#অদ্ভুত_প্রেমোমোহ_তুমি
#পর্বঃ৩৫
✍️ তাজরিয়ান খান তানভি
বাড়ির ভিতর পা রাখতেই কেমন যেনো সব থমথমে মনে হচ্ছে আজরাহান এর কাছে।বাড়ির প্রায় সকলেই বসার রুমে বসে আছে।আজরাহান ঢুকতেই সানায়া এসে দাড়ায়।
“কোথায় ছিলি তুই??
“একটা কাজে।সবার মুখে এমন আষাঢ়ের কালো মেঘ এসেছে কেনো?
“তুই ডক্টর এর কাছে গিয়েছিলি??
“হ্যাঁ।কেনো রিপোর্ট এসেছে??
“হুম।”
সানায়া ওর হাতে রিপোর্ট দেয়।আজরাহান রিপোর্টে এ চোখ বুলিয়ে অধর প্রসারিত করে।
“লে,,হলো তো এইবার।কতবার বললাম আমার কিছুই হয়নি।শুধু শুধু আমার মাথা টা খেলে তোমরা।”
বাড়ির সবার মনে বসন্তের ফুল ফুটেছে।আজরাহান টেস্ট করিয়েছে যার সবকিছুই নর্মাল।শুধু বলেছে কিছুদিন রেস্ট নিয়ে যে মেডিসিন প্রোভাইড করেছে তা রেগুলার কন্টিনিউ করতে।
আজরাহান ওর মায়ের পাশে গিয়ে তার কোলে মাথা রাখে।
“কুইন,আমি বলেছিলাম না আমার কিছুই হবে না।”
কুহেলিকা ওর মাথায় হাত বুলাতে থাকে।মা পৃথিবীর সেই ব্যক্তি যে বিনা বাক্যে নিজের জীবন দান করে সন্তানের জন্য।
জৈনক ব্যক্তি হযরত মুহাম্মদ (সঃ)জিঙ্গেস করলেন,যে হে প্রিয় নবী আমি আমার বাবা মায়ের মধ্যে কার হক আগে আদায় করবো??
উত্তরে তিনি বললেন–তোমার মা।
ব্যক্তিটি এরূপভাবে নবী কারীম(সঃ) কে তিনবার উক্ত প্রশ্ন করলে তিনি চতুর্থ বারে বললেন বাবা।
এ থেকেই বুঝা যায় মায়ের গুরুত্ব কতো!!
এই জন্যই তো হাদিসে আছে”মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত।”
কুহেলিকার মনে প্রশান্তির বর্ষন হচ্ছে যা তার চোখের চাহনি তে প্রকাশ পাচ্ছে।সানায়া ওর সামনে এসে বলে–
“তুই ডক্টর এর কাছে গেলি আমাকে সাথে নিলি না কেনো??
“তোমার এই ঢোল নিয়ে যেতে আমার সাথে!!
“একটা চড় দিবো।”
“কুইন,তোমার এই কর্নপিশাচি কে বলে দাও আমাকে নিয়ে এতো চিন্তা না করতে।আমার মামাই কে নিয়ে ভাবতে।”
আজরাহান উঠে নন্দিতার কাছে এসে দাড়ায়।
“ভাবী,প্রহর কোথায়??
“ও ওর ঘরেই আছে।”
“খেয়েছে ও??
“তা নিয়ে ভাবার সময় তোমার আছে??
“তুমিও রাগ করেছো আমার উপর??
“মেয়েটার গায়ে হাত না তুললেও পারতে।”
“ও আমাকে কী বলেছে তা নিশ্চয়ই তুমি শুনেছো??
“প্রহর অবুঝ।তাই বলে ফেলেছে।তাই বলে তুমি ওর গায়ে হাত তুলবে??
অবশ্য তোমার কী দোষ রক্তের টান বলেও তো একটা কথা আছে।”
খাবার টেবিলেই বসা ছিলো সামান।ও বেশ বুঝতে পারে নন্দিতা শেষের কথাটা ওকেই বলেছে।ওদের দুজনের সম্পর্ক এখনো আদায় কাচকলায়।সামান সময় পাচ্ছে না আজরাহান এর সাথে কথা বলার।সামানের দিকে একবার তাকিয়ে আজরাহান প্রহর এর ঘরের দিকে যায়।
,
,
দরজা খোলা রেখেই বিছানায় এলোপাথাড়ি হয়ে ঘুমিয়ে আছে প্রহর।কফি কালারের চুড়িদার এর নিচে ওর শুভ্র পা দুটো বেরিয়ে আছে।উপুর হয়ে শুয়ে থাকার কারনে ওড়না নিচে পড়ে আছে।আজরাহান ওর পা স্পর্শ করতেই উঠে বসে প্রহর।না খেয়ে দুদিন বেশ ঘুমিয়েছে প্রহর।চোখের সাথে গাল দুটোও ফুলে আছে।আজরাহান ওর ওড়না টা গায়ে জড়িয়ে দিয়ে ওর পাশেই বসে।
“কেনো এসেছেন আপনি??
চলে যান,চলে যান এখান থেকে।”
আজরাহান কিছু বললো না।উঠে পড়ে বিছানা থেকে।প্রহর তখনি ওর হাত চেপে ধরে।
“রাহান ভাইয়া।”
আজরাহান আবার ওর পাশে বসে।
“তাহলে চলে যেতে বললি কেনো??
“বললেই আপনি চলে যাবেন!!
“না খেয়ে শুয়ে আছিস কেনো??
“খেতে ইচ্ছে করছে না।”
“না খেয়েই তো শরীরটাকে ফড়িং এর মতো বানিয়েছিস।”
আজরাহান হাটু গেড়ে ফ্লোরে বসে।
“পা দে।”
“কেনো??ভেঙে দিবেন??
“ভাঙলে অনেক আগেই ভাঙতাম।দে।”
প্রহর ওর পা আজরাহান এর হাটুর উপর রাখে।আজরাহান বুকপকেট থেকে একটা পায়েল বের করে প্রহর এর পায়ে পড়িয়ে দেয়।লক টা লাগানো যাচ্ছে না দেখে ও দাঁত দিয়ে চাপ দেয়।আজরাহান এর মুখের ভেজা স্পর্শ লাগতেই প্রহর পা টেনে নেয়।
“কিরে,,,টেনে নিলি কেনো!!আমি কী খেয়ে ফেলছি না কি তোর পা??
“আপনি এভাবে আমাকে ছোবেন না।”
আজরাহান বুঝতে পারে ওর অস্থিরতা।আবার গিয়ে ওর পাশে বসে।
“ব্যথা পেয়েছিস??
“মারলেন কেনো আপনি আমাকে??
“তুই কী করে ভাবলি আমার সম্পর্কে এইসব??
প্রহর কোনো কথা বলে না।সে বুঝতে পেরেছে তার বলা কথা গুলোও ঠিক ছিলো না।
“সরি।”
আজরাহান ওর কোলে শুয়ে পড়ে।প্রহর ওর চুলে হাত দিয়ে আওড়াতে থাকে।
“দুটো গুড নিউজ আছে।একটা তোর জন্য একটা আমার জন্য।বল কোনটা আগে বলবো??
প্রহর এক গাল হেসে বলে–
“আমার টা।”
“তোর এডমিশন করিয়েছি।”
প্রহর এর মুখটা গোমড়া হয়ে যায়।
“কে বলল আমাকে ভর্তি করাতে??
“তাহলে কী গন্ডমূর্খ থাকবি নাকি!!
“আমার পড়তে ভালো লাগে না রাহান ভাইয়া।”
“কী করতে ভালো লাগে।আমার সাথে ঝগড়া করতে!!
“আরেকটা গুড নিউজ বলেন।”
“আমার চাকরি হয়েছে।”
“কী!!!!
“জ্বি।”
“কোথায় হয়েছে??
“একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি।”
কিন্তু,,,
“কিন্তু কী??
“আমার পোস্টিং এখানে না চট্রগাম।”
“কী বলছেন??
আজরাহান উঠে বসে।প্রহর এর গালে অধর ছুইয়ে বলে–
“কেনো কী সমস্যা??
“আপনি আমাকে ছেড়ে চলে যাবেন??
“কে বলল আমি তোকে ছেড়ে যাবো??
প্রতি সপ্তাহে দুদিন ছুটি।আমি প্রতি সপ্তাহে আসবো।”
“না,না।ছেড়ে দিন এই চাকরি।”
“এতো ভালো জব ছাড়া যাবে না।”
“ছোট মা যেতে দিবে আপনাকে??
“কাউকে এখনো বলি নি।আমি পারবো রাজি করাতে।”
“তাহলে আমাকে কেনো বললেন??
“কারন তুই আমার রসগোল্লা।তাই।”
আজরাহান মাথার নিচে দুই হাত দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে।প্রহর ওর দিকে তাকিয়ে বলে–
“কোনো দরকার নেই এই চাকরির।ছেড়ে দিন আপনি।আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।”
আজরাহান ওকে টেনে নিজের বুকের উপর শোয়ায়।ওর ঘন চুলে আঙ্গুল ঘুজে দেয়।
“আমি কী তোকে ছাড়া থাকতে পারি!!বললাম তো প্রতি সপ্তাহে আসবো।”
“না।কোনো দরকার নেই।আপনি যাবেন না।কোথাও যাবেন না।”
“পাগলামি করিস না প্রহর।তোর কলেজের অনেক খরচ।”
প্রহর উঠে বসে।ছলছল আঁখি তে বলে–
“করবো না আমি পড়ালেখা।”
আজরাহান উঠে ওকে জড়িয়ে ধরে।
“আমার মৃত্যু ছাড়া তোকে আমার কাছ থেকে কেউ আলাদা করতে পারবে নারে প্রহরিনী।”
,
,
,
চোখের পলক না ফেলে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে নুরাইসা সামনে থাকা সুদর্শন ব্যক্তিটির দিকে।লালচে বাদামী চুল বাতাসে ঢেউ খেলে যাচ্ছে।চোখের মনি দুটো কালো নয় কিন্তু অদ্ভুত মায়া তাতে।টেবিলে থাকা পিজ্জার একেক পিস খেয়ে যাচ্ছে সে।
“কেনো ডেকেছেন আমাকে??
পিজ্জার এক টুকরো মুখে পুরে গমগম করে বলে–
“শিরা -উপশিরা আপনাকে কিছু বলেনি??
“নাহ।”
“পিজ্জা খাবেন??
“নো থ্যাংকস।”
“আমি কী এখন যেতে পারি??
“আপনাকে দেখা এখনো আমার শেষ হয়নি।”
“হোয়াট ডু ইউ মিন??
একটা কালো রঙের টপস আর প্যান্ট পড়েছে ইনশিরাহ।এসেই মারশিয়াদ এর পাশে বসে।
“কথা শেষ তোমাদের??
“কিসের কথা!!
তোমার এই চিটচিটে বয়ফ্রেন্ড কে বলো একদম আমার সাথে ফ্লাট না করতে।”
ইনশিরাহ চোখের পাঁপড়ি প্রশ্বস্ত করে।ফ্লাট আর মারশিয়াদ!!!
“এইসব কী বলছে ও??
“সেটাতো তোমার বান্ধবী জানে।”
ইনশিরাহ ওর সামনে কিছুদূরে থাকা আয়নায় দেখতে পায় আশফিক কে।
“এই হাঁদারাম কে আবার কে ডাকলো??
“আমি।”
“তুমি??
“হ্যাঁ।”
আশফিক এসে ইনিশিরাহ এর সামনের চেয়ার এই বসে।
“তুমি এখানে এলে কেনো??
“মারশিয়াদ আসতে বলল তাই।”
“ও বললেই তোমাকে আসতে হবে??
নুরাইসা বিরক্ত হয়ে উঠে দাড়ায়।পার্সটা কাঁধে ঝুলিয়ে বলে–
“তোমরা ঝগড়া কর আমি আসি।”
নুরাইসা কিছুদূর যেতেই চেয়ারে হেলান দিয়ে মারশিয়াদ বলে—
“এই যে মিস নুরজাহান,আপনার মোবাইল!!!
নুরাইসার মনে পড়ে ও মোবাইলা টা টেবিলের উপড় ফেলে রেখে গেছে।ফিরে এসে মোবাইল নিতে গেলেই তা খপ করে নিয়ে নেয় মারশিয়াদ।নুরাইসার মোবাইল থেকে নিজের মোবাইলে কল করে।তারপর দিয়ে দেয়।
“এইটা কী ধরনের অসভ্যতা??
“সভ্যতার বড় ভাই অসভ্যতা।”
নুরাইসা ভ্রু ক্রটি করে।চোখ ছোট ছোট করে বলে–
“আমার নাম নুরজাহান নয়।”
বলেই হিড়হিড় করে চলে যায়।মারশিয়াদ চেয়ার থেকে উঠে বলে–
“আশফিক,তুমি উপশিরা কে বাসায় পৌছে দিও।আমি আসি।”
ইনশিরাহ ওর সামনে এসে দাড়ায়।
“কোথায় যাচ্ছ তুমি??
“রাতে কথা হবে।এখন সময় নেই।”
ইনশিরাহ কয়েকবার ওকে পিছু ডাকে।
মারশিয়াদ গিয়ে নুরাইসার সামনে দাড়ায়।
“মেয়ে না ঘোড়া আপনি,এতো দ্রুত কেউ হাটে??
“কেনো এসেছেন আপনি??
“”চলেন,আপনাকে বাসায় দিয়ে আসি।”
“কোনো দরকার নেই।”
“রাগলে কিন্তু আপনাকে সত্যিই নুরজাহান এর মতোই লাগে।”
“কে সে??
“গাড়িতে বসেন।আমি বলছি।”
অনিচ্ছা থাকা সত্বেও নুরাইসা মারশিয়াদ এর গাড়িতে বসে।
“কে নুরজাহান??
“আপনি।”
“আপনার সমস্যা কী বলেন তো??
“আপনি আপনার বোনের শশুর বাড়ি কেনো থাকেন??
“তাতে আপনার কী??
“আজরাহান আর ওর স্ত্রী র মাঝখান থেকে সড়ে দাড়ান।”
নুরাইসা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।
“ও এই কথা বলতে আপনি আমাকে ডেকছেন!!!
“নাহ,আপনাকে বিয়ে করতে।”
“আমি বুঝিনা আপনার মতো ছেলের প্রেমে পড়লো কী করে ইনশিরাহ!!
মারশিয়াদ ঠোঁট বাকিয়ে হাসে।
“শুধু শুধু কাবাবে হাড় হয়ে কী লাভ বলেন!!
কাবাবে হাড় আমার একদম পছন্দ না।”
“কেমন পুরুষ আপনি??
নিজের ভালোবাসা কে অন্যের করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন!!!
“সে আমার অপার্থিব ভালোবাসা।
ও আপনি বুঝবেন না।আপনি ওদের দুইজনের মধ্যে কাঠালের আঠা মতো লেগে থাকবেন না।”
“কী করবেন তাহলে আপনি??
“বিয়ে করে নিবো আপনাকে।কাঁঠালের আঠা ছাড়াতে তো সরিষার তেল হয়ে আমাকেই মাঝে আসতে হবে তাই না!!!
“ইউ আর রিডিকুলাস!!!
মারশিয়াদ আবারও ঠোঁট বাকিয়ে হাসে।
,
,
,
ঘরে ঢুকতেই দেখে পুরো ঘর অন্ধকারময়।গন্ধরাজ এর তীব্র গন্ধ।আজরাহান হাতড়ে লাইট অন করে।বিছানায় এক হাত ঘোমটা টেনে বসে আছে প্রহর।ঘরজুড়ে গন্ধরাজ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
“কিরে শাখচুন্নি,ঘরের অবস্থা কী করেছিস??
প্রহর ঠুস করে ঘোমটা টা ফেলে বিছানার উপড় দাড়িয়ে পরে।
“দিলেন তো রোমান্সের বারোটা বাজিয়ে।কোথায় এসে আমার ঘোমটা উঠাবেন তা না আমাকে শাখচুন্নি বললেন।”
প্রহর নিচে এসে দাড়ায়।আজরাহান ওকে কাছে টেনে নেয়।
“আপনি আসলেই একটা হনুপাঞ্জি।
কোথায় ছিলেন আপনি??
“বাইরে।”
“আমাকে ছেড়ে বাহিরে থাকতে আপনার ভালো লাগে??
“আজকে দেখি আমার রসগোল্লার মুখে খই ফুটেছে!!
“আপনার মাথা।”
“তোর ঠ্যাং।”
“আপনার মুন্ড।”
“আমার কলিজা তুই।”
“আর ডঙ দেখাতে হবে না।”
“এই শাড়ি কোথায় পেলি??
“কিনে এনেছি।”
“তোকে না বাইরে যেতে নিষেধ করেছি।”
“অনলাইনে অর্ডার করেছি।”
“টাকা পেলি কোথায়??
প্রহর একটু দুরে গিয়ে দাড়ায়।
“চুরি করেছি।”
“তোর এই স্বভাব এখনো গেলো না!!এখন টাকা চুরি করা শিখেছিস।”
প্রহর হেসে উঠে।
“আর কখনো এমন করবি না।টাকা লাগলে চেয়ে নিবি।”
প্রহর একটা নীল রঙের পাঞ্জাবী এনে দেয় আজরাহান কে।
“এইটা পড়ে আসেন।”
“এইটা কোথায় পেলি।”
“কাপল ড্রেস অর্ডার করেছি।”
আজরাহান ওর শার্ট এর দুটো বাটন খুলতেই প্রহর দু হাত দিয়ে চোখ ঢাকে।
“এই এই কী করছেন!!
ওয়াশরুমে যান।”
“কেনো এখানে করলে কী সমস্যা??
“না না না।আপনি ওয়াশরুমে যান।”
“শার্টই চেঞ্জ করছিলাম প্যান্ট না।”
“আপনি এতো পঁচা কথা বলেন কেনো??
“কী মেয়ে বিয়ে করলাম!!এখন তো মনে হচ্ছে আমার অনাগত ভবিষ্যৎ অন্ধকার।”
প্রহর খিলখিলিয়ে হেসে উঠে।বিছানায় বসে কিঞ্চির দিকে তাকিয়ে বলে–
“কি হিংসে হচ্ছে তোর??দেখলি রাহান ভাইয়া তোর চেয়ে আমাকে বেশি ভালোবাসে।”
আজরাহান পাঞ্জাবী পড়ে বাইরে বেরিয়ে আসে।প্রহর হা করে তাকিয়ে দেখে।তার রাহান ভাইয়া যেনো আজ নীল অপরাজিতা।আজরাহান এর প্রতি প্রহর এর ভালোবাসা অনেকটা এরকম যেমন কোনো ছোট বাচ্চার কাছে তার প্রিয় বারবি ডল যা সে কোনো কিছুর বিনিময়ে হারাতে চায় না।
“আপনাকে তো অনেক সুন্দর লাগছে।”
“আমি তো জন্মগতভাবেই সুন্দর।তোর মতো শ্যাওড়া গাছের পেত্নি নাকি??
“চলেন,আপনাকে আমি খাইয়ে দেই।”
“আজ এতো মহাব্বত কেনো রে??
“আপনি এই চাকরি টা ছেড়ে দিন না রাহান ভাইয়া।”
“সম্ভব না।কিন্তু কথা দিচ্ছি অন্য একটা চাকরি পেলে এইটা ছেড়ে দিবো।”
“সত্যি !!!
“হুম।”
,
,
চোখের উপর হাত দিয়ে ঘুমিয়ে আছে আজরাহান।কিছু একটার আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায়।বিছানায় হাত দিয়ে দেখে প্রহর নেই।ঘুমে ডুলুমুলু আজরাহান প্রহর কে ঢাকতে থাকে।লাইট অন হতেই তীব্র আলোক রশ্মিতে আজরাহান এর চোখ বুঝে আসে।
“এই মাঝরাতে কী শুরু করলি তুই??
“হ্যাপি বার্থডে রাহান ভাইয়া।”
“তোকে কে বলল আজ আমার জন্মদিন??
“আপনার ভুতে।”
প্রহর আজরাহান কে টেনে বসায়।ছোট্ট একটা টুলের উপর একটা এক পাউন্ডের মতো হবে কেক রাখা।
“ফুঁ দিন।”
“এইসব কী শুরু করলি তুই।আমি কী বাচ্চা??
“নাহ, আপনি বুড়ো ঢ্যামনা।”
আজরাহান কেক কেটে প্রহর কে খাইয়ে দেয়।প্রহর কেকের ক্রীম নিয়ে আজরাহান এর মুখে লাগিয়ে দেয়।
“বাদরামী করিস কেনো তুই??
“কুঁতরামি করেন কেনো আপনি??
“এইটা আবার কী??
“বাদর করলে বাদরামি আর কুকুর করলে কুতরামি।”
“আমি কুকুর!!!
তবে রে,,,,
আজরাহান প্রহর রে দৌড়ে ধরতে গেলে ধপাস করে বিছানার উপর পড়ে যায় প্রহর আর তার উপর আজরাহান।
“ইশশ,,
সরেন।কী ভারী আপনি!!
আজরাহান সরে বসে।আচমকা প্রহর কে ক্রোড়ে নিয়ে নেয় আজরাহান।
“আরে কী করছেন??
“চল,তোকে তোর রিটার্ন গিফ্ট দিবো।”
আজরাহান প্রহর কে ছাদে নিয়ে যায়।ছাদের রেলিং এর পাশে দাড় করায়।হঠাৎ পুরো আকাশ ঝলমল করে উঠে ফায়ারওক এ।প্রহর এর চোখে আলোর ঝলকানি স্পষ্ট।
“রাহান ভাইয়া এইটা কখন করলেন আপনি??
“কেনো, আমার রসগোল্লা আমার জন্য এতোকিছু করত পারে আমি তার জন্য কিছু করতে পারি না।”
প্রহর আজরাহান জড়িয়ে ধরে বলে —
“থ্যাংক ইউ।”
ছাদের দেয়ালে হাত রেখে ফায়ারওক দেখতে থাকে যা একের পর আকাশে জ্বলছে।
কিছুক্ষন পরেই বাড়ির সবাই এসে উপস্থিত হয় সেখানে।আজরাহান অবাক হয়।এ সবকিছুই প্রহর এর প্ল্যান ছিলো।আবারও কেক কাটা হয়।এক আনন্দঘন মুহূর্তের সূচনা হয় আজরাহান দের পরিবারে অনেকদিন পর।
চলবে,,,