অজানা পর্ব-২৫

0
766

#অজানা
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–২৫

💖

ডাইনিং টেবিলে বসে আছে চৌধুরী পরিবারের সবাই। আরিবা নিচে নামতেই ওকে সবাই উইশ করেছে। ওকে অনেক কিছু উপহার দিলো। মিসেস আঞ্জুমান ও মিসেস তারিন ওর পছন্দের সব খাবার রান্না করেছে। বিরিয়ানীর ঘ্রান ওর নাকে যেতেই ও তাড়াতাড়ি ডাইনিং টেবিলে বসে পড়লো। আজ ওর জন্মদিন বলে আরশ আর খাইয়ে দিতে বললো না। সবাই খাচ্ছে। আরিবা খেতে খেতে ওর বাবাকে বললো।

“আব্বু! তুমি বলছিলে আমার বার্থডের পরে সাজেক ঘুরতে নিয়ে যাবে। এবার সত্যি সত্যি নিয়ে যাবে তো? নাহলে তোমার সাথে আড়ি।”

মি. জাকির খেতে খেতে মেয়ের দিকে তাকালো। মুচকি হেসে বললো।

“আচ্ছা মামনি নিয়ে যাবো। পরশু আরশের পরীক্ষা আবার আমার জরুরী একটা মিটংও আছে। তাহলে সব কিছু রেডি করে আমরা ৫দিন পরে যাই?”

আরিবা খুশিতে মাথা দোলাতে দোলাতে বললো।

” আচ্ছা।”

মি. জাকির রহস্যময় হাসি দিয়ে বললেন।

“আজ সন্ধায় আমার মামনির বিশাল বড় বার্থডে পার্টি আছে তা কি আমার মামনি জানে?”

আরিবা খাওয়া বন্ধ করে বাবার দিকে তাকালো। অবাক হয়ে বললো।

“এবারও পার্টি হবে? কিভাবে হবে? কোনো আয়োজন করা হয়নি তো? একদিনে কি করে সব আয়োজন করবে?”

মি. আফজাল হোসেন মুচকি হাসি দিয়ে বললো।

“কমিউনিটি সেন্টারে সব আয়োজন করা হচ্ছে মামনি! এটা তোমার জন্য সারপ্রাইজ।”

“কাকা! আমি তো কাউকে ইনভাইট করিনি। আমার বন্ধুদের বলবো কখন! যাই এক্ষুনি বলে আসি!”

আরিবা দৌড়ে যেতে যেতে কথাটা বললো। আরশ ভ্রু কুঁচকে বললো।

“তোকে বলতে হবেনা। আমি সবাইকে বলে দিছে। যেদিন অনুষ্ঠান ওইদিন কেউ ইনভাইট করে বলদ!”

বলদ কথাটা শুনে আরিবা থেমে গেলো। রেগে পিছনে ঘুরে আরশের দিকে তাকিয়ে বললো।

“একদম বলদ বলবা না বলে দিচ্ছি। কে বলদ হুম? বলদ তো তুমি। আমি আজ জেনেছি তখন আমি আজেই ইনভাইট করবো তা তো জানা উচিত তাই না?”

“আবার মুখে মুখে তর্ক করছিস? থাপ্পড় দিয়ে তর্ক করা ছুটিয়ে দিবো ফাজিল মেয়ে।”

আরিবা রাগে ফোসফাস করতে লাগলো। সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে বললো।

“দেখছো তোমরা? আমি নাকি শুধু শুধু তার সাথে ঝগড়া করি। এখন বলো কে ঝগড়া করছে।”

আরশ দাঁতে দাঁত চেঁপে বললো।

“কি দেখবে সবাই? চুপচাপ খেতে বস।”

কথাটা বলেই আরশ খাওয়ায় মন দিলো। সবাই চুপচাপ ওদের ঝগড়া দেখছে। ওদের মাঝে যাওয়া মানেই বলির পাঠা হওয়া। আরিবা সবাইকে চুপ থাকতে দেখে রেগে গেলো। চিল্লিয়ে আরশকে উদেশ্য করে বললো।

“খাবো না কি করবে তুমি হুম! সব সময় নিজের যা ইচ্ছা সেটাই আমার উপর এপ্লাই করে। কি মনে হয় আমি তোমার টাকায় কেনা গোলাম?”

আরশ ওর কথায় কান দিলোনা। খেতে খেতে গম্ভীর গলায় বলে উঠলো।

“বেশি কথা বলতে চাচ্ছি না। তাড়াতাড়ি খেয়ে নে। খেয়ে মার্কেটে যাবো। ওখান থেকে এতিমখানায় যাবো।”

আরিবা কিছুই বললো না। রাগ দেখিয়ে জোরে জোরে পা ফেলে উপরে চলে গেলো।

আরশের মা আরিবার যাওয়ার পানে তাকিয়ে বললো।

“দিলিতো মেয়ে টাকে রাগিয়ে। কি দরকার ছিলো এমন করার?”

“আরশ! পরশু তোমার পরীক্ষা। কি দরকার ছিলো আরিবাকে এমন সারপ্রাইজ দেওয়ার? এবার অনুষ্ঠান না করলেই হতো!”

মি. জাকিরের সাথে তাল মিলিয়ে মিসেস আঞ্জুমানও বললেন।

“হ্যাঁ তাইতো। কি দরকার ছিলো বাবা! একবছর না করলে কি হতো? আরিবা কিছুই বলতো না।”

আরশ কারও কথার প্রতিত্তরে কিছুই বললো না। চুপচাপ খেতে লাগলো। যেনো কারও কথা ও শুনতেই পায়নি। মি. আফজাল হোসেন ছেলের প্রতি বিরক্ত হয়ে বললেন।

“কি বলছিস ওকে তোরা? ও কারও কথা শুনে? কত করে বুঝালাম অনুষ্ঠান টা পরীক্ষার পর করিস। কিন্তু না, সে এখনি করবে। তার নাকি সব পড়া কমপ্লিট।”

মিসেস তারিন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন।

“থাক! কথা বাড়াইও না। ওর যা ইচ্ছা করুক!”

কথাটা বলল একটু থামলেন মিসেস তারিন। আরশের দিকে তাকিয়ে বললেন।

“আচ্ছা আরশ এতিমখানায় কি করতে যাবি? মান্নত করেছিলি নাকি?”

আরশ খাওয়া শেষ হাত মুছতে মুছতে বললো।

“আরিবার বার্থডে উপলক্ষে এতিমখানায় সবাইকে খাওয়াবো। আরিবা নিজে সামনে থাকবে। তাছাড়া ওর নামের এতিমখানা বানাইছি। ও তো যায় না। এই উপলক্ষে নিয়ে যাই।”

কথাটা বলেই আরশ আরিবার খাবার প্লেট নিয়ে উপরে চলে গেলো। কেউ কিছুই বললোনা। আরশের যাওয়ার দিকে একপলক তাকিয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে লাগলো।

—————————

বিশাল মার্কেটের সামনে এসে গাড়ি থামলো। আরিবা গাল ফুলিয়ে গাড়ি থেকে নামলো। ও আরশের সাথে আসতে চায়নি। আরশ সবসময় ওকে সব বিষয়ে জোর করে। আজও ওকে জোর করে খাবার খাইয়েছে। এখানেও জোর করে নিয়ে আসছে। আজ ওর জন্মদিন। আজ একটু ভালো ব্যবহার করলে কি ক্ষতি হতো সেটাই বুঝেনা আরিবা।

“কিরে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে এসেছিস্? নিজেতো হলি এক কালি। এই রোদে আমাকে দাড় কড়িয়ে রেখে নিজের মতো কালি বানাতে চাছ নাকি?”

আরশের কথায় আরিবা বিরক্তি নিয়ে ওর দিকে তাকালো। কপাল কুচকে বললো।

“আমি ইচ্ছা করে আসিনি বুঝছো? তুমি নিয়ে আসছো। তুমি কি করতে আনছো তুমি জানো। আর শোনো বেশি ভাব নিও না! আমিও অনেক ফর্সা আছি। যদিও তোমার থেকে একটু কম। তাতে কি সবাই বলে আমি এমনি ঠিক আছি। এই রংয়ে আমায় অনেক সুন্দর লাগে।”

শেষের কথাটা আরিবা একটু ভাব নিয়ে বললো। আরশ কিছুই বললো না। ঠোঁট বাঁকিয়ে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো।

“হ্যাঁ জানি। লাগে তো পেতনির মতো আবার বড় বড় কথা। সবাই তো তোকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য বলে। তুইতো বাচ্চা যদি অসুন্দর বললে কেঁদে দিস সেই ভয়ে সবাই সুন্দর বলে। কিচ্ছু বুঝিস না। চল! ”

কথাটা বলে আরশ ভিতরে চললো। আরিবা ভ্রু কুচকে বিরক্তি নিয়ে ওর পিছু চললো।

মার্কেটে এসেও আরিবা একটুও শান্তি পায়নি। আগেই বুঝেছে আরশের সাথে কোথাও এসে শান্তি তো দূরে আশান্তিও পাওয়া যায়না। একটা ড্রেসও নিজের পছন্দ মতো নিতে পারেনি আরিবা। যেটা চয়েজ করে সেটাতেই আরশের এলার্জি। সেটা রেখে নিজের পছন্দ মতো একটা আরিবার হাতে ধরিয়ে দিয়েছে। আরিবা কিছুই বলেনি। একেতো মার্কেট এখানে আরশের সাথে কথা বাড়ানো মানেই নিজের ইজ্জতের বারবিকিউ বানানো। আর দ্বিতীয় তো আজ ওর জন্মদিন। আজ বাড়তি ঝামেলা চায়না ও। দীর্ঘ বিরক্তি নিয়ে মার্কেট শেষ করে বের হলো আরিবা। গাড়িতে চুপ করে বসে রইলো ও। কথা বললেই আরশের ফালতু কথা শুনতে হবে। তাই চুপচাপ চললো ওদের গন্তব্যে।

——————————-

“জান্নাতুল ফেরদৌস এতিমখানা” র সামনে এসে গাড়ি থামলো। এটা আরশ আরিবার নামে বানিয়েছে। আরিবা এই নিয়ে দু’বার আসলো। দু বারেই এই এতিমখানা সুন্দর করে সাজানো ছিলো। প্রথমবার উদ্ভোদনের সময় এসেছিলো আর আজ আসলো। ওর আসা হয়না আরশ আসে মাঝে মাঝে আর টাকা পাঠিয়ে দেয়। আরিবাকে গাড়িতে বসে থাকতে দেখে আরশ ধমক দিয়ে বললো।

“কিরে! তোকে কোলে করে নামাতে হবে? আসছে ম্যাডামফুলি! অভ্যর্থনা ছাড়া নামবে না মনে হচ্ছে। এই! তাড়াতাড়ি নাম!”

আরিবা গাড়ি রেগে থেকে নামলো। ওদের সাথে অনেক বডিগার্ডরাও এসেছে। ওদের দেখে এতিমখানার সকলে এগিয়ে আসলেন। সবাই এসে আরিবাকে ফুল দিয়ে উইশ করলো। আরিবা অবাক হয়ে দেখছে। আরিবা জানতোনা আরশ এত কিছুর আয়োজন করে রাখছে। তাদের সাথে কুশলাদি বিনিময় করে ওরা ভিতরে গেলো।
আরিবা আসার সময় বাচ্চাদের জন্য আইসক্রিম নিয়ে আসছিলো। তা সবাইকে খেতে দিলো। নিজেও ওদের সাথে বসে খেলো। আরশ রান্নার দিকটায় পরিদর্শন করতে গেলো। আরিবা সবার সাথে খুব মজা করলো। কখনও দৌড়া দৌড়ি করেছে আবার কখনও কানামাছি খেলেছে। খেলা শেষে সবাইকে দুপরের খাবার দিলো। খাওয়া দাওয়া করে বাড়ির উদেশ্যে রওয়ানা করলো ওরা। আরশ চুপচাপ হয়ে ড্রাইভিং করছে। আরিবা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। ওর খুব খুশি খুশি লাগছে। অনেক মজা করেছে আজ। ফুরফুরে মন নিয়ে আরশের দিকে তাকালো ও। আরশ সাদা পাঞ্জাবী পড়েছে আজ। ফর্সা শরীরের সৌন্দর্যটা দিগুণ হারে বেড়েছে। দুপুরের রোদের কারনে চেহারা লাল হয়ে আছে। যদিও তাপটা একটু কমেছে। আজ খুব পরিশ্রম করেছে আরশ। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে। বাতাসে সিল্কি চুলগুলো উড়ছে। আবার কখনো কপালে আছড়ে পড়ছে। আরিবা আরশের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে গেলো। ও এক ভাবনায় চলে গেলো। হঠাৎ গাড়ি থামতেই আরিবার ঘোর কাটলো। দেখলো গাড়ি বাড়ির সামনে থেমেছে। আরিবা আরশের দিকে তাকিয়ে বললো।

“খুব খুব মজা হয়েছে আজ। থ্যাংস! আমার জন্মদিনে এমন সব আনন্দময় মুহূর্ত উপহার দেওয়ার জন্য।”

কথাটা বলেই আরিবা মুচকি হেসে গাড়ি থেকে বেড়িয়ে বাড়ির দিকে গেলো। আরশ অবাক হয়ে আরিবার দিকে ঘুরলো। আরিবার যাওয়ার পানে তাকিয়ে নিরবে হেসে ফেললো আরশ। প্রাপ্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে সিটে হেলান দিলো। কপালে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে ভাবলো তার মানে ও পেরেছে ওর মায়াপরীর মনে জায়গা করে নিতে!

💝

ইনশাআল্লাহ চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here