Child_Of_Night Part-27

0
1314

#Child_Of_Night
Writer : Tanjima Islam

_________________[27]___________________

ডিনার শেষ করে ডাইনিং গোছাচ্ছে রবার্ট। ইচ্ছে না থাকা সত্বেও জোর করে খাবার খেয়েছে সে। গালে রুচি নেই, খাবার সব বিস্বাদ লাগছে। পানিটুকুই খেয়েছে বারবার। শরীরটাও বিশেষ ভালো লাগছেনা। বড্ড ক্লান্ত লাগছে। হয়তো ঘুমালে ঠিক হবে।

রবার্ট এঁটো থালাগুলো ধুয়ে কিচেনে সাজিয়ে রাখল। সকালে উঠে অফিস যাওয়ার আগে এসব ধোয়ার সময় পাবেনা। হেনা’কে আজ সকালে সে ব্রেম এ রেখে এসেছে। ওখানে কদিন থাকলে স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

সন্তান হারানো শোক তো আর মুছে ফেলা সম্ভব না, হেনা’কে অন্তত সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনলেই অনেক। কিচেন থেকে বেরিয়ে তোয়ালেতে হাত মুছতে মুছতে ডাইনিং এ এলো রবার্ট। ঘড়িতে রাত দশটা বাজতে যাচ্ছে।

সারলোটের ঘরের দরজায় তাকালো সে। রাত দশটা বাজলেই মেয়েটা ঘুমের জন্য বায়না করতো। কিছুতেই পড়তে চাইতো না। তাই বলে রেজাল্ট খারাপ হত না ওর। সবসময়ই হাইস্ট মার্ক পেতো সব সাবজেক্ট এ।

আর প্রতিবার রেজাল্টের পর তার বায়না হত নতুন নতুন সব কমিকস এর বই কিনে দেওয়া। আর যেকোনো অকেশনে ডল তো তার লাগবেই। পুরো ঘর জুড়ে সে ডল দিয়ে সাজিয়ে রেখেছে।

রবার্ট এর গলা শুকিয়ে এলো। চোখে জল জমেছে। কষ্ট হচ্ছে তার। ভীষণ কষ্ট! কথায় বলে, “পৃথিবীতে সবচেয়ে হৃদয়বিদারক মুহুর্ত হল পিতার কাধে সন্তানের লাশ তুলে নেওয়া” কথাটা বড় বেশিই সত্যিই। সারলোট তাদের অনেক সাধনার ফল ছিলো।

বিয়ের পর প্রায় নয় বছর চেষ্টা করেও সন্তান হয়নি তাদের। অবশেষে টেস্টটিউব এর মাধ্যমে সারলোটকে পেয়েছিলো। বহু প্রতিক্ষার পর বাবা হওয়ার তৃপ্তি অনুভব করেছিলো রবার্ট। আজ সেই সন্তান নেই! চিরনিদ্রায় ঘুমিয়ে আছে অন্ধকার সমাধিতে!

ডুকরে কেঁদে উঠল রবার্ট। নিশ্চুপ বাড়িটাতে তার কান্নার ক্ষীণ শব্দটা বেশ জোরালো শোনাচ্ছে। কেন তার সাথেই এমন হল? তার ছোট্ট মেয়েটাকে ঈশ্বর কেন কেড়ে নিল!? কি হত মেয়েটাকে বড় হতে দেখলে? কি হত মেয়েটার সফল জীবন দেখে যেতে পারলে? উত্তর নেই! এই প্রশ্নের উত্তর কারো কাছে নেই!

ঠিক তখনই কলিং বেলের শব্দ পেয়ে চমকে উঠল রবার্ট। এতো রাতে আবার কে এলো!? প্রতিবেশীদের কেউ!? সে চোখমুখ মুছে দরজা খুলতেই দেখল, দু’জন পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে দরজার বাইরে।

—–” এতো রাতে বিরক্ত করার জন্য দুঃখীত মি. পল! একটা কেসের তদন্ত চলছে, তাই বাধ্য হয়ে এসেছি। ভেতরে আসতে পারি!?

রবার্ট দরজা থেকে সরে দাড়ালো। নিকোলাস আর তার সহকর্মী ভেতরে ঢুকতেই দরজা লক করে দিল সে। সোফায় তাদেরকে বসতে দিয়ে নিজেও অন্য পাশের সোফায় গিয়ে বসল। এতো রাতে হটাৎ পুলিশ কেন তার বাসায়? কোন কেসের জন্য তদন্ত করতে এসেছে কিছুই মাথায় ঢুকছেনা তার।

—–” আমরা রেগেন্সবূর্গ থানা থেকে এসেছি। মিউনিখে একটা অমীমাংসিত ঘটনা ঘটেছে শুনেছেন নিশ্চয়ই!?

রবার্ট এতক্ষণে বুঝল, নীরা’র জন্য এরা এখানে এসেছে। কিন্তু নীরা’র কেসের ব্যাপারে কি জিজ্ঞেস করবে এরা? সে তো এটাও জানেনা যে নীরা কখন মিউনিখে গেছে। রবার্ট এর চিন্তায় ছেদ ঘটিয়ে নিকোলাস বলে উঠল,

—–” আমরা বেশি সময় নেবো না। তো, মিউনিখ ঘটনার একজন ভিক্টিম মিস নীরা হক আপনাদের প্রতিবেশী!?

—–” জ্বি!

—–” মিস নীরা কি এখানে একাই থাকেন? নাকি সাথে আরও কেউ থাকে?

—–” না, এটা প্রয়াত লিও থমসনের বাসা। কয়েক বছর আগেই তিনি মারা গেছেন। এখানে তার স্ত্রী মীরা আর ছেলে মিলিয়ান থাকতো। গত বছর মিসেস মীরা মারা যাওয়ার পর তার ছোট বোন নীরা এখানে থাকে মিলিয়ানের সাথে।

মাথা নাড়ল নিকোলাস। তার মানে নীরা একা না, বোনের ছেলের সাথে থাকে। নিকোলাসের সহকর্মী একটা রেকর্ডার অন করে নিকোলাস আর রবার্ট এর কথোপকথন রেকর্ড করছে। নিকোলাস কিছু একটা ভেবে আবার বলল,

—–” আপনারা যেহেতু প্রতিবেশী, আর বাসাও পাশাপাশি, একে অপরের খোজ খবর রাখেন নিশ্চয়ই!?

—–” জ্বি। এছাড়াও মিস নীরা বাইরে কোথাও গেলে প্রায়ই মিলিয়ানকে আমাদের বাসায় রেখে যায়।

—–” আচ্ছা, কখনো কি নীরাদের বাসায় সন্দেহজনক কিছু হতে দেখেছেন? অস্বাভাবিক কিছু!?

রবার্ট এর কপালের ভাজ পড়ল। সন্দেহজনক বা অস্বাভাবিক কিছুই তো তার নজরে পড়েনি। সে সকালে অফিসে যায় আর সন্ধ্যায় বাসায় ফেরে। এরমধ্যে কি হয় না হয় সেটা তো তার জানার কথা না। হয়তো হেনা থাকলে এ ব্যাপারে বলতে পারতো।

—–” দেখুন, আমি সারাদিন বাড়ি থাকি না। তাই প্রতিবেশীদের কার বাসায় কি ঘটছে আমার জানার কথা না। এছাড়া গতকালই আমাদের মেয়ে সারলোটের আকস্মিক মৃত্যু ঘটেছে। তাই

—–” আ’ম এক্সট্রিমলি স্যরি মি. পল। ঈশ্বর আপনার মেয়ের আত্নাকে শান্তি দিক।

অপরাধী স্বরে বলে উঠল নিকোলাস। পরক্ষণেই আবার বলল,” আসলে আমরা শুধু আপনাকে না, এই এলাকার সবাইকেই জিজ্ঞাসাবাদ করছি। যদিও এখন রাত হয়ে গেছে। আপনার বাসা থেকে বেরিয়ে আর মাত্র একটা বাসায় যাওয়া বাকি।

—–” হুম বুঝেছি।

—–” বলছি যে, ওনাদের বাসায় ইদানীং কাদের কাদের আসা যাওয়া বেশি ছিলো?

রবার্ট কিছু বলার আগেই নিকোলাস আবার বলে উঠল, “মিস নীরা’র সাথে যে দু’জন ছিলেন, তারা নীরা’র ফ্রেন্ড। যাদের একজন ঘটনাস্থলে মারা গেছে আরেকজন এখন কোমায়। এরা ছাড়া আর কেউ কি ওনার বাসায় আসা-যাওয়া করতো?

ভাবতে লাগল রবার্ট। মরিস নামের ছেলেটাকে সে নীরা’র বাসায় কখনো আসতে দেখেনি। তবে সোফিয়া মেয়েটা প্রায়ই আসতো। আর আসতো!

—–” মিলিয়ানের পিয়ানো টিচার।

—–” টিচার!? মিলিয়ানের স্কুলের টিচার!?

—–” না, উনি কোনো স্কুলের টিচার না। শুনেছি, সী সাইডে লোকটার একটা বাড়ি আছে। সেখানে কিছু ছেলেমেয়েদের বাদ্যযন্ত্র বাজানো শেখায়। মিলিয়ান সেখানেই পিয়ানো শিখতে যেতো। আর লোকটাকেও প্রায়ই এ এলাকায় দেখতাম।

চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল নিকোলাস। সী সাইডে বাড়ি! পিয়ানো টিচার! নীরা’র বাসায় আসা-যাওয়া করতো! এই লোকটাই যে সেই ওরহান উজুন, তা বুঝতে বাকি নেই তার।

—–” লোকটার নাম কি ওরহান উজুন?

নিশ্চিত হওয়ার জন্য জিজ্ঞেস করল নিকোলাস। রবার্ট মনে করার চেষ্টা করে বলল,” সম্ভবত!

—–” মিস নীরা মিউনিখ যাওয়ার আগে আপনাদের সাথে দেখা করে যায়নি? মানে ওখানে ভ্যাকেশন কাটাতে গেছিলো নাকি?

মাথা নাড়ল রবার্ট। নিকোলাস জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। রবার্ট কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

—–” আমাদেরও মিউনিখে ভ্যাকেশন কাটাতে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিলো। কিন্তু যাওয়ার দিন সকালেই মেয়েটা ভীষণ অসুস্থ হয়ে যায়। পরে ওকে নিয়ে হসপিটালে ভর্তি করি। গত কালই বাসায় ফিরেছি। এরমধ্যে মিস নীরা কখন মিউনিখ গেছেন জানিনা। গত রাতে টিভিতেই দেখলাম সে মিউনিখে।

______________________

বেডে হেলান দিয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে নীরা। না জানি কতদিন এখানে থাকতে হবে! ডক্টর তো বলল, অফিসার ফ্রেডরিক এসে জিজ্ঞাসাবাদ করে যাওয়ার পর শারীরিক অবস্থা দেখে তাকে রিলিজ দেওয়া হবে। বাবা-মাকে একটু যে ফোন দিয়ে খোজ নেবে সেই উপায়ও নেই। তার ফোনটা সম্ভবত পুলিশের কাছে।

নীরা’র সাতপাঁচ ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে কেবিনের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল ডক্টর জোনাস আর অফিসার ফ্রেডরিক। সোজা হয়ে বসল নীরা। ফ্রেডরিক ইশারায় কি যেন বলল জোনাসকে। প্রায় সাথেসাথেই জোনাস কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো। হয়তো অফিসার নীরা’র সাথে একা কথা বলতে চাচ্ছে!

ফ্রেডরিক একটা টুল নিয়ে নীরা’র সামনাসামনি বসল। নীরা মনেমনে নিজেকে প্রস্তুত করছে। তাকে কি কি জিজ্ঞাসা করতে পারে তা অনুমান করে এতক্ষণ সে উত্তর সাজিয়েছে। এখন এই দূর্ভাগা কপালে যদি ভাগ্যটা সহায় হয়!

—–” মিস নীরা! কেমন আছেন এখন? মানে শারীরিক কোনো সমস্যা বোধ করছেন কি?

মাথা নাড়ল নীরা। যার অর্থ সে কোনো সমস্যা বোধ করছে না। ফ্রেডরিক এবার একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল,

—–” আপনাকে কিছু প্রশ্ন করবো। আশা করি আপনি সঠিকভাবে উত্তর দেবেন।

নীরা কিছু বলল না। তবে সে মনেমনে প্রস্তুত। ফ্রেডরিক এবার সরাসরি নীরা’র দিকে তাকিয়ে বলল,” আপনার সাথে মোট কতজন ছিলো?

—–” আমরা চারজন মিলে মিউনিখের ফেরিঙ্গাসি লেক এ ভ্যাকেশন কাটাতে এসেছিলাম।

—–” আপনারা চারজন কে কে? আপনি, প্রয়াত সোফিয়া, মরিস আর?

—–” ওরহান।

—–” ওরহান উজুন!?

—–” হুম!

কিছুক্ষণ চুপ থেকে নীরা’কে পর্যবেক্ষণ করতে লাগল ফ্রেডরিক। মনে হচ্ছে মেয়েটা যেন উত্তর দিয়েই পরবর্তী প্রশ্নের অপেক্ষা করছে।

—–” আচ্ছা, তো বলুন! কি হয়েছিলো সেদিন?

একটা শুকনো ঢোক গিলল নীরা। এবার তাকে খুব সুন্দর করে একটা কাহিনি বলতে হবে। যা শুনে, যে কেউ যেন ব্যাপারটা বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়। ফ্রেডরিক খুব মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে আছে নীরা’র দিকে।

—–” আমরা কটেজটাতে ওঠার পর তেমন কোনো অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করিনি। সবকিছুই স্বাভাবিক ছিলো। আমরা ভ্যাকেশন কাটাতে এসেছিলাম তাই, কটেজে কম বাইরে ঘোরাঘুরি করেছি বেশি। কিন্তু রাত হতেই বুঝলাম, কটেজে ইলেক্ট্রিসিটির ব্যবস্থা নেই! এতোবড় একটা কটেজে ইলেক্ট্রিসিটি নেই ব্যাপারটা বেশ অবাক করল আমাদের। আমরা কেয়ারটেকারকে কল দিলাম। কিন্তু তার ফোন অফ শোনালো। তাই বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে মোমবাতি এনে জ্বালালাম।

—–” তারপর!?

—–” সারা সন্ধ্যা আড্ডা দিলাম আমরা। রাত হতেই যে যার রুমে চলে গেলাম। আমি আর সোফিয়া এক রুমে এবং ওরহান আর মরিস অন্য এক রুমে। মাঝরাতে হটাৎ দরজা খোলার মতো একটা বিকট শব্দ পেয়ে ঘুম ভেঙে গেলো আমার। পাশ ফিরে দেখলাম সোফিয়া নেই। এমনকি রুমেও নেই সোফিয়া! ওদিকে শব্দটা বেড়েই চলেছে। আমি বাধ্য হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে শব্দের উৎস খুজতে লাগলাম। শব্দটা বেসমেন্ট থেকে আসছিলো। কিন্তু এতো রাতে বেসমেন্টে কে কি করছে ভাবার সময় পেলাম না। মনে হল সোফিয়া হয়তো নিচে বেসমেন্টে আছে। দ্রুত পায়ে বেসমেন্টের দিকে ছুটলাম। অন্ধকারে পেচানো সিড়ি বেয়ে নামতে গিয়ে হোচট খেলাম বার কয়েক। শেষবার হোচট খেয়ে হুড়মুড়িয়ে পড়লাম বেসমেন্টের মেঝেতে। আমার ব্যথিত আর্তনাদ প্রতিধ্বনিত হতে লাগল বেসমেন্টের দেয়ালে। তারপর!

—–” তারপর কি!?

—–” তারপর আমার আর কিছু মনে নেই! জ্ঞান হারিয়েছিলাম বোধহয়। জ্ঞান ফিরে দেখি আমি এখানে।

বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলল ফ্রেডরিক। সে ভেবেছিলো, এই মেয়েটিই পারবে তাকে সবটা বলতে। কিন্তু তার বর্ননা শুনে মনে হচ্ছে ব্যাপারটা ভৌতিক কোনোকিছু! অফিসার কিছু বলছে না দেখে নীরা বেশ আস্বস্ত হল যে, তার বানোয়াট কাহিনি লোকটার বিশ্বাস হয়েছে।

—–” আমার পরিবারকে কি খবর দেয়া হয়েছে!?

দৃষ্টি সরিয়ে নীরা’র দিকে তাকালো ফ্রেডরিক। মেয়েটাকে দেখে কেন যেন মায়া হচ্ছে খুব। মেয়েটার পরিবার এখানে নেই। ভীনদেশে এমন অবস্থায় না জানি কত কষ্ট হচ্ছে তার।

—–” না, তবে নিউজ দেখলে জানবে নিশ্চয়ই। আপনি কি তাদের সাথে কথা বলতে চান?

—–” হুম! আমার ফোনটা!?

ফ্রেডরিক কেবিন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে বলল,” আমি কাউকে দিয়ে আপনার ফোনটা পাঠিয়ে দিচ্ছি।

—–” অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে!

খুশিতে উত্তেজিত হয়ে বলল নীরা। কিন্তু লোকটা শুনতে পেলো কি না কে জানে! হনহন করে বেরিয়ে তো গেলো। নিশ্চয়ই আশানুরূপ উত্তর পায়নি বলে লোকটার মেজাজ চটে গেছে।

_________________________

ফ্রেডরিক হসপিটাল থেকে ফিরে সোজা পুলিশ স্টেশনে এসে উঠেছে। নতুন কোনো ইনফরমেশন আছে কি না জানার জন্য। লুকাস তাকে দেখেই ছুটে এলো তার অফিসে।

—–” স্যার! রেগেন্সবূর্গ থানা থেকে অফিসার নিকোলাস এর ফোন এসেছিলো।

ফ্রেডরিক চেয়ার টেনে নিয়ে বসতে বসতে বলল, ” কি বলল সে?

—–” বলল আপনি এলে যেন কল দেই। জরুরি কথা আছে।

ফ্রেডরিক ফোন নিয়ে রেগেন্সবূর্গ থানায় কল দিতে দিতে লুকাসকে রুম থেকে যেতে বলল। লুকাস চলে গেলো। কল রিসিভ কতল নিকোলাস। ফ্রেডরিক উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলল,

—–” বলুন মি. নিকোলাস!

—–” মি. ফ্রেডরিক! আপনি চলে যাওয়ার পর আমরা মিস নীরা’র বাসায় গেছিলাম। বাসায় কেউ নেই। আশেপাশের লোকজনের কাছে খোজ নিয়ে জানতে পারলাম, গত বছর প্রয়াত মিসেস মীরা মারা যাওয়ার পর থেকে তার ছোট বোন মিস নীরা সে বাসায় থাকেন। মিসেস মীরা’র একটা ছেলে আছে নাম মিলিয়ান।

—–” ছেলে!? সে কোথায়? বাসায় নেই?

—–” না, এমনকি বাসায় কেউই নেই। তাদের প্রতিবেশীদের কাছে শুনলাম, ওরহান উজুন লোকটা নাকি প্রায়ই তাদের বাসায় আসতো। সে আবার মিলিয়ানের পিয়ানো টিচার।

চমকে উঠল ফ্রেডরিক! ওরহান উজুন, যাকে পুলিশ হন্যে হয়ে খুজছে তার স্টুডেন্ট নীরা’র বোনের ছেলে! মনে হচ্ছে ধীরে ধীরে রহস্যের জট খুলছে এবার! নিকোলাস আবার বলতে লাগল,

—–” প্রতিবেশী একজন মহিলা বলল, সে নাকি কয়েকদিন আগে রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা কি বারোটার দিকে মিস নীরা আর মিলিয়ানকে একটা ট্যাক্সিতে উঠে কোথাও যেতে দেখেছে। কোথায় গেছে জানে না তবে তারপর থেকে নীরা’কে বা মিলিয়ানকে দেখতে পায়নি সে। এছাড়াও এলাকার লোকজন কয়েকদিন ধরেই তাদেরকে এলাকায় দেখেনি।

নিকোলাসের কাছ থেকে সব শুনে ফ্রেডরিক এর মেজাজ আরও খারাপ হয়ে গেলো। সে ভাবতেও পারেনি এমন কিছু হবে। নীরা তার থেকে অনেক বড় কিছু লুকিয়েছে! কিন্তু সেটা কি!? আর ছেলেটাই বা কোথায়!? তাহলে কি এসব কিছুই ওরহান আর নীরা’র সাজানো কোনো ভয়ংকর প্রি প্ল্যান ছিলো!?

কল কেটে দিল ফ্রেডরিক। ল্যাপটপ অন করে দেখল মেইল এসেছে একটা বাচ্চার ছবি ” মিলিয়ান থমসন” আর ছয়টা সিসিটিভি ফুটেজ! সব গুলো ফুটেজই ঘটনার দিন আর আগেরদিনের। ফ্রেডরিক ফুটেজ গুলো অন করল। প্রথম ফুটেজটা নীরা’র বাসার অপজিটের একটা কর্নার থেকে তোলা,

রাত ১১.০৩ মিনিটে একজন ভদ্রলোক ট্যাক্সি থেকে নেমে বাড়িটাতে প্রবেশ করল। ফুটেজ থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে এই লোকটাই ওরহান উজুন! প্রায় আধ ঘন্টা পর ১১.৩৭ মিনিট এ বাড়িটা থেকে বেরিয়ে এলো ওরহান। সে চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর ১১.৫২ মিনিট এ একটা ট্যাক্সি এসে দাড়ালো। পরপরই বেরিয়ে এলো নীরা আর মিলিয়ান। তারা ট্যাক্সিতে উঠে চলে গেলো।

দ্বিতীয় ফুটেজটা রেগেন্সবূর্গ থেকে মিউনিখ যাওয়ার হাইওয়ে থেকে তোলা,
অন্ধকার হাইওয়েতে স্পষ্ট সব দেখা না গেলেও, সেই ট্যাক্সিটা দেখা যাচ্ছে। গাড়িটা থেকে সম্ভবত ড্রাইভার বের হল। এরপর বের হল নীরা। তারপর সব ঝাপসা। ফুটেজটা কেটে গেছে।

তৃতীয় ফুটেজটায় ট্যাক্সিটা টাউনে ঢুকে অ্যাসছাইম গল্ফ পার্ক এরিয়ায় যাওয়ার সময় তোলা,
রাত ০৩.১৭ মিনিট, একটা ভিলার সামনে দাড়ালো ট্যাক্সিটা। কিন্তু এবার ড্রাইভারের বদলে ওরহান বেরিয়ে এলো ট্যাক্সি থেকে! ভিলার সামনে আরেকটা লোক দাড়িয়ে আছে। তার মুখটা অস্পষ্ট। সে ট্যাক্সি থেকে লাগেজ নিয়ে সম্ভবত ভেতরে চলে গেলো। এবার ওরহান একটা মেয়েকে পাজকোলা করে বের করল ট্যাক্সি থেকে! মেয়েটা নীরা! দেখে মনে হচ্ছে সে অজ্ঞান অবস্থায় আছে!
প্রায় দেড় ঘন্টা পর ভোর ০৪.৫৭ মিনিট এ একটা কালো প্রাইভেট কার বেরিয়ে এলো ভিলা থেকে। গাড়ি থেকে নেমে এলো ওরহান। ট্যাক্সি থেকে একটা বাচ্চা ছেলেকে পাজকোলা করে বের করে কালো গাড়িটা’তে ওঠালো। ছেলেটা নিশ্চিত মিলিয়ান!

চতুর্থ ফুটেজ এ সেই কালো গাড়িটা’কে ফেরিঙ্গাসি লেকে ঢুকতে দেখা যাচ্ছে,
ভোর ০৪.১৫ মিনিট এ গাড়িটা সেই পুরাতন কটেজের দিকে এগিয়ে গেলো। এরপর ভোর ০৬.৩৬ মিনিট এ গাড়িটা আবার বেরিয়ে এলো।

পঞ্চম ফুটেজ এ দেখা যাচ্ছে, ভোর ০৬.৪৫ মিনিট এ গল্ফ পার্কের সেই ভিলা’তে এসে দাড়ালো গাড়িটা। এরপর দুপুর ০১.৪০ মিনিট এর দিকে ওরহান আর নীরা দুজনে ভিলা থেকে বেরিয়ে সেই কালো গাড়িটা’তে উঠে বসল। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হল সেই কালো গাড়িটা চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই মরিসের গাড়িটাও একই রাস্তা দিয়ে গেলো!

শেষ ফুটেজ এ সেই গল্ফ পার্ক এ এসে ঢুকল ওরহানের গাড়ি। তার কিছুক্ষণ পরই ঢুকল মরিসের গাড়ি!

_________________[চলবে]_______________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here