরিচিত না আমার আপনজন। একান্তুই আমার আপন জন। আমার চোখ দিয়ে দু ফোট অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। আমি দৌড়ে চলে যেতে নিলে আরিয়ান ভাইয়া আমার হাত টেনে ধরে। দাঁড়িয়ে যায় আমি। উনি আমার হাত ধরে হ্যাঁচকা টান দিয়ে উনার বুকের ওপর ফেলেন।
আমি হকচকিয়ে যায়। উনি আমার কোমড় হাত দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেন।
আমাদের মাঝের কথা যেনো আমাদের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে। বাইরের কোনো লোক যেনো আমাদের ভিতরে কথা না জানে।
আমার ভাইয়া আপনার কাছে বাইরের লোক হয়ে গেলো?
অবশ্যই।
ভাইয়া না আপনার ফ্রেন্ড।
দেখ তোর এতো প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারবো না। আমাদের মাঝে কী হয়ছে না হয়েছে তোর ভাই জেনো না জানে। যদি আমার কথার অবাধ্য হোস তাহলে কী হতে পারে? তার ধারণা তুই আগেই পেয়েছিস।
কথাগুলো উনি বেশ শান্ত গলায় বললেন।
লাস্টের কথাটা কোমড়ে জোড়ে চাপ দিয়ে বলে। এতো জুড়ে কোমড় চেপে ধরেছে যে আমার চোখ টলমল করে ওঠে। আমার অবাধ্য হয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে চোখ দিয়ে। উনি কোমড় থেকে হাত আলগা করে চোখের পানিটা মুছে দেন।
আমাদের মাঝে যায় থাকুক না কেনো সারা দুনিয়া জানবে আমরা হ্যাপি কাপল। নো কান্না-কাটি। অনলি স্মাইল বেইব। চল সালা বাবু তোমাকে ডাকছে।
উনি এক হাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে রুম থেকে বের হয়ে এলেন। আমরা নিচে নামতেই ভাইয়া প্রশ্ন ছুড়ে দিল।
এসব আমি কী শুনছি আরশি? তোদের মাঝে যদি আগে থেকে সম্পর্ক থাকে তাহলে আমাকে বললি না কেনো?
আমার বিয়ের সময় ভাইয়া উপস্থিত ছিল না। আমার বিয়ের দুই দিন আগে অফিসের জরুরি কাজে ভাইয়াকে দেশের বাইরে যেতে হয়ছিল। তাই ভাইয়া আমাদের বিয়ের ব্যপারে কিছু জানতো না। হয়তো দেশে ফিরেই এই খবর শুনে এখানে ছুটে চলে আসছে।
কেনো আয়ান ( আমার ভাইয়া ) তুই কী আমাদের বিয়ে হওয়াতে খুশি হোসনি?
তোদের বিয়েতে যদি কেউ সবচেয়ে বেশি খুশি হয়ে থাকে তাহলে সেটা আমি। আরশি নিহানকে বিয়ে করার জন্য জেদ না করলে আমি তোর সাথেই আরশির বিয়ে দিতাম। ঐ নিহানকে দেখলে আমার গা জ্বলে। মনে হয় কেউ আমার শরীরে আগুন জ্বালিয়ে দিছে। এট লাস্ট তোদের বিয়ে হলো। আমার মনস্কামনা পূর্ণ হলো। আরশি নিহানের মোহ কাটিয়ে যে তোর সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে তাতেই আমি খুশি। তোরা যদি তোদের সম্পর্কের কথা আমাকে আগে বলতি তাহলে এতো জামেলা হতো না।
তুই আরশির ছোট ভাই হলে বলা যেতো তুই তো বড় ভাই। আর আমি তো তোকে গিয়ে বলতে পারি না দোস্ত আমি তোর বোনের সাথে প্রেম করি। কথাটা শুনতেও বেমানান লাগে। আমি ভয় পাচ্ছিলাম এটা বলার পর যদি তুই আমার সাথে সম্পর্ক নষ্ট করে দিস। তোকে আমি নিজের ভাইয়ের মতো ভালোবাসি। এটা আমি কিছুতেই মানতে পারতাম নাহ আর আরশির বিয়ে ঠিক হওয়ার ১ মাস পরই আমার সাথে আরশি প্রণয়ের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। আমাদের হাতে ছিল মাত্র ১৫ দিন। কী করবো না করবো ভেবে পাচ্ছিলাম নাহ? বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসছিল আমরা কাউকে কিচ্ছু বলতে পারছিলাম না। এই ভয়ে যদি আমাদের কারণে দুই পরিবারের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। তাই আমরা পরিবারের মান-সম্মানের কথা ভেবে আমরা আমাদের ভালোবাসা সেক্রিফাইজ করার সিদ্ধান্ত নেই। হলুদের দিন আরশি আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না আমার কাছে চলে আসে। বাকিটা তো তুই জানসই।
আমি শুধু অবাকের ওপর অবাক হচ্ছি। অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি আরিয়ান ভাইয়ার দিকে। মানুষ এতো সুন্দর করেও গুছিয়ে মিথ্যা কথা বলতে পারে এটা আরিয়ান ভাইয়াকে না দেখলে বিশ্বাসই হতো না। কী সুন্দর গুছিয়ে মিথ্যা কথা বলে দিলেন ভাইয়াকে? উনার মিথ্যাগুলো যে কেউ বিশ্বাস করতে বাধ্য হবে। তেমনি ভাইয়াও বিশ্বাস করে ফেলল উনার কথা। ভাগ্যিস ড্রয়িংরুমে আমরা তিন জন ছাড়া আর কেউ নেই। নাহলে আরেকটা গণ্ডগোল লাগতো। আমি সকালে বাবা আর মাকে বুঝিয়েছি আমাদের মাঝে কোনো সম্পর্ক নেই। আর এখন উনি ভাইয়াকে বোঝাচ্ছেন আমাদের মাঝে ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল। এখানে বাকিরা থাকলে সবাই উনার কথাই বিশ্বাস করতো। কারণ উনি যে মিথ্যা কথা বলার ওপর পি এইচ ডি করে আসছেন। তা আমার ভালোই বুঝা হয়ে গেছে।
শালা তুই নিজে তো কষ্ট পাইছস সাথে আমার বোনডারেও কাঁনদাইছস। বালের পিরিত করছো তোমরা।
দেখ আয়ান আমার সামনে একদম এসব ভাষা ইউজ করবি না। তোর যেমন নিহানকে দেখে গা জ্বলে। তেমনি আমারও এই সব ভাষা শুনলে গা জ্বলে।
এই সব কমু না তো তোমাকে কোলে নিয়ে আদর করমু। পিরিত করার সময় মনে ছিল না আমার বোইনের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। সবাইকে ভালোবাসার কথা বলার সময় তোমার মনে পড়লা আরশির বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। মামা তোমার স্বভাব তো আমার একদম ভালো ঠেকছে না। তুমি গা…….
আয়াইন্না তোর মুখে লাগাম দে। আমি তোর বেস্টফ্রেন্ড হলে ও এখন তোর ছোট বোনের হাজবেন্ড। এখানে আরশিও আছে মুখে লাগাম দে। ছোট বোনের সামনে কী সব বলা শুরু করছস?
আমার কথা শুনে ভাইয়া একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল। আমি যে এখানে আছি ভাইয়ার হয়তো
মনেই ছিল না। ভাইয়া আমার সামনে এসব ভাষা ইউজ করে না আর স্ল্যাং তো একদমই ইউজ করে না। ভাইয়া গলা খাকারি দিয়ে বলে,
আরশির তুই এখানে কী করছিস? জানিস যখন বড়রা কথা বলে তখন ছোটদের থাকতে নেই। আর এখানে দুটো ছেলে তাদের প্রাইভেট কথা বলছে। আর তুই এখানে দাঁড়িয়ে থেকে আমাদের প্রাইভেসি নষ্ট করছিস।
আমি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। নিজে ডেকে এনে নিজেই চলে যেতে বলছে। রীতিমত আমাকে অপমান করছে। আমি তাদের প্রাইভেসি নষ্ট করছি। মানুষ ঠিকই বলে, কাজের বেলা কাজি। কাজ পুরুলেই পাজি। এই মুহূর্তে আমার প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে। ইচ্ছে করছে ইট দিয়ে বাড়ি মেরে ভাইয়ার মাথা ফাটিয়ে দেই। আমি রেগে কিছু বলতে যাব তার আগেই আমাকে পাশ কাটিয়ে তারা দুইজন চলে যায়।
__________________
আমি বেলকনিতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছি। আমার দৃষ্টি ফ্লোরেই নিবিদ্ধ। কিছুতেই কিছুর হিসেব মিলাতে পারছি না। সবকিছু ঠিক করতে গিয়ে কী আমি সবকিছু এলোমেলো করে দিচ্ছি। কিছুই বুঝতে পারছি না।
আরিয়ান ভাইয়া যদি আয়না আপুকেই ভালোবাসে। তাহলে আমাকে কেনো ডিভোর্স দিতে চাইছে না? আমাকে সহ্য করতে পারে না আবার আমাকে চোখের আড়ালও হতে দেয় না। সবকিছু কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে। আমার জীবনটা কেমন জটিলতাময় হয়ে যাচ্ছে। বিষাক্ত জালে আটকা পড়ে যাচ্ছি আমি।
নিহান তুমি আমার জীবনটা বিষিয়ে দিয়ে গেলে। এর জন্য আমি তোমাকে কোনো দিন ক্ষমা করতে পারবো না। তোমাকে আমি অভিশাপ দিতে পারবো না। কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর যায় হোক ভালোবাসার মানুষকে তো আর অভিশাপ দেওয়া যায় না। ছিঃ ছিঃ আমি এসব কী ভাবছি? নিহানের নাম নেওয়া ও আমার জন্য পাপ। কারণ আমি এখন আরিয়ান ভাইয়ার স্ত্রী। নিহানকে কিছুতেই আমি ভাসোবাসতে পারি না এখন।
তোর সাহস তো কম না। আমার স্ত্রী হয়ে অন্য ছেলের কথা চিন্তা করিস। আমার রুমে আমার বেলকনিতে বসে তুই অন্য ছেলের ভাবনায় মশগুল।
চলবে…..