অজানা পর্ব-৫

0
1021

#অজানা
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–৫

“what the hell কারা তোমরা? আমাকে বেঁধে রেখেছো কেনো? ছাড়ো আমাকে? তোমরা জানোনা আমি কে, ছাড়া পেলে সবাইকে মজা বোঝাবো?”

নিদ্র চিল্লিয়ে কথাগুলো বলছে আর ছোটার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে। নিদ্র কলেজ থেকে বাড়ি ফিরছিলো হঠাৎ ২টা গাড়ি ওর গাড়ির সামনে এসে থামলো। নিদ্র কিছু বোঝার আগেই ওকে ধরে গাড়িতে ওঠালো। কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ওর হাত পা চোখ বেধে কোথায় যেনো নিয়ে নিয়ে আসলো। এখানে এনে চেয়ারের সাথে বেঁধে রেখেছে। নিদ্র মোচড়াচ্ছে আর বলছে।

“এই! বলো কে তোমাদের টাকা দিছে হুম বলো? কি জন্য তুলে আনছো? টাকা লাগলে বলো দিয়ে দিচ্ছি তাও ছাড়ো stupid!!”

নিদ্র হঠাৎ কারও পায়ের আওয়াজ পেলো। লোকটি আসাতে সবাই ঠিক হয়ে দড়ালো। লোকটি ওর কাছে আসতে আসতে বললো।

“আরে এত তাড়া কিসের? একটু কথা বলি তার পরেই না হয় ছাড়ি? কি বলিস সজল?”

“ঠিক বলছেন স্যার!”

সবাই ওদের স্যারকে সালাম দিলো। সজল হলো ওর মেইন বডিগার্ড। যাকে দিয়ে ও সব কাজ করায়। নিদ্র মনোযোগ দিয়ে শুনলো। কন্ঠ টা ওর চেনা চেনা লাগছে। কিন্তু কে সেটাই বুঝতে পারছেনা। চোখ খোলা থাকলে অবশ্যই চিনতো। শব্দ শুনে বুঝলো লোকটা ওর সামনে একটা চেয়ারে বসছে। নিদ্র তারাহুরা করে বললো।

“who are you?”

“দেখছিস সজল ইংলিশ ছাড়ছে!”

“আপনি কে বলছেন না কেনো?”

অনেক রেগে কথাটা বললো নিদ্র। তাতে সামনের লোকটির কোনো হেলদোল হলোনা। সে কানটা ঝেরে বললো।

“আরে আস্তে বললেই শুনি। আমি কালা না বুঝলি?”

“আমাকে কোনো বেঁধে রেখেছেন? কি চান আপনি?”

“এইতো লাইনে আসছোছ! বেশি কিছু না ছোট্ট একটা জিনিস। শুনলে তোরও লাভ আমারও লাভ বুঝলি?”

“কি সেটা?”

“মায়াপরীর থেকে দূরে থাকবি! ওকে যে নাম দিছোছ ওই নাম ভুলেও মুখে আনবিনা। সোজা কথা ওর সাথে কথা বলাতো দূরে ওর দিকে তাকাবিও না!”

লোকটি গম্ভীর গলায় কথাগুলো বলে দিলো। নিদ্র অবাক হয়ে আছে। মায়াপরী কে সেটাই বুঝতে পারছেনা। এই নামে তো কাউকে চিনেনা তাহলে লোকটি কার কথা বলছে? ভাবনা চিন্তা ফেলে বললো।

“আপনি ভুল নাম্বারে ডায়াল করছেন। আমি মায়াপরী নামে কাউকে চিনি না। দয়া করে সঠিক মানুষকে ধরে আনুন।”

“রিবা! আরিবা! চিনছোছ এবার?”

লোকটি রেগে কথাটা বললো। নিদ্র অবাক, কে এই লোক? যে তাকে তার বিউটি ডল থেকে দূরে থাকতে বলছে। এটা কি আরিবার প্রেমিক? ওর জানা মতে তো আরিবার কোনো প্রেমিক নাই। কে এই লোক? এসব জল্পনা কল্পনা রেখে নিদ্র বললো।

“আপনি কে? আমি কার সাথে বলবো না বলবো তাতে আপনার কি? আপনি এসব বলার কে?”

কথাটা শুনে মাথা গরম হয়ে গেলো লোকটির। জোরে একটা থাপ্পড় দিয়ে বললো।

“ভালো কাথায় শুনবিনা তাইনা? আমি ওর সব বুঝলি? আমি ওর পৃথিবী! কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে নে। এতক্ষন তোর জায়গায় অন্য কেউ হলে হাত পা ভেঙে হসপিটাল দিয়ে আসতাম। ভালো ভাবে বলছি আমাকে রাগাস না!”

“কেনো আমার বেলায় আলাদা কেনো?”

“চুপ! একদম চুপ! যা বলছি তা করবি!”

“যদি না করি?”

কথাটা শুনেই লোকটা উচ্চ স্বরে হেসে দিলো। যেনো কোনো জোকস বলছে। হাসি থামিয়ে বললো।

“নিজের বোনকে খুব ভালোবাসোছ জানি। বাই!”

কথাটা বলেই লোকটা সজলকে একটা ইশারা করে চলে গেলো। নিদ্র অনুভুতিহীন ভাবে বসে আছে। তার মানে ওর বোনের ক্ষতি করবে? কখনোই নাহ। ও এটা কিছুতেই হতে দিবেনা৷ এখন থেকে নাহয় বিউটি ডলের কাছে যাবেনা। দূর থেকে দেখেই মন কে শান্ত রাখবে।

————————–

ঘুমের মাঝে চিল্লানোর আওয়াজে ঘিম ভেঙে গেলো আরিবার। তাড়াহুড়া করে উঠে বসলো। বুকে থু থু দিয়ে নিজে নিজেই বললো। “বাবা গো ভাবছিলাম ভুমিকম্প হচ্ছে। এতো দেখি এই খবিশ টা রাগা রাগি করতাছে।” এটা বলেই আবার শুতে লাগলো। অগত্যা ও উঠে বসলো। কি নিয়ে এত চিল্লাচিল্লি করছে? ভাবতেই ও খাট থেকে নেমে গেলো। স্বযত্নে দরজা খুলে বের হলো। আস্তে করে হেটে গিয়ে পিলারের পিছনে লুকালো। নিচ তলার দিকে তাকিয়ে দেখলো আরশ চোখমুখ গরম করে সোফায় বসে আছে। সামনের সোফায় ওর মা কাকিমনি মাথা নিচু করে বসে আছে। আরিবা আরও কৌতুহলী হয়ে ওঠে। কি হয়েছে? তারা মাথা নিচু করে আছে কেন? আরশেই এত ক্ষেপছে কেন?

“মা! কাকিমনি! কেন বুঝোনা? ওকে ছোটো থেকে যে কারনে আগলে রাখছি তা যদি নাহয় তো আমি কি করবো? তোমরা কেনো সতর্ক হও না? শুনে রাখো ওর জন্য খুন করতেও আমার হাত কাঁপপে না।”

আরশের কথায় ওর মা কাকিমনি অবাক হলোনা। তারা জানে এটা ও পারবে। কিন্তু আরিবা সে তো অবাকের শেষ পর্যায়। কি বললো এটা? খুন! কার জন্য?

“যদি ও সব জেনে যায়?”

“জানবে না! যেটা ১৪ বছর ধরে লুকানো তা সারা জীবনেই লুকানো থাকবে! যদি জানে এই বাড়ির কাওকে ছাড় দিবনা! কারন কথাটা বাইরের কেউ জানে না। কথাগুলো মনে থাকে যেনো!”

কথাটা বলেই আরশ উঠে দড়ালো। আরিবা ওকে আসতে দেখেই দৌড়ে রুমে চলে এলো। দরজা আটকে খাটে বসে পড়লো। ভাবতে লাগলো তারা কি বললো? কি লুকানো? কার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখছে? এই বাড়িতে একটা রহস্য অবশ্যই আছে। কি সেটা? তাছাড়া স্টোর রুমেই কে আছে? খুঁজতে হবে সব প্রশ্নের উওর। কিন্তু কিভাবে? এসব ভাবতে ভাবতে আরিবার মাথা ধরে গেল। অগত্যা ও খাটে শুয়ে পড়লো। ওর একটু ঘুমানো দরকার নাহলে এগুলো মাথায় ঘুরবে। ঘুম দিলে মন ফ্রেশ হয়। সামনে ওর এসএসসি পরীক্ষা ওকে মন দিয়ে পড়তে হবে। ভালো রেজাল্ট না করলে ওই রাক্ষসটা ওকে খেয়েই ফেলবে। এসব ভেবেই ও ঘুম দিলো।

—————————–

গোধূলি বেলার এই সৌন্দর্য্য!
করেনি মুগ্ধ আমায়!
মুগ্ধ করেছে তোমার হাসি।

গোধুলির রঙে রঙিন হইনি!
হয়েছি তোমার মাঝে!
তুমি মায়াপরী! শুধু আমার মায়াপরী।

ছাঁদের কোনে চেয়ার পেতে বসেছে আরশ। মোবাইলে নিজের মায়াপরীর ছবি দেখছে আর তাকে নিয়ে কবিতা বানাচ্ছে। এখন গোধুলির বেলা কিন্তু তাতো ওর মুগ্ধতা নেই ওর মুগ্ধতা শুধুই ওর মায়াপরীর মাঝে। এসব ভেবেই ও মুচকি হাসলো। চেয়ার থেকে উঠে সামনে পা বাড়ালো। এখন ওর মায়াপরীকে দেখতে হবে। ওর মনের মাঝে পিপাসা পেয়েছে। দেখার পিপাসা যা হাজার বছর দেখলেও মনের পিপাসা মিটবেনা।

আরিবা সব সময় দরজা চাপিয়ে ঘুমায়। এজন্যই আরশ যখন ইচ্ছা ওর মায়াপরীকে দেখতে পারে। আরশ আস্তে করে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলো। প্রথমেই চোখ গেল ওর ঘুমন্ত মায়াপরীর দিকে। কি এলোমেলো ভাবে ঘুমাচ্ছে। চুলগুলো সামনে মুখের উপর পরে আছে। ওকে ঘায়েল করার জন্য এটুকেই যথেষ্ট। ও বুঝেনা এর মাঝে কি আছে যা ওকে শুধু আকর্ষন করে। এসব ভাবতে ভাবতে আরশ আরিবার কাছে গেলো। ফ্লোরে হাটু গেড়ে বসে ওর সামনে আসা চুল সরিয়ে দিতে লাগলো। অগত্যা আরিবা চিল্লিয়ে উঠলো। আরশ কিছু বোঝার আগেই চিল্লিয়ে বললো।

“চোর! আম্মু চোর! আম্মু কাকিমনি কই তোমরা? আমাকে নিয়ে গে…।”

আরশ থতমত খেয়ে গেলো। তবুও আরিবার মুখ চেপে ধরে বললো।

“এই চুপ! আমাকে তোর চোর মনে হয়! আমি চোর!”

আবিবার মুখ ধরা তাই ও মুখ দিয়ে উম উম শব্দ করতে লাগলো। আরশ আবারও বললো।

“চোর তোকে নিবে কেনো? তুই নেওয়ার জিনিস? তোকে নিয়ে চোরের কোনো লাভ নাই উল্টো লস্ তোকে বিক্রি করে ২পয়সাও পাওয়া যাবেনা! শুধু শুধু তোর ফালতু কেচালে চোর গুলোই পাগল হবে।”

কথাগুলো বলতে বলতে আরিবার মুখ ছেড়ে দিলো আরশ। আরিবা ছাড়া পেয়েই বললো।

“এহ! আসছে, তুমি জানো আমার মূল্য কত? কোটি কোটি টাকা। অনেকেই আমায় নিতে চায় হুহ!”

কথাটা বলেই আরিবা হাত দিয়ে নাক ঘসলো। তারপর মুঘ বাকিয়ে একটু ভাব নিলো। আরশ এসব দেখে ঝাড়ি মেরে বললো।

“হ্যা জানি! এখনও ঘুমাছ কেনো? সন্ধা হয়ে গেছে! সামনে না তোর টেস্ট পরীক্ষা? আর তুই পরে পরে ঘুমাছ। জানোস আমার পরীক্ষা হলে আমি কত পড়তাম?”

আরিবা বিরক্তি নিয়ে আরশের সামনে হাত জোর করে বললো।

“মাফ চাই ভাইয়া! আপনার পড়ার কথা শুনতে শুনতে আমি ক্লান্ত আর পারবোনা।”

“শুনিছ না। ভালো রেজাল্ট না করলে যখন নাসির পাগলের সাথে বিয়ে দিয়ে দিবো তখন বুঝবি।”

কথাটা শুনেই আরিবা বিরক্তি নিয়ে তাকালো। কিছু বলবে তার আগেই ওর মা ট্রে হাতে রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো।

“রিবা উঠ! ওহ মহারানী উঠছেন? এবার ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করেন তারপর পড়তে বসেন।”

“আম্মু তুমি এমন কেনো? আমার আপন মা না তুমি! আব্বু আসলে জিজ্ঞাসা করবো কোথা থেকে তোমায় টোকাইয়া আনছে।”

“চুপ! টোকাইয়া আনছে তোকে বুঝলি? কাকিমনিকে নাহ!”

আরশের কথায় আরিবা ঠোঁট বাকালো। আরিবার মা ওকে ধমক দিয়ে বললো।

“একটা কথাও না! খেয়ে পড়তে বস!”

“কাকিমনি তুমি যাও আমি আছি।”

আরশের কথায় মিসেস আঞ্জুমান মুচকি হেসে চলে গেলো। আরিবা মনে মনে ওর মাকে বকতে লাগলো। “শয়তান মহিলা নিজের মেয়েকে রেখে অন্য ছেলের প্রতি কি দরদ। তার সাথে দাত কেঁলিয়ে কি সুন্দর কথা বলে আর আমার সাথে? ”

“কিরে যা! ফ্রেশ হয়ে আয়!”

“আগে বলো তুমি আমার রুমে কেনো আসছো? কি চুরি করার মতলব?”

আরিবা ভ্রু নাচিয়ে কথাটা বললো। আরশ রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো।

“একটা দামি জিনিস আছে সেটাই নিতে এসেছি!”

“কি ভাইয়া!”

“তোর বোঝা লাগবেনা চুপ চাপ যা!”

আরিবা ভাবুক হয়ে ওয়াশরুমে প্রবেশ করলো। আরশ ওর দিকে তাকিয়ে মনে মনে হেসে দিলো।

———————–

“খুনি তোরা খুনি! কেউ পার পাবিনা আল্লাহ বিচার করবে! তোদের অবস্হা কি হবে সেদিন দেখবি। আমার স্বামী মেয়ে আমার পরিবার আমার থেকে দূরে করছোছ। আমার সামনে খুন করছোছ। তোদের ভালো হবেনা বলে দিলাম। আল্লাহ কই আপনি! ওদের বিচার করুন ওদের শাস্তি দিন!”

এগুলো বলার পরেই তাকে কেউ থাপ্পড় দিলো। টাল সামলাতে না পেড়ে ফ্লোরে পড়ে গেলো।

“তোকে বাঁচিয়ে রাখছি তাতেই শোকর কর! আরও দুই বছর বাঁচবি তুই। তারপর.. ”

বলেই রুম কাঁপিয়ে হাসতে লাগলো লোকটি। অতঃপর গার্ডকে চোখের ইশারা করে তাকে চোখ রাঙিয়ে চলে গেলো।

মহিলা আস্তে করে উঠে দাড়ালো। শরীরে শক্তি নাই দীর্ঘদিন বন্দী থাকার ফলে শরীরে দুর্বল হয়ে গেছে। ময়লা জমে গেছে কাপর নোংরা হয়ে আছে। তিনি চাইলেই আত্মাহত্যা করতে পারেন কিন্তু না। তিনি এর শেষ দেখে ছাড়বেন। ধৌর্যের ফল আল্লাহ দেন। প্রথম প্রথম খুব কান্না করতেন। এখন আর কাদেন না৷ এদের মায়া দয়া নেই। এরা নিঃসংশ খুনি। তার চোখে ভেসে উঠছে সেই খুনের দৃশ্য। যেখানে তার মেয়ে স্বামী কে মারা হয়েছে। সত্যি কি সে বিচার পাবেন? ভেবে পায়না সে।

চলবে….

(রি-চেইক করিনি ভুলত্রুটি হতে পারে। জানিনা কতটা সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছি। তবুও চেষ্টা করছি। হ্যাপি রিডিং)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here