Ragging To Loving 2পর্ব-২৩

0
2378

#Ragging_To_Loving__2
#পর্বঃ- ২৩
#রিধিরা_নূর

সকালে পার্লি নূরের রুমে গিয়ে টাস্কি খেল। মাথা মেঝেতে পড়ে আছে, হাত মেঝেতে ছড়ানো, পা দুটো বিছানায়। কম্বল পায়ে মুড়িয়ে বিছানায় ছড়িয়ে আছে। পার্লি ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। এলার্মের শব্দে পার্লির ধ্যান ভাঙে। ভাবলো এই হয়তো নূর উঠবে। কিন্তু যা দেখল তার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিল না নূর অনেক্ষণ কান চেপে ধরে শুয়ে ছিল। আর না পেরে ঘুমের ঘোরে ঢুলুঢুলু অবস্থায় এলার্ম বেলকনিতে রেখে এসে বিছানায় লুটিয়ে পড়ল।

পাশের রুমে রিহান কান চেপে ধরে বলতে লাগলো, “উফফ এই মেয়েটা। রোজ রোজ একই কাহিনী। ঘুম না উঠলে এলার্ম দেস কেন? নিজে নাক ডেকে ঘুমাবে আর আমার ঘুমের বারোটা বাজাবে। আজকেই ওর এলার্ম-ক্লক ভেঙে ফেলব।”

পার্লি দৌড়ে এসে নূরকে ঝাঁকাতে লাগলো।

পার্লি — নূর। তুমি না বলেছিলে আজ ভার্সিটি যাবে। উঠ তাড়াতাড়ি।

ভার্সিটিতে_____________________

বাকিরা ক্লাসে গিয়ে নূর,সিমা পার্লিকে নিয়ে পুরো ক্যাম্পাস দেখাচ্ছে। আর পার্লি খুঁজছে আফরানকে। পরক্ষণে মনে পড়ল মিউজিক হলের কথা। সেদিন তারা সেখানে কথা বলেছিল। নূর,সিমাকে টেনে নিয়ে গেল সেখানে। কিন্তু গিয়ে দেখে ফাঁকা। কেউ নেই। ফিরে আসতে দেখে আফরান, আহিল মাঠে হাটছে। পার্লি কিছু না বলে আবারও টানতে টানতে নিয়ে গেল। হুট করে দৌড়ে এসে হাঁপাতে লাগলো। হুট করে আসায় দুজনেই চমকে উঠল।

পার্লি — হাই! (দাঁত খেলিয়ে হাসি দিল)

আফরান — হাই পার্লি। কেমন আছো?

পার্লি — ভালো। (আহিলের সাথেও কুশল বিনিময় করল।)

আহিল বিস্ময়কর দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে। আবার আফরানের দিকেও তাকাচ্ছে। নূরকে দেখা মাত্রই কেন যেন আফরানের ভীষণ রাগ হলো। ধারালো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। পার্লি আফরানের সাথে কথা বলছে। আফরানও হেসে হেসে কথা বলছে। বিষয়টা কেমন যেন সন্দেহজনক ঠেকলো নূরের কাছে। বিষয়টা হজম করতে পারছে না নূর। ভ্রু কুচকে আফরানের দিকে তাকিয়ে আছে।

নূর — (ইনার না গার্লফ্রেন্ড আছে। তাহলে পার্লির সাথে হেসে হেসে এতো কথা বলছে কেন? নির্লজ্জ বেহায়া লুচু বেটা।) পার্লি চল অন্যদিকে ঘুরি।

পার্লি — না। না। আমি… (কি করে বলি) আমার না পা ব্যাথা করছে। অনেক্ষণ ঘুরেছি তো। তাই। একটু রেস্ট নেয়। আফরান চল তোমাদের আড্ডাখানায় বসে কথা বলি।

নূর হা হয়ে তাকিয়ে আছে। মাত্রই তো এলো। এরই মাঝে পা ব্যাথা করছে? তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আফরানের দিকে তাকাল। সে কিছুতেই আফরানের সাথে যাবে না। আর না পার্লিকে যেতে দিবে।

পার্লি — নূর,সিমা তোমরা ক্লাসে যাও আমি আফরানের সাথে আছি।

নূরকে কিছু বলতে না দিয়ে পার্লি আফরানকে টেনে নিয়ে গেল। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আহিল নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে আছে। একদিনে মেয়েটা আফরানের সাথে এতো ফ্রি হলো কীভাবে? আর আফরানও বেশ ভালো ভাবেই কথা বলছে। এসব ভাবছে আহিল। আহিল, নূর, সিমা হা হয়ে তাদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে।

আহিল — নূর? মেয়েটা কে? একদিনেই আফরানের সাথে এতো ঘনিষ্ঠ হয়ে গেল। (পার্লির দিকে তাকিয়ে)

নূর — আমিও জানি না কীভাবে হলো?
.
.
দুজনে পাশাপাশি হাটছে। কক্ষে প্রবেশ করতেই তাদের সামনে এসে দাঁড়াল পান্না। রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পার্লির দিকে।

পান্না — তোমাকে না বলেছিলাম আফরানের কাছ থেকে দূরে থাকতে। ভুলে গিয়েছ?

আফরান — পান্না। তুমি…

পান্না — আফরান বেবি চল এখান থেকে। এমন মেয়েদের থেকে দূরে থাকায় ভালো। চল বেবি। (আফরানের হাত আঁকড়ে ধরল)

পার্লি উচ্চস্বরে হাসতে লাগলো। পান্না ভ্রু কুচকে তাকাল। আফরান পান্নার হাত ছাড়িয়ে নিল।

আফরান — পান্না কিছু বলার পূর্বে ভেবে চিন্তে বল। পার্লি আমার ফ্রেন্ড। তাই ওকে নিয়ে কোন বাজে মন্তব্য করবে না। সেদিন আমি কিছু বলিনি। কারণ পার্লি নিজেই সব হ্যান্ডেল করেছিল। কিন্তু তুমি তখনও ভুল ছিলে এবং এখনও ভুল করছ।

পান্না — কি ভুল করছি আমি। আই লাভ ইউ আফরান। তাই ইনসিকিউর ফিল হয় যদি তোমাকে কেউ আমার কাছ থেকে কেড়ে নেই?

আফরান — যা তোমার তা তোমার কাছ থেকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। যা তোমার নয় তুমি তা কখনো পাবে না। ভালবাসায় ইনসিকিউর নয় বিশ্বাস থাকে। আমার প্রতি কি তোমার বিন্দু পরিমাণ বিশ্বাস আছে? ভালবাসা মানে শুধু আই লাভ ইউ বলা নয়। ভালবাসা মানে একে অপরের প্রতি বিশ্বাস রাখা, যত্ন নেওয়া, ছোট ছোট বিষয় খেয়াল রাখা, কোন জিনিসটা তাদের খুশি দেয়, কোন জিনিসটা তাদের কষ্টের কারণ হয় তা জানা। সুখের সময় হাসির ভাগিদার হোক না হোক কিন্তু দুঃসময়ে তাদের পাশে থাকা। ভালবাসা মানে আই মিসড ইউ বলা নয়। ভালবাসা মানে হাজারো ব্যস্ততার মাঝে এক মিনিট তার খোঁজখবর নেওয়া।

পান্না — কেন? আমি কি তোমাকে ফোন দেয় না?

আফরান — (মৃদু হাসলো) হ্যাঁ! দাও তো। অবশ্যই দাও৷ তা ফোন দিয়ে কি বল? তোমার ফটোশুট কেমন ছিল, পরিচালক তোমার তারিফ করেছে, তোমাকে মডেলিংয়ে আরও অফার দিয়েছে। দ্যাটস ইট। ওহ হ্যাঁ! কবে তোমার বার্থডে? কবে আমাদের প্রথম আলাপ হয়েছে? কবে এনিভার্সারি? আমার মনে নেই কেন এসব বলার জন্য ফোন দাও। সব বিষয় তুমি তুমি তুমি।

পান্না — আমি যখন আমার বিষয় বলি। তুমি বল কেন তোমার বিষয় নিয়ে?

আফরান — আমি বলব? আমার বলার জন্য কিছু আছে কি? পান্না, সম্পর্ক জোর করে হয় না। কিন্তু আমাদের সম্পর্ক হয়েছে জোর পূর্বক। তা কীভাবে হয়েছে আশা করি বলতে হবে না। ভালবাসা আগলে রাখতে হয়, বেঁধে রাখতে নয়। এই জোর পূর্বক সম্পর্কে আমার দম আটকে আসছে। আমি তোমায় ভালবাসি না। চেয়েছিলাম আমাদের সম্পর্ক গড়তে। তোমায় ভালবাসতে। কিন্তু পারিনি। তোমারও অধিকার আছে ভালবাসা পাওয়ার। তাই এই সম্পর্ক থেকে মুক্তি পাওয়ায় আমাদের জন্য শ্রেয় হবে। উই শুড ব্রেকআপ পান্না। অতীতের সবকিছু ভুলে নতুন করে আরম্ভ করা উচিৎ।

পান্না — (ভালবাসা মাই ফুট। আমার স্বপ্ন, ভালবাসা শুধু আমার ক্যারিয়ার। হ্যাঁ আমাদের সম্পর্ক জোর পূর্বক হয়েছিল। কারণ তুমি আমার প্রয়োজন ছিলে। ইন ফেক্ট কিছু দিন পরেই এসব এমনিতেই শেষ করে দিতাম।) তোমাকে এই মেয়ে উসকিয়েছে। তাই না?

আফরান — এখন আর কারো উসকানি না। এবার এই সিদ্ধান্ত আমার একান্তের।

পান্নার ভীষণ রাগ হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি রাগ হচ্ছে পার্লির উপর। কারণ কোথাও না কোথাও এর কারণ পার্লিই। নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ছে পান্নার কাছে। রাগের বশে উল্টা পাল্টা কিছু করে না বসে সেই ভয়ে নিজেই চলে গেল।

পার্লি যেন ঘোরে মগ্ন। পূর্বের কৌতুহল শেষ হলো না এর উপর আরেক প্রশ্ন জাগ্রত হলো। আফরান ও পান্নার মাঝে ভালবাসার সম্পর্ক নেই তা আগেই আন্দাজ করতে পেরেছিল। কিন্তু তবুও যেন সব অবিশ্বাস্য।

আফরান চোখ বুজে দীর্ঘ নিশ্বাস নিল। বুকটা বেশ হালকা লাগছে। মনে হচ্ছে যেন অনেক বড় বোঝা নেমে গেল মন থেকে।

পার্লি — তোমাদের সম্পর্ক কীভাবে হয়েছে জানতে পারি? আই এম সরি ফর ইন্টাফেয়ারিং ইন ইউর পারসোনাল ম্যাটার।

আফরান — পান্না ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করেছিল। ভার্সিটির দ্বিতীয় দিন আমাদের আলাপ হয়। তিন দিনের মাথায় আমাকে প্রোপজ করে। কিন্তু আমার মনে ওর জন্য কোন আবেগ, অনুভূতি ছিল না। তাই না করে দেয়। কিন্তু তবুও সে মানতে নারাজ। আমি না করার পর সে তার হাতের কব্জি কাটে। সুইসাইড এটেম্পট করে। আর ব্ল্যাকমেইল করে। দুই বছরের সম্পর্ক আমাদের।

পার্লি — সিরিয়াসলি! তোমাকে আমি একজন সিন্সিয়ায়ার, ম্যাচিউরড মনে করেছিলাম। সে কিনা তুমি তার ব্ল্যাকমেইলে সায় দিলে? এসব জাস্ট ন্যাকামি ছাড়া আর কিছু না। ভালবাসা এতো দুর্বল নয় যে ভালবাসা পাওয়ার জন্য এসব নাটক করতে হয়। আই মিন কাম অন। এই যুগে এসে এসব করা বোকামি ছাড়া আর কিছু না।

আফরান — তখন পান্নাকে সেই অবস্থায় দেখে কিছু ভাবতে পারছিলাম না। কি করা উচিৎ, কি করা অনুচিত। কখনো এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি। তাই ভয়ে…..

পার্লি — ভয়ে সম্পর্কে আবদ্ধ হলে। পারতে আজীবন এই ভয়ের বেড়াজালে আটকে থাকতে। পারতে আজীবন এই জোর পূর্বক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে। তুমি শুধু নিজের সঙ্গে নয় পান্নার সঙ্গেও অন্যায় করেছ। আবেগের বশে পান্না এসব করেছে। কিন্তু তুমি তাকে বুঝাতে পারতে। তা না করে তুমিও…

আফরান নীরবে সব শুনছে। এছাড়া আর কিছু করার নেই। কারণ পার্লির বলা একটা শব্দও অনুচিত নয়। দুজনে অনেক্ষণ চুপচাপ বসে ছিল। আগ বাড়িয়ে পার্লিই বলল,

পার্লি — আসলে তোমাকে কিছু বলার ছিল। (আফরান কপাল কুচকে তাকাল) গতকাল তুমি আমাকে আনন্দিতা ডেকেছিলে। আসলে তোমার আনন্দিতা আমি না। আনন্দিতা…..

আফরান — নূর। নূরই আনন্দিতা। জানি আমি।

পার্লি — (অবাক হলো) তুমি জানো? তাহলে কাল যে আমাকে আনন্দিতা ভেবেছিলে?

আফরান — তোমার সাথে কথা বলার পরেই রিহানের কাছ থেকে জানতে পারলাম। নূর বারণ করেছিল কাউকে না জানাতে।

পার্লি — হাহাহা। কারণটাও অদ্ভুত ছিল। মেয়েটা পুরাই পাগল।

আফরান — পাগল না? বদমাশ, ফাজিল মেয়ে। সে পাগল না। বরং সামনের জনকে পাগল বানিয়ে দেয়।

পার্লি হাসছে। আফরান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ছোট বেলার স্মৃতি স্মরণ করে আফরানও মুচকি হাসলো। আফরানের ঠোঁটের কোণে হাসি পার্লির চোখে এড়ালো না।

পার্লি — (আসলেই মেয়েটির মধ্যে জাদু আছে। কিছু মূহুর্ত পূর্বেও আফরান উদাসীন ছিল। নূরের কারণেই তার মুখে হাসি ফুটলো। আনন্দিতা নামটি বেশ মানায় নূরকে।) আচ্ছা আফরান? একটা কথা? তুমি না বলেছিলে আনন্দিতার কাছ থেকে ছোট বেলার অত্যাচারের প্রতিশোধ নিবে। কালকে নাহয় আমাকে ভেবে প্রতিশোধ নিবে না বলেছিলে। কিন্তু এখন কি নূরের কাছ থেকে ছোট বেলার অত্যাচারের প্রতিশোধ নিবে?

আফরান — ছোট বেলার? শুধু ছোট বেলায় নয় ভার্সিটিতে আসার পর থেকে তার অত্যাচার সহ্য করেছি। সব কিছুর প্রতিশোধ নিব।

পার্লি উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করল ভার্সিটিতে কি কি অত্যাচার করেছে? আফরান একের পর এক সব ঘটনা বলল। পুচ্চু-পুচ্চির ঘটনা, ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া, ফুটবল ফুটো করে মাথায় পরিয়ে দেওয়া, ডিমের কাহিনী। সব কিছু শুনে পার্লির অবস্থা খারাপ। হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা করছে। আফরানের খুব রাগ হচ্ছে।

পুষ্প,আমরিন,মেহের,আলিফা ক্লাস শেষে বেরিয়ে এলো। সিমা, নূর, আহিল ডিপ্রেশন মুডে মাঠের কোণায় বসে আছে। গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে নিষ্পলক চোখে মাঠের ঘাস দেখছে। বাহ্! এতো মনোযোগ কীভাবে এলো? ভাবতে ভাবতে পুষ্পরা একে অপরের দিকে তাকাল।

পুষ্প — ওহ হ্যালো! কি হয়েছে তোদের?

পুষ্পর কথায় তারা মাথা তুললো। আমরিনকে দেখা মাত্রই আহিল দাঁত কেলিয়ে হাসি দিল। হাত উঠিয়ে বলল, “হাই মাই লাভ”। লজ্জায় আমরিন মাথা নিচু করে ফেলল। ” ইনার কি লজ্জা করে না? সবার সামনে কীসব বলছে। এখন না জানি এরা কি ভাবে।” কথা গুলো ভাবতে ভাবতে আমরিন বাকিদের দিয়ে তাকিয়ে দেখে তারা কেমন যেন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এবং মুখ টিপে হাসছে।

আলিফা — ওই হই। মাই লাভ! (আমরিনের কাঁধে ধাক্কা দিয়ে) হায় রে কপাল আমার। কবে আরিফ আমাকেও ভালবেসে এভাবে ডাকবে। আমিও আমরিনের মতো লজ্জা পাব। কি লজ্জা! (হাত দিয়ে মুখ ঢেকে)

আমরিন চোখ বড় বড় করে তাকাল আলিফার দিকে। কি বলছে এসব?

পুষ্প — এতো ভাবার কিছু নেই। আমরা জানি আহিল ভাইয়া তোকে ভালবাসে। এটাও জানি তোর মনেও তার জন্য সামথিং সামথিং ফিলিংস আছে। মেনে নিতে সমস্যা কোথায়? পিয়ার কিয়া হে কোয়ি চোরি নেহি কি। ইসমে ডারনা কিয়া। (ভ্রু নাচিয়ে দুষ্টু হাসি দিল)

আমরিনের ফর্সা গাল দুটো লজ্জায় গোলাপি হয়ে গিয়েছে। উফফ এমন মারাত্মক দৃশ্য দেখে আহিল ঢলে পড়ল পিছন দিকে। আহিলকে পড়ে যেতে দেখে আমরিন আচমকা চিল্লিয়ে উঠল।

আমরিন — আহিল….! (হাত বাড়িয়ে)

কিন্তু আহিল পড়েনি। পড়ার আগেই রিহান তাকে ধরে ফেলে। আহিলের কাজে যতটা না হাসি পেল আমরিনের কার্যক্রম দেখে সবাই উচ্চস্বরে হেসে উঠল। লজ্জায় আমরিন পারছে না মাটির সাথে মিশে যেতে। দ্রুত পায়ে হাটতে লাগলো।

আহিল — হেই ইউ লিসেন টু মি। ইউ আর মাই লাভ জানো তুমি। (চিল্লিয়ে)

আমরিন হাটতে হাটতে পিছনে ফিরে তাকিয়ে হেসে দিল। আহিল আবারও ঢলে পড়ে। ওয়াসিম ধাক্কা দিয়ে সোজা করে। আহিলের ধাক্কায় সিমা তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যায়। ওয়াসিমের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকাতেই ওয়াসিম এক দৌড়ে পগারপার।

একেকটার কাহিনী দেখে সবাই হাসতে লাগলো। আলিফা আরিফের পাশে এসে দাঁড়াল।

আলিফা — আপনি কবে বলবেন আমাকে?

আরিফ — কি বলব?

আলিফা — ইউ আর মাই লাভ। (চোখ পিটপিট করে)

আরিফ তাকে উপেক্ষা করে চলে যায়। আলিফা কপাল কুচকে আরিফের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে।

পুষ্প রিহানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিল। সাহায্য করার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানানো হয়নি। কিন্তু এখন সবার সামনে বলতে লজ্জা লাগছে। না জানি সবাই ব্যাপারটা কীভাবে নিবে। এই ভেবে নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করল। রিহানও কিছু বলল না। কারণ পুষ্পর পরিস্থিতি সে বুঝতে পারছে। তাই বিনিময়ে সেও মুচকি হাসলো।

ততক্ষণে পার্লি এবং আফরান চলে এলো।

পার্লি — হেই গাইজ! কি হচ্ছে এখানে? কি নিয়ে আলোচনা চলছে?

মেহের — অনেক বড় ড্রামা মিস করেছ?

পার্লি — কি ড্রামা?

মেহের — রোমেন্টিক প্লাস কমেডি ড্রামা। আহিল, আমরিনের রোমেন্টিক সিন। আলিফা, আরিফ এবং সিমা ওয়াসিমের কমেডি সিন।

সবাই হাসছে। পার্লি কিছুই বুঝল না। মেহের সম্পূর্ণ ঘটনা বলার পর পার্লি, আফরানও হাসতে লাগলো।

রাতে_____________

পুষ্প, রিহান চ্যাটিং-এ কথা বলছে।

পুষ্প — সরি এন্ড থ্যাংক ইউ।

রিহান — সরি এন্ড থ্যাংক ইউ? দুইটা একসাথে? কেন?

পুষ্প — সরি কি কালকে আমার সাহায্য করেছ অথচ আমি তোমাকে ধন্যবাদ জানায়নি। ভার্সিটিতেও কিছু বলিনি। কারণ সেখানে সবাই ছিল। তাই মনে সংকোচ নিয়ে কিছু বললাম না। আর থ্যাংক ইউ সাহায্য করার জন্য।

রিহান — ওহ্। যুক্তি আছে কথায়।

আড়ালে দুই দিকে দুজনেই হাসলো। পুষ্পর সেই মূহুর্তটা মনে পড়ল। যখন রিহান আঙুল দিয়ে চুল ঠিক করছিল। আনমনে চোখ জোড়া আটকে গেল তার উপর।

রিহান — আজ কি ক্লাস করবে না?

এই যেন মেঘ না চাইতে বৃষ্টি। পুষ্পর ঠোঁটের কোণে আপনা আপনি হাসি ফুটল।

আমরিন বেলকনিতে দাঁড়িয়ে। ফুরফুরে শীতল হাওয়া ক্ষণে ক্ষণে শিউরে উঠছে। আনমনে চোখ বুজে অনুভব করছে মূহুর্তটা। ফোনে রিংটোনে ধ্যান ভাঙে। স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে আননোন নাম্বার। তাই কোন ভাবান্তর না করে রিসিভ করল না। এভাবে দুই-তিনবার ফোন দেওয়ার পর রিসিভ করল।

আমরিন — হ্যালো?

আহিল — হাই মাই লাভ। কবে থেকে অপেক্ষা করছিলাম তোমার মিষ্টি স্বর শোনার জন্য।

আমরিন তড়িঘড়ি ফোনের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো, “আহিল?” ফোন কেটে দিল। বুকের ভেতর ধুকপুক ধুকপুক করছে। ভীষণ অস্থির লাগছে। একটু পর আহিল আবারও ফোন দিল। আমরিন কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন রিসিভ করল। নিঃশব্দে ফোন কানে দিয়ে আছে। অপর পাশে আহিলও কিছু বলছে না। আমরিন আরেকবার ফোন চেক করল আহিল ফোন রেখে দিল না তো। না এখনো কানেক্টেড আছে। তাহলে কিছু বলছে না কেন?

আমরিন — হ্যালো?

আহিল — বিভ্রান্তি কাটলো? নাকি এখনো আছে? (আমরিন অবাক হলো এবং লজ্জাও পেল) উফফ এভাবে লজ্জা পেও না। কেমন যেন লাগে। (কথা টা যেন আমরিনের হৃদয়ে গিয়ে বিঁধল) এখন কি ভেবেছ? ভালবাস তা কি নিশ্চিত হলো? নাকি না? না মানে তুমি যদি না বল তাহলে আমাকে অন্য মেয়ের উপর ট্রাই মারতে হবে তো।

আমরিন — একেবারে খুন করে ফেলব। অন্য মেয়ের দিকে তাকালে।

আহিল হাসছে। তার হাসির শব্দে আমরিনের খেয়াল হলো সে মাত্রই কি বলল। লজ্জায় ফোন কেটে দিল। আহিল মুচকি হেসে ফোন বুকে আঁকড়ে ধরল। অপরদিকে আমরিনও লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে ফোন বুকে আঁকড়ে ধরল।

.
.
.

চলবে

বিঃদ্রঃ এমবি না থাকায় গতকাল গল্প দিতে পারিনি। তাই আজকের পর্ব বড় করে দিলাম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here