অজানা পর্ব-৪

0
1194

#অজানা
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–৪

হালকা হালকা বৃষ্টি পড়ছে। বাতাসের ঝাপটায় বৃষ্টির পানি গাড়ির জানালা দিয়ে আরিবার মুখে পড়ছে। কিন্তু তাতে ওর তার ভাবাবেগ নেই। ও ভাবছে কাল রাতের কথা। কাল রাতে যখন আরশ তাকে একা ছাদে ফেলে চলে আসে ও সেখানে কিছুক্ষণ রাগ করে বসে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই কান্নার আওয়াজ টা মনে করতেই ভয় লাগতে শুরু করে। তাই ও আস্তে আস্তে ছাদ থেকে চলে আসছিলো। ও যখন স্টোর রুমের সামনে দিয়ে আসছিলো তখন আবারও ওই কান্নার আওয়াজ পাচ্ছিল। যদিও আওয়াজ টা খুব আস্তে। গভীর ভাবে খেয়াল না করলে শোনা যাবেনা। কান্না শুনেই ওর শরীরের পশম নাড়া দিয়ে উঠলো। ওর মস্তিষ্কে ধাক্কা খেলো কে কান্না করতে পারে। তাও এত নীরবে? প্রথম যখন শুনছে তখন তো জোরেই ছিলো। এগুলো কার কান্না? স্টোর রুম তো বন্ধ এখানে কোনো মানুষ থাকতে পারে? কখনোই না। তাইলে কি ভুত! শুধু আমাকে তার কান্নার আওয়াজ শুনিয়ে ডাকছে। আমায় মনে হয় সে নিতে চায়। এসব ভেবেই আরিবা চোখমুখ খিচে রইলো। তখন কারো পায়ের আওয়াজ পেলো ভাবলো ভুত হয়তো তাকে সত্যি সত্যি নিতে আসছে। সেই ভয়েই ও জ্ঞান হারালো। আসলে ওটা আরশের পায়ের আওয়াজ ছিলো। তখন বুঝেনি কিন্তু সকালে জ্ঞান ফেরার পর আরশের কথা শুনে বুঝেছে ওটা আরশ ছিলো। আচমকা গাড়ি থামায় আরিবা সামনে দিকে হেলে পড়লো। ও রাগ করে আরশের দিকে তাকিয়ে বললো।

“ভাইয়া! তোমার এই অভ্যাস কি কোনোদিনও যাবেনা? বলা নেই কওয়া নেই হুট করেই গাড়ি থামাও! যদি ব্যাথা পেতাম?”

আরশ রাগে কটকট করে ওর দিকে ফিরলো। নিজেকে যথেষ্ট শান্ত রেখে দাঁতে দাঁত চেঁপে বললো।

“কোন রাজকুমারের প্রেমে পড়ছোছ যে সারাদিন ওকেই ভাবা লাগে? এত ভাবছ যে কখন স্কুলে চলে আসছি সেটাও খেয়াল করোছ নি।”

আরশের রাগে কটমট করা কথায় আরিবা ভয় পেলো। একটা ঢেক গিলে বললো।

“ভাইয়া আমিতো.. ”

কথাটা বলতে পারলোনা তার আগেই আরশ বললো।

“গা্রি থেকে নাম!”

“ভাইয়া বৃষ্টি! জানোতো বৃষ্টির পানিতে আমার ঠান্ডা লাগে।”

বৃষ্টি তে যে আরিবা একদম ভিজতে পারেনা। সেটা রাগের মাথায় আরশ ভুলেই গেছিলো। মনে পড়তেই আরশ ছাতি ফুটিয়ে গাড়ি থেকে বের হলো। তারপর আরিবার দরজা খুলে ওকে বের হতে বললো। আরিবা বের হয়ে ছাতার নিচে দাড়ালো। আরশ পুরো ছাতাটা আরিবার উপর ধরে হাটছে। আরশ পুরো ভিজে যাচ্ছে তবুও আরিবার গায়ে এক ফোটা পানি লাগতে দিবেনা। আরিবা এটা খেয়াল করে বললো।

“ভাইয়া ছাতা আমায় দিয়ে দাও! আমি একাই যাই দুজন গেলে ভিজে যাবো।”

“যত বড় মুখ নাই তত বড় কথা! ছাতা ধরে কখনো হাটতে পারোছ? পারোছ নাতো, এখন একা ছাতা ধরে হেটে পড়বি আর আমার ইজ্জতের কাবাব বানাবি।”

“আমি পড়লে তোমার ইজ্জত যাবে কেমনে? যাবেতো আমার!”

“এহহ! ওই তোকে কেউ তোর নামে চিনে? চিনেতো আমার নামে। আমার বোন হিসেবে চিনে। ধর এখন তুই পড়ে গেলি, তা কেউ ভিডিও করলো। আর ওই ভিডিও ভাইরাল হলে লোকে তোকে কিছুই বলবেনা। আমাকে দেখে বলবে ওই দেখ ওই আরশের বোন বড় একটা বোয়াল মাছ ধরেছে। তখন তো আমিই লজ্জা পাবো। ”

এসব উল্টা পাল্টা কথা শুনে আরিবার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। বেটা শয়তান! ভিজ তুই তাতে আমার কি! মনে মনে আরশকে অনেক গালি দিয়ে সামনে চললো আরিবা।

———————–

“নিজে পুরো ভিজে গেছে কিন্তু বোনের গায়ে এক ফোটাও পানি পরতে দেয়নি। একেই বলে ভাইয়ের ভালোবাসা। এমন ভালোবাসা যেনো প্রতিটা ঘরে ঘরে হয়।”

স্কুলের বারান্দায় উঠতেই এমন কথা শুনে থমকে যায় আরশ। মেজাজ ওর সপ্ত আকাশে উঠে গেছে। যে বলছে তাকে পুরে খেয়ে ফেলবে এমন ভেবে সামনে তাকালো। সামনে তাকিয়ে ও অবাক হলো। আরে এতো সাকিব তার ক্লাসমেট। এইচএসসি পর্যন্ত তারা একসাথে পড়ালেখা করেছে। কতো আড্ডা দিতো, দুষ্টামি করতো। পরে সাকিব বুয়েটে চলে যায় আর আরশ মেডিকেলে। প্রায় তিন বছর পর ওদের দেখা। সাকিবও আরশ দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।

“আরশ ভাইয়া! তুমি নিদ্র ভাইয়াকে চিনো?”

আরিবার কথায় দুজনেরই ধ্যান ভাঙে। নিদ্র কে তা আরশ বুঝতে না পেরে কপাল কুচকে বিরক্তি নিয়ে বললো।

“নিদ্র কে? আমি কোনো নিদ্র ফিদ্র কে চিনিনা!”

“আমিই নিদ্র!”

“সাকিব তুই!”

আরশ অবাকের শেষ পর্যায় পৌঁছে গেছে। সাকিবেই নিদ্র? কি করে! সে হিসাব মিলাতে পারছেনা। হটাৎ ওর মনে হলো সাকিব ওর মায়াপরীকে বিউটি ডল বলে? রাগে ওর চেয়াল শক্ত হয়ে এলো। নাহ! এই সাকিবকে ওর মোটেও ভালো লাগছেনা। ভাবছিলো সাকিব কে জড়িয়ে ধরবে কিন্তু এখন একটুও ইচ্ছে হচ্ছে না। উল্টো নিদ্রট নাক বরাবর ঘুষি দিতে ইচ্ছে করছে ওর। সাকিব কেনো ওর মায়াপরীর নাম দিবে। সামনা সামনি কিছু বলতেও পারবেনা সে বন্ধু ছিলো তো। অন্য ছেলে হলে এতক্ষনে তুলে নিয়ে ধোলাই দিত। এখন কৌশলে সরাতে হবে। আরশ নিজের হাত মুঠ করে নিজেকে শান্ত করে বললো।

“তুই এখানে কি করোছ?”

“আমার বোন নেত্রা কে দিয়ে যেতে এসেছি।”

“নেত্রা তোর বোন?”

“হুম আমার বোন কিন্তু তোর যে একটা বোন আছে সেটা তো কখনো বলছ নি। সব সময় তো বলে বেড়াতি আমি আমার বাবার একমাত্র ছেলে।”

“হুম ঠিকি তো বলতাম ও তো আমার চাচাতো বোন।”

আরশের কথা শুনে নিদ্র আর নেত্রা উচ্চ স্বরে হাসতে লাগলো। আরিবা আরশ ওদের হাশির কারন বুঝতে না পেরে প্রশ্ন বোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অবশেষে নিদ্র অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে বললো।

“সেই একেই তো!”

“এক কীভাবে?”

“ভাইয়া! আপন বোন আর চাচাতো বোনে কোনো পার্থক্য আছে?”

নেত্রার কথার কোনো জবাব দিলোনা আরশ। কি বলবে সে? আরিবা তো ওর মায়াপরী ওর বোন কখনোই না। কিন্তু ওদের তো তা বলা যাবেনা তাই ফাজলামি করে বললো।

“রিবা আমার চাচাতো বোন না। ওকে তো কুড়িয়ে পেয়েছি আমি।”

ওর কথায় নেত্রা আর নিদ্র অনেক জোরে হেসে দিলো। ওদের দেখাদেখি আরশও হাসছে। আরিবা রাগে কটমট করে আরশের দিকে তাকালো। তবুও আরশ হাসছে। আরিবা রাগ করে ক্লাসে চলে যাচ্ছিলো। নিদ্র পিছন থেকে বললো।

“আরে বিউটি ডল রাগ করছো? ইটস ফান!”

কথাটা শুনে আরিবা পিছনে ফিরলো। মুচকি হাসি দিয়ে বললো।

“না ভাইয়া আমি রাগ করিনি। নেত্রা চল ক্লাসে! ভাইয়া বাই!”

“বাই!”

আরিবা নিদ্রকে হাত নাড়িয়ে কথাটা বললো নিদ্রও হাত নাড়িয়ে বললো। আরিবা আর নেত্রা ক্লাসে চলে গেলো। এদিকে আরশ রেগে একাকার। আরিবা তার সামনে অন্য একজনের সাথে হেসে কথা বলছে? এত বাই বলার কি আছে? ওকে তো কখনো বলেনি, নিদ্রকে বললো কেন? ওর ইচ্ছে করছে সব কিছু ভেঙে ফেলতে। এর মজা ও বুঝাবে। আগে নিদ্রকে, আরিবাকে তো বাড়িতে পাবেই। আরশ কিছু না বলেই চলে গেলো।

” এই আরশ! যাহ! চলে গেলো, ওর আবার কি হলো? দুই ভাই বোন একেই। আমার বিউটি ডল তো পুরাই বোম।”

মুচকি হেসে কথাগুলো বলতে বলতে নিদ্রও নিজ গন্তব্যে পা বাড়ালো।

———————

“ভাই আর কতো বছর সহ্য করবো এটা? আমার তো আর সহ্য হচ্ছে না। কবে যে আমাদের উদেশ্য সফল হবে জানিনা ভাই।”

“চিন্তা করিছ না! আর মাত্র দুই বছর। ১৪টা বছর সহ্য করতে পারছি আর দুই বছর কিছুই না।”

“ভাই তুমি ঠিক বলছো!আর মাত্র দু’বছর তারপর দু’জনকেই সোজা পরপারে।”

“আর আমরা থাকবো স্বাধীন ভাবে পায়ের উপর পা তুলে।”

কথাটা বলে সে রুম কাঁপিয়ে হাসতে লাগলো। তার অপর পাশের ব্যক্তিও ঠোঁট বাকিয়ে হাসলেন। অন্ধকার রুমে পরিকল্পনা করছে তারা। যেখানে চলেছে মৃত্যুর বিশাল রহস্য।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here