#অদ্ভুত_প্রেমোমোহ_তুমি
#পর্বঃ২২
✍️ তাজরিয়ান খান তানভি
সময়ের গতি তার আপন বেগে চলতে থাকে।মানুষকে সময়ের সাথে মানিয়ে নিতে হয়।অদৃষ্টের কাছে হার মানে সবাই।তবুও বেচে থাকার লড়াই করতে হয়।
একান্ত প্রিয় মানুষ যখন মুখ ফিরিয়ে নেয় তখন জীবনকে মনে হয় মাঝি বিহীন নৌকার মতো।তীরে কি সে আদৌও ফিরবে???
নির্ধার এংগেজমেন্ট আজ সান্ধ্যঘটিকায়।প্রহর কে বিয়ের পর তেমন কিছু দেওয়াও হয়নি।তাই আজরাহান ওকে শপিং করতে নিয়ে যায়।আর এই প্রথম আজরাহান প্রহর কে নিজ ইচ্ছায় বাইরে নিয়ে যাচ্ছে।ওর খুশি আকাশ ছোঁয়া।
আজরাহান কোনো নামকরা শপিংমল নয়,একান্তই যতোটুকু ওর সাধ্য সেই অনুযায়ী একটা মার্কেটে নিয়ে যায়।নিজের সামর্থ্যের বেশি পাওয়া তার কস্মিনকালেও পছন্দ ছিল না।সারাজীবন ঘুরে ফিরে কাটানো আজরাহান আজ দায়িত্বশীল পুরুষে পরিণত হয়েছে।
জীবন বড়ই অদ্ভুত।আমরা যত তাকে হালকা করতে চাই ততই সে জটিল হয়ে আমাদের সামনে আসে।
সৃষ্টির শুরু থেকেই নারীদের চেয়ে পুরুষদের ক্ষমতা দিয়েছে বেশি।তাদের কে নারী জাতীর রক্ষাকবচ করে পাঠিয়েছে।কখনো বাবা হয়ে,কখনো ভাই আবার কখনো জীবনসঙ্গী হয়ে তারা তাদের প্রিয় মানুষের পাশে এসে দাড়ায়।
সন্ধ্যা পেরিয়ে আঁধার কালো রাতের মায়ায় জড়াচ্ছে।পুরোটা সময় প্রহর এক অন্য দুনিয়ায় ছিলো।তার রাহান ভাইয়া তাকে জীবনের সবচেয়ে খুশির দিন উপহার দিয়েছে।বন্দি পাখি যখন তার খাঁচা ভেঙে ওই নীল আকাশে পাড়ি জমালে যে স্বাধীনতার সুখ অনুভব করে প্রহর এর আজ তাই মনে হচ্ছে।কিন্তু দীর্ঘ বারো বছরে ও কখনো নিজেকে বন্দি মনে করেনি।কারন তার রাহান ভাইয়া তার সাথে আট বছর কথা না বললেও তার না বলা সব অব্যক্ত মনোঃকথা আজরাহান চোখের ইশারায় বুঝতে পারে।
শপিং শেষ করেই ফুটপাত দিয়ে হাটছে দুজন।আজরাহান ইচ্ছে করেই বাইক আনে নি।পাশাপাশি দু কদম একসাথে চলবে বলে।প্রহর আজরাহান এর হাত নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে ধরে রেখেছে।
মানুষ ব্যস্ত প্রানি।ব্যস্ততা তাকে যন্ত্রের মতো তৈরি করেছে।যতদিন তার ব্যাটারীর চার্জ আছে ততদিনের মধ্যেই তাকে তার সবকিছু গুছিয়ে নিতে হবে।
হালকা হালকা বাতাস বইলেও তার লেশমাত্র ঠান্ডা নয়।কেমন যেনো অস্থিরতায় ভরা পরিবেশ।মানুষ গাছ কেটে প্রকৃতি কে করছে উজাড় আর তাই প্রকৃতিও তার বদলা নিতে কার্পন্য করে না।বছরের ছয় ঋতু এখন বোঝা মুশকিল।প্রকৃতি তার উষ্ণতা ধরে রাখে অবিরত।
প্রহর ঘেমে একাকার।ঘামেরও যে একটা মিষ্টি গন্ধ হয় তা হয়তো প্রিয় মানুষগুলোই বুঝে।
“গরম লাগছে তোর??
“হুম।”
“আইসক্রীম খাবি??
প্রহর ওষ্ঠযুগল হালকা ছড়িয়ে মাথা ঝাকায়।
“দাড়া,আমি নিয়ে আসছি।”
আজরাহান প্রহর এর হাতে শপিং ব্যাগ গুলো দিয়ে একটু সামনে এগিয়ে যায়।ওরা যেখানে দাড়িয়ে ছিলো সেটাকে রিক্সা ষ্টেশন বললেও ভুল হবে না।অনেক রিক্সা ওয়ালা তাদের যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছে।আজরাহান গেলে প্রহর একটু খালি জায়গা দেখে গুটি মেরে দাঁড়ায়।
দুটো ছেলে এসে কিছুক্ষন ওর পাশে এসে দাঁড়ায়।এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে দেখতে থাকে ওকে।রিক্সা অনেক থাকায় প্রহর একটু খালি জায়গায় এসে দাড়ায়।ওদের দেখে প্রহর একটু ভয় পায়।হালকা সরে গিয়ে ফুটপাত এ উঠে দাড়ায়।ল্যাম্পপোস্টে সোডিয়ামের বাতি।সেখানে দাড়াতেই আরও স্পষ্ট হয় ওর মুখমন্ডল।ছেলেগুলো লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ওর দিকে।এমন পরিস্থিতি সামলানোর কোনো অভিজ্ঞতা তার নেই।কারন কখনো পড়তেই হয়নি।আজরাহান কখনো ওকে একা বাইরে যাওয়ার আনুমতি দিতো না আর রাতে তো একদম ই না।
দু হাতে ব্যাগ থাকায় ওড়না সামলানো দায়।বাতাসের ছন্দে সেটাও তার জায়গা থেকে সরে আসছে।অস্বস্তিকর পরিবেশ।প্রহর আবারো সরে দাড়ায়।দুই ল্যাম্পপোস্টের মাঝে গিয়ে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করে।ছেলেগুলো ভেবেছে হয়তো সাথে কেউ নেই আর নাহলে নির্জন জায়গায় দাড়ানো কোনো ব্রোথেল গার্ল হবে।ওরা এগিয়ে যায়।
“দেখে তো ইনটেক মনে হচ্ছে।ফার্স্ট টাইম নাকি??
প্রহর অপ্রস্তুত হয়।এমন প্রশ্নের উত্তর তার জানা নেই।তার নিঃশ্বাস তার রাহান ভাইয়া কে স্বরন করছে।ছেলেগুলো সবেই ওকে হাত লাগাতে গেলে আজরাহান হাওয়ার মতো এসে ঠাস করে এক চড় লাগায়।হাতাহাতির এক পর্যায়ে আরো কিছু মানুষ আসে।কিছুক্ষন ওদের মারার পর আজরাহান এর কথায় ছেড়ে দেওয়া হয়।
প্রহর ভীতসন্ত্রস্ত।কাঁপছে তার শরীর।আজরাহান ব্যাগ গুলো নিয়ে এক হাত দিয়ে ওর হাত ধরে।
“ভয় পাস না।আমি আছি তো।”
প্রহর একটা জোরে শ্বাস ফেলে যেনো এতোক্ষন ওর প্রানবায়ু কোনো পিঞ্জিরায় বন্দি ছিলো। ওরা কিছুক্ষন দাড়িয়ে একটা রিক্সায় চড়ে বসে।হঠাৎ কোলাহল শুরু হয়।সামনেই একটা অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে।অনেক লোক জড়ো হয়েছে।রিক্সাওয়ালা দাড়িয়ে আছেন ভীড় সরার অপেক্ষায়।আজরাহান প্রহর কে বসিয়ে সামনে এগিয়ে যায়।ভীড়ঠেলে সামনে গিয়ে দেখে যে ছেলে দুটো একটু আগে প্রহর এর সাথে অসভ্যতা করেছে তারা দুজন।শরীরের কিছুই অবশিষ্ট নেই।পুরো থেতলে গিয়েছে।আজরাহান বিবশ পায়ে বেরিয়ে আসে সেখান থেকে।
শুধু কাকতলীয়ভাবে এইসব হতে পারে না!!!
,
,
,
ঘরে এসেই কাউচে ধপাস করে বসে আজরাহান।নুরাইসা ওকে দেখে পানি নিয়ে আসে।ওর পাশেই বসে।
“তোমাকে এমন বিমর্ষ লাগছে কেনো??
“কিছু না।”
প্রহর কে ইশারা করে ঘরে যেতে।নুরাইসা চেপে বসে আজরাহান এর পাশে।ঘামে ভিজে আছে আজরাহান এর উজ্জ্বল শ্যামদেশ।অনেকদিন হয়েছে ও আজরাহান কে ছুয়ে দেখেনা।ওড়নার একপাশ নিয়ে ওর মুখে স্পর্শ করাতে গেলেই আজরাহান হাত ধরে।
“এইসবের প্রয়োজন নেই নুরাইসা।”
“পর করে দিলে??
“আপন কে কখনো পর করা যায় নুরাজান??”
নুরাইসা স্মিত ঠোঁটে মৃদু হাসে।
“অতীত হলো বিষাক্ত সাপ।ঠিক সময় তার বিষ দাঁত ভেঙে না দিলে সুযোগ খুজে দংশনের জন্য।”
আজরাহান একটা প্যাকেট দেয় ওর হাতে।
“এখানে একটা শাড়ি আছে।তোমার তো শাড়ি পছন্দ।”
একটা মিষ্টি রঙের জামদানি যার পাড়ে হালকা সবুজের স্পর্শ।
“আর এইগুলো ভাবি আর সূর্য্যির।
ভাবি কোথায়??
“বিকেল থেকে আপুর মাথা ধরেছে।একটু আগেই ঔষধ খেয়ে শুয়েছে।”
“আচ্ছা।”
“এতোসময় কি করলি??
সানায়া সাথে করে নিয়ে আসে কুহেলিকা কে।
আজরাহান ওর মা কেও একটা প্যাকেট দেয় আর সানায়া কেও।
“তোর জন্য কিছু আনলি না??
“আমার জন্য তো তোমরা আছো।আর কিছু চাই না আমার।”
সানায়া মুখ বাকিয়ে বলে—
“তা লাগবে কেনো,এখন তো তার সবকিছু তার বউ এর জন্য।”
“আমি তোমাকে আগেই বলেছি আপু এইসব এর মধ্যে প্রহর কে একদম টানবে না।
অন্তত এখন তো মেয়ে টাকে শান্তিতে বাচতে দাও।”
“ছেলেটা আমার এতো পাগল কেনো ওই মেয়ের জন্য!!!
ছোটোবেলা থেকে এতো আলাদা করে রেখেছি তারপরও!!!
,
,
ঘরে এসে নীল রঙের চুড়ি হাত ভর্তি করে প্রহর ঝনঝন আওয়াজ তোলে।আয়নার সামনে দাড়িয়ে দেখতে থাকে।আজরাহান ভিতরে এলে হাসি হাসি মুখ নিয়ে বলে—
“আমাকে কেমন লাগছে রাহান ভাইয়া??
দেখো চুড়ি গুলো কি সুন্দর??
“তোর সাথে মারশিয়াদ এর কথা হয়েছে আর??
প্রহর অবাক পানে তাকায়।তার মাথায় ভো ভো করছে।এ কেমন প্রশ্ন??
“নাহ।”
“জলদি তৈরি হয়ে নে।দেরি হয়ে যাবে আমাদের।”
প্রহর ওয়াশরুমে যায়।এখন ওরা নির্ধার এংগেজমেন্ট পার্টিতে যাবে।আজরাহান ব্যালকনিতে যায়।পকেটে দু হাত পুরে আকাশের দিকে তাকায়।তারকারাজি যেনো মুচকি হেসে ওকে ডাকছে।তাহলে কি সত্যিই সময় হয়ে এসেছে?????
,
,
,
আলোয় ঝলমলে কনভেনশন হল।হরেক রকম বাতি জ্বলছে।আজরাহান,নুরাইসা,প্রহর মাত্রই এসেছে।গাঢ় নীল রঙের কামিজ পড়েছে প্রহর।শাড়ি ছিলো না তার।চোখে কাজল আজরাহান পছন্দ করে না।সে চায় না তার প্রহরিনীর ওই নীল মায়াবী চোখে সে ছাড়া আর কেউ বসত করুক।নুরাইসা আজরাহান এর দেওয়া শাড়ীটা পড়ে এসেছে।আজরাহান অ্যাশ কালারের পাঞ্জাবি পড়েছ।জামা কাপড় নিয়ে বাড়াবাড়ি রকমের ঝামেলা ওর পছন্দ নয়।ফোল্ড করা হাতায় শ্যামবর্নের এই সুদর্শন পুরুষও তার ব্যক্তিত্ব আর বাচনভঙ্গিতে সাধারনের মাঝেও অসাধারন।
স্টেজ সাজানো হয়েছে অর্কিড দিয়ে।ব্যাপারটা অড হলেও নির্ধার অর্কিড পছন্দ।যার জন্য এতো আয়োজন তার হ্যাপিনেস এর তো একটা ব্যাপার আছে।
এতো মানুষের ভীড়ে আনকমপোর্টটেবল প্রহর।এক মুহূর্তের জন্যও আজরাহান এর হাত ছাড়ে না।
নুরাইসাও লেপ্টে আছে।প্রহর এর চোখ যায় স্টেজ এর পাশে কাউচে নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকা মারশিয়াদ এর দিকে।ভিতরে সাদা আর উপরে গাড় নীল রঙের ব্লেজার পড়েছে।মারশিয়াদ ভাবান্তর।ওর দৃষ্টিকোণ সম্মুখে।কিছুক্ষন পর ইনশিরাহ এসে বসে মারশিয়াদ এর পাশে।সেম রঙের ড্রেস তার গায়ে।গাঢ় নীল রঙের ফুল স্লেভ গাউন।অসম্ভব সুন্দরী লাগছে।দুজন কে দেখে চোখ বন্ধ করে যে কেউ বলবে তারা নিউলি ম্যারিড কাপল।মারশিয়াদ এর হাত নিজের হাতে মুষ্টিবদ্ধ করে ইনশিরাহ।
আশফিক কে এগিয়ে আসতে দেখে আজরাহান ওর সাথে কথা বলতে বলতে সামনে এগিয়ে যায়।নুরাইসাও ইনশিরাহ কে দেখে ওর দিকে আগায়।প্রহর ঠায় দাড়িয়ে আছে।মারশিয়াদ এর দিকে না তাকিয়ে যতবারই অন্যদিকে ফেরার চেষ্টা করে ততবারই ওকে বাধ্য হয়ে তাকাতেই হয়।
কথায় আছে–“নিষিদ্ধ জিনিস মানুষকে আকৃষ্ট করে বেশি”।
মারশিয়াদ হালকা ঘার ঘুরিয়ে তাকায় প্রহর এর দিকে।ওর চোখে চোখ পড়তেই এক অজানা ঝড় কাপিয়ে দেয় প্রহর কে।লোকটার সেদিনকার পাগলামি প্রহর আজও ভুলে নি।কি করে কোনো মানুষ কারো চোখের প্রেমে পড়তে পারে???
প্রহর নরম পায়ে এগিয়ে যায় স্টেজে।অফ হোয়াইট রঙের ল্যাহেঙ্গা তে আরো বেশি মিষ্টি লাগছে নির্ধা কে।শিহরন ও সেইম রঙ।প্রহর কথা বলছে নির্ধার সাথে।কিন্তু ওর বেহায়া নয়নতরী বারবার মারশিয়াদ এর দিকেই পথভ্রষ্ট হয়।মারশিয়াদ কাউচে হেলান দিয়ে বসে।
“হটিবয় কি দেখছো এমন করে??
“আমার কাজলচোখী কে।”
কাজলচোখী শুনতেই ইনশিরাহ এর রক্ত হীম হয়ে আসে।তার পাজরের হাড় যেনো একে অপরের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত।
“কোথায় সে??
“সামনে দেখো।”
ইনশিরাহ সামনে অনেক কেই দেখে।কিন্তু কে মারশিয়াদ এর কাজলচোখী তা দৃষ্টগোচর হয় না।
“এদের মধ্যে কে তোমার কাজলচোখী??
“যার নীল নয়নের এর এক উষ্ণ মনোহারিনী চাহনি আমার পানে।”
ইনশিরাহ আবার সামনে তাকায়।খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে।নির্ধার দিকে তাকাতেই দেখে প্রহর কথার ফাকে ফাকে আড়দৃষ্টি নিক্ষিপ্ত করে মারশিয়াদ এর দিকে।
“দেখলে তাকে??
“হুম।
কিন্তু তাকে ভালোবাসার কারন??
“মেঘ কেনো আকাশ কে ভালোবাসে জানো??কারণ তার জন্মই হয়েছে আকাশের বুক চিরে বৃষ্টি কে ধরনীর বুকে স্থাপন করতে।
ঠিক সেভাবে আমার জন্মও শুধু আমার কাজলচোখীর ওই চোখের মায়ায় নিজেকে বিসর্জন দিতে।
আমার বিসর্জন আমি দিয়েছি।”
মারশিয়াদ উঠে যায়। একজন গ্ল্যামার বয় কি করে একজন অতি সাধারন নারীর প্রেমে পড়তে পারে??
নির্ধার হাত থেকে কোল্ড ড্রিংস পড়ে ড্রেস নষ্ট হয়ে যায় প্রহর এর।নির্ধা ওকে বলে ওর ঘরেই বিছানার উপর শাড়ি রাখা আছে সেগুলো পড়ে নিতে।প্রহর তাই করে।কালো শাড়ী,কালো চুড়ি আর চোখে কাজল পড়ে যেই রুম থেকে বের হবে ওমনেই সামনে এসে দাড়ায় আজরাহান।
“এগুলো কোথায় পেলি??
প্রহর সব বললে আজরাহান ওকে বলে চেঞ্জ করে আসতে।
“চেঞ্জ করবো কি করে??
আমি কি কাপড় নিয়ে এসেছি নাকি??
আজরাহান কথা বাড়ায় না।ওর হাত ধরে এক কোনায় নিয়ে যায়।
“এখানে বস।কোথাও যাবি না।”
আজরাহান নির্ধার কাছে গিয়ে বলে–
“আমি কি তোমার কোনো ক্ষতি করেছি??
নির্ধা নিরুত্তাপভাবে তাকায়।
“প্লিজ,,প্রহর কে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিও না।”
“এইসব কি বলছো তুমি??
শিহরণ এর করা প্রশ্নে শুকনো ঢোক গিলে নির্ধা।
“কিছু না।
এইটার আমার আর আমার ছোট বোনের ব্যাপার।আপনার নিশ্চয় উচিত হবে না তার মাঝখানে আসার।”
কিছুক্ষনের মধ্যে ফাংশন শুরু হয়।ওদের রিং বদল হয়।এক খুশি খুশি আমেজ পুরো কনভেনশনে।
ইনশিরাহ প্রখরভাবে তাকিয়ে আছে প্রহর এর দিকে।কি আছে ওই মেয়ের মধ্যে যা ওর মধ্যে নেই??
সবকিছুই ভালোভাবে সম্পন্ন হয়।শিহরণ আর ওর পিচ্চি এক সুতোয় বাধা পড়ে।শিহরণ অনুরোধ করে মারশিয়াদ কে গান গাওয়ার জন্য।কিন্তু সে রাজী নয়।ইনশিরাহ,নির্ধা সবাই ইনশিস্ট করলে শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়।
রাতের সব তারা আছে,দিনের গভীরে
বুকের মাঝে মন যেখানে রাখবো তোকে সেখানে
তুই কি আমার হবি রে….?? ।।
মন বাড়িয়ে,আছি দাড়িয়ে
তোর হৃদয়ে যাবো হারিয়ে
তুই জীবন মরন সবি রে…..
তুই কি আমার হবি রে….??? ।।
গান শেষে সোজা বাইরে চলে যায় মারশিয়াদ।তার পক্ষে নিজেকে আর কন্ট্রোল করা সম্ভব না।
কোনেই বসে ছিল আজরাহান আর প্রহর।এক অস্থিরতায় ভুগছে সে।কেনো না চাইতেই তার অবাধ্য মন বারবার মারশিয়াদ এর দিকে তাকে টানছে।মারশিয়াদ এর বলা কথাগুলো বারবার তার কানের সামনে তবলার মতো বেঝে চলছে।
“রাহান ভাইয়া,আমার ভালোলাগছে না।”
“শরীর খারাপ লাগছে??
“উহু।চলুন চলে যায়।”
প্রহর কে কেমন ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে।খায় ও নি সে।
বাইরে এসে নিজের গাড়িতে একটা পাঞ্চ করে মারশিয়াদ।তার মনে হচ্ছে কেউ তার কলিজা ছিড়ে নিচ্ছে।তাকে ছেড়ে তার আপন মানুষ ধীরে ধীরে গভীর সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে।কোথাও একটা না পাওয়ার চিন চিনে ব্যথা।যা পৃথিবীর কোনো ঔষধে ঠিক হবে না।
“ভালোবাসা এক অদ্ভুত মায়া।যখন আপনি তাকে খুব করে চাইবেন সে পালিয়ে বেড়াবে,আর যখন আপনি তাকে দূরে সরাতে চাইবেন সে আপনাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিবে।”
মারশিয়াদ চায় তার কাজলচোখী ভালো থাকুক,সুখে থাকুক।কিন্তু সে কেনো ভালো থাকতে পারে না??
মারশিয়াদ এর গাড়ির কিছুটা দূরে একটা কালো রঙের গাড়ি দাড়ানো।যার কোনো হেলদোল নেই।কনভেনশন হলের বাতির আলোয় আবছা দেখা যায়।মারশিয়াদ সেদিকে পা বাড়াতেই হল থেকে সবাই বেড়িয়ে আসে।
রাত প্রায় একটা,
গাড়ি পাওয়া দুষ্কর।তাই সিদ্ধান্ত হলো শিহরণ নিজের আর নির্ধাদের পরিবার কে পৌছে দেবে।আর মারশিয়াদ আজরাহান দের।গাড়িতে উঠে বসে ইনশিরাহ।ওর মেজাজও বেজায় চটে আছে।ফ্রন্ট সিটে বসে হাপাতে থাকে।অনেকদিন ড্রাগ নেওয়া হয়না।আজ তার প্রয়োজন।এতোবড় ধাক্কা সে সহ্য করতে পারে নি।
নুরাইসাও ভিতরে গিয়ে বসে।প্রহর গাড়ির সামনেই দাড়িয়ে আছে।আজরাহান কোনো কারনবশত হলের ভিতরেই রয়ে গেছে।
“ভিতরে গিয়ে বসুন কাজলচোখী।”
“আপনাকে না বলেছি আমাকে এইনামে ডাকবেন না??
“নিজের করে না হয় আপনাকে না ই পেলাম অন্তত আমার নামটুকু তো থাকতে দিন।”
প্রহর প্রতিত্ত্যুর করে না।আজ চাঁদের জোসনা জেগেছে।ঠিকরে পড়ছে তার আলো প্রহর এর গায়ে।মারশিয়াদ চোখ ফেরায়।এই আলোয় তার চোখ জ্বলসে যাবে।আজরাহান বেরিয়ে আসে।
“কোথায় ছিলেন আপনি??
“ওয়াশরুমে।”
আজরাহান এর হঠাৎ করেই বমি হওয়া শুরু হয়।মাথাও ঝিমঝিম করছে।মুখটাও মলিন।পকেট হাতিয়ে মোবাইল না পেয়ে আবার ভিতরে ছুট লাগায়।
“কাজলচোখী,ভিতরে গিয়ে বসুন।ভয় পাবেন না আপনার রাহান ভাইয়া কে না নিয়ে আমি যাচ্ছি না।”
মারশিয়াদ এর চোখ যায় পিছনের সেই গাড়িতে।তড়িৎ গতিতে বলে—
“কাজলচোখী,ভিতরে যান।ভিতরে যান বলছি।”
এর মধ্যেই দুটো গান ফায়ারিং হয়।উপস্থিত সবাই ভয় পেয়ে যায়।বাতাসে তখন বারুদের বিকট গন্ধ উড়ে বেড়াচ্ছে।
চলবে,,,
(বিঃদ্রঃ আচ্ছা আমি কি কমেডি গল্প লিখেছি??
তাহলে হা হা রিয়েক্ট কেনো?অবশ্য ব্যবহার ই বংশের পরিচয়।সমস্যা নেই কাল থেকে ওই গ্রুপে আর পোস্ট করবো না।ধন্যবাদ।)