অদ্ভুত প্রেমোমোহ তুমি পর্বঃ২৩

0
1824

#অদ্ভুত_প্রেমোমোহ_তুমি
#পর্বঃ২৩
✍️ তাজরিয়ান খান তানভি

“ভাগ্য হলো শুকনো পাতার মতো।দমকা হাওয়ায় পট পট করে ঝড়ে পড়ে।”

পাশেই এক কাঁচের জার এ এসিড রাখা।মারশিয়াদ এর নিগূঢ় দৃষ্টি সেদিকে।একটু পরেই সেখানে হাত ডুবাবে সে।শাস্তি!!!

সেদিন পিছনের ওই গাড়ি থেকে কেউ একজন শুট করে করে প্রহর কে।মারশিয়াদ ডান হাত দিয়ে প্রহর এক ঝটকায় ফেলে নিজের কোমড় থেকে গান বের করে শুট করে।অজানা ব্যক্তি করা গুলি মারশিয়াদ এর বাম কাঁধে গিয়ে লাগে।অবশ্য ওর শুট করা গুলিও মিস হয়নি।একদম ওই ব্যক্তির কপালে গিয়ে লাগে।

মারশিয়াদ প্রফেশনাল শুটার।আজ পর্যন্ত ওর কোনো টার্গেট মিস করেনি।তাহলে আজ কি করে হবে!!!

মারশিয়াদ এর হেচকা টানে পড়ে যায় প্রহর।হালকা করে হাটু তে ব্যথা পায়।আশফিক আর শিহরন চেষ্টা করে গাড়িটি কে ধরার কিন্তু তার আগেই সেটা গায়েব।

মারশিয়াদ দুদিন হসপিটালে ছিলো।আজরাহান আর আশফিক দুবার এসেছিল ওকে দেখতে।হসপিটাল মারশিয়াদ এর একদম ই অসহ্যকর লাগে।বাড়ি ফিরেছে সে।

পাশে থাকা এসিডে বামহাত ডুবাতে গেলেই শিহরণ তা ধরে নেয়।

“পাগল হয়েগেছিস??
কি করছিস তুই??

মারশিয়াদ হাত ছাড়িয় নেয়।

“সাজা।”

“কিসের সাজা??

“আমার কাজলচোখী কে স্পর্শ করার সাজা।
আমার তো অধিকার নেই।তাহলে কেনো আমি তাকে স্পর্শ করবো?

“এইসব তুই কি বলছিস??

“আমার স্পর্শে তার কষ্ট হয়েছে।কষ্ট হয়েছে তার।তার উপর অধিকার শুধু তার রাহান ভাইয়ার।
এই হাত দিয়ে আমি তাকে স্পর্শ করেছি।তার সাজা তো তাকে পেতেই হবে।”

শিহরন এসিডের জার টা সরিয়ে নেয়।মারশিয়াদ এর পাগলামো তার অজানা নয়।

মারশিয়াদ হেলান দেয়।অজান কষ্ট মুছড়ে দিচ্ছে তার আত্না কে।এমন তো সে কখনো চায়।মারশিয়াদ চোখ বন্ধ করে।ওর বুকের উঠানামা বলে দিচ্ছে ওর মনের কালবৈশাখী ঝড়ের প্রভাব কতটা ধ্বংসস্তুব এ পরিনত করেছে তাকে।

“মারশিয়াদ শান্ত হ।”

“আমি শান্ত,তাই ওরা এখনো বেঁচে আছে।এইবার আর হবে না।শুরুটা ওরা করেছে শেষ করবো আমি।”

“তুই এইসব বন্ধ কর।”

“নাহ।ওরা আমার কাজলচোখী কে মারতে চেয়েছে।ওদের কাউকে আমি ছাড়বো না।”

“ওরা প্রহর কে কেনো মারতে চাইবে??

“অরল্যান্ডো আমার দূর্বলতা খুজে পেয়েছে।ও আমার শরীর কে নয় আমার আত্না কে শেষ করতে চায়।”

“কি করবি তুই???

“শেষ করে দিবো সবাই কে আমি।আমার কাজলচোখী চোখের জলের যে কারন হবে আমি বাচতে দিবো না।”

“তাহলে আজরাহান??

“আজ থেকে আমার কাজলচোখী আর তার প্রান এর সব সুরক্ষার দায়িত্ব আমার।আমি থাকতে ওদের কিছুই হতে দিবো না।”

শিহরন হালকা হেসে বলে—

“তোর তো খুশি হওয়া উচিত।ওরা যদি আজরাহান কে মেরে ফেলে তাহলে তোর পথ তো ক্লিয়ার।”

মারশিয়াদ শিহরন এর কলার চেপে বলে–

“কি বলতে চাস তুই??
ওদের দিকে যে ফিরে তাকাবে তার চোখ আমি তুলে নিবো।”

মারশিয়াদ উঠে চলে যেতে চাইলে শিহরণ বলে—

“কোথায় যাচ্ছিস??

“এতো কষ্ট করলো ওরা এবার ওদের আপ্যায়ন করতে হবে তো।”

“কেনো করশিস এইসব??
ভুলে যা ওকে।”

“এই জীবনে আমি চাইলেও ওকে ভুলতে পারবো না।
হয়তো আমার চেয়ে বেশি আজরাহান ওকে ভাগ্যবিধাতার কাছে চেয়েছে তাই তার ভাগ্যেই তাকে লিখে দিয়েছে।”

“তাহলে তুই কি করবি??

“আমি আর বিসর্জন দিয়েছি।
দশদিন ভক্তিভরে পূজা করার পর সনাতন ধর্মালম্বীরা তাদের দেবী কে বিসর্জন দেয় কিন্তু তার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিজের মধ্যে ধারন করে।ঠিক সেভাবে আমিও আমার বিসর্জন দিয়েছি।হয় সে আমাকে মনে রাখবে না হয় স্মৃতির অতলে হারিয়ে যাবো।”

“মারশিয়াদদদ,,,

“আমি এই জন্ম থেকে তাকে উপরওয়ালার কাছে চাইবো।যেনো পরজন্মে সে শুধু আমার হয়।”

মারশিয়াদ সিড়ি বেয়ে নেমে যায়।শিহরণ কয়েকবার তাকে ডাকে।রক্তের নেশা জেগেছে মারশিয়াদ এর।এ থামবার নয়।

শিহরন কাউকে কল করে–

“মারশিয়াদ বের হয়েছে।ওর গায়ে যেনো একটা আঁচড়ও না লাগে।”
,
,
,
মায়ের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে আজরাহান।পৃথিবীতে নিঃস্বার্থভাবে কেউ ভালোবেসে থাকে তা হলো জন্মদাত্রী মা।নারী খারাপ হতে পারে কিন্তু মা কখনো খারাপ হয় না।

“আজ অফিসে যাস নি কেনো??

“শরীর টা ভালো লাগছে না মা।ছুটি নিয়েছি।”

“মাথাব্যথাটা বেড়েছে??

“হুম।”

“তোকে না বলেছি ডক্টর কাছে যেতে যখনি খারাপ লাগবে।কেনো শুনিস না কথা??

“যাবো,মা।”

কুহেলিকা পরম আদরে ছেলের মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে।আজরাহান পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে আছে।

“এই মেয়েটার জন্যই সব হয়েছে।একদম ওর কাছে যাবি না।ওই অলক্ষী কে কেনো বিয়ে করলি তুই??

“মা,এতে ওর কি দোষ বলো??

“সব দোষ ওই অলক্ষী।আমার সোনার টুকরো ছেলেটার এই অবস্থা ওই অলক্ষীর জন্যই হয়েছে।নিজের বাবা মাকে খেয়েছে আমার ছেলেটাকে ও ছাড়েনি।”

“মা,চুপ করো।এতে ওর কোনো দোষ নেই।”

প্রহর যখন ক্লাস ফাইভে পড়ে তখন ওর ক্লাসের এক মেয়ে ওর একটা কলম নিয়ে যায় যা আজরাহান ওর জন্মদিনে দেয়।অনেকবার চাইলেও যখন দেয়না অবুঝ প্রহর রাগে একটা ধাক্কা মারে মেয়ে টাকে।মেয়েটা ছিটকে পড়ে বেঞ্চে এর কোনায় লেগে তার মাথা কেটে যায়।মেয়েটার বড় ভাই উঠতি বয়সের বখাটে নওজওয়ান।প্রহর কে রাস্তায় আটকালে বাধা দেয় আজরাহান।চার পাঁচ জনের সাথে আজরাহান পেরে উঠেনি।মাথায় আঘাত লেগে গল গল করে রক্ত পড়তে থাকে।হসপিটাল নিয়ে গেলে স্টীচ করে দেওয়া হয়।প্রায় একমাস লাগে ওর ঠিক হতে।কিন্তু একদিন রাতে প্রচন্ড মাথাব্যথা শুরু হলে ওকে হসপিটাল নিয়ে যাওয়া হয়।সিটি স্ক্যান করে দেখা যায় মাথায় আঘাত করার ফলে ওর ব্রেইনের এক জায়গায় রক্ত জমাট বেধে যায়।তাই মাঝে মাঝে ওর স্নায়ু দূর্বল হয়ে পড়ে।আর তখনি প্রচন্ড মাথাব্যথা শুরু হয়।ডক্টর বলেছে অপারেশনে ওর বাঁচার সম্ভাবনা শতকরা বিশ ভাগ।তাই কেউ রাজি হয়েও হয় না।আর আজরাহান নিজেও চায় না।

“আপনজন জীবনের ওই জায়গা জুড়ে থাকে যার শূন্যতা পৃথিবীর রত্নগর্ভ দিয়েও পূরন করা সম্ভব নয়।”

প্রহর কে স্কুল থেকে আনতে গিয়ে অ্যাকসিডেন্ট এ ওর বাবা মারা যায়।পতিবিয়োগে ওর মা সে শোক সহ্য করতে পারে নি।কিছুদিন পর সেও মারা যায়।সানোয়ার আহমেদ বন্ধু ছিলো।ওদের তেমন আত্নীয় ছিলো না বলে সে প্রহর কে নিজের সাথে নিয়ে আসে।কুহেলিকা প্রথমে মেনে নিলেও আশেপাশের মানুষের কথায় একসময় অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে।আর আজরাহান এর সাথে এই ঘটনা ঘটার পর একদম ই প্রহর কে ওর আশেপাশে সহ্য করতে পারে না।

“দোষ নেই!!
ওই মেয়ে যেখানে যাবে সেখানের সব শেষ করে দিবে।”

কুহেলিকা ছেলের মুখ হাত বুলিয়ে আদরমাখা কন্ঠে বলে—

“তোর তো ওর পড়াশুনা নিয়ে চিন্তা।আমি তোর বাবাকে বলে ওর পড়ালেখার সব খরচের ব্যবস্থা করবো।ওর সব ইচ্ছা পূরন হবে।তুই ওকে ডিবোর্স দিয়ে দে।”

“আমাকে কি ভাইয়ার মতো কাপুরুষ ভেবেছো??

“ওর কথা বাদ দে।
তোর কিছু হলে তোর মা বাচবে না।”

আজরাহান উঠে বসে।কুহেলিকার দু হাত নিয়ে তাতে চুমু খায়।

“যতদিন আমার কুইন এর দোয়া আমার সাথে আছে আমার কিছুই হবে না।”

“কেনো ছেড়ে দিস না ওই মেয়ে কে??

“ওকে ছাড়া আমি বাঁচবো না।”

“কেনো পাগলামি করছিস??

“পাগলামি না কুইন।
প্রহর কে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না মা।”

“অতীত আমাদের জীবনের সবচেয়ে বিশ্রী ভয়ংকর সত্য।বর্তমান আর ভবিষ্যৎ কে কলুষিত করতে যার এক ফোটাই যথেষ্ট।যা আয়নার প্রতিবিম্বের মতো সববময় আমাদের সামনে এসে তার অস্তিত্ব জানান দেয়।”

সিড়ির কোনায় দাড়িয়ে সব শুনেছে প্রহর।ঠিকই তো বলছে ওর ছোট মা।ওর জন্যই ওর মা বাবা মারা গিয়েছে।ওর রাহান ভাইয়া মৃত্যুসম যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছে।সত্যিই আমি অভিশপ্ত।

ঘরে এসে অঝোড়ে কেঁদে যাচ্ছে প্রহর।আজরাহান নিচে বসে আজলায় করে ওর চোখের পানি নিচ্ছে।

“এতো পানি কেনো তোর চোখে??
আমাকে ডুবিয়ে দিবি নাকি??

“কেনো বিয়ে করেছেন আমাকে??
আমি তো অভিশপ্ত।আমার জন্যই সব নষ্ট হয়ে যায়।আমি ভালো না,একটুও ভালো না।”

কান্নার আওয়াজ বাড়ায় প্রহর।

আজরাহান ওর পাশে বসে কাঁধে হেলান দেয়।

“তাহলে বল,,আমি তো ভালা না ভালা লইয়াই থাইকো।”

প্রহর এর কান্না কমে আসে।

“কাঁদিস না প্রহরিনী।তোকে এতো সহজে ছেড়ে আমি কোথাও যাচ্ছি না।”

“আমি আপনাকে কোথাও যেতে দিবো না।”

“আপনি যদি সত্যি না হয়ে মিথ্যে হন,আমার কল্পনা বা স্বপ্ন হন,তাহলে বিষয়টা খুব বিচ্ছিরি হবে।খুব।
আপনিবিহীন পৃথিবীটা কি ভীষন জঘন্য।”
—– সাদাত হোসাইন

“আমি মরে গেলেও আমার ছায়া কখনো তোকে ছাড়বেনা।সবসময় তোর পাশে থাকবে।”

“চাইনা আপনার ছায়া,চাই না।আমার আপনাকে চাই।শুধু আপনাকে।”

“আমি তো তোরই প্রহরিনী।আমি আর আমার ছায়া কারো ভালোবাসাই কখনো তোর জন্য কমবে না।
আমি বাচলেও তোর মরলেও তোর।”

আজরাহান কে জড়িয়ে প্রহর আরও কাঁদতে থাকে।
,
,
,
অতীত ভোলা কঠিন।তাকে এড়িয়ে যেতে হয়।কিন্তু বারবার যখন সামনে এসে দাড়ায় তখন তার মুখোমুখি হওয়া একান্ত প্রয়োজন।

পা বেধে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে দুজন কে।হাতে মোটা এক লাঠি নিয়ে তাদের চারপাশেই ঘুরছে মারশিয়াদ।একটা হাড়ও আস্ত রাখে নি।

“বল কে পাঠিয়েছে তোদের??
বলতেই ধরাম করে এক বারি দেয়।

“জানি না।”

“এক ঘন্টা যাবৎ তো বলেই যাচ্ছিস।
তোরা কি ভেবেছিস আমি তোদের ছেড়ে দিবো??

“আমরা তাকে চিনি না।সত্যি বলছি।আমাদের শুধু আপনার উপর নজর রাখতে বলা হয়েছে।”

“তাহলে ও কেনো শুট করলো।বললললল

“জানি না।
ওর সাথে তাদের কি কথা হয়েছে আমরা বলতে পারবো না।ও যে শুট করে দিবে আমরা ভাবতেও পারি নি।”

“ওকে চিনিস কি করে??

“ওকে তারাই পাঠিয়েছে আমাদের সাথে থাকার জন্য।”

মারশিয়াদ আওয়াজ করে হেসে উঠে।দুটো কে আচ্ছামত আবার মারে।

“ও একজন হিস্ট্রিশীটার।আর তোরা ওকে চিনিস না।
হাউ ফানি!!!
কে নজর রাখতে বলেছে বল??

ওরা ঝুলন্ত অবস্থায় একে অপরের দিকে তাকায়।

“তাকিয়ে লাভ নেই। মরতে তোদের হবেই।মরার আগে একটা ভালো কাজ তো করে যা।”

মারশিয়াদ আবারও মারে ওদের।সহ্য করতে না ফেরে ওরা একটা নাম্বার দেয় যার মাধ্যমে ওরা সেই ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করে।

ওদের প্রয়োজন শেষ।মারশিয়াদ ওদের হাতের রগ কেটে দের।তির তির করে বইতে শুরু করে রক্তের প্রবাহিত ঝর্না।

“আমার কাজলচোখীর কোনো ক্ষতি আমি হতে দিবো না।”

“হারানোর ভয় আছে জেনোও কেনো করো অভিমান??
ভালোবেসে যেতেই হবে এই নিয়ম,চাইতে নেই প্রতিদান।”
—-কিঙ্কর আহসান

“আমি আপনার কাছে কোনো প্রতিদান চাইবো না কাজলচোখী।আপনার রাহান ভাইয়া আপনার প্রান এর কোনো ক্ষতিও আমি হতে দিবো না।আপনার চোখের জল আমি সইতে পারবো না।

“আমি নিজেকে লুকোবো আঁধারে,অন্ধকার মায়ায়
আপনার জীবন ভরে থাকুক চাঁদের জোসনায়।”

এই জনমে আপনি আমার না হন,পরজন্মে হবেন।সেই অপেক্ষায় আমি থাকবো।আমি ফিরবো আপনার জন্য কাজলচোখী,ফিরবো আপনার জন্য।”

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here