অদ্ভুত প্রেমোমোহ তুমি পর্বঃ৩

0
3321

#অদ্ভূত_প্রেমোমোহ_তুমি
#পর্বঃ৩
✍️ তাজরিয়ান খান তানভি

আউট হাউজের খোলা জানালা দিয়ে মিষ্টি রোদের হালকা হাসি মেয়েটির হলদে ফর্সা পাতলা চামড়ায় পরাতে তা চিক চিক করছে।ব্রাউন রঙের সিল্কি চুলগুলো হালকা উড়ছে।মারশিয়াদ এর সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই।হাতে থাকা মোবাইলে কিছু একটা দেখে চলছে সে।নিরবতা ভেঙে মেয়েটি সামনে হাত বাড়িয়ে বলল–

“হাই,আই অ্যাম ইনশিরাহ।ইনশিরাহ আজমী।”

মারশিয়াদ চোখ তুলে তাকায়।ঠোঁটের কোন হালকা স্মিত করে বলে–

“ধন্যবাদ।”

ইনশিরাহ ডান ভ্রু খানিকটা কুচকে নিজের হাত গুছিয়ে নেয়।

“আমি আপনার অনেক বড় ফ্যান।”

মারশিয়াদ এর অক্ষিমনি তার মোবাইলের স্ক্রিনেই নিবদ্ধ।সেভাবেই বলে–

“ফ্যান বলেই এতো সাতসকালে এখানে আসা।

“নো মি.মারশিয়াদ।আসলে আমি,,,

ইনশিরাহ কে থামিয়ে মারশিয়াদ বলে–

“এক্সকিউজ মি মিস.।মারশিয়াদ নয়।মারশিয়াদ আরজান।কোনো অপরিচিত মানুষ আমাকে শর্টনামে ডাকবে তার অধিকার আমি তাকে দেই না।”

ইনশিরাহ এতোদিন শুধু তার চিত্রকর্মের ফ্যান ছিলো।ধীরে ধীরে মারশিয়াদ এর পার্সোনালিটি ওকে একদম অভিভূত করে দিচ্ছে।

“প্লিজ কন্টিনিউ।”

“আসলে আমি আপনার একটা পেইন্টিং কিনতে চাই।”

“ইটস গুড।”

মারশিয়াদ উঠে দাড়ায়।আর বলে—

“আপনি আমার ম্যানেজার এর সাথে কথা বলুন।”

মারশিয়াদ ঘুরে পা বাড়াতেই ইনশিরাহ বলে—
“আমি আপনার ‘কাজলচোখী’পেইন্টিং টা কিনতে চাই।”

মারশিয়াদ ঘুরে দাড়ায়।চোখের কোন হালকা সংকীর্ণ করে বলে–

“দ্যাট ইজ নট ফর সেল।”

“আমি দ্বিগুণ পে করতে রাজি।”

“দ্বিগুণ নয়,দশগুন দিলেও সেটা বিক্রি হবে না।”

“বাট হোয়াই??

“তার জবাব দেওয়ার জন্য কি আমি কোনভাবে আপনার নিকট বাধ্য??

“দেখুন মারশিয়াদ,,

“মারশিয়াদ আরজান।”

“দেখুন মি.আমি আপনাকে ব্ল্যাংক চেক দিতেও রাজি।”

“দরজাটা ঠিক আপনার পেছনে আর খোলাই আছে।আপনি যেতে পারেন।”

মারশিয়াদ আউট হাউজ থেকে প্রস্থান করে।ইনশিরাহ রাগে গজগজ করতে থাকে।বাড়ি থেকে বেড়িয়ে নিজের গাড়ির সামনে গিয়ে নতুন কেনা ব্ল্যাক মার্সেডিজ এ তার উচু হিল দিয়েই এক লাথি মারে।

“ভাবে কি নিজেকে সে।
আমার ওই পেইন্টিং চাই।আর সাথে তোমাকেও মি.মারশিয়াদ আরজান।তোমাকে আমার হতেই হবে।”

ডাইনিং এ এসে বসে মারশিয়াদ।টেবিলে রাখা স্যান্ডউইচ এ কামড় বসাতেই ইব্রাহিম বলে–

“পেলে তাকে??

“নাহ।উনি সে নয়।”

“জানবাবা,,এভাবে আর কতোদিন??

“যতোদিন না তাকে আমি খুজে পাই।”

“সত্যিই কি সে আসবে??

“তাকে যে আসতেই হবে।আমার ভালোবাসা তাকে আমার নিয়তি করে পাঠিয়েছে।জান তার কাজলচোখী কে ঠিক খুজে বের করবে।”
,
,
,
পুরো শরীর থরথর করে কাপছে ইনশিরাহ এর।বাসায় ঢুকেই সব ভেঙে চুরমার করা শুরু করে।অতিরিক্ত রাগে ইনশিরাহ নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারে না।মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রণা হচ্ছে ওর।ওর আয়া ওসনিয়াত ওকে ধরতেই ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়।

“একদম ছোবে না আমায়।যাও এখান থেকে।যাও বলছি।”

ওর ধমকে ওসনিয়াত সহ অন্যান্য স্টাফরাও সেখান থেকে চলে যায়।হেলতে হেলতে নিজের ঘরে ঢুকে ইনশিরাহ।শরীর অনবরত কাপছে।কাপা কাপা হাতে কাভার্ড খুলে ড্রয়ার থেকে ইনজেকশন নিয়ে তা হাতে পুশ করে নেয়।আর কিছুক্ষনের মধ্যেই শান্ত হয়ে দেয়াল ঘেসে নিচে বসে পড়ে।

ইনশিরাহ ড্রাগ অ্যাডিক্টেড।বাবার অতিরিক্ত আদরে আর উশৃঙ্খল বন্ধুদের পাল্লায় নিজেকে ভুলে থাকার জন্য সে ড্রাগস বেছে নিয়েছে।মা নেই তার।ওসনিয়াত ছোট বেলা থেকে ওকে বড় করেছে।তাকে সে আয়া মা বলে ডাকে।কিন্তু রাগ উঠলে কোনো কিছুর তোয়াক্কা সে করে না।আর ড্রাগস নিতে দেরি হলে অবস্থা আরো খারাপ।মারশিয়াদ এর সাথে দেখা করবে বলে কাল রাতে ড্রাগস নেয় নি।তাই এই অবস্থা।

ওসনিয়াত এর মুখে সবশুনে দৌড়ে আসে ইতিকাফ আজমী,ইনশিরাহ এর বাবা।

“হোয়াট হ্যাপেইন্ড,,প্রিন্সেস??

ইনশিরাহ অক্ষিনীর ঝড়িয়ে কাপা কাপা কন্ঠে বলে–

“আই ওয়ান্ট হিম পাপা।আই ওয়ান্ট হিম।আই লাভ হিম।”

“ওকে,ওকে ডিয়ার।ক্লাম ডাউন।হু ইজ হি??

“মারশিয়াদ আরজান।একজন পেইন্টার।আই লাম হিম মোস্ট।”

“শান্ত হোও।আজ পর্যন্ত তোমার পাপা তোমার কোনো চাওয়া অপূর্ন রাখেনি।তাকেও তুমি পাবে।ডোন্ট ওয়ারি মাই প্রিন্সেস।”

ইনশিরাহ ইতিকাফ এর গলা জড়িয়ে ধরে।

“আই লাভ ইউ,পাপা।”

“আই লাভ ইউ টু মাই প্রিন্সেস।”

ইতিকাফ একজন ডায়মন্ড ব্যবসায়ী।কোটি কোটি টাকার খেলা তার।তার মধ্য কিছু বৈধ আর কিছু অবৈধ।মেয়ে যদি আকাশের চাঁদ চায় আকাশ ফেড়ে তাও এনে দিতে পারে সে।আর মারশিয়াদ তো রক্তে মাংসে গড়া মানুষ!!!!
,
,
,
ন্যাকা কান্না মেয়েদের সবচেয়ে বড় গুন।ছেলেরা যদি তাদের একহাত ভেঙে যাওয়ার পর এক ফোটা চোখের জল ফেলে সেখানে মেয়েরা তাদের একটা লিপস্টিক হারিয়ে ফেলায় এর চেয়ে বেশি জল ফেলে।নুরাইসা কেদেই যাচ্ছে।

“এতো কান্নার কি হলো তোর?অনেক তো কাদলি এবার থাম।”

নুরাইসা মুখ বাকিয়ে বলে–
“তুমি সত্যিই আমার আপন বোন তো??

“নাহ।মায়ের পেটের খালাতো বোন।”

নুরাইসা নন্দিতার ছোট বোন।

“এর জন্যই আমার সংসার টা ভেঙে দিলে??

“সংসার!!কিসের সংসার?

“তুমি পারতে না আজরাহান আর প্রহর এর বিয়ে টা আটকাতে??

“তোর কি মনে হয় ও আমার কথা শুনবে?এখন এইসব না ভেবে যা হয়েছে ভুলে যা।আজরাহান এখন বিবাহিত।শুধু শুধু ওর পিছনে ঘুরে লাভ নেই।”
“আপু,,,,,
তুমি ভালো করেই জানো আমি আজরাহান কে ভালোবাসি।”

নন্দিতা ঘাড় বাকিয়ে বলে—
“তুই সত্যিই ওকে ভালোবাসিস??

“সত্যি করে বলোতে তুমি ই আজরাহান উস্কানি দিয়েছো এইসব করতে তাই না??নয়লে একদিনে কি করে ও বদলে গেলো??

“দেখ নুরাইসা,বাজে কথা বলবি না।তুই আজরাহান কে কখনই ডিজার্ব করিস না।তাই ঝামেলা না করে বাবা কে বল তোর জন্য অন্য ছেলে দেখতে।”

পিছন থেকে কুহেলিকা বেগম খেকিয়ে উঠে।
“বউমা,,,
এইসব কি বলছো তুমি??
নুরাইসা এই বাড়ির বউ।”

“ভুল বললেন আম্মা।এখন প্রহর এই বাড়ির বউ।”

“ওই মেয়েকে আমি কখনই এই বাড়ির বউ মেনে নিবো না।”

“আপনি না মানলেও সত্য কখনো মিথ্যে হবে না আম্মা।”

“মামুনি তোমরা ঝগড়া করছো কেনো??

নন্দিতার আট বছরের মেয়ে সূর্যি।

“কিছু না মামুনি।চলো তোমার খিদে পেয়েছে তাই না।মামুনি তোমাকে খাইয়ে দেয়।”

নন্দিতা তার মেয়েকে নিয়ে কিচেনের দিকে যায়।
কুহেলিকা নুরাইসা কে সান্ত্বনা দিচ্ছে।

“দেখ তুই একদম চিন্তা করিস না।ওই মেয়েকে আমি এই বাড়ি থেকে তো তাড়া বই সাথে আমার আজরাহান এর জীবন থেকেও।তুই ই হবি আমার আজরাহান এর বউ।”

নুরাইসা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।এই একটা মানুষই আছে যে ওকে এই বাড়ির বউ করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।

রান্না ঘরে মেয়েকে খাওয়াচ্ছে নন্দিতা।আর মনে মনে ভাবছে,,,,.আজরাহান এর প্রতি নুরাইসার যে নেশা সেটা শুধুই ওকে নিজের করে পাওয়ার নেশা।কোনো ভালোবাসা নেই তার মধ্যে।
সামান আর নন্দিতার বিয়ের দিন রাতে এমন কিছু ঘটে যার পর থেকে আজরাহান এর প্রতি নুরাইসার ঘোর লেগে যায়।ওকে বিয়ে করার জন্য উঠেপড়ে লেগে যায়।যার কারনে বছরের বেশিরভাগ সময় ওর কাটে বোনের শশুর বাড়িতে।
,
,
,
এক ঘন্টা যাবৎ কান ধরে দাড়িয়ে আছে প্রহর।আজরাহান কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে গান শুনছে।

“রাহান ভাইয়া,,আমার পা ব্যথা করছে।”

কান থেকে ইয়ারফোন নামিয়ে বলে–

“কি বললি??

“পা ব্যথা করছে আমার।”

আজরাহান ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে–
“আরো দুই মিনিট বাকি।”

দুই মিনিট পরেই ধপ করে বসে পড়ে ফ্লোরে প্রহর।

“নিচে বসলি কেনো??ঠান্ডা লাগবে উপরে আয়।”
প্রহর আজরাহান এর পাশে এসে বসে।

“আপনি এমন করেন কেনো??

“আর কোনোদিন যেনো তোকে আমি রান্না ঘরে না দেখি।তাহলে কিন্তু ঠ্যাং ভেঙে গলায় ঝুলিয়ে দিবো।”

“আমি কি করবো সারাদিন??

“পড়বি।”

“আপনি আমাকে পড়াবেন??
আজরাহান এর গাঢ় চাহনি প্রহর এর চোখে।প্রহর ওর প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যায়।

“কবে খুলবে তোর কলেজ??

“সামনের সপ্তাহে।”

“কলেজে কাউকে বলার দরকার নেই বিয়ের কথা।”

“কেনো??

“আগে পড়ালেখা শেষ কর তারপর।”

“ওমাআআ,,সে তো অনেক দেরি।তাহলে আমি সংসার করবো কখন??

“কি করবি তুই?সংসার!!!

বলেই হা হা করে হাসতে থাকে আজরাহান।

“পিচ্ছি মেয়ে বলে কি,,ও নাকি সংসার করবে।”

“কেনো,,কে বলল আমি পিচ্ছি??আপনি
জানেন,আমাদের ক্লাসের ইপ্সি ওর এক বছর একটা বাচ্চা আছে।”

আজরাহান একদম ওর সামনে চলে আসে।ওর নিঃশ্বাস এর উষ্ণতা প্রহর এর অধর ছুইয়ে যায়।প্রহর এর বুকের হৃদকম্পন বাড়তে থাকে।

আজরাহান সরে বসে।বিছানায় হেলান দিয়ে বলে–
“একটা জামা সামলাতে পারিস না।আর এসেছে বাচ্চা সামলামে।”

“মানে?

“জামা উল্টো কেনো পড়েছিস??

প্রহর নিজের দিকে তাকিয়ে জিভ কাটে।ইশশশ,,,কি হলো আজ সারাদিন এই উল্টো জামা পরে পুরো বাড়ি ঘুরে বেরিয়েছে।

আজরাহান উঠে দরজার সামনে গেলে প্রহর বলে–

“আমার অধিকার??

” ওইটা তোলা রইলো,ঠিক সময় পেয়ে যাবি।”

এই লোকটা কে ও বুঝেনা।কখনই বুঝেনা।কেনো তার রাহান ভাইয়া একবারও ভুল করে ওকে ছুইয়ে দেখে না।ওর শরীরের প্রতিটি লোমকূপ যে তার রাহান ভাইয়ার স্পর্শ পেতে চায় কেনো বুঝেনা সে।তার প্রহরিনী কে কি সে কখনো নিজের সত্তায় মিশাবে না?
কবে পাবে এর উত্তর।।।।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here