Child_Of_Night Part-28

0
1102

#Child_Of_Night
Writer : Tanjima Islam
.
_________________[28]_________________
.
.
.
রাতের শেষ প্রহরের জানান দিচ্ছে দূর থেকে থেকে ভেসে আসা আযানের ধ্বনি। ফজরের ওয়াক্ত হয়েছে। পাশের মসজিদে এখনও আযান দেয়নি। ঠিক তখনই ফোনটা বেজে উঠল। ঘুম ভেঙে গেল মুহিদুল এর। পাশ ফিরে দেখল স্ত্রী নাজনীন ঘুমিয়ে আছে।

গতকাল নীরা’কে টিভিতে দেখার পর ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো সে। মুহিদুল তাকে নিয়ে সোজা হসপিটালে গেছিলো। একটু সুস্থ হওয়ার পর বিকেলের দিকে বাসায় ফিরেছে তারা। ডক্টর কাড়ি কাড়ি মেডিসিন দিয়েছে। মেডিসিন খেয়ে একটু ঘুমোচ্ছে নাজনীন। নয়তো জেগে থাকলে আবার চিন্তা করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়তো।

মুহিদুল হাত বাড়িয়ে বেড টেবিলের ওপর থেকে ফোনটা নিয়ে ফোনস্ক্রিনে তাকিয়ে দেখল, নীরা কল দিচ্ছে! সাথেসাথেই কল রিসিভ করল সে। গতকাল সে যে কতবার নীরা’কে কল দিয়েছে হিসেব নেই। মেয়েটা একা দূরদেশে না জানি কোন বিপদে আছে। রাতে তাহাজ্জুদ নামাজে মেয়ের জন্য সেজদায় পড়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়েছে মুহিদুল।

কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে নীরা’র কন্ঠঃ শোনা গেলো,” আব্বু!

—–” নীরা’মা!? তুই কোথায় আছিস? কি হয়েছে তোর?

—–” আব্বু শান্ত হও! আমি ঠিক আছি!

—–” শান্ত হবো মানে! এতবড় একটা দূর্ঘটনা ঘটে গেলো! আর তুই বলছিস শান্ত হতে!?

চাপা স্বরে চেচিয়ে উঠলো মুহিদুল। নীরা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ” সবকিছু এতো দ্রুত ঘটেছে যে, আমি নিজেই কিছু বুঝে উঠতে পারিনি আব্বু। শুধু জানি, আমি বেচে আছি! সুস্থ আছি আল্লাহর রহমতে।

কান্না চেপে নিজেকে সামলে নিল মুহিদুল। মুহুর্তের জন্য মনে হয়েছিলো, মেয়েকে বুঝি সে চিরতরে হারিয়েই ফেলল। নীরা’র মামাকে জানিয়ে সে তো জার্মানি যাওয়ার জন্য ফ্লাইটের ইমারজেন্সি টিকিট কাটতে বলেছে। মনের মধ্যে অজানা ভয় ছেয়ে গেছিলো তার।

—–” আব্বু! দুশ্চিন্তা করোনা, আমি খুব শীঘ্রই ফিরে আসবো। আম্মুকে আর নিজেকে দেখে রেখো!

কল কেটে দিল নীরা। বাবা-র সাথে কথা বলে বেশ হালকা লাগছে তার। এখন এদিকের ঝামেলা মিটলে হয়। একের পর এক দূর্বিষহ ঘটনার মাঝে সে হাপিয়ে উঠেছে। বিশ্রাম দরকার! শারীরিক, মানসিক বিশ্রামের খুব দরকার। নয়তো সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলবে যেকোনো মুহুর্তে।

একদৃষ্টিতে জানালার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হটাৎ ভ্রু কোচকালো নীরা। ফোন রেখে বেড থেকে নেমে এলো সে। ধীর পায়ে জানালার ধারে এগিয়ে এসে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল জানালার ধার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা ওক গাছের একটা ডালে। কি যেন একটা ঝুলছে! পায়ের দিকটা ডালে আর মাথার দিকটা নিচের দিকে! অন্ধকারেও সেটার চোখ জোড়া চুনি পাথরের ন্যায় জ্বলজ্বল করছে! কি ওটা!?

দরজা খোলার শব্দ পেয়ে চমকে পেছনে ফিরল নীরা। কোত্থেকে অফিসার ফ্রেডরিক একরকম হন্তদন্ত হয়ে এসে ঢুকেছে! তার পিছু পিছু একজন নার্স ছুটে এলো ভেতরে। ফ্রেডরিক এর চোখেমুখে স্পষ্ট উত্তেজনা দেখতে পাচ্ছে নীরা। কিন্তু কি হয়েছে কিছুই সে বুঝতে পারছেনা। ফ্রেডরিক একটা ছবি নীরা’র দিকে ছুড়ে মারল।

হাওয়ায় ভেসে ছবিটা উড়ে এসে পড়ল নীরা’র পায়ের সামনে ফ্লোরে। নীরা অবাক হয়ে ছবিটার দিকে তাকাতেই, তার চোখ জোড়া বিস্ময়ে বড়বড় হয়ে গেলো! তার মুখ দিয়ে অস্ফুটস্বরে বেরিয়ে এলো,

—–” ম’মি’লিয়ান!

ফ্রেডরিক একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে নীরা’র দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলল, ” কি ব্যাপার মিস নীরা!? চিনতে পারছেন না বাচ্চাটাকে?

চোখ বন্ধ করল নীরা! সে ফেসে গেছে! নিরপরাধ হয়েও সে এখন অপরাধী! সে ভুলেই গেছিলো পুলিশ তদন্ত করতে অবশ্যই রেগেন্সবূর্গ যাবে। আর সেখানে গেলে তো সবাই জেনে যাবে যে, নীরা মিলিয়ানের সাথে থাকতো। এখন যদি পুলিশ জিজ্ঞেস করে মিলিয়ান কোথায়, কি জবাব দেবে সে? যাকে না চাইতেও সে নিজে হাতে খুন করেছে!

এটাই হওয়ার বাকি ছিলো! শেষমেশ তাকে জেলে যেতে হবে! কি শাস্তি দেবে তাকে!? মৃত্যুদন্ড তো বাইরের দেশে দেয়না। নিশ্চয়ই আজীবন কারাদণ্ড দেবে! কেন বেচে আছে সে!? মিলিয়ান তাকেও কেন মেরে ফেলল না! তাহলে আজ এই দিন দেখতে হত না! মুহুর্তের জন্য বাবা-মায়ের মুখটা ভেসে উঠল নীরা’র চোখের সামনে! দুচোখ বেয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়ল তার। বিড়বিড়িয়ে বলে উঠল,

—–” আমাকে মাফ করে দিও আব্বু! আমিও আপুর মতো আর কোনোদিন তোমাদের কাছে ফিরতে পারবোনা! আম্মু! তোমার নীরা বড্ড অবাধ্য বুঝলে! অবাধ্যতার কারণে আজ আমার এই পরিণতি!

ধপ করে কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দে চমকে চোখ মেলে তাকালো নীরা। ফ্রেডরিক অচেতন অবস্থায় লুটিয়ে পড়েছে ফ্লোরে! কি হয়েছে তার!? নার্সের দিকে তাকিয়ে দেখল, হাতে একটা ইনজেকশনের সিরিঞ্জ নিয়ে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে সে!

—–” কি হয়েছে ওনার? আপনি কি করেছেন?

নার্সটা ইনজেকশনের সিরিঞ্জ হাতের মুঠোয় চেপে ধরতেই সেটা ধোয়ার মতো হয়ে হাওয়ায় মিশে গেলো! আরেক দফা চমকে উঠল নীরা। নার্স এবার কেবিনের দরজা লক করে বলল,

—–” পারদ পুশ করেছি, মরে গেছে!

হতবাক হয়ে গেলো নীরা। এসব কি হচ্ছে তার সাথে!? এখন কি এই পুলিশের মৃত্যুর জন্যও তাকে দায়ী করা হবে!? হতেও পারে! এ আর অস্বাভাবিক কি!? তাকে শেষ করে দেওয়ার সম্পূর্ণ চেষ্টা চলছে। নীরা’কে এবার ক্রস ফায়ারে দিলেও সে অবাক হবে না।

পরক্ষণেই তাকে আরও অবাক করে নার্সটা ট্রাউজার্স এর পকেট থেকে একটা বস্তা বের করে ফ্রেডরিক এর লাশ ঢোকাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। নীরা কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা। এসব কি আদৌ সত্যি! নাকি সে স্বপ্ন দেখছে!?

বস্তায় ভরে বস্তার মুখটা রশি দিয়ে বেশ শক্ত করে বাধল মেয়েটা। নীরা নির্বাক দর্শকের মতো শুধু দেখে যাচ্ছে। মেয়েটা নীরা’র দিকে একবার তাকিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো। সাথেসাথেই ধুপ করে ফ্লোরে বসে পড়ল নীরা। তার বুকের ভেতরটা ধ্বক ধ্বক করছে। পাগল মনে হচ্ছে নিজেকে। এতো এতো মৃত্যু সে যেন আর সহ্য করতে পারছেনা। না চাইতেও তাকেই অপরাধী সাব্যস্ত হতে হবে!

কিছুক্ষণ পর নার্স মেয়েটা একটা ফুড ট্রলি নিয়ে ভেতরে ঢুকল। রোগীদের খাবারের ট্রলি! বস্তাটা ট্রলির ভেতর ঢুকিয়ে ওপরের কাগজটা ঠিক করে দিল। এখন আর দেখা যাচ্ছেনা বস্তাটা। মেয়েটা কি লাশ গুম করার পরিকল্পনা করছে? কিন্তু কেন? কি তার উদ্দেশ্য!?

মেয়েটা খুব স্বাভাবিকভাবেই ট্রলি নিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো। যেন কিছুই হয়নি! নীরা কতক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে থাকল হিসেব নেই। একপর্যায়ে বসে থাকতে থাকতে অনুভব করল ঘাড় পিঠ ভীষণ ব্যথা করছে। ওঠা দরকার। উঠে বেডে গিয়ে শুতে হবে। শরীর আর চলছেনা। ক্লান্তিতে ভেঙে আসছে পুরো শরীর।

নীরা হাত উঁচিয়ে জানালার গ্রিল ধরে উঠে দাড়ালো। একটু এগোলেই বেড। এলোমেলো পা ফেলে এগিয়ে গেলো নীরা। বেডের পাশে গিয়ে উলটে পড়ল। সাথেসাথেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো সে।
.
_________________________
.
.
.
নীরা’র ঘুম ভাংলো নার্সের ডাকে। সে চোখ মেলে তাকালো। মেয়েটা তার মেডিসিন এর বক্স থেকে খাওয়ার আগের মেডিসিন বের করছে। গত রাতের ঘটনা মনে পড়ল তার। অফিসার ফ্রেডরিক! সাথেসাথেই সে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসল। মেয়েটা কিছুটা অবাক হয়ে বলল,

—–” আস্তে!

নীরা এবার মেয়েটার দিকে তাকালো। এই মেয়েটাই কি গত রাতে ফ্রেডরিককে খুন করেছে? নাকি এটা অন্য কেউ!? মেয়েটাকে অনেক্ক্ষণ ধরে দেখেও ঠিক মনে করতে পারলো না সে। একবার মনে হচ্ছে এই মেয়েটাই, আবার মনে হচ্ছে না এই মেয়ে না।

—–” যান ফ্রেশ হয়ে আসুন। আপনার বেড গোছাবো।

নীরা একবার উঁকি মারল ফ্লোরের দিকে। ওখানেই গত রাতে মরে পড়েছিলো পুলিশ অফিসারটা। অন্যপাশে উঁকি দিয়ে দেখল মিলিয়ানের ছবিটা নেই। কিন্তু সে তো ছবিটা সরায়নি! তাহলে কি সে স্বপ্ন দেখেছে!? কিন্তু স্বপ্ন কি এতটা বাস্তব মনে হয়!?

বেড থেকে নেমে ওয়াশরুমে এসে ঢুকল নীরা। বেসিনের ট্যাপ ছেড়ে জোরেজোরে মুখে পানির ঝাপটা দিতে লাগল। শরীরটা ম্যাজম্যাজ করছে খুব। গোসল করা দরকার। উষ্কখুষ্ক চুল আর তেলচটচটে চেহারায় একেবারে পাগলের মতো দেখাচ্ছে তাকে।

নিজ মনেই হেসে ফেলল নীরা। কি থেকে কি ঘটে গেলো তার জীবনে। এখন তো কোনটা বাস্তব কোনটা অবাস্তব সেটাই বুঝে উঠতে পারেনা সে। শেষ কবে আয়নায় নিজেকে দেখেছিলো তাও মনে পড়ছেনা। তারিখ কত আজ? শীত কি চলে গেছে? তাহলে তো এখন বসন্তকাল!

ওয়াশরুমের দরজায় নক করার শব্দে ভাবনায় ছেদ পড়ল নীরার। নিশ্চয়ই নার্স মেয়েটা। সে দ্রুত ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো। মেডিসিন খেয়ে বলল,

—–” আজ ডক্টর আমাকে দেখতে আসবেন কখন?

মেয়েটা ব্রেকফাস্ট ট্রে বেডের ওপর সাজিয়ে বলল,” আজ বিকালে আপনাকে রিলিজ দিয়ে দেবে, তখন।

রিলিজ পাওয়ার কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে গেলো নীরা। গত রাতে যা ঘটে গেলো তা কি কেউ জানতে পারেনি? অফিসার তো মিলিয়ানের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করতে এসেছিলো। সে কিছু বলার আগেই!

—–” ব্রেকফাস্ট শেষ করে মেডিসিন গুলো খেয়ে নিবেন। আমি দুপুরে এসে আপনার মেডিসিন প্রেসক্রিপশনসহ বুঝিয়ে দেবো।

—–” আচ্ছা।

মেয়েটা চলে গেলো। নীরা শুধু অবাক হয়ে চলেছে। জীবনটাকে নাটকের চেয়েও নাটকীয় মনে হচ্ছে তার। আর সে একজন সাধারণ দর্শক মাত্র।

নীরা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেডে বসে পড়ল। আজ ব্রেকফাস্ট এ সবজি স্যুপ, অমলেট আর আপেলের জ্যুস। খাওয়ার আগে অনলাইনে এক সেট ড্রেস অর্ডার করল। আজ বিকালে তাকে রিলিজ দেবে। এখান থেকে পরে যাওয়ার জন্যও তো সাথে কিছু নেই। কেউ তাকে দেখতেও আসেনি। অবশ্য কেই-বা আসবে। এখানে তার আপন যারা ছিলো, তারা তো কেউ-ই নেই।

ড্রেস অর্ডার করে সে খেতে লাগল। অমলেটটা খেতে ইচ্ছে করছিলোনা, তাও খেয়েছে। শরীর বড্ড দূর্বল। খেতে ভালো না লাগলেও খেতে হবে। স্যুপটা খেয়ে বেশ ভালো লেগেছে তার। খাওয়া শেষে আপেল জ্যুস খেতে খেতে পাশ থেকে নিউজ পেপারটা নিয়ে পাতা ওল্টাতে লাগল নীরা।

প্রথম পাতা জুড়ে শুধু পলিটিক্স নিয়ে লেখা। পরের পাতা জার্মান অভিনেতা, অভিনেত্রী, মডেলদের চাকচিক্যময় ছবি দিয়ে ভরপুর। পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে এক পাতায় গিয়ে থেমে গেলো নীরা’র হাত। খামছে ধরল পেপার। পাশাপাশি দুটো ছবি দেওয়া, একপাশে খোড়া কবর যার ফলকে লেখা ” সারলোট পল”! অন্যপাশের ছবিতে এক বিশপের রক্তশূণ্য মরদেহ! বড়বড় করে লেখা,” রেগেন্সবূর্গ সমাধি থেকে লাশ চুরি! মৃতের বাবা রবার্ট পল এর অভিযোগ, লাশ চুরি করেছে রেগেন্সবূর্গ গীর্জার বিশপ! ডাকাউ শহর থেকে দূরে জনবসতিহীন নির্জন এলাকার এক পরিত্যক্ত বাড়িতে মিলেছে সেই বিশপের রক্তশূণ্য মরদেহ!

নীরা বাকিটা আর পড়তে পারলো না। হাত থেকে পেপার পড়ে গেলো। সারলোট মারা গেছে!? কিন্তু কিভাবে!? ভাবার সময় পেলোনা নীরা। তারমধ্যেই ফোনের রিংটোন বেজে উঠল। সম্বিৎ ফিরে ফোন হাতে নিয়ে রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলে উঠল,

—–” গুড মর্নিং ম্যাম! আপনার অর্ডার করা পার্সেল এনেছি। আমি এখন সেন্ট্রাল হসপিটালের সামনে।

—–” আপনি একটু ওয়েট করুন আমি এক্ষুনি আসছি।
.
_______________________
.
.
.
ঘড়িতে বিকেল চারটা দশ বাজে। ড্রেস পরে বেডে বসে আছে নীরা। গোসল করে শরীরটা বেশ ঝরঝরা লাগছে। চুল গুলো এখনও শুকায়নি। আধ ভেজা চুল এলিয়ে আছে তার পিঠ জুড়ে। হাতে ফোন নিয়ে বারবার টাইম দেখছে সে। পুলিশের ব্যাপারটা এখনও জানতে পারেনি। বাইরে কি ঘটছে কে জানে। পরিস্থিতি এতোটা স্বাভাবিক কিভাবে!?

দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল ডক্টর জোনাস। নীরা বেড থেকে নেমে স্মিত হেসে বলল, ” গুড আফটারনুন ডক্টর।

—–” গুড আফটারনুন মিস নীরা। তো, মেডিসিন সব বুঝিয়ে দিয়েছে সিস্টার!?

—–” হুম।

—–” খুব দ্রুতই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবেন আশা করি।

নীরা কিছু বলল না। সে কিছু একটা জানতে চাচ্ছে। কিন্তু সেটা কি ডক্টরকে জিজ্ঞেস করা ঠিক হবে!? নীরা খেয়াল করল ডক্টর এর মুখটাও কেমন যেন অন্ধকার দেখাচ্ছে! মনে হচ্ছে খুব খারাপ কিছু ঘটেছে তার সাথে।

—–” বলছি যে, কেসটার কি হল?

নীরা’র প্রশ্নে সচকিত হয়ে তাকালো জোনাস। পরক্ষণেই স্মিত হেসে বলল,” আপনি তো কাল বয়ান দিয়েছেনই। সেই অনুযায়ী কটেজটাকে পবিত্র করার জন্য মিউনিখের বেশ নামকরা বিশপদের ডাকা হয়েছে। পুলিশ ধারণা করছে, কটেজটাতে হয়তো শয়তানের উপাসনা করা হত।

—–” হুম, শয়তান!

বিড়বিড়িয়ে বলে উঠল নীরা। ডক্টর একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, ” যাইহোক, আপনি এখন যেতে পারেন। আর মেডিসিন গুলো সময়মত খাবেন।

—–” ডক্টর! তাহলে কি কেসটা এখানেই শেষ!?

নীরা’র এমন প্রশ্নে কিছুটা অবাক হলেও জোনাস তা প্রকাশ না করে বলল,” হুম, সেরকমই।

—–” আর, অফিসার ফ্রেডরিক কি রেগেন্সবূর্গেও তদন্তের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন?

ফ্রেডরিক এর নাম শুনতেই গাড় অন্ধকার নেমে এলো জোনাসের চোখেমুখে। সে একটা শুকনো ঢোক গিলে বলল,” গত রাতে ওনার এক্সিডেন্ট হয়েছে!

একটু থেমে আবার বলল, ” স্পট ডেড!

চমকে উঠল নীরা। তার মানে ফ্রেডরিক সত্যিই মরে গেছে!? নীরা কিছু বলার আগেই ডক্টর আবার বলে উঠল, ” ওনার গাড়িটা ব্রেকফেল করে হাইওয়ে থেকে নিচে খাদে পড়ে গেছিলো। আর সেখানেই বার্স্ট হয়ে!

বলতে বলতে থেমে গেলো জোনাস। মনে হচ্ছে সে বেশ শক খেয়েছে ব্যাপারটাতে। চোখের সামনে সুস্থ সবল মানুষকে ঘুরতে দেখে পরে যদি শোনে সে হুট করে মরে গেছে, সেটা কি মেনে নেওয়া যায়!?

—–” উনি হাইওয়েতে ড্রাইভ করে অত রাতে কোথায় যাচ্ছিলেন?

—–” সম্ভবত রেগেন্সবূর্গ। কারণ তার গাড়িটা মিউনিখ থেকে রেগেন্সবূর্গ যাওয়ার পথে হাইওয়েতে এক্সিডেন্ট হয়েছে।

হটাৎ কি মনে করে ডক্টর আবার বলে উঠল, ” আরও আশ্চর্যজনক ব্যাপার হল, আজ ভোরে রেগেন্সবূর্গ এর দুই পুলিশ কর্মকর্তার লাশ ভাসমান অবস্থায় পাওয়া গেছে দানিয়ুব নদীতে!

—–” পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ দেখেনি? তারা কিভাবে নদীতে ডুবে মরল?

খানিকটা উত্তেজিত হয়ে জানতে চাইলো নীরা। জোনাস ব্যাপারটা আমলে না নিয়ে বলল,” চেক করেছে। কিন্তু গত এক সপ্তাহের সব ফুটেজ কিভাবে যেন ডিলেট হয়ে গেছে!

এরমধ্যেই এক নার্স এসে দাড়ালো দরজায়। নীরা আর জোনাস সেদিকে তাকাতেই মেয়েটা বলে উঠল, ” স্যার! আপনার রোগী দেখার সময় হয়ে গেছে। চেম্বারে চলুন।

—–” মিস নীরা! আমাকে যেতে হবে। হ্যাভ এ গুড ডে!

বেরিয়ে গেলো ডক্টর। নীরা সেদিকে তাকিয়ে স্মিত হাসল। মনে হচ্ছে সে কিছু একটা আচ করতে পেরেছে। নীরা মাথা দুলিয়ে বলে উঠল,

—–“কোথায় তুমি ওরহান!?
.
.
.
________________[চলবে]_________________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here