Child Of Night part-3

0
2069

#Child_of_night
Writer: Tanjima Islam

[4]

দিনের আলো ফুরিয়ে গিয়ে রেগেন্সবুর্গ এর বুকে সন্ধ্যা নেমেছে।
এক ঝাক নাম না জানা পাখি উড়ে যাচ্ছে সূর্য ডোবা রক্তিম আকাশে।
মাত্রই সন্ধ্যার নাস্তা খেয়ে উঠেছে পল ফ্যামিলি। এমন সময় কলিং বেলটা ডিংডং শব্দে বার কয়েক বেজে উঠল।
রবার্ট পল এসে দরজা খুলে দেখল, দরজার ওপাশে দাড়িয়ে আছে প্রতিবেশী প্রয়াত মিরা থমসন এর ছেলে আর বোন। রবার্ট প্রশস্ত হেসে বলল,

” গুড ইভিনিং। ভেতরে আসুন।

” গুড ইভিনিং মি. পল। আসলে আমার একটা আর্জেন্ট প্রোগ্রাম আছে। ঘন্টা খানেক এর মধ্যেই ফিরে আসবো। ততক্ষণ কি মিলিয়ানকে আপনাদের বাসায় রেখে যেতে পারি!?

” অবশ্যই! কেন নয়। আপনি নিশ্চিন্তে প্রোগ্রাম এটেন্ড করুন। মিলিয়ান এখানে থাকুক।

” ওহ মি. পল থ্যাঙ্কিউ সো মাচ। মিসেস পলকে আমার আদাব জানাবেন।

” ইটস মাই প্লেজার মিস।

নীরা এবার মিলিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল, ” তাহলে তুমি এখানে থাকো মিলিয়ান। আমি খুব শীঘ্রই ফিরে আসবো।

” ওকে মাম্মা। তুমি সাবধানে থেকো।

নীরা স্মিত হেসে মিলিয়ানের মুখে চুমু খেয়ে বলল, ” তাহলে এখন আমি যাই!?

মিলিয়ান মাথা উপর নিচ করে হ্যাঁ জানিয়ে বাসার ভেতরে চলে গেলো।
মিলিয়ান ভেতরে ঢুকতেই দ্রুত পায়ে রাস্তার দিকে এগিয়ে গেলো নীরা।
অলরেডি সাতটা বাজে। এখান থেকে মরিসের বাসায় যেতে প্রায় পঁচিশ মিনিট লাগে।
নীরা অবশ্য আগে থেকেই ট্যাক্সি ডেকেছিলো। সেটা বাসার সামনে রাস্তায় এসে দাড়িয়েছে।

ট্যাক্সির কাছাকাছি আসতেই দেখল সোফিয়া ফোনে যেন কাকে কল দিচ্ছে। নীরাকে আসতে দেখে বলল,

” কোথায় গেছিলি তুই? আমি সেই কখন থেকে কল দিচ্ছি।

” মিলিয়ানকে মি. পলের বাসায় রাখতে গেছিলাম।

” আচ্ছা চল বেরিয়ে পড়ি। আগে তো গিফট কিনতে যেতে হবে।

” হুম চল।

________________________
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
রবার্ট আর হেনার একমাত্র মেয়ে সারলোট। বেশ চঞ্চল প্রকৃতির। সে আর মিলিয়ান একই স্কুলে পড়ে। সারলোট বয়সে মিলিয়ানের তুলনায় দুই বছরের বড়। মিলিয়ান বাসা থেকে খুব একটা বের হয় না আবার স্কুলেও অফ টাইমে ক্লাসে বসেবসে ড্রয়িং করে।
সেজন্য মিলিয়ানের সাথে তার তেমন দেখাসাক্ষাৎ হয় না।

সারলোট মিলিয়ানকে নিয়ে নিজের রুমে এসেছে। ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছে সারলোটের বাবা-মা। তারা এই সপ্তাহে মিউনিখে এক রিলেটিভের বাসায় যাওয়া নিয়ে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলছে।

সারলোটের রুমটা ছোট-বড় ডল আর টেডিবিয়ার দিয়ে সাজানো।
জানালায় গোলাপি আর সাদা কম্বিনেশনে সাজানো আছে পর্দা।
ফ্লোরে গোলাপি কারপেট বিছানো। বেডের ওপর সিলিং এর জায়গায় ঝুলছে অনেক গুলো সিলভার কালারের স্টার।

ডলের ভিড়ে সারলোটের পড়ার টেবিলটা দেখাই যাচ্ছে না। বেডের একপাশে একটা হোয়াইট পেইন্ট করা পড়ার টেবিল ভর্তি কমিকস আর একাডেমিক বই। সেটার ওপরেও এজোড়া ডল সাজানো।
কমিকস বই গুলো দেখে মিলিয়ান দারুণ উৎসাহে বই গুলোর দিকে এগিয়ে গেলো।

সারলোট ভাবল মিলিয়ান হয়তো এখনই বইটই নিয়ে উৎপাত শুরু করবে।
যদিও তাতে তার কিছু যায় আসে না। বরং মিলিয়ান আসাতে সে অনেক খুশি হয়েছে।
কারণ প্রতিদিন সন্ধ্যের পর তাকে বইয়ে মুখ গুজে থাকতে হয়। বিকেলেই যত খেলাধুলার সময়।

তারপর রাতে বাবা-মা ঘুমিয়ে পড়লে সে জেগে জেগে কমিকস পড়ে। তারপর আস্তে আস্তে ওভাবেই বেডে ঘুমিয়ে যায় সে।

কিন্তু মিলিয়ান তেমন কিছুই করল না। এমনকি বই গুলো ছুয়েও দেখলো না সে।
সারলোট ভাবল, মিলিয়ান হয়তো প্রথম এসে ইতস্তত বোধ করছে।
মিলিয়ানকে কম্ফোর্ট করার জন্য সারলোট সেখান থেকে একটা কমিকস এর বই নিয়ে বলল,

” তুমিও কি কমিকস পড়তে পছন্দ করো মিলিয়ান!?

” আমি কখনো কমিকস এর বই পড়িনি।

” ও আচ্ছা, আমার বই গুলো চাইলে পড়তে পারো। আমার তো কমিকস পড়তে অনেক মজা লাগে।

” তাহলে তুমি বলো আমি শুনি।

মিলিয়ানের কথাটা শুনে বেশ অবাক হল সারলোট। সে ভেবেছিলো মিলিয়ানের সাথে ট্রুথ ডেয়ার বা হাইড এন্ড গো সিক খেলবে।
কিন্তু এখন নাকি তাকে কমিকস পড়ে শোনাতে হবে। মিলিয়ান সারলোটের চেয়ারে বসে বলল,

” কি হল শোনাবেনা!?

” না, কেন শোনাবোনা। আচ্ছা স্টার্ট করছি তাহলে।

সারলোট বেডে বসে একটা ডল কোলে নিয়ে কমিকস বলতে লাগল।
মিলিয়ানও বেশ আগ্রহ নিয়ে শুনতে লাগল সারলোটের দিকে তাকিয়ে।

________________________
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
ঘড়িতে সাতটা চুয়াল্লিশ বাজে। মরিসদের বাসার সামনে এসে দাড়িয়েছে নীরাদের ট্যাক্সিক্যাবটা।
নীরা আর সোফিয়া ভাড়া মিটিয়ে ট্যাক্সি থেকে নেমে এলো।

দোতলা বাড়িটার লোহার গেইট খুলে ছোট্ট একটা বাগান।
ঘোরানো নুড়িপাথরের রাস্তা উঠে গেছে বাড়ির মেইন ডোর পর্যন্ত।
মেইন ডোর খোলাই আছে। একে একে লোকজন আসা-যাওয়া করছে।
নীরা আর সোফিয়া মেইন ডোর দিয়ে ঢুকে ড্রয়িংরুমে এসে দাড়ালো।

মরিসের ফ্রেন্ড আর রিলেটিভদের দেখা যাচ্ছে। আশপাশের প্রতিবেশিরাও এসেছে।
কিন্তু মরিসকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। মরিসের বাবাকে দেখে সোফিয়া ডেকে উঠল,

” আংকেল ম্যাক্স!

” আরে সোফিয়া! কেমন আছো!?

” আমি ভালো আছি আংকেল আপনি কেমন আছেন?

” এই তো ভালো।

ম্যাক্স নীরার দিকে তাকিয়ে বলল, ” তোমাকে তো ঠিক চিনলাম না। মরিসের ফ্রেন্ড?

নীরা বলার আগেই সোফিয়া বলল, ” না আংকেল। ও আমার বেস্টফ্রেন্ড নীরা।

নীরা নামটা শুনেই লোকটার মুখ থেকে হাসি সরে গেলো। নীরা স্মিত হেসে বলল, ” হ্যালো আংকেল। কেমন আছেন?

” ভালো। আচ্ছা তোমরা এনজয় করো আমি একটু আসছি।

ম্যাক্স চলে যেতে গেলে সোফিয়া বলে উঠল, ” আংকেল! মরিস কোথায়?

” ও আছে দেখো কোথায়।

লোকটার এভাবে চলে যাওয়াতে কিছুটা অবাক হল নীরা।
সোফিয়ার সাথে তো বেশ হেসে হেসেই কথা বলছিলো, তাহলে হটাৎ কি হল।
নীরার ভাবনায় ছেদ পড়ল মরিসের ডাকে। আজ চকলেট কালারের স্যুট প্যান্ট পরেছে মরিস। হাসোজ্জল মুখে এগিয়ে এসে বলল,

” গুড ইভিনিং লেডিস!

নীরা আর সোফিয়া একসাথে বলল,” গুড ইভিনিং বার্থডে বয়।

মরিসকে আজ দারুন লাগছে দেখতে। তবু কেন যেন নীরার তার প্রতি কোনো আকর্ষন অনুভব হচ্ছে না। সোফিয়া কথা বলতে বলতে একপর্যায়ে তাদের দুজনকে রেখে অন্যদিকে গেলো।
সে যে এটা ইচ্ছে করেই করেছে তা মরিস বা নীরার বুঝতে বাকি নেই।
মরিস বেশ খুশি হয়েছে মনে হচ্ছে। কিন্তু নীরার কেমন যেন অস্বস্তি হচ্ছে।

নীরার মাথা থেকে শুরু করে পা পর্যন্ত একবার চোখ বুলিয়ে নিল মরিস।
নীরা একটা বেগুনি রঙের লং ফ্রক পরেছে। মাথার চুল গুলো পিঠে ছেড়ে রাখা। মরিস স্মিত হেসে বলল,

” তোমাকে আজ পরীর মতো লাগছে।

সাথেসাথে চমকে উঠল নীরা। মরিসের মুখে নিজের প্রশংসা শুনে তো তার ভালো লাগা উচিৎ।
কিন্তু তার যেন বড্ড অস্বস্তি লাগছে। কেন এমন হচ্ছে ঠিক বুঝতে পারছেনা নীরা।
মরিসের দিকে তাকিয়ে কিছু বলার আগেই দেখল কয়েক হাত দূরে দাঁড়িয়ে আছে মি. ওরহান!
আরেক দফা চমকে উঠল সে। এখানে ওরহান কোত্থেকে এলো!
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
[চলবে]

বিঃদ্রঃ হটাৎ ইলেক্ট্রিসিটি চলে যাওয়ায় ওয়াই-ফাই অফ হয়ে গেছিলো। তাই পোস্ট করতে লেট হইছে🙃

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here