Ragging To Loving 2পর্ব-২১

0
2310

#Ragging_To_Loving__2
#পর্বঃ- ২১
#রিধিরা_নূর

সিমা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাতেই ওয়াসিম শুকনো ঢোক গিলে চোখ ফিরিয়ে নিল। ওয়াসিমের ভঙ্গিমা দেখে সিমার ভীষণ হাসি পাচ্ছে। তবুও হাসি দমিয়ে মুখে রাগান্বিত ভাব বজায় রাখল।

নূর পিছন ফিরে দেখে ছেলেরা সারিবদ্ধ হয়ে নাক সিটকানি ভাব নিয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে। আফরান এমন ভাব ধরেছে যেন এক্ষুণি বমি করে দিবে। সবার সামনে নূর বেশ লজ্জিত হলো। সে আর যাই হোক বান্ধবীদের সাথে সে অনেকটা ঘনিষ্ঠ। কিন্তু ছেলেদের কাছে এভাবে নিজের এমন প্রতিরূপ প্রকাশিত হওয়ায় বেশ লজ্জায় পড়ল।

তুফানের গতিতে পুষ্প দৌড়ে এলো।

পুষ্প — তোরা এখনো দাঁড়িয়ে আছিস এখানে। একটু পরেই নিহাল স্যারের ক্লাস। ভুলে গিয়েছিস আজ স্যার আমাদের এসাইনমেন্ট দিবে বলেছিল।

নূর — ওহ্ হ্যাঁ। ভুলেই গিয়েছিলাম। চল তাড়াতাড়ি। (যেতে নিলেই আবার থেমে যায়। চিন্তিত হয়ে পার্লির দিকে তাকাল।) দুঃখিত। আজ আমার মনেই ছিল এসাইনমেন্টের কথা। আমাদের এখন ক্লাসে যেতে হবে। কিন্তু তোমাকে একা রেখে কীভাবে যাব?

পার্লি — আর চিন্তার কি আছে। রিহান আছে তো। তোমার ভা…. (ভাই বলার পূর্বেই নূর চেচিয়ে উঠল)

নূর — বন্ধু। বন্ধু। আমার বন্ধু রিহান। (এই রে পার্লিকে তো বলতেই ভুলে গিয়েছি। আমার আর রিহানের সিক্রেটের কথা।)

পার্লি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কিছু বলার পূর্বেই নূর তাকে টেনে একপাশে নিয়ে গেল। সবাই সন্দেহজনক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রিহান ভয়ার্ত চোখে সবার চেহারা দেখছে। নূরের তৈরি এই বাঁশের স্বাদ তারই না গ্রহণ করতে হয়। নূর জোর পূর্বক হেসে সবার দিকে তাকাল।

নূর — আরে আমাদের মধ্যকার কিছু কথা। পুষ্প। তোরা ক্লাসে যা আমি এক্ষুণি আসছি। আমরিন কোথায়?

পুষ্প — আমরিন ক্লাসেই আছে। আমরা যাচ্ছি তুই তাড়াতাড়ি আয়।

পুষ্প বাকিদের নিয়ে চলে গেল। পার্লি এক নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে। নূর ফিসফিস করে পার্লির কানে কানে বলল,

নূর — এখানে কেউ জানে না রিহান আমার ভাই। এর মাঝে অনেক বড় ঘাবলা আছে। এখন শিরোনাম শোন। বিস্তারিত পরে জানাব। শুধু এরা যা বলে তাই শুনবে। তারা হ্যাঁ বললে হ্যাঁ। না বললে না। আমি পরে সব সামলে নিব। ওকে? (পার্লি মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বলল) রিহান আমি ক্লাসে যাচ্ছি। তোরা…তোমরা পার্লির সাথে থেকো।

আহিল — আমরা যেহেতু সবাই ফ্রেন্ডস সে হিসেবে তোমার ফ্রেন্ডও আমাদের ফ্রেন্ড। (আচমকা আহিল হাজির হয়ে কথাগুলো বলল।)

নূর চলে গেল। পার্লির ঘোর এখনো কাটেনি। আহিল আগ বাড়িয়ে পরিচয় দিল। পার্লি কুশল বিনিময় করল কিন্তু নিজের পরিচয় দিল না। কারণ নূর যে বলল ঘাবলা আছে। তাই খুব বেশি কিছু বলল না। আফরান সরু দৃষ্টিতে রিহানের দিকে তাকিয়ে আছে। কেন রিহান আনন্দিতাকে (পার্লিকে) পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে না? কেন অপরিচিতদের মতো হয়ে আছে? রিহান পাশে তাকাতেই আফরানের উপর চোখ পড়ল। রিহানের মাথা এখনো বিষয়টা ঢুকলো না। সে শুধু ভাবছে আফরান এভাবে তাকিয়ে আছে কেন? সেদিন তন্বীর কথা রিহান খেয়াল করল না। তাই সে আফরানের বিভ্রান্তি সম্পর্কে জানে না।

রিহান — আমাদের এখন ক্লাস নেই। তাহলে চল আমার আশ্রয়কেন্দ্রে। (হেসে বলল)

তারা গেল মিউজিক হলে। গিটার দেখা মাত্রই পার্লি উৎসুক হয়ে দেখতে লাগলো। তার শখ গিটার বাজানোর। কিন্তু কখনো সেই সুযোগ হয়ে উঠেনি। সে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলো কীভাবে বাজাতে হয়। সচরাচর আফরান তার গিটার বন্ধুদের ছাড়া কাউকে ছুঁতে দেয় না। কিন্তু পার্লি আচমকা এসে এভাবে দেখছে কিছু বলতেএ পারছে না। কেন যেন বিষয়টি তার ভালো লাগলো না।

এখনো মনে আছে তার। অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত কালে শিক্ষা সফরে গিয়েছিল। সেখানে একটি খেলার মধ্যে সে প্রথম গান গেয়েছিল লোকালয়ে। সবাই বেশ পছন্দ করেছে তার গান। একজন যুবক ছেলে এসে আফরানের পাশে দাঁড়ায়। সে একজন কণ্ঠশিল্পী। ছেলেটি জানালো আফরানের মাঝে সে তার শৈশবের রূপ দেখতে পেয়েছে। আফরানের কন্ঠস্বরে মুগ্ধ হয়ে তার গিটার আফরানকে উপহার স্বরূপ প্রদান করে। আনন্দে ভরা বিস্মিত নয়নে বেশ অনেক্ষণ তাকিয়ে ছিল। সেই থেকে শুরু হয় তার সংগীত যাত্রা। আজ অবধি সে গিটারটা যত্নসহকারে রেখেছে। অনেক আবেগ, স্মৃতি জুড়ে আছে এই গিটারের সাথে। অতীতের মধুময় স্মৃতি স্মরণ করতেই মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল।

পার্লির কথায় আফরানের ধ্যান ভাঙল।

পার্লি — গিটারটা কার?

ইয়াশ — আফরানের।

পার্লি — ক্যান আই প্লে ইট? (অনুরোধ করে)

আফরান — শিওর। (আচ্ছা ওর কি আমাকে মনে নেই?)

আফরান পার্লিকে বুঝিয়ে দিল কীভাবে বাজাতে হয়। পার্লি বেশ উৎসুক হয়ে অনেক্ষণ বাজালো। এমন বাজান বাজালো সেখানে ঠিকে থাকার সাধ্য কারো নেই। আফরানকে ফাসিয়ে বাকিরা পা টিপে টিপে বেরিয়ে গেল। আফরান দেখেও কিছু বলতে পারছে। মনে মনে ইচ্ছেমতো ধুয়ে দিল। বেশ কিছুক্ষণ পর পার্লি শান্ত হলো।

পার্লি — ওয়াও। অবশেষে আমার ইচ্ছা পূরণ হলো। থ্যাংকস।

আফরান — ওয়েলকাম। (জোর পূর্বক হেসে)

পার্লি — বাকিরা কোথায়?

আফরান — ওরা? বাইরে গিয়েছে।

আফরান দ্বিধায় ভুগছে। ভাবছে সে আনন্দিতার সাথে কথার আগ বাড়াবে? নাকি না? পার্লি বেশিক্ষণ চুপচাপ থাকতে পারে না। তাই সেই কথা শুরু করল। অপরিচিত একজন মানুষ। তাই কোন বর্ষে অধ্যায়ন করছে, কোন বিষয় নিয়ে, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি এই সব জিজ্ঞেস করল। আফরান প্রতিউত্তর দিল। পাল্টা প্রশ্ন করল না। মনের গহীনে দ্বিধাবোধ রয়েই গিয়েছে। কিন্তু কৌতূহল উদ্রেক দমন করতে পারল না।

আফরান — আচ্ছা তোমার মনে আছে আমরা একসাথে প্রাইমারি স্কুলে পড়তাম।

পার্লি — (প্রাইমারি স্কুল? আমি দুই বছর বয়সেই সিঙ্গাপুর শিফট হয়ে গিয়েছিলাম। দুই বছর বয়সে কেউ প্রাইমারি স্কুলে পড়ে নাকি? ওহ্! এবার বুঝলাম। ফ্লার্ট করা হচ্ছে আমার সাথে। নিশ্চয় রিহান বলেছে ছোট বেলায় আমি দেশের বাইরে চলে গিয়েছিলাম। তাই ছোট বেলার স্মৃতি নিয়েই ফ্লার্টিং করা হচ্ছে। একে তো ভালো মনে করেছিলাম। কিন্তু ইনার ফ্লার্টিং তো অন্য লেভেলের। দেখি এই ফ্লার্ট কোন পর্যায়ে যায়। একটু মজা নেওয়া যাক। হিহিহি।) হ্যাঁ! হ্যাঁ! মনে আছে। প্রাইমারি স্কুল। আমরা একসাথে পড়তাম। তুমি, আমি। মনে আছে।

আফরান — আর রিহানও। (হেসে বলল। যাক মনে আছে তাহলে। আমি তো ভেবে ছিলাম মনে নেই।)

পার্লি — তারপর কি হয়েছিল মনে আছে? (মজা করে)

আফরান — অবশ্যই মনে আছে। প্রত্যেকটা কথা মনে আছে। রিহান আর আমার উপর কি অত্যাচার না করেছ।

পার্লি — (বাহ্! গল্প বানানোর লেভেল দেখি অনেক হাই।) তারপর?

আফরান — তারপর? রিহানকে আমার সাথে দেখলেই জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যেতে। রিহান আমার কাছে এলেই তাকে কি মার না দিতে।

পার্লির কপালে চিন্তার ভাজ পড়ল। এসবের মাঝে রিহান কেন আসছে? রিহান তো নূরের ভাই। বিষয়টা দেখতে হচ্ছে?

পার্লি — কেন মারতাম জানো? (চালাকি করে পাল্টা প্রশ্ন করল। যাতে আফরান সন্দেহ না করে।)

আফরান — হ্যাঁ জানি। কারণ রিহান তোমার ভাই। স্কুলে এলেই সে তোমাকে ছেড়ে আমার কাছে ছুটে আসতো। এবং তা দেখে তুমি রেগে রিহানকে খেলানি দিতে।

পার্লির মাথা ঘুরছে। কি থেকে কি হচ্ছে? আফরান পার্লিকে রিহানের বোন ভাবছে কেন? তখনই মনে পড়ল নূরের বলা কথাগুলো। “এখানে কেউ জানে না রিহান আমার ভাই। এর মাঝে অনেক বড় ঘাবলা আছে। শুধু এরা যা বলে তাই শুনবে। তারা হ্যাঁ বললে হ্যাঁ। না বললে না। আমি পরে সব সামলে নিব।” এই ভেবে পার্লি চুপ হয়ে গেল। কিন্তু কাহিনী গুলো শুনে তার বেশ হাসি পাচ্ছে। নূরের কাহিনী গুলো বেশ মজাদার।

পার্লি — আর কি কি কাহিনী মনে আছে তোমার? (উৎসুক হয়ে)

আফরান — তোমার মনে আছে আমরা একটি নাটকে অংশগ্রহণ করেছিলাম।

আফরান সেই কাহিনী বলল। পার্লির হাসতে হাসতে অবস্থা খারাপ।

পার্লি — এতো হাসি আমি আর কখনো হাসি নি। হাসতে হাসতে আমার পেট ব্যাথা হয়ে গিয়েছে।

আফরান — কি নিষ্ঠুর তুমি। আমাকে মেরে হাসছ। আনন্দিতা।

পার্লি — আনন্দিতা না। আমার নাম পার্লি। (বলে জিবে কামড় দিল। এই রে মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল। নূর বারণ করেছিল কিছু বলতে।)

আফরান — পার্লি? (অবাক হয়ে) আসলে আমার নাম মনে নেই। শুধু মার খেয়ে আনন্দিতা নামটি মনে ছিল। (মাথা নিচু করে হাসছে)

পার্লি মুচকি হেসে আফরানের দিকে তাকাল। আফরান আদৌও খারাপ না। সে ফ্লার্ট করছিল না। বরং কনফিউশনের কারণে গুলিয়ে ফেলেছিল।

পার্লি — এরপর কি হলো? (হেসে)

আফরান কিছু বলার পূর্বের ধুম ধড়াম করে ভেতরে প্রবেশ করল পান্না। ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পার্লির দিকে।

পান্না — কে তুমি? আফরানের কি এতো কথা বলছ হেসে হেসে। লিসেন। স্টে এওয়ে ফ্রম হিম। হিজ ইজ মাই বয়ফ্রেন্ড। ওর সাথে চিপকা চিপকি করার চেষ্টাও করবে না। (পার্লির দিকে আঙুল তাক করে।)

আফরান — পান্না কি বলছ এসব?

পান্না — বেবি। তুমি জানো না এসব মেয়েদের। ছেলেদের দেখলেই গায়ে পড়া শুরু করে দেয়।

পার্লি — শাট আপ। কে তুমি আমাকে বিচার করার। তুমি দেখেছ আমাকে চিপকা চিপকি করতে? কোথায় আফরান বসা আর কোথায় আমি। আমরা শুধু কথা বলছিলাম।

পান্না — হেসে হেসে কি এমন বলছ শুনি।

পার্লি — এক্সকিউজ মি! কে তুমি? তোমাকে কোন ধরনের কৈফিয়ত দিতে আমি বাধ্য নয়।

পান্না — অবশ্যই বাধ্য। কারণ তুমি আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছ। তোমার মতো মিডল ক্লাস ফ্যামিলির মেয়ে কেমন তা জানা আছে আমার।

পার্লি এতক্ষণ শান্ত হয়ে কথা বললেও পান্নার অহংকার দেখে নিজের রাগ দমিয়ে রাখতে পারলো না।

পার্লি — মিডল ক্লাস? আমার ক্লাস সম্পর্কে তুমি জানো কি? আমার যেই অবস্থান সেই অবস্থানে তোমার ক্লাসের দশটা মেয়ে এক সেকেন্ডেই কিনতে পারব। আমার ঘরের সার্ভেন্টের ক্লাস তোমার থেকেও হাই। আর তুমি এসেছ আমার ক্লাস নিয়ে প্রশ্ন করতে। (পার্লি বেশ শান্ত গলায় পান্নাকে অশান্তভাবে অপমান করল।)

পান্না — ইউ….

পান্না রেগে আঙুল তুলে পার্লির দিকে। পার্লি শান্ত ভাবেই পান্নার আঙুল মচকে দিল। ব্যাথায় পান্না কুঁকড়ে উঠল। পার্লি তাচ্ছিল্য হাসি দিল।

পার্লি — শুধু শুধু আমার সাথে লাগতে এসো না। তোমার মতো হাজার দশেক মেয়েদের আমি অনেক হ্যান্ডেল করেছি। হ্যাশট্যাগ সো কলড গার্লফ্রেন্ড। আফরান তোমার বয়ফ্রেন্ড। তোমার নিজস্ব সম্পত্তি নয় যে তার উপর অনলি মাইন ট্যাগ লাগিয়ে দিবে। ভালবাসলে ভালবাসা আগলে রাখতে শিখ। বেঁধে রাখতে নয়। জোর করে বেঁধে রাখলে হয় সে এক সময় দম আটকে মারা যাবে। নাহয় মরার হাত থেকে বাঁচার জন্য সব ভেঙে উড়ে যাবে। (পান্নার আঙুল ছেড়ে দিল। পান্নার চোখ টলমল করছে ব্যাথায়। হাত ঝাড়তে ঝাড়তে হনহনিয়ে চলে গেল।)

আফরান হাত মুষ্টি বদ্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে। রাগে তার সারা শরীর কাঁপছে। চোখ দুটো রক্তিম বর্ণ ধারণ করে আছে। পার্লি আড়চোখে তাকাল আফরানের দিকে। ভাবছে আফরান এবং মেয়েটির সম্পর্ক কেমন যেন ঘোলাটে। না মেয়েটির মাঝে ভালবাসা দেখতে পেল। না আফরানের মাঝে।

পার্লি — কথাগুলো শুধু মেয়েটির জন্য নয়। তোমার জন্যও প্রযোজ্য। জোর পূর্বক সম্পর্কে ভালবাসা হয় না। শুধু অসংগতি থাকে। শুধু দম আটকে মারা যাবে। তাই মারা যাওয়ার পূর্বেই শিকল ভেঙে বেরিয়ে আসা উচিৎ।

আফরান অবাক হয়ে তাকাল। পার্লি মৃদু হাসলো।

পার্লি — অবাক হওয়ার কিছু নেই। ভালবাসা এমন এক জিনিস যা লুকানো যায় না। হাজারো চেষ্টা করলেও চোখে তা প্রকাশ পায়। যখন ভালবাসার মানুষটি সামনে আসে এক অদ্ভুত অনুভূতি হয়। সে অনুভূতি নিজে অনুভব না করলেও আশেপাশের লোকজন ঠিকই তা মাঝে সেই ভালবাসা দেখতে পাই।

পরিস্থিতি গুরুগম্ভীর দেখে পার্লি স্বাভাবিক করার জন্য বলল,

পার্লি — অনেক তো কথা বললাম। ফ্রেন্ডস? (হাত বাড়িয়ে)

বিষয়টা বুঝতে পেরে আফরানও স্বাভাবিক হয়ে বলল,

আফরান — ফ্রেন্ডস? ভেবেছিলাম শত্রুতা করব। ছোট বেলার সব অত্যাচারের প্রতিশোধ এখন নিব। কিন্তু…. ভাবছি ফ্রেন্ডশিপ করেই নেয়। না জানি আবার কোন অত্যাচার শুরু কর। (হেসে হাত মিলালো। পার্লিও খিলখিল করে হেসে উঠল।)

পার্লি — নূরের ক্লাস শেষ হবে কখন?

আফরান — এই তো সময় হয়ে গিয়েছে। চল যাওয়া যাক।
.
.
নূর এবং বাকিরা ক্লাস করে বের হলো। সকলের কপালে চিন্তার ভাজ।

সিমা — এটা কোন ধরনের এসাইনমেন্ট। স্কুল, কলেজে সবাইকে একই এসাইনমেন্ট দিত। এরপর সবাই মিলে কপি করে নিতাম। কিন্তু নিহাল স্যার তো সবাইকে ভিন্ন ভিন্ন বিষয় দিয়েছে। এখন কি করব আমি?

নূর ক্লোজ আপ মার্কা হাসি দিয়ে মেহেরের দিকে তাকিয়ে আছে। মেহের সন্দেহজনক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে। কপাল কুচকে ইশারায় জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে। নূর ভেটকানি মার্কা হাসি দিয়ে মেহেরের কাছে এলো।

নূর — জানিস এদের সবার মধ্যে আমার সবচেয়ে বেস্টেস্ট ফ্রেন্ড তুই। (এবার সবার কেমন যেন সন্দেহ হতে লাগলো) আমিও তোর বেস্টেস্ট ফ্রেন্ড। তাই না? আমাদের মধ্যে সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রী তুই। তাই বান্ধবী আমার এসাইনমেন্ট করে দে না। (করুণ স্বরে)

এবার সবাই বুঝতে পারল আসল কাহিনী কি? কেন এসব ঢং করা হচ্ছিল। সবাই একে অপরের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিল। মেহের সাফ না করে দেয়। নূর সবাইকে একই ডায়ালগ মেরেও লাভ হলো না। ভেঙচি কেটে চলে গেল। বাকিরাও হেসে তার পিছনে গেল। হাটতে হাটতে আচমকা পুষ্প হোচট খেয়ে পড়ে যায়। হাতে থাকা এসাইনমেন্টের সব কাগজপত্র পড়ে গেল। আহিল, রিহান এবং বাকিরা মাঠেই হাটাহাটি করছিল। পুষ্পর কাগজপত্র পড়ে যেতে রিহান দৌড়ে এলো। সব গুছিয়ে নিতে পুষ্পকে সাহায্য করল। পুষ্প মুচকি হেসে ধন্যবাদ জানালো। পরক্ষণে চেহারাটা মলিন হয়ে গেল।

রিহান — কি হয়েছে?

পুষ্প — স্যার এসাইনমেন্ট দিয়েছে। কিছুই বুঝতে পারছি না। কীভাবে, কি লিখব?

রিহান — দেখি। (বিষয় দেখে মুচকি হাসলো) আরে এটা তো আমার সাবজেক্ট। অনেক সহজ। কিছু বিষয় বুঝিয়ে দিলেই বাকি সব অনায়াসে পারবে।

পুষ্প — সত্যি? প্লিজ আমাকে বলেন।

রিহান — এভাবে তো বলতে পারব না। সময় লাগবে। প্রত্যেক পয়েন্ট বুঝিয়ে দিতে হবে। তুমি বল কবে ফ্রি আছ? তখন বুঝিয়ে দিব।

পুষ্প — আমি তো সন্ধ্যায় ফ্রি থাকি। তখন তো আপনাকে পাব না। (মন খারাপ করে)

রিহান — সোসাল মিডিয়ার একাউন্ট আছে? থাকলে দাও। তখন সেখানে বুঝিয়ে দিব।

পুষ্প — (বিভ্রান্তিতে পড়ল কি করবে? কিন্তু সাহায্য তো তারই প্রয়োজন।) ফেসবুক একাউন্ট আছে। সামিদ্রা আহমেদ পুষ্প।

রিহান — আমার একাউন্ট, “রিহান হায়দার”। তাহলে সন্ধ্যায় বুঝিয়ে দিব সব।

পুষ্প মাথা দুলালো। ক্লাস শেষ। তাই পার্লি, নূর, পুষ্প সবাই বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিল।
আফরান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রিহানের দিকে। রিহানও ভ্রু কুচকে তাকাল।

রিহান — কি হয়েছে তোর? সকাল থেকে দেখছি এভাবে তাকিয়ে আছিস। বিষয়টা কি? কি হয়েছে?

আফরান — তুই জানালি কেন আনন্দিতার সম্পর্কে।

রিহান — (শুকনো ঢোক গিলল) মা…মানে…। কি…কি বলছিস।

আফরান — আনন্দিতার আসল নাম যে আনন্দিতা নয় তা বললি না কেন?

রিহান — তুই কীভাবে জানিস? কে বলেছে তোকে? (আফরান তেড়ে এলেই রিহান আরিফের পিছনে লুকিয়ে পড়ে।) দেখ ভাই আমার কোন দোষ নেই। নূর নিজেই বলেছিল আমি যাতে কাউকে না বলি সে-ই আমার বোন। আমাদের সম্পর্ক যাতে কেউ না জানে।

আফরান থমকে গেল। নূর? নূরের কথা বলছে কেন রিহান? ভাবছে সবাই। আফরান ভাবছে পার্লিই রিহানের বোন। কিন্তু রিহান পার্লির নাম না নিয়ে নূরের নাম নিল কেন?

আফরান — নূর? মানে মিস চাশমিশ?

ইয়াশ — আনন্দিতাই নূর? মানে নূর তোর বোন?

রিহান উপর নিচে মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বলল। সবার মাথার উপর যেন বাজ পড়ল। সবার মুখো ভঙ্গি এখন বাপ্পারাজের মতো। “আমি বিশ্বাস করি না। আমি বিশ্বাস করি না।”

.
.
.

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here