অদ্ভুত প্রেমোমোহ তুমি পর্বঃ২৯

0
1989

#অদ্ভুত_প্রেমোমোহ_তুমি
#পর্বঃ২৯
✍️ তাজরিয়ান খান তানভি

আজকাল ঝি ঝি পোকার ডাক যত্রতত্র শোনা যায় না।অন্ধকার তিমির রাত্রির ধ্রভতারা হয়ে জ্বলজ্বল করে তা।বাতাসের শো শো আওয়াজে এগিয়ে চলছে আজরাহানদের গাড়ি।হলুদ শেষ করে বাড়ি ফিরছে আজরাহান আর প্রহর।প্রহর পা গুটিয়ে সিটের উপর বসে আজরাহান এর বুকে মাথা ঘুজে দিয়েছে।জানালা খোলা থাকায় বাতাসের গতিপ্রবাহের তীব্র আওয়াজ অদ্ভুত শব্দ সৃষ্টি করছে।

“রাহান ভাইয়া,নির্ধার বিয়ে হলে ও তো শিহরণ ভাইয়াদের বাসায় চলে যাবে তাই না??

“হুম।”

“ইশ!!
কি করে থাকবে ও??

“এইটাই পৃথিবীর নিয়ম।বিয়ের পর স্বামীর বাড়িই মেয়েদের আসল বাড়ি।”

“রাহান ভাইয়া??

“বল।”

“চলুন না আমরা আবার বিয়ে করি।”

“বিয়ে!!
কেনো???

“আমাদের বিয়ের সময় তো কোনো অনুষ্ঠান হয় নি।আর নির্ধার বিয়েতে দেখেছেন কত কিছু করা হচ্ছে।”

“আমার এতো টাকা নেই।আমার দ্বারা সম্ভব না।”

“ভ্যা।কি সম্ভব আপনার দ্বারা??

“এখন শুধু ফুলসজ্জা টাই বাকি।”

“ছিঃ,পঁচা কথা বলেন কেনো আপনি।”

“তাহলে আর একটা কথাও বলবি না।”
,
,
খুট করে মারশিয়াদ ওর কান থেকে ট্র্যাকার এর মাইক্রোফোন টা খুলে নেয়।ইনশিরাহ ওর পাশেই বসা।

“কি হয়েছে??

“কিছু না।”

মারশিয়াদ এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।আর মনে মনে বলে–
“সরি,কাজলচোখী।আমি যা করেছি আপনার রাহান ভাইয়ার সেফটির জন্যই করেছি।”

“কিছু হয়েছে তোমার??

“নাহ।”

পরক্ষনেই মারশিয়াদ এর মোবাইল বেজে উঠে।কারো সাথে কথা বলে গাড়ি ঘুরায়।

আজরাহানদের কার বন্ধ হয়ে গিয়েছে।এতো রাতে আশেপাশে কোনো ম্যাকানিকাল শপও নেই।আর মারশিয়াদ এর কড়া নির্দেশ আজরাহান কে মাঝপথে কখনই গাড়ি থেকে যেনো বের না হতে দেয়।তাই ওয়াসিম আর উপায় না পেয়ে গাড়ি থেকে বেরিয়ে ওকেই কল করে।

কিছুক্ষন পরেই মারশিয়াদ এর গাড়ি আজরাহানদের গাড়ি থেকে কিছুদূরেই থামে।ইনশিরাহ কে বসিয়ে নেমে আসে।

“গাড়ি এখানে থামালে কেনো?
এনি প্রবলেম??

ওয়াসিম অনুনয়ের স্বরে বলে—

“আসলে স্যার আমাদের গাড়িটার একটু সমস্যা হয়েছে।যদি কিছু মনে না করেন তাহলে কি আপনার গাড়িতে স্যার কে একটু লিফ্ট দেওয়া যাবে??

আজরাহান সবই দেখছিলো।তার ঠোঁটের কোনে অদ্ভুত তৃপ্ততা।যা সে খুজে চলছে তা খুব শীঘ্রই তার হাতের নাগালে আসবে।কিন্তু সে কি পারবে সব এতো সহজে মেনে নিতে???

আজরাহান আর প্রহর মারশিয়াদ এর গাড়িতে উঠে বসে।

“তুমি তো নর্থে টার্ন নিয়েছিলে।এদিকে কেনো এলে??

মারশিয়াদ হালকা হেসে বলে—

“ইনশিরাহ আজ আমার বাসায় থাকবে।”

ইনশিরাক অবাক হয়ে তাকায় মারশিয়াদ এর দিকে।ওর সিক্সথ সেন্স বুঝতে পেরেছে মারশিয়াদ কেনো মিথ্যে বলেছে।কিন্তু তাতে সে প্রসন্ন।,
,
,
,
কাউচের উপর নিজের গাউনের অর্ধেকটা ছড়িয়ে বসে আছে ইনশিরাহ।মারশিয়াদ ওর ব্লেজার টা খুলে ওর পাশেই রাখে।শার্টের ইন ছেড়ে হাতা ফোল্ড করে নেয়।
ইনশিরাহ ঘোর লাগা নয়নে তাকিয়ে আছে মারশিয়াদ এর দিকে।উঠে এসে ওর সামনে তাকায়।মারশিয়াদ ওর দিকে তাকিয়ে বলে–

“চলো,তোমাকে বাসায় পৌছে দেই।”

“নাহ।আজ আমি এখানেই থাকবো।”

মারশিয়াদ হাতার ফোল্ড থেকে চোখ তুলে ইনশিরাহ এর দিকে তাকায়।

“পাগলামি করো না ইনশিরাহ।”

“কিসের পাগলামি!!!
তুমি না বললে,আজ আমি তোমার বাসায় থাকবো।
অবশ্য আমার তোমার সাথে থাকতেও আপত্তি নেই।”

“অনেক রাত হয়েছে।চলো।”

“কেনো হটবয়??
কন্ট্রোল হচ্ছে না বুজি???

মারশিয়াদ এর মুখে বিরক্তির আভাস।ইনশিরাহ এর দূর্বলতা তার জানা।

“নিজেকে কি প্রস্টিটিউট মনে করো??

“মারশিয়াদ!!!!!

“সরি।
এখানে থাকা তোমার জন্য সেফ না।”

কিছুই বোঝার আগে ইনশিরাহ সাইড টেবিল থেকে একটা ফল কাটার ছুরি হাতে নিয়ে তা অন্য হাতের উপর ধরে বলে–

“এখন যদি তুমি আমাকে যাওয়ার জন্য জোর করো,আমি কিন্তু,,,

“ওকে,ওকে।রিল্যাক্স।কোথাও যেতে হবে না তোমার।”

বাসার খোলা বারান্দায় বসে আছে ইনশিরাহ।আজ চাঁদ তার জোসনা বিলাসে ভরিয়েছে পুরো ধরনী।
ধোঁয়া উড়ানো কফি এনে রাখলো তার সামনে মারশিয়াদ।চেয়ার টেনে বসলো।

“এখন এই কফি খেয়ে তোমার ওয়াইল্ডনেস একটু শান্ত করো।”

“তুমি কি আমাকে ইনডাইরেক্টলি সিডিউস করছো??

“আর ইউ ক্র্যাজি??
কফি ঠান্ডা হয়ে যাবে খেয়ে নাও।”

ইনশিরাহ কফি তে চুমুক দেয়।

“কফি তো খুব ভালো বানাও।”

“হয়তো।
আমার দাদু বলতো মানুষের ভাগ্য নাকি নরম কাদামাটি।ইচ্ছে করলে তাকে যেমন খুশি গড়ে নেওয়া যায়।
দাদু ভুল বলতো।ভাগ্য উপরওয়ালার তৈরি অপরিবর্তনীয় সংবিধান।যা কেউ বদলাতে পারে না।”

মারশিয়াদ চেয়ার ছেড়ে বারান্দায় গ্রিলের সাথে ঝুকে দাড়ায়।ইনশিরাহও উঠে গিয়ে সেখানে থাকা পিলার এর সাথে হেলান দিয়ে দাড়ায়।

“এমন কি পেয়েছো ওই মেয়ের মধ্যে যে ওকে ভুলতে পারছো না??

“ভুলে আমি তাকে গিয়েছি কিন্তু তার ভালোবাসা কে ভুলতে পারি নি।আর কখনো পারবোও না।
আমি তো শুধু তার কাজলচোখের প্রেমে পড়েছিলাম।এখন আমি তার ভালোবাসায় মুগ্ধ।তার রাহান ভাইয়ার প্রতি তার ভালোবাসা আমাকে তাকে ভালোবাসতে বাধ্য করেছে।”

“তোমার কি হবে??

“আমার আবার কি হবে।
“এই যে আছি বেশ
জীবনের সর্বশেষ।”

“ভুলে যাও তাকে।একটা সুযোগ দাও আমাকে।”

মারশিয়াদ সোজা হয়ে দাড়ায়।পকেটে দু হাত ঘুজে ভারী কন্ঠে বলে—

“তা কোনোদিনও সম্ভব নয়।আমার অন্ধকার জীবনের আশার প্রদীপ হয়ে এসেছিলো সে।বুঝতে পারি নি তার বিচ্ছেদের অনল আমার হৃদয়টাকে এভাবে পুড়িয়ে দিবে।
মেনে নিয়েছি আমি আমার ভাগ্য কে।”

“আই এম ইন লাভ উইথ ইউ।”

“আমার এই ভাঙা হৃদয়ে নিজের অস্তিত্ব খুঝতে এসে তুমিও ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাবে ইনশিরাহ।”

ইনশিরাহ এর দু গাল বেয়ে স্মিত ধারায় শীতল অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।জোসনা চাঁদের আলোয় তা চিক চিক করছে।
মারশিয়াদ ওর হাত দিয়ে ইনশিরাহ এর চোখের পানি মুছে দেয়।

“আশফিক কে একটা সুযোগ দিয়ে দেখতে পারো।ছেলেটা খুব ভালো।”

ইনশিরাহ খানিক চটে উঠে।

“একদম ওর কথা আমার সামনে বলবে না।গায়ে পড়া ছেলে আমার একদম পছন্দ না।”

মারশিয়াদ হালকা হাসে।ওর হাসির ক্ষীন আওয়াজ ইনশিরাহ এর মনের মাদল বাজিয়ে দেয়।

“যদি বলি গায়ে পড়া মেয়ে মানুষ আমারও পছন্দ না।”

“তুমি কি আমাকে ভদ্র ভাষায় অপমান করছো??

“বন্ধু হবে আমার???

ইনশিরাহ এর মুখের রঙ এক নিমিশে আকাশের নীলিমা ছুয়ে যায়।অন্ধকার আলোয় তারার ঝিলমিল যেনো ওর চোখের মনি কোঠায় ভেসে উঠেছে।

“কাউকে সারাজীবন কাছে পেতে চাও??
তাহলে প্রেম দিয়ে নয় বন্ধুত্ব দিয়ে আগলে রাখো।কারন প্রেম একদিন হারিয়ে যাবে কিন্তু বন্ধুত্ব কখনো হারায় না।”
—-উইলিয়াম শেক্সপিয়র

“কখনো ছেড়ে যাবে না তো আমাকে??

“মারশিয়াদ আরজান তার বন্ধুত্বের মান রাখতে জানে।”

ইনশিরাহ হাসে।খুব খুশি সে।অন্তত বন্ধুত্বের কারনে তো সে মারশিয়াদ এর কাছে থাকতে পারবে।

“এখনো ড্রাগস নাও??

“মাঝে মাঝে।”

“কেনো??

“নিজেকে বাঁচাতে।”

“যদি তুমি বিশ্বাস কর যে জীবনে বেঁচে থাকার মানে আছে,তাহলে তোমার এই বিশ্বাসই সেটিকে সত্যে পরিনত করবে।”
—–উইলিয়াম জেমস।

“তুমি থাকবে আমার পাশে??

“একজন শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে যখনই পাশে ডাকবে।”

“তোমার নেশা আমার সবকিছুর উর্ধ্বে।তুমি পাশে থাকলে আমি বেঁচে থাকবো।”

“আই এম অলওয়েজ উইথ ইউ।ট্রাস্ট মি।”

দুজন আকাশ দেখে।তারা ঝলমল আকাশ।জোসনা রাঙা।হিমেল হাওয়া।
,
,
,
ছাদের উপর আষ্টেপৃষ্ঠে একে অপরকে জড়িয়ে আছে আজরাহান আর প্রহর।চাঁদের আলোয় একে অপরের মুখ স্পষ্ট।গন্ধরাজ এর তীব্র ঘ্রান প্রহর কে মাতাল করে দিচ্ছে।

“ঘুমাবি না প্রহরিনী??
রাত তো অনেক হলো।”

“উহু।”

“সারারাত জেগে থাকবি,কাল তো নির্ধার বিয়ে যেতে হবে আমাদের।”

“তো!!
যাবো।”

প্রহর আজরাহান এর বুক থেকে মাথা উঠায়।

“রাহান ভাইয়া,ছোট আব্বু কে বলুন না আমাদের আবার বিয়ে দিতে।”

“তোর মাথায় কি সমস্যা।”

“ভ্যা।”

প্রহর উঠে আজরাহান এর পায়ের উপর বসে।ওর ঘাড়ে একটা চুমু খায়।

“কি শুরু করলি তুই!!

“আপনি নুরাইসা আপুকে চুমু খেলেন কেনো।
আর কখনো যাবেন না তার কাছে।”

“তুই এতো মিষ্টি কেনো রে??

“আপনি আমার ময়রা তাই।”

“মানে??

“আমি আপনার মিষ্টির দোকান আর আপনি আমার গুনী ময়রা।
আপনি আর আমি,আমি আর আপনি।”

প্রহর হেসে উঠে।

“তুই এতো বাচ্চাদের মতো করিস কেনো??

“কে বললো আমি বাচ্চা??
আমি আপনার ছোট্ট আজরাহান মাম্মাই।আর প্রহরিনীরও।”

“পারবি তুই??

“কেনো পারবো না।ছোট মার তো তিনজন।”

“মা যদি জানে তুই নিজেকে মায়ের সাথে নিজেকে তুলনা করেছিস তোর চুল ছিড়ে নিবে।”

“নিলে নিক।আমার এত্ত এত্ত চুলের মধ্যে ক গাছি তুলে নিলে আমার কিছু হবে না।”

প্রহর অনবরত কথা বলতে থাকে।ছোটবেলাকার ঘটনা।আজরাহান নিস্পলকভাবে তাকিয়ে দেখে।এক হাত উঠিয়ে প্রহর এর গালে ঘষতে থাকে।
আজরাহান এর ছোটবেলার অভ্যাস।প্রহর এর গলুমলু গাল ধরে টান দেওয়া।

আজরাহান ওর অধরের উষ্ণ ছোঁয়া দেয় প্রহর এর ললাটে।প্রহর ঠোঁট কামড়ায়।

“আপনি আমাকে কপালে কেনো চুমু খান,ঠোঁটে খেতে পারেন না??

আজরাহান দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে বলে—

“তোর অধরের বিষ সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই।”

“আমি বিষ!!!

“তোর সোনার অঙ্গের বিষ যে আমার ভেতরটা শেষ করে দিবে রে প্রহরিনী।”

প্রহর আজরাহান গালে কামড় বসায়।

“এইসব কি শুরু করলি তুই??

“করেছি বেশ করেছি,হনুপাঞ্জি।”

“প্রহর,তুই আমাকে ভুলে যাবি না তো কখনো??

“ভুলে যায় আমার ঠ্যাঙ।”

প্রহর আজরাহান কে আবার নিজের বাহুতে আবদ্ধ করে।

“আপনি আমাকে কখনো ছেড়ে যাবেন না রাহান ভাইয়া।আপনাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না।”

“আমি গেলেও আমার ছায়া কখনো তোকে ছেড়ে যাবে নারে প্রহরিনী।তোকে আমি খুব ভালোবাসি।খুব।”
,
,
,
বড় একটা আয়নার সামনে বসে আছে নির্ধা।হালকা গোলাপী রঙের ল্যাহেঙ্গা পড়েছে।পার্লার এর মেয়েরা এখনো ওকে মেকওভার করছে।পাশেই দাড়িয়ে দেখছে প্রহর।ওর এইসব দেওয়া বাড়ন।গাঢ় নীল রঙেন গাউন পড়েছে প্রহর।

“ওই হনুপাঞ্জি টা শুধু নীল রঙের ড্রেস নিয়ে আসে
আমার জন্য।
মাঝে মাঝে নিজেকে চমক ফ্রেবিক হোয়াটনার মনে হয়।”

নির্ধা প্রান খুলে হাসে।

“আর কি বলে জানিস,রসগোল্লা আমি তোকে খুব ভালোবাসি।
ভালোবাসে না ছাই।বললাম তাহলে খেয়ে দেখুন।বলে কিনা আমার বদহজম হবে।অসভ্য হনুপাঞ্জি।”

“বাহ!!ভালোই তো।আর ডক্টরবাবু তো বিয়ের আগে থেকেই শুরু করেছে।”

“এই রাহান ভাইয়া টা কেনো যে এমন বুঝিনা।”

প্রহর নির্ধার রুম থেকে বের হতে গেলে লক এর সাথে লেগে জামার পেছনটার অনেকটা অংশ ছিড়ে যায়।
কিছু না ভেবে দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাড়িয়ে থাকে।পুরো ম্যারেজ হল মানুষে ভরপুর।এখন নড়াচড়া করাও যাবে না।সূর্য্যি কে দেখে প্রান ফিরে পায় প্রহর।
সূর্য্যি কে ডেকে কাছে নিয়ে আসে।

“মিষ্টি,তোমার চাচ্চু কে ডেকে নিয়ে আসো।”

সূর্য্যি হলের বাইরে গিয়ে দেখে আজরাহান কথা বলছে।ওকে গিয়ে প্রহর এর কথা বললে ও আসে।

“কি হয়েছে প্রহর,এখানে দাড়িয়ে আছিস কেনো??

“আমার জামা ছিড়ে গেছে।”

“কি!!!
তুই কি পাগল?দেখে চলতে পারিস না।”

আজরাহান প্রহর কে আড়াল করে একটা রুমে নিয়ে যায়।

“তুই এখানে থাক আমি আসছি।’

আজরাহান কিছুক্ষন পর একটা প্যাকেট নিয়ে আসে।
একটা সাদা শুভ্র শাড়ী।
আজরাহান বাইরে গিয়ে দাড়ায়।প্রহর এর শাড়ী পড়া শেষ হলে ভিতরে আসে।হা করে দেখতে থাকে প্রহর কে।

“খোঁপা কর চুলে।”

“কেনো??

“গন্ধরাজ এনেছি তোর জন্য।”

“সত্যি !!

“হুম।”

আজরাহান প্রহর এর খোঁপায় গন্ধরাজ ঘুজে দেয়।আঁচলটা ওর মাথায় উঠিয়ে বলে—

“তোকে একদম বউ বউ লাগছে প্রহরিনী।”

“আমি তো আপনার বউ।”

“তোর শরীরের মিষ্টি গন্ধ আমাকে পাগল করে দিচ্ছে রে প্রহরিনী।”

প্রহর চোখ নামিয়ে নেয়।আজরাহান ওকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়।ওর কানে কানে বলে–

“চল এই সুযোগে আমরা ফুলসজ্জা টা সেরে নেই।”

প্রহর আজরাহান এর বুকে কয়েকটা কিল মেরে বলে—

“আপনি এতো পঁচা কথা কেনো বলেন।উজবুক কোথাকার।”

ওরা রুম থেক বেরিয়ে আসতেই সবাই দেখে ওদের।আজরাহান পড়েছে হালকা আকাশ রঙের পাঞ্জাবী।দুজনে কে দেখে মনে হচ্ছে শরতের এক টুকরো আকাশ।যেনো নীল আকাশ তার বুকে জড়িয়ে রেখেছে এক পেঁজা ধবধবে শুভ্র তুলো।

এক কোনে দাড়িয়ে দেখছে মারশিয়াদ।সে বার বার তার কাজলচোখী কে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।বুকের বা পাশের যন্ত্রটা কেনো তাকে ভুলতে পারে না সে জানে না।কেনো তার জীবন থমকে গেলো তার কাজলচোখী নীল নয়নে।অজানা আগ্রাসন ধীরে ধীরে তাকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে।সে কি কোনোদিন এই মৃত্যুসম যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবে না??

“নিঠুর দুনিয়ার নিয়ম বড় অদ্ভুত।যাকে আমরা সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি সে একসময় আমাদের মরণযন্ত্রনার কারণ হয়ে দাড়ায়।আত্নহনন পাপ বলে আজও হাজারো জীবন্ত লাশ আমাদের আশেপাশের ঘুড়ে বেরায়।”

বিয়ের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।নির্ধার কাছ থেকে সম্মতি নিয়ে আসা হয়েছে।এখন শিহরণ এর পালা।কিছুক্ষন পর উপস্থিত সকলের মুখে আলহামদুলিল্লাহ ধ্বনিতে মুখরিত হলো সম্পূর্ন হল।শিহরণ আর তার পিচ্চি আবদ্ধ হলো এক পবিত্র বাঁধনে।
জোয়ার্দার পরিবারের সবাই খুশি।মেয়েকে এমন সুপাত্রের হাতে তুলে দিতে পেরে।

সময় তখন মধ্যরাত।বিয়ের আনুষঙ্গিক সবকিছুই শেষ।এবার ফেরার পালা।প্রহর আজরাহান কে খুজছে।কিন্তু কোথাও নেই।কিছুক্ষনের মধ্যে তা সবার নজরে আসে।আজরাহান কে কল করলে মোবাইল সুইচ অফ পাওয়া যায়।

এক অজানা ভয় গেড়ে বসে কুহেলিকার মনে।তার প্রেশার ফল করে।মারশিয়াদ বাইরে গিয়ে দেখে ওয়াসিম দাড়িয়ে আছে।জানতে পারে সে এ বিষয়ে কিছুই জানে না।সকলে লাগাতার কল করে যাচ্ছে আজরাহান কে।

মারশিয়াদ মনিটরিং রুমে যায়।ফুটেজ এ দেখে আজরাহান হলের বাইরে গিয়ে একটা ক্যাব এ উঠে কোথাও চলে যায়।

থমথমে একটা পরিবেশ বিরাজ করছে।কুহেলিকা অনেকটা নিস্তেজ হয়ে পড়েছেন।নির্ধার ঘাড়ে মাথা রেখে কেঁদে যাচ্ছে প্রহর।

সানোয়ার আহমেদ একটা কল রিসিভ করে।ওপাশ থেকে কিছু একটা শুনতেই তার হাত থেকে মোবাইল পড়ে যায় নিচে।ধুপ করে বসে পড়েন নিচে।অনেকটা গোঙানির মতো আওয়াজ করে বলতে থাকে—-

“এ হতে পারে না।কিছুতেই না।”

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here