অদ্ভুত প্রেমোমোহ তুমি পর্বঃ৩৭

0
1617

#অদ্ভুত_প্রেমোমোহ_তুমি
#পর্বঃ৩৭
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি

একসাথেই বসে আছে একে অপরের গা ঘেষে মারশিয়াদ,শিহরণ।অপর পাশেই বসা আজরাহান,আশফিক।কথার ঝড় অবশ্য আশফিক এর তোলা।তার সাথে মৃদুছন্দে তাল মিলিয়ে যাচ্ছে শিহরণ।মাঝে মাঝে কথার অগোছালো বার্তায় নিজের মত নিক্ষেপণ করছে মারশিয়াদ।আজরাহান নিশ্চুপ।ক্ষনকাল পর পর তার অধর প্রসারিত হয় আবার সংকীর্ন।

কথারও মায়াজাল থাকে।তার থেকে মুক্তি পাওয়া দুষ্কর।তাই সেখানে নিরবতা করা বুদ্ধির লক্ষন।

লিভিং রুম থেকে নির্ধা আর শিহরণ রুম হালকা বা দিকে।ওখানেই বসে কথা বলছে প্রহর আর নির্ধা।অনেককাল বাদে দুই বান্ধবীর দেখা।তাই কথার ফোয়ারা একরকম তার কথার ধারা বইয়ে চলছে।

“এই,আজরাহান ভাইয়া তোকে কিছু বলেছে??

নির্ধার কথায় গা ঝাড়া দেয় প্রহর।এই ধরনের কথা তার অপরিচিত।ঠোঁটের কোন চেপে বলে–

“এইসব কী ধরনের কথা!!
একদম বাজে কথা বলবি না।”

নির্ধা ঠোঁট বাকিয়ে বলে—

“উনি মনে হয় খুকী।কিচ্ছু বুঝে না।”

“নির্ধা ভালো হবে না কিন্তু!!!

“তুই বেঁচে গেছিস।আজরাহান ভাইয়ার জায়গায় যদি অন্য কেউ হতো তাহলে তোর বাচ্চামো কবেই উবে যেতো!!

“তুই থাক তোর ফালতু কথা নিয়ে।আমি গেলাম।”

প্রহর কালক্ষেপন করে না।উঠে দাড়ায়।ওদের আজ ডিনার এর জন্য ইনভাইট করা হয়েছে।সেইমতে রান্না বান্নাও শেষ।শিহরণ এর মা বাবা ডায়াবেটিস রোগী।খাওয়া দাওয়ায় তাদের কড়া সতর্কতা মেনে চলতে হয়।অবশ্য তাদের একমাত্র পুত্রবধূ তার যথা সামর্থ্য চেষ্টা করে।রাত ন’টা বাঝতেই নৈশভোজের পাঠ চুকিয়ে তারা নিদ্রামগ্ন হয়ে পড়ে।বাকি সময় চলে নির্ধার অপেক্ষা তার প্রাননাথ এর জন্য।তাই তো কাজ শেষে একটু দেরি করে ফিরলে নাম না জানা কুরুক্ষেত্রের আয়োজন করে নির্ধা।তাতে তার পুরো সমর্থন মিলে তার পিতামাতা সমতুল্য শশুড় শাশুড়ির।

আজরাহান মৃদুছন্দে হাসে।তার হাসির রেখা টানা বড় দায়।কারণ তা চক্ষুগোচর হওয়ার আগেই মিলিয়ে যায়।তার অদ্ভুত চাহনি মারশিয়াদ এর দিকে।গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদে দাড়ানো কোন শ্রমিক যতটা সূর্যের রশ্মি উপেক্ষা করে নিজেকে বিলিয়ে দেয় রৌদ্রস্নানে,এইজন্য যে তার পরিবারের একমাত্র ভরসা সে।তাকে তো সহ্য করতেই হবে প্রকৃতির তীব্রতা।ঠিক সেইরকম একটা গৌধুলী বেলার নির্ঝঞ্জাট হাসি লুকাতে পারছেনা মারশিয়াদ এর বুকের তীব্র খরস্রোতা নদীর প্রবাহ।তা সবার দৃষ্টির অগোচর হলেও আজরাহান যেনো তার প্রত্যক্ষদর্শী।

নবান্নের পাকা ধান কেটে ঘরে তোলার আনন্দ চাষীদের বলতে হয় না তা তাদের চোখের অদ্ভুত ভঙিমায় দর্শিত হয়।মারশিয়াদ তার চেহারায় যতটা পারা যায় সেই ভঙিমা ধরে রেখেছে।

নির্ধার কাছ থেকে এসে প্রহর আজরাহান এর পাশেই বসে।প্রহর বসতেই সেখান থেকে উঠে বিড়াল পায়ে ইনশিরাহ এর পাশে গিয়ে বসে মারশিয়াদ।আজরাহান লোক চক্ষুর আড়ালে মারশিয়াদ এর প্রতিটি গতিবিধির উপর নজর রাখছে।ওর আচরণ যতটা ওকে স্বান্তনা দিচ্ছে ঠিক ততটাই ভাবাচ্ছে।ওদের থেকে দুরেই ডিভান এ এক পা গুটিয়ে আরেক পা ছড়িয়ে বসে আছে ইনশিরাহ।সেও ভালো নেই।ত্রিভুজ ভালোবাসা চক্রের সেও অংশীদার।বুকের ভিতর প্রিয় মানুষের অজান্তে দেওয়া গোলাপের কাটার আঘাত তাকেও ভালো থাকতে দিচ্ছে না।

গত কয়েকদিন এ আবার একবার ড্রাগস নিয়েছে সে।মনোকষ্ট ধীরে ধীরে তার মাথায় চেপে বসেছে যা সে ইচ্ছে করলেও দূর করতে পারছে না।

“এখানে বসে আছো যে??

“ভালো লাগছে না।”

“তাহলে আসলে কেনো??

“তুমি বললে তাই।”

“আমি বললেই আসতে হবে!!

এক দীর্ঘশ্বাস হাতছানি দিলো মারশিয়াদ কে।তা দমে নিলো সে।ইনশিরাহ কিছু বললো না।ঝড়ের প্রবলবেগে নীড়হারা পাখি যেমন তার নিজ হাতে গড়া বাসস্থান এর ভেঙে যাওয়ায় ছটফট করে তার মনের অবস্থাও সেইরকম।দুঃখের বিষয় সামনে থাকা মানুষটা তা বুঝতে পেরেও সব লুকিয়ে রাখে।

“চলো আমার সাথে।”

ইনশিরাহ দেয়ালে হেলানো মাথাটাকে হালকা বাকিয়ে বলে–

“কোথায়??

“লং ড্রাইভে।”

ইনশিরাহ এর ভাবমূর্তির কোনো পরিবর্তন হলো না।কিন্তু সে দ্বিমত পোষন করলো না।তার নিরবতাকে মারশিয়াদ সম্মতি ধরে নিলো।

নির্ধা আর শিহরণ ওদের ছাড়তে চাইছিলো না।কিন্তু মারশিয়াদ এখানে থাকার বিরুদ্ধে মত পোষন করল।কিছু জিনিস হাতের নাগালের বাইরে থাকাই শ্রেয়।তাতে মায়া বাড়ে না।মায়া জীবনের অপ্রত্যাশিত সত্য।চাইলেও কাটানো যায় না।
,
,
ইনশিরাহ এর মনের ভাবান্তর হলো না।গাড়ির গতি বৃদ্ধি করায় তা অতি দ্রুত তার পথ অতিক্রম করছে।মারশিয়াদ এর চেয়ে বেশি কিছু করার নেই।

“প্রেম হলো চোরাবালির মতো পলকা।কেউ একবার পড়লে দ্বিতীয়বার পড়তে চাইবে না।”

“আমরা ভুল করে তো কাউকে ভালোবাসতে পারি কিন্তু ভুল করেও তাকে ভুলতে পারি না।”

ইনশিরাহ এর চুলগুলো বাতাসের ছন্দে হালকা উড়ে উড়ে যাচ্ছে।কোনো কোনো সময় তা মুখের উপর পড়ছে।মারশিয়াদ দু একবার তাকিয়েছিলো।কিন্তু এর বেশি তাকানোর প্রয়োজন সে বোধ করলো না।
হালকা মায়া কন্ঠে বলে–

“চকলেট খাবে??

ইনশিরাহ বিনা বাক্যে একবার মারশিয়াদ কে দেখলো।আবার ঘাড় বাকিয়ে নিয়ে জানালা উপর রাখলো।বাতাসের ঠান্ডা ঠান্ডা পরশ ওর চোখ জুড়িয়ে দিচ্ছে।বাতাসের আধিক্যে অক্ষিপল্লব মেলে রাখা দায়।তাই বাধ্য হয়ে ভিতরে নিয়ে নেয় তার মুখমন্ডল।সিটে মাথা হেলান দিয়ে দেয়।মারশিয়াদ বুঝতে পারে যা সে সয়ে যাচ্ছে তা ইনশিরাহ কে পর্যদুস্ত করে ফেলছে।

আসলে মেয়েরা তো বিধাতার সবচেয়ে কোমল সৃষ্টি।তারা মোমের মতো।হালকা তাপেই গলতে শুরু করে কিন্তু নিজের প্রাচুর্যতা হারায় না।
মারশিয়াদ ক্ষনকাল চুপ থেকে কয়েকটা শ্বাস নেয়।
তারপর বলে–

“শুনেছি সুন্দরী মেয়েদের চকলেট খুব পছন্দ!!
বলো কোনটা খাবে??কিটক্যাট না ডার্ক ফ্যান্টাসি!!!

ইনশিরাহ মাথা উঠায়।আকস্মিক তার মস্তিষ্কের স্নায়ু সচল হয়ে উঠে।কেনো যেনো এক অদ্ভুত ইচ্ছা পোষন হয় তার।কিছু না ভেবেই ইনশিরাহ ঘুরে উঠে দু হাত দিয়ে মারশিয়াদ এর শার্ট খামছে ধরে ওর অধরে নিজের অধরের উষ্ণতা ছড়াতে থাকে।হতবিহব্বল মারশিয়াদ সামনের কোনো কিছু না দেখতে পেয়ে ব্রেক কষে।
,
,
,
শহর থেকে অনেক দুরে চলে এসেছে ওরা।নদীর ধারে ঘাসের উপর প্রায় দু তিনজন মানুষের মধ্যকার দূরত্ব নিয়ে বসে আছে মারশিয়াদ আর ইনশিরাহ।ইনশিরাহ তার কাজের জন্য একটুও অনুতপ্ত নয়।তার হৃদয়ের খরায় এতোটুকু বর্ষনের জল প্রয়োজন ছিল যা যে অনেকটা জোর করেই নিয়েছে।

ইনশিরাহ এর কাজে মারশিয়াদ বাহ্যিক কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না।কিন্তু তার ভিতরকার চাপা তুষের আগুনের ধোয়া তার চোখের মনির ভিতর দিয়ে গম গম করে তার উষ্ণতায় পরিবেশ বদ্ধ করে ফেলছে।

নদীর পানির ঢেউ একটু পর পর এসে দোল খাচ্ছে পাড়ে।চাঁদের আলোয় তা স্পষ্টত।গাছগাছালির ফাঁকে দু একটা ঝিঁ ঝিঁ র আনাগোনা।বাতাসের হু হু ধ্বনির সাথে যোগ হয়েছে নদীর স্বচ্চ জলের ছল্যাৎ ধ্বনি যা অদ্ভুত পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।

“আমার বন্ধুত্বের অপমান করলে তুমি।”

“নিজেকে সংবরন করার যথেষ্ট চেষ্টা আমি করেছি।”

“তার মানে তোমার ভালোবাসায় কামনা ছিলো পবিত্রতা ছিলো না।”

“মারশিয়াদ!!!!

মারশিয়াদ উঠে দাড়ায়।হঠাৎ আচড়ে পড়া একটা ঢেউ এর ফোটা জল ছিটকে পড়ে ওদের গায়ে।

“ভুল আমার ছিলো।
আমরা বন্ধুত্বকে সময়ের পরিক্রমায় ভালোবাসায় রুপ দিতে পারি কিন্তু ভালোবাসাকে বন্ধুত্বের রুপ দিতে পারিনা।
আজ থেকে আমার বন্ধুত্ব থেকে তুমি মুক্ত।”

ইনশিরাহ এর ছলছল আঁখি তার বর্ষন শুরু করে।নাক টেনে কয়েকবার করে মারশিয়াদ কে বোঝানো চেষ্টা করে।কিন্তু সে ব্যর্থ।

“প্লিজ এমন বলো না।”

“বলাটা আরো আগে উচিত ছিলো।তাহলে হয়তো আজকের এই ঘটনার পরিস্ফুটন হতো না।”

“আমাকে একটু বোঝার চেষ্টা করো।”

“তুমি আমাকে সে সুযোগ দাও নি।
আজকের পর আমাদের মাঝে কোনো সম্পর্ক নেই।”

ত্রস্ত পায়ে মারশিয়াদ তার গাড়িতে গিয়ে বসে।ইনশিরাহ এর আর্দ্র কন্ঠের করুন ডাক মিলিয়ে যায় নদীর পাড়ের হীমেল হাওয়ায় যা মারশিয়াদ এর কর্নকুহর হয় না।
,
,
,
নিস্তব্ধ পরিবেশের রেশ কাটে নিমিত্তির ক্রন্দনরত অশ্রুসজল চোখের তীব্র আর্তনাদে।পাশে বসেই ওর হাত দুটো নিজের বুকে আকড়ে ধরে রেখেছে মারশিয়াদ।হাত ধরেই ওকে নিজের বুকে টেনে নেয়।

“সব ঠিক হয়ে যাবে।কিছু হবে না মায়ের।”

নিমিত্তি যত চেষ্টা করুক তার অক্ষিরনীড়ে জোয়ার চলছে যার ভাটা পড়া কঠিন।পাশেই হুইল চেয়ারে বসে গোঙাচ্ছে নিমিত্তির বাবা।প্যারালাইসিস হয়ে জীবন এখন জীবন্ত লাশের চেয়ে কম নয়।বিছানায় তার অর্ধ মৃত স্ত্রীর হার্টের বিট চেক করছে শিহরণ।কাল রাতেই একটা ছোট একটা অ্যাটাক হয় তার।অবিশ্বাস্যভাবে হার্টবিট রেট বাড়তে থাকে।সুউচ্চ বুকের উঠানামায় ঘাবড়ে যায় নিমিত্তি।কাল বিলম্ব না করে কল করে মারশিয়াদ কে।সেই রাত থেকেই দুই বন্ধু বসে আছে তার শিয়রে।
নিমিত্তি এখন কিছুটা শান্ত।সারারাত চোখের পানিতে বুক ভাসিয়েছে।মারশিয়াদ বুকে টেনে নিতেই ঢলে পড়ে।শিহরণ বলে তেমন কিছু নয়।স্নায়ু দূর্বল হয়ে পড়েছে অধিক চিন্তায়।তাই সেন্সলেস হয়ে পড়েছে।মারশিয়াদ ওকে ক্রোড়ে করে ওর নিজের ঘরে শুইয়ে দিয়ে আসে।হাটু গেড়ে বসে নিমিত্তির মায়ের পাশে।তার দুই হাত নিজের আজলায় নিয়ে চুমু খায়।
নিঃশ্বাস এখনো ভারী চলছে তার।সুদীর্ঘ বুকের উঠানামায় তা স্পষ্টত।

মারশিয়াদ এর কপাল বেয়ে জমেছে ঘাম।মনে হয়েছে এই বুঝি সব শেষ হয়ে গেলো!!

“আপনি আপনার ছেলেকে ছেড়ে চলে যেতে চান!!আমাকে অপরাধী করতে চান নৈসরার কাছে??
আমি তো বলেছি ওর সম্মান আমি ওকে ফিরিয়ে দিবো।একটু সময় দিন আমাকে।প্লিজ মা,একটু সময় দিন।’

নিমিত্তির মা কিছু বলতে না পারলেও সব শুনতে পান।আর রিয়েক্টও করতে পারেন কিন্তু তা শুধু চোখের ইশারায়।চোখের কোন বেয়ে গড়িয়ে নেত্রনীড় বালিশ ভিজিয়ে দিচ্ছে সে সাথে পুড়িয় দিচ্ছে মারশিয়াদ কে তার অব্যক্ত যন্ত্রণার অনলে।

পাশের রুমে এসে সেখানে থাকা টেবিলে থাবা বসায় মারশিয়াদ।

“সময় নেই আমার হাতে।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই খেলার অবসান হতে হবে।”

শিহরণ উৎকন্ঠিত।তার কন্ঠে জড়তা আর ভয় দুটোই আচ্ছন্ন।

“আমার মনে হয় আমাদের ফিরে যাওয়া উচিত।”

ক্রোধে উচ্ছসিত মারশিয়াদ এর কন্ঠে মেঘের বজ্রপাত ঘটে।

“কিসের ফিরে যাওয়া!!!
নৈসরা কে আমি কথা দিয়েছি।ওর খুনিদের শেষ আমি করবো।”

শিহরন শ্রান্ত কন্ঠে বলে–

“তাতে কী ও ফিরে আসবে।”

“তো !!তাই বলে কী ওদের আমি ছেড়ে দিবো??
নাহ।কিছুতেই না।তাহলে ওর সেই চোখ আজন্ম আমার জীবনের বিভৎস স্বপ্ন হয়ে থাকবে যা আমি কোনোদিন ভুলতে পারবো না।”

“কিন্তু ওরা যদি আমেরিকা ফেরত চলে যায়।”

মারশিয়াদ স্মিত কন্ঠে বলে–

“তা ও করবে না।কারন আমাকে মারা ই ওর একমাত্র লক্ষ্য।আর ওই ফমূর্লা এখনও আমার কাছে।”

উদ্বিগ্ন কন্ঠে শিহরণ বলে–

“যার জন্য ওর নৈসরা কে খুন করেছে ওই ভিডিও তো ওদের কাছে।”

মারশিয়াদ ঠোঁট বাকিয়ে হাসে।ঘাড়ের শিরাগুলো ফুলে ফেপে উঠেছে।কপালের ঘাম বেয়ে পড়ছে।

“কিন্তু ওই ফর্মূলার প্রথম এক্সপেরিমেন্টর এর রেজাল্ট আমার কাছে।ভিডিও তে তার তৈরি প্রক্রিয়ার শেষ টুকু অসমাপ্ত।ওরা চাইলেও ওই মেডিসিন তৈরি করতে পারবে না।যার প্যাটেন্ট নিজের নামে করার জন্য ওরা নৈসরা কে জঘন্যভাবে খুন করেছে।”

“কিন্তু অরল্যান্ডো যদি ফিরে যায়!!

মারশিয়াদ ক্রোদিত কন্ঠে বলে–

“ওর ভাইকে আমি মেরেছি।ও কী আমাকে ছেড়ে দিবে নাকি!!
আমেরিকায় ও আমাকে মারতে পারবে না।গত দুই বছরে হয়তো অনেক ডালপালা ঘজিয়েছে ও।বাট আই ডোন্ট কেয়ার।”

“দেখ মারশিয়াদ এখন তুই একা না।অনেকগুলো পরিবার জড়িয়ে গেছে তোর সাথে যারা নিতান্তই সাধারণ।”

মারশিয়াদ ধুপ করে নিচে বসে।পরিশ্রান্ত সে।গত দুইবছরে নৈসরার সেই রক্ত মাখা দুটো হাত ওকে ঠিক মতো ঘুমাতে দেয় না।ওর মুখের সেই ভাইয়া ডাক আজও ওর কানে ঘন্টার মতো বাজতে থাকে।

“কী দোষ ছিলো ওর!!নিজের প্রতিভার জোরে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলো নাকি ছেলেদের থেকে অধিক প্রতিভা নিয়ে জন্মানো??
ও তো কারো ক্ষতি করেনি।ওর বাবা তার সবকিছু বিসর্জন দিয়ে ওর স্বপ্ন পূরন করতে আমেরিকা পাঠিয়েছে ওকে।কিন্তু তাদের সেই স্বপ্নকে দুঃস্বপ্ন করেদিলো কিছু ক্ষমতালোভী নরপশু।”

মারশিয়াদ এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।বুকের ভিতর কোথাও হাহাকার করে উঠে।তার এই ছোট্ট বুকে আর কত যন্ত্রনা লালন করতে হবে তা সে জানে না।সূদীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে সে এসেছিলো নৈসরা কে তার প্রাপ্য সম্মান দিতে যেনো ওর মৃত্যু ওর আত্না কে অমর করে রাখতে পারে।কিন্তু ভাবে নি তার চিত্তের মনোঃস্পটে কেউ এভাবে তার রাতের ঘুম কেড়ে নিবে।
,
,
,

পড়ন্ত বিকেল।হালকা হালকা মৃদু বায়ু।ছাদের ফোটা ফুলের কি একটা মিষ্টি সুগন্ধ!!ঝলমলে আকাশে মেঘের হাতছানি।বাতাসের হালকা দোল শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পৌছে দেয় শরতে এসেছে।

ছাদে বসে মিষ্টি কুমড়ার বিচির শাষ বের করছে নন্দিতা আর প্রহর।এমনটা হয় না তেমন।কিন্তু সানায়ার কেনো যেনো মিষ্টি কুমড়ার শাষ ভুনা খেতে ইচ্ছে করলো।প্রেগন্যান্সিতে মেয়েদের অদ্ভুত জিনিস খেতে ইচ্ছে করে।কারো কারো তো নাকি কেরোসিন তেল ও চেখে দেখতে ইচ্ছে করে।
নরম পায়ে ছাদে আসে আজরাহান।হালকা সবুজ রঙের শার্ট পড়ে হাতা ফোল্ড করে রেখেছে।আজ বেশ ফুরফুরে মেজাজ তার।কিন্তু কেনো তা শুধু সেই জানে।প্রহর কে রাগানো কোনো সুযোগ সে হাতছাড়া করে না।একঘন্টা আগে প্রহর ঘরে ডেকেছিলো আজরাহান।কিন্তু কোনো অজানা কারনে সে ঘরে পদার্পন করেনি।

এক স্নিগ্ধ হাসি জুড়ে রয়েছে আজরাহান এর চোখে মুখে।

“কিরে রসমালাই,তোকে যে ডাকলাম এলি না কেনো??

প্রহর প্রতিত্ত্যুর করে না।ভাবান্তরও হয় না তার।আপন নিবেশে নিজের কাজে দৃষ্টিক্ষেপন তার।আজরাহার আসন পেতে ওর পাশেই বসে।

“রসমালাই,কী হয়েছে তোর??
কথা বলিস না কেনো??

আজরাহান এর কথা প্রহর এর কর্নকুহর হলো না।ঝিম মেরে বসে রইলো সে।ভাব এমন যেনো ব্যতিব্যস্ত সে তার কাজে।

“ভাবী,নুরাজান কোথায়??

আচমকাই প্রহর সিংহীর মতো গর্জে উঠে।ঘাড় ঘুড়িয়ে বলে–

“কী দরকার আপনার তাকে??

“মহারানীর মনোব্রত ভেঙেছে তাহলে!!

শাষ ছাড়ানো শেষ।নন্দিতা সময় নষ্ট না করে উঠে যায়।প্রহর উঠলেই ওর হাত ধরে টেনে বসায় আজরাহান।ওদের এই ক্যাটস এন্ড ডগ ফাইট নন্দিতার কাছে নতুন কিছু নয়।রান্না ঘরের উদ্দেশ্য পদযুগল বাহিত করে সে।

আজরাহান প্রহর এর একদম কাছে এসে বার দুয়েক নিঃশ্বাস টেনে নেয়।

“কিরে রসমালাই,মিষ্টি গন্ধের বদলে তোর শরীর দিয়ে ধোঁয়ার গন্ধ বের হচ্ছে কেনো রে??
পোড়া রসমালাই আর খাওয়া যাবে না।”

প্রহর এর কন্ঠ বেজে উঠে।মুখ বাকিয়ে ব্যঙ্গাত্মক ভাবে উত্তেজিত কন্ঠে বলে–

“যান তাহলে আপনার নুরাজান কে খেয়ে আসুন।”

“কী হয়েছে তোর??

আজরাহান প্রহর কে নিজের পায়ের উপর বসায়।বাচ্ছাদের মতো গুটি মেরে বসে প্রহর।চোখের ক্ষীন দৃষ্টি তৎক্ষনাৎ তার পথ বদল করে।

“আপনি কেনো আমাকে ছেড়ে যেতে চান??
আপনার একটুও কষ্ট হয়না আমার জন্য??

“নাহ।”

প্রহর সড়াৎ করে ওর পায়ের উপর থেকে সরে বসে।

“আপনি এতো পাষান কেনো রাহান ভাইয়া??

“তা তো জানি না।”

আজরাহান কথা পাল্টাতে চায়।কারন সে জানে প্রহর কিছুতেই চায় না সে দুরে কোথাও যাক।
মুখে এক শয়তানি হাসি দিয়ে বলে–

“কিরে এখন তো আর তুই ভুল করে ওয়াশরুমের দরজা খুলে রাখিস না।ইশশ!!
সেদিন যে আমি কী দেখলাম।”

প্রহর এর ভেজায় রাগ হয়।ঠোঁট কামড়ে আজরাহান এর দিকে তাকায়।বিড়বিড় করে কিছু একটা বলে।

“তোর ওই লাল,,,,

প্রহর আর কিছু বলার আগেই আজরাহান এর হাতে বসায় এক নির্মল কামড়।আজরাহান কিঞ্চিৎ ব্যথা পেলেও নিঃশব্দহীন।হাত থেকে মুখ সরিয়ে উঠে দাড়ায় প্রহর।ভেঙচি কেটে বলে–

“অসভ্য লোক!!

প্রহর দৌড়ে ছাদের দরজা পর্যন্ত পৌছায়।আজরাহান গলা উচু করে বলে–

“আমার কাছে কিন্তু ভিডিও আছে।আজকেই ভাইরাল করবো।”

প্রহর ঝাঝালো কন্ঠে চিৎকার করে বলে–

“আপনি একটা আস্ত খবিশ।”

“রসমালাই,,
এর পরের শব্দগুলো আজরাহান মনে মনে বলল যা প্রহর শুনতে পায় না।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here