অদ্ভুত প্রেমোমোহ তুমি পর্বঃ২৫

0
1806

#অদ্ভুত_প্রেমোমোহ_তুমি
#পর্বঃ২৫
✍️ তাজরিয়ান খান তানভি

ভাগ্যের কাছে সবাইকেই হার মানতে হয়।কখনো তা পূর্নতা এনে দেয়,কখনো অপূর্নতা।

ক্লিপ বোর্ডের লাগানো ক্যানভাস এ কিছু একটা আঁকছে মারশিয়াদ।চোখে তার অদ্ভুত অনুভুতি।

“কেমন আছেন??
মিষ্টি একটা মেয়েলী কন্ঠে চোখ তুলে তাকায় মারশিয়াদ।সামনেই দাড়ানো নির্ধা।মারশিয়াদ হালকা করে হাসে।

“জাস্ট টু মিনিটস।তুমি ডিভান এ বসো।”

মারশিয়াদ তার কাজটুকু শেষ করে একটা কাপড়ে হাত ভালো করে মুছে নেয়।গালে,হাতে এমনকি শার্টেও রঙ লেগে আছে।

“কেমন আছো নির্ধা??

“ভালো।
আপনি কেমন আছেন??

“ভালো।”

“আপনার হাত??

“সেটাও।”

“সরি।আসলে সেদিন,,

“চিন্তা করো না।তোমার বান্ধবীর কোনো ক্ষতি আমি হতে দিবো না।”

“জানি।
কিন্তু আমি তা বলতে চাই নি।আসলে সেদিন শাড়ীর ব্যপারটা।”

“বুঝতে পেরেছি।
তার জন্য আমি সরি।আসলে দোষ আমার ছিলো।তাকে এভাবে দেখার তীব্র বাসনা আমাকে জ্ঞানশূন্য করে ফেলেছিলো।আর তার মধ্যে তোমাকেও জড়িয়ে নিলাম।তোমার হয়ে না হয় উপরওয়ালার কাছে আমি ক্ষমা চেয়ে নিবো।”

“প্রহর আজরাহান ভাইয়া কে খুব ভালোবাসে।”

“আই নো।
ওকে,সেসব বাদ দাও।হঠাৎ এখানে আসার কারণ??

“মা,আপনাদের ইনভাইট করেছে।বিয়ের ব্যপারে কথা বলবে।”

“আমি আর শিহরণ??

“হুম।”

“আর কেউ??

নির্ধা বুঝতে পারে মারশিয়াদ আসলে কি জানতে চায়।

“আজরাহান ভাইয়া আর প্রহর ও আসবে।”

কেনো যেনো নির্ধার মনে হলো প্রহর এর কথা শুনে মারশিয়াদ এর চেহারা নিরুত্তেজ।

“আশফিক কে পাঠালে পারতে আর নয় কল করে দিতে।এতো কষ্ট করে এখানে এলে।
আর তোমাকে একা আসতে দিলো??

“একা আসি নি।ভাইয়া সাথে এসেছে।”

“ভিতরে এলো না যে??

“বলেছি,সে আসবে না।”

“তার সাথে আবার আমার কোন জনমের শত্রুতা।”

“জানি না।
আসবেন তো??

“হোয়াই নট?
অবশ্যই।”

নির্ধা উঠে দাড়ায়।

“আজ তাহলে আসি।”

“ওকে।”

“একটা কথা বলবো??

“বলো।”

“ছবি টা দেখতে পারি??

“হুম।”

নির্ধা ক্যানভাস এর সামনে গিয়ে দেখে সেখান প্রহর হাস্যজ্জ্বল চেহারা আঁকা।কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় যে কাজলচোখের প্রেমে এতোটা মত্ত মারশিয়াদ সেই নীলনয়ন আজ কাজলবিহীন।

“প্রহর এর কাজলচোখ তো আপনার সবচেয়ে প্রিয়।তাহলে,,,

“আমি তাকে মুক্তি দিয়েছি।”

“আপনি ওকে ভুলতে পারবেন??

“নিজের সত্তা কে কেউ ভুলতে পারে??

“তাহলে??

“আমি চাই সে সুখে থাকুক।

“শুধু কাছে পাওয়ার জন্য ভালোবাসা নয়,শুধু ভালোলাগার জন্য ভালোবাসা নয়,ভালোবাসা হলো নিজের সুখের বিসর্জন দিয়ে ভালোবাসার মানুষকে সুখে রাখার নামই ভালোবাসা।”

—-হুমায়ূন আহমেদ।

,
,
,
একটা কটকটা সবুজ রঙের পাঞ্জাবী পড়েছে আজরাহান।অগ্নিকণা নিক্ষেপ হচ্ছে প্রহর এর চোখ থেকে।

“এইটা আপনি কি পড়েছেন??

“পাঞ্জাবী।দেখতে পারছিস না??

“ছিঃ!!এইটা কোনো রঙ হলো!!খুলুন বলছি।”

আজরাহান ধপাস করে বিছানায় শুয়ে পড়।

“একদম না।
নিজেকে আমার একদম প্রকৃতির বাদশা মনে হচ্ছে।”

প্রহর ওর সামনে এসে বলে—

“বাদশা নয়,আপনাকে গরু মনে হচ্ছে।চোখে শুধু ঘাষ দেখছেন।”

আজরাহান ওকে বুকের উপর টান দিয়ে নেয়।

“তুই তো আমার নীল অপরাজিতা।আমি তোর শাখা প্রশাখা।”

প্রহর নীল রঙের কামিজ পড়েছে।আজরাহান এর নীল রঙ পছন্দ,যা একদম ওর প্রহরিনীর চোখের মতো।

“হয়েছে,ছাড়ুন।আমাদের জন্য দেরি হয়ে যাচ্ছে ওদের।”

“আচ্ছা চল।”

,
,
,
নির্ধাদের ঘরে ব্যাপক আয়োজন।মারশিয়াদ আর শিহরন আগেই চলে এসেছে।আজরাহান অফিস থেকে একটু আগে বেড়িয়ে তারপর আসবে।তাই ওদের একটু লেট হবে।

কলিং বেশ বাজতেই দরজা খুলে নির্ধা।আজরাহান আর প্রহর এসেছে।

“এতো দেরি করলি কেনো??

“আমি করেছি নাকি।সব রাহান ভাইয়ার দোষ।”

“আচ্ছা কারো দোষ না।চল ভিতরে।”

মারশিয়াদ কে দেখে অপ্রস্তুত হয় প্রহর।আজরাহান এর হাত চেপে রাখে।ওরা পাশাপাশি বসে আর পাশের সোফায় মারশিয়াদ আর শিহরণ।

মারশিয়াদ তাকায় না তার কাজলচোখীর দিকে।তাকে যে সে মুক্তি দিয়েছে আর নিজেকে আবদ্ধ করেছে তার অপেক্ষায়।

নির্ধার বাবা মায়ের সাথে কথা হয় মারশিয়াদ এর।কখন কবে কোথায় বিয়ের আয়োজন করা হবে তা।কিছুদিন পরেই ওদের রেজাল্ট পাবলিশ হবে।বিয়েটা তার পরেই হবে।খাওয়া দাওয়া শেষ করে মারশিয়াদ আর শিহরণ নির্ধাদের খোলা বারান্দায় গিয়ে দাড়ায়।অনেক রাত প্রায়।দুরের কিছু ভবন এর জানালা দিয়ে আলো দেখা যাচ্ছে।হয়তো নির্ঘুম রাত্রি তাদের।

“এখন কি করবি??

“তোদের বিয়ের কাজী হবো।”

“আর নিজের??

“আমি মাদার তেরেসা হবো।”

“ইনশিরাহ কে মেনে নে।”

“এই জীবনে তা সম্ভব নয়।”

“পাগলামির একটা সীমা আছে মারশিয়াদ।প্রহর আজরাহান কে ভালোবাসে।”

“আমি তা অস্বীকার করি না।”

“নিজেকে কেনো কষ্ট দিবি?

“কে বলল আমি কষ্টে আছি।
একদম না।কিন্তু ইনশিরাহ মেয়েটা অবাক করার মতো।এতোকিছু করার পরও কেনো আমার কাছে আসে বুঝিনা।ভালোবাসা সত্যিই অন্ধ হয়।”

মারশিয়াদ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।

“যাকে আমি চাই সে অন্যের আর যাকে আমি চাই না সে আমাতে মত্ত।”

“আমেরিকা ফিরবি কবে??

“যে কাজে এসেছি তা তো শেষ করে নেই।”

“অরল্যান্ডো কে খুজে পাওয়া জরুরি।”

“পাবো,অতি শিঘ্রই।ওর মৃত্যু আমার হাতেই।
ও আমার কাজলচোখীর দিকে হাত বাড়িয়েছে।”

“আজরাহান যদি জানে??

“জানবে না।সে অলরেডী গাড়ি নিয়ে এসেছে।”

মারশিয়াদ শিহরণ কে বাইরে দাড় করানো গাড়ি দেখায়।

“তোর কি মনে হয় এতে ও সেফ থাকবে??

“বুলেট ফ্রুফ কার।আর আমি ওয়াসিম কে বলে দিয়েছে আজরাহান কে রাস্তায় যেনো কোনো কারনে বের না হতে দেয়।
আমি থাকতে আমার কাজলচোখীর রাহান ভাইয়ার কোনো কিছু হতে দিবো না।”

“প্রেম মানে স্বপ্নবিলাস
প্রেম মানে সর্বনাশ।”

“প্রেম জীবনে অনেকবার হয়।মানুষ অনেকভাবে প্রেমে পড়ে।কিন্তু আমি তাকে ভালোবেসেছি।নিজের চাইতে বেশি ভালোবেসেছি।কিন্তু তার প্রতিদান চাইনি।
আমি পৃথিবীর সবকিছুর বিনিময়ে শুধু তাকে চেয়েছি।কিন্তু আমার ভাগ্য দেখ।সব কিছু কেড়ে নিয়েও তার শান্তি হয়নি।আমার কাজলচোখী কেও অন্যের করে দিলো।আর আমাকে সর্বহারা।”

“এই সবকিছুর জন্য ওই অরল্যান্ডো দায়ী।না শালা,বাংলাদেশে আসতো না তুই আসতি।আর না প্রহর এর সাথে কখনো দেখা হতো।ওকে তো আমিই মেরে ফেলবো একবার হাতের কাছে পেলে।”

মারশিয়াদ মুচকি হেসে বলে—

“তোর তো ওর শুকরিয়া আদায় করা উচিত।এখানে এলি বলেই তো তোর পিচ্চি কে পেলি।”

“আরে এইরকম হাজারটা পিচ্চি আমার আগেপিছে ঘুরে।এই ঝামেলার তো আর সৃষ্টি হতো না।”

“ও তাই নাকি???

পিছনেই নির্ধা শিহরণ এর বলা কথা শুনতে পায়।

“আরে তুমি!!!
আমি তো মজা করছিলাম।”

মারশিয়াদ মিটি মিটি হাসে।

“তো আপনার তো অনেক পিচ্চি।যান তাহলে ওই সাদা চামড়ার পিচ্চিদেরই বিয়ে করেন গিয়ে।”

“নির্ধা এখনো সময় আছে,তুমি ইচ্ছে করলে কিন্তু বিয়ে ভেঙে দিতে পারো।”

“এই তুই চুপ করবি!!!
প্লিজ আমার কথা শোনো।”

“একদম আমার সাথে কথা বলবেন না।”

নির্ধা চলে যেতেই হেসে উঠে মারশিয়াদ।

“শালা,বিয়ের আগেই আমাকে বিধবা করার ধান্ধা।”

মারশিয়াদ হাসি থামায়।

“মেয়েরা কতো সহজেই কাঁদতে পারে তাই না।আমরা পুরুষরা কেনো পারি না বলতো??
আমরা কি পাথর??

প্রহর এর চিৎকারে চকিত হয় মারশিয়াদ আর শিহরণ।দ্রুত পায়ে হেঁটে ড্রয়িং রুমে আসে।আজরাহান মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।প্রচন্ড মাথা ব্যথা শুরু হয়েছে তার।সাথে শরীর কেপে উঠছে।মারশিয়াদ আর শিহরণ ওর অবস্থা দেখে হকচকিয়ে যায়।অদ্ভুত আচরণ করছে আজরাহান।মাথার যন্ত্রণায় ঠিক হয়ে বসতে পারছে না।বমির ভাব শুরু হয় তার।দৌড়ে ওয়াশরুমে যায়।প্রহর এর চোখ দিয়ে আনবরত হিমছড়ির ঝর্না বইতে লাগলো।সবাই ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে।প্রহর ওয়াশরুম এর দরজার কড়া নাড়তে থাকে।

“রাহান ভাইয়া কি হয়েছে আপনার?
প্লিজ দরজা খুলুন।প্লিজ খুলুন।”

মারশিয়াদ তার কাজলচোখী কে দেখে।যার চোখের জল ঝড়াবে না বলে নিজেকে তার থেকে সরিয়ে নিয়েছে আর সে কি না তার সামনেই অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে!!!

অনেক ডাকার পরও যখন আজরাহান দরজা খুলে না প্রহর ধপ করে সেখানেই বসে পড়ে।নির্ধা ওর কাছে গিয়ে বলে—

“প্রহর ওঠ।সব ঠিক হয়ে যাবে।”

“রাহান ভাইয়া কে বলনা দরজা খুলতে।কি হয়েছে তার??

মারশিয়াদ এক কদম পা বাড়ায়।আবার দাড়িয়ে যায়।যেনো বরফ তার পা জমিয়ে রেখেছে।

নির্ধা প্রহর কে দাড় করায়।আজরাহান বেরিয়ে আসে ওয়াশরুম থেকে।

“কি হয়েছে আপনার??

“কিছু না।”

আজরাহান সোফায় গিয়ে বসে।প্রহর ওর পাশেই বসে।শিহরণ কাছে গিয়ে বলে–

“হয়েছে কি বলোতো??
কিছুই তো বুঝলাম না।একটু আগেই তো সব ঠিক ছিলো।”

আজরাহান এর পুরো হেলথ কন্ডিশন জানায় আশফিক শিহরণ কে।নিজেও ধমকে উঠে বলে—

“তোকে কতবার বললাম ডক্টর এর কাছে যেতে গেলি না কেনো তুই??

“গিয়ে লাভ নেই।”

শিহরণ উচু কন্ঠে বলে–

“লাভ নেই মানে,,
একটা ছোট্ট অপারেশন হলেই তো সব ঠিক হয়ে যাবে।”

আজরাহান মাথা উঠিয়ে বলে—

“তাতে যদি আমি মারা যাই??

“রাহান ভাইয়া।”

“তুই ভয় পাস না।তোকে একা ছেড়ে আমি কোথাও যাবো না।”

মারশিয়াদ নিস্পলকভাবে তাকিয়ে আছে প্রহর এর দিকে।তার কাজলচোখী মিশে আছে তার রাহান ভাইয়ার অস্বিত্বে।

“ওকে।তোমার যখন এতো ভয় তাহলে এখানকার ডক্টর এর প্রয়োজন নেই।আমাদের পরিচিত একজন আছে।সে একজন নিউরোলজিস্ট।হি ইজ দ্যা বেস্ট।আজ পর্যন্ত কোনো সার্জারী তে সে অসফল হয়নি।আমরা তার সাথে কথা বলবো।”

“ধন্যবাদ,এতোটা ভাবার জন্য।
তার প্রয়োজন নেই।চল প্রহর।”

মারশিয়াদ ঠায় দাড়িয়ে আছে।তার অনেক কিছুই বলার কিন্তু কেনো পারছেন না সে জানে না।

“ভালোবাসা সাদা কাগজের মতো।একবার তাতে কারো নাম লেখা হলে যতই মুছে ফেলা হোক তাতে ছাপ থেকে যায়।”

আজরাহান প্রহর এর হাত ধরে মারশিয়াদ কে ছাড়িয়ে সামনে যেতেই মারশিয়াদ বলে–

“রাগ টা কি আমার উপর নাকি নিজের উপর???

মারশিয়াদ ঘুরে গিয়ে আজরাহান এর সামনে দাড়ায়।চোখেরও ভাষা আছে।

“প্রহর কে আমি ভালোবাসি।পৃথিবীর কোনো কিছুর বিনিময়ে আমি ওকে ছাড়বো না।কখনই না।”

বাড়ি থেকে বের হয় আজরাহান।মারশিয়াদ অধর প্রশ্বস্ত করে।

“তোকে বলেছিলাম না,আমার চেয়ে সে বেশি তাকে চেয়েছে ভাগ্যবিধাতার কাছে।ভালোবাসার শক্তি দেখেছিস।মরতে রাজি কিন্তু ছাড়তে রাজি নয়।
আমি আমার কাজলচোখীর রাহান ভাইয়ার কোনো ক্ষতি হতে দিবো না।”

ওরা গাড়ির কাছে আসতেই আজরাহান এর ড্রাইভার মারশিয়াদ কে সম্মোধন করে।আজরাহান অবাক হয়।

“আপনি তাকে চেনেন??

ওয়াসিম শুকনো ঢোক গিলে।মারশিয়াদ ওকে কিছু একটা ইশারা করে।

“কাউকে সালাম দেওয়া কি অন্যায়??

“অবশ্যই না।
এই ছোট্ট একটা জিনিসের মাধ্যমেই তো আমরা একে অপরের শান্তি কামনা করতে পারি।”
,
,
,
বিছানায় শুয়ে আছে আজরাহান।নির্ঘুম রাত তার।পাশেই প্রহর শুয়ে আছে।আজকের ঘটনায় ভীষন ভীত সে।

“তোর এই ঘ্যান ঘ্যান বন্ধ করবি??

প্রহর একাধারে ফুপিয়ে যাচ্ছে।আসার পর থেকে কেঁদে যাচ্ছে সে।

“কেনো এমন করেন আপনি??কেনো কারো কথা শুনেন না??

“এতো তাড়াতাড়ি মরছি না আমি।”

“আর একটা কথাও বলবেন না আপনি।সবসময় নিজের ইচ্ছেমতো সব কিছু করেন।কি হয় অপারেশন করালে??
শিহরণ ভাইয়া তো কতোবড় ডক্টর।উনিই তো বলল,অপারেশন করলেই আপনি ঠিক হয়ে যাবেন।তাহলে কেনো এই যন্ত্রনা বয়ে বেড়াচ্ছেন??

আজরাহান ঘাড় ফিরিয়ে প্রহর এর উপর পুরো ভর ছেড়ে দেয়।

“কেনো পাগলামি করছিস তুই??
এতো সহজে আমি তোকে ছাড়ছি না।”

“আপনি কেনো এমন করছেন,রাহান ভাইয়া??
অপারেশন করালে আপনি ঠিক হয়ে যাবেন।একদম আগের মতো।”

আজরাহান এর চোখ ভরে আসে।কন্ঠে আর্দ্রতা।পুরুষ মানুষ শুকনো কাঠের মতো।যতোই তাকে পোড়ানো হোক নিজেকে জ্বালিয়ে অন্যের কাজ সিদ্ধি করে।তারা ভাঙবে তবু মচকাবে না।
চোখের জল কি তা বুঝে।সে তো নিরবধি ধারা।হৃদয়ের দহনে সে বর্ষিত হয় বর্ষার আঁধারে ঢাকা আকাশের বুক চিরে।আজরাহান এর চোখের কোন থেকে শীতল নেত্রনীর টুপ টুপ করে পড়ছে প্রহর এর মুখের উপর।

“আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারবো নারে প্রহরিনী।একদম পারবো না।ডক্টর বলেছে,আমার সার্জারী হলে আমার বাচার সম্ভাবনা শুধুমাত্র শতকরা বিশ ভাগ।এমনও হতে পারে আমি ওখানেই মারা যেতে পারি।আমি কি করে থাকবো ওই অন্ধকার কবরে তোকে ছাড়া?
আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারবো না।একদম না।আমাকে বাচতে দে প্রহরিনী।তোকে ভালোবেসে বাচতে দে।”

প্রহর বুক কাপিয়ে কেঁদে উঠে।ভারী হয়ে আসে অন্ধকারে নিমজ্জিত পুরো ঘর।দুজন নরনারী ক্রন্দনরত পরিবেশ মৃত্যসম যন্ত্রনা বহন করছে।
আজরাহান ধীরে ধীরে ওর মাথা নুইয়ে দেয় প্রহর বুকের উপর।মাথার অসহ্য যন্ত্রনা আর ক্লান্তি অবসাদে কিছুক্ষনের মধ্যেই ওর চোখ লেগে আসে।

প্রহর এর কান্না আজ বাতাস ভারী করে ফেলেছে।কান্নার আওয়াজ তীব্র হয় যা আজ সব দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।প্রহর তার রাহান ভাইয়া কে ছাড়া বাচবে না।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here