অদ্ভুত প্রেমোমোহ তুমি পর্বঃ৯

0
2512

#অদ্ভুত_প্রেমোমোহ_তুমি
#পবঃ৯
✍️ তাজরিয়ান খান তানভি

হসপিটাল এ ফিনাইল এর গন্ধ না পাওয়া এখন আর অবাক করা কিছু না।যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নানা রকম জিনিসের আবিষ্কার মানুষকে যেমন আধুনিক করছে তেমনি করেছে আরোও বর্বর।মানুষ নামে তো সভ্য হয়েছে কিন্তু আচরনে এখনো গুহাবাসীদের মতো অসভ্য,বর্বর আর নির্দয়।

হসপিটাল এর শুভ্র বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে আছে ইনশিরাহ।ওর রেগুলার চেকাপ শিহরন
ই করে।এই পাঁচদিন ভালোই ধকল গেছে মেয়েটার উপর।বেডের কাছে এসে দাড়ায় শিহরণ।

“কেমন আছো ইনশিরাহ??

ইনশিরাহ ঘার ঘুরিয়ে এক পলক দেখে তাকে।আবার সোজা হয়ে সামনে থাকা জানালা দিয়ে দুর থেকে দেখতে পাওয়া অট্টালিকায় নজর ফেলে।

“দুই দিন পরই তোমার ডিসচার্জ।বাসায় গিয়ে ভালো করে রেস্ট নিয়ো।আর পারলে মারশিয়াদ কে ভুলে যাও।”

শিহরন চলে যেতে চাইলে ইনশিরাহ কাঠ গলায় বলে–

“ওকে আমি ভালোবাসি।”

শিহরণ এইবার একটা চেয়ার টেনে বসে।

“ওকে ভালোবাসার পরিনতি দেখেছো?ভুলে যাও ওকে।”

“পারবো না।
আমি কি তার যোগ্য নই??

“সে তোমার যোগ্য নয়।মারশিয়াদ দেখতে যতটা শান্ত ততটা অশান্ত তার কাজ।”

“কে ওই মেয়ে??

“জানি না।”

“তাকে কখনো সে দেখেনি?
“তাহলে কি করে এতো ভালোবাসে??

“জানি না।”

“আমাকে ভালোবাসবে না??

“তার উত্তর আমার কাছে নেই।
আমার কোনো বোন নেই।তাই তোমাকে বোন মনে করে বলছি মারশিয়াদ কে ভুলে যাও।তোমার জন্য ভালো হবে।”

শিহরণ চলে যায়।

ইনশিরাহ ভাবে,, না দেখে একটা মানুষকে কি করে এতোটা ভালোবাসা যায়!!একটা শ্বাস ছাড়ে ইনশিরাহ।

“ভুল করে কাউকে ভালোবাসা যায় কিন্তু চাইলেও ভুল করে তাকে ভোলা যায় না।”
,
,
,
বসার রুমে বসে হাটুর উপড়ে কাপড় উঠিয়ে সেখানের নরম মাংস হালকা টিপে টিপে দেখছে কুহেলিকা বেগম।আর ককিয়ে যাচ্ছেন।প্রহর এসে দাড়ায় সেখানে।

“ছোট মা,,পা ব্যথা করছে??

কুহেলিকা খেকিয়ে বলেন–

“তাতে তোর কি??যা আমার চোখের সামনে থেকে।”

“আমি মালিশ করে দেই??

“দরকার নেই।”

প্রহর দৌড়ে রান্নাঘরে যায়।গিয়ে একটা ছোট স্টিলের বাটিতে একটু সরিষার তেল নিয়ে তাতে একটা রসুন কুচি করে দিয়ে কুসুম গরম করে নিয়ে আসে।

“এইটা তোমার পায়ে মালিশ করে দেই তোমার ভালো লাগবে।”

কুহেলিকা কিছু বললেন না।প্রহর তার পায়ের কাছে বসে দুহাতে তেল নিয়ে হালকা হাতে তা পায়ে মালিশ করতে থাকে।মেয়েটাকে ওর একদম ই সহ্য হয় না।কিন্তু যখন ওর মুখটা দেখে কিছুই বলতে পারে না।বাহিরে থেকে নুরাইসা এসে এই দৃশ্য দেখে একটু দমকে যায়।তার সাজানো মিষ্টির থালায় পিপড়া ছড়াচ্ছে প্রহর।তা সে কিছুতেই হতে দিবে না।

“এই তুই কি করছিস??

নুরাইসা কে দেখে কুহেলিকা ওর সাথে গলা মিলিয়ে বলে–

“ওকে বাড়ন করলাম তাও শুনলো না।যা এখান থেকে।”

প্রহর বাটি নিয়ে উঠে দাড়াতেই নুরাইসা খপ করে সেইটা কেড়ে নেয়।

“আনটি কে পটাতে চাস তাইতো??

“ছোট মা কে আমি কেনো পটাতে যাবো??

“দেখ প্রহর,একদম চালাকি করবি না।তুই কি ভেবেছিস আমি কিছুই বুজি না।”

“বুজলে বুজপাতা না বুজলে তেজপাতা।ভ্যা।”

“একটা চড় মারবো।”

“আরে আমি বুঝি হাত গুটিয়ে বসে থাকবো!!!

“ভালো কথা বলতে শিখেছিস তুই।”

“সবই তোমার আশির্বাদ,নুরাজান।”

আজ অনেকদিন পর আজরাহান নুরাইসা কে এই নামে ডাকলো।ওর মনে যেনো রংধনুর সাত রং জেগে উঠেছে।

“কিরে সকাল সকাল ঝগড়া শুরু করেছিস কেনো??

“আমি করেছি নাকি।নুরাইসা আপুই তো শুরু করলো।”

“খেয়েছিস তুই??

“নাহ।”

“খাসনি কেনো।যা খেয়ে আয়।তারপর ওর সাথে ঝগড়া কর।না খেয়ে এই ফড়িং এর মতো শরীর নিয়ে ওর সাথে পারবি নাকি!!

নুরাইসা নাক ফুলিয়ে বলে–

“আমাকে তোমার ঝগড়াটে মনে হয়??

আজরাহান গিয়ে কুহেলিকার গা ঘেষে বসে।গলার স্বর ছেড়ে বলে–

“গাছ তোমার নাম কি,ফলে পরিচয়।
কী বলো মা,ঠিক না??

“চুপকর তুই।”

আজরাহান কুহেলিকার কপালে একটা চুমু খায়।

“কেমন আছো মা??

“তোর কি এখন আর আমার খবর নেওয়ার সময় আছে??

আজরাহান চোখের ইশারায় প্রহর কে যেতে বলে।ও গিয়ে খারাব টেবিলে বসে খেতে থাকে।নুরাইসা মাত্র তার বাবার বাড়ি থেকে এসেছে।তাই ফ্রেশ হওয়ার জন্য নিজের ঘরে যায়।

“তুমি এখনো রেগে আছো আমার উপর??

“নাহ।”

“তাহলে??

“কেনো বিয়ে করলি ওই মেয়েকে??

“তোমাকে দাদী বানাবো তাই।”

কুহেলিকা ভ্রুকুটি করে।

একদম ওর কাছে যাবি না।”

আজরাহান হাত দুটো উপরে নিয়ে মোছড়ে শরীরের আলসামো ঝেড়ে ওর কানের কাছে গিয়ে বলে–

“তা বললে কি হয়??তোমার ছেলে কি একটা মেয়েকে সামলাতে পাড়বে না??

কুহেলিকা আজরাহান এর কান মুছড়ে বলে–

“বাঁদড় ছেলে কোথাকার,মায়ের সাথে দুষ্টুমি হচ্ছে।”

“মাই কুইন।”

“ওকে ছাড়া আর মেয়ে পেলি না তুই??

“তুমি তো জানো আমি প্রহর কে ভালোবাসি।”

“ভালোবাসতে হলে কি আর মেয়ে নেই এই দুনিয়াতে??

“ওকে ছাড়া অন্য কাউকে আমি ভালোবাসতে পারবো না মা।”

আজরাহান ওর মায়ের কোলে মাথা রাখে।

কেনো তোকে এই অলক্ষী কে বিয়ে করতে হলো??

“অনেকদিন হলো তোমার হাতের রান্না খাইনা।”

কুহেলিকা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে—

“কি খাবি বল,আমি বানিয়ে দেই।”

“তোমার হাতের খিচুড়ি খাই না অনেকদিন আর সাথে মাংস ভুনা।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।রাতে আমি নিজের হাতে রান্না করবো তোর জন্য।”

কুহেলিকা ছেলের মাথায় হাত বুলাতে থাকে।অনেকদিন পর ছেলেটা ওর কোলে মাথা রেখেছে।সামান এর বয়স যখন আট বছর তখন সানায়ার জন্ম হয়। আর তার তিন বছরের মাথায় আজরাহান।আজরাহান কে নিয়ে প্রেগন্যান্সিতে অনেক কমপ্লিকেশন হয়।ওর জন্মের পর দেড় বছর পর্যন্ত কুহেলিকা নিজের কোল ছাড়া অন্য কারো কোলে ওকে দিতো না।ওকে কোলে নিয়েই যাবতীয় কাজ সারতেন।ছোট বেলায় একবার ওর টায়ফয়েড হয়েছিলো বলে টানা একমাস ছেলের সুস্থতার জন্য রোজা করেছেন।এমন নয় তিনি তার বাকি ছেলেমেয়দের ভালোবাসেন না।কিন্তু আজরাহান কে একটু বেশিই আহ্লাদ করেন।

হন্তদন্ত হয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে সামান।অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে।পিছন থেকে নন্দিতা ডেকে ওকে ওর ওয়ালেট টা দেয়।ঝাকিয়ে উঠে সামান।

“তোমাকে না বলেছি পিছু ডাকবে না আমাকে।”

নন্দিতা ছোট্ট ঢোক গিলে বলে–

“জ্বি ভুল হয়ে গেছে।”

“তাতো হবেই।”

“এতোই যখন সমস্যা তাহলে নিজের জিনিস নিজে নিয়ে নিলেই পারো।”

সামান ভ্রু কুচকায়।তার ছোট ভাইয়ের ভারী ভারী কথা সামান এর কখনই পছন্দ না।তাই তাকে যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে।

কোল থেকে মাথা উঠাতেই কুহেলিকা বলে–

“কোথায় যাবি??আরেকটু শুয়ে থাক মায়ের কোলে।”

“একটু কাজ আছে।এখন আসি।”

“সাবধানে যাস।”

“আচ্ছা।”
,
,
,
মনিটরিং রুমের জিনিস গুলো ঠিক করার ব্যর্থ চেষ্টা মারশিয়াদ এর।কিন্তু তা কোনো ভাবেই সম্ভব না।ইনশিরাহ সেগুলো ভেঙে পানি ঢেলে দিয়েছিলো তার উপর।চেয়ার এ বসে মারশিয়াদ।ইনশিরাহ এর উপর তার রাগ এখনো পড়েনি।

“মেয়ে টাকে কি মেরে ফেলতে চেয়েছিলি??

“মারতে হলে ওকে আরাম করে কি শুইয়ে রাখতাম।”

“তাহলে কেনো করলি এমন??

“ওর শরীরে অনেক তেজ।তাই ঠান্ডা করার ব্যবস্থা করলাম।”

“তুই কি মানুষ!!
আরেকটু হলেই তো ওর হার্ট কাজ করা বন্ধ করে দিতো।যদি মেয়েটার কিছু হয়ে যেতো?

“মেয়েদের প্রান কই মাছের প্রান।”

“যদি ও মারা যেতো??

“মারশিয়াদ আরজান এর জন্য এইটা নতুন কিছু নয়।”

“দেখ মারশিয়াদ তুই যা করতি তাতে আমি নিজে তোকে সাপোর্ট করতাম কিন্ত ওরা আর ইনশিরাহ এক নয়।”

“কিন্তু আমি মানুষটা তো এক।আমাকে তো আমি বদলেছি তাহলে ওই মেয়ে কেনো আমাকে আবার আমার অতীতে ফিরিয়ে নিতে চায়?

“ও তোকে ভালোবাসে।”

“বাট আই ডোন্ট লাভ হার।নেভার এভার।ওকে বল আমার পথ থেকে সড়ে দাড়াতে।”

মারশিয়াদ দরজায় পা বাড়ায়।

“মরিচিকার পিছনে ছুটে চলছিস তুই।”

“আমার কাজলচোখী সত্য।নিজের চোখে আমি তাকে দেখেছি।”

“ওই চোখে এমন কি দিখেছিস তুই যে ওকে ভুলতে পারছিস না??

“ওর কাজল চোখে আমি আমার পৃথিবী কে দেখেছি।ওর লম্বা ময়ূরের পালকের মতো পাপড়ি আমার আমি কে চিনিয়েছে।ওর চোখে নীলচে মনি আকাশের নীলামাকে হার মানায়।আমি নিজেকে হারিয়েছি ওর চোখে।সর্বনাশী কাজলচোখী আমাকে সর্বগ্রাসা বানিয়েছে।আমার এই জীবনের পূর্নতা শুধু আমার কাজলচোখীর সাথে আমার মিলনে।”

শিহরণ পুরোই হতবিহ্বল।এ কোন মারশিয়াদ কে দেখছে সে।যার কাছে বাস্তবিকতা হার মানে সে আজ কল্পনাবিলাসী।

মারশিয়াদ আবার বলে–
“লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির মোনালিসা কে দেখেছিস?সে ছিলো তার কল্পনা।
যার রহস্য এখনো পৃথিবীর মানুষ উৎঘাটন করতে পারনি।কিন্তু আমার কাছলচোখী সত্য।তাকে আসতেই হবে বন্ধু,আসতেই হবে।”
,
,
,
অফিসের টেবিলে অসংখ্য ফাইল।তার পাশেই পেপার ওয়েট দিয়ে চেপে রাখা কিছু কাগজ।
সেখানেই সোফায় বসে গভীর চুম্বনে আবদ্ধ দুই কপোত কপোতী।

দরজায় নক না করেই ভিতরে ঢুকে পড়ে আজরাহান।
একটুও বিস্মিত নয় সে।এমন কিছু হবে সে আগে থেকেই জানে।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here