পিশাচ_দেবী
.
৪র্থ পর্ব
.
এখন থেকে প্রায় ২ যুগ আগের ঘটনা। গোষ্ঠীর প্রধান পুরোহিত ছিলেন লায়ন মাও । এক রাতে তাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলে সেই সময়ের গোষ্ঠী প্রধান হানজা বু এর ছোট ভাই মানজা। তাকে বের করতে বলে সেই পবিত্র পাথরটা। কোনো প্রশ্ন ছাড়াই পাথরটা বাক্স থেকে বের করে লায়ন মাও। পবিত্রঘরে মানজা বু সেদিন একা আসেনি। এসেছিল এক তরুণী এবং তার কোলে ছিল নবজাতক বাচ্চা একটা মেয়ে।
মানজা এর ইশারায় বাচ্চাটা কোলে নেয় লায়ন মাও। মানজা এর আদেশে তরুণীটি এবার পাথর স্পর্শ করে। চোখে-মুখে তরুণীর ক্লান্তি ভাব , তখনো ফুঁপিয়ে কাঁদছে। মানজা তাকে আদেশ করে পাথর স্পর্শ করে শপথ করতে, মৃত্যুর আগে পর্যন্ত সে এই নবজাতক এর পিতার নাম কারো কাছে প্রকাশ করবে না। তরুণী কাঁপা কাঁপা হাতে পাথর স্পর্শ করলো বিড়বিড় করে বলল , আমার স্বামী হানজা বু এর আত্মা শান্তি পাক। আমি এই পবিত্র পাথর ছুঁয়ে শপথ করছি , হানজা বু আর আমার বিয়ের কথা কেউ জানবে না। আমার মেয়ে হবে পিতৃপরিচয়হীন।
এই বলেই ঢুকরে কেঁদে ওঠে তরুণী। পুরোহিত বড় বড় চোখ করে চেয়ে থাকে মানজা, তরুণীর আর নবজাতক শিশুটির দিকে। যেন নিজের কানকে আর বিশ্বাস করতে পারছে না। হানজা বু শেষ বয়সে এই তরুনীকে বিয়ে করেছিল , কাউকে না জানিয়ে! মানজা পুরোহিতের কাঁধে হাত রেখে একটু চাপ দেয়। চোখের ভাবে লায়ন মাও বুঝতে পারে এই ঘটনার কথা জাতে গোষ্ঠীর আর কেউ জানতে না পারে সেই অনুরোধ করছে মানজা। সেও চোখ ইশারায় তাকে আস্বস্ত করে।
ধীরে ধীরে মানজা , তরুনীকে সাথে নিয়ে পবিত্র ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। তরুনিকে ঘর পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে সে ফিরে যায় তার ঘরে। এটা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না মানজার। এই মুহূর্তে মানজা এর মতো নিঃস্ব মানুষ আর এই গোষ্ঠীতে নেই। সে আগামীকাল গোষ্ঠীর বু হিসেবে শপথ নেবে। কিন্তু এই পদ চায় কে? কিসের বিনিময়ে ? গতকালই এই গোষ্ঠীর প্ৰধান, তার বড় ভাই “হানজা বু” কে আগুনে পুড়িয়েছে গোষ্ঠীর সবাই মিলে। সব দোষ সেই পিশাচ , ডাইনি হারমা এর। সেই এই গোষ্ঠীতে ত্রাস সৃষ্টি করেছে ব্যাপক ভাবে। হত্যা , হানা-হানি , অনাচার এর পুনর্জন্ম দিয়েছে। প্রলুব্ধ করেছে অর্ধেক গোষ্ঠীকে তার অনুসারী হতে। যার পরিণয় হয়েছে এই ভয়ংকর পরিণতি। গোষ্ঠীকে বাঁচাতে হত্যা করতে হয়েছে অনেক আপন মানুষকে।
তার মধ্যেও তার ভাইও ছিল, যদিও সে গোষ্ঠী প্রধান। কিন্তু এই আইন সবার জন্য সমান। এই পিশাচ পুজো বন্ধ করার আর কোনো উপায় ছিল না তাকে আগুনে পুড়িয়ে না মারা পর্যন্ত। এটা যে অন্যায় , মৃত মানুষের শান্তি নষ্ট করার শাস্তি যে মৃত্যু, লাশের বিনিময়ে পিশাচের কাছে যাওয়া যে পাপ তা প্রমাণ করার জন্য হলেও হানজা বু এর শাস্তির প্রয়োজন ছিল।
তাই গত দিন টেনে এনে সবার সামনে জ্যান্ত আগুনে পোড়ানো হয় হানজা বু কে। মানজা ভবিষ্যত গোষ্ঠী প্রধান হয়েও বাঁচাতে পারেনি ভাইকে। এর আগের সব স্ত্রী – সন্তান মারা গিয়েছিল হানজা বু এর। হানজা বু মৃত্যুর আগে শুধু মানজা এর কানে কানে বলে যায় সেই তরুণীর কথা। শেষ বয়সে যাকে সে বিয়ে করেছে গোপনে, তরুণীর গর্ভে তার সন্তান। নিয়ম অনুসারে পিশাচ সাধনা যে করবে তাকে পুড়িয়ে মারতে হবে এবং তার স্ত্রী সন্তানকে বিতাড়িত করতে হবে গোষ্ঠী থেকে।
হানজা বু এর মৃত্যুর পর তাই মানজা সিদ্ধান্ত নেয় তার ভাইয়ের শেষ সন্তান , আর শেষ স্ত্রীকে দূরে যেতে দেবে না সে। তার গর্ভের পিতার পরিচয় মানুষেরা না জানলে সে হয়তো লাঞ্ছনার শিকার হবে। কিন্তু থাকতে পারবে এই গোষ্ঠীতে। মানজাও বু হওয়ার পর নজরে রাখতে পারবে ভাইয়ের কন্যাকে।
সেই মেয়েটাই আকলা। মানজা বুও প্রথম স্ত্রী আর সন্তানের মৃত্যুর পর আর বিয়ে করেননি। তাই বলা যায় আকলাই তাদের বংশের শেষ বংশধর। তবুও মানজা বু সিদ্ধান্ত নেয় আকলার পরিচয় ফাঁস করবে না সে। একবার যদি সবাই জানতে পারে নিজের লোক বলে পিশাচ সাধনার অপরাধের আইনে একটু নড়চড় হয়েছে তখন সবাই এই নীতিমালা থেকে মুখ গুঁড়িয়ে নেবে এবং পরবর্তীতে এই পিশাচ সাধণার অভিযোগে কাউকে শাস্তি দিতে গেলে তারা প্রশ্ন তুলবে হাজারটা!
বর্তমান সময়।
মানজা বু চিন্তিত ভাবে তার ঘরের বিছানায় শুয়ে আছেন। চোখ-আধভোজা। তার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে তার লাঠিয়াল বাহিনীর প্রধান এবং পরামর্শক ছিমন আমলা। সেও চিন্তিত। শান্ত কণ্ঠে বু কে প্রশ্ন করল:
সবইতো আপনি শুনেছেন বু , সব কিছু প্রকাশ হয়ে গিয়েছে। সকাল থেকেই গোষ্ঠীতে শোরগোল শুরু হয়ে গেছে থামবে বলে মনে হয় না! এত বছরের গোপন কথাটা ফাঁস হয়ে গেছে!
হু।
এটা আমাকে প্রথমে বিস্মিত করেছিল, বু। এখন সবটাই বুঝতে পারছি। আজ সকালে কিছু একটা দেখে ভয়ঙ্কর ভাবে ভয় পেয়ে যায় আমাদের পুরোনো বৃদ্ধ পুরোহিত লায়ন মাও। ছুটতে ছুটতে গোষ্ঠীর একদল লোকের কাছে গিয়ে বলে দেয় , আকলার জীবন বৃত্তান্ত। আকলা যে আপনার ভাইয়ের কন্যা তা তারপর থেকে এক ঘর , দুই ঘর করে পুরো গোষ্ঠীর মানুষ এতক্ষণে জেনে গেছে।
হু।
আমি প্রথমে ভেবে পাইনি এত বছর ধরে পুরোহিত লায়ন মাও যে কথাটি লুকিয়ে রেখেছেন , কী এমন দেখে ভয় পেয়ে আজ সে এটা প্রকাশ করে দিল! এখন সবটাই পরিষ্কার। এ সেই অলৌকিক পিশাচের সাহায্য ছাড়া সম্ভব না। সেই তার মনে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে। আকলা পিশাচের আশ্রয় নিয়েছে।
বৃদ্ধ মানজা বু শুধু মাথা ঝাকিয়ে যাচ্ছেন। এর মানে বলে যাও।
আজ সকালে আমার লাঠিয়াল বাহিনীর আরুল আমাকে জানায় গত রাতে নাকি সে একটা বাচ্চাকে কোলে নিয়ে একটা মেয়ে লোকের অবয়বকে জঙ্গলে ঢুকতে দেখেছিল। তারপর সেও রওনা হয় মেয়ে লোকটা কোথায় যাচ্ছে দেখতে। কিন্তু চারপাশ খুঁজে, ডেকেও কাউকে দেখতে পায় না। আরুল রাতে নেশাগ্রস্ত থাকে বলে তার কথার মূল্য দেইনি। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি সব। সকাল বেলা গোরস্থানে গিয়ে উদ্ধার করি আমরা যে গতদিন যে মেয়েটাকে কবর দিয়েছিলাম তার লাশ উধাও হয়ে গেছে। তারমানে নিশ্চই জানেন আপনি বু। আকলা বিনিময়ে অংশ নিয়েছে। লাশের বদলে উপকার !
মানজা বু এর পুরো শরীর কেঁপে উঠলো ! এর থেকে নিষ্ঠুর ঘটনা আর কী হয়! নিস্তার নেই কারো! আবার সে ফিরে এসেছে এই গোষ্ঠীতে। এর কারণে কত লোককে হারাতে হয়েছে তার আর গোষ্ঠীকে। কত লাশ নিজ হাতে কবরে শুইয়েছেন তিনি। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললেন বৃদ্ধ:
ছিমন , সেই সময়ে তোমার বয়স কম থাকলেও তুমি এই পিশাচের ভয়াবহতা দেখেছ আর জানো। যেকোনো মূল্যে সেই পিশাচের নাম আবার ভুলিয়ে দিতে হবে গোষ্ঠীকে।
আরুল একটা আসতো গাধা , বু। সে আকলার লাশ নিয়ে জঙ্গলে ঢোকার বিষয়টা শুধু আমাকে না। গোষ্ঠীর আরো অনেকের সাথে বলেছে। কথাটাও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সবাই জেনে গেছে আকলার দেওয়া লাশ পেয়ে তৃপ্তি পেয়েছে পিশাচটা , তাই তার মনের ইচ্ছা পূরণ করেছে। একটা লাশ নিয়ে পিশাচটার নাম জপতে জপতে জঙ্গলে গিয়ে রাখলেই যে পিশাচ সবার মনের ইচ্ছা পূরণ করবে কথাটাও তাই রাজ্য হয়ে গেছে। এই কাজ যে আরো অনেকেই করতে চাইবে লোভে!
কী ভয়ঙ্কর দিন আসছে ছিমন ! আমিই না জানি কবে তার ফাঁদে পড়ি!
এখন আপনার পরামর্শ কী বু ? কী করতে বলেন আমাকে ?
যা নিয়ম তাই করতে হবে। সবাইকে বোঝাতে হবে পিশাচ সাধনার কী ভয়ঙ্কর পরিণতি আর শাস্তি। আকলাকে গোষ্ঠীর সবার সামনে খুঁটিতে বেঁধে পুড়িয়ে মারতে হবে।
কিন্তু! সেতো আপনার বংশের শেষ রক্ত !
তাতে কিছুই গেলো না। এছাড়া আর উপায় নেই।
মাথা নুইয়ে ধীরে ধীরে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল ছিমন। মানজা বু একটা দীর্ঘশ্বাস নিলেন। নিজের অজান্তেই গাল বেয়ে পানি পরতে লাগলো। কেন আকলা ? এমন কেন করলো। সব দোষ তার। সেই যদি মেয়েটার আসল পরিচয় জানিয়ে দিত তাহলে আজ এই দিন এতনা। কিন্তু এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।
গত দুই যুগ ধরে এমন নির্মম হত্যাকাণ্ডের দেখা পায়নি গোষ্ঠিবাসী। সবার চোখে- মুখে আতংক আর ভয়। উৎসুক দৃষ্টিতে ঘিরে আছে আকলাকে বেঁধে রাখা খুঁটির চারপাশে। লাঠিয়াল বাহিনী ছড়িয়ে আছে চারপাশে। অনেক দিন পর তাদের হাতে শোভা পাচ্ছে লোহার তলোয়ার। কোনো রকম উশৃঙ্খলা যাতে কেউ সৃষ্টি করতে না পারে। মানজা বু উপস্থিত আছেন।
আকলার চেহারায় সর্বহারা দৃষ্টি। সে বাঁচার জন্য কাকুতি করছে না । হতবিহ্বল হয়ে চেয়ে রইলো চারপাশের লোকজনের দিকে। তার সঙ্গে কী হবে তা তার মাথাতেই ঢুকছে না।
ছিমন চেঁচিয়ে সবাইকে চুপ করতে বলল। সাথে সাথেই সব শোরগোল বন্ধ হয়ে গেল। সে চিৎকার করে বলতে লাগলো :
এই রীতি আমাদের পূর্বপুরুষ এবং তাদের পূর্বপুরুষের। যারা আমাদের জন্য তৈরি করেছেন শান্তির নীতিমালা। যে এই নীতিমালা মানবে সেই থাকবে গোষ্ঠীতে বাকিরা বিদায় নেবে। পিশাচ সাধনা মানে রক্তপাত , মৃত মানুষের কষ্ট বাড়িয়ে দেওয়া , জীবিতদের মাঝে অনাচার সৃষ্টি করা। এর এক মাত্র শাস্তি মৃত্যু। সবাই সাবধান , নিজেদের এমন অবস্থায় দেখতে না চাইলে । ধ্বংস হোক শয়তান ও তার অনুসারীরা!
কথা শেষে মানজা বু এর দিকে তাকাতেই তিনি অনুমতি দিলেন আকলাকে পোড়ানোর। তেল জাতীয় একটা জিনিস আকলার পুরো শরীরে ঢেলে দেওয়া হলো। মশালে আগুন ধরালো একজন।
সকালে , আকলা বর্তমান বু এর গোষ্ঠীর শেষ বংশধর জানার পর গোষ্ঠীর কিছু তরুণ বিয়ের প্রস্তাব দেয় আকলাকে। কারণ সেই হিসেবে মানজা বু এর মৃত্যুর পর গোষ্ঠীর প্রধান হবে আকলার স্বামী । তারমধ্যে কয়জন যুবক প্রতিবাদ জানায় এর।
মানজা বু এর সামনে এক যুবক এসে করা কণ্ঠে বলে:
এ আপনি কিছুতেই হতে দিতে পারেন না , বু ! আকলা দোষ করেছে ঠিকই , তাকে তাড়িয়ে দিতে পারেন গোষ্ঠী থেকে। কিন্তু আগুনে পুড়িয়ে মারা! আমারতো আপনাকেই পিশাচ মনে হচ্ছে!
সাথে সাথে দুজন লাঠিয়াল এসে যুবকটার উরুর পেছনে বারি মেরে হাটু গেড়ে বসিয়ে কাঁধে চাপ দিয়ে মাটির সঙ্গে শুইয়ে দেয়। সাথে সাথে আরো কিছু যুবক উশৃঙ্খল হয়ে ওঠে। তাদের ওপরেও চড়াও হয় লাঠিয়াল বাহিনী। মাটির সঙ্গে চেপে ধরে রাখে। হাতে তলোয়ার এমন ভাবে ধরা যে উঠতে গেলেই রক্তের বন্যা বইয়ে যাবে।
এবার গুঞ্জন শুরু হলো গোষ্ঠীর সাধারণ মানুষের মধ্যে। এ কেমন ব্যবহার তাদের সাথে , এ কেমন স্বৈরাচারীতা! একজন লোক বলে ওঠে :
বু, আকলা আপনার বংশের শেষ রক্ত বইছে । তাকে এভাবে মারবেন ?
বৃদ্ধ মানজা বু লাঠি ভর দিয়ে দাঁড়িয়েছিল। কয়েক মুহূর্তে তার মুখের ভাব কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে। এবার হাতের লাঠি ছুড়ে ফেলে দিয়ে চিৎকার করলো সে। সাথে সাথেই হতভম্ব হয়ে সবাই চুপ করে গেল। বৃদ্ধকে এমন জেদের সঙ্গে অনেক দিন কথা বলতে শোনেনি কেউ। ঝাঁঝের সাথে শুরু করলেন :
শুনো তোমরা গোষ্ঠী বাসী! আমার বংশের রক্ত না শুধু! আমি তোমাদের আদেশ দিচ্ছি তোমরা যদি আমাকেও কোনো ভাবে পিশাচ পূজার সঙ্গে জড়িত পাও তবে প্রথমে আমার হাত কেটে আমার চোখের সামনে পুড়িয়ো। তারপর যন্ত্রনা দিয়ে আমার পা কেটে ফেলো। ছুরি ঢুকিয়ে আমার চোখ উপরে ফেলে আমার গলায় ঝুলিয়ে দিও সুতো দিয়ে, মরার আগেই আমার পেট কেটে নাড়িভুঁড়ি বের করে নিও। হে নির্বোধ ! তোমরা কী তোমাদের পূর্ব পুরুষকে হারাওনি এই ডাইনি , শয়তান , পিশাচটার জন্য ? সবাই ভুলে গেলে সেইসব দিনের কথা ? আমাদের পূবপুরুষেরা বুবুয়ান ( স্বর্গ) থেকে আমাদের ধিক্কার করছে না? আমরা কী হাউলার ( নড়ক ) এর দিকে পা বাড়াচ্ছি না! সাবধান সবাই ! এই পিশাচ এর একমাত্র ক্ষমতা মানুষের মনকে কব্জা করতে পারে। যত মানুষ তাকে মনে করবে তত তার শক্তি বাড়বে। তাই ভুলে যাও এইসব অনাচার!
এবার আকলার মুখের সব রক্ত শুকিয়ে গেল। সে বিশ্বাস করতে পারছে না এটা তার সাথে হচ্ছে! এমনতো হওয়ার কথা ছিল না। মশাল হাতে লোকটা তার দিকে এগিয়ে আসছে। মশালের মাথা তার শরীর স্পর্শ করলেই জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাবে সে , বুঝতে পারলো। দেবী হারমা তো এমন কিছু হওয়ার ইঙ্গিত দেননি ! দেবী হারমার কথা স্মরণ হতেই ভয় কিছুটা কেটে গেলো তার। চুয়াল শক্ত করে কঠিন দৃষ্টিতে চাইল মশাল বহন করা লোকটার দিকে। চিৎকার করে ডাকতে লাগলো , দেবী , হারমা! দেবী হারমা! দেবী হারমা! হারমা! হারমা! হারমা! ……………..”
সেই সময়েই ঘনকালো একটা মেঘের টুকরো সূর্যকে ঢেকে দিল। অন্ধকার হয়ে এলো চারপাশ। আকলা চিৎকার থামাচ্ছে না। তার কন্ঠস্বর যেন প্রতিধ্বনিতো হয়ে বারবার ফিরে আসছে গোষ্ঠীর লোকেদের কাছে। হারমা! হারমা! তার ওপর আবার হঠাৎ করেই এই আধার। সবাই আতংকগ্রস্থ হয়ে পড়লো। মানজা বু এর শরীরও কেঁপে উঠলো সামান্য। যে লোকটা মশাল হাতে এগিয়ে আসছিল তার হাত থেকে মশাল পরে গিয়ে আগুন নিভে গেলো। মানজা বু হঠাৎ কান খাড়া করতেই আৎকে উঠলেন। বুঝতে পারলেন শুধু আকলা নয়। গোষ্ঠীর আরো অনেকেই নিজের অজান্তে বিড়বিড় করে বলছে ” হারমা, হারমা , হারমা ” !……………………………………..
.
.
. . . . . চলবে . . . . .
.
.
লেখা: #Masud_Rana