কাজল নদীর জলে পর্ব-১১

0
1214

কাজল নদীর জলে
আফিয়া আপ্পিতা

১১.
ফোন কানে দিয়ে ‘হ্যালো’ শব্দটা শুনতেই সুরলা কেঁপে উঠে। হৃদস্পন্দন বাড়তে থাকে। সুরলা ফোন কানে দিয়ে চুপটি করে বসে থাকে। কথা বলে না। ওপাশ থেকে ‘ পুরুষালি কন্ঠে ‘হ্যালো’ শব্দটা ভেসে আসে আরো একবার। সুরলা তখনো অসাড় হয়ে বসে আছে। পাশে বসা পিয়াম ঝাকি দেয় সুরলাকে। ইশারায় বলে কথা বলতে। সুরলা ভড়কায়। কী দিয়ে কথা শুরু করবে ভেবে পায় না। অপাশ থেকে বার কয়েকবার হ্যালো হ্যালো বলে কল কেটে দেয়। পিয়াম বিরক্তি ভঙিতে বলে,
“কল দিয়ে কথা না বলে কাহিনি করেছিস কেন!”
সুরলা ভীরু চোখে বলে,
“কী বলব খুঁজে পাচ্ছিলাম না।”

“তুই কল দে, আমি বলে দিচ্ছি। ” রাশনা ফোনের দিকে তাকিয়ে বলে। সুরলা নড়ে না। পিয়াম ফোন হাতে নিয়ে চয়নের নাম্বার ডায়াল করে। ফোন রিং হচ্ছে। পিয়াম কড়া গলায় বলে,
“ফোন দিয়ে কথা বলবি, না বললে আমাদের সামনে এই পেঁচা মুখ করে বসে থাকতে পারবি না। বলে দিলাম!”

পিয়ামের কথা শেষ হতেই ফোন রিসিভ হয়। সুরলা কাঁপা হাতে ফোন কানে দেয়। অপাশ থেকে ভেসে আসে পুরুষালি ধমক,
“হ্যালো, কল দিয়ে কথা না বললে কল দেন কেন!”

রাশনা টিস্যুতে কিছু একটা লিখে সুরলার সামনে ধরে। ইশারায় বলতে বলে। সুরলা চোখ বুলিয়ে বলে,
” চয়ন বলছেন?” অপাশ থেকে ভেসে আসে,
“হ্যাঁ, আপনি কে বলছেন?”
“সুরলা।”
“কোন সুরলা?” চয়নের প্রশ্নে চমকায় সুরলা। চয়ন তাকে ভুলে গেল। যার জন্য সে রাত দিন এক করে ভাবনার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে, সেই ভুলে গেল! মন খারাপ হয় তার। চুপ থাকে। অপাশ থেকে চয়ন বলে,
“যেভাবে আমার আপনাকে চিনতে সুবিধা হয়,তেমন পরিচয় বলুন। আপনি আমাকে কিভাবে চিনেন? আর কী দরকারে কল দিলেন?”

সুরলার অভিমান জমে মনে। এক তরফা ভালোবাসায় সুখ, দুঃখ, অভিমান সব একজনেরই হয়। দ্বিতীয়জন তার লেশমাত্র টের পায় না। চয়ন ও পায় না। আবার ও তাগাদা দেয়। সুরলা চুপ থাকে। পিয়াম রাশনা তাড়া দেয় বলার জন্য। সুরলা অভিমানী গলায় বলে,
“আমাকে ভুলে গেলেন এত তাড়াতাড়ি! আমাকে ভুলে যাওয়ার অপরাধে আপনার চুল টেনে ছিড়ে ফেলা উচিত।”

সুরলার অভিমানী কথায় সুত্র থাকে। চুল টানার সুত্র। যেই সুত্র বুঝে চয়নের মনে পড়ে তার প্রতিবেশী কিট্টির কথা। সুরলার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে সে ভ্রু কুঁচকে বলে,
“কিট্টি?”
“হু।” অভিমানী গলায় বলে সুরলা। পিয়াম আর রাশনা হাফ ছাড়ে। যাক, অন্তত চিনতে পেরেছে। সুরলার অভিমান চয়ন অবধি পৌঁছায় না। চয়ন অবাক কন্ঠে বলে,
“কিট্টি! হঠাৎ আমাকে কল দিলে? নাম্বার কোথায় ফেলে?”
সুরলা কথা এড়িয়ে বলে,
“আপনি আমাকে ভুলে গেলেন কেন!”
“স্যরি কিট্টি! আসোলে কাজের চাপে তোমার কথা মাথা থেকে সরে গিয়েছিল। ” মৃদুস্বরে বলে চয়ন।
“কেমন আছেন?”
“এই তো ভালোই। তুমি কেমন আছো?”
“ভালোই।”
“হঠাৎ আমাকে কল দিলে? চুল ছেড়ার ধান্দা করছো না তো!”
রগড় করে চয়ন। কিট্টির কথা মনে পড়তেই তার উপচে পড়া রাগ যেন খসে পড়েছে। এতক্ষণে সুরলা ও মান অভিমানের পাল্লা চুকিয়ে খানিক স্বাভাবিক হয়েছে। রাশনা তার দিকে একটা টিস্যু বাড়িয়ে দেয়। সুরলা ভ্রু কুঁচকে হাতে নেয়। চোখ বুলিয়ে দেখে। তাতে লেখা, “চয়ন যদি ফোন করার কারণ জিজ্ঞেস করে বলবি,’ পেইন্টিং এর রিভিউ দিতে কল দিয়েছিস।”
লেখাটা পড়তে গিয়ে মুখ ফসকে বলা শুরু করে,
“চয়ন যদি ফোন ক…. বাকিটা বলতে পারে না। রাশনা মুখ চেপে ধরে। ফোন দূরে নিয়ে ফিসফিস করে বলে, ” বুদ্ধু! কী বলতে যাচ্ছিলি তুই!” সুরলার হুশ হয়। ভীত গলায় বলে, “এবার!”
পিয়াম ফিসফিসিয়ে বলে,
“বল যে, পেইন্টিংএর জন্য ধন্যবাদ দিতে ফোন দিলাম।

সুরলা ফোন কানে দেয়। চয়ন বলে,
” কী বলছিলে?” সুরলা বলে,
“আসোলে আমি আপনার দেয়া পেইন্টিংটা সেদিন বাসায় নিয়ে কাভার্ডে রেখে দিয়েছিলাম। ভালো করে দেখা হয় নি। আজ সকালে কাভার্ড খুলতে গিয়ে চোখে পড়ল। উলটে পালটে দেখতে গিয়ে চমৎকার একটা ছবি দেখলাম। এর আগে দেখি নি তা। তাই ধন্যবাদ দিতে কল দিলাম। ”
“পছন্দ হয়েছে?”
“ভীষণ! চমৎকার হয়েছে পেইন্টিংটা। অনেক অনেক ধন্যবাদ। উৎফল্লতার সাথে বলে সুরলা। চয়ন হাসে। বলে,
” যাক, তোমার পছন্দ হলেই হবে। ”
“হু।”
“বাই দ্যা ওয়ে, আমার নাম্বার কোথায় পেলে বললে না!”
“অনেক কসরত করে জোগাড় করেছি।”

চয়নের টিফিন টাইম শেষ হয়। বিদায় নিয়ে কল কেটে দেয়। কাজে চলে যায়। ফোন রেখে সুরলা হাফ ছাড়ে। রাশনা খাওয়ায় ব্যস্ত, পিয়াম মিটিমিটি হাসতে। সুরলা ভ্রু কুঁচকায়।
“হাসছিস কেন!”
“তোর ক্রাশ যেভাবে তোকে ট্রিট করছে আমার সত্যিই মনে হচ্ছে তুই একটা বাচ্চা। কিট্টি কিট্টি বলে বাচ্চা বানিয়ে দিচ্ছে তোকে! কিট্টি থেকে কিউটি গফ হবে কিভাবে! রাস্তা দেখছি না।” আবার ও হাসে পিয়াম। সুরলা কপালের ছোটো ছোটো চুলে ফুঁ দিয়ে বলে,
“সুরলা নাম আমার, যা চাই তা আদায় করেই ছাড়ি। যেভাবেই হোক। রাস্তা তুই না দেখলেও আমি ঠিকই দেখতে পাচ্ছি, আর কায়দা করে গন্তব্যে ঠিক পৌঁছে যাব। শুধু দোয়া কর, চয়ন তাড়াতাড়ি ঢাকা আসুক। ”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here