#অজানা
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–৬
“এই তোরে বলছিনা ১২টার আগে পড়ার টেবিল ছেড়ে উঠবিনা? উঠছোছ কেনো?”
কথাটা শুনে ভয় পেয়ে গেলো আরিবা। ভয়ে ভয়ে পিছনে তাকালো। আরশ রনচন্ডী রূপ নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। আরশ ওকে পড়তে বলে বাইরে গেছিলো। পড়া মার্ক করে দিয়ে বলেছিলো এসে ধরবে। কিন্তু আরশ বাইরে যেতেই আরিবাও পড়া ছেড়ে উঠে গেছে। এখন কি হবে? আরিবা জোর পূর্বক হেসে বললো।
“ভাইয়া ২ ঘন্টা পড়ছি খুব কোমর ব্যাথা করছে তাই ফ্রেশ হাওয়া খেতে এসেছি!”
“এত কষ্ট কেনো করলি? আমাকে বলতি আমি তোকে খাইয়ে দিতাম!”
আরশের এমন গম্ভীর কন্ঠে বলা কথায় ভয় পেয়ে গেলো আরিবা। চোখমুখ খিচে বললো।
“ভাইয়া এখনি পড়তে বসছি রাত ১টার আগে উঠবোনা!”
কথাটা বলেই দৌড়ে চলে যাচ্ছিলো। আরশ খপ করে ওর হাতটা ধরে ফেললো। আরিবা মনে মনে আল্লাহ কে ডাকছে। এই লোক কি তাকে ছাদ থেকে ফেলে দিবে? নাহ আল্লাহ বাঁচিয়ে নেও এবার! নাতি নাতনির মুখ না দেখাইয়ে আমারে নিতে পারো না তুমি!”
“তুই তিনটা ভুল করছোছ জানোছ?”
আরিবা অবাক হয়ে তাকালো? তিনটা ভুল? ও তিনটা ভুল খুঁজতে লেগে পড়লো কিন্তু খুঁজে পেলোনা। অগত্যা অসহায় লুক নিয়ে আরশের দিকে তাকিয়ে বললো।
“কি কি ভুল ভাইয়া?”
“ভুল জেনে কি করবি শাস্তি পাওয়ার জন্য রেডি হ!”
শাস্তির কথা শুনেই আরিবা অসহায় হয়ে তাকালো। কি শাস্তি দিবে? তাকে কি ছাদ থেকে ফেলে দিবে? ভাবতেই আরিবা কান্না করে দিলো। কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো।
“ভাইয়া আজ থেকে ঠিক মতো পড়বো।”
“আগে শাস্তি তারপর কথা!”
“তাহলে বলেন কি ভুল করছি? এ সম্পর্কে জানার অধিকার আমার আছে?”
“বাহ বাহ অধিকার চাচ্ছে! বেগম রোকেয়া! আই এম প্রাউড অফ ইউ।”
আরশ হাতে তালি দিচ্ছে আর কথাটা বলতে বলতে আরিবার দিকে আগাচ্ছে। আরিবা এবার সত্যি ভয় পেয়েছে। আরশ ওর সামনে দাড়িয়ে বললো।
“তিনটা ভুলের জন্য তিনটা শাস্তি। শুনতে যখন চাইছোছ বলি। প্রথম. পড়া কমপ্লিট করোছনি। দ্বিতীয়. এই রাতে ছাঁদে আসছোছ। তৃতীয়. আমার কথা অমান্য করছোছ।”
“কি?”
“জি! প্রথম ভুলের শাস্তি কফি বানিয়ে নিয়ে আয় আমার জন্য যাহ! সময় পাঁচ মিনিট! বাকিগুলো পরে বলবো!”
আরিবা অবাক হয়ে তাকালো। কি বলে এই জল্লাদ? নিচে যেতে যেতেই তো আমার পাচ মিনিট লাগে! কোনোদিন কফি বানানো তো দূরে পানি ঢেলেও খাইনা আর এ আমাকে কফি বানাতে বলছে? মেজাজ এবার আকাশ সম। আরিবা রাগ নিয়ে বললো।
“আমি পারবো না! কখনো বানাইনি!”
আরশ ওর দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে বললো।
“কথা বললে শাস্তি বাড়বে। তোর ইচ্ছা দেখ শাস্তি কমাবি নাকি বাড়াবি।”
আরিবা আর কথা বাড়ালোনা জানে কথায় পারবেনা এর সাথে। ভাবলো সমস্যা কি কাকিমনিকে দিয়ে বানাবো। টাইমতো কম। তাই বললো।
“ভাইয়া টাইমটা বারিয়ে দেও প্লিজ!”
“ওকে যাহ! ৫ মিনিট বাড়ালাম ১০ মিনিট!”
আরিবা হতাশ হলো। একে দিয়ে এটাই আশা করা যায়। কিছু বললেই কথা বাড়বে তাই কথা না বলেই দৌড়ে গেলো।
“সময় শুরু হচ্ছে আমি ঘড়ি ধড়ছি!”
পিছন থেকে কথাটা বলেই আরশ হেসে ফেললো। সে জানে আরিবা পারবেনা বা করবেনা। ওর মাকে দিয়েই করাবে তবুও বলছে। আরিবার এনে দেওয়া কফি খেতে খুব মজা পায় সে। ওকে রাগাতে খুব ভালো লাগে। রাগলে ওর নাক ফুলানো দেখতে খুব ভালো লাগে আরশের। এসব ভেবেই আরশ আকাশের দিকে তাকালো। আকাশে অনেক তারা ঝলমল করছে।
——————–
“এই দা…”
“মা গো! আমার কোমর গেলো গো!”
“আমার নাতি নাতনি গো…!”
আরিবা তাড়াহুড়া করে দৌড়ে আসছিল। অগত্যা ওর মা সামনে আসাতে দুজন ধাক্কা খেয়ে ধপাস করে পড়েছে। আওয়াজ শুনে মিসেস তারিন ওদের দিকে আসতে আসতে বললো।
“কি হইছে আঞ্জু… একি তোরা পড়লি কিভাবে?
তাড়াহুড়া করে কথাটা বলতে বলতে মিসেস আঞ্জুমানকে উঠাতে গেলো। আরিবা নিজেই তাড়াতাড়ি করে উঠে ওর কাকিমনিকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। তিনি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন। হলো কি মেয়েটার? মিসেস আঞ্জুমান পিছন থেকে চিল্লিয়ে বললো।
” এই! তোর কি হইছে? আজ আসুক তোর বাবা!”
“ঠিক আছে ঠিক আছে।”
আরিবা যেতে যেতে তার কথার উওর দিলো। মিসেস তারিন আবাক হয়ে বললেন।
“কি হইছে রে! এত তাড়াহুড়া করতাছোছ কেনো?”
“কাকিমনি তোমার ছেলে আমাকে বলছে ১০ মিনিটে কফি করে নিতে অলরেডি ৪-৫ মিনিট শেষ হয়তো তাড়াতাড়ি বানাও নাহয় আমি শেষ।”
কথাটা বলছে আর তাড়াহুড়া করে সিড়ি দিয়ে নামছে। মিসেস তারিন ওর সাথে সমান তালে নামছে আর বলছে।
“কেনো? কি হইছে?”
“আরে কাকিমনি তুমি যাও! কেনো কি জন্য সব পরে বলবো।”
আরিবার কাকি কফি বানাতে ব্যস্ত হয়ে পরলো।
——————————–
“নেন আপনার কফি!”
কফিটা আরশের হাতে দিয়ে হাঁপাতে লাগলো আরিবা। আরশ ভ্রু কঁচকে বললো।
“মনে হয় তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ করে আসছিছ”
“তেমনি ভাইয়া!”
হাঁপাতে হাঁপাতে কথাটা বললো আরিবা। আরশ ওর দিকে তাকিয়ে ঠোঁট বাকিয়ে হেসে বললো।
“আবার ভুল! অলরেডি ২মিনিট লেট!”
“তাতে কি আনছি তো!”
“ভুলতো ভুলেই! এবার গান শুনা!”
“What! ভাইয়া তোমার মাথা ঠিক আছে?”
আরশ চোখ গরম করে ওর দিকে তাকিয়ে বললো।
“আমাকে তোর মতো পাগল ভাবিস? ভুল করছোছ শাস্তি হিসেবে গাইতে হবে।”
“ভাইয়া এখন ভালো লাগছেনা”
আসহায় লুক নিয়ে কথাটা বললো। আরশ এসবে পাত্তা না দিয়ে বললো।
“আমার কফি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তাড়াতাড়ি শুনা!”
আরিবা এক নজর আরশের দিকে তাকিয়ে গাওয়া শুরু করলো।
ওগো তোমার আকাশ দুটি চোখে
আমি হয়ে গেছি তারা।
এই জীবন ছিল নদীর মত
গতিহারা দিশাহারা।
আরিবা চোখ বন্ধ করে গান গাইছে। আরশ ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। ওর হৃদয়টা কেনো জানি শান্ত হয়ে গেলো। গান শুনছে আর আরিবার দিকে তাকিয়ে কফিতে চুমুক দিচ্ছে।
আগে ছিলো শুধু পরিচয়
পরে হলো মন বিনিময়
শুভ লগ্নে হয়ে এলো
শুভ পরিনয়
আজ যখনি ডাকি
জানি তুমি দিবে সারা….
“এবার নাচ”
আরিবা গান শেষ করতে না করতেই আরশের এমন কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। নাচবে এখন? নাহ পারবেনা।
“ভাইয়া আজ পারব না।”
” না শব্দ শুনতে পছন্দ করিনা জানোস তো!”
“ভাইয়া পায়ে ব্যাথা!”
“ডং করবিনা। এত মিথ্যা কথা কই পাছ তুই?”
আরিবা অসহায় ভাবে তাকালো। একে বলে কোনও লাভ নেই। তাই খুড়িয়েই নাচতে লাগলো। আরশ অবাক হয়ে তাকালো। তার মানে ও সত্যি বলছে? আরশ তাড়াহুড়া করে ওকে থামিয়ে দিয়ে বললো।
“এই দেখি! কোথায় ব্যাথা পাইছোছ!”
“এতক্ষন বকছো এখন দরদ দেখানো লাগবে না!”
আরিবা রাগ করে কথাটা বললো। আরশের ও রাগ উঠছে কেনো বলেনি মেয়েটা? সে তো বুঝতে পারেনি। আরিবাকে জিজ্ঞাসা করছে কোথায় ব্যাথা পাইছে কিন্তু বলছেনা। অগত্যা আরশ নিজেই খুঁজতে লাগলো। আরিবা ২পা পিছেয়ে গিয়ে বললো।
“পায়ে হাত দিবানা ভাইয়া শুড়শুড়ি লাগে”
“তাহলে দেখা!”
আরিবা নিজের প্লাজো টা উচু করে দেখালো। আরশ তাকিয়ে দেখলো অনেক খানি ছিঁলে গেছে রক্ত রের হয়ে আছে। আরশ রেগে বললো।
“কিভাবে ব্যাথা পেলি হুম?”
আরিবা ভয়ে কেঁপে উঠলো। আস্তে করে বললো।
“মায়ের সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেছি!”
আরশ পুরাই রেগে আছে। ও আরিবার দিকে এগিয়ে ওর দুবাহু খামছে ধরে বললো।
“সাবধানে হাটতে বলছিনা? সারাদিন দৌড়া দৌড়ি! একটু শান্তিতে হাটলে কি হয় তোর? আমার কথা শুনোছ না কেনো?”
“তুমিয়েই তো ১০ মিনিটে কফি আনতে বললে।”
আরশ স্তব্ধ হয়ে গেল। ওর জন্য ওর মায়াপরী ব্যাথা পাইছে? ওতো মজা করতে চাইছে। আরশ নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারলোনা। সামনে থাকা চেয়ারটা লাথি দিয়ে ফেলে দিলো। আরিবাকে ছেড়ে রেলিং এর উপর নিজের হাত দিয়ে ঘুসি দিচ্ছে। আরিবা ভয় পেয়ে গেলো আরশ ওর কাছে আসতে লাগলে ও দূরে সরে গেলো। আরশ ওর কাছে এসেই ওকে কোলে তুলে নিলো। আরিবা শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। ও বুঝেনা এর মাঝে মাঝে কি হয়? এত ভালোবাসা দেখায় কেনো? আরশ আরিবাকে এনে রুমে শুইয়ে দিলো। আরিবার পা নিজের উরুর উপর নিলো। আস্তে আস্তে ছিলে যাওয়া যায়গাটা পরিস্কার করতে লাগলো। আরিবা ব্যাথায় শব্দ করলে আরশ কেঁপে উঠছে যেনো ওর ব্যাথা লাগছে। মাঝে মাঝে ফু দিয়ে দিচ্ছে। আরিবা শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। ওর ইচ্ছে করছে আরশের সামনে পড়ে থাকা চুল গুলো ঠিক করে দিতে। কিন্তু নিজের ইচ্ছাকে ও সাইডে রেখে ভাবলো আারশ সবসময় এমন থাকেনা কেনো? এমন থাকলে ভালো হতো। আরশ ব্যন্ডেজ করে দিয়েই চলে গেলো কোনো কথা বললো না। আরিবা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভাবলো এর আবার কি হইছে? আরশ নিচে গিয়েই চিল্লা চিল্লি শুরু করে দিছে। হয়তো ওর এই বিষয়ে। আরিবা এসব বাদ দিয়ে চুপ করে শুয়ে পড়লো। ভাবলো আজ রাতে ওকে জেগে থাকতে হবে শুনতে হবে ওই কান্না। আসলেই কি কেউ কাঁদে নাকি ওর ভ্রম! এর উওর বের করবে ও।
চলবে…..