রুপ_আহরণ💚পর্ব_৩
#লেখক:হৃদয় আহমেদ
— কিসব আজেবাজে কথা বলছো তুমি সানি? শোন, আমি ইচ্ছে করে এই বিয়ে করতে চাইনি। একটা ভুলই বাধ্য করেছিলো এই বিয়ে করতে।
ফোনের ওপারের লোকটা চেঁচিয়ে বলে উঠলো,
— আই ইউল কিল ইউ রুপায়ন শেখ। তোমার জন্য আমার বোন এখনো কান্নাকাটি করছে। আমার বোনের হাল ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে ডাফার! এ বিষয়ে আমি কাউকেই স্পেয়ার করবো না রুপায়ন!
— দেখুন। এ বিয়ে হওয়ারই কোন কথা ছিলো না। শুধুমাত্র আমার নিজের একটা ভুলের জন্য হতে যাচ্ছিলো। বেশতো বন্ধ হয়ে গেছে। নয়তো ভুলের মধ্যেই কাটতো এই সম্পর্ক। আপনি বরং একবার সোহরাকে ফোনটা দিন। আমি ওকে সবটা বুঝিয়ে বলছি।
— কোন প্রয়োজন নেই! আমি আসছি রুপায়ন। এর হেস্তনেস্ত করেই দম ফেলবো!
ফোন কেটে দেয় সানি। ফোন কাটতেই ফোন ছিটকে ফেলে দেয় রুপায়ন। কেন তাকে সবদিক দিয়ে কষ্ট ঘিরে ধরছে? একটা বড় পাথর জমেছে বুকে। নিজের ভুলটুকুই তাকে এ জায়গায় এনো তুলেছে। ওয়েবসাইট ট্রাভেল এলিথর্ট থেকে তাকে বিশাল একটা জব অফার করা হয়। আর সেটা সিঙ্গাপুরে। রুপায়ন তার পরিবারকে বলায় সবাই তাকে নিতে বলে। আর সেটা খুব তারাতাড়ি। অতি আগ্রহ দেখায় তার খালা আসফিয়া আনম। অতিদ্রুত কাজ সারতে গিয়ে রুপায়ন চড়ম ভুল করে বসে। তার জিবনের এই মোড়ের জন্য সেই ভুলটুকুই দায়ী। কাগজপত্রে তার ঘোর গরমিল পাওয়া যায়। লাইফলাইন এডুকেটেড থেকে তাকে যে ক্যারেক্টর সার্টিফিকেট দেওয়া হয় সেটায় স্পষ্ট লেখা ম্যারিড। তারাহুড়োয় এই সার্টিফিকেট করায় সম্পূর্ন অন্যরকম হয় তার সার্টিফিকেট। এটাই কাল হয়। এলিথর্ট থেকে অনলাইন ভিডিও কলে কতৃপক্ষ জানান ওখানে তার স্ত্রীকেও নিয়ে যেতে হবে। জব রুলস ৪৩ অনুযায়ী তাকে তার ওয়াইফ সাথে নিয়ে আসতে হবে। রুপায়ন পরিবারের সবাইকে বিষয়টিকে বলার পর ঠিক করেন রুপায়নের বিয়ে দিবে মৃদুল শেখ। এটাই ব্রাইট ক্যারিয়ার হওয়ার একমাত্র সুযোগ তাই হাতছাড়া করেতে চায় নি তার পরিবারের কেউ। রুপায়ন সরাসরি আরোহীর কথা বলে দেয়। সবায়ই তারাতাড়ি বিয়ের প্রস্তাব পাঠায় আরোহীর বাড়িতে। মধ্যবিত্ত পরিবার আরোহীদের। মানা করেনি। পড়ালেখা কমপ্লিট না করেই বিয়ে দেয় রুপায়নের সাথে। কিন্তু বাসর ঘরেই হঠাৎ বউ নিখোজ! দুদীন পর জানা যায় আরোহী আত্মহত্যা করে। আরও কয়েকদিন পেড়িয়ে যায়। রুপায়নের আর কোন দিকে হুস নেই। সবসময় মনমরা হয়ে থাকে। সে আরোহীর সখে কাতর হলেও তার খালা মৃদুল বাবুকে বিভিন্ন ভাবে উসকাতে থাকে।’চাকরি’ এই চাকরির লোভে মৃদুল বাবু আরেকটা বিয়ে দিতে উদ্ধ্যত হন। ছেলেকে জিজ্ঞেস করায় রুপায়ন সেদিন হ্যা না কিছুই বলেনি। সে নিজের মধ্যেই ছিলো না সেসময়। আর তার ভালোবাসা নিজের কাছেই রাখবে। সোহরার বাবাকে নানাভাবে বোঝায় রুপায়ন। কখনো তার মেয়েকে স্ত্রীসুখ দিতে পারবে না এটাও বলেছিলো রুপায়ন। কলেজ লাইফের ফ্রেন্ড ছিলো সোহরা। এদিকে সোহরা বিয়ে শুনেই উতলা। সোহরার বাবাও তাকে হাজারবার বলে। কোন লাভ হয়না। চাপ! চাকরির কথা এমনভাবে আসফিয়া আনম সবার মাঝে ডোকায় যে কেউই রুপায়নের কথা শুনতে রাজি হয়না। আরোহীর মৃত্যুর প্রায় এক সপ্তাহ পর আবার বিয়ের আসরে বসায় রুপায়নকে। অবশেষে আরোহী এই বিয়ে ভাঙে। কিন্তু কষ্ট তার চাপা রয়ে গেছে। আরোহীর এমন কান্ড সে মানতে পারছে না কিছুতেই।
বিছানা থেকে উঠে একবার আরোহীর দিকে তাকায় রুপায়ন। বেশ কাচুমাচু হয়ে বসে আছে এককোনায়। রুপায়ন ওয়ারড্রব থেকে আরোহীকে একটা সালোয়ার কামিজ দিয়ে বলে,
— এটা পড়ে বাইরে আসো। লান্স করতে!
বিছানার এক কোনে কাপড়গুলো রেখে চলে গেলো রুপায়ন। আরোহী ভেবেছিলো তাকে গালিগালাজ করবে। কিন্তু তখনি একটা ফোনকল এসে রুপায়নকে স্তব্ধ করে দেয়। ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে করে নিচে আসে আরোহী। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নানতেই তার চোখ ছানাবড়া। পা কাঁপতে লাগলো মৃদু। শেখ বাড়িতে এই প্রথম নতুন কাউকে দেখলো আরোহী। সমস্যাটা তাতে নয়। সমস্যা হলো লোকটাকে সে দেখেছে। তার দেহের আকার, আকৃতি, আচরন সেই অস্পষ্ট মানুষটার ছায়ামূর্তি ভাসিয়ে তুলছে আরোহীর সামনে। হাতও কাপতে লাগলো আরোহীর। আপতত সে কাঁপাতে ব্যাস্ত।
বাড়িতে হইচই পড়ে গেছে। সোহরার ভাই সানি এসেছে। বেশ চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে কথা বলছে সানি। বাড়ি মাথায় করে চেচাচ্ছে। আরোহী কোনমতে দাড়িয়ে আছে সিঁড়ির হাতল ধরে। তার মতে, হাতটা ছাড়লেই সে পড়ে যাবে। কেন আরোহীর মনে হচ্ছে তার বন্দিদশার জন্য দায়ী এই নতুন আগুন্তক!
— আজ আপনাদের জন্যই আমার বোনের জ্বর এসেছে। সারাটা দিন কেদেই চলেছে। কিভাবে পারলেন এত কষ্ট দিতে আমার বোনকে।
মৃদুল শেখ বললেন,
— দেখ সানি। আমরা যদি জানতাম আরোহী বেঁচে আছে তাহলে এসবের কিছুই করতাম না। আর রুপের ক্যারিয়ারের কথা ভেবে,, আমরা নিজেদের হিতাহিত জ্ঞানই হাড়িয়ে ফেলেছিলাম।
— তাই এর শাস্তি কি আমার বোনকে সহ্যকে করতে হবে আঙ্কেল? হ্যা? আপনারাই বলেন কি দোষ ছিলো মেয়েটার?
— আমি…
— এখন তুমি কি করতে বলছো আমাদের?
রুপায়নের প্রশ্নে ছানি এবার স্তব্ধ হলো। কিন্তু সে বেশিক্ষণ এভাবে থাকলো না। হঠাৎই এগিয়ে আসতে লাগলো আরোহীর দিকে। সানির হাটাতেও হুবহু মিল পেলো আরোহী। সানি যত কাছে আসছিলো ততই ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছিলো আরোহী। না খাওয়ার যন্ত্রণা এই লোকটার থেকেই শেখা। আরোহী আচমকা অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পরে গেলো। রুপায়ন ছুটে এলো আরোহীকে ধরতে। আরোহীকে কোলে তুলে ঘরে নিয়ে গেলো রুপায়ন। এদিকে সানিও কিছুটা ঘাবড়ে গেলো। মেয়েটা কি চিনে ফেললো নাকি তাকে? সানি আর এক পা সেখানে না থেকে চলে গেলো। শেখ পড়িবারের সবাই হতবম্ব হয়ে দাড়িয়ে রইলো ঘটনায়।
___
— আরু ওঠো। আরু ওঠো প্লিজ!
রুপায়নের ঘাম ঝড়ছে। হঠাৎ অজ্ঞান হওয়া কখনই ঠিক লক্ষন না। সে অনবরত ডাকতে লাগলো আরোহীকে। কিন্তু কোন সাড়াশব্দ নেই। সিনেমায় দেখা পানির ছিটের নিনজা টেকনিক ব্যাবহার করলো। কাজ হলো! কেননা, আশেপাশে ভির কম ছিলো। অজ্ঞান কেউ হলে তাকে যথাসম্ভব লোকসমাগম থেকে দূরে রাখা উচিত।
আরোহী চোখ টিপটিপ করে তাকাতেই নিজেকে রুমে আবিষ্কার করে। পাশে রুপায়নকে দেখে তরিঘরি উঠে বলে,
— ও্ ওই লোকটা কি চলে গেছে রুপায়ন বাবু?
একটা শুকনো ঠোক গিলে তাকায় আরোহী। সানির কথা কেন আরোহী জিজ্ঞেস করছে হঠাৎ? চিন্তাধারা নিয়েই রুপায়ন বলে,
— কেন?
— না মানে…
— তুমি চেনো সানিকে। ও তোমার সামনে আসছিলো আর তুমি এভাবে ভয় কেন পাচ্ছিলে? সবার আড়ালে তোমার ভয়ভীতি চোখে পড়েছে আমার আরু। কি হয়েছে সবটা বলো আমায়। ইমিডিয়েটলি!
রুমে চোখ বুলিয়ে আরু বলতে শুরু করে,
— এই লোকটাকে আমি আগেও কোথাও দেখেছি। এমনি গঠনের কারো কাছে বন্দি ছিলাম এতোদিন।আপনারা সবাই আমার যে কলঙ্কের মিথ্যা দাগ বসাতে চেয়েছিলেন তার পুরোটা ভুল। বন্দি ছিলাম আমি।
আরোহীর কথায় বসা থেকে উঠে দাড়ায় রুপায়ন। কথাগুলো এখনো কানে বাজছে তার। বন্দি ছিলো আরোহী? না না! আগে সবটা শুনতে হবে। বলে রুপায়ন,
— ক্ কে তোমায় বন্দি করে রেখেছিলো আরু? তোমার জন্য চাপা কষ্টে ভুগেছি আমি। আমার জানা মতে তুমিতো এমন মেয়ে নও! তোমার মাঝে ভদ্রতা, সভ্যতা আমি নিজে দেখেছি। তবে মন? এটাকে বুঝতে আরও সময়ের দরকার ছিলো। আরোহী বলো কে তোমায় বন্দী করে রেখেছিলো। বলো আরু। ভালোবাসি তোমায়! নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি।
কান্না করে দিলো রুপায়ন। অনুসুচনার পাঠ এখনো যে বাকি। তার আরুকে আস্তে জড়িয়ে নিলো বুকে। কান্না করেই চলেছে।
আরোহী শরীরে যে পিনপতন নীরবতা ছেয়ে গেলো। ভালোবাসেন আমায় উনি? আমি ঠিক শুনলাম? আরোহীর চোখে মুহুর্তেই পানি ভরে এলো। আরোহী বললো,
— ভ্ ভালোবাসে…
রুপায়ন আরও জাপটে নিয়ে বললো,
— হ্যা বাসি। নিজের থেকেও ভালোবাসি। আমার কলেজ লাইফ থেকে ভালোবাসি আমি তোমায়। যখন আমার বিয়েটা অতি একান্ত প্রয়োজন, তখন আমি সরাসরি তোমারি নাম নিয়েছি। কারন,ভালোবাসা আরু। ভালোবাসা।
চোখ দিয়ে আবারো টপটপ করে পানি পড়তে করে পানি পড়তে লাগলো আরোহীর।রুপায়ন ওভাবেই বললো,
— তুমি বলতে চেয়েছিলে না? বলো! সেদিন ঠিক কি হয়েছিলো।
আরোহীর এক হাতে চোখের পানি মুছে বলতে আরম্ভ করলো,
.
#চলবে..
[দ্বিতীয় পর্ব পড়েই গল্পের শেষে চলে গেছেন আপনারা! এটা কি ঠিক? বউ হাড়িয়ে যাওয়া রহস্য একপর্বে কিভাবে দিতাম? কাল ভেবেছিলাম বোনাস দেবো। আপনাদের রেসপন্স আর কিছু কমেন্ট দেখে লেখার মুডটাই নষ্ট করে দিয়েছে।একটা পার্ট একটু কেমন হয়েছে বলে রেসপন্স এতটা কমিয়ে দিবেন আশা করিনি।যাইহোক অবিরাম ভালোবাসা! হ্যাপি রিডিং।]
২য় পর্ব
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/391114102610368/