অদ্ভুত প্রেমোমোহ তুমি পর্বঃ২৮

0
1788

#অদ্ভুত_প্রেমোমোহ_তুমি
#পর্বঃ২৮
✍️ তাজরিয়ান খান তানভি

সজীবতায় ভরা সকাল।হালকা হীম হীম বায়ু।শুভ্র মেঘের ছড়াছড়ি গগনের বুক জুড়ে।পাখির কিচির মিচির আওয়াজে মুখরিত আকাশপান।

রাস্তায় হেটে চলছে আজরাহান আর সানোয়ার আহমেদ পাশাপাশি।আজ অনেকদিন পর বাবা ছেলে মিলে ভোরের মৃদু রোদে রৌদ্রস্নান করতে বেরিয়েছে।সকালের তাজা হাওয়ার সাথে মিষ্টি রোদ শরীর ও মন দুটোকেই সজীব করে।

“প্রহর কে নিয়ে কি করবি ভেবেছিস??
কোথায় ভর্তি করবি ওকে।”

“ওর তো মেডিকেল এ পড়ার ইচ্ছে।দেখি কি করা যায়।পাগলি টা আমার অফিস যাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছে।এভাবে চললে তো আমার চাকরিটাও নাই হয়ে যাবে।”

“সেটা তোমাকেই ভাবতে হবে,মাই ডিয়ার।ওর রাহান ভাইয়া অবশ্যই ওর ইচ্ছে পূরন করবে।”

“আমি আমার সর্বাত্মক চেষ্টা করবো।”

হঠাৎ করে সানোয়ার আহমেদ পায়ে ব্যথা অনুভব করেন।আজরাহান নিচে বসে তার পায়ের মাংসপেশী হালকা ম্যাসাজ করতে থাকে।

“আরে কি করছিস,রাস্তার মধ্যে তুই আমার পায়ে কেনো হাত দিচ্ছিস??

“বাবার পায়ে সন্তান হাত দিতে পারবে না!!!

“লোকে কি ভাববে??

“লোকের কাজ লোক করবে।আমার কাজ আমি।
এখন ভালো লাগছে, বাবা???

“হুম।”

সানোয়ার আহমেদ এর বয়স হয়েছে।তাই প্রায়ই তার পায়ের রগে টান ধরে।

“প্রহর কে মা কেনো মেনে নিতে পারে না??

“কারণ,পৃথিবীতে মায়ের চেয়ে সন্তানকে কেউ ভালোবাসতে পারে না।”

“প্রহর ও আমাকে ভালোবাসে।”

“কিন্তু তোর মায়ের চেয়ে বেশি নয়।প্রহর এর ভয় তোকে কাছে না পাওয়ার আর তোর মায়ের ভয় তোকে হারিয়ে ফেলার।
দুইজনের ব্যবধান অনেক।”

আজরাহান স্মিত হাসে।তার হাসির কারন তার অজানা নয়।সে তার মায়ের কাছে হীরক খন্ডের চেয়ে কম নয়।

“মা কি কখনো ওকে মেনে নিবে না??

“যেদিন তার বিশ্বাস হবে তোর বেঁচে থাকার জন্য প্রহর এর প্রয়োজন হয়তো সেদিন মেনে নিতেও পারে!!!

“আই উইশ সে সুসময় আমার জীবনাবসান এর আগে ঘটে।”

“ভালোবাসা ফুরাবার নয়।তা কখনো শেষ হয় না।নশ্বর পৃথিবীর এক অবিনশ্বর সত্তা সে।ভালোবাসা শুধু রূপ বদলায়।”

বাবা ছেলে আবার হাটা শুরু করে।রৌদ্রস্নাত ভোর,স্নিগ্ধ সকাল,পাখির ডাক,হিমেল হাওয়া।
,
,
,
ভালোবাসা চৌম্বকের মতো।দুইজন নরনারী পাশাপাশি থাকলে একে অপরকে আকর্ষন করবেই।হয়তো আকর্ষিত হয়ে কাছে আসবে না হয় বিকর্ষিত হয়ে দূরে সরে যাবে।

বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে আছে ইনশিরাহ।আশফিক এসেছে ওকে দেখতে।কিন্তু সেদিকে তার ভ্রুক্ষেপ নেই।

“কেমন আছো??

“কেনো এসেছো??

“দেখতে আসা কি অপরাধ??

“আমি ভালো আছি।”

“মরিচিকার পিছনে ছুটলে শুধু বালুময় মরুভুমির দেখা মিলবে তৃষ্ণা মিটাবার জল পাবে না।”

“হোয়াট ডু ইউ মিন??

“তুমি জানো আমি কি বলছি।
দেখো ইনশিরাহ ভালোবাসা তো আর নারকেলের নাড়ু নয় ইচ্ছে করলো বানিয়ে খেয়ে ফেললাম।কেউ আমাদের ভালো না বাসলে তাকে বাধ্য করলে কি তার মনের ভালোবাসা পাওয়া যায়???

” একদম চুপ।তোমার সাহস কি করে হলো আমাকে নাম ধরে ডাকার??
আপনি করে বলবে।আর আমার ব্যপারে না ভাবলেও চলবে।কোনটা মরিচিকা আর কোনটা স্বপ্নসখা সেটা আমাকে তোমার থেকে জানতে হবে না।তুমি এখন আসতে পারো।”

“ওকে।আজ আমার বোনের হলুদ সন্ধ্যা।কার্ড রেখে গেলাম।স্যার কে বলো।যদি ইচ্ছে হয় এসো।”

“আই এম নট ইন্টারেস্টেড।”

“বিয়ের সমস্ত আয়োজন মারশিয়াদ করছে।
আসি।”

ইনশিরাহ বুঝতে পারে আশফিক তার প্রতি দূর্বল।কিন্তু সে মারশিয়াদ কে চায়।যে কোনো মূল্যে চায়।
,
,
,
হাতে কিছু একটা নিয়ে তা লুকানোর জায়গা খুজে চলছে প্রহর।পথিমধ্যেই ঘরে ঢুকে আজরাহান।

“ওইটা কি তোর হাতে??

প্রহর ওর হাত পিছনে লুকায়।

“কিছু না।”

“একদম মিথ্যে বলবি না।দেখি কি ওটা??”

“বললাম তো কিছু না।”

আজরাহান ওর কাছে গিয়ে কিছুক্ষন ধস্তাধস্তি করে।কিন্তু প্রহর কিছুতেই প্যাকেট তার হাতে দিবে না।আজরাহান ওর হাত থেকে প্যাকেট নেওয়ার চেষ্টায় ওর ঘাড় প্রহর এর মুখের কাছে চলে আসে।প্রহর আর উপায়ন্তর না পেয়ে আজরাহান এর ঘাড়ে কামড় বসিয়ে দেয়।আজরাহান মৃদু শব্দ করে সরে আসে।সে সুযোগে প্রহর বাইরে চলে আসে।নিচে এসে প্যাকেট টা নন্দিতার হাতে দেয়।

“কিরে এতো হাপাচ্ছিস কেনো??

“আর বলোনা,রাহান ভাইয়া ছাড়ছিলই না।তাই আমি ওনাকে কামড়ে দিয়েছি।”

“বলিস কি!!!

“আমার কি দোষ!!
আসতেই দিচ্ছিল না।তুমি এইটা রাখো আমি যাই।”

প্রহর ঘরে এসে দেখে আজরাহান বিছানায় বসে আছে।ওকে দেখেই উঠে এসে দরজার সাথে চেপে ধরে।

“কামড় দিলি কেনো??
আর কি লুকিয়েছিস তুই??

“বলবো না।”

“এখন যদি আমি তোকে কামড় দেই??

“দিন।শোধ বোধ।”

প্রহর ওর ঘাড় হালকা করে আজরাহান এর দিকে এগিয়ে দেয়।

“সহ্য করতে পারবি??

“পারবো।”

আজরাহান ওর কানের কাছে গিয়ে বলে—

“আমি তোর ঠোঁটে কামড় দিবো।”

প্রহর ভ্রু কুচকে চোখ ছোট করে।ওকে ধাক্কা মেরে বলে–

“সরুন এখান থেকে।আদিখ্যেতা !!

আজরাহান বিছানার উপর বসে।প্রহর ফাস্টএইড বক্স এনে ওর কামড় এর দাগটা মুছে সেখানে অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দেয়।প্রহর ঘুরে দাড়াতেই আজরাহান ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।নিজের অধর স্পর্শ করায় প্রহর এর উন্মুক্ত পিঠে।আজরাহান এর শীতল অধরের স্পর্শে প্রহর এর দেহের লোমকূপ পর্যন্ত শিউরে উঠে।ঘাড়ে পড়ন্ত আজরাহান এর উষ্ণ নিঃশ্বাস প্রহর এর শীতল অঙ্গের শিরা -উপশিরাকে এক অদ্ভুত উষ্ণতায় আন্দোলিত করে।

আজরাহান এর মোবাইল বেজে উঠে।বিছানায় বসে প্রহর কে নিজের হাটুর উপর বসায়।কথা বলছে আজরাহান আর প্রহর ছোট ছোট ফু দিয়ে যাচ্ছে আজরাহান এর ঘাড়ের সেই কামড়ের উপর।

“ব্যথা লাগছে রাহান ভাইয়া??

“কামড় দেওয়ার আগে মনে ছিলো না??

“আপনিই তো ছাড়ছিলেন না।”

“দৈত্যি কোথাকার!!

প্রহর খিলখিল করে হেসে উঠে।

“হাছিস কেনো তুই??

“দৈত্যি আবার কি??

“দৈত্যের ফিমেল ভার্শন।
তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।”

“কি পড়বো আমি??

আজরাহান ভ্রু কুঞ্চি করে।

“কাপড় না পরেই যা।”

“পঁচা কথা কেনো বলেন আপনি??

“তাহলে জিঙ্গেস করলি কেনো??

“হলুদে তো সবাই শাড়ী পড়বে।আমার তো শাড়ী নেই।”

আজরাহান উঠে দাড়ায়।

“শাড়ী লাগবে না।”

“কেনো??

“কারণ তোকে শাড়ী পড়া দেখবো শুধু আমি।
তাড়াতাড়ি রেডি হ।”
,
,
আজরাহান নিচে এলে নুরাইসা হাসি হাসি মুখে বলে–

“এখন কেমন আছো??

“ভালো।”

নুরাইসা ওকে হাত ধরে কিচেনে নিয়ে যায়।কিচেনের তাকের সাথে হেলান দিয়ে দাড়ায় আজরাহান।নুরাইসা ওর তৈরি করা কেক তুলে দেয় আজরাহান এর হাতে।আজরাহান এর ভ্যানিলা ফ্লেভার পছন্দ।কিন্তু নুরাইসার চকলেট।কিন্তু ও সবসময় ভ্যানিলা ফ্লেভার এর কেক ই বানায়।

“কেমন হয়েছে??

“এজ ইজুয়েল।”

নুরাইসা ছোট্ট করে হাসে।আজরাহান খেয়ে যাচ্ছে।নুরাইসা এক পলকে চেয়ে আছে ওর দিকে।

“তোমাকে কেক বানানো শিখিয়েছে কে??

“কেনো??

“তার হাতে একটা চুমু খেতাম।”

নুরাইসা ওর হাত সামনে বাড়িয়ে বলে–

“তোমার পছন্দের কেক আমি নিজেই বানানো শিখেছি।এখন চুমু টা আমার হাতে খাও।”

“ওকে।”

আজরাহান ওর হাতে চুমু দিতেই প্রহর এসে দাড়ায় সেখানে।ওদের দেখে আবার চলে যায়।

“প্রহর এসেছে।”

“আসতে দাও।
তুমি যাবে আমাদের সাথে??

“আজ না।বিয়ের দিন যাবো।”

“ওকে।কেক এর জন্য ধন্যবাদ নুরাজান।”

নুরাইসা এক গাল হাসে।
,
,
বারান্দায় দাড়িয়ে আছে প্রহর।দুরপ্রান্তে তার দৃষ্টি।আজরাহান শান্তপায়ে ওর পাশে এসে দাড়ায়।

“এখনো রেডি হলি না কেনো???

প্রহর নির্বাক।

“কিরে কথা বলছিস না কেনো??

“কেনো এসেছেন এখানে??
যান আপনার নুরাজান এর কাছে।”

“এইসবের মানে কি??

“আপনি জানেন না!!
কি করছিলেন ওর সাথে??

“আজকাল তুই বেশিই বাড়াবাড়ি করছিস।”

“ও আমি বাড়াবাড়ি করি তাই না!!

প্রহর হঠাৎ করে আজরাহান এর শার্টের কলার ধরে ঝাকিয়ে বলে–

“কেনো চুমু খেলেন আপনি তার হাতে??

আজরাহান ওর হাত নামিয়ে দেয়।

“হাতেই খেয়েছি,অন্য কোথাও না।”

প্রহর এর অক্ষিপল্লব বেয়ে ঝড়ছে শ্রাবনের অঝোড় ধারা।

“অন্য কোথাও খাওয়ার ইচ্ছে ছিলো আপনার!!!

“কেনো কথা বাড়াস তুই??
যা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।”

“যাবো না আমি।কোথাও যাবো না।”

“ঝামেলা করিস না প্রহর।”

“এতোই যখন তাকে পছন্দ তাহলে তাকেই বিয়ে করতেন।আমাকে কেনো বিয়ে করলেন???

প্রহর সামনে পা বাড়ায়।আজরাহান ওর হাত চেপে ধরে।আজরাহান নির্লিপ্তভাবে তাকিয়ে আছে প্রহর এর নীল অক্ষিগোলকে।অস্ফুটভাবে মনে মনে আওড়াতে থাকে,,,,,”যতদিন আমি তোর কাছে আছি তুই কখনো বুঝবি না কেনো আমি তোকে বিয়ে করেছি””—যা প্রহর শুনতে পায় না।

আজরাহান ওর হাত ছেড়ে বারান্দার দেয়ালে হাত দিয়ে একটু ঝুকে দাড়ায়।দুরের একটা মাঠে কিছু বাচ্ছা খেলছে।পথশিশু ওরা।প্রায়ই এখানে দাঁড়িয়ে আজরাহান ওদের দেখে।পৃথিবীটা ওদের কাছে একটা গোলকধাঁধা।সবকিছু থেকেও কিছুই নেই ওদের।পৃথিবী ওদের অস্তিত্ব স্বীকার করতে চায় না।

“আকাশ আজ সেজেছে দেখো
তোমার নীলিমায়
সাঁজের কিরণ ডুবছে দেখো
পূর্নিমার মায়ায়
আমি আপনাকে তোমাতেই হারাই
তোমাতেই খুজে ফিরি
পৃথিবীর সব পাওয়ার মাঝে
আমি শুধু তোমায় চেয়েছি।”

“যেদিন আমি থাকবো না সেদিন বুঝবি।”

প্রহর ধুপ করে নিচে বসে পড়ে।ঝড়ঝড় করে বইতে থাকে আষাঢ়ের বাদল ধারা।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here