Child_Of_Night Part-19

0
1182

#Cild_Of_Night
Writer: Tanjima Islam

__________________[19]___________________

মিউনিখ অ্যাসছাইম গল্ফ পার্ক এরিয়ার একটি লোকেশন পাঠিয়েছে নীরা।
লোকেশন দেখে মরিস বেশ অবাক হল এই ভেবে যে, নীরা হটাৎ মিউনিখ গেলো কেনো?
আর কিসের বিপদের কথা বলল সে? মরিসের ভাবনার মাঝেই মেইড পলিন এসে বলল,

—–” মি. মরিস, আপনার বাবা আজ দুপুরে আপনার সাথে লাঞ্চ করবেন বলেছেন।

—–” আমাকে এখনই বের হতে হবে, বাবাকে লাঞ্চে ওয়েট করতে না করবেন।

মরিস দ্রুত পায়ে লন থেকে বেরিয়ে গ্যারেজের দিকে ছুটে গেলো।
মিউনিখ যেতে প্রায় দেড় ঘন্টা লাগবে। সে মনেমনে প্রার্থনা করল, ততক্ষণে ঈশ্বর যেন নীরা’কে নিরাপদে রাখেন।
মরিস গ্যারেজ থেকে গাড়ি বের করে গেটের সামনে আসতেই দেখল, সোফিয়া তাদের গেট খুলে ভেতরে ঢুকছে। মরিস গাড়ি থেকে মুখ বের করে বলল,

—–” সোফি! তাড়াতাড়ি আয়, নীরার খোজ পেয়েছি।

—–” সত্যিই!?

সোফিয়া একরকম দৌড়ে এসে মরিসের পাশের সীটে বসে পড়ল।
সোফিয়া উঠে বসতেই গাড়ি স্টার্ট দিল মরিস। নীরা’র চিন্তায় তার উদ্বিগ্নতা বেড়েই চলেছে।
সোফিয়া সীট বেল্ট বেধে মরিসের দিকে তাকালো। মরিসকে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে।

—–” নীরা কোথায় মরিস?

—–” মিউনিখে।

—–” মানে!? ও ওখানে কি করছে!?

মরিস কোন উত্তর দিলো না। সে তো নিজেই জানেনা নীরা কোন বিপদের মধ্যে আছে।
তবে তার মন বলছে নীরা ভালো নেই। মরিস কিছু বলছেনা দেখে সোফিয়া আরও চিন্তায় পড়ে গেলো।

_______________________________

রেগেন্সবুর্গ গীর্জার দোতলায় উপাসনা কক্ষের জানালার ধারে দাড়িয়ে আছে বিশপ আন্দ্রেস।
হাত দুটো পেছনে বেধে সে তাকিয়ে আছে কাচের জানালা ভেদ করে গীর্জার পাশে প্রাচীরঘেরা সিমেট্রির দিকে।
দোতলা থেকে নিচে সমাধিক্ষেত্রের ভেতরটা মোটামুটি দেখা যায়।
তবে বেশিরভাগ জায়গা উঁচু উঁচু গাছগাছালিতে আড়াল হয়ে আছে। ফাদার এন্ড্রু চেয়ার ছেড়ে উঠে বলল,

—–” বিশপ! আপনি কি একবার সমাধিটা দেখবেন?

—–” যা বলছো তা যদি সত্যিই হয়ে থাকে তাহলে জার্মানির বুকে খুব ভয়ানক বিপদ ঘনিয়ে আসতে চলেছে।

—–” কিন্তু আমি নিশ্চিত নই। কারণ রেগেন্সবুর্গের মতো শহরে এরা কিভাবে বিস্তার লাভ করতে পারে? প্রত্যন্ত অঞ্চল হলেও নাহয়

এন্ড্রুর কথা শেষ হওয়ার আগেই আন্দ্রেস সিমেট্রি থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বলল,” সময় বদলেছে এন্ড্রু। মানুষের সাথেসাথে তারাও নিজেদের খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে নিশ্চয়ই।

—–” ম’মানে!?

এন্ড্রুর চোখে স্পষ্ট বিস্ময় দেখা যাচ্ছে। যেন বিশ্বাস অবিশ্বাসের মাঝে পার্থক্য খুজে বেড়াচ্ছে সে।
আন্দ্রেস একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ” হতে পারে তারা আমাদের মাঝেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাসাবাড়ি, স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি সবখানেই থাকতে পারে তারা।

এন্ড্রু এবার রীতিমতো ভয় পেয়ে গেলো। তার ধারণা কি তাহলে সত্যিই!?
আন্দ্রেস ধীর পায়ে হেঁটে এসে চেয়ারে বসে বলল,” সমাধি খোড়ার ব্যবস্থা করো এন্ড্রু, সন্ধ্যা নামার আগেই আমাদের যা করার করতে হবে।

এন্ড্রু একটু ঝুকে বাও করে দ্রুত কক্ষ প্রস্থান করল। এন্ড্রু চলে যেতেই গভীর চিন্তায় পড়ে গেলো আন্দ্রেস। বছর চারেক আগেও লিও থমসন নামে এক লোকের মৃত্যু নিয়ে কানাঘুঁষা হয়েছিলো।
কিন্তু তার স্ত্রী মীরা চার্চ কতৃপক্ষকে টাকাপয়সা দিয়ে ব্যাপারটা একরকম ধামাচাপা দিয়ে দিয়েছিলো।
তাই আন্দ্রেস এবারের ব্যাপারটা কতৃপক্ষকে না জানিয়ে আগে নিজেই খতিয়ে দেখবে।

______________________________

দেড়টা বাজতে আর মাত্র তিন মিনিট বাকি। একটু পরেই ওরহান চলে আসবে।
কিন্তু মরিস তো এখনও এলো না! নীরা পায়চারি করতে করতে একবার দরজার দিকে তাকাচ্ছে আবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে।
রেগেন্সবুর্গ থেকে মিউনিখ আসতে কতক্ষণ লাগবে দেখবে তা, ফোনের চার্জও শেষ।
কথায় বলে বিপদ যখন আসে, সব একসাথে আসে। নীরার ভাবনায় ছেদ পড়ল ওরহানের কন্ঠঃ পেয়ে,

—–” নীরা!

নীরা চমকে উঠে দরজায় তাকালো। মলিন মুখে দাঁড়িয়ে আছে ওরহান।
কি হয়েছে তার!? নীরা ধীর পায়ে ওরহানের দিকে এগিয়ে এসে বলল,

—–” কি হয়েছে ওরহান? আপনি ঠিক আছেন!?

ওরহান কিছু না বলে হুট করে নীরা’কে জড়িয়ে ধরল। আচমকা জড়িয়ে ধরাতে কিছুটা ভড়কে গেলো নীরা। ওরহান নীরা’কে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় বলল,

—–” তোমাকে যেদিন প্রথম দেখেছিলাম, খুব কাদছিলে তুমি। মাথায় সাদা ওড়না দিয়ে আর কালো লং ফ্রক পরেছিলে। কাদতে কাদতে তোমার অশ্রুসিক্ত চোখ জোড়া যে কত্ত মায়াবী লাগছিল! তোমার লেপ্টে যাওয়া কাজল আর ঘনকালো পাপড়িতে যেন হারিয়ে যাচ্ছিলাম।

নীরার চোখ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়ল। সে কাদছে, এ কান্না খুশির কান্না।
ভালবাসার মানুষের মুখে নিজের প্রতি ভালোবাসাময় অনুভূতি শোনার খুশিতে কাদছে সে। ওরহান নীরা’কে ছেড়ে সরে এসে বলল,

—–” সময় হয়েছে, চলো।

মুহুর্তেই নিজের আবেগ অনুভূতি চাপা দিয়ে কঠিন গলায় বলল ওরহান।
নীরার মধ্যে কোনো ভাবান্তর ঘটল না। তার মন বলছে ওরহান চায় না সে চলে যাক।
অথচ মুখে বলছে অন্য কথা। নীরা এগিয়ে এসে ওরহানকে জড়িয়ে ধরে বলল,

—–” আমি যেতে চাইনা ওরহান। আপনার সাথে থাকতে চাই। মিলিয়ানের সাথে থাকতে চাই আমি।

ওরহান কোনো উত্তর দিলো না। নীরা এবার মুখ তুলে ওরহানের দিকে তাকিয়ে বলল, ” জানি সেটা সম্ভব না। তাই একটাবার মিলিয়ানকে দেখতে চাই। শেষবারের মতো দেখতে চাই। প্লিজ ওরহান!

ওরহান ক্ষীণ হেসে বলল, ” ঠিকাছে।

মুহুর্তেই নীরার চোখেমুখে খুশির ঝলক দেখা দিল। খুশিতে আত্নহারা হয়ে সে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরল ওরহানকে।

_____________________________

মিউনিখ অ্যাসছাইম গল্ফ পার্ক এরিয়ায় এসে দাড়ালো মরিসের গাড়ি।
ঘড়িতে দুপুর একটা চল্লিশ বাজে। গাড়ি থেকে নেমে দাড়ালো মরিস আর সোফিয়া।
জনমানবহীন পুরো এরিয়াটা যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজের সমারোহ। কিছুদূর পরপর প্রাচীরঘেরা ভিলা দেখা যাচ্ছে।

এখানে মানুষজন সাধারণত ভ্যাকেশন কাটাতে আসে। সকাল বিকাল একদল এসে এখানে হাটাহাটি করে, কেউ কেউ গল্ফ খেলে আর বাচ্চারা কাইটিং করে। দুপুরের এই সময়ে তাই লোকজনের দেখা মেলেনা তেমন।

মরিস ফোন বের করে নীরা’কে কল দিল। কিন্তু সাথেসাথেই মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো তার।
নীরার ফোন অফ! এখন তারা এতবড় এরিয়ায় নীরা’কে কোথায় খুজবে?
সোফিয়া গায়ে পরা লেডিস কোটের পকেটে হাত গুজে বলল,

—–” কি ব্যাপার? নীরা রিসিভ করছেনা?

—–” ওর ফোন অফ!

—–” মানে কি!? এখন ওকে কোথায় খুজবো আমরা?

—–” সেটাই তো মাথায় আসছেনা! ওহ গড, প্লিজ সেভ হার!

মরিসের কথা শুনে সোফিয়া চিন্তিত হয়ে বলল, ” সত্যি করে বল তো আসলে কি হয়েছে? নীরা মিউনিখে আছে ভালো কথা, কিন্তু আমরা এভাবে হন্তদন্ত হয়ে কেন এলাম? দেড় ঘন্টার পথে এতো স্পিডে ড্রাইভ করেছিস যে এক ঘন্টায় চলে এসেছি। নীরার কি কিছু হয়েছে?

—–” নীরা কল করেছিলো। বলল ও খুব বিপদে আছে। আর এখানের লোকেশন পাঠিয়ে দিল!

সোফিয়া এবার রেগেমেগে বলে উঠল, ” মরিস তোর কি মাথাটাথা গেছে? নীরা বিপদে আছে বলেছে এক ঘন্টা আগে। আর তুই পুলিশকে না জানিয়ে চলে এলি নীরা’কে হিরোর মতন বাচাতে! ব্রাভো মরিস ব্রাভো!

—–” তুই চুপ করবি!? তখন কি করবো কিচ্ছু মাথায় আসছিলো না আমার।

—–” তোর মাথায় আসছিলোনা ভাল কথা। আমি যে রাস্তায় কতবার জিজ্ঞেস করলাম, তখন তো কিচ্ছু বললি না। নাকি তখনও তোর মাথায় কিচ্ছু আসছিলো না!?

মরিস কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। সত্যিই এবার নিজের ওপরেই রাগ হচ্ছে তার।
কি একটা বোকার মত কাজ করেছে সে! তার এই বোকামির জন্য যদি নীরার কিছু হয়ে যায় তো সে নিজেকে কোনোদিন মাফ করতে পারবে না।

সোফিয়া ফোন বের করে মিউনিখ পুলিশকে কল দিয়ে কিছুদূর হেটে গেলো।
রিং বেজেই চলেছে। সোফিয়া চিন্তিত হয়ে হাটতে হাটতে দেখল কিছুটা দূরে একটা ভিলা’র সামনে দাঁড়িয়ে আছে নীরা!
একটা লোক ব্যাক সীটে লাগেজ রেখে ড্রাইভিং সীটে গিয়ে বসল।
নীরাও গিয়ে বসল তার পাশে। সোফিয়া কল কেটে পেছন ফিরে চেচিয়ে উঠলো,

—–” মরিস! নীরা ঐ গাড়িতে!

মরিস কয়েক সেকেন্ড হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো সোফিয়ার দিকে।
সোফিয়া ফোন পকেটে রেখে ছুটে এসে গাড়িতে উঠে বলল,

—–” সামনে ঐ কালো গাড়িটা’কে ফলো কর। নীরা ঐ গাড়িতে!

মরিস এবার বিন্দুমাত্র দেরি না করে গাড়িতে উঠে স্টার্ট দিল।
রাস্তা একেবারে ফাকা। কালো গাড়িটা’কে বেশ ভালো মতই দেখা যাচ্ছে।

__________________[চলবে]________________

বিঃদ্রঃ মন খারাপ, কেন জানি কিছু ভালো লাগছে না। তাই বেশি লিখতে পারলাম না। কালকে নেক্সট পর্ব দিবো। গল্পটা কেমন লাগছে জানাবেন🙂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here