অদ্ভুত প্রেমোমোহ তুমি পর্বঃ৩৬

0
1784

#অদ্ভুত_প্রেমোমোহ_তুমি
#পর্বঃ৩৬
✍️ তাজরিয়ান খান তানভি

ভালোবাসার বিশুদ্ধতা পরিমাপ করার কোনো যন্ত্র আজও আবিষ্কার হয়নি।যতই তার গভীরে যাওয়া যায় ততই এর অনুভুতি তীব্র থেকে তীব্র হয়।

বিছানায় উপুর হয়ে ঘুমে আচ্ছন্ন মারশিয়াদ।সারারাত জেগে একটু আগেই ঘুমিয়েছে।ভোরের স্নিগ্ধতা অনেক দিন তার দেখা হয় না।অপূর্নতার মাঝেই সে পূর্নতা খুজে নিয়েছে।ভালোবাসাও বড় অদ্ভুত।যাকে একবার মনের ঘরে জায়গা করে দেওয়া হয় তার স্মৃতি বড় পোড়ায় হৃদয়কে।যা খালি চোখে দেখা যায় না।আমরা ইচ্ছে করলেই পারি নতুন করে কাউকে ভালোবাসতে,ইচ্ছে করলেই পারি নতুন কাউকে নিয়ে ঘর বাধতে।কিন্তু আদৌ কী সেই মানুষটাকে ভুলতে পারি যাকে সবটা উজাড় করে ভালোবেসেছি!!!
তাহলে কেনো অন্যের সাথে নিজেকে জড়িয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলার ব্যর্থ চেষ্টা করবো!!!
থাক না কিছু ভালোবাসা শিরোনামহীন।থাক না কিছু প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির খাতায়।খরস্রোতা নদী কখনো তো থামবে!!!

মারশিয়াদ পুরো রাত তার অপার্থিব ভালোবাসার পদযুগলে সমর্পণ করেছে।

ঘুমের মধ্যেই এক ধাক্কা অনুভব করে মারশিয়াদ।ঘাড় ঘুরিয়ে আলুথালু হওয়া চুলের ফাঁক দিয়ে ফিরে তাকাতেই দেখে বিস্ফোরিত চোখে এক আগুনের গোলা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শিহরণ।ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে–

“কিরে তুই এতো সকালে??

শিহরণ শক্ত কন্ঠে বলে–

“তোর সাথে কথা আছে।”

“কথা পরে।এখন আমার ঘুমের সময়।”

মারশিয়াদ আবারও ঘাড় ফিরিয়ে তার বালিশের উপর রাখে।নির্ঘুম থাকার ফলে কিছুক্ষনের মধ্যে ঘুমের বর্ষন হয় তার চোখে।শিহরণ চেচেয়ি বলে–

“তুই কী উঠবি নাকি লাথি মেরে তোর কোমড় ভাঙবো!!

“সকাল সকাল কী শুরু করলি???

মারশিয়াদ বিছানায় দু হাতের ভর দিয়ে উঠে বসে।ও উঠে বসতেই শিহরণ ওয়াশরুম থেকে এক বালতি পানি এনে ওর মাথায় ডেলে দেয়।ধুম করে উঠে দাড়ায় মারশিয়াদ।

“পাগল হয়ে গেলি নাকি??

“যা ফ্রেশ হয়ে আয়।”

মারশিয়াদ চুল দিয়ে চুইয়ে পড়া পানি হাত দিয়ে মুছে নেয়।দাঁতে দাঁত চেপে চোখ রাঙিয়ে বলে–

“শালা নির্ধারণ,এর শোধ আমি তুলে ছাড়বো।”

মারশিয়াদ ওয়াশরুমে গেলে শিহরন করিডোরে এসে কাউচে বসে।কিছুক্ষন পর শাওয়ার নিয়ে ওর পাশেই বসে মারশিয়াদ।মাত্র ঘুমিয়েছিলো।কাঁচা ঘুম ভেঙে যাওয়াতে মাথার স্নায়ু গুলো দৌড়ে বেড়াচ্ছে।কপালের উপর দিকটা ব্যথায় ফেটে যাচ্ছে।ঠিক মাথার উপরের দিকটায় যেনো ঘন্টা বেজে যাচ্ছে সে এক অস্বস্তিকর অবস্থা।মাথাটা দেয়ালের সাথে এলে দেয় মারশিয়াদ।

“বল কী বলবি??

শিহরণ হালকা ঘুরে একপা কাউচের উপর রেখে মারশিয়াদ এর দিকে মুখ করে বসে।

“নুরাইসার সাথে তোর কীসের সম্পর্ক??

মারশিয়াদ ওর বন্ধ চোখের একটা হালকা খুলে বলে–

“বিয়ে করবো ওকে আমি।”

“পাগল হয়ে গেছিস তুই??

“কেনো,আমার কী বিয়ের বয়স হয়নি???

“মাথা গরম করবি না আমার।”

“শিরা-উপশিরা বলেছে তোকে??

“তুই কী সত্যিই ওকে বিয়ে করবি??

“তোর কী মনে হয়??

“জানি না।”

মারশিয়াদ উঠে গিয়ে খোলা বারান্দায় গিয়ে দাড়ায়।ওর বাড়ির আশেপাশে তেমন বাড়ি ঘর নেই।অনেকটা নির্জন বললেই চলে।মূল ভবনের সাথেই লাগোয়া একতলা গেস্ট হাউস।যার প্রবেশ পথ মূল ভবন হয়ে যায়।চারদিকে সবুজের সমারোহ।এতটা গাছপালা যে একজন মানুষ অনায়াসে গাছের আড়াল হতে পারে।
ওরা দুজন পাশাপাশি দাড়িয়ে।নিস্তব্ধতা গ্রাস করছে পুরো পরিবেশ।মারশিয়াদ এর দীর্ঘশ্বাস তাতে ছন্দের পতন ঘটায়।

“পাথরে কখনো ফুল ফুটতে দেখেছিস?

শিহরণ ভ্রু ক্রটি করে বলে–

“নাহ।”

“তাহলে আমার জীবনেও ভালোবাসার ফুল আর কখনো ফুটবে না।”

“তাহলে এইসব কেনো করছিস??

“নুরাইসা আজরাহান আর আমার কাজলচোখীর মাঝে চীনের প্রাচীর হয়ে দাড়িয়েছে।”

“তাতে তোর কী??

“তার সুখের সারথী না হয় আমি না হলাম কিন্তু আমার কাজলচোখীর চোখের জল ঝড়ানোর অধিকার কারো নেই।আমি চাই না আমার মতো তার ভালোবাসায় কোনো অপ্রাপ্তি থাকুক।আই উইশ, পৃথিবীর সর্বসুখ যেনো তার প্রাপ্তি হয়।আর তার একমাত্র উপায় আজরাহান।”

শিহরন অস্ফুটভাবে বলে—

“আসসসস্ শিট!!!
তোর কীসের ঠ্যাকা রে???গাঙের জলে ভেসে যাক আজরাহান আর ওর বউ।তাতে তোর কী??
ওই মেয়ে কী একবারও ভেবেছে তোর কথা??

“এতে তার দোষ নেই।আজরাহান তার জীবনের প্রথম পুরুষ যাকে সে তার সবকিছু দিয়ে ভালোবেসেছে।
আমি যেমন আমার প্রথম ভালোবাসাকে মৃত্যুর পরও ভুলতে পারবো না ঠিক তেমন তার এই পার্থিব জীবনের সমস্ত অধিকার তার রাহান ভাইয়ার।
কাছ থেকে না হোক দূর থেকেই না হয় আমি তাকে ভালোবাসবো।ভালোবাসা প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি বোঝে না।
কোনো বাবা,মা কী তার সন্তানকে কোনো কিছুর বিনিময়ে ভালোবাসে??
নাহ।তাদের ভালোবাসা নিঃস্বার্থ যার ছোয়া পরশ পাথরের মতো।
আমার ভালোবাসা অপার্থিব।আমি তার জন্য পরজন্মে অপেক্ষা করবো।”

শিহরণ বাজখাই গলায় বলে–

“আর একটা কথাও বলবি না তুই।আমি আজই টিকেট কাটবো।আর আগামী সপ্তাহে আমেরিকা ফিরে যাবো।”

মারশিয়াদ সোজা বলে–

“আমার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি কোথাও যাচ্ছি না।”

“তোকে কী উপরওয়ালা পরোপকার করতে পাঠিয়েছে??

“”আমার তো আর কেউ নেই।না হয় অন্যের জন্যই কিছু করলাম।মৃত্যুর পর কেউ তো মনে রাখবে।”

শিহরন নির্বাক হয়ে দেখে মারশিয়াদ কে।ওর চোখের উজ্জ্বলতা ওর চোখের কোনের নীড় আচ্ছাদন করতে ব্যস্ত।

“আমি তোকে আজও বুঝতে পারি না মারশিয়াদ।আমার আগের মারশিয়াদ ফেরত চাই।”

“আমি আগের মতোই আছি।মাঝখানে আমার কাজলচোখী আমার পাথরের হৃদয়ে ভালোবাসার ফুল ফুটালো যার ঘ্রান নিতে সে কখনো আসবে না।
বাদ দে সেইসব।নির্ধার কী খবর বল???

নির্ধার কথা শুনতেই একরাশ চিন্তা ভর করে শিহরণ এর কপালে।কপালের ভাজগুলো স্পষ্ট গোনা যাচ্ছে।বিরক্তিকর মুখঃভাব।মনের তিক্ততা মুখে এসে জড় হয়েছে।

“কেনো যে কম বয়সি মেয়ে বিয়ে করলাম আল্লাহ মালুম।জীবনটাই আমার পুরা সুয়ারেজ লাইন বানিয়ে দিলো।”

মারশিয়াদ গা দুলিয়ে হেসে উঠে।অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে বলে–

“কেনো,কী হয়েছে???

“আর বলিস না।সারাক্ষন ঘ্যান ঘ্যান করতেই থাকে।এই টা কেনো পড়েছেন,ওইটা কেনো পড়েছেন,জুতা খুলে ঘরে আসুন,ভেজা টাওয়েল বিছানায় রাখবেন না,একটু লেট করবেন না ব্লা,ব্লা।সারাক্ষন ভাঙা রেডিওর মতো চলতেই থাকে।আর কিছু বলাও যায় না।কিছু বললেই বুড়িগঙ্গার ধারা দিয়ে ভাসিয়ে দেয় আমাকে।তখন সাতরে কূল পাই না আমি।এই জন্যই মানুষ “বিবাহিতদের মৃত মানুষ বলে।”
অন্তত একটা ম্যাচিউর মেয়েকে বিয়ে করলে এই ঝামেলায় আর পড়তে হতো না।তাইতো মানুষ বলে—
অল্প বয়সী নারী,রুপে লক্ষী,চোখে বিষ।”
পুরুষের শতবর্ষের যৌবন এক নিমিষেই ফিনিশ।”

কথা শেষ হতেই শিহরণ এর চোখ যায় মারশিয়াদ এর হাতে।দুজন ধস্তাধস্তি শুরু করে দেয়।

“এইটা তুই কী করলি??

মারশিয়াদ শিহরণ এর বলা কথাখুলো রেকর্ড করে সেন্ট করে দেয় নির্ধার নাম্বারে।হেসেই খুন মারশিয়াদ।

“আমার সামনে আমার বোনের বদনাম!!
নো ডিয়ার ফ্রেন্ড।”

“তুই তো দেখছি ঘরের শত্রু বিভীষণ।তোর মতো দুই একটা বন্ধু থাকলে মানুষ আর শত্রুর অভাব কোনোদিন অনুভব করবে না।”

“ওকে বলিস আজ রাতে আমি তোর বাসায় ডিনার করবো।”

“ও।তুই খাবি ডিনার আর আমাকে ও খাওয়াবে মিনারেল ওয়াটার।আজ আমাকে ঘরেও ডুকতে দিবে না।
শালা,মীর জাফর।”

“মারশিয়াদ হো হো করে হেসে উঠে।
,
,
,
গগনবিদারী প্রভাকর তার তীর্যক রশ্মির তেজে ঝলসে দিচ্ছে সব।শরতের আকাশটা ভীষন পরিষ্কার থাকে।আকাশে মাঝে মাঝে দেখা যায় তুলোর মতো মেঘের ছড়াছড়ি।বাতাসে ভেসে বেড়ায় কাশফুল।কখনো কখনো ঝুপঝাপ বৃষ্টি।

বর্ষন শুরু হওয়ার পূর্বে পুরো পরিবেশ থাকে নিস্তব্দ।থমথমে পরিবেশে ভ্যাবসা গরম।শরীর চুইয়ে পড়ে ঘাম।
পানির ছোঁয়া যেনো তখন প্রানের আধার মনে হয়।

দুপুর গড়িয়েছে।সূর্য হেলতে শুরু করেছে পশ্চিম দিকে।বাইরে বাতাসের আধিক্য নেই।ফ্যানের নিচে ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা।

বিছানায় আলগোছা হয়ে ঘুমিয়ে আছে প্রহর।সারারাত টই টই করে সকালে ঘুমিয়েছে।মুক্তোর দানা মতো ঘাম জমেছে ওর চিকন নাকের ডগায়।কপালে জমেছে বিন্দু বিন্দু।চিবুকের ঘাম একত্রিত হয়ে গড়িয়ে পড়ছে ওর গলায়।কামিজেরও বিভিন্ন অংশ ভিজে লেপ্টে আছে ওর শরীরে।ঠোঁটের নিচ বরাবর ঘামের জলসা বসেছে।ওর শুভ্রতার যেনো পরিস্ফুটন হচ্ছে।এক হাত পেটের উপর রেখে ঘুমে আচ্ছন্ন প্রহর।গরম যেনো আজ কোনোভাবে ওর ঘুমপরীকে আটকাতে পারবে না।আজরাহান নিগূঢ়ভাবে তাকিয়ে দেখছে প্রহর কে।ওর ঘামার্ত শরীরের এক মিষ্টি ঘ্রান মাতিয়ে দিচ্ছে আজরাহান এর পঞ্চ ইন্দ্রিয়কে।

উষ্ণ পরিবেশেও ঠান্ডা স্পর্শ অনুভব করছে প্রহর।চোখের পল্লব প্রশ্বস্ত করে দেখে আজরাহান ওর অধরের স্পর্শ এঁকে যাচ্ছে প্রহর এর কপাল, নাক,চোখ আর গালে।
ঘুমে আচ্ছাদিত প্রহর ডলুডলু কন্ঠে বলে–

“সরেন তো।ঘুমাতে দিন।”

“উঠ প্রহর।আর কতো ঘুমাবি??

“নাহ।আপনি যান।আমি ঘুমাবো।”

প্রহর পাশ ফিরে শোয়।আজরাহান ওর কানের কাছে গিয়ে বলে–

“উঠ প্রহরিনী।তোর জন্য সারপ্রাইজ আছে।”

“আপনি খেয়ে ফেলেন।আমি ঘুমাবো।”

“আচ্ছা।আমি তাহলে নুরাজান এর কাছে গেলাম।”

চোখ খুলে ভ্রু নাচিয়ে উঠে বসে প্রহর।আজরাহান এর হাত ধরে বলে–

“নাহ।যাবেন না আপনি তার কাছে।’

“তাহলে ওঠ।যা শাওয়ার নিয়ে খেতে আয়।অলরেডি দুইটা বাজে।”

“এমন করেন কেনো আপনি!!
একটু ঘুমালে কী হয়??

“তুই যাবি নাকি আমি,,,

“না,না,না।যাচ্ছি আমি।”

প্রহর এক লাফে বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে যায়।

“পাগলি কোথাকার!!!

আজ আজরাহান এর জন্মদিন ছিলো।তাই রান্নায় বেশ আয়োজন করা হয়েছে।সবাই অলরেডি খেয়ে নিয়েছে।প্রহর ঘুমিয়ে ছিলো বলে আজরাহান এর খাওয়া হয়নি।

ও টেবিলে বসে প্রহর এর জন্য কিছুক্ষন অপেক্ষা করে।ভেজা চুল পিঠে ছড়িয়ে ওর পাশে এসে বসে প্রহর।টেবিলে এতো খাবার দেখে প্রহর বলে–

“ভাবী,এতো খাবার তুমি রান্না করেছো??

“আমি একা না।নুরাইসাও ছিলো।”

“ওওঔ।হু।”

হালকা ঠোঁট বাকায় প্রহর।নুরাইসা পাশেই ছিলো।প্রহর ওর দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে–“ইচ্ছে করছে যেনো চোখ দুটো তুলে নেই।কিভাবে তাকিয়ে আছে আমার রাহান ভাইয়ার দিকে।”
আজরাহান এর মনোযোগ খাওয়ায়।প্রহর এর দিকে চোখ পড়তেই বলে–

“কি রে না খেয়ে ওদিকে কী দেখিস??

“শাখচুন্নি দেখি।”

ওর কথায় হালকা হাসে আজরাহান।নুরাইসার ইচ্ছে করছে একটা চড় লাগিয়ে দেয় প্রহর এর গালে।হাত দিয়ে না হোক কিন্তু মনের জ্বালা মিটাতে একে অপরের চোখের ইশারায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে যা সবার অগোচরে।

খাওয়া শেষে আজরাহান কে বাগানে নিয়ে যায় নুরাইসা।

“তোমার বউ ওই গুন্ডা টাকে লাগিয়ে দিয়েছে আমার পিছনে।”

“কার কথা বলছো,মারশিয়াদ??

“ওর সাহস কী করে হয় আমাকে থ্রেট দেওয়ার??

“কী বলেছে ও তোমাকে??

“তোমাদের মধ্যে থেকে সরে দাড়াতে।”

“ভুল কিছু তো বলে নি।”

“তার মানে প্রহর এর গোপন আতাত চলে মালশিয়াদ এর সাথে??

“প্রহর কে মারশিয়াদ এর সাথে জড়িয়ে আর একটা কথাও বলবে না।প্রহর এর সাথে মারশিয়াদ এর কোনো যোগাযোগ নেই।”

“হাউ ফানি!!
ও ভাবলো কী করে যে ও বললেই আমি সরে যাবো!
প্রহর এর আগে আমি তোমার জীবনে এসেছি।”

“ভুল।আমি যেদিন প্রথম প্রহর কে দেখেছি সেদিন থেকে ওকে ভালোবেসেছি।হয়তো এখন আর তখন এর ভালোবাসায় পার্থক্য আছে।কিন্তু তা পবিত্র।
আর একটা কথা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে যাও এখান থেকে।”

ব্যলকনি থেকে সবটা দেখে প্রহর।আজরাহান ঘরে ডুকতেই বলে–

“কী বললেন আপনি তাকে??

“এখান থেকে যেতে বলেছি।”

“সত্যি !!!

“হ্যা।”

“একদম ভালো করেছেন।আমার ইচ্ছে করে ওর চুল গুলো ছিড়ে বাতাসে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেই।”

“এইসব কী ধরনের কথা প্রহর??

প্রহর চুপ হয়ে যায়।আজরাহান ওর হাতে একটা কালো শাড়ি দেয় যার পাড় এ নীল এর ছোঁয়া।

“এইটা পড়ে আয়।নির্ধাদের বাসায় যাবো।ওরা যেতে বলেছে।”

আপনি কালো শাড়ি আনলেন কেনো??কালো রঙ তো আপনার পছন্দ না।”

“তোর পছন্দ তাই এনেছি।তাড়াতাড়ি রেডি হ।”

আজরাহান বাইরে গেলে প্রহর শাড়ি পড়ে নেয়।শাড়ির আঁচল ঠিক করে আয়নার সামনে দাড়িয়ে।

“আমাকে কেমন লাগছে রাহান ভাইয়া??

“একদম আগুন।মনে হচ্ছে জালিয়ে দিবি আমাকে।”

প্রহর হেসে উঠে।

“আপনি দাড়ান আমি আসছি।”

কিছুক্ষন পর একগাদা গন্ধরাজ নিয়ে ফিরে প্রহর।

“এগুলো খোপায় ঘুজে দিন।
আজকের পর থেকে আপনার প্রতি জন্মদিনে আপনি নিজ হাতে আমার খোপায় গন্ধরাজ গুজে দিবেন।”

“ওকে,মাই হার্ট।”

প্রহর একদম রেডি।আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে শেষ বারের মতো ঠিক করে নিচ্ছে।কালো শাড়িতে ওর ফর্সা অঙ্গের শুভ্রতার যেনো দ্বিগুন হারে ঠিকরে বের হচ্ছে।আজরাহান তার নয়ন নিবদ্ধ করে রেখেছে প্রহর এর উপর।

“কী দেখছেন এমন করে??

“তোকে তো পুরাই আগুন লাগছে প্রহর।আজ তো আমি শেষ।এখন তো তোকে স্পর্শ করতেও আমার ভয় করছে।পুড়ে না যাই আমি।”

আজরাহান এর কথায় প্রহর খিলখিলিয়ে হেসে উঠে।

“অবশ্য তোকে জামা কাপড় ছাড়াও আরো বেশি সুন্দর লাগে!!!

প্রহর ঠোঁট ফুলিয়ে ভ্রু কুঞ্চি করে নাকে বাজিয়ে বলে—

“রাহান ভাইয়া!!!

“তোর মনে আছে একদিন তুই আমার ওয়াশরুমে ডোর লক না করেই শাওয়ার নিতে গিয়েছিলে।নেহাৎ আমি ভদ্র ছেলে বলে সেদিন কোনো অঘটন ঘটে নি।নাহলে তো আমার অবস্থা কাহিল বানিয়ে ফেলেছিলি তুই।”

আজরাহান প্রান খুলে হাসতে থাকে।

“ছিঃ,রাহান ভাইয়া।আপনি শুধু পঁচা কথা বলেন কেনো!!
যাবো না আমি আপনার সাথে।

আজরাহান হাসি থামিয়ে বলে—

“ওকে আর বলবো না,চল এবার।”

আজরাহান প্রহর এর নাকে নাক ঘষে আবার বলে–

“তুই তো আমার প্রাণহারিণী।”

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here