অজানা পর্ব-৩

0
1322

#অজানা
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব-৩

” আমার উপর জোর খাটানো তাইনা? নাহ এটা কিছুতেই মানবো না। এর শেষ দেখেই ছাড়বো আমি। বেটা খাটাশ একটা!!”

আরিবা রুমের জিনিস পত্র ফেলছে আর রাগে এসব বলছে। ও রেগে পুরো রুম উল্টা পাল্টা করে ফেলছে। আরিবা খুব জেদি একটা মেয়ে। রাগ উঠলে থামানো মুশকিল। ও বুঝেনা সবাই ওই খবিশটার কথা শুনে কেনো? ও একটা পিচ্চি মেয়ে ওর কাথাইতো সবাই শুনবে কিন্তু এখানে উল্টো হচ্ছে। অনেক ক্ষন পর আরিবা কিছু একটা ভেবে রহস্যময় হাসি দিয়ে রেডি হতে চলে গেলো।

——————————

“কিরে নেত্রা! হলো তোর? কখন স্কুলে যাবি?”

“ভাইয়া আসতাছি”

নেত্রা নিজের রুম থেকেই তার ভাইয়ার কথার উওর দিলো। এদিকে তার ভাই এমন তারাহুরা করছে যেনো তার স্কুল মিস হয়ে যাবে। কিছুক্ষণ পর নেত্রা তারাহুরা করে রুম থেকে বের হলো। কোমড়ে হাত গুঁজে ভাইয়ার দিকে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো।

“ভাইয়া!! আমার স্কুলে যাওয়ার জন্য তোর এত তাড়া কেনো? আগে তো রিকোয়েস্ট করলেও আমায় নিয়ে যাইতি না এখন এই একবছর ধরে কি হইছে যে প্রতিদিন দিয়ে আসতে চাস্?”

নিদ্র তার বোনের কথায় থতমত খেয়ে গেলো। তবুও নিজেকে সামলে বললো।

“আরে গাধী আগেতো তুই ছোটো ছিলি। তাই নিয়ে যাইনি। এখন বড়ো হইছোছ তাই নিয়ে যাই।”

“মানে কি? ছোটে থাকতেই তো নিয়ে যেতে হতো! এখনতো আমি সবই চিনি, একা যেতেও পারি।”

ভাইয়ার কথা না বুঝে সে অসহায় ভাবে জিজ্ঞাসা করলো। তার বাবা খবরের কাগজ পড়ছিলেন কিন্তু ছেলে মেয়ের এমন কথা শুনে ওদের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছেন। নেত্রার বাবা হাসিব সাহেব খুব ভালো একজন মানুষ। সে পেশায় একজন ব্যবসায়ী। নেত্রার মা একজন কলেজের লেকচারার। তিনিও ডাইনিং টেবিলে এটা ওটা করতাছেন আর হাসতাছেন। নিদ্র তার মা বাবার দিকে একনজর তাকিয় আবার নেত্রার দিকে চোখ ফিরিয়ে বললো।

“বোকা! আগে তো কেউ নিতে চাইতোনা। এখন বড়ো হইছোছ বলাতো যায়না কে আবার কিডনাপ করে নিয়ে বিয়ে করে ফেলে! তাইলে তোর বিয়েও খেতে পারবোনা!”

নেত্রা রেগে বোম হয়ে তার ভাইয়ের দিকে যেতে লাগলো। ওর ভাই হাসতে হাসতে গেটের দিকে দৌড়ে যেতে যেতে বললো।

“বাই মম, বাই ড্যাড!”

ওর বাবা ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন।

“ওরা যেনো সবসময় এমন হাসি খুশি থাকে।”

নেত্রা মা স্বামীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলেন।

—————————-

ড্রইং রুমের সোফায় বসে গভীর ভাবে ভাবছে আরশ। ও কিছুই হিসাব মিলাতে পারছেনা। এত চেক দেওয়ার পরেও কোন ছেলে ওকে প্রপোজ করলো? সে কি তানজীম হাসান আরশ চৌধুরীকে চিনেনা? কেউ করলে তো ও জানতে পারতো। ওর লোক তো সব সময় ওকে ফলো করে কে হতে পারে? এসব ভেবে ভেবেই ও উদাস হয়ে হাত দিয়ে চুল মুঠ করে ধরে মাথা নিচু করে ফেললো। মিসেস তারিন ছেলের দিকে তাকিয়ে চোখের জল ফেললেন। তার একমাত্র ছেলেকে যে কষ্টে থাকতে দেখতে পারবেননা। ওর কাকিমনি মা ছেলের দিকে হতাশ হয়ে তাকিয়ে আছে। তার যে কিছুই বলার নেই। তিনি তার মেয়েকে অনেক ভালোবাসে। রিবা যাকে চায় তাকেই দিবেন তিনি। কিন্তু তিনি আরশকেও যে নিজের ছেলের মতোই ভালোবাসেন। তিনি এটাও জানেন আরশের মতো কেউ তার মেয়েকে ভালোবাসতে পারবেনা।
সিঁড়ি দিয়ে কেউ শব্দ করে নামায় তাদের ধ্যান ভাঙলো। আরশ জানে কে নামছে তবুও তাকালো না। তার অসহায়ত্ব সে প্রকাশ করতে চায়না। তাকে আরও শক্ত হতে হবে, তাকাবে না সে মায়াপরীর চোখের দিকে, ওই দিকে তাকালেই যে সে দূর্বল হয়ে যায়। ওই চোখ যাদু জানে। যা শুধু তাকে বস করে নেয়।

আরিবা আরশের কছে এসে দাড়ালো তাতে আরশের কোনো হেলদোল হলোনা। আরিবা কোমরে হাত দিয়ে রাগ নিয়ে বললো।

“মাথা নিচু করে কি ভাবছো ভাইয়া? চলো! স্কুলে দেরি হয়ে যাবে।”

আরশ মাথাটা উচু করে তাকালো। আরিবা স্কুল ড্রেস পরেছে চুলগুলো দু’পাশে বিনুনি করা। ঠোঁট হালকা পিংক লিপস্টিক। সব মিলিয়ে যেনো একটা পরী। বাচ্চা পরী। যে পরী তাকে মায়া করে বারবার। সেজন্যই তো আরশ ওর নাম দিয়েছে মায়াপরী। ওর মায়াপরী। ওর হৃদয়ে ঝড় বইতে শুরু করে দিয়েছে। নাহ! সে আর তাকিয়ে থাকতে পারবেনা। আরিবার থেকে চোখ ফিড়িয়ে মাকে আর কাকিমনিকে বাই বলে সামনে চললো। আরিবাও তার সাথে সমান তালে পা চালালো।

———————

গাড়ির জানালা দিয়ে আকাশ দেখছে আরিবা। কতো সুন্দর এই পৃথিবী। আকাশে মেঘ পাল্লা দিয়ে ছোটাছুটি করছে। হয়তে বৃষ্টি আসবে। ভাদ্রমাস শেষ হতে আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। এখনও হঠাৎ করেই বৃষ্টি আসে। আমাদের দেশে এখন আর ছয় ঋতু দেখা যায় না। তিনটে ঋতুই বেশি চোখে পড়ে। গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শীত। আরিবার কাছে শীত ঋতুটাই বেশি ভালোলাগে। গ্রীষ্মকালের ঝড়কে সে অনেক ভয় পায়। যদিও সে বৃষ্টিতে ভিজতে অনেক ভালোবাসে কিন্তু বর্ষাকালের বিদ্যুৎ চমকানোর জন্য এই ঋতু তার ভালোবাসার জায়গা থেকে বাদ পড়েছে। আরশ ড্রাইভ করছে আর মাঝে মাঝে আঁড় চোখে তার মায়াপরীকে দেখছে। হালকা বাতাসে আরিবার সামনের ছোটো ছোটো চুলগুলো উড়ছে ওর বেহায়া মন চাচ্ছে চুল গুলো কানে পিছে গুঁজে দিতে। কিন্তু নাহ সে এটা করতে পারবেনা। আরিবা এখনো ছোটো এসব ঠিক নয়। ছোটো মনে ভুল বুঝতে পারে। আরশ আবার সামনে তাকিয়ে ড্রইভিং এ মন দিলো।

আরিবা ভাবনা চিন্তা ফেলে আরশের দিকে তাকালো। আরশ গম্ভীর হয়ে ড্রইভ করছে। আরিবার মন জানতে চায় আজ আরশের কি হয়েছে এত রেগে আছে কেন? ওর সাথে কথা বলেনা কেন? সে কি জানেনা ওর সাথে কথা না বললে ওর ভালো লাগেনা। বকুনি দেক তবুও কথা বলুক। আরশ বুঝতে পারলো আরিবা ওকে দেখছে ওর হৃদয় একটা প্রশান্তি কাজ করলো। মনের অজান্তেই ওর ঠোঁট প্রসারিত হলো। বাম গালে হালকা টোল পড়া এই হাসি যেনো সৌন্দর্যের এক বিশেষ অন্যন্যা। আরিবার মনও এবার শান্তি হলো। আরিবা বুঝেনা এই লোকটা ওর সামনে বেশি হাসেনা কেন? শুধুই রেগে থাকে! সে কি জানেনা হাসলে একে কতো ভালো লাগে? ফর্সা চেহারায় হালকা পিংক কালার ঠোঁট টা যেনো তার সৌন্দর্য্য হাজার গুন বাড়িয়ে দিয়েছে।

“এতো কুনজর দিছনা অসুস্থ হয়ে যাবো”

আরশের কথায় আরিবা চমকে উঠলো। আরশের থেকে চোখ নামিয়ে আমতা আমতা করে বললো।

“কুনজর কোথায় দিলাম?”

“ওহ!! তাহলে সুনজর দিয়েছিলি বুঝি?”

“একদম না। আমিতো কোনো নজরেই দেইনি!”

” তাহলে হয়তো এতক্ষন কোনো পেত্নী আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো।”

“একদম পেত্নী বলবেনা ভাইয়া! আমি পেত্নী না। তুমি জানো সবাই আমার সৌন্দর্যের কতো প্রশংসা করে? শুধু তুমিয়েই করো না ভাইয়া!”

এত ভাইয়া ডাকটা যেনো আরশের পছন্দ হচ্ছেনা। তাই গাড়িটা থামিয়ে আরিবার দিকে তাকালো। হঠাৎ গাড়ি থামায় আরিবা অবাক হয়ে বললো।

“ভাইয়া? এখানে গাড়ি থামাইছো কেনো?”

আবার ভাইয়া বলায় আরশ রেগে দাঁতে দাঁত চেঁপে বললো।

” কথায় কথায় এতো ভাইয়া ফুটাছ যেনো আমি তোর মায়ের পেটের ভাই?”

“একেই তো ভাইয়া! মা তো তোমাকে নিজের ছেলের মতোই ভালোবাসে!”

“ছেলের মতো ছেলেতো নই! বাদদে বললি না তো কে কে প্রশংসা করে!”

কথাটা বলেই আরশ গাড়ি স্টার্ট দিলো। আরিবা ভাব নিয়ে বললো।

“স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা টিচাররা আমায় বিশ্বসুন্দরী বলে। আর নিদ্র ভাইয়া তো আমায় সবসময় ‘বিউটি ডল’ বলে ডাকে।”

কথাটা বলেই আরিবা মাথা দুলাতে দুলাতে বাইরের দিকে নজর দিলো। বাইরে এখনও হালকা হালকা বৃষ্টি পড়ছে সেগুলো দেখায় মন ডুবালো ও। যদি ও একবার আরশের দিকে তাকাতো তাহলে দেখতে পেতো আরশের চোখ কতটা রক্ত বর্ন ধারন করেছে। আরশ রাগে গাড়ির স্টিয়ারিং শক্ত করে ধরেছে যেনো এটা সে ভেঙে ফেলবে। ভিতরে ভিতরে ফেটে যাচ্ছে আরশ! কি শুনলো সে! তার মায়াপরীকে একজন নাম দিয়েছে। ভালোবাসার নাম! সে এটা কিছুতেই মানতে পারছে না। আজ ওই নিদ্র ফিদ্র কে দেখে নিবে ওর কলিকায় হাত দেওয়ার মজা ও বুঝিয়েই ছাড়বে।

চলবে……

(ছোটো হওয়ার জন্য সরি। ভুলত্রুটি মাফ করবেন। )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here