অদ্ভুত প্রেমোমোহ তুমি পর্বঃ১৬

0
2471

#অদ্ভুত_প্রেমোমোহ_তুমি
#পর্বঃ১৬
✍️ তাজরিয়ান খান তানভি

বিশাল হল রুমের আনাচে কানাচে রঙ বেরঙের লাইটিং।মৃদু ছন্দে গান।ঠান্ডা হিমেল করা পরিবেশ।শহরের এর নাম করা বিজনেস ম্যানদের সমাগম সেখানে।

অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে অনেকক্ষন।সবাই যার যার মতো ব্যস্ত।কোল ড্রিংস এর সাথে অ্যালকোহল এর সুব্যবস্থা।মারশিয়াদ কে অনেক জোড়াজুড়ি করে নিয়ে এসেছে শিহরণ।

ফ্লোরে এসে দাড়াতেই বিরক্তি স্পষ্ট মারশিয়াদ এর চোখে মুখে।শিহরণ ওকে হালকা ধাক্কা মেরে বলে–

“মুখ টাকে কেনো মেঘে ঢাকা চাঁদ বানিয়ে রেখছিস??

মারশিয়াদ চোখের মনি ঘুরিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে শিহরণ এর দিকে তাকায়।

“ওই দেখ কে আসছে।”

একটা গাঢ় লাল রঙেন স্লীভলেস গাউন পড়েছে ইনশিরাহ।ব্রাউন রঙের চুলগুলো পিঠের উপর ছড়িয়ে আছে।কোনো অর্নামেন্টস সে পড়ে নি।ঠোঁটে গাড় লাল লিপস্টিক।দেখতেই পুরো রেড ওয়াইন।

শিহরণ দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে–

“দেখ তোর রেড ওয়াইন আসছে।”

“তাহলে যা,তুই গিয়ে গলাটা ভিজিয়ে নে।”

“এইসব কি বলছিস??
বোন হয় ও আমার।”

“তাহলে দাঁতের পাটি বন্ধ কর।আর একটা কথা বললে আমি কিন্তু চলে যাবো।”

ইনশিরাহ এসে দাড়ায় মারশিয়াদের পাশে।ওর শরীরের চন্দনের খুশবু ইনশিরাহ কে ভিতর থেকে নাড়িয়ে দিচ্ছে।

“হট বয়,মুখ কেনো চুষা আম তোমার??

মারশিয়াদ একবার ওকে পুরোভাবে দেখে।মেয়েটা যথেষ্ট সুন্দরী।কিন্তু তার কাজলচোখী নয়।

“কি হলো কথা বলছো না যে??

মারশিয়াদ ভারী কন্ঠে বলে—

“মেনি মেনি হ্যাপি রিটার্নস অফ দ্যা ডে।হ্যাপি বার্থ ডে।”

মারশিয়াদ ওকে একটা গিফ্টস বক্স দেয়।

“থ্যাংক ইউ।”

শিহরন পাশ থেকে বলে–

“হ্যাপি বার্থ ডে বারবি ডল।”

“থ্যাংকস আ লট রণ ভাইয়া।”

ইনশিরাহ ওকে একটা ওয়াচ গিফ্ট করে।

“এইটা কি??

“এইটা তোমার রিটার্ন গিফ্ট।”

“বাট হোয়াই??

“এই যে তুমি আমার হটি বয় কে নিয়ে আসলে তাই।আমি জানি ও নিশ্চয়ই আসতে চায় নি??

শিহরণ মৃদুভাবে অধর বাকায়।

“তোমরা দাড়াও আমি আসছি।”

কিছুক্ষন পর ইনশিরাহ একজন চল্লিশউর্ধ্বো মহিলা কে নিয়ে আসেন।

“আয়া মা দেখো,তোমাকে যার কথা বলেছিলাম।আমার হটি বয়।”

ওসনিয়াত তার অধর প্রসারিত করে।

“মাশাআল্লাহ!!!!
আমাদের প্রিন্সেস এর পছন্দের তারিফ করতে হয়।”

মারশিয়াদ ভ্রু কুঞ্চি করে।পুরো ফ্যামিলি পাগল।

“আর মারশিয়াদ ও আমার আয়া মা।ছোটবেলা থেকে আমাকে আগলে রেখেছে।তুমিও ইচ্ছে করলে তাকে আয়া মা ডাকতে পারো।
তাই না আয়া মা??

“হুম।”

“আসসালামু আলাইকুম।
কেমন আছেন আপনি??

“ভালো।তোমার অনেক কথা শুনেছি প্রিন্সেস এর মুখে।সারাদিনই তোমার কথা বলে।মারশিয়াদ এইটা মারশিয়াদ ওটা।”

“আপনার প্রিন্সেস কে সাইক্রিয়াটিস্ট দেখাবেন।”

ওসনিয়াত সহ বাকিরা হেসে উঠে।ওসনিয়াত জানে মারশিয়াদ এইভাবেই কথা বলে।

“আচ্ছা,তোমরা কথা বলো।আমি একটু ওদিকটা দেখে আসি।”

“ওকে।”

কিছুক্ষন পরেই সেখানে উপস্থিত হয় ইতিকাফ আজমী।নিজের একমাত্র মেয়ের জন্মদিনে তিনি কোনো কিছুর কমতি রাখেন নি।মারশিয়াদ সম্পর্কে সবকিছুই জানে সে।সব খবর সে নিয়েছে।অবশ্য তা একান্তই মারশিয়াদ যতটুকু সবার সামনে তুলে ধরেছে ততটুকুই।

ইনশিরাহ ওর বাবাকে জড়িয়ে ধন্যবাদ জানায় পুরো ব্যপারটার জন্য।

“পাপা,আমার গিফ্ট??

“অবশ্যই মাই প্রিন্সেস।তোমার জন্য এইবার স্পেশাল গিফ্ট আছে।”

“কি??

“ওয়েট,মাই প্রিন্সেস।”

ইতিকাফ এর চোখের ইশারায় সব লাইট অফ করে দেওয়া হয়।ফোকাস লাইট জ্বালানো হয় সামনের দেয়ালের উপর।ধীরে ধীরে সেখানকার পর্দা উন্মোচন হচ্ছে।পুরো দেয়াল জুড়ে মারশিয়াদ এর চিত্রকর্ম।

মারশিয়াদ আর শিহরণ আশ্চর্যচকিত।এইসব পেইন্টিং তো,,,
গত কয়েকদিন আগেই কেউ একজন মারশিয়াদ এর সকল চিত্রকর্ম গুলো কিনে নিয়েছে দ্বিগুন মূল্যে।

ইনশিরাহ ওর বাবাকে ভিষন করে জড়িয়ে গাল চুমু খায়।

“থ্যাংক ইউ,থ্যাংক ইউ সো মাচ।আই লাভ ইউ পাপা।”

“আই লাভ ইউ টু প্রিন্সেস।”

লাইট জ্বলে উঠে।মারশিয়াদ শান্তভাবে তাকিয়ে আছে ইনশিরাহ এর দিকে।মেয়েটার পাগলামি বেড়ে যাচ্ছে।সঠিক সময়ে না আটকালে বিপদ।

শিহরন দেখতে পায় হলের এক কোণে আকাশি রঙের একটা থ্রি পিচ পড়া একটা মেয়ে।শিহরন কাছে গিয়ে বলে–

“পিচ্চি।”

নির্ধা ওর ওড়নার সেফটিপিন ঠিক করছিলো।শিহরণ এর কন্ঠে চকিত হয় সে।সামনে তাকায়।

“ডাক্তারবাবু আপনি??

“তুমি এখানে??

“ভাইয়ার সাথে এসেছি।”

“ও আচ্ছা।
কেমন আছো তুমি??

“ভালো।আপনি??

“ভালো।তা তোমার ওই গরম তেলের পিঠে ভাইটা কোথায়??

“আপনি কি আমাকেই খুজছেন??

আশফিক এর কথায় শিহরণ শুকনো ঢোক গিলে।

“কেমন আছেন মি. আশফিক??

“ভালো।তা এখানে কেনো??

শিহরণ জানায় ইনশিরাহ এর সাথে মারশিয়াদ এর বন্ধুত্বের সম্পর্ক।আর আশফিক ইনশিরাহ এর বাবার আন্ডারেই কাজ করে।দুজনের মধ্যে বেশ ভালো সম্পর্ক।

“আচ্ছা।আসি,ভালো থাকবেন।আসি নির্ধা।”

শিহরন যেতেই আশফিক ওকে জিঙ্গেস করে–

“কতোদিন ধরে জানিস ওকে??

“একবছর”

আশফিক চোখের পাতা ছড়িয়ে ওর দিকে তাকায়।

কেক কাটা শেষ করে সবাই কে দেওয়া হয়।আবারও মিউজিক বেজে উঠে।সবাই যার যার মতো ব্যস্ত।ইতিকাফ অনেক সময় ধরে মারশিয়াদ এর সাথে কথা বলে।তার বেশ পছন্দ হয় মারশিয়াদ কে।

কিছু মেয়ে মারশিয়াদ কে ঘিরে রেখেছে।তাদের কারো রিকোয়েস্ট সেলফি কারো আবার অটোগ্রাফ।ইনশিরাহ দেখতে পেলো কিছু মেয়ে একদম ওর গায়ের সাথে লেগে আছে।মাথায় রক্ত চড়ে যায়।

“এই এইসব কি??পার্টি তে এসেছেন না ফটোগ্রাফি করতে।
সরুন এখান থেকে।”

শিহরন দুর থেকে দাড়িয়ে ওর পাগলামি দেখে।যাক,মারশিয়াদ এর এখন নিজের করে কাউকে প্রয়োজন।আর এই কাজ ইনশিরাহ এই করতে পারবে।

সোফার উপর বসে আছে মারশিয়াদ।পাশেই ইনশিরাহ।

“কেনো এতো ভালোবাসো মেয়েটাকে তুমি??

“তার জবাব আমি কাউকে দিতে বাধ্য নই।”

“মারশিয়াদ আমি তোমাকে ভালোবাসি।”

“বাট আই ডোন্ট লাভ ইউ।”

“ওর তো বিয়ে হয়ে গিয়েছে।তাহলে কেনো শুধু শুধু তুমি জন্য নিজের জীবন নষ্ট করবে।”

“আমি তো নিজেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছি।আর কিছুই নেই আমার।”

ইনশিরাহ মারশিয়াদ এর হাত ধরে বলে–

“প্লিজ,একটা সুযোগ দাও আমাকে।আমি কথা দিচ্ছি আমি তোমাকে এতোটা ভালোবাসবো যে তুমি ওকে ভুলে যাবে।”

“আমার ভালোবাসা কোনো কাচের ঘর নয় যে এক ঝটকা হাওয়ায় তা ভেঙে যাবে।
আমি কখনই তার জায়গা অন্য কাউকে দিতে পারবো না।ভুলে যাও আমাকে।”

মারশিয়াদ উঠে চলে যায়।ইনশিরাহ ওকে ডাকে।কিন্তু তা মারশিয়াদ কর্নকুহর হয় না।মারশিয়াদ এতোটাই ডেস্পারেট যে ওর সাথে ধাক্কা লেগে আশফিক প্রায় পড়ে যাওয়ার উপক্রম সেদিকে তার নজরই ছিল না।

“দেখে হাটতে পারো না।ওকে ধাক্কা দিলে কেনো??

আশফিক ভ্রুকুটি করে।

“আপনার চোখে কি সমস্যা??
আমি কোথাই ধাক্কা দিলাম ওই পাগল কে।উল্টো ওই তো,,,

“একদম চুপ।কাকে পাগল বলছো??
আর একটা বাজে কথা বললে ওর নামে তোমার খবর আছে।”

“বাব্বাহ!!
এতো কিসের টান আপনার তার জন্য??

“আই লাভ হিম ভেরি মাচ।”

আশফিক এর বুকটা ধক করে উঠে ইনশিরাহ এর মুখে মারশিয়াদ কে ভালোবাসে শুনে।কেনো যেনো ওর মনে হলো ওর আঁধার ঘরের জ্বলন্ত মোমবাতি এক দমকা হাওয়ায় বুঝে গেলো।

পরক্ষনেই একটা প্রশান্তির হাসি হাসল।আর মনে মনে বলল,,,,,ভালোই হলো আজরাহান আর প্রহর এর জীবন থেকে মারশিয়াদ নামের কালো অধ্যায় টা অন্তত বন্ধ হবে।
,
,
,
গভীর ঘুমে আচ্ছন আজরাহান।প্রহর এর হঠাৎ ই ঘুম ভেঙে যায়।কেনো যেনো অস্থির লাগছে ওর।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত প্রায় তিনটা।বিছানা থেকে উঠে বারান্দায় গিয়ে দাড়ায়।উত্তরমুখী বারান্দা থেকে দেখতে পায় বাড়ি থেকে একটু দুরে বড় রাস্তার জন্য যেখানে মোড় ঘুরতে হবে সেখান থেকে আলোকরশ্মি দেখা যাচ্ছে।

প্রহর আবার ঘরে ভিতরে আসে।আজরাহান এর মোবাইল টা ভাইব্রেট করে উঠে।এতো রাতে কার কল হতে পারে!!
প্রহর কাছে গিয়ে দেখে আননোন নাম্বার।বেজেই যাচ্ছে রিং।আজরাহান এর ঘুম ভেঙে যাবে বলে তা রিসিভ করে।

“হ্যালো।”

“কেমন আছেন কাজলচোখী??

প্রহর এর নিঃশ্বাস এর গড়পরতার হার বৃদ্ধি পায়।ও মোবাইল টা কান থেকে সরাতে গেলেই—

“কল কাটবেন না কাজলচোখী।তাহলে কিন্তু আমি বাড়ির ভিতরে চলে আসবো।
আর আপনি জানেন আমি তা করতে পারি।”

প্রহর একটা দম নেয়।কাজলচোখী শব্দটা শুনেই বুঝতে পারে কে সে।

“আপপপফনিই!!!!

“আরেকবার বারান্দায় আসুন।”

প্রহর দ্বিরূক্তি করে না।কারন এখানে কথা বলা সম্ভব না।ধীম পায়ে বারান্দায় পা বাড়ায় প্রহর।বারান্দায় যেতেই মারশিয়াদ বলে—

“ওখানেই দাড়ান,আমি আপনাকে দেখতে পারছি।”

প্রহর বুঝতে পারে একটু আগের আলোকরশ্মি তাহলে মারশিয়াদ এর গাড়ির হেডলাইট থেকে আসছিলো যা এখন বন্ধ।বারান্দায় একটা ছোট লাইট জ্বালানো যার আলোয় মারশিয়াদ প্রহর কে দেখতে পায়।

“কেনো কল করেছেন আপনি??
এই নাম্বার কোথায় পেয়েছেন আপনি??

“খুজলে তো উপরওয়ালা কে পাওয়া যায় আর এটাতো একটা নাম্বার।”

“কেনো কল করেছেন আপনি?দেখুন আমি আপনার কাজলচোখী নই আর,,,,

“প্লিজ আপনি কথা বলবেন না।আপনি কথা বললে আমি আপনার নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পাই না।আজ আমি বলবো আপনি শুনবেন।”

প্রহর চুপ হয়ে যায়।

“এখনো জেগে আছেন কেনো,ঘুম আসছে না ??
কি করে আসবে বলুন,যে ঝড় আপনি আমার বুকে তুলেছেন তার দমকা হাওয়া যে আপনাকেও শান্তিতে থাকতে দিবে না কাজলচোখী।”

প্রহর এর নিঃশ্বাস ভারী হয়।মারশিয়াদ তা স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে।এক প্রশান্তি ভর করেছে ওর পুরো শরীর জুড়ে।

“আপনার রাহান ভাইয়া কোথায়??
নিশ্চয়ই ঘুমাচ্ছে।ঘুমাবেই তো,যে প্রশান্তি আপনি তাকে দিয়েছেন তার তো স্বর্গসুখ প্রাপ্তি ঘটেছে।

মারশিয়াদ এর আর্দ্র কন্ঠ প্রহর এর মনে মাদল বাজানো শুরু করেছে।

“কেনো করলেন এমন কাজলচোখী?এতোটা জঘন্য তো আমি নই।আপনার ভালোবাসা পাওয়ার কি কোনো অধিকার নেই আমার??
আমার সাধনা পূর্ন হলো পরিনতি কেনো পেলো না কাজলচোখী??

প্রহর শুধু শুনছে।

মারশিয়াদ ধরা কন্ঠে আবার বলে–

“নিভৃত যতনে আমি সাজিয়েছি তোমায় মনেরই গহীনে,তোমাকেই খুজেছি অন্ধকার রাতের তারার মাঝে।
সর্বগ্রাসী কাজলচোখী,
আমি তোমায় ভালোবাসি।”

মারশিয়াদ এর মুখে ভালোবাসি শুনতেই কল টা কেটে দেয় প্রহর।দৌড়ে ভিতরে চলে যায়।

মারশিয়াদ অস্ফুটভাবে হাসে।

“আমি আপনাকে ভুলতে পারবো না কাজলচোখী।আপনাকে আমার হতেই হবে।আপনাকে ছাড়া আপনার জান বাচবে না।একটু ভালোবেসে দেখুন আমাকে।আপনার জান আপনার জন্য কি করতে পারে আপনি জানেন না কাজলচোখী।আমি আমার সবকিছু হারিয়ে ফেলেছি,আপনাকে হারাতে পারবো না।একবার ভালোবেসে দেখুন।”

মোবাইল থেকে সিম টা খুলে ফেলে দেয় মারশিয়াদ।গাড়ি তে উঠে বসে।চলছে তা।
,
,
ধপাস করে বিছানায় বসে প্রহর।আজরাহান নড়ে উঠে।ঘুমকাতুরে কন্ঠে বলে–

“কিরে ঘুমাস নি??
কি হয়েছে তোর?এমন কেউ করে যেনো বিছানায় ভুমিকম্প হচ্ছে।”

প্রহর কোনো প্রতিত্তুর করে না।
আজরাহান চোখ কচলিয়ে উঠে বসে।হাত দিয়ে হাতড়িয়ে লাইট অন করে।

“প্রহরিনী কি হয়েছে তোর??

প্রহর চোখের পানি মুছে নেয়।আজরাহান এর দিকে ফিরে তাকায়।

“কিছু না।”

“তাহলে এমন ভুমিকম্প কেনো উঠালি বিছানায়।দেখতো তোর জন্য আমার কিঞ্চিরানীর ঘুম ভেঙে গেছে।”

“আমার খিদে পেয়েছে।”

“বস,আমি নুডুলস করে আনি তোর জন্য।”

আজরাহান কিচেনে গেলে প্রহর ওর মোবাইলটা নিয়ে মারশিয়াদ এর নাম্বার টা ব্ল্যাক লিস্টে দিয়ে দেয়।

আজরাহান নুডুলস করে আনে।প্রহর এক চামচ মুখে দিয়েই বলে–

“ছিঃ এইটা কোনো নুডুলস হলো!!একটুও মজা না।”

“তাহলে দে খেতে হবে না।আমার কিঞ্চি খাবে।”

আজরাহান ওর কাছ থেকে বাটি টা নিয়ে নেয়।সেখান থেকে একটু একটু করে নিয়ে কিঞ্চির মুখে দেয়।

প্রহর দাঁত কিড়মিড় করে।হতচ্ছাড়ি বিড়ালি।প্রহর আজরাহান এর কাছ থেকে বাটি টা নিয়ে খাওয়া শুরু করে।
আজরাহান ওর দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসে।
প্রহর এর চুলগুলো ওর মুখ জুড়ে ছড়িয়ে আছে।প্রহর যখন সাত বছরের ছিলো তখনো ওর চুল ছিলো কোমড় ছাড়িয়ে।সেই ছোট্ট প্রহর এর চুলের প্রেমে পড়েছিলো আজরাহান।তখন আজরাহান এর বয়স ষোলো।

“আমার অনেক ইচ্ছে তোর চুলে একটা বয় কাট দেওয়ার।”

প্রহর মুখে নুডলস ঠুসে বলে–

“একদম আমার চুলের দিকে নজর দিবেন না।”

আজরাহান শুয়ে পড়ে।কিঞ্চিও গুলটি মেরে শোয়।খাওয়া শেষ করে আজরাহান এর হাতের উপর মাথা রাখে প্রহর।
আজরাহান নিজেকে আরেকটু কাছে নিয়ে আসে প্রহর এর।গলা বাড়িয়ে ওর কপালে চুম্বন করে।প্রহর এর গাল দুটো টিপে বলে–

“তোর গাল দুটো এত তুলতুলে কেনো রে??
একদম তুলোর মতো।”

প্রহর ফিক করে হেসে দেয়।
আজরাহান ওর মুখের উপর ছড়ানো চুল গুলো কানের পিছনে গুজে বলে–

“ভালোবাসিস আমাকে প্রহরিনী??

প্রহর মাথা দুলিয়ে হা সূচক সম্মতি দেয়।আজরাহান মিষ্টি করে আবার বলে—

“আমাকে একটু সময় দে প্রহর।কথা দিচ্ছি,আমার সবটা উজাড় করে দিবো তোকে।অনেক ভালোবাসবো তোকে।তোর সব কষ্ট আমি দুর করে দিবো।একটু সময় দে আমাকে।”

“হুম।”

আজরাহান আবারও প্রহর এর গাল দুটো টিপে দেয়।নিজের হাতটা টান দিয়ে সরিয়ে নেয়।

“হাত সরালেন কেনো??

“আমি কি তোর বালিশ??
যা,,নিজের বালিশে ঘুমা।”

“একটু হাতের উপর ঘুমালে কি হয়??

আজরাহান অনবরত ভনভন করে ঘোরা ফ্যানের দিকে তাকিয়ে বলে—

“তোর স্পর্শে আমার শরীরে কারেন্ট লাগে রে প্রহরিনী।এতো তাড়াতাড়ি আমি জ্বলে পুড়ে ছাড়খার হতে চাই না।তাহলে তোকে ফুটবল টিম বানাতে কে সাহায্য করবে??

আজরাহান এর কথায় প্রহর খিলখিলিয়ে হাসে।ও আবার বলে–

“আমি ভাবছি,ফুটবল টিমের সাথে একটা ক্রিকেট টিম বানালে কেমন হয়!!
তাহলে ঘরে বসেই লাইভ খেলা দেখা যাবে।
পারবি তো তুই???????

প্রহর আবারও খিলখিলিয়ে হেসে উঠে আর আজরাহান এর বুকে ঝাপিয়ে পড়ে বলে —

“পারবো।”

চলবে,,,

(বিঃদ্রঃ এর পরের পার্ট থেকে শুরু হবে,
মারশিয়াদ এর প্রটেক্টিভ এন্ড ইনটেনস লাভ😒😒
আর
আজরাহান এর পবিত্র ভালোবাসা 😌😌 )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here