রহস্যের_কুয়াশা☠️
পর্ব_১৪
#হাফসা_ইরিন_রাথি
আজ মিলি খুব খুশি আর প্রতিক্ষীয়মান হয়ে আছে ইহানের দেখা পাওয়ার জন্য কারন আজকে রাত ১২ টার পর নতুন একটা বয়সে পা রাখতে চলেছে মিলি।আর ইহানের কথা অনুযায়ী ইহান নিজের বাড়িতে নিয়ে যাবে ওকে কিন্তু বিকেল থেকেই তার কোনো পাত্তা নেই,লাপাত্তা হয়ে আছে।মিলির রাগ,অভিমান,খুশি,অপেক্ষা সবকিছু যেনো মিলে মিশে একাকার অবস্থা হয়েছে।
রাত ৮ টা বাজতেই মায়ের রুমে চলে গেলো মা বাবা আর বোনের সাথে দেখা করতে।মিতু এখনো ওর বাবা মার সাথেই ঘুমায়।মিলি রুমে ঢুকেই বিষন্ন মুখে মা বাবাকে বললো,
–আজ রাতে আমায় আর ডেকো না মা।আমার খুব খারাপ লাগছে একটু একা থাকি।ঘুমিয়ে পড়বো এখন।
মিলির মা কি যেনো বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু তার আগেই মিতু চেঁচিয়ে উঠলো।
–আপু আমি তোমার সাথে ঘুমাবো।
–না আজ না,অন্যদিন ঘুমাস।আজকে আমার একদম ভালো লাগছে না বললাম তো।
–আহা,থাম না মিতু।কি হয়েছে মা তোমার?শরীর খারাপ করছে?ডাক্তার ডাকবো?(জারিফ সাহেব)
–না না বাবা তেমন কিছুই না।মা তুমি বাবাকে বুঝিয়ে বল না যাতে টেনশন না করে।আমি ঘুমাতে গেলাম।আল্লাহ হাফেজ।
–আরে আরে আরে খাবার না খেয়েই ঘুমাবি নাকি?তাড়াতাড়ি খাবার খেয়ে নে,তারপর ঘুমা কোনো সমস্যা নেই।
মিলি অগত্যা ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসলো।মালিহা বেগম নিজের হাতেই ওকে খাইয়ে দিচ্ছেন।মিলির খুব মায়া হচ্ছে মা বাবা আর ছোট বোনটার জন্য,ওদের মিথ্যে বলে খারাপ লাগছে তবে ইহানের বাসায় যাওয়ার অধম্য ইচ্ছেকে যে অস্বীকার করার উপায় নেই!
খাওয়া শেষ করে মিলি মিতুর সাথে একটু দুষ্টুমি করে নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিলো।দেয়াল ঘড়ির সামনে অধীর আগ্রহে বসে অপেক্ষা করছে কখন ১২ টা বাজবে কিন্তু সময় যেনো কাটতেই চায় না,১ মিনিটকে মনে হচ্ছে অনন্তকাল।
রাত তখন ১১:৪৫।মিলির চোখের ত্রিসীমানায় ঘুমের চিহ্ন নেই।সেই কখন থেকে বসে আছে,পায়চারি করছে আর একটু পর পর ঘড়ির কাটার দিকে তাকাচ্ছে।অবশেষে সময় অনেকটা কমে এসেছে এইবার আর মাত্র ১৫ মিনিটের অপেক্ষা।কিন্তু এই ১৫ মিনিট যেনো আরো বেশি সময় নিচ্ছে পার হতে।
ঠক ঠক আওয়াজ শুনতে শুনতে মস্তিষ্ক ভোতা হয়ে গেছে ওর।১১:৫৯ বেজে ১,২,৩,৪,৫,৬,৭……………৫৫,৫৬,৫৭,৫৮,৫৯…..১২:০০।
–”শুভ জন্মদিন রিদ”
–ইহান!!!
মিলি ইহানের উপর ঝাপিয়ে পড়লো আনন্দের অতিশয্যে। ইহান এতক্ষণ এখানেই ছিল কিন্তু সামনে আসে নি মিলিকে সারপ্রাইজ দিবে বলে।
–আরে আস্তে আস্তে।এতো হাইপার হতে হবে না।চলো যাবে না?
–হ্যাঁ,১০০ বার যাবো। সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছিলাম।
–এখন যদি রাগ,অভিমান করে বসে থাকো তাহলে কিন্তু আমি একাই চলে যাবো।
–আমি কান্না করবো কিন্তু?আমি যাবো বললাম তো।
ইহান মিলির কথায় হাসতে থাকে।তারপর মিলিকে চোখ বন্ধ করতে বলে।চোখ খুলে মিলি নিজেকে একটা নদীর তীরে আবিষ্কার করে।নদীর পানি কাচের মত স্বচ্ছ আর হালকা ঢেউ খেলানো,অসংখ্য বড় বড় নীল রঙের পদ্ম ফুলের মেলা বসেছে নদী জুড়ে।নদীর পাড়ের উপরে চোখ পড়লো মিলির,সেখানে একটা কৃষ্ণচূড়ার গাছে লালে লালে ছেয়ে গেছে।মিলির মনে হতে থাকে এখানে আরো বহুবার,বারবার এসেছে কিন্তু ঝাপসা রহস্যের কুয়াশায় কিছুই স্পষ্ট নয়।মিলি এমন সুন্দর পরিবেশ,জায়গা আগে কখনো দেখেছে বলে মনে পড়ছে না।মিলি আশপাশটা দেখতে দেখতেই অন্ধের মতো পাশে হাত দিয়ে ইহানকে খুঁজছে।
–ইহান,কি সুন্দর তাই না?
মিলি পাশ ফিরে দেখলো ইহান নেই কিন্তু ইহানের জায়গায় দাড়িয়ে আছে একটা ২৫ বছরের সুদর্শন যুবক।ছেলেটির গায়ের রঙ মাঝামাঝি কিন্তু ওর চুলগুলো অনেক সুন্দর,কুচকুচে কালো আর চোখজোড়া অসম্ভব সুন্দর।ছেলেটার সাথে ইহানের অনেকটা মিল আছে চোখ আর চুলের কিন্তু ইহান তো ১২ বছর আর এই ছেলে ২৪/২৫,তবে?মিলি ভয় পেয়ে ছেলেটার হাত ছেড়ে দিলো।
–কক কে আপনি?
ইহান বুঝতে পারলো মিলি ওকে ওর বাচ্চা রূপেই চিনতে পারবে শুধু।একটা হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে ইহান মুহূর্তের মধ্যে ১২ বছরের কিশোরে পরিণত হলো।মিলি বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে কিন্তু ও কিছু বলার আগেই রুশার কণ্ঠ শুনা গেলো।
–কেমন লাগছে এখানে রিদ?
মিলি পাড়ের কৃষ্ণচূড়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো রুশা দাড়িয়ে আছে একগাল হাসি নিয়ে।
–তুমি আমার এই নামটা জানলে কিভাবে? ইহান যে আমায় বলতে মানা করেছিলো কাউকে! তুমিও বুঝি এখানেই থাকো?
–হ্যাঁ আমি এইখানেই থাকি।এই নামটা ইহানের কাছ থেকেই শুনেছি আমি।তোমার তন্ময়িকে কেমন লাগছে বললে নাতো?
–তন্ময়ী?
–ওহ্ বলতেই ভুলে গেছি। তম্ময়ী হলো এই নদীটার নাম।
–হ্যাঁ আমার অনেক ভালো লেগেছে।তোমাদের এখানে কতো সুন্দর সুন্দর জিনিস আছে।
–তাহলে এখানেই থেকে যাও না কেনো?
–আমার আম্মু তো আমায় খুঁজবে।না দেখতে পেলে কষ্ট পাবে!
মিলি আর রুশা অনেকক্ষন গল্প করলো কিন্তু ইহান চুপচাপ উদাস হয়ে বসে তন্ময়ির বুকে ঢিল ছুড়তে লাগলো।
প্রায় ৩০ মিনিট পর রুশার সাথে গল্প করতে করতে যখন মিলি ক্লান্ত তখন ওর ইহানের কথা মনে পড়লো।
–ইহান তুমি ঐখানে বসে বসে কি করছো?এমনিতেই আমায় খুব ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে তখন ম্যাজিক করে।এখন কি এখনেই বসিয়ে রাখবে নাকি তোমার বাসায় নিয়ে যাবে?
–তুমি ইহানের ম্যাজিক দেখে ভয় পেও না।ও তো এমনই,সবসময় দুষ্টুমি।
ইহান মিলির দিকে তাকিয়ে জোর করে একটু হাসার চেষ্টা করে নদীর পাড় থেকে উঠে এলো উপরে ওদের দুজনের কাছে।
–চলো যাওয়া যাক।
মিলি সামনে হাঁটছে আর আশেপাশের ফুল গাছগুলো ছুয়ে দেখছে।এতো রকমের ফুল ও কখনো দেখেনি।সব ফুলগুলোই ওর অচেনা শুধু গোলাপ বাদে।মিলিকে ব্যাস্ত দেখে রুশা ইহানকে আড়ালে টেনে নিয়ে বিরক্ত সুরে বললো,
–এটা কি করছিলিস তুই?তুই কি পাগল?তুই জানিস না এতে কতো বড় সমস্যা হতে পারতো? রিদ যদি তোকে এভাবে দেখে ভয় পেয়ে তোকে আর বিশ্বাস না করতো,তখন কি হতো ভেবে দেখেছিস?
ইহান হতাশ হয়ে বললো,
–আমি পাগলই হয়ে গেছি।আমি আশা করেছিলাম এখানে এলে ওর সবটা মনে পড়ে যাবে হয়তো, কিন্তু তা তো হলোই না উল্টে আমায়ও চিনতে পারলো না!
–তুই কেনো এমন হয়ে গেছিস বলতো ইহান?তোর কি মনে নেই তুই কিভাবে আমাদের সবাইকে বলতি সাহস না হারাতে,চেষ্টা করে যেতে।তুই নিজেই তো বলতি সাফল্য আসবেই আসবে চেষ্টারত থাকলে।তাহলে আজ কেনো? কেনো ইহান?সেই পুরনো ওয়াহেদুল ইহানকে জাগিয়ে তোলা যায় না?
–না যায় না। রিদকে ছাড়া ওয়াহেদুল ইহান বলতে কিছুই নেই।আমি তোকে বলছি না এই নামটা বলবি না?এই নাম ততদিন পর্যন্ত আমার না যতদিন না রিদ আমার হচ্ছে পুনরায়। রিদকে ছাড়া ওয়াহেদের অস্তিত্ব ছিল না,থাকবে না। “ওয়াহেদ রিদ” আবারো এক হবে,এক স্রোতে ভাসবে, ভাসতেই হবে।নাহলে আবারো সেই ধ্বংস নেমে আসবে,আবারো মৃত দেহে ছেয়ে যাবে জ্বীন রাজ্য,আবারো নেমে আসবে সেই কলঙ্কিত অধ্যায়!
রুশা জানে ইহান একদম ঠিক বলছে আর ওকে বুঝিয়েও লাভ নেই অন্য কিছু তাই রুশা মিলিকে নিয়ে প্রাসাদের দিকে চললো,সাথে ইহানও।
প্রাসাদে আসতেই মিলি লক্ষ্য করলো সবাই ওকে দেখে নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করছে।মিলি সেসবকে বাদ দিয়ে প্রাসাদটা দেখতে লাগলো। প্রসাদটা খুবই সুন্দর,পুরোটা শ্বেত পাথরের তৈরি সাদা ঝকঝক করছে।একফোঁটা কালোর ভিন্ন নেই এতটাই পরিষ্কার প্রস্বাদটা।ভেতরে ঢোকার পথে প্রতিটি পিলার বেয়ে লতার মতো পেঁচানো সুন্দর একটা অচেনা গাছ যেটায় লাল রঙের ফুল ফুটে আছে ছোটো ছোটো। সাদার মধ্যে লালের আবির্ভাব দেখার মতো দৃশ্য।মিলি মুগ্ধ হয়ে চারপাশটা দেখতে দেখতে বললো,
–তোমার বাড়ি এত্তো সুন্দর!!
কিন্তু তারপর পরই মিলির চোখ আটকে গেলো সিড়ি দিয়ে নামতে থাকা অসম্ভব পবিত্র দেখতে দুটি মূর্তির উপর তাই ইহান কি জবাব দিলো সেটা মিলির কানেই ধুক।একটা মহিলা আর একটা পুরুষ সিড়ি বেয়ে নামছে।তাদের মুখটা এতই পবিত্র আর উজ্জ্বল লাগছে যে মিলি স্তব্দ হয়ে গেলো।কেমন যেনো একটা টান অনুভব করলো ওই দুটো ব্যাক্তির জন্য,কিন্তু এদের তো এই প্রথম দেখলো,,,মিলি চিন্তা করতে লাগলো।
চলবে””””
(শেষ করতে পারলাম না,দুঃখিত।)