অজানা পর্ব-২৪

0
939

#অজানা
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–২৪

💝

রাত ১১.০০। হাসি মুখে নিজের রুমে বসে আছে আরিবা। ওর খুব খুশি খুশি লাগছে। গালে হাত দিয়ে ভাবছে কিভাবে যে দের মাস কেটে গেল বুঝতেই পারেনি। কলেজে বন্ধুদের সাথে খুব মজা আড্ডায় কেটেছে ওর। আরশ ওকে খুব একটা জ্বালাতে পারেনি। আরশের পরীক্ষা ছিলো ও পড়ায় মগ্ন ছিলো। তাই আরিবার দিন কেটেছে স্বাধীন ভাবে। অতটাও স্বাধীনতা পায়নি ও। যতই আরশের পরীক্ষা হোক ও আরিবার দিকে নজর রেখেছে। বেশি উল্টা পাল্টা কাজ করতে পারেনি। কাল ওর জন্মদিন কাল ওর বাবাকে বলবে সাজেক ঘুরতে নিয়ে যেতে। খুশিতে আত্মহারা হয়ে আছে ও। উৎসাহতে ঘুমেই আসবে না হয়তো। বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করতে লাগলো। ঘুম আসছেনা বিধায় ফোন নিয়ে ফেসবুকে ডুকলো। একটু ফোন না চালাতেই একটা মেসেজ আসলো। মেসেজ অন করে দেখলো আরশের মেসেজ। লেখা আছে।

“এই! এত রাতে অনলাইনে কি করোছ? রাত জেগে প্রেম করা হচ্ছে তাইনা? এই তোর বয়স কয়দিন রে? ফোন চালানো বের করছি তোর, দাড়া!”

আরিবা মেসেজ টা দেখেই ফোনটা রেখে দিলো। আরশ কে ব্যঙ্গ করে বললো।

“এই! এত রাতে অনলাইনে কি করোছ? রাত জেগে প্রেম করা হচ্ছে তাইনা? এই তোর বয়স কয়দিন রে? ফোন চালানো বের করছি তোর, দাড়া!
আমি দাড়িয়েই আছি আয় না। মি. খবিশ! তুই আমার ফোন নেওয়ার কে রে? বেটা হারামীর খালাতো ভাই। কিছুতেই অন্যের সুখ সহ্য হয় না। সবসময় আমার সুখে বাগড়া দেয়। আমিও দেখবো তুই কিভাবে সুখে থাকোছ!”

আরিবা শুয়ে শুয়ে নিজে নিজেই এসব বলছে। আরশের মাথা ফাটিয়ে দিতে ইচ্ছা করে ওর। কিন্তু আফসোস এটা পারবেনা।

“বাহ বাহ ভালোতো। কে আমার সুখের পথে বাঁধা দিবে? তার মুখটা একটু দেখি?”

আরশ হাতে তালি দিতে দিতে কথাগুলো বলছে আর আরিবার দিকে আগাচ্ছে। আরশকে নিজের ঘরে দেখে আরিবা চমকে উঠলো। তাড়াতাড়ি শোয়া থেকে উঠে বসলো। সব শুনে ফেলেনি তো! সেই ভয়েই আরিবা এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো। আরশ খাটের কাছে এসে দাঁতে দাঁত চেঁপে বললো।

“কি জানি বলছিলি? আবার বল আমিও শুনি!”

একথা বলেই আরশ খাটে বসে পড়লো। আরিবা ভয়ে লাফিয়ে উঠলো। ওড়নাটা গায়ে ঠিক করে জড়িয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো।

“এত রাতে তুমি আমার রুমে আসছো কেনো? রুম থেকে বের হও! সকালে যা বলার বলো প্লিজ। এখন বের হও ভাইয়া!”

আরিবা কে ভয় পেতে দেখে আরশ অবাক হয়ে গেলো। কি ব্যপার ও কাঁপছে কেনো? এখানে ভয়ের কি হলো? মনে মনে এসব ভাবলেও মুখে রাগ দেখিয়ে আরিবার দিকে একটু এগিয়ে বললো।

“কেনো? সকালে কেনো কথা হবে? এখনি কথা হবে। এত ভয় পাচ্ছিস কে..”

কথা বলতে বলতে আরশ থেমে গেলে। আরিবার ভয়ের কারন বুঝতে পারলো। যে আরিবা কদিন আগেও রাতে ওর সাথে থাকতে বললে কিছু বলতো না সে এখন ভয় পাচ্ছে? মানে ওর মাঝে ম্যাচুরিটি এসে গেছে? ওর মায়াপরী বড় হয়ে গেছে? এসব ভেবেই আরশের ঠোঁটের কোনো হাসি ফুটলো। তা প্রকাশ না করেই গম্ভীরমুখে বলে উঠলো।

“চল ছাদে চল!”

আরিবা মাথা নাড়িয়ে বুঝালো ও যাবেনা। আরশ ধমক মেরে বললো।

“তোকে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করিনি। আদেশ করছি। শুধু শুধু ভাব নিস্ না। আমি জানি তোকে কি করে নিতে হয়। শুধু শুধু আমায় খারাপ কাজ করতে বাধ্য করিছ না।”

আরিবা জানে আরশ যা বলে তাই করে। তাই কথা না বাড়িয়ে মন খারাপ করে চুপচাপ চলে গেলো।

ছাদে গিয়েই আরিবা অবাক হয়ে গেলো। পুরো ছাদ বেলুনে সাজানো। একটা টেবিল সুন্দর করে করে সাজানো। তার উপর একটা কেক রাখা। পাশে দেলনাটা দেখে মনে হয় বেলুন আর গোলাপের দোকান। আরিবার মনটা একদম ভালো হয়ে গেলো।

“হ্যাপি বার্থডে! হ্যাপি বার্থডে টু ইউ!”

পিছন থেকে হাতে তালি দিচ্ছে আর এসব বলছে আরশ। আরিবা অবাক হয়ে গেলো। ভাবছে আরশ এটা করছে? শুধু মাত্র ওর জন্য! এটা কি করে হতে পারে? ও এক গভীর ভাবনায় চলে গেলল।

“কিরে ভাবনারানী! কোন ভাবনায় চলে গেলি?”

চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে একথা বললো আরশ। আরিবা ভাবনা থেকে বের হলো। ওর দিকে তাকিয়ে বললো।

“ভাইয়া! এত সুন্দর করে তুমি সাজিয়েছো? আমার জন্য এসব করছো?”

আরিবার কথা শুনে আরশ কপাল কুচকে বললো।

“ইশ! আমার ঠ্যাকা পড়েছে এসব করার? আমাকে কি তোর কাজের লোক মনে হয়? আমি এগুলো করবো? তাও তোর জন্য! ইসস কত স্বপ্ন রে বাবা!”

“তো কে করছে শুনি?”

আরিবার রাগ নিয়ে বলা কথায় আরশের কোনো হেলদোল হলোনা। ও আকাশের দিকে তাকিয়ে পকেটে হাত ডুকালো। ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো।

“ডেকোরেশনের লোকেরা সাজিয়ে দিয়ে গেছে।”

“কেউ না বললে তারা এমনি এমনি এসে সাজিয়ে দিয়ে গেছে? ওহ বুঝছি তারা ছাদটা দেখে ভাবলো কি সুন্দর ছাদ এটা সাজালে ভালোই লাগবে সাজাই। তাই সাজাইছে?”

“হতেও পারে”

“তাহলে তুমি আমায় উইশ করলা কেনো?”

“আরে দেখলাম ছাদটা এত সুন্দর করে সাজানো তার উপর ১২ টা বেঁজেছে মানে তোর বার্থডে এসে গেছে তাই উইশ করে দিলাম।”

“ওকে তাহলে তুমি থাকো আমি যাই!”

একথা বলেই আরিবা সামনে পা বাড়ালো অগত্যা আরশ ওর হাত ধরে আটকে দিলো। টেনে কেকের সামনে দাঁড় করিয়ে বললো।

“এসেছিছ যখন কেকটা কেটে ফেল। দুজনে মিলে খেয়ে ফেলি। নাহয় নষ্ট হয়ে যাবে। নষ্ট হওয়া মানেই অপচয়। আর অপচয়কারী শয়তানের ভাই। আমি ওর ভাই হতে চাই না।”

আরিবা কপাল কুচকে আরশের দিকে তাকালো। আরশের কোনো হেলদোল নাই। আরিবা কেকের দিকে তাকালো। দেখলো সুন্দর করে কেকটা ডেকোরেশান করা। তবুও আরিবা কাটবেনা। আরশ এমন করছে কেনো। আরিবা বুকে হাত বেঁধে গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। আরশ ওকে কেক কাটতে না দেখে জোর করে ধরে হাত টেনে কেক কাটলো। ওর হাত থেকে কেক নিয়ে ওকে খাওয়ালো আবার নিজও ওর হাত থেকে খেলো। আরশ ফাজলামি করে আরিবার গালে কেক লাগিয়ে দিলো। আরিবা টিস্যু দিয়ে গালটা পরিষ্কার করে গাল ফুলিয়ে দোলনায় বসে পড়লো। আরশ আস্তে করে ওর পায়ের কাছে বসলো। ওকে বসতে দেখে আরিবা থতমত খেয়ে গেলো। দাড়াতে গেলে আরশ ওকে আবার বসিয়ে দিলো। আরিবার পা আরশ নিজের উরুর উপর রাখলো। আরিবা অবাক হয়ে আরশের কাহিনী দেখছে। আরশ পকেট থেকে একটা পায়েল বের করে আরিবার পায়ে পড়িয়ে দিলো। আরিবা কিছুই বুঝতে পারছেনা, কি হচ্ছে ওর সাথে। কিন্তু ওর হৃদয়ে একটা ভালোলাগা ছু্ঁয়ে গেলো। আরশ উঠে গিয়ে দোলনার পিছনে দাড়িয়ে আরিবাকে আস্তে আস্তে ঠ্যালা দিতে লাগলো। আরিবা এখনও ঘোরের মধ্যে আছে। আরশ দোল দিতে দিতে আরিবার পায়ের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো। ফর্সা পায়ে সাদা পাথরের পায়েলটা ঝকঝক করছে।

“কেমন লাগছে?”

আরশের কথায় আরিবার ধ্যান ভাঙলো। আরশের কথার মানে বুঝতে পারলোনা। আরশের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বললো।

“কি!”

“পায়েল টা!”

আরিবা পায়েলের দিকে তাকালো। দেখলো সোনালী রঙের উপর সাদা ওয়াস্টোন বসানো পায়েলটা চাঁদের আলোয় চিকচিক করছে। খুব সুন্দর লাগছে। তাই বললো।

“খুব সুন্দর ভাইয়া! আমার জন্য কিনছো?”

“নাহ! আজকে আসার সময় দোকানে দেখে ভালো লাগলো তাই কিনলাম। কাকে দিবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। আজ সামনে তোকে পেলাম তাই তোকেই দিলাম।”

আরিবা জানে ওর জন্যই কিনছে। তাই কিছু না বলে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো। ওরা অনেক রাত অব্দি ছাঁদে বসে দুষ্টামী ফাজলামি করলো। শেষে কথা বলতে বলতে আরিবা ঘুমিয়ে পরলো। আরশ ওকে বুকে নিয়ে আকাশের দিকে তাকালো। খুব শান্তি লাগছে ওর। এই মাথাটা বুকে রাখতেই ওর অশান্ত মন শান্ত হয়ে ওঠলো। আরিবার শ্বাস আরশের বুকে আছড়ে পড়ছে। আরশ চোখ বন্ধ করে অনুভব করছে ওর মায়াপরীর উষ্ণতা।

💖

ইনশাআল্লাহ চলবে….

(রি-চেইক করিনি ভুলত্রুটি মাফ করবেন। কেমন হয়েছে তা ছোট করে কমেন্টে জানাবেন। হ্যাপি রিডিং)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here