Child Of Night part-5

0
1669

#Child_Of_Night
Writer : Tanjima Islam

[6]

বাবার রুমে দাঁড়িয়ে আছে মরিস। ম্যাক্স দুই গ্লাস হোয়াইট ওয়াইন নিয়ে ছেলের দিকে এক গ্লাস এগিয়ে দিল। মরিস ওয়াইনের গ্লাসটা হাতে নিয়ে বলল,

” কি বলবে বলো।

” হুম বলবো তো। তবে কথা গুলো খুব ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নেবে আশা করি।

মরিস ভেবে পাচ্ছেনা তার বাবা হটাৎ নীরার ব্যাপারে কি বলতে চাচ্ছে! ম্যাক্স গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলল,

” নীরাকে পছন্দ করো!?

বাবার মুখে এমন প্রশ্ন শুনে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল মরিস। তার বাবা কিভাবে বুঝল যে, সে নীরাকে পছন্দ করে! ম্যাক্স এবার ছেলের দিকে তাকিয়ে বলল,

” কি! পছন্দ করো না!?

” না, মানে।

” শোনো, এমন বয়স আমিও পার করে এসেছি। তাই তোমাদের বয়সী ছেলেদের হাবভাব দেখেই বুঝে ফেলি তার মনে কি চলছে।

বাবার কথায় হেসে ফেলল মরিস। ম্যাক্সও সেই সাথে হেসে বলল,

” তবে মেয়েদের বোঝা কিন্তু অতো সহজ না। আজীবন একটা মেয়ের সাথে থাকলেও বুঝতে পারবেনা তার মনে আসলে কি আছে।

মরিস এবার বেশ সিরিয়াস দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকালো। মনে হচ্ছে তার বাবা তাকে অন্য কিছু বলতে চাইছে, কিন্তু সেটা কি! ম্যাক্স গ্লাসে চুমুক দিয়ে আবার বলল,

” একটা মেয়ে মনেমনে যা ভাবে তা সবসময় মুখে প্রকাশ করে না। করতে চাইলেও পারেনা। আবার মুখে যেটা বলে মনেমনে সেটা নিয়ে অনেকসময় ভাবেও না যে সে কি বলল। মূলত তারা মুখে বলে এক, মনে পোষে আরেক। তারা নিজেরাও জানেনা তাদের মন আসলে কি চায়। তাই বেশিরভাগ সময়ই তারা মস্তিষ্কের কথা শোনে। আর এই জিনিসটা ভালোলাগা বা ভালোবাসার ক্ষেত্রে দারুন প্রভাব ফেলে।

ম্যাক্স এক চুমুকে পুরো ওয়াইনটুকু খেয়ে বলল, ” ধরো তুমি নীরাকে পছন্দ করো। এ ব্যাপারে তুমি নিশ্চিত যে তুমি তাকে পছন্দ করো। তার তোমার প্রতি করা আচরণে মনে হতে পারে যে, সেও তোমাকে পছন্দ করে। কিন্তু এমনটা কিন্তু নাও হতে পারে। হয়তো তার তোমাকে ভালো লাগে হয়তো না।

” বুঝেছি বাবা।

” হুম, তোমার বোঝাও উচিৎ। কারণ আমি চাই না তোমার অবস্থা আমার মতো হোক। আমি চাই তুমি যেন তোমার সোলমেটকে খুজে পাও।

মরিস মাথা নাড়িয়ে সায় দিল। ম্যাক্স হেসে বলল, ” আরেক গ্লাস নেবে নাকি!?

” না বাবা। আমি নিচে যাই, ফ্রেন্ডরা ওয়েট করছে।

” আচ্ছা। আর সোফিয়া কোথায়!?

” ওকে গেস্টরুমে রেখে দিয়েছি। মেইড পলিন ওর ড্রেস চেঞ্জ করে শুইয়ে দেবে।

” ওকে ডিয়ার এন্ড হ্যাপি বার্থডে এগেইন।

” থ্যাংকস বাবা। তুমি আর ড্রিংকস করো না। ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়ো।
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
ঘড়িতে রাত এগারোটা বাজে। রবার্ট এতক্ষণ জেগে জেগে টিভি দেখছিলো।
তার চোখ আর সায় দিচ্ছেনা। গত দেড় বছর ধরে প্রতিদিন দশটার মধ্যে ঘুমিয়ে যায় তারা।
আজ মিলিয়ানের জন্যই এতো রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে।
হেনা অবশ্য খেয়েই শুয়ে পড়েছে দশটার মধ্যে। মিলিয়ান এখন সারলোটের রুমে।
রবার্ট টিভি অফ করে সোফা ছেড়ে উঠে দাড়ালো। ঘুমের হাই তুলতে তুলতে সারলোটের রুমের দরজায় নক করল সে,

” মিলিয়ান! মিলিয়ান!!

প্রায় সাথেসাথেই দরজা খুলে বেরিয়ে এলো সারলোট। বাবাকে দেখে বলল,

” মিলিয়ান তো ঘুমিয়ে পড়েছে বাবা।

” ঘুমিয়ে পড়েছে মানে কি! রাত এগারোটা বাজে, বাচ্চাটা তো কিছু খায়ইনি!!

সারলোট দরজা ছেড়ে বেডের কাছে গিয়ে মিলিয়ানকে ডাকতে লাগল,

” মিলিয়ান! মিলিয়ান!!

মিলিয়ান ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল, ” হুম

” ওঠো, উঠে খেয়ে নাও। অনেক রাত হয়েছে।

” আমার ক্ষিদে নেই। ঘুম পাচ্ছে।

বলেই আবার ঘুমিয়ে পড়ল সে। রবার্ট ভেবে পাচ্ছেনা এখন সে কি করবে। নীরাও এখনও এলোনা।
এদিকে মিলিয়ান কিছু না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে। রবার্ট পকেট থেকে ফোন বের করে নীরাকে কল দিল। কল বেজেই চলেছে কেউ রিসিভ করছেনা। রবার্ট ফোন রেখে বলল,

” সারলোট! যাও তুমি মায়ের সাথে গিয়ে ঘুমাও। আমি মিলিয়ানের সাথে ঘুমাচ্ছি।

” আচ্ছা বাবা।

সারলোট একটা ডল কোলে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। রবার্ট রুমের লাইট অফ করে শুয়ে পড়ল বেডের অন্যপাশে।
বেডে শুতেই ঘুমে তলিয়ে গেলো রবার্ট। বেশ কিছুক্ষণ পর মিলিয়ান চোখ মেলে তাকালো।
সে এতক্ষণ ঘুমিয়ে থাকার ভান করে শুয়ে ছিলো। নাহলে রবার্ট তাকে হয়তো জোর করে খাওয়াতো। মিলিয়ান এবার চিত হয়ে শুয়ে ভাবতে লাগল তার মাম্মা কোথায়!
এতো রাত হয়েছে অথচ এখনও ফেরেনি! অভিমানের বদলে মাম্মার জন্য টেনশন হচ্ছে তার।
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
নীরার জ্ঞান ফিরেছে। ক্লান্ত চোখে আস্তে-ধীরে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে নীরা।
চারিদিকে এতো আলো কেন! আলোর তীব্রতায় কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছেনা সে।
শোয়া ছেড়ে ওঠার চেষ্টা করল, সাথেসাথেই প্রচন্ড মাথাব্যথায় ঢলে পড়ল আবার।
ধীরে ধীরে চোখ সয়ে আসছে তার। একটা বেডে শুয়ে আছে নীরা।
গায়ে আকাশি রঙের চাদর টেনে দেওয়া। পাশ ফিরে দেখল একটা অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখা আছে।
সেটা থেকে অক্সিজেন সাপ্লাই হয়ে তার নাকে আটকানো অক্সিজেন মাস্ক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করছে।

নীরা এতক্ষণে বুঝতে পেরেছে যে সে এখন হসপিটালে! কিন্তু কেন!! কি হয়েছে তার!!!
নীরা চিৎকার করে কাউকে ডাকার চেষ্টা করল কিন্তু কন্ঠ থেকে একটা শব্দও বের হল না।
মনে হচ্ছে তার কন্ঠঃনালি বোধহয় কেউ চেপে ধরেছে। এপাশ ওপাশ করতে লাগল নীরা। রুমে আর কেউ নেই। দরজাও বাইরে থেকে লক।

দেয়ালে কোনো ঘড়িও নেই যে সময় দেখবে। তবে খোলা জানালা দিয়ে আসা আলো দেখে বুঝতে বাকি নেই এখন দিনের বেলা।
কিন্তু সে তো রাতে মরিসের বার্থডে পার্টিতে গেছিলো। তারপর সেখানে ওরহানকে দেখল কিন্তু কোথাও খুজে পেলোনা।
পরে সোফিয়াকে মদ্যপ অবস্থায় মরিসের বাসায় রেখেই বেরিয়ে এসেছিলো নীরা।
রাস্তায় বের হয়ে ট্যাক্সি পাচ্ছিলো না, তারপর! তারপরই তো সেই ছেলে গুলো!!

নীরার ভাবনায় ছেদ পড়ল দরজা খোলার শব্দে। রিপোর্ট টাইপ কিছু হাতে নিয়ে নার্সের ড্রেসে এগিয়ে আসছে একটা মেয়ে। নীরাকে জেগে থাকতে দেখে স্মিত হেসে বলল,

” আপনার জ্ঞান ফিরেছে! কেমন লাগছে এখন!?

হাতের ইশারায় অক্সিজেন মাস্কটা সরিয়ে দিতে বলল নীরা। নার্স অক্সিজেন সিলিন্ডার অফ করে মাস্কটা সরিয়ে বলল,

” গতরাতে আপনার অক্সিজেন ফেল করেছিলো। তাই আপনাকে অক্সিজেন দিতে হয়েছে।

গতরাতের কথা শুনে নীরা বুঝতে পারলো রাত কেটে গিয়ে এখন দিন হয়েছে।
কিন্তু সে এখানে হসপিটালে কিভাবে এলো! নার্স নীরার ওপর থেকে চাদর সরিয়ে হাতে পায়ের ব্যান্ডেজ গুলো চেক করে বলল,

” ঈশ্বরের অশেষ ধন্যবাদ যে বড় কোনো এক্সিডেন্ট হয়নি।

” আমি এখানে কিভাবে এলাম!?

” আপনার মনে নেই! আপনাকে তো আপনার ফ্রেন্ড এখানে এনেছে।

” ফ্রেন্ড! কোন ফ্রেন্ড!! সোফিয়া তো না তাহলে কে!? মরিস।

নীরাকে বিড়বিড় করতে দেখে নার্স বলল, ” আচ্ছা আপনি রেস্ট নিন। আমি ডক্টরকে ডেকে আনি।
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
নীরা বেডে হেলান দিয়ে বসে হাত পা খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। পায়ের গোড়ালিতে ভীষণ ব্যাথা, মচকে গেছে বোধহয়।
হাটুতে অনেকটা ছিলে গেছে, হাতেও ছিলে কেটে গেছে অনেকটা।
নীরা চুল ঠিক করার জন্য কপালে হাত দিতেই দেখল, ভ্রুর ওপর দিয়ে ঘুরিয়ে কপালে ব্যান্ডেজ করা।
বাম গালটাও বেশ ব্যাথা। গালে ব্যাথা কিভাবে পেলো ভাবতেই মনে পড়ল, সেই ছেলে গুলোর মধ্যে থেকে কেউ একজন তাকে চড় মেরেছিলো!

ধীরে ধীরে সব কিছু মনে পড়তে লাগল নীরার। জংগলে সেই ছেলে গুলোর রক্তশূণ্য ফ্যাকাসে লাশ! জংগল থেকে ছুটতে ছুটতে রাস্তায় এসে পড়ে যাওয়া!! তারপর সেই লোকটা!
কে ছিলো সেই লোকটা!! কিছুতেই মনে করতে পারছেনা নীরা।

সাদা এপ্রোন পরে এক ডক্টর আর সেই নার্স এসে ঢুকল ভেতরে। নীরার ইটারনাল, এক্সটার্নাল কন্ডিশন চেক করে বলল,

” কাটাছেঁড়া ইনজ্যুরি ছাড়া আপনি সুস্থ আছেন। আজই বাসায় ফিরে যেতে পারবেন। আমি মেডিসিন লিখে দিয়েছি, এক সপ্তাহ নিয়মিত খেলে আশা করি খুব শীঘ্রই রিকভার হয়ে উঠবেন।

” ধন্যবাদ ডক্টর!

ডক্টর কেবিন থেকে বেরিয়ে যেতে গেলে নীরা তাকে আবার ডেকে উঠল,

” ডক্টর! আমাকে হসপিটালে কে নিয়ে এসেছে তার নাম জানেন!?

ডক্টর কিছুটা অবাক হয়ে নার্সের দিকে তাকালো। নার্স বুঝতে পেরেছে পেশেন্ট এর হয়তো মনে নেই তার কোন ফ্রেন্ড তাকে হসপিটালাইজড করেছে। সে নীরার রিপোর্ট চেক করে বলল,

” ওরহান। ওরহান উজুন।
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
[চলবে]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here