যবনিকা। (অন্তিম পর্ব) #আফিয়া_খোন্দকার_আপ্পিতা।

0
2050

#যবনিকা। (অন্তিম পর্ব)
#আফিয়া_খোন্দকার_আপ্পিতা।

৯.
আতিফের পরকীয়ার খবর জানার পর আমার পায়ের তলার মাটি সরে গেল যেন। ভালোবাসা এভাবে রঙ বদলায়? যে মানুষটা এক সমুদ্র স্বপ্ন দেখিয়ে আমার হাত ধরেছিল, আমাকে ঘিরে ছিল যার শত পাগলামো। আমার পাবার জন্য পরিবারের সাথে লড়েছিল, সবাইকে মানিয়ে সম্পর্কে বিয়েতে গড়িয়েছিল, সেই মানুষটা আজ কিভাবে অন্যের হয়ে গেল? আমাতে আসক্ত হয়ে নীল কাগজে সই করে নিজে করে পেয়ে যেই মানুষটা নিজেকে ধন্য ভেবেছিল, বিয়ের বছর গড়াবার আগেই সেই মানুষটা অন্য কারো ভালোবাসার ঘরে কড়া নাড়ল!
যে মানুষটাকে ভালোবেসে আমি সব ছাড়লাম, যার মায়ায় আমি শ্বাশুড়ির অত্যাচার সইলাম, তার ভালোবাসা আজ অন্য কারো বাস! ভালোবাসা কি এত তাড়াতাড়ি উবে যায়? এত ভালোবাসার পর কিভাবে মানুষ পর হয়?
কত পাগলামো করে বিয়ে করল আমায়? বিয়ের আগে আমার প্রতি ওর পাগলামো দেখে বান্ধবীরা বলতো, আমি ভীষণ ভাগ্যবান, নইলে এত ভালোবাসা আজকাল মেলা ভার।
অথচ আজ আমি কোথাও ভালোবাসার আঁচ টুকু ও পাইনা। কেবলই অনুভব করি সে মানুষটা আমার থেকে বহুদূর চলে গিয়ে অন্য কারো হাত ধরেছে। এক ঘরে, এক বিছানায় থেকে ও আমি তার নাগাল পাইনা। তার ধ্যানে জ্ঞান জুড়ে অন্য কেউ।

আমি ওর পরকীয়ার আঁচ পাই আতিফ ট্যুর থেকে ফেরার পর। ওর আচার আচরণ কেমন বদলাতে শুরু করল। আগেই এমন ছিল হয়তো, আমিই এত সন্দেহ নিয়ে দেখেনি। নিস্তব্ধ পুরীতে আতিফের শূন্যতা আমাকে পোড়াচ্ছিল না চাইতেও। অভ্যাস কিংবা মায়ায় বারবার ওকেই স্মরণ করেছি। কেমন এক অদ্ভুত শূন্যতা অনুভব করছিলাম। রুমের প্রতিটি কোণায় ওর স্মৃতি বড্ড তাড়া করছিল আমায়। আলোড়নে দু’চারবার কল ও দিয়ে ফেলেছিলাম। বরাবরই তাকে ব্যস্ত পেয়েছি।

লেখকঃ আফিয়া খোন্দকার আপ্পিতা।

তিন দিনে নিজ থেকে একবারো কল দেয়নি। আমি দিলেও বলতো, এখন এখানে, ওখানে যাচ্ছি, ব্যস্ত আছি পরে কল দিব।
সেই পরটা আর হয়নি।

তিন দিনের ট্যুর, আতিফ বাড়ি ফিরেছে পাঁচদিন পর। জিজ্ঞেস করতেই বলল, ওখানে এক বন্ধুর বাসা ছিল, সেখানে থেকে গেছে।

ট্যুর থেকে ফিরে আতিফের ব্যস্ততা বাড়ল বৈ কমল না। সন্ধ্যে ফেরা অফিস, রাতে গড়াল। এসে খেতে বসে খাবারের খুঁত ধরে রাগারাগি শুরু করতো।
“কী রাঁধছো এটা? এত বাজে খেতে!”

কখনো প্লেট উলটে ঘরে চলে যেত। সারাদিন কেমন খিটখিটে আচরণ করে। আগে আম্মা আমার সব কাজে দোষ ধরতেন। রাহেলার বৈরী আচরণের পর আম্মার এখন কিছুটা শিথিল হয়েছেন। সব কথায় চড়াও হন না। দিনে নিয়ম করে তিনবেলা রাহেলাকে গালমন্দ করে অভিশাপ দেন। তার ছেলেকে তার কাছে থেকে দূরে সরানোর জন্য।

দুবেলা ছেলের আর নাতির জন্য কাঁদেন। আর একবেলা কেবল আমার টুকটাক দোষ ধরেন। তবে আগের মতো চেঁচিয়ে উঠেন না। এখন ঠান্ডা কথায় মনে করিয়ে দেন, আমি যেন রাহেলার মতো তার ছেলেকে তার থেকে দূরে না সরানোর সাহস করি। তবে আগের থেকে ভালো দিক হলো, এখন খেতে বসে আম্মা আমাকে খেতে ডাকেন। একসাথে খাওয়া হয়।

আম্মার সব দায় নিয়েছে আতিফ। এখন সে আমার সব কাজে দোষ ধরে। আমার কোন কাজই তার মনমতো হয়না। সোজা জিনিস ও বাঁকা মনে হয়। যতক্ষণ বাড়ি থাকে ধমকাধমকির উপর থাকে। তুই তুকারি করে। কখনো তেড়ে আসে।
ওর পরিবর্তনটা চোখে লাগার মতো।
বাড়িতে থাকলে প্রায়ই ওর ফোনে কল আসে। ফোন নিয়ে বাইরে চলে যায়। ঘন্টাখানেকে ও আসে না। আগে শুক্রবার বাড়ি থাকত। বাজার করতো। কিছু এখন শুক্রবারে সকালে বেরিয়ে যায় গভীর রাতে ফিরে।
সংসারের প্রতি কোন খেয়াল নেই তার। বাজার সদয় কিছুই করেনা। কোন খরচই দেয়না। কদিন খেয়াল করে আমি এক শুক্রবার ওকে বললাম,
” কোথায় যাচ্ছ?”

আতিফ বিরক্তি নিয়ে বলল,
” বেরুচ্ছি।”

” এই শুক্রবারে এমন রেডি হয়ে কোথায় যাচ্ছ?”

“যেখানে ইচ্ছে যাব, তুমি জিজ্ঞেস করার কে? ”

ওর বলার ভঙ্গি দেখে অবাক হলাম,
“আমি তোমার বউ।”

আতিফ নিজেকে আয়নায় দেখতে দেখতে বলল,
“নিজেকে আয়নায় দেখেছ? বস্তির মানুষের মত লাগে দেখতে। আমার বউ হবার যোগ্যতা আছে তোমার?”

আমি ক্ষুব্ধ স্বরে বললাম,
” আমাকে এমন দেখেই তো ভালোবেসে বিয়ে করেছিলে। যেন আজ নতুন দেখছো!”

আতিফ নির্দ্বিধায় বলল,
” ভুল করেছিলাম। কী ভেবে যে তোমাকে আমার পছন্দ হয়েছে ভেবে পাইনা। ”

আমি আরও কিছু বলতে নিলাম, আতিফ ধমকে উঠল,
“সকাল সকাল ঘ্যানঘ্যান করিস না তো! এই বিচ্ছিরি চেহারা নিয়ে আমার সামনে আসবিনা। তোকে দেখলেই আমার রাগ হয়।”

আতিফ বেরিয়ে গেল। একদম টিপটপ হয়ে। যেমন করে সে আগে আমার সাথে দেখা করতে যেত। আমার বুকে কাঁপন ধরল, আতিফের জীবনে কি কেউ আছে?

নিশ্চিত হতে ওর ঘুমের ভানে ফোন হাতে নিলাম। আতিফের ফোনের পাসওয়ার্ড জানা ছিল আমার। সেটা দিয়ে ট্রাই করতে ভুল এলো। ফোনের কড়া সিকিউরিটি, খুলতে পারলাম না। আমার সন্দেহ বাড়ল।


আতিফের ফোন বাজছে অনবরত। আতিফ বাথরুমে। বারবার বাজতে দেখে আমি উঁকি দিলাম, দেখলাম, তিশা নাম ভাসছে। আতিফের আত্মীয়মহলে এ নামের কেউ নেই। কে তবে? কলের মাঝে একটা ম্যাসেজ এলো,
আপদটা চলে গেছে দাদীর সাথে। তাড়াতাড়ি আসো।

কোথায় যাবে আতিফ? কে আপদ? কোন দাদী? প্রশ্নগুলো মাথায় ঘুরতে লাগল। ফের ফোন এলো। ধরতেই, কানে এলো এক মেয়ালি গলা। কন্ঠে তার ভরা আবেদন,
” বাসায় কেউ নেই, রাত রাঙাতে চলে আসো। আমি রেডি হয়ে বসে আছি।”

অন্যরকম আবেদনময়ী গলা! এ গলাটা খুব ঘনিষ্ঠ হওয়া মানুষের সাথে ঘনিষ্ঠ ক্ষণে শোনা যায়। আতিফের সাথে তবে এই মেয়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে….!
শুধু প্রেম নয়, আতিফ তার বাসায় ও…..
আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। স্তব্ধ হয়ে বসে রইলাম।
মাথা ঘুরে উঠল যেন। মেয়েটা হ্যালো হ্যালো বলে কল কেটে দিল। আমার যেন কিছু বিশ্বাস হচ্ছিল না। আতিফ রাগচটা ঠিক আছে, কিন্তু এমন দুশ্চরিত্ররূপে বিশ্বাস হচ্ছিল না। ফোনটা লক হয়ে গেল। আমি কী ভেবে ইংরেজিতে তিশা শব্দটা পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করলাম। আমার বুকে আলোড়ন তুলে লক খুলে গেল।

লেখকঃ আফিয়া আপ্পিতা।
ফাটল ধরা হৃদয়টা পুরোপুরি ভাঙল হোয়াটসঅ্যাপে ওদের কনভারসেশন পড়ে। ওদের অন্তরঙ্গ ছবি, কথোপকথন, প্রেমালাপ পড়ে আমার দুনিয়া নড়ে উঠল। আমি ঝাপসা চোখে চেয়ে রইলাম, আতিফের পাঠানো ‘ভালোবাসি’ ম্যাসেজটায়।
এভাবে ভালোবাসার রদবদল হয়!

আমার বুক ভেঙে কান্না এলো। শ্বাশুড়ির এত অত্যাচার সহ্য করে, হাজার কাজ সামলে যার জন্য পড়ে আছি এই সংসারে, সে এই মূল্য দিল! আমি ফোনটা হাতে নিয়েই বসে রইলাম। আতিফ বাথরুম থেকে বেরিয়ে আমার হাতে ওর ফোন রেখেই তেড়ে এলো। আমি ছলছল চোখে প্রশ্ন করলাম,
” তুমি এই মেয়েটার সাথে…..

ডুকরে উঠলাম আমি। আতিফ চো মেরে ফোনটা নিল। স্ক্রিনে এক পল তাকিয়েই চেঁচিয়ে উঠল,
” থপড়িয়ে দাঁত লাল করে দেব। কোন সাহসে আমার ফোন চেক করেছিস? ”

” ঘরে বউ রেখে অন্য নারীর দিকে ঝুঁকতে একটুও বাঁধল না তোমার? ওই কুক্কুরীর বিছানায়…..ছিঃ আতিফ! আমাকে এভাবে ঠকালে তুমি!” আমি একটু চেঁচিয়ে উঠলাম।

ওই নারীর দিকে আঙুল তুলতেই আতিফ চড়াও হলো। এমন করে আতিফ কখনো আমার জন্য রুখে দাঁড়ায় নি। ঠাস করে চড় বসাল গালে। চুলের মুঠি ধরে বলল,
” ওকে নিয়ে একটা বাজে কথা বলবি জিব টেনে ছিঁড়ে ফেলব।”

” কুক্কুরী ছাড়া কেউ পরকীয়া….

শেষ করবার আগে বৃষ্টির মতো টুপটুপ করে পড়ল আমার পিঠে লাঠির বাড়ি। আমার আর্তনাদে এতক্ষণে আম্মা ছুটে এলেন। জীবনে প্রথমবার একটু দয়া হলো আমার উপর। বাঁচাতে এলেন। ছেলের হাত থেকে লাঠি নিয়ে ধমকে উঠলেন,
” করতেছিস কি? মাইয়্যার কিছু হইলে জেলের ভাত খাইতে অইব। ”

আতিফ রাগে গরগর করে বলল,
” এই খা* রে আজই বিদায় কর। আমার ঘরে আর যেন না দেখি। বে* অপয়া,…

আতিফ চলে গেল। আমি যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগলাম মেঝেতে। আম্মা এসে চড়া গলায় বললেন,
“জানো পোলাডার মাথা গরম। বুইঝা চলবা না? তাইলে ত আর মার খাইতে হইতোনা।”

আম্মা তখনো জানেন না ছেলের কীর্তি। জেনেও এর বেশি কিছু বললেন নি। কেবল বললেন,
“পোলা মানুষ ওমন এক আধটু করবোই। বউ হইয়্যা আটকাইয়্যা রাখতে পারলানা?”

আম্মা মলম ফেলে দিয়ে চলে গেলেন। আমি স্থির হয়ে পড়ে রইলাম এখানে। বুক ভেঙে আসছিল। এত যন্ত্রণা হচ্ছে!

যার কথা ভেবে এই সংসারে পড়ে রইলাম, সে যখন আমার রইলো না তখন আর কার জন্য থাকব?
কোনমতে নিজেকে টেনে তুলে বাপের বাড়ি চলে এলাম। আমি জানি, ওখানে ও আমার জায়গা হবেনা। সমাজ আমাকে টিকতে দিবেনা। কিন্তু এই রুগ্ন শরীর নিয়ে যাবার মতো আর কোন ঠাঁয় নেই আমার।

____________

আমার অবস্থা দেখে বাবা মা থমকে গেলেন। মা আঁচলে মুখ গুঁজে কাঁদতে কাঁদতে আমার গায়ে মলম লাগাতে লাগলেন। স্বামীর মার খেয়ে বিছানা নিলাম আমি। দু’দিন পর সেই জেঠী আমার ঘরে এলেন,
” একডা বছর ও জামাইরে আঁচলে বাইধা রাখতে পারলা না। জামাই অন আরেক বেড়ি লগে ধরা খাইতেছি। ছিঃ! ”

আমি অবাক হলাম! উনি কিভাবে জানলেন? আমি তো কাউকে বলিনি! মাও বলেন নি। তবে? পরে ঘাটাতে গিয়েই জানতে পারলাম,
আতিফ তার পরকীয়া সঙ্গী সাথে ধরা খেয়ে এখন জেলে!

তিশা বিবাহিত। তার একটা তিন বছরের বাচ্চা আছে। স্বামী বিদেশ থাকে। শ্বাশুড়ির সাথে ঝগড়া করে একা বাসায় উঠেছে। বাচ্চা আর কাজের মেয়েকে নিয়ে থাকে। স্বামী না জানিয়ে হুট দেশে আসে, বউকে সারপ্রাইজ দিবে বলে । এসে নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে যায়। তার ছেলেকে কাজের মেয়ের কাছে বাসায় রেখে তিশা বাইরে গেছে। কাজের মেয়ের মারফত জানতে পারে স্ত্রীর প্রেমিকের সাথে লীলাকীর্তি। প্রায়শই বাসায় আসে লোকটা। দু’দিন আগে তাকে আর ছেলেকে পাঠিয়ে দিয়েছে। একলা বাসায় প্রেমিককে ডেকে…

কাজের মেয়ে ও জানে সব। তিশা তাকে হুমকি দিয়ে রেখেছে, মুখ খুললেই গায়েব করে দিবে। সরল মেয়ে কাউকে বলেনি তাই।

মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, রক্তমাংস ঝরিয়ে যার জন্য টাকা আয় করছে, বিদেশ পড়ে আছে, তার এই ছলনা মানতে পারেনি প্রবাসফেরত স্বামী মিজান। কঠোর প্রতিশোধের পরিকল্পনা কষলেন। হাতে নাতে ধরবার পাঁয়তারা করে লুকালেন ঘরে। স্বাভাবিক নিয়মে তিশা বাড়ি ফিরল। একলা নয়, প্রেমিক সমেত। বাচ্চার খোঁজটাও নিল না। ঘরে গিয়ে দোর দিল। খানিক বাদেই সে ঘর থেকে হাসির শব্দ, শীৎকার ভেসে এলো।

সবটাই পরখ করল মিজান। মাতাল হাওয়ার মোক্ষম সময়ে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে গেল মিজান। একবারে হাতে নাতে পাকড়াও করল দুজনকে। তার হৈচৈ চিৎকার চেঁচামেচিকে লোক জড়ো হলো। ছিঃ ছিঃ করে গণধোলাই দেয়া হলো দুজনকে। সবচেয়ে বেশি মারা হলো প্রেমিককে। আধামরা করে পুলিশে দেয়া হলো।

যুগটাই প্রযুক্তির আওতায়। হাতে হাতে ফোন, ক্যামরা। এ সমস্ত চিত্র ভিডিও করে, দৃশ্যপট লিখে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছাড়িয়েছে উপস্থিত জনতা। এক থেকে দুই.. করে করে তা ভাইরাল।

যার ফলশ্রুতিতে খবর আমাদের বাড়ি অবধি এসে পৌঁছাল। বাবা বললেন, ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। আল্লাহ ছাড় দেন, তবে ছেড়ে দেন না।
মা খুশি হলেন, ভয় পেলেন। মেয়ের ঘর ভাঙার, দুর্নাম বয়ে আনা মেয়ের জন্য অপর মেয়ের বিয়ে না হবার ভয়।

আমি কিছুই বললাম না। ভিডিওতে লোকলজ্জায় উদাম গায়ের আতিফকে মাথা নিচু করে থাকতে, মার খেতে দেখেও আমার বুক কাঁপল না। আশ্চর্য! পুরো ভিডিওটা দেখলাম। তিশাকে মার খেতে দেখে ওর বাচ্চাটা মা মা বলে কাঁদছিল, তাও চোখে পড়ল।
আমার শুধু বাচ্চাটার জন্য দুঃখ হলো।

কানে ভাসছে ‘আপদ ‘ শব্দটা। সে যে মায়ের জন্য কাঁদছে, সেই মা তাকে ‘আপদ’ ভাবে। মা সন্তানকে আপদ ভাবে। কী ভয়ংকর কথা! তিশার স্বামীর হতাশ মুখটাতে ভীষণ দুঃখ! জীবনের সুখ উজাড় করল, অথচ কী পেল? দেশে যাতে বউটা ভালো থাকে তাই লেবারের কাজ করে, খেয়ে না খেয়ে টাকা পায়। সেই টাকাতে বউ প্রেমিক নিয়ে ফুর্তি করে!

লোকটা বোধহয় বউকে তালাক দিবে। বাচ্চাটাকে নিজের কাছে রাখবে। বলতে শুনলাম। বাচ্চাটার কী দোষ? সে কেন মা হারাবে? সে কি এমন মা ডিজার্ভ করে?
লোকটার কী দোষ? আমার কী দোষ? কেন আমরা শাস্তি পেলাম?

__________________

স্ত্রীর ছলনা আর সম্মানহানিতে ক্ষুদ্ধু হয়ে মিজান গোটা বিশেক মামলা ঠুকেছেন আতিফের বিরুদ্ধে। থানা পুলিশ হাত করে পণ করেছেন, সারাজীবন জেলে পঁচে মরাবেন। দু’হাতে টাকা ঢালছেন, প্রভাবশালী লোক ধরেছেন। শক্তপোক্ত যত অভিযোগ তুলেছেন তার বিচার হলে মনে হয়না বছর পাঁচেকের আগে ছাড়া পাবে।

উকিল ম্যানেজ তো দূরে থাক, আতিফকে জেলে দেখতে যাবার ও কেউ নেই। তার এলাকায় ছিঃ ছিঃ রটে গেছে। বউ রেখে অন্য কার বিছানায় ধরা পড়েছে, এ কী নোংরা কথা! আত্মীয়মহলের কেউ পরিচয় দিতেও রাজি নয়, থানায় যাওয়া তো দূর।
বড় ভাইয়ের সাথে আগেই ঝামেলা, তিনি খুশি বৈ দুঃখী হবেন না। এক বোন আছে। ভাইয়ের কেচ্ছায় শ্বশুরবাড়িতে টেকা দায় হয়েছে তার। পেপার পত্রিকা, সোশ্যাল মিডিয়ায় যখন এসব নিউজ প্রচার হচ্ছে তখন আপাকে পাঠাচ্ছে সব। কেউ টিপ্পনী কাটছেন। লজ্জায় আপার মাথাকাটা যাচ্ছে। সেই ভাইকে ছাড়াতে গিয়ে লজ্জার মাথা খেতে পারবে না বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন।

বাদ বাকি রইল আম্মা। একলা মানুষ। কী করবেন তিনি। থানা ও চিনেন না। এই কঠিন সময়ে আম্মার আমাকে স্মরণ হলো। একটা কল দিলেন। সন্তানহারা মায়ের আর্তনাদ ভেসে এলো। অঝোরে কেঁদে অনুরোধ করলেন, তার ছেলের কাছে নিয়ে যেতে, তার ছেলেকে ছাড়িয়ে আনতে।
এসব মিথ্যা, সবাই তার ছেলেকে ফাঁসাচ্ছে। আতিফ নির্দোষ।

অন্যের বিছানায় ধরা পড়া পুরুষের পক্ষ বিপক্ষে হয়ে সায় কিংবা রায় কোনটাতেই গেলাম না আমি। আম্মার কান্নার বেগ বাড়ল। আমি তবুও নিশ্চুপ রইলাম। আমার ঘরে পাড়াপ্রতিবেশিদের ভীড় জমল। কেউ সান্ত্বনা দিল, কেউ টিপ্পনী কাটল,
” ঘরে বউ থাইক্ক্যা যদি পুরুষ বাইরে যায় তয় বউ আছে ক্যা? এগুলান ত বউর দোষ। স্বামীরে আটকাইয়্যা রাখতে জানে না, এ কেমন বউ?”

কেউ বলল,
“আমি আগেই ভাবছিলাম, এ পোলার চরিত্র ভালা না।”
অথচ ইদের আগে বাপের বাড়ি কটাদিন বেশি থাকতেই তিনিই রটিয়েছেন, আমার চরিত্রে দোষ আছে। আমি ঘর করতে পারতেছিনা।

আমি সব শুনলাম। দোষ ও বরণ করলাম, আসোলেই আমার দোষ। রান্নাঘরের কাজ বাদ দিয়ে সারাদিন সেজেগুজে বসে থাকা উচিত ছিল। স্বামীর মনোরঞ্জনই আমার একমাত্র লক্ষ হওয়া উচিত ছিল। আমারই ব্যর্থতা, কেন আমি সেজেগুজে স্বামীর সামনে নিজেকে প্রদর্শন করে গেলাম না। কেন কাজ করলাম? আমার র‍্যাম্প মডেল হওয়া উচিত ছিল। এক হাতে খুন্তি অন্য হাতে লিপস্টিক রাখার দরকার ছিল।

দিন তিনেক যাবার পর আম্মা পাগলপারা হয়ে আমাদের বাড়িতে ছুটে এলেন। আমার হাতে পায়ে ধরলেন। আঁচল মেলে কেঁদে আকুতি করলেন,
“আমার পোলাডারে ভিক্ষা চাইতেছি। আইন্না দাও, মা। ওরা আমার পোলাডারে মাইরা ফেলাইব। আমি এক নজর দেখবার ও পারিনাই। আমার পোলাডারে আমার কাছে ফিরাইয়্যা দেও। পোলাডার তুমি ছাড়া কেউ নাই। স্বামীরে সব কিছু থেইক্যা বাঁচানো তোমার দায়। ”

আদেশ, উপদেশ, পরামর্শ, অনুরোধ, আকুতি বিনতি কোন কিছুই বাদ রাখলেন না। বিয়ের পর প্রথমবারের মতো এক বাক্যে তিনবার করে ‘মা’ সম্বোধন করা দেখলাম। মা বলে পায়ে পড়ার জোগাড়। আম্মার আকুলতা এত বেশি যে আমাকে ভাবাতে বাধ্য করল। আমি আতিফকে দেখতে যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম।

আমার পরিবার, পাড়াপ্রতিবেশি কড়া মানা করল। আমাকে বেহায়া উপাধি দিল, যে স্বামী অন্য নারী সাথে বিছানায় ধরা খায় তাকে দেখতে যাচ্ছি, বেহায়া না হলে কেউ এমন করে?
মা রেগে বললেন,
“তুই আর যাইতে পারবিনা। ওই নষ্টা পোলা জেলে পইচা মরুক। লাত্থি মাইরা ছাইড়া আয়। আইজগা যদি তুই ওই পোলার কাছে যাচ, এ ঘর বন্ধ তোর লিগা। ”

মানুষটাকে আমি এক সময় ভীষণ ভালোবেসেছিলাম। এত কিছুর পরও যার ছিঁটেফোঁটা রয়ে গেছে। সে অন্যতে আসক্ত বলে আমার গায়ে হাত তুলতে দ্বিধা করেনি, কিন্তু আমি তো কারো আসক্ত নই। আমার দ্বিধা হচ্ছে, আমি পারব না।

কারো কথা শুনলাম না। পরদিনই আম্মাকে নিয়ে গেলাম জেলে। কথা বার্তা বলে আতিফের সাথে দেখা করতে গেলাম।

__________________

সারা শরীরে মারে দাগ নিয়ে এক কোণে হেলে পড়ে আছে আতিফ। স্যান্ডো গেঞ্জি গায়ে। হাতের রেখায় রেখায় কাটা দাগ। রক্ত জমে কালসিটে দাগ বসেছে। কে টে ফুলে একাকার। কোথাও আবার তাজা রক্ত লেগে আছে। শরীর ভেঙে পড়েছে। ছেলের অবস্থা দেখে আম্মার মূর্ছা যাবার অবস্থা। হায় হায় করে উঠলেন। মায়ের কথা শুনে আতিফ শরীরের অবস্থা ভুলে দৌড়ে এলো। মা-ছেলের এক চোট কান্না হলো। আম্মা আশ্বাস দিলেন ছেলেকে,
“আমরা আইয়্যা পরছি। এবার তোরে ছাড়াইয়্যা নিয়া যামু। তোর বউ ও আইছে।”

এতক্ষণ আমি আড়ালে ছিলাম। আতিফের সামনে যাইনি। এবার সামনে গেলাম। শান্ত চোখে ওর দিকে তাকালাম। আমি তাকাল না আমার দিকে কেন যেন?
জেলে ডান্ডার বাড়ি খেয়ে ঠান্ডা হবার কালে প্রেমিকাকে মনে আসেনা, মনে আসে শুধু নিজের ভুল গুলো। আতিফের ও হয়তো মনে পড়ছে।

আম্মা বললেন,
” পোলাডারে বুঝাইয়্যা কও, তুমি ওরে ছাড়াইয়্যা নিয়া যাইতে আইছো।”

আমি তখন আতিফের দেহের ভাঁজে প্রতিটা মার গুণে দেখছিলাম। বত্রিশটা হলো সবে। আম্মার কথায় শতকরা এলোমেলো হয়ে গেল। বিরক্ত হলাম বটে। আম্মার উপর, নিজের উপর ও। আতিফের চোখের দিকে তাকালাম। আমার চোখে একের পর এক আতিফের কীর্তিগুলো ভাসছে। শান্ত স্বরে বললাম,
” তোমার মনে হয়, আমার তোমাকে ছাড়িয়ে নেয়া উচিত?”

আতিফ থমকাল এ প্রশ্নে। চমকে তাকাল এক পলক। আমার রক্তচক্ষুতে নজর মেলাতে পারল না। আগেকার কথা স্মরণে এলো বোধহয়। চট করে মাথা নোয়াল। আম্মা উদ্ধিগ্ন হয়ে বললেন,
“ক্যান মনে হইব না? তুমি ওর বউ, স্বামীরে রক্ষা করা তোমার ধর্ম।”

আমি আলগোছে হাসলাম,
“আর স্বামীর ধর্ম বুঝি অন্য নারীতে মত্ত হওয়া? পরিবার বউকে কথায় পিষলেও টু শব্দ না করা, আর অন্য নারীর দিকে আঙুল তুলতেই গায়ে হাত তোলা?”

আতিফ অনুতাপ নিয়ে চাইল। আমি তাকালাম না ওর দিকে। আম্মার দিকে তাকিয়ে বললাম,
” আমি আপনার পোলারে ছাড়াইতে আসিনাই আম্মা।”

আম্মা আকাশ থেকে পড়লেন যেন,
“মানে ডা কী? ”

“এতদিন যাবত সংসারে আমার উপর যত কিছু অন্যায় হয়েছে সবকিছুর জন্য ক্ষমা করতে পারলেও পরকীয়ার জন্য কোন ক্ষমা করতে পারব না। ”

আম্মা রেগে গেলেন,
“ওরে না ছাড়াইলে ক্যান আইলি তুই? রূপ দেখাইতে? আমার পোলারে না ছাড়াইলে সংসার করবি কার লগে? নাগর জুটাইছস?”

রাগে আম্মা পূর্বের স্বরূপে ফিরে এলেন। নিচু গলায় দু’চারটা গালিও দিলেন। আমি সেসব গায়ে মাখলাম না। লম্বা শ্বাস টেনে বললাম,

“আমি এসেছি আপনার ছেলেকে বাবা হওয়ার দুঃসংবাদটা দিতে।”

আম্মার রাগ উবে গেল, হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে রইলেন। আতিফ স্তব্ধ হয়ে তাকাল। আমি স্পষ্ট দেখলাম, ওর গা কেঁপে উঠল। হাত বাড়াল আমার দিকে। আমি ছিটকে সরে এলাম। শক্ত গলায় বললাম,
” একদম হাত বাড়াবেনা। আমি চাইনা, তোমার মতো দুশ্চরিত্র, লম্পট লোকের ছায়াও আমার সন্তানের উপর পড়ুক। নেহাৎ তুমি বাবা বলে খবরটা দিতে আসা।
ভাবলাম, বাচ্চাকে তো পাবেনা, অন্তত জেনে রাখো, প্রচন্ড দুর্ভাগ্য নিয়ে তোমার সন্তান হিসেবে কেউ একজন আসতে যাচ্ছে।”

আম্মা কেঁদে উঠলেন এবার,
“বাচ্চাডার কথা ভাইবা সব ভুইলা যাইয়া সংসার করো। মাফ কইরা দাও!”

” কার সাথে সংসার করব? যে অন্যের বিছানায় ধরা খায়? পরকীয়া সাধারণ অপরাধ নয়, প্রচন্ড ঘৃণিত কুখ্যাত অপরাধ। আমি ওকে ভালোবেসে পরিবার ছেড়ে ওর হাত ধরে এসেছি। কখনোই যা করিনি, সংসার বাঁচাতে সব করেছি। তবুও ওর মন পেয়েছি? আমার কোন সমস্যা হলে আমাকে বলতো। আমি ঠিক করে নিতাম। ও কি একটাবার আমাকে বুঝার চেষ্টা করেছে? আমাদের মাঝে সমস্যা হলে বলতো, দুজন বসে সমাধান করতাম। এ যদি আমাকে একটু বুঝতো, একটু সময় দিত, আগল নিত তবে খুব সুন্দর একটা সম্পর্ক হতো এখন।
সারাদিন কাজ করেও যতটুকু পারি ওকে সময় দিয়েছি। বিনিময়ে এই দিল?
দিনের পর দিন ও আমাকে ঠকিয়ে গেছে। এটা ভুলে যাব?
ও তো ওর পাপের শাস্তি পাচ্ছে। কিন্তু আমি কিসের শাস্তি পাচ্ছি? ঘরে টেকা যাচ্ছেনা মানুষের কথার জন্য? এখানে আমার দোষটা কোথায়? আমার জীবন কেন নষ্ট করল ও?

আর আমার বাচ্চাটা ওর কী দোষ? ও কিভাবে দুশ্চরিত্র বাবার পরিচয়ে বেড়ে উঠবে? কাল যখন বাচ্চাটা বড় হবে, তখন আশপাশের মানুষ তাকে যত্ন করে মনে করিয়ে দিবে তার বাবা অন্য নারীর সাথে নষ্টামি করতে যেতে ধরা খেয়ে জেলে। ও তখন কী শিক্ষা পাবে? বাচ্চাটাকে কেউ আস্ত রাখবে?

আপনার ছেলেকে আমি ছাড়িয়ে আনলাম, দু’দিন পর সে আমার বাচ্চার সামনেই অন্য নারীর সাথে….
ওই বাচ্চার সামনে তো ওরা এমনই করতো।
কী ভুলব? কিসের জন্য মাফ করব? মারের জন্য ? না কি ভিডিওর জন্য। ”

” পোলা মানুষ ওমন এক আধটু করেই….

“না আম্মা এ বলে আপনি ছাড় দিবেন না। পরকীয়ার সব ভার নারীর নয়। নারীই সবসময় সমাজের কটাক্ষ সয়, পুরুষ পার পেয়ে যায়। অথচ সেও সমান দোষী। ঘরে বউ রেখে সে অন্যদিকে ঝুঁকবে কেন? মাঝরাতে সেই নারীর বাড়ি যায়, মেয়েটা আসেনা। আপনার ছেলে ওই মেয়ের জন্য দু’দিন সিলেট থেকেছে। ওই মেয়ের বাসায় গিয়েছে। এখানে কি কেউ তাকে বাধ্য করেছে? বাচ্চাটার প্রতি মায়া হয়নি?
আমাদের চারটা জীবন নষ্টের জন্য আপনার ছেলেও ততটুকু দায়ী যতটা ওই মেয়েটা। তারও শাস্তি প্রয়োজন কঠিন শাস্তি। পেতেই হবে। আজ ছাড় ফেলে কাল আরেকটা ঘর ভাঙবে। দুঃখিত মা, পরকীয়ার কোন ক্ষমা নেই। শুরু শাস্তি আর ঘৃণা।”

আতিফ কাঁপা গলায় বলল, ‘স্যরি!”

আমি তাচ্ছিল্যের হাসি দিলাম। নেহাৎ চৌদ্দ শিকের ঘরে আছে, ছাড়া ফেলে কালই ওই মেয়ের কাছে যাব। আমার গায়ে হাত তুলবে। আমি শুধুই এখন জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার মাধ্যম। আর কিছুই না।

ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,
“স্যরি! মানুষ খু ন করে স্যরি বললে সে জীবিত হবে? এক স্যরিতে তুমি তোমার চরিত্র শুদ্ধ করতে পারবে? সব মুছে ফেলতে পারবে? আমার গায়ের দাগ মুছতে পারবে? তুমি জঘন্য পাপ করেছো। যে পাপ ধুয়ে যায় না, মুছে যায় না, ভোলা যায় না। শুধু জীবন ধ্বংসে যায়। ”

আতিফ মাথা নোয়াল। আমি বললাম ফের,
” তুমি আমাকে ছাড়তে চাইছিলেনা? যাও আজ আমি তোমাকে মুক্তি দিলাম। আমি এবং আমার বাচ্চা চিরতরে তোমাক ছেড়ে দিলাম। জীবনে আর দ্বিতীয়বার আমার সামনে পড়বেনা। চরিত্রের সাথে তুমি বাচ্চার অধিকার ও হারিয়েছো। তুমি কখনো দেখবে না তোমার বাচ্চাকে। শুনবে না ওর কথা। শুধু জেনে থাকবে, তোমার একটা সন্তান আছে। যে তোমার ভালোবাসা পাবার আগে আঘাত পেয়েছে। পরকীয়া নামক বিষ খেতে সে থাকা গর্ভে তোমার আঁচড় পেয়েছে। যে কখনো তোমাকে বাবা ডাকবে না।
আমি বা আমার সন্তান কখনো তোমাকে মাফ করবেনা। পরকীয়ার কোন ক্ষমা নেই। পরকীয়ার কোন সান্ত্বনা নেই, যুক্তি নেই,
তাদের ভালো থাকতে নেই, তাই কিছু নেয়া দেয়া করছিনা। ”

অল্প শোকে কাতর অধিক শোকে পাথর। আমি বোধহয় পাথর হয়ে গেছি। এত সাহস কোথা থেকে এলো কে জানে? হয়তো ধাক্কা খেয়ে পাক্কা হয়েছি। যাদের সাথে চোখ তুলে কথা বলতেও আমার দ্বিধা হতো আজ তাদের মুখের উপর ঝামটা মেরে এলাম! নিজের সাহস দেখে নিজেই অবাক হলাম।

লেখকঃ আফিয়া আপ্পিতা।

জেল থেকে বেরুবার আগে আরও একটা কাজ করলাম। বিয়ের পর আতিফ আমাকে একটা সোনার কানের দুল দিয়েছিল। কানে পরা ছিল। আসার আগে জুয়েলার্সে গিয়ে বিক্রি করে এসেছে। বেশ চড়া অংক হাতে। সবটা জেলারের হাতে তুলে দিলাম, বললাম,
” প্রতি মাসে অন্তত দু’বার করে খাতিরদারি করবেন। মনে করিয়ে দিবেন দুটো বাচ্চার কথা। সেই স্মরণে যেন সারা মাস কাটাতে পারে। বছর খানেক অবধি এই খাতিরযত্ন বজায় রাখলে আমি কৃতজ্ঞ হবো।”

পেটে হাত দিয়ে বেরিয়ে এলাম। কড়া রোদে হাঁটা ধরলাম, জানিনা কোথায় যাব। শুধু জানি, এই সমাজ আমাকে ভালো থাকতে দিবেনা। আমাকে বাঁচতে হবে। ভালো থাকতে হবে, আমার বাচ্চাটাকে সুন্দর একটা জীবন দিতে হবে। যবনিকা যাত্রায় নামতে হবে।

সমাপ্ত…….

• বিঃদ্রঃ -১.
আপনি যদি ভেবে থাকেন, এটা কাল্পনিক গল্প তবে ভুল। এ গল্পের প্রতিটা চরিত্র বাস্তব থেকে তোলা। এমন কিছু জীবনের গল্প, যাদের কারো গল্প আমি শুনেছি, কারো জীবন আমি দেখেছি। গ্রামীণ জনপদে এখনো অপসংস্কৃতিতে ভরা। শহর গ্রাম সবখানেই নেক্কারজনক অনেক ঘটনা দেখা যায়।

এক কথায় এ গল্পটা সত্য ঘটনা অবলম্বনে রচিত।

• বিঃদ্রঃ-২

পুরো গল্পে কোন পর্বে রি-চেইক করা হয়নি। ব্যস্ততা মাথায় নিয়ে লিখেছি। অসংখ্য ভুল হয়েছে। যারা এতদিন ধৈর্য ধরে গল্প ভুল ঠিক ডিঙিয়ে শেষ অবধি থেকেছেন তাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here