অদ্ভুত প্রেমোমোহ তুমি পর্বঃ১১

0
2597

#অদ্ভুত_প্রেমোমোহ_তুমি
#পর্বঃ১১
✍️ তাজরিয়ান খান তানভি

অপেক্ষা শুদ্ধতম ভালোবাসার পরীক্ষা।অমোঘ সত্য মৃত্যুর জন্যও আমাদের অপেক্ষা করতে হয়।ঘন বর্ষায় এক ফোটা জল এর জন্য চাতক পাখি নিলাম্বরির পানে চক্ষু স্থাপন করে অধীর আগ্রহে বসে থাকে।এইটা তার তৃষ্ণা মিটানোর অপেক্ষা।একজন প্রেমিক পুরুষ তার প্রেয়সী কে প্রেম নিবেদন করতে এখন গোলাপ এর পরিবর্তে কদম বেছে নেয়।গোলাপ সে মূল্যের দিক থেকে প্রাচূর্যতায় ভরা থাকলেও তা সহজলভ্য।কিন্তু কদম যার সংখ্যার মূল্য নগন্য হলেও দূর্লভ ভালোবাসার প্রতীক।তার জন্যও করতে হয় অপেক্ষা বছরের স্নিগ্ধতম ঋতুর।বৃষ্টিস্নাত ভোরে একগুচ্ছ কদম হাতে রাস্তার মোড়ে দাড়িয়ে প্রানপুরুষ তার প্রাননারীর জন্য সাদা পাঞ্জাবী পড়ে অপেক্ষমান।প্রাননারী তার অঙ্গে জড়িয়েছে কাচা হলুদ রঙের সবুজ পাড়ের শাড়ি।যার আঁচল বর্ষার হিমেল হাওয়ায় উড়ছে।প্রানপুরুষ তার সামনে দাড়িয় হাটু গেড়ে বলে,,,,,,,
“প্রেয়সী,আমি আপনার চোখের ওই কাজল হতে চাই যেনো আমার আগে আপনার ওই কাজল চোখের নোনতা জল কেউ স্পর্শ না করে।
প্রেয়সী,আমি আপনার ঠোঁটের ওই কালো তিল হতে চাই যেনো যতবার আপনি আপনার অধর প্রসারিত করবেন আপনার ওই তিল আমার হৃদয় হরণ করে নেয়।
প্রেয়সী,আমি আপনার ওই নাকের নাকফুল হতে চাই যেনো আপনার প্রতিটি নিঃশ্বাস আমাকে ছুইয়ে যায়।
প্রেয়সী,আমি আপনার ওই হৃদয় হতে চাই যার প্রতিটি স্পন্দনে শুধু আমার নাম থাকবে।
দেবেন কি সেই অনুমতি আমায়???

এইরকম এক অদ্ভুত অনুভুতি আড়ষ্ট করে আছে মারশিয়াদ কে।খোলা জানালার পাশে বসে ল্যাপটপের বড় স্ক্রিনে নজর আবদ্ধ তার।ইমো,হোয়াটঅ্যাপস,ফেসবুক,ইন্সটাগ্রাম,টুইটার ইত্যাদি কোনো সোশ্যাল মিডিয়া বাদ দেয়নি মারশিয়াদ স্কেচে আকা তার খোজনারী কে খুজতে।কিন্তু তার সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ।রক্তের শিরা রাগে ফেটে যাচ্ছে তার।কি করবে সে?কি করে পাবে তার কাজলচোখী কে?তাকে না দেখে মরে গেলে তার প্রানআত্নাও যে কখনো শান্তিতে থাকবে না।নিজের চুল টেনে ধরে মারশিয়াদ।হতাশা তাকে আজ প্রথম দাঁত কেলিয়ে বলছে,,মারশিয়াদ আরজান,ইউ আর নাথিং।

ইব্রাহিম এর কড়াঘাত এ সজ্ঞানে আসে মারশিয়াদ।

“জানবাবা,টেবিলে খাবার দিয়েছি।”

“ইচ্ছে করছে না চাচা।আপনি খেয়ে নিন।”

গত কয়েকদিনে মারশিয়াদ ঠিক করে একবেলা খেয়েছে কিনা সে নিজেও জানে না।পৃথিবীর সব কিছুই তার কাছে অসহ্য মনে হচ্ছে।নিজেকে আবদ্ধ করে নিয়েছে চার দেয়ালে যেখান থেকে অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তার কাছলচোখীকে খোজার।যখন ই ইচ্ছে গাড়ি নিয়ে বের হয় অলিতে গলিতে দেখে সে স্কেচকন্যা কে।না,পায় না সে।কাউকে না।সব যেনো সত্যিই মরিচিকা।

ইব্রাহিম কোনো প্রতিউত্তর করলেন না।শুধু শুনলেন।সিড়ি দিয়ে নিচে যেতেই শিহরণ কে দেখলেন।জানালেন মারশিয়াদ এর মানুষিক অবস্থা।সে ভালো নেই।সত্যিই ভালো নেই।তার কাজলচোখী তাকে সত্যিই পাগল করে দিয়েছে।

“এইসব কি শুরু করলি তুই??এভাবে কি মানুষ বাচে??

“আমি তো বেচে নেই।যেদিন তাকে দেখেছি আমার আমি কে তো আমি সেদিই হারিয়ে ফেলেছি।তার মিষ্টি কন্ঠ আমার হৃদয়ের স্পন্দন হয়ে আজোও কম্পিত হয়।মারশিয়াদ আরজান এখন জীবন্ত লাশ।তার জান এখন তার কাজলচোখীর ওই চোখে।”

“পাগলের প্রলাপ বন্ধ কর।ভুলে যা ওই মেয়েকে।”

মারশিয়াদ হুট করেই উঠেই শিহরণ এর গলা চেপে ধরে।

“কিইই,,কককরররছিস তুই,,ছাড়।”

মারশিয়াদ ছাড়ে না।শিহরণ চেষ্টা চালিয়ে যায়।সে ফিরতি আঘাতের কথা ভাবে না।

কিছুক্ষন পর ছেড়ে দেয়।শিহরণ লম্বা শ্বাস নিতে থাকে।গলা শুকিয়ে কাঠ।টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে গিলে।ধপ করে বসে চেয়ারে।

“কিরে,, কষ্ট হচ্ছে??

“তুই সত্যিই পাগল হয়ে গেছিস।আর একটু হলে তো আমার প্রানপাখি উড়াল দিতো।”

“এইটুকু সময় নিঃশ্বাস না নিয়ে থাকতে পারিস না।আর আমাকে বলছিস আমার নিঃশ্বাস কে ভুলে যেতে!!!

শিহরণ নিরুত্তর।বলার কিছু নেই তার।কি বলবে সে?

“তুই কি সত্যি তাকে খুজে পাবি??

“কেনো পাবো না??
মন দিয়ে খুজলে তো উপরওয়ালা কেও ধরনীর বুকে পাওয়া যায় আর সে তো মানুষ।”

“এতো মানুষর ভীড়ে কি করে করবি তুই??

“লস অ্যাঞ্জেলস এর প্রায় চল্লিশ লাখ মানুষকে ধোকা দিতে পেরেছি তো সতেরো কোটি বাঙালী থেকে আমি আমার কাজলচোখী কে খুজে নিতে পারবো না!!!

মারশিয়াদ অামেরিকার অঙ্গরাজ্য ক্যালিফর্নিয়া লস অ্যাঞ্জেলেস এর “ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফর্নিয়া “তে পড়ালেখা করেছে।যা ওখানকার সবচেয়ে বড় পাবলিক ইউনিভার্সিটি।
আর শিহরন সান ফ্র্যান্সিস্কো তে অবস্থিত “ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফর্নিয়া “তে পড়তো।এটি সান ফ্রান্সিস্কোর একটি চিকিৎসাবিজ্ঞান বিষয়ক ও গবেষনা কেন্দ্র।এটিকে চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে দেখা হয়।ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফর্নিয়ার দশ টি ক্যাম্পাসের মধ্যে এটিই শুধু স্নাতকোত্তর শিক্ষা চিকিৎসাবিজ্ঞান ও বায়োমেডিকেল এর জন্য।

লস অ্যাঞ্জেলস থেকে সান ফ্রান্সিসকো এর দুরত্ব বিমান পথে একঘন্টা বা তার চেয়ে একটু বেশি।মারশিয়াদ একটা কাজে সান ফ্রান্সিসকো যাওয়ার পর সেখানেই তাদের পরিচয় হয়।

একটা কল আসতেই চেয়ার থেকে উঠে একটু দুরে দাড়িয় তা রিসিভ করে মারশিয়াদ।টেবিলের উপর পরে থাকা স্কেচে নজর যায় শিহরণ এর।তার অক্ষিযুগল বিস্ময়ে চকিত।এ কাকে দেখছে সে!!এ মেয়ে কি করে মারশিয়াদ এর কাজলচোখী হতে পারে!!!

নাহ,,এ কিছুতেই সম্ভব নয়।শিহরণ এর মুখমন্ডল ধূসর রঙ ধারন করে।

“কিরে কি হয়েছে তোর?এমন দেখাচ্ছে কেনো তোকে??

শিহরণ কোনোমতে নিজেকে সামলায়।স্থির হয় সে।নরম গলায় বলে–

“কিছু না।আজ আসি।হসপিটাল এ জরুরি কাজ আছে।পরে কথা হবে।”

“ওকে যা।”

শিহরণ আর একমিনিটও দেরী করেনা।সে যা দেখেছে তা হতে পারে না।একবার যদি এই মেয়ে মারশিয়াদ এর সামনে আসে তাহলে,,,ও নো!!!
মারশিয়াদ আবারও তার কাজে বসে।খোজনারী কে খোজার কাজ।
,
,
,
বিছানার উপর ডিম্বাকার হয়ে বসে আছে কিঞ্চি,আজরাহান এর বিড়াল ছানা।পাশেই একের পর এক পাতা উল্টিয়ে যাচ্ছে প্রহর।কাল থেকে পরীক্ষা শুরু।বাসায় কেউ নেই।বাড়ির মহিলা সদস্যরা পাশের বাড়ির বিয়ের অনুষ্ঠানে গেছে।সাথে সানোয়ার আহমেদ।আর বাকিরা অফিসে।আজরাহান কড়াভাবে বলে গেছে যেনো প্রহর কোথাও না যায়।নীল চোখী কিঞ্চি ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে প্রহর এর দিকে।বিয়ে বাড়ির গানের শব্দ আসবে বলে জানালা বন্ধ করে রেখেছে প্রহর।

হঠাৎ ই লোডশেডিং।অন্ধকারে হাতড়িয়ে নিচে আসে সে।রান্নাঘর থেকে মোমবাতি নিবে বলে।চার্জার লাইটে চার্জ দেওয়া হয়নি।মোমবাতি নিয়ে আসতেই কেমন অদ্ভুত শব্দ আসে ওর কানে।খানিক ভয় পেয়ে যায় প্রহর।

“কে,কে ওখানে??
কিছুক্ষন পর শব্দ থেমে যায়। নিজের পিছনেই কারো অস্তিত্ব টের পেয়ে পিছন ঘুরে তাকাতেই এক চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে প্রহর।
,
,
চোখ খুলেই দেখে সবাই তার ঘরে।সামনেই বসে আছে আজরাহান।চোখে তার কৌতুহল।কি ঘটেছে এইখানে।প্রহর বসেই কাদতে থাকে।আজরাহান এর ধমকে চুপ হয়।সবকিছু খুলে বলে।আজরাহান এর হাসি দেখে কে।প্রচন্ড রাগ হচ্ছে প্রহর এর।এইসব কথায় কেউ হাসে।হনুপাঞ্জি কোথাকার!!
আজরাহান সবাই কে যেতে বলে।ফ্রেশ হয়ে ওর পাশেই বসে।

“পড়া শেষ তোর??

“নাহ।”

“তাহলে পড়।আমি খাবার নিয়ে আসছি।”

বাকিদের খাওয়া শেষ।তারা ও বাড়িতেই খেয়ে এসেছে।আর সামান বাইরে থেকে।

আজরাহান ওকে নিজের হাতে খাইয়ে দেয়।এই মানুষটা সব সময় ওর খেয়াল রাখে বাচ্চাদের মতো।ছোট মার জন্য যখন আজরাহান ওর সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয় তখনো ওর যা লাগতো ওর অজান্তেই সব দিয়ে দিতো।কখনো ছোট মার কাছে গিয়ে বলতো আমার কলম শেষ বা খাতা শেষ।কুহেলিকা তা কখনই দিতো না।কেদেঁ কেটে একাকার হয়ে ঘরে এসে দেখতো হয় টেবিলে বা বিছানার উপর তার সেই আকাঙখিত বস্তু টি পড়ে আছে।ও বেশ বুঝতে পারে এইসব তার রাহান ভাইয়ার কাজ।

প্রহর কে খাইয়ে নিজেও খেয়ে নেয়।বিছানায় শুয়ে পড়তেই সারাদিনের ক্লান্তি ভর করে আজরাহান কে।চোখ জুড়ে নেমে আসে রাজ্যের ঘুম।ওর ভারি নিঃশ্বাস এ প্রহর বুঝতে পারে ঘুমিয়েছে তার রাহান ভাইয়া।লাইট টা অফ করে একটা ল্যাম্পশেড নিয়ে বিছানায় ওর পাশেই বসে।

ঘড়িতে প্রায় তিনটা।প্রচন্ড ঘুম জুড়ে রয়েছে প্রহর এর চোখে।বই খাতাগুলো উঠিয়ে রাখে সাইড টেবিলে।আজরাহান এর দিক তাকাতেই দেখে ঘন ঘুমে আচ্ছন্ন সে।তার নিঃশ্বাসের আওয়াজ বাড়ি খাচ্ছে প্রহর এর কর্নগহব্বরে। ভারী নিঃশ্বাসের সাথে ভেসে আসছে এক মিষ্টি ঘ্রাণ।যার মোহনীয়তা এড়িয়ে যাওয়ার মতো নয়।ঘুমালে নাকি মেয়েদের মায়ামতি লাগে।কিন্তু তার ভাইয়া কেও আজ মায়াময় লাগছে।প্রহর আজরাহান এর মাথার কাছে গিয়ে ওর অধর স্পর্শ করায় আজরাহান এর কপালে।বেশ ভালো লাগছে ওর।এখন দৃষ্টি আজরাহান এর ওষ্ঠদ্বয়ে।আজরাহান এর শরীরের গন্ধরাজ এর ঘ্রাণ যে ওকে ঠিক থাকতে দিচ্ছে না।ও অধরযুগল আজরাহান এর অধরের কাছে নিতেই হালকা নড়ে উঠে আজরাহান।

প্রহর চটজলদি কাথামুড়ি দেয়।হনুপাঞ্জি যদি একবার
ওকে এই অবস্থায় দেখে তাহলে সর্বনাশ।কিছুক্ষনের মধ্যই ঘুম পাখিরা ডানা ঝাপটায় প্রহরের নয়নে।
,
,
“এইসব কেনো করলি তুই??

“বুঝতেই যখন পেরেছো তাহলে প্রশ্ন কেনো করছো??

“এইসব বন্ধ কর নুরাইসা।শান্তিতে থাকতে দে ওদের।”

“ও,, মাঝরাতে এইসব বলতে আমার ঘরে এসেছো!!
সত্যিই কী আমি তোমার মায়ের পেটের বোন নাকি ওই প্রহর??
তুমি কী ভেবেছো ওকে আমি ছেড়ে দিবো??
কখনো না।আজরাহান শুধুই আমার।আজরাহান শুধুই ওর নুরাজান এর।”

নুরাইসা নন্দিতা কে বের করে দরজা লাগিয়ে দেয়।আর সেখানেই বসে কাদতে থাকে।

“কেনো করলে তুমি এমন??
তুমি ই তো বলেছো তুমি তোমার নুরাজান কে ভালোবাসো।তাহলে কেনো আমাকে আপন করে নিলে না??আমি তো তোমাকে ভালোবাসিনি তাহলে তুমি কেনো আমাকে বাধ্য করলে তোমাকে ভালোবাসতে?কেনো কেনো কেনো????

ফ্লোরেই শুয়ে পড়ে নুরাইসা।

চলবে,,,

(বিঃদ্রঃ মারশিয়াদ কে এতো কেনো ভয় পান😕😕😕।ও সাইকো না।ওর কাজলচোখীর প্রতি একটু অবশেসড আর কি!!নাথিং এলস😒😒😒।

আর নাইস নেক্সট না লিখে একটু ছোট্ট করে কিছু লিখতে তো পারেন😒😒😒।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here