Ragging To Loving 2পর্ব-২২

0
2319

#Ragging_To_Loving__2
#পর্বঃ- ২২
#রিধিরা_নূর

ইয়াশ আহিলের পেটের খোঁচা দিল। আহিল তাকাতেই ইয়াশ ফিসফিস করে বলল।

ইয়াশ — ভাই৷ আমি যা ভাবছি তুইও কি তাই ভাবছিস?

আহিল — হ্যাঁ! কিন্তু তুই কি ভাবছিস?

ইয়াশ — (বিরক্ত হয়ে তাকাল) তাহলে হ্যাঁ বললি কেন? আমরা ভেবেছিলাম আফরান আর আনন্দিতার প্রেমকাহিনী রচিত হবে। কিন্তু এদের তো যুদ্ধক্ষেত্র রচিত হয়েছে।

রিহান — তুই তো বললি তুই সব জানিস। তাহলে আবার জিজ্ঞেস করছিস কেন? (আফরানকে উদ্দেশ্য করে)

আফরান — আমি পার্লিকে আনন্দিতা ভেবেছিলাম।

রিহান ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। তার মানে আফরান জানতো না নূর-ই আনন্দিতা। তার মানে সে নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মেরেছে। একেই বলে “খাল কেটে কুমির আনা”। একদিকে আফরান, অন্যদিকে নূর, মাঝখানে মাইনকা চিপায় ফাইস্যা গেল রিহান।

আরিফ — সেদিন আনন্দিতার কাহিনী বললি। কিন্তু আনন্দিতা যে নূর তা বললি না কেন?

রিহান — কি এক আজাইরা কারণে বলল আমি যাতে কাউকে না বলি নূর আমার বোন।

আফরান — কি কারণে?

রিহান — কারণ… নূর তার ফ্রেন্ডকে বলেছিল যাতে আত্নীয় স্বজন পড়ে এমন ভার্সিটিতে ভর্তি না হতে। তারা নাকি প্যারা দেয়। নিজের কোন স্বাধীনতা থাকে না। সব কিছুতে শাসন করে। কিন্তু ভাগ্যক্রমে তার সাথেই এমন হলো। নূরের এডমিশন হলো আমাদের ভার্সিটিতে। সে নিজে বারণ নিজেই ফেসে গেল। তাই বারণ করেছিল।

আফরান — (তাহলে নূরই পুষ্পকে উসকানি দিয়েছিল।)

আহিল — (হাসছে) ভাই। এটা কোন ধরনের লজিক? কিন্তু যায় বল নূরের লজিকটা হেব্বি লাগছে।

আফরান — সিরিয়াসলি! তুই এখানে লজিক দেখিস? মাথা ভরতি সব অদ্ভুত চিন্তা ভাবনা।

ওয়াসিম — অদ্ভুত না জোস। ছোট বেলায় তোদের কি ধোলাই না দিয়েছিল। (হাসছে।)

ওয়াসিমের কথা শুনে আফরান, রিহান ছাড়া সবাই হাসছে। আফরান শীতল দৃষ্টিতে তাকাতেই ওয়াসিম ভয়ে ঢোক গিলল।

ওয়াসিম — না.. মানে.. আমি কিছু বলিনি।

সবার হাসি থামলেও আহিলের হাসি থামছে না। সে নিজের মতো করে হেসেই যাচ্ছে। এবার আফরানের শীতল দৃষ্টি আরও সরু হলো। ভয়ের ঠেলায় আহিলের হাসি কাশিতে পরিণত হলো।

আহিল — উহু উহু। হঠাৎ কাশি উঠে গেল। হেহেহে।

রিহান — ভাইরা আমার। তোরা কেউ নূরের সামনে মুখ খুলিস না। ভুলেও তাকে বলিস না আমি তোদের বলেছি। নাহলে আমার বারোটা বাজাবে।

ইয়াশ — আসলেই নূর একটা আতঙ্ক। সেই আতঙ্কের চাপ তোর চোখে মুখে দেখতে পাচ্ছি। (হাসতে লাগলো)

রিহান — আর বলিস না ভাই। তার ছোট খাট নমুনা তো তোরা দেখেই নিলি এখানে। কিন্তু বাসায় আমাকেই সব সহ্য করতে হয়। দুই বোন মিলে আমার উপর যে অত্যাচার করে বলে বুঝাতে পারব না।

আফরান — আই এম শিওর। নূরই তন্বীকে উসকানি দেয়। নাহলে তন্বীকে আমি চিনি। ভীষণ ভদ্র এবং শান্তশিষ্ট মেয়ে।

রিহান — আহারে। ভদ্র। সেও কম না। সে মিচকে শয়তান।
.
.
বিকেলে নূর ও পার্লি নূরের রুমে প্রবেশ করতেই তন্বী আঁতকে উঠল। আচমকা ভয়ে কেঁপে উঠল। তন্বীর এমন ভয়ার্ত চেহারা দেখে নূর, পার্লি হাসলো। তন্বীও মৃদু হাসি দিল।

পার্লি — নূর। তুমি তো বললে না ভার্সিটিতে আমাকে বারণ করেছ কেন? রিহানকে তোমার ভাই বলতে।

কারণ বলতেই পার্লি উচ্চস্বরে হাসতে লাগলো। পার্লিকে এভাবে হাসতে দেখে নূর আড়চোখে তাকাল। নূর হাসতে বারণ করলে তার হাসি যেন আরও বেড়ে গেল। এক সময় হাসি থামিয়ে চিন্তা করতে লাগলো আফরানের কথা। আফরানের শুনে পার্লি এতটুকু উপলব্ধি করতে পারল যে নূর ও আফরানের মাঝে এখনো ছোট বেলা নিয়ে আলোচনা হয়নি। বরং সে ভুল বুঝে পার্লিকেই রিহানের বোন ভাবলো। আচ্ছা নূর কি জানে আফরানের ব্যাপারে। তার কি মনে আছে সেই স্মৃতিগুলো। হঠাৎ শরীরে ঝাঁকুনি অনুভব করতেই ধ্যান ভাঙল।

নূর — কি ভাবছ?

পার্লি — কিছু না। আচ্ছা নূর তোমার ছোট বেলা কেমন ছিল? ছোট বেলায়ও এমনই দুষ্টু ছিলে?

নূর — আমার ছোট বেলার সম্পর্কে খুব একটা মনে নেই। একা একা থাকতাম। স্কুলে কোন বন্ধুবান্ধব ছিল না। তেমন কোন গল্পও ছিল না। তাই স্মৃতিগুলো ঘোলাটে হয়ে গিয়েছে।

পার্লি — ওহ্! (কিন্তু আফরান যে বলেছি সেসব কি ছিল? আমাদের কথার মাঝেই ওই মেয়েটি চলে আসে। তাই বাকি গল্প শুনতে পেলাম না।) নূর? আমি কি কালকেও তোমার সাথে ভার্সিটি যেতে পারি? আজ তেমন ঘুরাঘুরি হলো না। বাকিদের সাথে আড্ডাও দেওয়া হলো না।

নূর — এক কাজ করি পেত্নীগুলোকে বলি কাল আমাদের বাসায় আসতে এখানেই আড্ডা দিব।

পার্লি — না না। এখানে না ভার্সিটিতে। বাইরে একটু ঘুরাঘুরি করা হবে। (সেখানে আফরানের কাছে বাকি গল্পও শুনব।)

নূর মাথা হেলিয়ে সম্মতি জানালো।
পার্লি কৌতুহলী মানুষ। কোন বিষয় সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য জানতে না পারলে পেটের ভেতর গুড়গুড় করে। তাই যে-ই করেই হোক সে বিষয় সম্পর্কে সব জেনে নেই।
.
.
আমরিন পুরো রুমে পায়চারী করছে। অস্থির হয়ে ওড়নার কোণা মোচড়াচ্ছে এবং হাটাহাটি করছে। (হ্যাঁ! ভালবাসি তোমায়। আই লাভ ইউ আমরিন। আই রিয়েলি লাভ ইউ।) আহিলের কথাগুলো কানে প্রতিধ্বনি হতেই আমরিন শিউরে উঠল। আচমকা হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল। এতো জোরে ধপাস ধপাস করছে মনে হচ্ছে এক্ষুণি হৃৎপিন্ডটা বেরিয়ে আসবে।

আমরিন — আহিলও একই কথা বলেছিল। তাহলে কি আমি সত্যি আহিলকে… না না না। অল্প দিনের পরিচয়ে এমনি এমনি ভালবাসা যায় নাকি। এসব চিন্তা বাদ দিয়ে আমার এসাইনমেন্টের দিকে ধ্যান দেওয়া উচিৎ। (নিজেকে শান্ত করে চেয়ার টেনে বসল।)
.
.
পুষ্প ফোন হাতে নিয়ে বসে আছে রিহানের অপেক্ষায়। ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দিয়েছিল। রিহান এখনো এক্সেপ্ট করে নি। সে যে বলেছিল সাহায্য করবে। সেই আশায় বসে আছে পুষ্প। ডোরবেল বাজতেই পুষ্প গিয়ে দরজা খুলে দেখে আফরান। পুষ্পকে দেখেই আফরান স্থির চোখে তাকাল। আফরানের এমন দৃষ্টি দেখে বুকটা কেঁপে উঠল।

পুষ্প — কি হয়েছে ভাই? (আমতাআমতা করে)

আফরান কিছু না বলেই ভেতরে চলে গেল। পুষ্প ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে আফরানের যাওয়ার পানে। হঠাৎ আবার কি হলো ভাবতে ভাবতে দরজা আটকে দিল। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে রিহান এখনো এক্সেপ্ট করে নি। রেগে রিকুয়েস্ট ক্যান্সেল করে দিল।

পুষ্প — আমি বলেছিলাম নাকি হেল্প করতে। নিজেই সেদে এসে বলল সাহায্য করবে। এখন মহাশয়ের দেমাগ বেড়ে গেল। লাগবে না সাহায্য। বরং ব্লক-ই করে দেয়। (দিল ব্লক করে)

সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত ঘনিয়ে এলো। পুষ্প মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। সামনে এসাইনমেন্ট। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। এসাইনমেন্ট নিয়ে যতই না রাগ হচ্ছে তার চেয়ে বেশি রাগ হচ্ছে রিহানের উপর। কি দরকার ছিল ঢং করে সাহায্য করবে বলার। যদি সাহায্যই না করে। ভীষণ কান্না পাচ্ছে এই মূহুর্তে। করুণ দৃষ্টিতে ফোনের দিকে তাকাল। ফোন হাতে নিয়ে রিহানকে আনব্লক করল। ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দিল। কি মনে করে আবার ক্যান্সেল করে দিল। ফোন রাখতেই টুং করে নোটিফিকেশন সাউন্ড হলো। সাথে সাথে দেখে রিহান ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দিয়েছে। মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল। দেখা মাত্রই এক্সেপ্ট করে নিল। সাথে সাথেই মেসেজের বন্যা শুরু হলো। টুং টাং।

“সরি। আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। একটি ঝামেলায় ফেসে যাওয়ায় তোমার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। পরে আমি দেখে তোমার একাউন্ট খুঁজে ছিলাম কিন্তু পায় নি। (পাবে কেমনে ব্লক যে মাইরা দিছিল)। অনেক্ষণ দেখলাম। এখন হঠাৎ দেখলাম তুমি রিকুয়েস্ট দিয়েছ। যেই না এক্সেপ্ট করব তখন ক্যান্সেল হয়ে গেল।”

পুষ্প জিবে কামড় খেল। পুষ্প কি বলবে বুঝতে পারছে না। তাই সংক্ষেপে উত্তর দিল। “ওহ্”। রিহানও কি বলবে বুঝতে পারছে না।

“মেসেজে সব বোঝানো সম্ভব নয়। যদি কিছু মনে না কর তাহলে ভিডিও কলে বলি?”

পুষ্প — কি অভদ্র ছেলে। আমি কি বুঝি না এসব কাহিনী কি? আমাকে পটাতে চাইছে না তো? না মানে ভুলও বলছে না। আমি যে মাথা মোটা। এমনিতেই কিছু বুঝি না আবার মেসেজে কি বুঝব? তাহলে কি ভিডিও কল দিব? না না দিব না। কিন্তু….

এদিকে রিহান পুষ্পর উত্তরের অপেক্ষায় আছে। খানিক সময় পর পুষ্প ভিডিও কল দিল। কিন্তু ক্যামেরা পিছন দিকে। শুধু টেবিলের কাগজপত্র দেখা যাচ্ছে। এরপর রিহান ধীরে ধীরে সব বুঝিয়ে দিল। পুষ্প সব নোট করে নিল। হঠাৎ পুষ্পর নজর পড়ল রিহানের উপর। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে আছে। এক হাতের আঙুল দিয়ে এলোমেলো চুলগুলো আছড়ে নিচ্ছে। পুষ্প আনমনা হয়ে তাকিয়ে আছে। রিহান খেয়াল করল পুষ্পর হাত স্থির।

রিহান — কি হলো? লিখছ না কেন?

আচমকা পুষ্পর হাত থেকে ফোন পড়ে গেল। বেশ লজ্জা পেল নিজের বোকামিতে।

পুষ্প — সরি।

রিহান — ইটস ওকে। আজ এতোটুকু থাক। বাকিটা পরে বুঝিয়ে দিব।

রিহান যেই না ফোন রাখতে যাবে হঠাৎ এক মেয়েলী কন্ঠস্বর শুনতে পেল পুষ্প। চেনা চেনা লাগলো কন্ঠস্বর। তড়িঘড়ি রিহান ফোন রেখে দিল। ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে দেখে নূর ভ্রু কুচকে আছে। রিহান বাসায় ফিরে নূরের সামনে যায়নি ভয়ে। হঠাৎ নূরকে দেখে আঁতকে উঠল।

রিহান — (নূর জেনে যায়নি তো আমি যে আফরানকে বলে দিয়েছি সব।) কি…কি…?

নূর — কানে তুলো দিয়ে বসে আছিস? কবে থেকে ডাকছি শুনছিস না? আম্মু খেতে ডাকছে চল।

রিহান — আসছি।

.
.
.

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here