Child Of Night part-6

0
1641

#Child_Of_Night
Writer : Tanjima Isllam

[7]

রৌদ্রজ্বল আকাশে হুট করেই মেঘ জমেছে। বোধহয় বৃষ্টি নামবে। বাতাসেও কেমন একটা গুমোট ভাব। কিচেনে ব্রেকফাস্ট রেডি করছে হেনা।
রবার্ট ফ্রেশ হয়ে অফিস যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে এসেছে। সারলোট গোসলে আর মিলিয়ান এখনও ঘুম। হেনা খাবার গুলো নিয়ে একে একে প্লেটে সাজিয়ে ডাইনিং এ এলো।
ঠিক তখনই ক্রিংক্রিং শব্দে বেজে উঠল রবার্ট এর ফোন। রবার্ট পকেট থেকে ফোন বের করে দেখল, নীরা কল দিয়েছে!
রবার্ট কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে নীরা উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলে উঠল,

” হ্যালো! মি. পল!!

” হ্যালো মিস নীরা! কোথায় আপনি? কাল রাতে বাসায় ফিরলেন না। আমি কল দিলাম তাও রিসিভ করলেন না! সব ঠিক আছে তো!

” আ’ম সো স্যরি মি. পল। আসলে গত রাতে পার্টি থেকে ফেরার পথে আমার ট্যাক্সির সাথে অন্য একটা ট্যাক্সির এক্সিডেন্ট হয়েছিলো।

” বলেন কি! তারপর!? এখন কোথায় আপনি? ঠিক আছেন!?

” আমি ঠিক আছি মি. পল। কিন্তু মিলিয়ান কেমন আছে!?

” মিলিয়ান ঠিক আছে। চিন্তা করবেন না। এখনও ঘুমাচ্ছে।

” অসংখ্য ধন্যবাদ মি. পল। আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসায় ফিরে আসছি। আর হ্যাঁ, মিলিয়ানকে আমার এক্সিডেন্ট এর ব্যাপারে কিছু বলবেন না প্লিজ!

” আচ্ছা, ঠিকাছে।

নীরা কল কেটে এবার ওরহানের নম্বরে কল দিল। রিংটোন বেজেই চলেছে কেউ রিসিভ করছে না।
নীরা আরও দুইবার কল দিল। নো রেসপন্স! হয়তো কোনো কাজে ব্যস্ত আছে।
নীরা ফোন রেখে রেডি হয়ে নিল। তাকে হসপিটাল থেকে ডিসচার্জ করে দিয়েছে।
নীরা কেবিন থেকে বের হতেই ফোনের রিংটোন পেয়ে দেখল, মরিস কল দিচ্ছে। নীরা কল রিসিভ করে বলল,

” হ্যালো। মরিস।

” হ্যালো! নীরা! কোথায় তুমি!? গত রাতে কতবার কল দিলাম। রিসিভই করলে না!

” আমি এখন একটু ব্যস্ত আছি মরিস। পরে কথা হবে।

কল কেটে দিয়ে দ্রুত পায়ে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে এলো নীরা।
হ্যান্ড ওয়াচ এ তাকিয়ে দেখল, সকাল সাড়ে নয়টা বাজে।
আজ মিলিয়ানের স্কুল মিস গেল সাথে তার ক্লাসও। অবশ্য এই অবস্থায় ক্লাস করাও সম্ভব না।
তাকে বাসায় ফিরে রেস্ট নিতে হবে। মিলিয়ানের জন্যও খুব টেনশন হচ্ছে তার।
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
গুমোট অন্ধকারে ডুবে গেছে প্রকৃতি। যখন-তখন বৃষ্টি নামবে। ইলেক্ট্রিসিটি চলে যাওয়ায় এসি অফ হয়ে গেছে।
ভ্যাপসা গরমে ঘুম ভেঙে গেল সোফিয়ার। ঘুম ভেঙে উঠে ভীষণ মাথাব্যথা করছে তার।
ঢুলুঢুলু চোখে আশেপাশে তাকিয়ে দেখল, সে তার রুমে নেই। অন্য কোথাও আছে!
কিন্তু কোথায় এটা!? আর সেই বা এখানে এলো কিভাবে!?

সোফিয়ার মনে পড়ল সে গত রাতে মরিসের বার্থডে পার্টিতে গেছিলো।
তারপর পুল সাইডে ড্যান্স করতে করতে অনেক বেশি ড্রিংকস করে নেশা হয়ে গেছিলো তার।
তারপর কি হয়েছে কিছুই সোফিয়ার মনে পড়ছে না। তাহলে কি কেউ তার নেশা অবস্থার সুযোগ নিয়েছে!

সাথেসাথেই ধড়ফড়িয়ে বেডে উঠে বসল সে। ব্লানকেট সরিয়ে দেখল তার ড্রেস ঠিকঠাকই আছে।
কিছুটা ধাতস্থ হল সোফিয়া। আশপাশে তাকিয়ে খেয়াল করল এটা মরিসদের গেস্ট রুম!
গত রাতে হয়তো মরিস বা অন্য কেউ তাকে এ রুমে এনেছিলো।
সোফিয়া আড়মোড়া ভেঙে বেড থেকে নামতেই মেইড পলিন এসে বলল,

” ম্যাম! আপনার জন্য হট বাথ প্রিপেয়ার করেছি। গোসল করে নিন, ভালো লাগবে।

” থ্যাংকস পলিন।

” আর এই লেমনেড খেয়ে নিন, মাথাব্যথা ঠিক হয়ে যাবে।

” ওকে।

সোফিয়ার হটাৎ নীরার কথা মনে পড়ল। গত রাতে সে এখানে থাকলে নীরা কোথায়!?
নীরা কি বাসায় ফিরে গেছে!? পলিন রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে সোফিয়া ডেকে বলল,

” আচ্ছা পলিন

” জ্বি ম্যাম!

” আমার সাথে যে মেয়েটা এসেছিলো, সে কোথায়!? মানে সে কি বাসায় ফিরে গেছে!?

” কে নীরা ম্যাম!?

” হুম

” ওহ উনি তো গত রাতেই চলে গেছেন।

” ও আচ্ছা।

পলিন চলে গেলো। সোফিয়ার এবার বেশ খারাপ লাগছে। নীরাকে সেই পার্টিতে এনেছিলো।
অথচ তাকে নিয়ে বাসায় না গিয়ে মাতাল হয়ে এখানেই থেকে গেলো!
কে জানে নীরা নিশ্চয়ই তার উপর খুব রেগে আছে। রেগে থাকাই তো স্বাভাবিক।
আর ভাবতে পারছেনা সোফিয়া। তার মাথাব্যথাটা বেড়েই চলেছে। এখনই হট শাওয়ার নিতে হবে।
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নেমেছে। থামার কোনো নামই নিচ্ছেনা। বাসার সামনে এসে ট্যাক্সি থেকে নেমে এলো নীরা।
পায়ের ব্যাথায় ঠিকমতো হাটতে পারছেনা সে। খুড়িয়ে খুড়িয়ে হেটে বৃষ্টির মধ্যে কোনোরকমে পলদের বাসার সামনে এসে কলিংবেলটা বাজালো।

রবার্ট কিছুক্ষণ আগেই অফিসে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে গেছে। সারলোটও স্কুলে গেছে মাত্র।
মিলিয়ানের জন্য ব্রেকফাস্ট রেডি করে কিচেনে টুকটাক কাজে ব্যস্ত হেনা।
হটাৎ কলিংবেলের শব্দ পেয়ে দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিল সে। নীরাকে দেখে উত্তেজিত হয়ে বলল,

” মিস নীরা! এ কি অবস্থা হয়েছে আপনার! আসুন ভেতরে আসুন।

নীরা মলিন হেসে বাসায় ঢুকে দেখল সোফায় চুপচাপ বসে আছে মিলিয়ান। নীরার দিকে একবার তাকিয়ে আবার দৃষ্টি নামিয়ে নিল। হেনা এক গ্লাস পানি এনে বলল,

” খেয়ে নিন।

” ধন্যবাদ, মিসেস পল। আপনাদের অনেক ঝামেলায় ফেলেছি।

” না না, ঝামেলা কিসের! কিন্তু আপনার এখন কি অবস্থা!? অনেক বড় এক্সিডেন্ট হয়েছে মনে হচ্ছে।

” এখন ঠিক আছি। আচ্ছা, আমাকে রেস্ট নিতে হবে। মিলিয়ানকে নিয়ে যাই। পরে এ ব্যাপারে কথা বলবো।

” ওকে।
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
ঘড়িতে বেলা এগারোটা বাজে। বেডে হেলান দিয়ে বসে আছে নীরা।
তার সামনেই বসে আছে মিলিয়ান। নীরার কাটাছেঁড়া জায়গায় হাত দিয়ে দেখছে সে। নীরা স্মিত হেসে বলল,

” আমি ঠিক আছি মিলিয়ান। চিন্তার কিছু নেই। ডক্টর মেডিসিন দিয়েছে, রেগুলার খেলেই সুস্থ হয়ে যাবো।

” আমি চিন্তা করছি না মাম্মা। কারণ, আমি জানি তুমি খুব শীঘ্রই সুস্থ হয়ে যাবে।

মিলিয়ানের কথা শুনে হেসে ফেলল নীরা। মিলিয়ানের কিছুকিছু কথা শুনলে মনে হয় যেন সে ভবিষ্যৎ বলছে। নীরা মিলিয়ানের হাত দুটো নিজের হাতে নিয়ে বলল,

” তো মিলিয়ান আজ লাঞ্চে কি খাবে!?

” তুমি তো অসুস্থ মাম্মা। আজ আমি তোমাকে রান্না করে খাওয়াবো।

নীরা মিলিয়ানের দুই গালে চুমু দিয়ে বলল,” থাক, তোমাকে কষ্ট করতে হবে না। আমি বরং অনলাইনে ফুড অর্ডার করি। দুজনে আজ মুভি দেখবো আর গল্প করবো।

” ওকে মাম্মা।
এরমধ্যেই কলিংবেলটা বেজে উঠল। বাইরে বৃষ্টির বেগ কমে গেছে। বাইরে বইছে শীতল হাওয়া। নীরা মিলিয়ানকে বলল,

” তুমি মুভি সিলেক্ট করো, আমি দেখি কে এলো।

” আচ্ছা।

নীরা খুড়িয়ে খুড়িয়ে হেটে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখল, হালকা পাতলা গড়ণের একটা অসম্ভব সুন্দরী মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
তার ঘনকালো সিল্কি চুল গুলো ঘাড়ের একপাশ বেয়ে বুকের কাছে নেমে এসেছে।
চোখের মনি জোড়া ঈষৎ লালচে। খয়েরী রঙের পাতলা ঠোঁট জোড়ায় ভেসে আছে রহস্যময় হাসি। নীরা কিছুটা ইতস্ততভাবে বলল,

” জ্বি, কাকে চাই?

” আপনি কি মিস নীরা হক?

” জ্বি! কিন্তু, আপনাকে ঠিক চিনলাম না তো!

” আমি এলিসিয়া, মীরার ফ্রেন্ড।

” ও আচ্ছা। প্লিজ ভেতরে আসুন।

নীরার বলতে দেরি, মেয়েটা প্রায় সাথেসাথেই ভেতরে ঢুকে পড়ল।
এলিসিয়া নীরাকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকতেই একটা গন্ধ এসে নীরার নাকে ঠেকল।
এটা কিসের গন্ধ ঠিক বুঝতে পারছেনা নীরা। মেয়েটার শরীরের কড়া পারফিউম আর সেই গন্ধ মিলে বেশ ঝাঝালো গন্ধ বের হচ্ছে।

এলিসিয়া ড্রয়িং রুমে এসে সোফায় বসে পড়ল। সে এদিক ওদিক খুব একটা না তাকালেও নীরার কেন জানি মনে হচ্ছে, মেয়েটা তার চারপাশের সবকিছুই খুব তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করছে। হটাৎ করেই ভীষণ অস্বস্তিতে পড়েছে নীরা। সে এলিসিয়াকে বলল,

” আপনি একটু বসুন। আমি আসছি।

” ওকে।

নীরা রুমে এসে দেখল, মিলিয়ান নেই। কোথায় গেল সে! এখানেই তো ছিলো।
নীরা রুম থেকে বেরিয়ে মিলিয়ানের রুমে এসে দেখল, মিলিয়ান তার ড্রয়িং খাতায় আর্ট করছে।
নীরা তাকে ডাকতে গিয়েও না ডেকেই রুম থেকে বেরিয়ে এলো।
এলিসিয়া এখনও সোফায় বসে আছে। নীরার দিকে উল্টো ফিরে বসে থাকায় এলিসিয়াকে পেছন থেকে দেখছে নীরা।

এলিসিয়া যেভাবে বসে ছিলো, ঠিক সেভাবেই বসে আছে। নীরা কিচেনে ঢুকে চা বানাতে লাগল।
এই অবেলায় মেয়েটাকে কি নাস্তা দেবে সে বুঝতে পারছেনা। নীরার হটাৎ মনে হল, এক বছর হয়ে গেছে মীরা মারা যাওয়ার।
কিন্তু এই এক বছরে মীরার অফিসের কলিগ আর আশপাশের প্রতিবেশি ছাড়া কেউ আসেনি এ বাড়িতে। তাহলে এই মেয়ে আবার কোত্থেকে উদয় হল!

চা হয়ে গেছে। নীরা দুটো কাপে চা নিয়ে ড্রয়িং রুমে এসে দেখল, এলিসিয়া এখনও ঠিক একই ভাবে সোফায় চুপচাপ বসে আছে।
একটুও নড়াচড়া করছেনা। নীরা এগিয়ে এসে একটা কাপ এলিসিয়ার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,

” আপনি এসেছেন, এতে খুব ভালো লাগছে।

” হুম, আগে তো আমরা প্রায়ই আসতাম।

” আমরা?

” মানে, আমরা যারা মীরার ফ্রেন্ড আর কি।

” ও আচ্ছা। আসলে আমি আগে কখনো আপনাকে দেখিনি তো, তাই আর কি।

” ইটস ওকে। তোমার চেনার প্রয়োজন নেই। আমরা চিনলেই হল।

সাথেসাথেই অবাক হয়ে এলিসিয়ার দিকে তাকালো নীরা। এলিসিয়া খিলখিল করে হেসে বলল,

” আরে মজা করছি। সে যাইহোক মিলিয়ানকে দেখছি না যে! ও কি স্কুলে!?

” না, ও রুমে ড্রয়িং করছে।

এলিসিয়া হটাৎ গম্ভীরমুখে তাকিয়ে বলল, ” বেচারা মিলিয়ান! এতো অল্প বয়সেই বাবা-মাকে হারিয়ে অরফান হয়ে গেলো। আমি এসেছিলাম মীরার ফিউনারেল এ। তারপর নানান ঝামেলায় আর আসতে পারিনি।

” হুম।

” বাই দ্যা ওয়ে, আমি এখন রেগেন্সবুর্গে আছি। এবার থেকে আসা-যাওয়া হবে।

মেয়েটা কি সুন্দর হেসে হেসে কথা বলছে। কিন্তু নীরার মনে হচ্ছে যেন সে বিদ্রুপের হাসি হাসছে।
হটাৎ এমন মনে হচ্ছে কেন তার! হয়তো গত রাতের সেই ইন্সিডেন্ট এর কারণে এমন লাগছে।
এলিসিয়ার ডাক পেয়ে ভাবনায় ছেদ পড়ল নীরার। এলিসিয়া হেসে বলল,

” আজ তাহলে উঠি নীরা।

” এখনই উঠবেন!? মাত্রই তো এলেন।

” আরে, এই আসা কি শেষ আসা নাকি! এবার থেকে তো প্রায়ই আসবো। তুমি মাইন্ড করবে না তো!

” না না, মাইন্ড করবো কেন। আপনি আসলে আরও ভালো লাগবে।

” ওকে নীরা। তাহলে আজ আসি।

বলেই দ্রুত পায়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো এলিসিয়া। মেয়েটা যেমন আচমকা এসেছিলো তেমন আচমকাই চলেও গেলো।
নীরার শরীরটা বেশ ক্লান্ত লাগছে। সারা শরীরে পিন ফুটানোর মতো ব্যাথা তার।
পায়ের ব্যাথাটাও বেড়েই চলেছে। নীরা ধীর পায়ে হেটে হেটে রুমে এসে দাড়ালো।
ফোন হাতে নিয়ে অনলাইনে ফুড অর্ডার করে সটান হয়ে শুয়ে পড়ল বেডে।
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
[চলবে]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here