অতিরিক্ত চাওয়া 🔥 নাবিলা ইষ্ক পর্ব : ৮

অতিরিক্ত চাওয়া 🔥

নাবিলা ইষ্ক

পর্ব : ৮

কারেক্ট ঠিকানা পেতে ২ ঘন্টা ঘুরতে হয়েছে আমাকে! হু, এভারেষ্ট জয় করার মতো ফিলিং হচ্ছিলো! অদ্ভুত ও লাগছিলো! এক পিচ্চির জন্য সাঁত-সমুদ্র পাড়ি দিচ্ছি! বাড়িটায় হাজার বারের মতো চক্কর কেঁটেছিলাম! কিন্তু, যাকে দেখার জন্য এতো কিছু, তাকেই দেখতে পাচ্ছি না!

চাদপুরে তেমন কাউকে চিনতাম ও না! কি করবো? কোথায় যাবো? নো আইডিয়া! সিদ্ধান্ত নিলাম নিজের গাড়িতেই ঘুমুবো! যেই ভাবা সেই কাজ! সেদিন আর পিচ্চিকে দেখতে পাই নি! সারারাত ঘুমুতে পারি নি!

পরেরদিন দেখতে পাই! পাশের বাড়ির উঠানে খেলছিল ! তাঁকে দেখা মাত্রই মনের টনক নড়ে উঠলো! বুকটা ঠান্ডা হাওয়ায় দুলিয়ে যাচ্ছিলো!
লুকিয়ে, লুকিয়ে দেখা হতো! কোথাও গেলে পিছে পিছে যেতাম! বড্ড ভয় হতো যে পিচ্চিকে নিয়ে! এতো ভয় পাওয়ার কারনটাও খুবি অদ্ভুত!

ভালোবাসায় যে কতোটা কষ্ট তখন বুঝেছিলাম!
ওয়ান সাইড লাভে তো আরো কষ্ট! এতো কষ্ট নিয়ে ২ দিন যে কিভাবে বেচেছি তা আল্লাহ জানতো! ৪ দিন কাটার পরেই খোজ নিয়ে জানলাম! আজ রওনা দেবে! ব্যস দ্রুত গাড়ি নিয়ে ঢাকা পৌছালাম!

দ্বিতীয় দিন থেকেই পড়তে আসা শুরু করলো বেলি! ও পড়তো আর আমি ওকে দেখতাম! দিন দিন চাহিদা বাড়তে লাগলো! ওর ঠোঁট আমায় অনেক টানতো! স্পেশালি যখন ও বকবক করতো! আমি পিচ্চিকে দেখেই নেশা কাটাতাম! যখন দেখলাম ওকে ছাড়া চলছে না! তখনই বাজে ব্যবহার করতে শুরু করলাম! আমার বাজে ব্যবহারের পিছনে যে আমার অতিরিক্ত চাওয়ার নেশা ছিলো! সেটা তখন বোঝার ক্ষমতা ছিলো না পিচ্চির! রাত্রে ঘুমুতে পারতাম না! অনেক রাত শুধু জেগেই কাটিয়েছি! সারাদিন ভাবতাম কথাটা কার সাথে শেয়ার করবো! কাকে বলবো আমার এই পাগলামির কথা!

ভাগ্য খারাপ ছিলো তো! পরেরদিন ই জানতে পারি চলে যাবে আমার পিচ্চি! তাচ্ছিল্যের হাসি আসছিলো সেদিন! যাকে দু’দিন দেখতে না পেয়ে চাদপুর চলে গিয়েছি! তাকে না দেখে বছরের পর বছর কিভাবে থাকবো! ভেঙে পড়েছিলাম পিচ্চি যাওয়ার পর! জীবনের মানেটাই হাড়িয়ে ফেলেছিলাম! ৪ দিনের মাথাই চট্রগ্রামে পৌছালাম! পার্মানেন্টলি সিফট হতে অনেকদিন সময়ের প্রয়োজন! এতোদিন তো আর পিচ্চিকে দেখা ছাড়া থাকতে পারবো না! তাই কিছুদিনের মাঝেই চলে আসতাম চট্রগ্রাম! ফ্যামিলিকে বুঝিয়ে কাজটা ট্রান্সফার নিয়ে চলে এলাম পিচ্চির কাছে!

কারন পিচ্চিটাকে অতিরিক্ত চাই ” পাগলের মতো চাই! !
আমার এতো চাওয়ার মাঝে অন্যকারো অস্তিত্ব আমি মেনে নেবো ণা!

তোমার দিকে কেউ খারাপ নজরে তাকালে আমার শরীরে আগুন জ্বলে উঠে! তোমার দিক শুধু আমি তাকাবো! যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে তাকাবো! কুনজর আমার পরবে তোমার উপড়! অন্য কারো পরতে দেবো না! তাতে যদি তোমায় বোরকা পরিয়ে রাখতে হয়? তাই করবো!
জানো? কেনো মেড়েছিলাম সেদিন স্কেল দিয়ে? অনেক রাগ উঠছিলো তোমার উপড়! বড় হচ্ছিলে দিন দিন! বডির সেপ চেঞ্জ হচ্ছে! কিন্তু বুদ্ধি এক ফোটাও বারে নি!
বি_ভেল টাও ভালো ভাবে রাখতে জানো না!
এমন তো না যে শুধু মেয়েরা ক্লাসে! ছেলেরাও আছে! সেদিকে নজর দাও?

আর থাপ্পড় মাড়ার রিজন টা সিম্পেল ছিলো! অন্যকারো গায়ের সাথে কেন ঘেষতে যাও! বড় হচ্ছো কিন্তু মাথার বুদ্ধি তো ছোটই রয়ে যাচ্ছে!
থাপ্পড় মাড়ার জন্য আমি কখনও সরি চাইবো না! তুমি থাপ্পড়টা ডিজার্ভ করো! আমার তো ইচ্ছে করছিলো আরো দুটো দিতে! শুধু ক্লাস ছিলো দেখে বেচে গেছো? ফ্রেন্ড বলে কি গিয়ে ঘেষাঘেষি করতে হবে?

Present …!

স্তব্দ হয়ে রইলাম আমি! চোখের দিক তাকিয়ে আছি স্যারের! বুকটা ধরফর করছে! খুব ইচ্ছা করছে জড়িয়ে ধরতে! হুম জানি স্যার আমার অনেক বড়! তাও এখন মনে হচ্ছে উনার থেকে পার্ফেক্ট জীবনসঙ্গী কখনও পাবো না! পাবো না এমন অতিরিক্ত চাওয়ার মানুষ! এক পিচ্চিকে এতো ভালোবাসার কোনো কারন নেই! তাও পাগলের মতো ভালোবেসেছে ৪ বছর যাবত!

এখনও চোখ বুঝে সিটে হেলান দিয়ে আছে! ঠোঁট কামড়ে ধরে আছে! কিউট লাগছে দেখতে! চুলগুলো ঠিক করে দিতে ইচ্ছে করছে! কিন্তু?
হাত বাড়ানোর আগেই স্যার চোখ মেললেন! আমি সজা হয়ে বসলাম! আমার দিকে তাকিয়ে একটু ঝুকলেন…
” আচ্ছা যদি আমার বয়স কমানো যেতো? তাহলে তো আর কোনো সমস্যা হতো না! তাই না?

আমি প্রতি উত্তরে আমার দু’হাত মেলে চোখ বুঝে ছিলাম! নিজের এতো ক্ষমতা নেই উনাকে জড়িয়ে ধরার! আভাস পাচ্ছি তার স্পর্শের ! ধীরে ধীরে তার শরীরের মিষ্টি ঘ্রান তীব্র হচ্ছে! টাইট করে তার বুকে চেপে ধরেছে! আমি হালকা করে তার পিঠে হাত রাখলাম! অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে! স্যারের সাথে প্রেম? অদ্ভুত ছিলো আমার জীবনের ভালোবাসা! হয়তো আল্লাহ আমার জন্য উনকেই পাঠিয়েছেন! ভালোবাসা শিখাতে আমায়! কানে আওয়াজ আসলো…
” অতিরিক্ত চাই তোমায় বেলি?
চোখ খিচে আরেকটু আকড়ে ধরলাম! অনেক্ষণ যাবত সেভাবেই ছিলাম! এবার উনি নড়ে উঠে আমায় ছাড়লেন! মিষ্টি হেসে বললেন…
” সন্ধ্যা হচ্ছে, বাসায় যেতে হবে!
আমি মাথা নাড়ালাম! কেনো জানো আজ অন্যকিছুর ফিল হচ্ছে! কেমন ভালোলাগা কাজ করছে! তার সাথেই যে থাকতে ইচ্ছে করছে! কি করবো? বলবো?
নাহ বলার প্রয়োজন নেই! কিন্তু আমার মুখ তো অটো? বলেই দিয়েছি..
” আম..আমার আপনার সাথে থাকতে ইচ্ছে করছে!
কথাটা মাথা নিচু করেইই বলে ফেললাম! কথাটা বলেও হতবাক! কথাটা সেষ করতে না করতেই গাড়ি স্টপ হয়ে গেলো! আওয়াজ পেলাম তার….
” তাই? থাকতে চাও আমার সাথে?
আমি মাথা নাড়ালাম!
গালে স্পর্শ পেতেই মাথা তুলে তাকালাম! সে আমার কপালে চুমু খেলো!
” ইন্টারে উঠো! আমি আমার মা_বাবা পাঠাবো তোমাদের বাড়িতে! পৃথিবীর মানুষ আমাদের সম্পর্ক যেভাবে খুশি সেভাবে ভাবুক! আই ডোন্ট কেয়ার! তোমার ফ্যামিলি না মানলে তুলে নিয়ে যাবো তোমায়! কজ আই কান্ট লিভ উইদাউট ইউ! আই লাভ ইউ!

আমি হাসলাম! ভালো লাগছিলো তার মুখে ম্যাজিক্যাল ওয়ার্ড গুলো শুনতে! বারবার শুনতে ইচ্ছে করছে! চোখ বুঝে তার বুকে মাথা ঠেকে আছি! শান্তির জায়গা মনে হচ্ছিলো! হেফাজত?

রাত ৩ টা ৩২…
ঘুম নেই চোখে! ভাসছে তার ছবি আমার চোখে! ভালোভাবে খেয়াল করলাম আমার চোখে পানি! তাকে হাড়ানোর ভয়ে! একদিনে এতো অনুভূতি, ভালোবাসা কিভাবে আসলো আমার মনে! জানি না!
বুকে ব্যাথা হচ্ছে ভাবতেই সে কতোটা কষ্ট নিয়ে দিন কেটেছিল? ৪ বছর আমায় ভালোবেসে কতো রাত জেগেছিলো? অনেক রাত জেগেছে! আর আমি ঘুমিয়েছি!

মানবে তো মা_বাবা তার ভালোবাসা? মেনে নেবে আমাদের? কোনো মা_বাবা ই চাইবে না তার মেয়ের থেকে ১৩ বছরের বড় কোনো পুরুষের সাথে বিয়ের ব্যাপারটা! কি হবে? না মানলে তার হাত ধরে অন্য জগৎে পা রাখবো! যদি সেই জগৎে সে না যায়? আমি একাই যাবো! কারন তাকে ছাড়া থাকা অসসম্ভব! এখন ব্যাপারটা ক্লিয়ার, স্যারের ব্যবহারে এতো কেনো খারাপ লাগতো! কারন তার জন্য মনের কোনে অনুভূতি ছিলো! যেটা খুজেই পাই নি! এখন পেয়েছি আর তা শরীরে মেখে নিয়েছি! নিস্বাশ বন্ধ না হওয়ার পর্যন্ত সেই অনুভূতি হাড়াবার নয়!

না ঘুমিয়েই রাত পার হলো! আজ আল্লাহর দরবারে হাত পাততে অনেক ইচ্ছা করছে! আর সেই দোয়ায় আমি আমার স্যারেকে সারাজীবনর জন্য চাইবো! আমিও তাকে চাইবো!
নামাজ পড়েছি মা_বাবার সাথে জীবনে স্যারকেও চেয়েছি! তাকেও চাই আমার, ” অতিরিক্ত “!

এতো তাড়াতাড়ি উঠেও দেড়ি হয়ে যাচ্ছে স্কুলের জন্য! কেনো যে পুতুল বানাতে গেলাম! হায় আল্লাহ? আমার আর স্যারের পুতুল! কি জাদু করলো আমায়? এতো অনুভূতি নিয়ে কিভাবে বাঁচবো? হার্টফেল না হয়ে যায়! না নাহ হার্টফেল হলে তো…

আজকেও লেট! অপরাধীর মতো মাহবুব স্যারের বকা শুনছি! কাল থেকে ঢুকতে দেবেন না স্কুলে! কিন্তু আফসোস স্যারকে দেখতে পেলাম না!
ক্লাসে স্যার আসে নি! পিছনের বেচে বসতেই হাসান আর নিম্মিও সামনের থেকে পিছনে এসে পরলো! আজ আর ভুল করবো না বাবাহ! হাসান পিছনে মধ্যে নিম্মিকে দিয়েছি আর সামনে আমি বসেছি! নাহলে থাপ্পড় এইবার দু গালে পড়বে! এমন থাপ্পড় ই মেরেছে যে দাত সহ ব্যাথা! আহ..!
” এই বেলি কি ভাবছিস? আর কাল স্যার তোকে কোথায় নিয়ে গেছিলো? তোকে আবার মাড়ে নি তো?
” না নাহ.. বলেছে বাসায় পড়তে বসতে!

আর কিছুই বলতে হয় নি! ক্লাসে স্যার এসে পড়েছে!
ভালোই ক্লাস করলাম! টিফিনে নিচে নামলাম কিন্তু স্যার কোথায়? কোথাও তো দেখছি না! তাকিয়ে থাকতেই দেখলাম ক্যান্টিনের পাশে স্যারদের সাথে বসে চা খাচ্ছেন! আর সেদিকে আমাদের ক্লাসের আর নাইনের মেয়েরা ঘুরঘুর করছে! অসজ্য!

আজ টিফিনও আনি নি! হাসান আর আমি ক্যান্টিনের দিক যাচ্ছি! স্যারের দিক আড়চোখে তাকালাম সে ঠোঁট নাড়ালো ” গুড মর্নিং?
আমার অনেক ভালোলাগলো ব্যাপারটা! আমি মাথা নাড়িয়ে ঠোঁটের ইশারা করলাম!
ক্যান্টিনে যাওয়ার পথেই একটি পিচ্চি এসে থামলো..
” আপু এটা তোমার জন্য!
টিফিন বক্স হাতে নিতেই স্যার ইশারায় নিতে বললেন! আমি মিষ্টি হেসে বক্সক্স নিয়ে হাটা ধরলাম! পিছনে হাসান প্রশ্ন করতে করতে মাথা ঝাকিয়ে ফেলেছে!

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here