অতিরিক্ত চাওয়া নাবিলা ইষ্ক পর্ব : ৯

অতিরিক্ত চাওয়া

নাবিলা ইষ্ক

পর্ব : ৯

পরপর ৪ টা ক্লাস করলাম! একটা ক্লাসেও আমার মন ছিলো না! মন তো অন্যকারো কাছে! ফিরত তো দিচ্ছেই না! প্রত্যেকটা ক্লাসে হু, হা করে কাটিয়েছি! এট লাষ্ট তৃষ্ণা স্যারের ক্লাস! তখনও আমার ধ্যান ছিলো হাসানের প্রেমীয় আলাপে! ফিল্মি লাইন গাচ্ছে নিম্মির জন্য! আর নিম্মিও লজ্জায় লাল,নিল হচ্ছে! ওদের টুকটাক ঝগড়া, ভালোবাসা দেখতে আমার ভালোই লাগে! অবষ্য আগে ভালো লাগতো না! কিন্তু এখন নিজে প্রেমে পড়ার পর থেকে ভালো লাগতে শুরু করেছে! প্রেমের বাতাস লেগেছে গায়ে! প্রেমের সুগন্ধ কিন্তু প্রচন্ড তীব্র! যেই ঘ্রান বিছিয়ে পরেছে দুই মনে!

আমি যখন হাসানের দিক তাকিয়ে হাসছি, তখনি স্যারের প্রবেশ!
আশেপাশের সকলকে দাড়াতে দেখেই, আমিও দ্রুত দাড়ালাম! ব্লাক সার্টে তো ভালোই লাগছে! এটিটিউড যে কই থেকে কিনে আনে এতো? মাবুদ জানে? ডান হাত দিয়ে ইশারা করলো বসতে!

স্যার পড়াচ্ছে আর আমি লজ্জার মাথা খেয়ে তাকে একনজরে দেখেই যাচ্ছি! স্যারের মে বি অস্বস্তি ফিল হচ্ছিলো! আমায় অনেকবার চোখ দিয়ে ইশারা করেছে বইয়ের দিক তাকাতে! কিন্তু আমার না স্যারকে দেখতে বেশ লাগছিলো! উফফ স্যারের পড়ানোর স্টাইল, হাতের ইশারা! সবকিছু চোখ ধাধানোর মতো!
আচ্ছা স্যারকে একটু জ্বালালে বিষয়টা কেমন হবে?
যেই ভাবা সেই কাজ? স্যারের চোখ আমার দিক আসতেই ঠোঁট দুটো উঁচু করে চুমু ছুড়লাম! স্যারের এক্সপ্রেসান্স টা যা ছিলো? হাসি আটকিয়ে তার দিক তাকিয়ে আছি! সে দ্রুত মুখ ঘুড়িয়ে কাশতে শুরু করলো! আড়চোখে আমার দিক চোখ রাঙিয়ে তাকালো! আমি চোখ টিপ মাড়তেই বলে উঠলো…
” বেলি?
আমি তো ধরফরিয়ে দাড়ালাম! ভয় পেয়ে গেছি! স্যার যদি এখন সকলের সামনে থাপ্পড় মারেন?
” জ্বি স্যার?
” এতো কিসের কথা বলো? চুপচাপ দাড়িয়ে থাকো! নজর বইয়ের দিক রাখো! এদিক_ওদিক তাকাতে দেখলে ক্লাস থেকে আউট করে দেবো!
যাহ বাবা? দাড়াতে বলল! এখন আরো বেশি ডিস্টার্ব করবো! সে আবার পড়াতে শুরু করলো! যেহেতু আমি দাড়ানো, সর্বপ্রথম তার চোখ আমার দিকেই আসবে! তাই যখনি ঘুড়ে তাকালো তখনি আমি আমার ডান হাতের বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে ঠোঁট স্লাইড করলাম! সে তো বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে ঢোক গিলল! আমার না বেশ মজাই লাগছে তাকে বিরক্ত করতে!

৪৫ মিনিটের ক্লাসে স্যারকে প্রচন্ড বিরক্ত করেছি! ক্লাস থেকে যাওয়ার সময় চোখ রাঙিয়ে তাকিয়েছে! বেশ মজা নেওয়া গেলো! কিন্তু এই মজার পরিনাম টা তো আমার জানা ছিলো না?

স্কুল সেষে গেটের কাছে ফুচকা খাচ্ছিলাম! তখনি দেখি স্যার দাঁড়িয়ে কথা বলছে! পাশে একটি মেয়ে! মাশাল্লাহ? সে প্রচন্ড সুন্দরী! লাল ছেলওয়ার সুট, ওরনা এক সাইডে, সাথে হ্যান্ড ব্যাগ, মোষ্ট ইম্পরট্যান্ট স্যারের বয়সী! দুজনের উচ্চতা সমান দেখাচ্ছে কারন মেয়েটি উচু হিল পরা! পাশাপাশি বেশ মানিয়েছে! স্যার এমন কাউকে ডিজার্ভ করেন! আওয়াজ পাচ্ছি কিছুটা..তুই তামারি করে কথা বলছিলো! হয়তো ফ্রেন্ডস হবে! কিন্তু যাই বলি.. প্রচন্ড রকমের মানাচ্ছিলো ! আমার সাথে স্যারের একদম ই বনে না! কোথায় সে আর কোথায় আমি? ব্যাগে ২০ টাকা ছিলো, কিন্তু নেই? আল্লাহ চুরি হলো নাকি? এখন কি করবো? ফুচকার বিল ও তো দিতে পারছি না! হাসানকে বলতেই নিচ্ছিলাম, তখনি স্যার পাশে এসে দাড়ালেন!…
” কি হয়েছে?
আমি মাথাটা দু পাশে নাড়ালাম!..
” আর খাবা?
” নাহ..!
স্যার তার মানিব্যাগ বের করলেন পকেট থেকে! ১০০ টাকার নোট দিয়ে বললেন..
” চাচা এর ফুচকার বিল রেখে দিয়ো! [ আমার দিক ফিরে ] বাকি টাকা নিয়ে সজা বাসায় চলে যাও! দেড়ি হচ্ছে! [ ধীরে ধীরে ] তোমাকে তো পরে দেখবো!

কথাটা বলে স্যার ওই সুন্দরী কে নিয়ে অন্যপাশ দিয়ে হাটা ধরলেন! আমি তাকিয়েই আছি! পিছনে ফিরে আবারো ইশারা করলেন বাসায় যেতে! আমি টাকা গুলো ব্যাগে ভোরে হাটা ধরলাম! ভাবতে লাগলাম স্যার কিভাবে বুঝলেন যে ফুচকার টাকা নেই আমার কাছে?
কি জানি?
” তোমাকে তো পরে দেখবো ” মানে কি ছিলো?

দুপুর ৩ টা বাজদে চলল! প্রাইভেটে যেতে ইচ্ছে করছে! কিন্তু শরীর সায় দিচ্ছে না! প্রচন্ড খারাপ লাগছে! অস্বস্তি ফিল হচ্ছে! গায়ে জ্বর আসবে মনে হচ্ছে! ভাবতে ভাবতেই ঘুমের জগৎে চলে গিয়েছি!

[ পরীদের মতো উড়ছি আমি পাশেই দ্রুত দৌড়াচ্ছে আমার প্রিন্স! আমায় ধরার জন্য ছুটে চলেছে আমার পিছনে! কিন্তু আমি এতো দ্রুত ধরা দিচ্ছি না! মেঘের পিছনে লুকাচ্ছি, আর তাকে রাগাচ্ছি! হঠাৎ একটি কালো ড্রেসের পরী এসে আমার প্রিন্সের হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে! আর প্রিন্সও চলে যাচ্ছে! দ্রুত পিছনে ছুটতে লাগলাম তার! আকুতি, মিনতি করতে লাগলাম! কিন্তু সে ছায়ার মতো মিলিয়ে গেলো! চিৎকার করে কেদে উঠলাম আমি! মেঘ গুলিয়ো কেদে যাচ্ছে পাল্লা দিয়ে! ]

লাফ দিয়ে উঠে পরলাম! ঘামে ভিজে গেছি সম্পুর্ণ! চোখে বিন্দু বিন্দু জল! গায়ের তাপ আগের থেকে বেড়েছে! উঠতেও কষ্ট হচ্ছে! চোখ বুঝে শুয়েই রইলাম! স্বপ্নের কাহিনী গুলো বড্ড যন্ত্রণা দিচ্ছে যে! কি দেখলাম? কেনো দেখলাম? কাউকে নিতে দেবো না আমার প্রিন্সকে! সে শুধু আমার প্রিন্স!

আওয়াজ আসতেছে! কিসের? উফফ কি বারি দিচ্ছে বারবার! রূমে তো কেউ নেই? মাথা উল্টিয়ে তাকাতেই দেখলাম জানালাটা কেউ টুক্কাচ্ছে! ভয় পেয়ে গেলাম! দ্রুত আম্মু কে ডেকে আনলাম! আম্মু খুলেই দেখলো সম্পুর্ণ অন্ধকার! কেউ নেই?
” কিরে? কেউ তো নেই? এগুলো বাদ দিয়ে! শুয়ে রেষ্ট নে!
আম্মু রান্না ঘরের দিক চলে গেলো! আমি ঘুমুতে যাবো তখনি আবারও টুক্কানোর আওয়াজ? এবার আরো ভয় পেয়ে গিয়েছি! কাপা গলায় জিজ্ঞাস করলাম..
” ক..কে?
” বেলি জানালাটা খুলো!
হোয়াট? স্যারের আওয়াজ? আমি দ্রুত জানালা খুলতেই সে রুমে প্রবেশ করলো লাফ দিয়ে! ফিসফিসিয়ে বলল….
” আগে আওয়াজ দেবে তো! যে ওখানে কে? সামথিং কিছু? তা না, মা কে ডেকে নিয়ে এসেছো!
আমি চোখ ছোট ছোট করে জবাব দিলাম..
” আমি তো ভয় পেয়েছিলাম! আপনি এখানে? এভাবে কেন এসেছেন?
সে বিছানায় গিয়ে বসলো! আমার হাত ধরে পাশে বসিয়ে বলল..
” জ্বর কিভাবে আসলো? ঔঔষধ খেয়েছো?
” জ্বি!
” কাল স্কুল যেতে হবে না! রেষ্ট নিয়ো কেমন!
আমি মাথা নাড়াতেই! মায়ের পায়ের আওয়াজ…
” এই বেলি জানিস কি হয়েছে আজকে?

কথাগুলো বলছে আর এদিকেই আসছে! এতো দ্রুত তো জানালা টপকানো যাবে না..
” এই সেড়েছে! মা আসতেছে! বিছানার নিচে ঢুকুন! আরে দাড়িয়ে আছেন কেন? এটিটিউড রেখে চালু ঢুকুন!
ব্যাচারা স্যার! সে তো করুন চোখে তাকাচ্ছিলো! সে দ্রুত ডুকতেই মা প্রবেশ করলো..
” তোর বাবা আজ আমায় এই চেইন কিনে দিয়েছে! সুন্দর না?
” হ্যা মা অনেক সুন্দর!
” কিরে তুই দাড়িয়ে আছিস কেন? যাহ ঘুমা! হ্যা এভাবে লক্ষি মেয়ের মতো ঘুমা! আর রূমটার এই অবস্থা কেন?
ঝাড়ু দিতে হবে তো?
কথাগুলো বলেই মা ঝাড়ু খুজতে লাগলো! ঝাড়ু তো বিছানার নিচে! এখন কি হবে?

আমি লাফ দিয়ে উঠে বসলাম.. ” মা এখন ঝাড়ু দিতে হবে না! সকালে দেবো আমি! তুমি সিরিয়ালস দেখো?
” আচ্ছা ঠিকাছে, তা জানালাটা এভাবে খুলে রেখেছিস কেন? তোর বাবাকে কতো করে বললাম যে জানালাটা আটকানোর ব্যাবস্থা করো! আস্ত একজন ঢুকতে পারবে! তুই জানালা ওফ করে রাখবি! খুলবি না!

কথাগুলো বলেই জানালা লাগিয়ে আমার পাশে বসলো..!
” জ্বর কমেছে?
” হুম অনেকটা!
” চুল গুলো বাধতে পারিস নি! আয় বেধে দেই?
” ম..মাহ তুমি টিভি দেখো! আমি আসছি ওখানেই!
” পাক্কা?
” হুউম..!
” তাড়াতাড়ি আয়?

আমি মাথা ঝাকালাম মা বেড়তেই বড় এক স্বাশ ফেললাম! সাথে সাথেই মা আবারও ডুকলো..
” বেলি জুতোর বক্সটা কোথায়? বিছানার নিচেই তো রেখেছিলাম?
মা ঊকি দিতে যাবে তার আগেই চিল্লিয়ে উঠলাম!..
” মা এখন কেন? পরে দেখিয়ো!
” আরেহ তোর বাবার জুতো গুলো মুছে রাখতে বলেছে! কাল দাওয়াত আছে!
” আ..আচ্ছা! আমি বের করে দিচ্ছি!
” তুই তো অসুস্থ?
” আরেহ মা..! তুমি বিছানায় বসো! আমি বের করে দিচ্ছি!
বিছানায় উকি মারতেই দেখি স্যারের মুখটা বুম হয়ে আছে! যা হাসি আসছিলো না! আমি চোখে ইশারা করলাম তার পিছনের বক্সটা এগিয়ে দিতে! মুখ ঘুড়িয়ে অন্যদিকে তাকালো!
” কিরে বেলি দ্রুত বের কর! না পারলে আমি বের করছি!
” না..নাহ আমি আনছি তো রে বাবা! বসো!
আমি তাকে হাত দিয়ে চাপতে ইশারা করলাম! সে আরও আমার দিক চেপে এলো! তার পিঠ আমার এক সাইডে স্পর্শ করছে! উফফ হাত বাড়িয়ে বক্সটা দ্রুত নিতে যাবো তখনি গালে তার ঠোটের স্পর্শ পেলাম! হাহ! আমি তো সেখানেই স্টোক?
স্যার আমায় ঠেলে বাহিরে বের করে দিলেন! মা বক্সটা নিয়ে বলল!
” ঝাড়ুটাও দে..! বিছানার নিচেই আছে!
এইবার আওয়াজ করেই বললাম..
” আজ বিছানার নিচে যা আছে সব লাগবে তোমার?
মা থতমত খেয়ে চলে গেলো! আর তখনি সে বিছানার নিচ থেকে বেড়িয়ে আসলো! আমার হাত ধরে উঠালো! বিছানায় বসিয়ে সে তার কাপড় ঝাড়তে লাগলো! মিরোর এর সামনে চুল গুলো ঠিক করতে লাগলো!
আর আমি তাকে দেখতে লাগলাম!
সে আমার সামনে দাড়ালো! কপালে হাত রেখে বলল..
” বাহ আমি আসতেই জ্বর গায়েব?
আমি তার দিক তাকালাম! সে মুচকি হেসে আমার গাল টেনে বলল..
” কাল যেখানে যাচ্ছো দাওয়াতে সেখানেই আমিও থাকবো! আমার বন্ধুর বিয়ে! তাই বাচ্চাদের মতো জিন্স_গেঞ্জি পরে আসবা না! মেয়েদের মতো রেডি হয়ে আসবে! চুল জানো খোলা দেখি! ঠিক এমন?
কথাগুলো বলে কপালে চুমু খেয়ে জানালার মাঝে লাফ দিয়ে ফ্লোরে পরলো! আমি তাকাতেই হাতের ইশারা করলো! কিছুটা দুড়েই তার গাড়ি! মুচকি হেসে জানালা লাগাতে ইশারা করলো! আমি লাগাতেই গাড়ি স্টার্ট এর আওয়াজ পেলাম!

তাকে দেখার পর থেকে সব ভালো লাগছে! জ্বর কৌতুহল, মাথা ঝিম ঝিম, সব গায়েব! ডক্টর, ডক্টর মনে হচ্ছে লোকটাকে! আমি হেসে আয়নায় নিজেকে দেখতে লাগলাম! কিছুক্ষণ আগে সে এখানে তার চেহরা রেখেছিলো!

কাল ফ্রাইডে..! দাওয়াত পরেছে! আজ গায়ের হলুদেও যেতে হতো! আমার শরীর ভালো না তাই মা যাবে না বলে দিয়েছে! কিন্তু কাল তো যেতেই হবে? কি পরবো? মেয়েদের মতো ছেলওয়ার সুট পরবো? নাকি? উফ!

চলবে…!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here