Child Of Night part-2

0
2762

#Child_Of_Night
Writer: Tanjima Islam

[3]

সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ঘন কালো চুলের অধিকারী সুদর্শন ছেলেটাকে দেখে হা করে তাকিয়ে আছে নীরা। ছেলেটার ফর্সা ত্বকটা যেন রূপোর ন্যায় চকচক করছে।

নীরা ক্ষণিকের জন্য ভেবে নিল, সে কি এমন সুদর্শন যুবক আগে কোনোদিন দেখেছে!
আর না দেখবে কখনো। নীরা বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলো না, ছেলেটার গভীর নীল সমুদ্রের মতো চোখ যেন গ্রাস করে নিচ্ছে তাকে।
অচেনা অজানা একজনকে দেখে এমন অদ্ভুত অনুভূতি কেন হচ্ছে বুঝতে পারছেনা নীরা।
লজ্জায় সংকোচে সে আর তার দিকে তাকাতেও পারছেনা।
ছেলেটা নীরার এমন আচরণ উপেক্ষা করে ভাবলেশহীন ভাবে বলল,

” এটা আপনার বাচ্চা?

এমন প্রশ্নে নীরা বেশ ভড়কে গেল। ছেলেটার কথায় তার মনে হল যেন সে আগে থেকেই জানে যে, মিলিয়ান নীরার নিজের ছেলে নয়।
পরক্ষণেই ভাবল, হতে পারে ছেলেটা মীরা আর মিলিয়ানের পরিচিত কেউ।
কিন্তু মিলিয়ানের ব্যাপারে জেনে থাকলে সে এমন প্রশ্ন কেন করবে! ছেলেটা নীরার উদ্দেশ্যে আবার ডেকে উঠল,

” মিস?

নীরার ভাবনায় ছেদ পড়ল। কিন্তু সে কিছু বলল না। হুট করে পেছন ফিরে মিলিয়ানের দিকে তাকালো নীরা।
মোটা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা বাদ্যযন্ত্র গুলো ঘুরেফিরে দেখছে মিলিয়ান।
এদিকে তার বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই। যদি মিলিয়ান এনাকে চিনতো তাহলে তো একবার হলেও এদিকে আসতো। নীরা সামনে তাকিয়ে বলল,

” আমি ওর খালামনি।

” ওহ।

ছেলেটা হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে বলল,” আমি ওরহান উজুন।

নীরা অবাক হয়ে বলল, ” ওরহান উজুন! আপনি কি টার্কিশ!?

ওরহান স্মিত হেসে মাথা দুলালো, যার মানে হ্যাঁ। নীরাও হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করে বলল, ” নীরা হক।

” আপনি বাংলাদেশি?

” জ্বি। বিএসসি করতে জার্মানি এসেছি। আর আপনি?

” একটা জরুরি কাজে এসেছি। সেটা শেষ করে আবার তুর্কি ফিরে যাবো।

” ওহ।

নীরার মনে হল ছেলেটা খুব কৌশলে ব্যাপারটা এড়িয়ে গেলো। কিন্তু এড়ানোর কি প্রয়োজন!
অন্য দেশে তো মানুষ থাকতেই পারে! কাজের তাগিদে, উচ্চশিক্ষার জন্য, ভ্রমণের জন্য, আরও কত প্রয়োজনে মানুষ বিদেশে পাড়ি জমায়।
______________________
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
ওরহান কফির মগটা টি-টেবিলের ওপর রেখে এগিয়ে গেলো মিলিয়ানের দিকে। নীরা স্থির দাঁড়িয়ে রইলো। মিলিয়ান এতক্ষণ কাপড়ের নিচ দিয়েই দেখছিলো বাদ্যযন্ত্র গুলো।
ওরহান গিয়ে একে একে সব কাপড় সরিয়ে দিতেই মিলিয়ান এবার ছুয়ে দেখতে লাগল হারমোনিয়াম, ভায়োলিন(বেহালা), গিটার, ফ্লুট(বাশি), বিউগল(রণশিঙ্গা), পিয়ানো, বেঞ্জু ইত্যাদি।

এরমধ্যে হারমোনিয়াম আছে আবার দুই রকমের। টেবল হারমোনিয়াম – এই প্রকার হারমোনিয়াম গুলো আকারে বড়। টেবল হারমোনিয়ামের হাপর ভেতরে ফিট করা এবং ফিতা দ্বারা দুটি পাদানির সাথে যুক্ত থাকে। সেলাই মেশিনের মত দু’পায়ে হাপর দিতে হয়।

বক্স হারমোনিয়াম – এই জাতীয় হারমোনিয়াম গুলো সাধারণত কণ্ঠসঙ্গীত সাধনায় এবং মাহফিলাদিতে ব্যবহার করা হয়। বক্স হারমোনিয়াম রয়েছে আবার দুই প্রকারের। সিঙ্গেল রীড হারমোনিয়াম আর ডাবল রীড হারমোনিয়াম।

গিটার আছে তিন রকমের – স্প্যানিশ গিটার, হাওয়াইয়ান গিটার আর বেইজ গিটার। ওরহান মিলিয়ানের সোনালী চুলে হাত বুলিয়ে বলল,

” মিলিয়ান! কোনটা দিয়ে শুরু করতে চাও?

” আমি আগে পিয়ানো বাজানো শিখতে চাই ওরহান আংকেল।

মিলিয়ানের মুখে ‘আংকেল ওরহান’ ডাক শুনে নীরা আরেক দফা চমকে উঠল। তার মানে মিলিয়ান আগে থেকেই ওরহানকে চেনে আর ওরহানও নিশ্চয়ই তাকে চেনে। তাহলে তখন এমন প্রশ্ন কেন করল ওরহান!

” বেশ। তাহলে বসে পড়ো। শুরু করা যাক।

মিলিয়ান মহা উৎসাহে একটা গ্র‍্যান্ড পিয়ানোর সামনে গিয়ে উঁচু টুলে উঠে বসল। নীরা এগিয়ে এসে ওরহানকে বলল,

” মিলিয়ানের কি আজ থেকেই ক্লাস নেবেন?

ওরহান মিলিয়ানের দিকে তাকিয়ে থেকেই বলল,”
এখন ক্লাসে যেহেতু ও একাই স্টুডেন্ট, সেহেতু ক্লাস নেওয়াই যায়। যদি আপনার কোনো সমস্যা না থাকে আর কি।

” না না, আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু ক্লাসে আর কাউকে দেখছি না যে!

ওরহান এবার নীরার দিকে তাকিয়ে বলল, ” সামারের ক্লাস গত সপ্তাহে শেষ হয়ে গেছে। তাই ক্লাসে এখন কেউ নেই। আবার শুরু হবে উইন্টারের দ্বিতীয় সপ্তাহে। আপনি যদি সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চান। তাহলে তখন আসুন।

” না, থাক।

ওরহানের এমন সোজাসাপটা উত্তর নীরার মোটেও পছন্দ হল না। কেমন যেন রসকষহীন কাঠখোট্টা কথাবার্তা। নিজের সৌন্দর্য্য নিয়েই বোধহয় এতো গরিমা ছেলেটার।

ভদ্রমহিলা এসে নীরাকে নাস্তা দিয়ে গেছে। নীরা শুধু চা নিল। এখন তার ভারি নাস্তা খাওয়ার ইচ্ছে নেই। ওরহান মিলিয়ানকে পিয়ানো বাজানো শেখাচ্ছে। একটা টিউন তাকে দ্বিতীয়বার শেখাতে হচ্ছে না।
প্রথম শিখেই পরেরবার সে হুবহু টিউন বাজাচ্ছে। নীরা মাঝেমধ্যে ভাবে মিলিয়ান সত্যিই খুব অসাধারণ। একেবারে অলস্কয়ার যাকে বলে।

__________________
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
আজকের মতো মিলিয়ানের ক্লাস শেষ। ঘড়িতে বেলা এগারোটা বাজে।
মিলিয়ানকে নিয়ে নিচে নেমে এলো ওরহান। নীরাও নেমে এলো তাদের সাথেসাথে।
মিলিয়ানের সাথে গল্পে মেতেছে ওরহান। আর মিলিয়ানকেও অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশ প্রফুল্ল লাগছে।

মিলিয়ানকে আনন্দিত দেখে খুশি হলেও নীরার কেমন যেন অস্বস্তি বোধ হচ্ছে। কিন্তু অস্বস্তিটা ঠিক কি কারণে হচ্ছে বুঝতে পারছেনা সে।
বাড়িটা থেকে বেরিয়ে হাটতে হাটতে অনেকটা পথ চলে এসেছে তারা। বেলা বাড়ার সাথেসাথে সূর্যের আলোও চড়া হয়ে উঠেছে। নদীর দিক থেকে বয়ে আসছে মৃদু বাতাস।

নীরা বের হওয়ার আগেই ট্যাক্সি ডেকেছিলো। সি সাইডে দাড়িয়ে আছে ট্যাক্সিটা। নীরা ট্যাক্সি দেখে ওরহানের দিকে তাকিয়ে বলল,

” মি. ওরহান! আমাদের ট্যাক্সি এসে গেছে।

” ও আচ্ছা।

ওরহান আবার মিলিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,” তাহলে আজ যাও। কাল আবার দেখা হবে।

মিলিয়ান আচ্ছা বলে ট্যাক্সিটাতে উঠে বসল। মিলিয়ান উঠে বসতেই নীরা ওরহানের দিকে তাকিয়ে বলল,”
মি. ওরহান। কাল বোধহয় মিলিয়ানের আসা হবে না। আমার কাল ক্লাস আছে। আবার সানডে বাদে ওর সকালে স্কুল।

” সমস্যা নেই। আপনাদের সুবিধা মতো আসবেন। তবে আসার আগে কল দিয়ে আসবেন। বাসায় না থাকলে আপনারা আসার আগেই বাসায় ফিরে আসবো।

” ঠিকাছে, আপনার নম্বরটা!

নীরা নিজের ফোন বের করে ডায়াল অপশনে ট্যাপ করল। এদিকে ওরহান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নীরার দিকে।
শ্যামবর্ণা মেয়েটার ঘন কালো অক্ষির গভীরতা মাপার চেষ্টা করছে সে বোধহয়। ব্যর্থ হচ্ছে ওরহান।
এ যেন সাধারণ কোনো অক্ষি নয়, একজোড়া কৃষ্ণগহবর!

নীরার ডাক পেয়ে সম্বিৎ ফিরল ওরহানের। নীরা তার নম্বর ডায়াল করার জন্য অপেক্ষা করছে।
ওরহান গলা খাঁকারি দিয়ে খপ করে নীরার ফোনটা নিয়ে নিল।
নীরা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। ওরহান তার ফোনে নিজের নম্বর সেভ করে আবার ফিরিয়ে দিয়ে বলল,

” সেভ করে দিয়েছি।

” থ্যাংকস।

প্রতিত্তোরে ওরহান শুধু স্মিত হাসল। নীরা আর দেরি করল না। এখন তাকে শপিং এ যেতে হবে।
আরও অনেক কাজ বাকি।
সন্ধ্যায় আবার মরিসের বাসায় পার্টি আছে। নীরা ট্যাক্সিতে উঠে বসতেই ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট করে দিল।

যতক্ষণ পর্যন্ত ট্যাক্সিটা দেখা গেলো ততক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে রইলো ওরহান।
মৃদু বাতাসে তার পরিপাটি করে রাখা চুল গুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে বারবার।
ট্যাক্সিটা চোখের আড়াল হতেই দৃষ্টি সরিয়ে নদীর দিকে তাকালো সে।
বেশ কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে সে মনেমনেই হেসে উঠল।

____________________
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
[চলবে]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here