#ধর্মের_দেয়াল
-নাফিসা মুনতাহা পরী
পর্বঃ ৭
নাফিসা পিছন দিকে না তাকিয়েই
বলল আপনি ফিরে আসলেন কেন?
রাফসান বলল আমার ফোনটা ভুলে
রেখে গিয়েছিলাম এসে দেখি
কাজের বুয়া দরজা বন্ধ করে চলে
যাচ্ছিল। বললাম চাবিটি দেন আর
বাসায় কেউ আছে।
তোর কথা শুধু বলল। তোকে খুজতেই
এখানে এসে পেয়ে যাই।
আপনারতো স্ত্রী আছে আমাকে
জড়িয়ে ধরার সময়, কিস করার সময়
তাকে একবারও মনে পরেনি?
রাফসান বলল তোরা সবাই মিলে
আমার সাথে কি শুরু করেছিস বলতো?
আমি তোকে ভালবাসি সেটার কোন
দাম নাই তোর কাছে?
নাফিসা পিছন দিকে ফিরে রাফসান
কে জড়িয়ে ধরে।
খুব দেরি করে ফেলেছেন আপনি।
সেদিন ফুফু, চাচীর কথা গুলো
শুনেছিলেন। আমার কথা কেন জানতে
আর চেষ্টা করেননি?
বড্ড ভুল করে ফেলেছেন।
রাফসান পাগলের মত কিস করতে
থাকে আর বলে আমায় ক্ষমা করে দে
পাখিটা। চলনা আমরা বিয়ে করে
ফেলি। আমায় আর কষ্ট দিসনা। আমি
তোকে ছাড়া অসম্পূর্ণ।
এমন সময় কেউ ছাদ থেকে নিচে নেমে
গেল। নাফিসা বুঝতে পারল আজ ওর
কপালে দুঃখ আছে।
– নাফিসা একটা স্মিত হাসি দিয়ে
বলল আমরা পরে আলোচনা করব এই
বিষয়ে। এখন আপনি বাসায় যান। আর
সাথে ফুফুকেও নিয়ে যান। নিজের
খেয়াল রাখবেন।।।
রাফসান কি যেন ভেবে বলল তাহলে
আম্মুর জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
-উনি চলে আসছেন অলরেডি এতক্ষনে।
– নাফিসার কপালে চুমু খেয়ে বলল
নিজের খেয়াল রাখিস। আমি জলদি
আসব তোকে নিতে বলে রাফসান চলে
গেল নিচে।
.
.
.
.
একটু আগে নাফিসা যা দেখলো সেটা
যদি ভুল না হয় তাহলে রাফসান বাসা
থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে ওর
ডাক পড়বে।
.
.
.
আরও কিছুক্ষন ছাদে দাড়িয়ে থাকে।
কিছুক্ষন পর রাফসানের গাড়িটি বের
হয়ে গেল বাসা থেকে।
.
.
.- এবার যেন নাফিসার চোখের
পানির আর বাধ মানছেনা।
আমি নিজেই অলুক্ষনে মেয়ে, আমার
সাথে কেমনে আপনাকে জড়াই।
জাহানারা উপরে উঠে আসল। কোন
কথা না বলে সোজা নাফিসার চুলের
মুঠি ধরে টেনে হিচরে নিচে
নামাতে লাগল।
অচমকায় ওর চুলের মুঠি ধরার জন্য ওর
ব্যালেন্স আর ঠিক রাখতে না পেরে
নিচে পড়ে গেল।
.
.
.
ঐ অবস্থায় ওকে টানতে টানতে
ডাইনিং রুমে এনে সবার সামনে ঝটকা
দিয়ে ফেলে দেয়।
এমন অচমকা কান্ড দেখে বাসার
সবাইতো অবাক।
– বিথী দৌড়ে গিয়ে নাফিসাকে
তুলার চেষ্টা করে। কিন্তু সিড়িতে
পড়ে যাওয়ার কারনে আর উঠতে
পারছেনা বেচারী মেয়েটা।
-বিথী জোরে কেদে ফেলল আর বলল
কত্ত কষ্ট দিবেন আপাকে আপনি?
রাফী বাসায় ছিলনা। ফিরতে হয়ত
লেট হবে।
– সাজ্জাদ বলে, কি হয়েছে ওকে
মারছো কেন।
-জাহানারা দাত খিচিয়ে বলল চুপ!
একদম কথা
বলবেনা আমার কথার উপর।
বলেই নাফিসাকে আবার হিচড়ে
টেনে তুলে গোড়া কয়েক থাপ্পড়
মারল।
– সাজ্জাদ বলছে কি হয়েছে বলবে
তো!
ওকে আজ রাফসানকে ছাদে জড়িয়ে
ধরতে দেখেছি। আমার মেয়ের সংসার
ভাঙ্গতে চাস?
– বিথী ও সাজ্জাদ চমকে ওঠে বলে কি
সব পাগলের মত প্রলাপ বকছো? আপা এমন
টা করতেই পারেনা।
– করতে পারেনা? কেন একবারও মনে
হচ্ছেনা রাফসান বিকেলে চলে
যাওয়ার পর আবার কেন বাসায় আসলো।
ও বেচারা কি করে বুঝবে এটা
এই মাইয়ার খারাপ ইঙ্গিত।
-এবার সাজ্জাদ গিয়ে নাফিসা কে
জিঙ্গেস করে কি রে তোর চাচী যা
বলল সেগুলো কি সব ঠিক?
– নাফিসা কষ্টের মধ্যও স্মিত হেসে
উঠল।
সাজ্জাদ কি বুঝলো না বুঝলো আর বলল
এত দিন দুধ কলা দিয়ে সাপ পুষেছি।
.
.
.
-নাফিসা এবার বলল আপনি পুষেছেন
না আমার বাবা তার মেয়ের জন্য পুষে
রেখে গেছেন?
– এমন কথা শুনে সাজ্জাদ আর নিজেকে
ঠিক রাখতে পারেনা।
নাফিসাকে ইচ্ছা মত মাড়তে থাকে।
বিথী বার বার আটকানোর চেষ্টা
করছে কিন্তু কোন লাভ হচ্ছেনা।
কয়েকটা ম্যার ওর গায়েও পড়ল।
– নাফিসা চিৎকার করে বলে ওঠে
আপনার নিজের সন্তান হলে এভাবে
মারতে পারতেন? অন্যর কথা শুনে।
আপনাকে বলার কিছুই নাই।
নাফিসা বার বার ওর চাচা চাচীকে
উত্তজিত করার চেষ্টা করছে। ওর যে
আজ বাচার আর আশা নাই।
জাহানারা এবার বেশ রেগেই গেল
এবং হাতের কাছে কিছু খুজছিল।
শেষে রান্না ঘর থেকে কাঠের খুন্তি
নিয়ে এসে এলোপাথারি মারতে
লাগল।
এই মহিলা আজ এতটাই বিগড়ে
গেছে যে ওকে খুনই করে ফেলবে।
নাফিসা সেন্সলেস হয়ে পড়ে যায়।
বিথী দৌড়ে গিয়ে ভাইকে ফোন
দিয়ে বলে ভাই জলদি বাসায় আয়
আপাকে আজ মেরেই ফেললো আম্মা
বলেই নাফিসার কাছে গিয়ে বসে
পড়ল।
আম্মা! আপা কেন আমি
নিজেওআপনাকে
কখনও ক্ষমা করবনা।
কি জানি ভেবে জাহানারা রান্না
ঘরে গেল। সাজ্জাদ নাফিসার কাছে
এগিয়ে আসলে বিথী চিল্লায় বলল
খবরদার কাছে আসবেন না। আপনারা ২
জনেই পশু।
.
.
.
রাফী এক দৌড়ে বাসায় এসে দেখে
নাফিসা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে
আর বিথী কেদে কেদে বলছে আপা
আপারে ওঠ তুই। ভাইয়া আসলে সব ঠিক
হয়ে যাবে। আপার ঙ্গান থাকলেতো
আপা উঠবে!
রাফী নাফিসার কাছে গিয়ে বিথী
কে বলল ওকে কে এভাবে মারছে? এমন
সময় জাহানারা একবাটি গরম তেল
আনছে আর জোড়ে জোড়ে বলছে তোর
রুপের কারনে মরদ মানুষকে ফাষাস তাই
না।
এবার তোর ডেমাক যদি না ভাঙ্গছি।
এই কথা শুনে বিথী আৎকে ওঠে ওর
ভাইয়ের দিকে তাকায়। রাফী ও কিছু
হুস না পেয়ে সামনের থাকা টুলটি
মায়ের দিকে ঠেলে দিল অমনি
জাহানারা উষ্ঠা খেয়ে পড়ে গেল
আর গরম তেলের
কিছু ছিটা ওর পায়ে এসে পড়ে।
রাফী সেদিক খেয়াল না দিয়ে বলল
পাগল
হয়ে গেছ আর একবার এদিকে আসলে
আমি ভুলে যাব তুমি আমার মা।
সাজ্জাদ জাহানারার কাছে ছুটে
গেল আর জাহানারা চিল্লে যাচ্ছে
বাবাগো মরে গেলাম। আমার নিজের
ছেলেই আজ আমার শত্রু। শুধু ঐ শয়তান
মেয়ের জন্য।
নাফিসাকে রুমে নিয়ে গিয়ে সুয়ে
দিয়ে বিথী কে বলল ওর ঙ্গান
ফিরানোর চেষ্টা কর আমি একটু পর
আসছি।
আর দরজা লাগিয়ে দে আমি
না ডাকা অবদি দরজা খুলবি না বলেই
রাফী চলে গেল।
বিথী ত কেদেই চলছে আর বলছে আপা
ওঠ রে। আল্লাহ কেন তোর সাথে
এমনটা করে। কিছুক্ষন পড়ে রাফী ফিরে
আসল এসে দেখল
নাফিসার ঙ্গান ফিরছে। ওকে জলদি
ঔষুধ খেয়ে দেয় আর স্যাভলন লাগিয়ে
দিচ্ছে।
রাত ২.৪৫ মিনিটের দিকে নাফিসার
ঘুম ভেঙ্গে যায় দেখে নিচে রাফী
এবং ওর সাথে বিথী ঘুমে আছে।
ধীরে ধীরে ওঠে এবং অনুভব করে
ব্যাথা অনেকটা কমে গেছে। রাফী
আর বিথীর কাছে
একটা চিঠি লিখে বলে আমার কারো
উপর কোন রাগ নেই। যার দুনিয়াতে মা-
বাবা থাকে না তার মত অসহায় আর
কেউ নেই।
৩ টার পর বাসা থেকে বের হয়
নাফিসা। উদ্দেশ্য নদীর দিকে ডুব
দিয়ে মরে যাওয়া। কারন এতে সহজ
হবে
মরতে। সাতার জানেনা তারউপর
বর্ষাকালের ভরা নদী।
মৃত্যুই সব কিছুর সমাধান হতে পারে না।