হিমি পর্ব-৩৮

0
825

হিমি
লেখনী- সৈয়দা প্রীতি নাহার

৩৮.

বিকেলের স্নিগ্ধ পরিবেশে নদীর পাড়ে তাহির আর হিমি বসে। বেশ কিছুক্ষন আগেই হঠাৎ করে চেম্বারে হিমির আগমনে ভড়কে যায় তাহির। প্যাশেন্ট কম ছিলো বিধায় হিমিকে অপেক্ষারত অবস্থায় রেখেই কাজ শেষ করেছে সে। হিমি তারপর তাহিরকে পাকড়াও করে নিয়ে এসেছে এখানে। হাসপাতালের গন্ধটা ভীষন বিদঘুটে লাগে হিমির। দশ মিনিট‌ও বসার মতো নয়। কথা বলার তীব্র ইচ্ছেকে সঙ্গী করেই ব্রীজে এসেছিলো দুজনে। সেখানেও থাকতে পারলো না। রাস্তা জুরে গাড়ির বহর, ফুটপাতেও তিল পরিমান জায়গা নেই দাঁড়ানোর। চারদিক থেকে শো শো, বো বো আওয়াজ হচ্ছে। ওখানে শান্তিতে দাঁড়ানো যাবে না কথা বলা তো দূরে থাক। বাধ্য হয়েই নদীর পাড়ে বসা তাদের। তবে এখানে বসতে খারাপ লাগছে না। ভালোই লাগছে। নির্মল বাতাস, নদীর কল কল শব্দ, পাখির কিচির মিচির, পাশের মাটির রাস্তায় মানুষের আনাগোনা খুব কম। একদিকে বড় এক কৃষ্ণচূড়া গাছ। নদীর পাড় সবুজ ঘাসে পরিপূর্ণ।

দীর্ঘ সময়ের নিরবতায় ইতি টেনে হিমি বললো,

-সেদিন ফোন করেছিলেন। দেখা করতে বলছিলেন। কিছু দরকার ছিলো?

তাহির শূণ্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো। হিমির প্রশ্নে চোখ টানটান করে তাকালো। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে মাথা দুলালো। ছোট্ট করে বললো,

-হু।

-কি দরকার ছিলো?

-দরকার তো মিটে গেছে হিমি। এখন না জানলেও হবে।

তাহিরের কথার বিপরীতে ভুরু কুঁচকে তাকালো হিমি। বললো,

-দরকার মিটে গেছে বলে জানতে পারবো না?

-জেনে লাভ নেই বলে বলছি না।

-লাভ ক্ষতির হিসেব করতে তো বলিনি। কি কারনে ডেকেছিলেন সেটা বলুন। আমি শুনবো।

তাহির শুকনো হাসলো। দু হাত দিয়ে ভাজ করে রাখা হাটু আকড়ে বললো,

-আমার এক পরিচিতা হুট করে অসুস্থ হয়ে পরেছিলো। ব্যক্তিগত কারনে আমি যেতে পারছিলাম না। আমি ছাড়া আমার পরিবার বা আত্মীয়দের সাথে তার পরিচয় নেই। তাই ভেবেছিলাম আপনার হাতে করে কিছু ঔষধ পত্র পাঠিয়ে দেবো। তার খোঁজ খবর‌ও নেয়া হবে।

কথাটা শুনে হিমির মন খারাপ হয়ে গেলো। বাচ্চা ডাক্তারের কতোটা দরকার পরেছিলো হিমির। আর ঠিক সেই সময়েই সে আসতে পারলো না? ‌কিসের এতো ইচ্ছা অনিচ্ছা তার? কি হতো ইচ্ছার বিরুদ্ধে দেখা করতে আসলে? কেউ তো আটকাতো না তাকে। তবে কেনো এলো না সে? একটা বারের জন্য‌ও ভাবলো না ভীষন দরকার না পরলে বাচ্চা ডাক্তার তার সাথে দেখা করে না। তারপরের দি‌ন‌ও তো দেখা করতে পারতো! তবুও করলো না। বান্ধবীর বিয়েতে যাওয়ার কথা মনে ছিলো, ম্যানেজমেন্ট অফিসে যাওয়ার কথাও মনে ছিলো। শুধু মনে ছিলো না বাচ্চা ডাক্তারের কথা। নিজের উপর ভীষন রাগ হয় তার।

তাহির গলা কাশে। হিমি হকচকিয়ে তাহিরকে দেখে করুণ গলায় বলে,

-ভীষন সরি বাচ্চা ডাক্তার। আমি বুঝতে পারি নি। আমার উচিত ছিলো আপনাকে কল করা। তাহলেই হয়তো জানতে পারতাম। আর আপনার পরিচিতাকেও দেখতে যেতে পারতাম। আপনি পরে দেখতে গিয়েছিলেন?

তাহির মাথা নেড়ে। বুকের ভেতর দীর্ঘশ্বাস নিভিয়ে বলে,

-না। অন্য একজনকে পাঠিয়েছি। আচ্ছা সেদিন কল কে রিসিভ করেছিলো?

-আমার জ্যাঠুমনি।

-উনি কি আপনার খুব ক্লোজ?

হিমির ঠোঁটে হাসি ফোটে। বলে,

-হ্যা। ছোট্ট বেলা থেকেই জ্যাঠুমনির সাথে ক্লোজ আমি। অনেক ভালোবাসেন আমায়। একদম মেয়ের মতো। আমিও বাবার মতো ওনাকে ভালোবাসি। এতো বছর বিদেশ ছিলেন। ওইদি‌ন‌ই দেশে ফিরেছেন তাই আর বেরোয় নি আমি।

তাহির মৃদু হেসে বললো,

-আপনি বোধ হয় আপনার জ্যাঠুমনিকে আপনার বাবার চেয়েও বেশি ভালোবাসেন।

-তা বাসি। সত্যি বলতে বাবাকে হয়তো ভালোই বাসি না।

তাহির শীতল দৃষ্টিতে তাকালো। হিমি অন্যমনস্ক গলায় বললো,

-সবার বাবা আপনার বাবার মতো ভালো হয় না! আপনার বাবা যেমন আপনাকে ভীষন ভালোবাসে তেমন আমার বাবা বাসে না। আপনাকে বলেছিলাম তো। আমার বাবা শুধু ভালো স্বামী ছিলেন। আর কিছুই না। আপনার বাবার মতো সবদিক থেকে বেস্ট নন।

তাহির নিঃশব্দে হাসলো। হিমির কপালে ভাজ। ভুরু উচিয়ে হিমির দিকে তাকালো। বললো,

-আপনাকে কে বললো আমার বাবা সব দিক থেকে বেস্ট?

-আপনিই তো বলেছিলেন আপনার বাবা আপনাকে খুব ভালোবাসতেন। হয়তো এখনো বাসেন।

-বলেছিলাম। তবে বলি নি তিনি সব দিক থেকে ভালো।

হিমি বিস্মিত চোখে তাকালো। তাহির থমথমে মুখে বললো,

-আমার বাবা নিঃসন্দেহে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা। অন্তত আমি তাই মানি। কিন্তু ওনার শ্রেষ্ঠত্ব শুধু এখানেই আটকে গেছে। না কখনো ভালো স্বামী হয়েছেন আর না ভালো মানুষ ছিলেন। আমার মা বলেন, পৃথিবীর নিকৃষ্ট মানুষদের মধ্যে বাবা একজন।

হিমি সরু চোখে তাকালো এবার। অস্ফুট স্বরে বললো,

-এমনটা কেনো?

-কারন আছে। বহু কারন। সময় করে একদিন আপনাকে বলবো সব। অনেক কথা বন্দি আছে আমার ভেতর। সব মুক্ত করবো। সেই সাথে কিছু কথা জমা রেখেছি। সেসব‌ও আপনাকে জানাবো।

হিমি শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো। কৌতুহল নিয়ে বললো,

-শুধু আমাকেই জানাবেন?

-হ্যা।

-কেনো?

-অচেনা বলে। যদিও আমাদের মধ্যে অনেক চেনা জানা হয়েছে তবুও কোনো না কোনো ভাবে আমরা দুজনেই একে অপরের অচেনা। আমায় কেউ একজন বলেছিলেন, অচেনাদের সাথে কথা বলতে দ্বিধা করতে নেই। তারা কোনো ক্ষয় ক্ষতি করবে না। করার কথাও না। কারন তারা আমাদের অপরিচিত। তাই নির্দ্বিধায় সব গোপন কথা বলা যায়। খেয়াল রাখতে হবে সেই অচেনা মানুষ যেনো মন থেকে ভালো হয়। নয়তো বিপদে পরার সম্ভাবনা থাকে। সেই মানুষটার সাথে আপনার অনেক মিল আছে হিমি। জ্বরের ঘোরে আপনিও সেদিন এই ধরনের কিছু কথা বলেছিলেন। আমি জানি আপনি বিশ্বস্ত অপরিচিতা। তাই মনে মনে স্থির করেছি মাঝে মাঝেই বিরক্ত করবো আপনাকে। বুকটা ভীষন ভারি মনে হয়। হালকা করতে হবে।

হিমি অবাক চোখে দেখে তাহিরকে। তাহির তো এমন ছিলো না। যে কদিন তাহিরকে দেখেছে বার বার মনে হয়েছে ভীষন গোছালো মানুষ। বুঝদার। কম কথা বলেই অভ্যস্ত সে। দরকারি ছাড়া অদরকারি কথা মোটেও পছন্দ নয়। কিন্তু ধীরে ধীরে সব গুলিয়ে যাচ্ছে হিমির। তাহির অগোছালো হয়ে পরছে। কখনো কখনো বেশি কথা বলছে। অদরকারি কথাগুলোও দরকারি বলে বোধ করছে। অর্ধ পরিচিত এক বাউন্ডুলে মেয়েকে গোপন কথা বলতে চাইছে। তবে কি তাহিরকে চিন্তে ভুল করেছে হিমি?

__________________

“আপু তুমি জানো বাড়িতে কি হচ্ছে?”

“কি হচ্ছে?”

মিশ্মির অতি গুরুত্বপূর্ণ কথা শুনেও দায়সারা গলায় জবাব দিলো হিমি। মিশ্মি ফুঁসতে ফুঁসতে বললো,

“কি হচ্ছে মানে? এক সপ্তাহ ধরে ও বাড়ি থাকছো তবুও কিছু জানো না এ কথা আমি মানতে পারছি না।”

“আমি কি মানতে বলছি?”

“তুমি আমায় ইগনোর করছো?”

হিমি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। বিরক্তি নিয়ে বললো,

“ইগনোর কেনো করবো বলতো? তুই কি বলছিস আমি বুঝতে পারছি না। খোলসা করে বল কি বলবি।”

“নিহান ভাইয়ার সাথে আগামী মাসে আমার বিয়ের খবরটা নিশ্চয় অজানা নয় তোমার?”

হিমি ঠোঁটে হাসির রেখা টেনে বললো,

“ওহ এই কথা! সেটা তো জানিই।”

“তবে আটকালে না কেনো?”

মিশ্মির রুদ্ধ গলার প্রশ্নে কপালে চিন্তার ভাজ পরে হিমির। আলমারির পাল্লাটা বন্ধ করে মুখোমুখি এসে দাঁড়ায় বোনের। বলে,

“কি আটকানোর কথা বলছিস মিশু?”

মিশ্মি ফুঁপিয়ে উঠে বলে,

“বিয়ের কথা বলছি আমি। বুঝতে পারছো না? এক নাগারে তোমায় কল করেছি একটা বার‌ও রিসিভ করো নি। আর না কল ব্যাক করেছো। আমি অসহায়ের মতো কান্না কাটি করেছি। আম্মুর পায়েও ধরেছি। আব্বুকেও বলেছি। কেউ আমার কথা শুনে নি। তুমিও আমায় সাহায্য করলে না। এখন যে করেই হোক বিয়ে ভেঙে দাও। সবাইকে বলো আমি বিয়ে করবো না!”

“তুই এভাবে কাঁদছিস কেনো মিশু? শান্ত হো। আর বিয়ে করবি না কেনো?”

“কারন আমি বিয়ে করতে চাই না। আমার কথা কেউ শুনছে না আপু। প্লিজ! প্লিজ তুমি কিছু করো!”

হিমি চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকালো। শীতল গলায় বললো,

“আমি কিছু করতে পারবো না।”

মিশ্মি থমকে গেলো। কন্ঠে আকুলতা এনে বললো,

“কেনো পারবে না? নিহান ভাইয়া তো তোমার ভাই। তুমি বললে উনি নিশ্চয় সরে আসবেন এসব থেকে। আর তাছাড়া ওনার সাথে আমার এভাবে জড়িয়ে যাওয়ার কারনটাও তো তুমি আপু! তুমিই সেদিন সত্যিটা লুকাতে মিথ্যে বলেছিলে। নিহান ভাইয়াকেও নিশ্চয় তুমি রাজি করিয়েছো মিথ্যে বলার জন্য। এতসব মিথ্যের পর কোনো নতুন সম্পর্ক শুরু হতে পারে না। ওনার কথাটাও ভাবো। আমি কারো দয়ার পাত্রী হতে চাই না।”

হিমি ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ঘন ঘন নিঃশ্বাস টানলো। মিশ্মির দিকে ফিরে তার দু বাহু ধরে আলতো করে খাটে এনে বসালো। মিশ্মি তখনো কাঁদছে। হিমি হাটু গেড়ে মিশ্মির সামনে বসে বললো,

“তুই কারো দয়ার পাত্রী হচ্ছিস না মিশু। নিহান তোকে বাঁচাতে মিথ্যে বলেছিলো। তবে অর্ধেকটা। বাকিটা সত্যি বলেছে সে!”

“কোনটা সত্যি?”

“নিহান তোকে ভালোবাসে। সেটা এখন থেকে নয় বেশ অনেকদিন থেকে আগে থেকেই। ও চাইছিলো তোকে নিজে সব জানাবে। কিন্তু সেই সুযোগ হয়েও হয় নি। নিয়তি যেমন! ঘুরে ফিরে তোর সাথেই বিয়ে ঠিক হলো।”

মিশ্মি শক্ত চোখে তাকিয়ে র‌ইলো। গাল বেয়ে অনর্গল নোনা জল পরছে। হিমি ঝটপট বললো,

“আমি জানি তুই মেনে নিতে পারছিস না। কারন এখনো তোর মনে ইয়াসির আছে। কিন্তু ওই মানুষটাকে মনে রেখে আদৌ কোনো লাভ আছে? সে তো বিবাহিত। সুখী। তুই কেনো তার কথা ভেবে পরে থাকবি? অন্যদিকে এক না একদিন বিয়ে তো হতোই! যার তার সাথে হ‌ওয়ার চেয়ে ভালো নিহানের সাথে হ‌ওয়া। ও তোকে ভালোবাসে। খুব ভালো রাখবে। তোকে বুঝবে। আর,,,,”

“আর বলতে হবে না। বুঝেছি আমি। মামাতো বোনের থেকে চাচাতো ভাই আর তার অনুভুতি বেশি গুরুত্বপূর্ণ তোমার কাছে। হ‌ওয়ার‌ই কথা। রক্ত বলে কথা!”

হিমি আঁতকে উঠলো মিশ্মির কথায়। দ্বিধান্বিত গলায় মিশ্মিকে কিছু বলতে নিলেই উঠে দাঁড়ালো সে। হিমিও উঠলো। মিশ্মি চোখের জল মুছে বললো,

“আমার কথাটা একবার‌ও মনে পরে নি না তোমার? ভাবোই নি, মিশ্মির কিছু বলার থাকতে পারে। মিশ্মির‌ও অনুভুতি থাকতে পারে। তোমার ভাইয়ের সুখটাই দেখলে, আমার কষ্টটা দেখলে না তো! আমার কান্না, ক্ষত কিছুই চোখে পরে নি? এই যে তুমি বললে না, যার তার সাথে বিয়ে হ‌ওয়ার চেয়ে ভালো নিহান ভাইয়ের সাথে হ‌‌ওয়া! আমার কাছে তোমার ভাই নিহান‌ও ‘যার তার’ মতো। বিশ্বাস করো, নিহান ভাইয়াকে নিয়ে বিন্দু পরিমাণ অনুভুতি নেই আমার মাঝে। আমি ভেবেছিলাম আর সবাই না শুনলেও তুমি শুনবে। সফল না হলেও চেষ্টা করবে। কিন্তু ভুলেই গেছিলাম তুমি আমাদের কেউ ন‌ও! তুমি তো তোমার বাবার পরিবারকেই বেশি গ্রহণযোগ্যতা দেবে।”

“মিশু তুই আমায় ভুল বুজছিস!”

“তাহলে বিয়ে আটকে দাও। প্রমান করে দাও আমি ভুল বুঝছিলাম।”

হিমি ছোট্ট নিঃশ্বাস টেনে বললো,

“সেটা হচ্ছে না মিশু।”

“কেনো? কেনো হচ্ছে না? তুমি চাইলেই কিন্তু সব বন্ধ করে দিতে পারো।”

“হ্যা পারি। কিন্তু করবো না। কেনো করবো না জানিস? কারন আমি তোর ভালো চাই। তোকে সুখী দেখতে চাই। তোর ভবিষ্যত সুন্দর করতে চাই।”

মিশ্মি কটমট করে তাকিয়ে বললো,

“যার নিজের ভবিষ্যত নেই সে আবার আমার ভবিষ্যত সুন্দর করবে। খুব চেনা হয়ে গেছে তোমায়। জ্যাঠিমা, মা, বার বার বলেছে আমায়। তোমায় বিশ্বাস না করতে। আমি করে গেছি। ওরা বলতে বলতে ক্লান্ত হয়ে গেছে, হিমির শরীরে ওর মা বাবার রক্ত বৈছে, ধোঁকা দিতে দ্বিতীয় বার ভাববে না। আমি সব কথা উপেক্ষা করে তোমার কথা শুনে গেছি। যা বলেছো বিশ্বাস করেছি। যা করতে বলেছো করে গেছি। আর না। এবার আমিই যা করার করবো।”

হিমিকে স্তম্ভিত রেখেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো মিশ্মি। হিমির ভয় হতে লাগলো। ঝোঁকের বসে কিছু করে না ফেলে মিশ্মি!

চলবে,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here