অদ্ভুত প্রেমোমোহ তুমি পর্বঃ১৮

0
2011

#অদ্ভুত_প্রেমোমোহ_তুমি
#পর্বঃ১৮
✍️ তাজরিয়ান খান তানভি

“অন্ধকারের ঘোর কেটে আলোর দেখা মিলবে,
কাননের ফুল সৌরভ নিয়ে ফুটবে,ভ্রমর আসবে তার মধু নিতে,প্রহরিনী তুই আমার হবি,থাকবি আমারই হয়ে।”

আজরাহান এর উষ্ণ নিঃশ্বাস প্রহর এর মুখের উপর পরতেই হালকা নড়ে উঠে প্রহর।গন্ধরাজ এর তীব্র মাতাল করা ঘ্রান।ওর সারা শরীরে কাপন তুলে।

“কুম্ভকর্ন উঠ,আজ না তোর শেষ পরীক্ষা??

প্রহর চোখ ছোট ছোট করে উঠে বসে।এক হাই তুলে।ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে–

“আপনি এতো সকালে উঠলেন কেনো??সবে তো সাত টা বাজে।”

আজরাহান ওর চুল টেনে বলে–

“তোর সাথে রোমান্স করবো তাই।”

প্রহর অধর প্রস্ফুটিত করে।

“সকাল সকাল কিসের রোমান্স??

আজরাহান ওর ললাটে চুমু খেয়ে বলে—

“এই যে গুড মর্নিং কিস।”

“আপনি এমন কেনো করেন আমার সাথে??
একটু ভালোবাসলে কি হয় আমাকে??

“তোর কি মনে হয় আমি তোকে ভালোবাসি না??

“জানি না।”

“কি জানিস তুই??

“কিছু না।সরুন যেতে দিন।”

প্রহর বিছানা ছেড়ে উঠে।আজরাহান ওকে হাত ধরে টেনে বিছানায় শোয়ায়।ওর উপর ঝুকে বলে—

“রাগ করেছিস??

“না।”

“তাহলে??

“কিছু না।সরুন।”

“নাহ।”

“কেনো??

“তোকে আমার চাই।”

প্রহর ঈষৎ ঠোঁট প্রসারিত করে।একজনের চোখ অপরজনের চোখে নিবদ্ধ।

“আমি তো আপনারই।”

“তোকে আমার পুরো চাই।আমার করে চাই।যেখানে শুধু আমার অধিকার থাকবে।”

“আমি কি মানা করেছি??

“আরেকটু অপেক্ষা কর।তোকে আমি আমার করে নিবো প্রহরিনী।শুধুই আমার হবি তুই।তোর অস্তিত্বজুড়ে শুধু তোর রাহান ভাইয়া থাকবে।সেখানে আর কারো অধিকার থাকবে না।”

আজরাহান এর মিষ্টি নিঃশ্বাস ছুয়ে দিচ্ছে প্রহর কে।এক অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করছে ওর।আজরাহান ডান হাতের উল্টো পাশ দিয়ে প্রহর এর গাল ঘষে দেয়।

“তোর গাল গুলো একদম আপেলের মতো।”

“তাহলে খেয়ে দেখুন।”

“নাহ।”

“কেনো??

“এখন খেলে বদহজম হবে আমার।”

প্রহর ওর একহাত দিয়ে আজরাহান এর গাল স্পর্শ করে।

“আপনি আমাকে ছেড়ে কখনো যাবেন না তো??

আজরাহান ওর উপর থেকে সরে ওর পাশেই মাথার নিচে দুই হাত দিয়ে শোয়।

“যতদিন আমার এই নিঃশ্বাস চলবে তোর রাহান ভাইয়া তোরই থাকবে।”

প্রহর উঠে ওর বুকের উপর আছড়ে পরে।

” এই কি করছিস,সর বলছি।যা ফ্রেশ হয়ে নে
আজ আমি তোকে দিয়ে আসবো।”

“সত্যি!!!!

“হ্যাঁ।যা রেডি হ।নাহলে আমি তোকে রেখেই চলে যাবো।”

খুশিতে চকচক করে উঠে প্রহর এর বদনখানি।

“যাচ্চি,যাচ্চি।”
,
,
আজ অফিসে কাজ কম তাই আজরাহান নিজে প্রহর কে কলেজে দিয়ে অাসবে।কিন্তু নিয়ে আসবে আশফিক।

যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে দরজামুখী হতেই আজরাহান দেখতে পায় সানোয়ার আহমেদ বিমর্ষ চেহারা নিয়ে ভিতরে আসছেন।কেমন যেনো অসুস্থ মনে হলো তাকে।আজরাহান কাছে গিয়ে তাকে ধরে একটা চেয়ার টেনে বসায়।

“খারাপ লাগছে বাবা??

“শরীর টা ভালোই ছিলো।কিন্তু,,,,

“কিন্তু কি??

“ওই যে পাশের বাড়ির তিন তালার ভাড়াটিয়ার ছেলেটা,কে যেনো কাল রাতে ওকে মেরে বাসার সামনে রেখে গেছে।”

“কি বলছো তুমি??

“কি বিভৎস সে দৃশ্য!!!
ছেলেটার হাতের কব্জি,চোখ এমন কি জিহ্বা টা পর্যন্ত কেটে নিয়েছে।শরীরের সব রক্ত মনে হয় কেউ শুষে নিয়েছে।
পৃথিবী সত্যিই আজ অসুস্থ।নাহলে মানুষ কি করে মানুষকে এভাবে মারতে পারে!!!!

ঝনঝন করে উঠে প্রহর হাত থেকে পড়া কাচের জিনিসগুলো।সানোয়ার আহমেদ এর মুখ থেকে এইসব শুনে পুরো ফ্যাকাশে হয়ে যায় ওর মুখমন্ডল।কাপতে থাকে প্রহর।আজরাহান দ্রুত গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে।পাশেই চেয়ারে বসায়।

“প্রহর,কি হয়েছে তোর??

প্রহর কাপা কাপা স্বরে বলে—

“ওওএইঈ ছেছেএএএলেএ।”

“শান্ত হ।”

“কেকক মমাররলোয় ওকে??

“হয়তো এমন কিছু সে করেছে যার জন্য তার এই অবস্থা।কিন্তু যেই করুক সে মানুষ না।মনুষ্যত্বহীন অমানুষ।মানুষ কখনো মানুষ কে এভাবে মারতে পারে না।কাল ই তো ছেলেটা একদম ঠিক ছিলো।আর আজ,,,

“আপনি কি করে জানেন??

“কাল আমি ওর সাথে কথা বলেছি।”

সামান খুব তটস্থ।ওর ভাইয়ের কার্যকলাপ ওর একদম অপছন্দ।সেদিন এর পর থেকে অরিধা ওর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।অনেকবার ওকে বুঝানোর চেষ্টা করে।কিন্তু অরিধার একটাই কথা যদি ওকে বিয়ে করতে পারে তাহলেই যেনো সামান তার সাথে যোগাযোগ করে।কিন্তু তা সম্ভব নয়।সানোয়ার আহমেদ খুবই রক্ষনশীল মানুষ।এই ধরনের গর্হিত কাজ তিনি মোটেও টলারেট করবেন না।নন্দিতাকে তিনি নিজের মেয়ের চেয়ে কোনো অংশে কম দেখেন না।কিন্তু সামান বেপরোয়া।তার অরিধা কে চাই।অরিধা তার নেশায় পরিনত হয়েছে।নন্দিতার প্রতি তার কোনো মায়া নেই যা আছে তা হলো শারীরিক চাহিদা।
,
,
,
আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল সেট করছে মারশিয়াদ।গ্রে রঙের ব্লেজার জড়িয়েছে গায়ে।কোথাও যাবে সে।শিহরণ রক্তিম চক্ষু নিয়ে দাড়ায় ওর সামনে।

“কিরে চন্ডির রুপ ধারন করলি কেন??

“এইসবের মানে কি??কেনো করলি তুই??

“কি করেছি আমি??

“তুই ভালো করেই জানিস আমি কি বলছি।কেনো মারলি ওই ছেলেকে??

মারশিয়াদ ঠোঁটের কোনে হাসি রেখে বলে–

“চাচা কে জিঙ্গেস কর,কাল সারারাত আমি বাসায় ছিলাম।”

“তুই আমাকে ডাবল ক্রস করার চেষ্টা করবি না।
কেনো করলি তুই??বলললল,,,

মারশিয়াদ ক্ষীপ্ত হয়ে বলে—

“আমার কাজলচোখী কে যে স্পর্শ করবে তাকে আমি ছাড়বো না।”

“তার মানে তুই,,

শিহরণ এক দম ছাড়ে।টিভিতে নিউজে ছেলেটার মৃত্যুর বর্ননা শুনেই শিহরণ বুঝতে পারে এইটা মারশিয়াদ এর কাজ।

“এখন যা তুই।আমার কাজ আছে।”

শিহরণ হতাশ কন্ঠে বলে–

“ওই ছেলে ওকে স্পর্শ করলো তাই তুই ওকে মেরে ফেললি।”

“আমার কাজলচোখীর কাজল আখি থেকে যে এক ফোটা অশ্রু ঝরাবে তাকে আমি ছাড়বো না।”

“তাহলে আজরাহান কে কি করবি।ও তো ওর স্বামী।কতোদিন হয়েগেছে ওদের বিয়ের।”

“কি বলতে চাস তুই??

“তুই বুঝতে পারছিস আমি কি বলছি।”

“যা এখান থেকে।”

“ভুল করছিস তুই মারশিয়াদ।মরিচিকার পিছনে ছুটছিস তুই।সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না।সময় বহমান।তার সাথে আমাদের নিজেদের ও বদলে নিতে হয়।”

“আমি ওকে ভুলতে পারবো না।”

“আজরাহান কে ও ভালোবাসে।”

“জানি আমি।আমিও আমার কাজলচোখী কে ভালোবাসি।”

“প্রহর কোনোদিনও তোর হবে না।”

“তা নিয়ে আমি ভাবি না।আমার ভালোবাসা মিথ্যে নয়।ধ্রুভতারার মতো সত্য।”

“দেখ মারশিয়াদ,এতো সহজ ব্যপারটাকে কেনো এতো জটিল করছিস??

“ভয় পাস না।আমি আজরাহান এর কোনো ক্ষতি করবো না।ভালোবাসি তাকে তার চোখের জলের কারণ হবো না।”

“তাহলে এইসব কেনো করছিস??

“যদি কোনোদিন সে আমার কাছে আসে আমি তাকে ফিরিয়ে দিবো না।”

“কি বলতে চাস তুই???

মারশিয়াদ শিষ বাজাতে থাকে আর বলে—-

“কথায় আছে,,,যদি থাকে নছিবে আপনি আপনি আসিবে।আমি সেই অপেক্ষায় থাকবো।
জানিস তো অপেক্ষা ভালোবাসার শুদ্ধতম পরীক্ষা।”

শিহরণ এর মস্তিষ্ক হ্যাং হয়ে যাচ্ছে।মারশিয়াদ কি করতে চায় তার কিছুই বুঝতে পারছেনা।,
,
,
,
পরীক্ষা শেষে হলের সামনে দাড়িয়ে আছে নির্ধা আর প্রহর সাথে আশফিকও।সে কখন থেকে গাড়ির জন্য দাড়িয়ে আছে ওরা।কিন্তু বিকেল হওয়ায় সব গাড়ি পূর্ন।তার উপর এতো ভীড়।

কিছুদুরেই মারশিয়াদ দাড়িয়ে আছে।প্রহর কে জিঙ্গেস করেছিলো কেমন আছে।আর তাতেই চটে যায় আশফিক।মারশিয়াদ কে অনেক কথা বলে।মারশিয়াদ প্রতিত্তুর করে না।গাড়ি না পাওয়ায় ওদের লিফ্টের ওফার করে কিন্তু আশফিক কোনো মতেই রাজি না।

ওদের দুজনকে রেখে সামনে এগিয়ে যায় আশফিক।তাতেও কাজ হয় না।কোনো সি এন জি,রিক্সায় রাজী হয় না যাওয়ার জন্য।মারশিয়াদ এখনো তাকিয়ে আছে প্রহর এর দিকে।

বিকেল গড়িয়ে গেছে।সূর্য প্রায় ডুবি ডুবি।তাই বাধ্য হয়ে ওরা মারশিয়াদ এর কার এ উঠে।আশফিক ভাবনায় পড়ে।ওদের বাড়ি যেহেতু আগে পড়ে তাই ও কোনোভাবেই প্রহর কে মারশিয়াদ এর সাথে একা ছাড়তে নারাজ।প্রহর ওকে আশ্বস্ত করে।

বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থেকে বের হয়েই হাটা ধরে প্রহর।

“একটা ধন্যবাদ তো পেতে পারি আপনার কাছে এই অধম,কাজলচোখী।”

“আপনি আমাকে আর কখনো এই নামে ডাকবেন না।”

“আমার হৃদয়ের খরায় বৃষ্টি হয়ে নাই ই নামলেন কিন্তু আপনাকে এই নামে ডাকার অধিকার অন্তত কেড়ে নিবেন না।
শরীরের রক্তক্ষরন তো দেখা যায় কিন্তু হৃদয়ের রক্তক্ষরনের ক্ষত তা নিরাময়ের একমাত্র দাওয়াই তো ভালোবাসা।যা থেকে আপনি আমাকে বঞ্চিত করেছেন।
আপনি আমাকে ভালোবাসতে না পারেন আমাকে অন্তত আপনাকে ভালোবাসতে দিন।আমি না হয় আপনাকে ভালোবেসেই বাকি জীবন বেচে থাকবো।নিজের হাতে মারতে তো পারবেন না অন্তত বাচতে তো দিন কাজলচোখী।”

প্রহর এর চোখ ভরে আসে।ভালোবাসার অন্যরূপ সত্যিই বেদনা।ভালোবাসার পূর্নতায় তা স্বর্গসুখ আর অপূর্নতায় মৃত্যুর চেয়েও যন্ত্রণাদায়ক।

মানুষ কেনো ভালোবাসে?????

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here