অতঃপরঃ ইতি পর্ব -৪

0
1918

পর্ব -৪
“অতঃপরঃ ইতি”
লেখিকাঃ অপরাজিতা আফরিন মিম

সকলে খুশি হলেও অবাক শুধু অহনা আর জুই।তারা এখনো নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না, ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে স্টেজের দিকে….. তখন অহনা জুই কে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলতে লাগলো…

–জুই দেখ তো এটাকে ফাহাদ ভাইয়ার মতে লাগছে না….

জুই কিছুটা রাগী লোক নিয়ে রাগী সুরেই বলে ওঠলো

— ফাহাদের মতো লাগে মানে কি? এটা তো ফাহাদ ই..

ওদের এই কথপকথনের মাঝেই ফাহাদ স্টেজ থেকে নেমে আসলো, আর সাথে সাথে উপস্থিত সকলেই ফাহাদের ওপর ঝাপিয়ে পড়লো, অটোগ্রাফ আর সেলপি নেওয়ার জন্য।ফাহাদ কৌশলে কয়েকজন কে সেলপি আর অটোগ্রাফ দিয়ে আস্তে জুই আর আহনার সামনে এসে দাড়ালো….তারপর কিছুটা ঝুকে জুইয়ের কানে ফিসফিস করে বললো……

— কী মেডাম…!! আপনিও এসেছেন? আমি তো স্বপ্নেও ভাবি নি, আপনার মতো একটা রাগী মেয়ে,একটা কোমল মন নিয়ে আমার আমার কনসার্ট দেখতে আসবে…বাহ্ কি সৌভাগ্য আমার।
— আমি রাগী?
— অবশ্যই রাগী, আপনার কোন সন্দেহ আছে?
— হ্যা সন্দেহ আছে
— তাহলর প্রমাণ করে দিবো কি?
— না আপনাকে আর কষ্ট করে প্রমাণ করতে হবে না, আর আমি যদি আগে জানতাম, Fh টা আপনি, তাহলে আমি ভুল করেও এই কনসার্টে আসতাম না…
— কেন আসতেন? কি দোষ করছি আমি? আপনার কোন পাকা ধানে মই দিছি শুনি?

এবার জুই আর কিছু বললো না, একটা বিরক্তের চাপ নিয়ে অহনার দিকে তাকালো।তারপর অহনাকে বললো..

–বাসায় কি যাবি তুই? গেলে আয়,না হলে আমি চলে যাচ্ছি।

অহনা কিছুটা বিপাকে পড়ে গেলো, কারণ তার ও যে অটোগ্রাফ আর সেলফি লাগবে, ফাহাদের সাথে, কিন্তু জুই যা রাগী আর ক্ষেপা টাইফের রেগে গেলেই শেষ।
তাই অহনা আর কিছু না বলেই জুইয়ের পিছু পিছু হাটতে লাগলো……

কিন্তু বাধ সাজলো ফাহাদ।জুইয়ের পথে বাধা দিয়ে দাড়ালো সে। জুই কিছুটা বিরক্ত নিয়ে ফাহাদের দিকে তাকালো,, আর ফাহাদ ও তার প্রত্তুরে একটা মুচকি হাসি উপহার দিলো। তারপর কিছুটা ঝুকে একটানে জুইয়ের বাধা খোপাটা খুলে পেললো, তারপর আবারো ফিসফিস করে জুইয়ের কানে কাছে এসে বললো….

— তোমাকে খোলা চুলেই একটু বেশি মানায় জুই…

তারপর বড় বড় পা পেলেই সেখানে থেকে চলে যায় ফাহাদ।আর এদিকে জুইও কিছুটা বোকা মনে, ফাহাদের চলে যাওয়ার দিকে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে রইলো,আর এদিকে অহনাও ভাবলিশ ভাবে চেয়ে রইলো জুইয়ের দিকে, অহনা ১০০% সিওর দিয়ে বলতে পারে, এখানে যদি Fh মানে জুইয়ের প্রিয় গায়ক না হয়ে অন্য কেউ হতো, আর এই সেইম কাজটা যদি করতে তাহলে জুই তাকে চিবিয়ে চিবিয়ে খেতো।কিন্তু জুই একটু হলেও Fh কে ভালোবাসে, একটু হলেও মনের মাঝে Fh এর জন্য সফচকর্ণার আছে,যা জুই অস্বীকার করতে পারবে না,তাই সে চাইলেও Fh এর সাথে খারাপ ব্যবহার করতে পারবে না………!

জুই ড্রাইভ করছে পাশে বসে আইসক্রিম খাচ্ছিলো অহনা, জুই হালকা আর চোখে একবার অহনার দিকে তাকালো, তারপর আবারো ড্রাইবিং এ মন নিবাশ করলো। এদিকে অহনা মন দিয়ে আইসক্রিম খেয়ে চলেছে, তার পুরো ধ্যান জ্ঞানই এখন আইসক্রিম এর ওপর, কত যত্ন সহকারেই না আইসক্রিম টা খাচ্ছে মেয়েটা,, পাগলি একটা।আইসক্রিম খাওয়ার সময় তার আর হোশ থাকে না, চারিদিক রসা তলে গেলেও তার দৃষ্টি সেই আইসক্রিম এর ওপর ই থাকবে…..

আইসক্রিম এর শেষ অংশটা মুখে দিয়ে, অহনা এবার জুইয়ের দিকে তাকালো, কিছুটা মুচকি হেসেই বলে ওঠলো…..

— দেখছিস জুই ফাহাদ ভাইয়া কতটা চালাক?
জুই কিছুটা ভ্রু কুচকে বলে ওঠলো….
— চালাক?
— হ্যা চালাক ( কিছুটা জোর দিয়ে বললো অহনা)
— তুই কিভাবে বুঝলি?
— কি ভাবে বুঝছি,, বলবো তোকে?শুনবি তুই?
–হুম শুনার জন্যই তো প্রশ্নটা করছি তাই না….?
— হুমম বলতে পারি কিন্তু তুই রাগ করবি না তো..?
— না করবো না বল….
— দেখ ভাইয়া কেমন কৌশলে তোর চুল গুলো খুলে দিলো…..
— হ্যা দিছে কিন্তু এখানে চালাকির কি হলো?
— চালাকি টা হলো এই যে…..ভাইয়া শুধু তোর চুল খোলে দেয় নি,চুল খুলার অজুহাতে কিছুটা কৌশলে তোর খোপার বেলি ফুলের মালাটা নিয়ে গেছে। যে টা তুই বুঝতেও পারোস নি।

এবার জুই কিছুটা বোকা বনে গেলো.. মাথায় হাত দিয়ে ফুল খুজতে লাগলো,,কিন্তু ফুলতো দুরে থাক, ফুলের একটু অংশও খুজে পেলো না…..……

আর অন্য দিকে ফাহাদ কনসার্ট থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে নিলো, গায়ে একটা ছাই রঙ্গের গেন্জি আর টওজার। এক হতে কপি আর অন্য হাতে জুইয়ের খোপা থেকে নিয়ে আসা বেলি ফুলের মালাটা নিয়েই বেলকুনিতে এসে বসলো সে।কপির মগে একটা চুমুক দিয়েই বেলি ফুলটার দিকে তাকালো, তারপর আনমনে বলতে বললো…..
— তোমার মুখে কেন এত মায়া? দু চোখ জুড়ে কেন এত আবেগের ছায়া? বলতে পারো আমায়? তোমার চোখের কাজল রেখায় আমি কেন হারাই?

কথা গুলো বলেই পলকহীন ভাবে বেলি ফুলের মালাটার দিকে তাকিয়ে ছিলো ফাহাদ। ঠিক তখনই ঝুম বৃষ্টি নামে শহরের বুকে, শহরের সব ধুলোকণা মুছে দিয়ে,বৃষ্টিময় একটা সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলে এই বৃষ্টি…ফাহাদ হাত বাড়িয়ে কপির মগে দুই ফোটা বৃষ্টির পানি মিশিয়ে নিলো, বৃষ্টির পানি দিয়ে কপি খেতে সত্যি বেশ অন্য রকম লাগে, একদুম এক ভিন্ন ফ্লেভার লাগে, যেন পুরো স্বাদ টাই চেইন্জ হয়ে যায়….।

এদিকে এপাশ ওপাশ করেই যাচ্ছে জুই,কিছুতেই যেন ঘুম আসছে না তার চোখে। ঘুম যেন আজ তাকে ধরাই দিবে না এমন এক পণ করেছে।এদিকে চোখ বুজলেই কেবল ফাহাদের প্রতি ছবি ভাসছে,যাকে কিনা সে আড়াল থেকেই ভালোবেসে গেছে। কিন্তু আজ সে বড্ড কাছে, কিন্তু এত কাছে হয়েও লাভটা কি হচ্ছে? সে তো তার ইগুর ঠেলায়, মনের চাপা কথা গুলোই প্রকাশ করতে পারছে না।আর এই না প্রকাশ করতে পারার বিরহ যে কতক্ষণি তা কবেল জুইয়ে বলতে পারবে।

রাত ৩ঃ৫৫ মিনিট

এরই মাঝে ফোন বেজে ওঠলো জুইয়ের, আন নং নাম্বার… কিছুটা বিরক্ত নিয়ে ফোন তুলে জুই, তারপর কিছুটা তাচ্ছিল্য ভাবেই বলে ওঠে…

— হ্যালো! কে বলছেন?

ফোনের ওপাশ থেকে কয়েকটি নিশ্বাসের শব্দ ছাড়া আর কিছুই শুনা যাচ্ছে না।জুই এবার কিছুটা রেগেই গেলো, খানিকটা কড়া গলায় বলে ওঠলো…

— কথা না বললে ফোন দিছেন কেন?এত রাতে ফাজলামো করার জন্য?

তখন ফোনের বিপরীত পাশ থেকে বলে ওঠলো..
— ফাজলামো তো মানুষ তার সাথে করে যে ফাজলামো বুঝে, ফাজলামো বুঝেন আপনি…?আপনি তো খালি জানেন রাগ করতে…

এবার জুই কিছুটা চমকে ওঠলো, লাফিয়ে শুয়া থেকে ওঠে বসলো……..

চলবে..?

[ গল্পটি কেমন হইছে অবশ্যই জানাবেন, আর ভুল ক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,, ধন্যবাদ❤️ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here